Monday, August 19, 2024

--হ্যালো, কে বলছেন?
--চুউউপপ!!!
আমি চমকে গেলাম, কে এটা? ফোন দিয়ে
আমাকে চুপ
থাকতে বলছে। আর এত রাতে ফোন দেওয়ার
মানে কী??
বিরক্তও লাগছে। আবার বললাম,
--কে আপনি??
--বলেছি না চুপ থাকেন! কথা বলছেন কেন?
অহ!! মেয়ের কন্ঠ। নাইস ভয়েজ, তবে রাগ্বত
স্বর্।
ওপাশ থেকে ভেসে এল,
--একটা প্রশ্ন করি?
--এর রাতে ফোন দিয়েছেন প্রশ্ন করার জন্য?
(বিরক্তি নিয়ে বললাম)
--চুউউপপ! চুপ! কোন কথা নেই।
--মানে কী?
--রাগ দেখালে ইদুরের কামড় খাওয়াবো।
--পাগল নাকি আপনি?
--নাহ, আমি পাগলি। আপনার কোন সমস্যা?
ঘাবড়ে গেলাম এরুপ প্রতিত্তরে! এর রাতে
এত পেইন
দিচ্ছে কেন মেয়েটা? আর কে ই বা এই
মেয়েটা?? আর
ইদুরের কামড় খাওয়াবে মানে? মেয়েটা
ইদুর
পালে নাকি? ইয়াক!! ছি!
--কী হলো, ভয় পেলেন নাকি?
--আমি কেন ভয় পাবো? কে আপনি?
--আচ্ছা, আপনাকে কি মশা কামড়াচ্ছে?
--না, আমাকে ইদুর কামড়াচ্ছে। (রাগি গলায়
ধমক
দিয়ে বললাম)
--হিহিহি!!
একি! মেয়েটা হাসছে কেন? বললাম,
"হাসছেন কেন?"
--আপনাকে সত্যিই মশা কামড়াচ্ছেনা?
মশারি টাঙ্গিয়েছেন নাকি?
--কে ভাই আপনি? কেন পেইন দিচ্ছেন?
--ঐ শালা। আমি মেয়ে, ভাই না, ভাবি
ডাক। থুক্কু আপু
ডাকবি। হুহ!!
--কী চান বলেন?
--জানতে চাই।
--কী?
--মশা আর মশারি।
--আল্লাহরে! শুনেন ভাই নাহ সরি আপু।
আমি মশারি টাঙ্গাইনি। আর আমাকে মশাও
কামড়াচ্ছেনা।
--হিহিহি!!
--আবার হাসছেন কেন?
--আপনার ওখানে সব মেয়ে মশা। আমার
এখানে সব
পুরুষ মশা।
--মানে কী?
--পুরুষ মশারা বদমায়েশ হয়। তাই আমাকে খুব
কামড়াচ্ছে। আর মেয়ে মশারা খুব ভাল, তাই
আপনাকে কামড়াচ্ছেনা।
--এহ!! মহিলা মশারা ভদ্র নাকি? ফ্রড!
--ওই শালা, মহিলা মশা বলবিনা কিন্তু। খুন
করে ফেলবো। আপু মশা ডাকবি।
--খুন!
--হ্যা খুন।
আচ্ছা আপু, আমাকে আপু মশারা
কামড়াচ্ছেনা। ওকে।
ভাল থাকবেন, টাটা।
কোন মতে ফোনটা কেটে দিয়ে সাথে
সাথে সুইচড অফ
করে দিলাম। আর নাহ বাবা। আর কিছুক্ষন
হলেই
পাগল হয়ে যেতাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু লেইট হলেও
প্রতিদিনের
ন্যায় খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। সারাদিন
কাটিয়ে রাতে আবার কিছুক্ষন
চ্যাটিং করে ঘুমাতে যাবো, আবার সেই
নাম্বার
থেকে ফোন এল। আমি রিসিভ
না করে ফোনটা সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে
গেলাম।
সকালে উঠে অনেকগুলো মিসড কল দেখলাম
কিন্তু আবার
ব্যস্ততায় দিন চলে গেল।
পরদিনও একই ঘটনা। আবার কল দিলো
মেয়েটা।
এইবার রিতীমত খুব বেশি মেজাজ খারাপ
হলো, তাই
ফোনটা রিসিভ করেই ইচ্ছেমত বকা দেওয়া
শুরু
করলাম। একটানে দুই-তিন মিনিট
বকা দিয়ে শেষে ওয়ার্নিং দিলাম আর
কখনো কল
না দিতে।
যখন থামলাম, তখন ওপাশ থেকে শুনলাম,
--হিহিহিহি! আপনি কি কাউকে বকা
দিচ্ছেন?
