Tuesday, February 14, 2017

গল্পঃ 'বউ মানেই অনিবার্য, চার পর্বের মিষ্টি ঝগড়া

গল্পঃ 'বউ মানেই অনিবার্য, চার পর্বের
মিষ্টি ঝগড়া'

লেখকঃ ডাকনাম ইমু-ইমরান।
.
দেহের মাঝে সর্বচ্চ রাগ নিয়ে ঘরের দরজা
চাপিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বসে আছে নওশিন।
ইমুর মাঝেও আজ নওশিনের সমান সমান
রাগ। ইমু ঘরে ঢুকতেই নওশিন বলে উঠলো---
--এসে পরেছিস! আমি এতক্ষণ তোর জন্যই
অপেক্ষা করছিলাম। আমি চলে যাচ্ছি! আর
কোনদিনও ফিরবোনা। নিজের খেয়াল
রাখিস। আর শুন! গরমটা অনেক বেশি তাই
বেশি করে পানি পান করিস!
.
ইমু ঢের টের পাচ্ছে নওশিন অনেক রেগে
আছে। কারণ রেগে গেলেই নওশিন কেবল
ইমুকে তুইতোকারি বলা শুরু করে। তবে তার
মাঝেও রয়েছে সীমাহীন ভালবাসা। যা
শুধু ইমু নিজেই উপলদ্ধি করতে পারে। ইমু কি
হয়েছে, না হয়েছে জিজ্ঞাসু না করে বলল---
--ঐ যে আলমারির ড্রয়ারটায় কিছু টাকা
রাখা আছে! ঐ টাকাটা নিয়ে যা, পথে
লাগতে পারে।
--এলিয়েন! তুই কিন্তু এইবার আমার পিছুপিছু
ছুটবিনা!
--ঠিকাছে! ঠিকাছে! তোর পিছুপিছু ছুটতে
আমার বয়েই গেছে। তা কোথায় যাবি
সিদ্ধান্ত নিয়েছিস? টিকিট কেটেছিস? না
কাটলে বল, আমিই একটা টিকিট কেটে
দিচ্ছি!
--তোকে বলবো কেন? আমার যে দিকে
দুচোখ যায় সেদিকে চলে যাবো! তোর
টিকিট কাটা লাগবেনা!
--তোর দুচোখতো বাবার বাড়ি ছাড়া আর
কোনদিকেই যায়না! চল তোকে এগিয়ে
দিয়ে আসি!
--তোর এগিয়ে দিতে হবেনা। আমি একাই
যেতে পারবো।
--তাহলে এইবারের মতো আমার জন্য
টেবিলে খাবারটা বেরে রেখে দিয়ে যা!
--খবরদার! একদম আমার রাগ কমানোর
চেষ্টা করবিনা। এইবার বাবা তোর একটা
বিহিত করবে। তবেই ফিরবো, নয়তো না!
--আরে যা যা, খাবারটা বেরে দিয়ে চলে
যা, বাবা আমাকে খুব ভালো করেই জানে,
আমি কেমন! আর এটাও জানে তার মেয়েটা
কেমন!
--হ্যা যাচ্ছি, জিন্স প্যান গুলা যখন কাঁচবি
তখন কাঁদবি আর বলবি, "কি ভুলটাই না
করলাম" যখন সকাল বেলা আরামের ঘুম
ভেঙ্গে রান্না করে খেয়ে যেতে হবে, 'তখন
শুধু কষ্টে চোখের পানি আর নাকের পানি
ফেলবি। আমি যাচ্ছি....!
--যা, বাবাকে গিয়ে আমায় একটা ফোন
দিতে বলিস।
--চিন্তা করিসনা, উনি এখানে আসতেও
পারে। অল্প দুরত্ব তো! ফোন নাও দিতে
পারে!
--মানে?
--হা হা হা, তুই ভেবেছিস আমি আমার
বাবার কাছে যাবও তাইনা! ভুল ভেবেছিস,
আমিতো আমার শ্বশুর আব্বাজানের কাছে
চলে যাচ্ছি! তারপর সেই তোকে এসে
বুঝাবে "কত ধানে, কত চাউল"!
.