--আল্লাহ! মানে কী? মেয়েটা হাসছে
কেন?
আমি কাকে বকলাম এতক্ষন? আল্লাহ
আম্রে উপ্রে তুইলালাও।
--আল্লাহর কাছে দড়ি নাই তো। দড়ি আমার
কাছে।
তারপর লাইনটা হুট করেই কেটে গেল। আমি
কল ব্যাক
দিলাম, কিন্তু নাম্বার নট রিচএবল। মনটা
খারাপ
হয়ে গেল আরো। তবে এই ব্যাপারে কনফার্ম
হলাম
যে মেয়েটার মাথাটা ডাল। কিচ্ছু নাই।
পুরাই
পাগল।
পরদিন সকালে উঠে কেন যেন সেই
নাম্বারে কল
দেওয়ার চেস্টা করলাম। কিন্তু নাম্বার সুইড
অফ।
কেন জানি খুব অস্থির লাগছিল। অস্থিরতায়
কেটে গেল সারাদিন। মেয়েটার সাথে
ভুল
নাম্বারে কথা হচ্ছে গত তিনদিন থেকে।
কিন্তু আমার
এমন অস্থির লাগছে কেন? রাতে আর
চ্যাটিং করতে পারলাম না। বারবার সেই
নাম্বারে ট্রাই করতে লাগলাম। কিন্তু
অবস্থা সেইম। মেয়েটার পুর্বের রিসিভ করা
কল লগ
দেখতে লাগলাম। হঠাত একটা ব্যাপার
খেয়াল
করে অবাক হলাম। ঠিক একটা বেজে
তেতাল্লিশ
মিনিটেই রিসিভ করেছি মেয়েটার
প্রতিদিনের কল।
এখন একটা চল্লিশ বাজে। আজও নিশ্চয় একই
সময়ে কল
দিবে। অপেক্ষা করতে লাগলাম আরো তিন
মিনিটের
জন্য। একটা তেতাল্লিশ বাজার সাথে
সাথেই
একটা মিসড কল পেলাম মেয়েটার কাছ
থেকে।
সাথে সাথেই কল ব্যাক দিলাম। কিন্তু
মুহুর্তেই
নাম্বার অফ।
একটু পর, একটা MMS আসলো মেয়েটার
নাম্বার থেকে।
একটা অপরুপ সুন্দর
হুরপরী কালো শাড়ি পড়ে দাড়িয়ে আছে।
সৌন্দর্যের
বর্ণনা আমি দিতে পারবোনা। তবে যেই
ব্যাপারটা আমার দৃষ্টি কাড়লো, তা হলো
মেয়েটার
গালের তিলটা। এই একটা তিলই
মেয়েটাকে পরীর মত
সুন্দর বানিয়ে দিয়েছে। অত্যন্ত পবিত্র
একটা চেহারা।
আরেকটা টেক্সট এলো। সেখানে
লিখেছে,
"এটা আমি।"
আমি ছানাবড়া চোখে তাকিয়ে আছি। এই
পরীটাই
আমার সাথে কথা বলছিল! ভাবতেই
পারছিনা। এই
পবিত্রতম মুখটা একবার দেখতে পেলেই তো
জীবন
স্বার্থক হয়ে যায়। মুহুর্তেই প্রেমে পড়ে
গেলাম। কল
ব্যাক দিতে গিয়ে আবার not reachable
পেলাম।
মনটা অত্যাধিক খারাপ হয়ে গেল।
মেয়েটা এমনভাবে আমার ইমোশন নিয়ে
খেলছে কেন?
তিনদিনের কথায় এমনিতেই পাগল হয়ে
গেছি আমি,
তার উপর এই পবিত্র চেহারা। উহ!
ভাবতে পারছিনা। খুব পেইন ফিল করছি
বুকে। আল্লাহ
আমাকে বাচাও। আমার কেন এমন লাগছে!