ইমু একটু থমকে গেলো নওশিনের কথা শুনে।
ভাবছে বাবাকে ও কিছু বললে আমায় আস্ত
রাখবেনা। পুরও কাহিনীটা তখন
উল্টোদিকে মোড় নেবে। ইমু একটু কাপা
কন্ঠে বলল---
--কেন! কেন! তুই আমার বাবার কাছে যাবি
কেন?
--বারে তুইয়ি তো বসর রাতে বলেছিলি!
'আজ থেকে তোর মা, আমার মা! তোর
বাবা, আমার বাবা! তোর ছোটভাই, আমার
ছোটভাই! আমিতো সেদিন থেকেই তাদের
নিজের মা-বাবাই জেনেছি। তাই আমার
বাবার কাছে আমি চলে যাচ্ছি।
--তোর বাবাতো বগুরাতে সেখানে যা!
আমার বাবার কাছে যাবি কেন?
--তোর বাবা বগুরা, তুই বললিনা, 'বাবা
আমাকে ভাল করেই জানে' দেখি কতটা
জানে!
--পাখি শুন, তোর কোথাও যাওয়া
লাগবেনা। আমি তোকে কাল বিকেলে
ঠিকি ঘুরতে নিয়ে যাবো,
--তোর এমন কাল আমি বিয়ের পর থেকেই
শুনছি। কতদিন হলো একটু বাইরে সবুজে
ঢাকা লেকের পারে গিয়ে বসিনা। একটু
বাতাসে দাঁড়াই না। চার দেয়ালের মধ্যে
থাকতে থাকতে আমার সব কোলাহল দিন
দিন নিমেষ হয়ে যাচ্ছে।
.
ইমু মনে মনে বলল, 'এমনিতেই যে
কোলাহলময়ী, এর পরেও আবার কোলাহল
বাড়াতে চাচ্ছে"
--বললাম তো কাল তোমায় নিয়ে সত্যি বেড়
হবো,
--সত্যিতো?
--সত্যি,
--না! না! তুই এইবারও মিথ্যা বলছিস!
.
কথাটা বলেই নওশিন ব্যাগের হুট টেনে
হাটা শুরু করলো। ইমু দৌড়ে গিয়ে সামনে
দু'হাত মেলে দাঁড়িয়ে বলল---
--পাখি প্লিজ যেওনা, আমি তোমায় সত্যি
বলছি কাল বেড়াতে নিয়ে যাবো।
.
নওশিন একটু আড়চোখে ইমুর দিকে তাকিয়ে
বলল--
--কি ব্যাপার আদরটা এতো বাড়লো কেন!
অনেক বেশি বেশিই লাগছে! ও তোর বাবার
বাড়িতে যাবার কথা বলেছি বলে তাইনা?
আমি সত্যিই যাচ্ছি, ভালো থাকিস।
--প্লিজ যেওনা পাখি,
--বাবাকে দেখে তোর খুব ভয় লাগে?
--হুম, তুমিতো সেটা জানোই!
--ঠিকাছে আমি যাবোনা, তবে তোকে এখন
একটা কাজ করতে হবে।
--কি বলো, তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।
পাপ্পি দিতে হবে! খায়িয়ে দিতে হবে!
মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম আনাতে হবে?
--জ্বী না, আপাতত নিচে নেমে আমার
জন্যে একটা আইসক্রিম আনলেই হবে।
--আমিতো মাত্র উঠলাম, এখন আইসক্রিম
খেতে হবেনা পাখি। তার চেয়ে ভালো,
চলো তোমায় ভাত খায়িয়ে দেই।
--ঐ তুই যাবিনা, আচ্ছা যেতে হবেনা,
আমিই চললাম!
.
নওশিন কথাটা বলেই ব্যাগের হুট আবার
ধরলো। ইমুও নওশিনের সাথে সাথে হাত
দিয়ে ব্যাগের হুট ধরে বলল---
--ঠিকাছে, ঠিকাছে, আমি যাচ্ছি। তুমি
একটু আমার জন্য খাবারটা বেরে রাইখো
কেমন!
--ঠিকাছে যা....
.
ইমু মুখটা মলিন করে টেনে টেনে কয়েক পা
বাড়িয়ে দরজার সামনে যাওয়াতেই নওশিন
ডাকলো---
--এই শোন এলিয়েন! কষ্ট করে আর এখন
নামতে হবেনা। যা গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে,
আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি। তুই
আইসক্রিম আনার বদলে শুয়ে শুয়ে আমার
মাথায় হাত বুলিয়ে দিবি।
.
ইমু আস্তে আস্তে বলল---
--রাক্ষসী! আগে খেয়ে নেই, তারপর কার
মাথায় কে হাত বুলিয়ে দেয় দেখা যাবে!
--কিরে কি বলছিস বিড়বিড় করে?
--কই, কই নাতো!
--তাহলে আমি যে শুনলাম,
--আমিতো বললাম, তোমার ব্যাগ থেকে
জামাকাপড় সব বের করে আলমারিতে
রেখে দিয়ো!
--ঐ ব্যাগটা ঐভাবেই গোছানো থাকবে,
কিছু বললেই বাপের বাড়ি। আমার না, তোর
বাপের বাড়ি মনে রাখিস!
.
ইমু হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো।
নওশিন বলল---
--যা এইবার ফ্রেস হয়ে আয়,
--হুম যাচ্ছি,
.
ইমু ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে এসে বসলো।
বেগুনভাজি, চিংড়িমাছ কচুরি দিয়ে
রান্না। ইমুর সামনে দেওয়াতেই বলল---
--এই জন্যেই তো এতো গলা চুলকায়!
.
নওশিন ভাতের মধ্যে রাখা চামিচটা
হাতে ধরে একটু উঁচু করেই রাগান্বিত গলায়
বলল---
--কি আমার গলা চুলকায়?
--তোমায় তো বলিনি! বললাম আমার, আমার
গলা চুলকায়।
--তাহলে তোর খাওয়া লাগবেনা, আমি ডিম
ভাজি করে নিয়ে আসি।
--না না, তা লাগবেনা এই দিয়েই চলবে। আর
কিছুই করতে হবেনা। এইটা তো আমার খুব
পছন্দের খাবার।
--হুম তাহলে এখন শুরু করোও,
--তুমি খাইছো?
--না,
--কেন?
--এমনিই তুমি খাবে তারপর খাবো,
--এখন বাজে কয়টা?
.
নওশিন দেয়ালঘড়িটার দিকে তাকিয়ে
বলল---
--৩ টা ৩৭ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড,
--তাহলে এখনো না খেয়ে বসে আছো কেন?
--তুমি তাহলে এতো দেরি করে এলে কেন?
--আজব! আমার কাজ থাকতে পারেনা?
--হুম পারে!
--তাহলে না খেয়ে আছো কেন?
--তোমার সাথে একসাথে খাবো বলে,
--তাহলে তোমার প্লেট কই? শুধু আমার জন্য
একটা প্লেট নিয়ে এলে যে?
--আমারতো বসে বসে তোমার খাওয়া
দেখতে ভালোলাগে, তাই তোমায় খাওয়া
শেষ হলে আমি খেতে বসবো!
--থাপ্পর দিয়ে তোর দাঁত ফালাই দিমু
(দুঃখিত ভয় পাবেন না, আপনাকে বলিনি)
এতক্ষণ যাবৎ না খেয়ে বসে আছিস কেন!
আবার এখন বলছিস আমার খাওয়া দেখতে
তোর ভালোলাগে। প্লেট আনলিনা কেন?
.
নওশিন এবার ইমুর মেজাজটা দেখে একটু ভয়ই
পেলো। নওশিন ভয়ে ভয়ে বলল---
--আমিতো তোমার প্লেটে খাবো বলে
একটাই প্লেট এনেছি!
.
নওশিন মুহূর্তের মধ্যে ইমুকে সাত পাঁচ বুঝটা
বুঝাতে চাইলো। তবে ইমু সেটা ঠিকি টের
পেয়েছে। ইমু নওশিন-কে তার পাশের
চেয়ারে আসতে বলল। নওশিন আস্তে করে
এসে ইমুর পাশের চেয়ারে বসলো। পাগলীটা
মাথা নিচু করে বসে আছে। ইমু বুঝতে
পারছে। হয়তো একটু ভয় পেয়েছে। ইমু ভাত
মাখিয়ে একনলা ভাত নওশিনের মুখের
সামনে ধরলো। নওশিন ভাতটা মুখে নিয়ে
চিবাইতে চিবাইতে বলল---
--তুমি আমায় ধমক দাও কেন?