এরপর থেকে প্রতিদিন প্রতিক্ষনে ট্রাই
করতে লাগলাম মেয়েটার নাম্বারে। কিন্তু
সেই একই
কথা শুনতে শুনতে আমার মাথা নস্ট হয়ে
যাচ্ছে।
যখনই কল দিচ্ছি তখনই
একটা বিদ্ঘুটে কন্ঠা একটা মেয়ে বলতে শুরু
করে,
"the number you have called, can not be reached
at this moment. Please try again later__"
ধীরে ধীরে মনে হতে লাগল পাগল হয়ে
যাচ্ছি আমি।
মনটা শুধু ওই মেয়েটিকেই খুজে বেড়াচ্ছে
সারাদিন।
ওর সাথে কথা বলার ইচ্ছা বেড়েই
চলেছে প্রতি মুহুর্তে।
এরপর একদিন___
ঘুমাচ্ছিলাম।
হঠাত মোবাইলটা বেজে উঠল। চমকে উঠলাম
মোবাইলের শব্দে। ভাবলাম, এই বুঝি সে কল
দিয়েছে। কিন্তু না…
স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে বুলি আপুর নাম।
কলটা রিসিভ
করলাম,
--বলো আপু…
--মাহিন, তুই অধরা নামের কাউকে চিনিস?
--অধরা! না তো। কেন?
--আর বলিস না। আমি তোর কিছু ছবি প্রিন্ট
করে বাসায় যাচ্ছিলাম। প্যাকেট ছিলনা
তাই
খোলা অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠায়
কোত্থেকে যেন এক পাগলি এসে আমার
হাত
থেকে ছবিগুলো কেড়ে নিল। তারপর তোর
ছবিটা নিয়ে বাকিগুলো ফেলে দিয়ে
দৌড় দিচ্ছিল।
অমনিই তাকে ধরে ফেলি। সে কিছুতেই
ছবিটা দিবেনা। হঠায় তার কাধে একটা
আইডি কার্ড
দেখলাম, নাম অধরা দেওয়া আছে। কার্ডের
ছবিটা খুব সুন্দর্।
তবে বাস্তবে তেমনটা সুন্দরী লাগছেনা,
চোখের
নিচে কালো দাগ। তবে একটা ব্যাপার কী
জানিস?
--কী আপু?
--মেয়েটা সত্যিই খুব সুন্দরী। গালে তিল
আছে, তুই
যেমনটা পছন্দ করিস। আর মেয়েটা পঞ্চগড়
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তো।
--কী বলো? দাড়াও, এক্ষনি আসছি। আর
ওকে যেতে দিওনা।
আপুর সাথে দেখা করলাম ঘন্টাখানেকের
মধ্যেই।
গিয়ে যা দেখলাম, তাতে নিজের
চোখকে অবিশ্বাস
করা ছাড়া কিছুই করার ছিলনা। এই আমার
সেই
হারিয়ে যাওয়া হুরপরী! যাকে খুজে
চলেছি কতদিন
থেকে। কিন্তু আজ তার এই অবস্থা কেন?
কয়েকদিন পর
অধরাকে বাসায় পৌছে দিয়েছি। ওর
আইডি কার্ডের
সাহায্যেই কাজটা করেছি।
অধরা সত্যি সত্যি মেইন্টালি অসুস্থ। প্রথমে
স্লিপ
টেক্সটিং ডিজঅর্ডার থেকে ইনসোমিয়া
তারপর
মেইন্টালি উইক হয়ে বাসা থেকে হারিয়ে
গিয়েছিল
সে।
আর সবচেয়ে বড় কথা, এই পাগলিটাকে
কয়েকদিনের
মধ্যে আমাদের বাড়ির বউ করে নিয়ে
যাওয়ার
প্রস্তুতি চলছে। কেননা, পাগলিটাকে মিস
করলে যে আরেকটা পাগল বেড়ে যাবে
দুনিয়াতে।
আরেকটা গোপন কথা, কাউকে বলবেন না
কিন্তু।
পাগলিটা আমার কাছে এলেই একদম ভাল
হয়ে যায়।
কোন দুস্টুমি করেনা। তবে মাঝে মাঝেই
আমাকে ইদুরের কামড় খাওয়ানোর ভয়টা
এখনও
দেখায়।

No comments:

Post a Comment