--পাগলী আমার, তুই না খেয়ে থাকিস কেন?
আমি কখন বাসায় ফিরি নাফিরি তার কি
নির্দিষ্ট সময় আছে নাকি। এখন থেকে না
খেয়ে বসে থাকবিনা।
--থাকবো! ১০০ বার থাকবো! তুমি না খেলে
আমি আগে খাবো কেন?
.
কথাটা শেষ না করতেই নওশিনের গলায়
ভাত আটকে গেল। ইমু সাথে সাথে টেবিল
থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে নওশিনের
মুখে ধরলো। পাগলীটার চোখ দিয়ে একদম
সচ্ছ পানি চলে এসেছে। মুখটাও অনেক
রক্তবর্ণ হয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে
শরীরের সমস্ত রক্ত নাকের ডগায় এসে ভীর
জমিয়েছে। পাগলীটার এই লাল টুকটুকে
নাকটা যখন খুব বেশি রেগে যায় তখন দেখা
যায়। আর যখন ইমুর হাতের একটু শিহরণ পায়
তখন। ইমু নওশিনের উরনাটা দিয়ে
নওশিনের চোখের পানি গুলো মুছে দিলো।
নওশিন বলে উঠলো---
--কি ব্যাপার!
--কি?
--তুমি না খেয়ে শুধু আমায় খায়িয়ে দিচ্ছ
কেন?
--কই, আমি এইবার দিয়ে পাঁচ বার খেলাম
আর তোমায় দিলাম চারবার,
--একদম মিথ্যা বলবেনা, তুমি ভেবেছো
আমি খেয়াল করিনি না!
.
নওশিন টান দিয়ে ভাতের প্লেট নিয়ে আরও
ভাত নিলো। এইবার ভাত মাখিয়ে নওশিন
ইমুকে খায়িয়ে দিতে লাগলো।
ইমু আর নওশিনের বিয়ের আজ দের বৎসর।
ছোট্ট একটি ঘর। কিছু ছোট্ট হাড়ি
পাতিলার সাথে নওশিনের সারাবেলা
খেলাধুলা। আর একটু অবসরে টিভিসেটের
সামনে বসে ইমুর প্রতি ভাবনা। সব
মিলিয়ে ভাবনায় নওশিনের ভিষন
ব্যস্ততা। রাতদিন ২৪ ঘন্টরার মধ্যে
প্রতিদিন ৪ ঘন্টাই তাদের তুমুলঝগড়া করে
কাটে।
(১ম পর্ব) সকালের ঝগরাঃ
ভোর বেলা নওশিন ঘুম থেকে উঠেই ইমুকে
ডাকা শুরু করবে---
--এই উঠো, উঠো বলছি, কি হলোও শুনতে
পাচ্ছনা? উঠো!
.
ইমু ডাকটা না শুনার জন্য পাশ থেকে
নওশিনের বালিশটা নিয়ে মাথার উপরে
রাখে! একটা বালিশ মাথার নিচে, আরেক
উপরে! তবুও যদি ভোরের কাকের চেঁচামেচি
থেকে বাঁচা যায়। ইমু বালিশ চেপে আরও
গাপ্পি মেরে ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু
নওশিন ইমু মাথার উপর থেকে বালিশ টেনে
আরও জোড়ে চেঁচিয়ে ইমুকে ডাকে।
নওশিনের এই ডাকে আসে পাশের বাসার
মানুষ গুলোও ইমুর সাথে জেগে যায়। ইমু
রেগে গিয়ে নাকের মাথায় কথা বাজিয়ে
বলে---
--এই তোমার সমস্যা কি?
--আমার সমস্যা তুমি!
--মানে?
--হুম, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নাও। আমি
চা নাস্তা আনছি।
--তো তুমি আগে নাস্তা বানাও, তারপর
আমার ডাকো।
--না,
--কি না?
--আমি তোমায় ছেড়ে একলা বিছানা থেকে
উঠবো না!
--তাহলে শুয়ে থাকো!
--তাহলে নাস্তা কে বানাবে?
--ভূতে বানাবে নাস্তা!
.
ইমু কথাটা বলে অন্যপাশ ঘুরে শুয়ে পরলো।
নওশিন ইমুর পাশেই হাটুভেঙ্গে বসে আছে।
ইমু চোখের পাতাটা নামাতেই নওশিন ইমুর
গালে পাপ্পি দিয়ে বলল---
--তুমি শুয়ে থাকলে। আমার তোমার বুকের
উপর শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। আমার আর
কিছুই করতে ভালোলাগেনা!
.
ইমু নওশিনের দিকে ঘুরে তাকালো।
পাগলীটার কথা শুনে ইমু দু'হাত ধরে টেনে
নওশিন কে বুকে টেনে নিয়ে বলল---
--সারারাত বুকে উপর ঘুমিয়েছিস, ঘুম হয়নি?
.
নওশিন বুকে মাথা রেখেই বলতে লাগলো---
--আমিতো এই বুকে সারাজীবনের জন্য
ঘুমিয়ে যেতে চাই,
.
ইমু নওশিনকে বুকে থেকে দু'হাত দিয়ে
সরিয়ে নিজেও উঠে বসলো। নওশিনের
চোখে চোখ পাখরিয়ে বলল---
--সাঁঝ সকালবেলা তোর এইসব কথা না বললে
হতোনা?
.
নওশিন ইমুকে একটু রাগান্বিত দেখেই শক্ত
করে জরিয়ে ধরে বলল---
--ভুল বলিনি এই বুকটায় সারাজীবনের জন্য
ঘুমাতে পারলে আমার আর কিছুই চাইবার
থাকবেনা।
--হ হ হইছে তোর নায়িকা নায়িকা ভাব!
--এই তুমি নায়িকা ভাব দেখলে কই? আমি
কিছু বললেইতো তোমায় নায়িকা নায়িকা
ভাব লাগে! সারারাত কি স্বপ্নে
নায়িকাদের সাথে কাটাস! আমার কিন্তু
মেজাজ খুব খারাপ হচ্ছে! তুই আমাকে
নায়িকা বলিস কেন?
--তো কি তুইতো সব গল্পেই ইমুর নায়িকা
তাইনা?
--না,
--না মানে?
--আমি হইলাম আমার ইমুর নওশিন,
--হা হা হা পাগলী যাও নাস্তা বানাও,
আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
.
ঘুম থেকে উঠার এই পর্ব শেষ হতে না হতেই
খাবার টেবিলে শুরু হয়ে যাবে।
.
(২য় পর্ব) নাস্তার সময়ঃ ইমু বলবে---
--সকালে একটু সবজী ভাজি করলে তো
পারো। প্রত্যেকদিনই ঘোড়ার ডিম ভাজি।
দাদা নিশ্চয় কর্ক মুগরীর ব্যবসায়ী ছিল!
--ঐ তুমি কিন্তু আবোলতাবোল পেচাল
পারবেনা। যা বানিয়েছি সেটাই খাবে।
আর যদি ভালো না লাগে, রান্নাঘরটা
ওদিকে আছে!
--না এবার মনে হচ্ছে করেই ফেলতে হবে!
--কি?
--কিছুনা....!
--বলো বলছি?
--দিয়ার কথা ভাবছি, মেয়েটা আর কিছু
পারুক না পারুক বাসায় গেলে কত ধরনের
রেসিপি এনে যে সামনে ধরতো! রাজি হয়ে
যাওয়াটাই তখন ভাল ছিলো। অন্তত কব্জি
ডুবিয়ে তো অনেক খাবার খেতে পারতাম।
--ঐ তুই আমার পাশে বসে অন্য মেয়ের কথা
ভাবিস! শোন! এইসব খাবার তোকে
পটানোর জন্যেই খাওয়াতো। বিয়ের পর
আমিতো তোকে রুটি বানিয়ে খাওয়াচ্ছি,
ও এলে তোকে পোড়া চাপরি খাওয়াতো!
তখন বুঝতি কেমন লাগে তোর বিয়ের পরের
রেসিপি।
.
ইমু রুটি চিবাতে চিবাতে বলল---
--এসব তোমার চিন্তা ভাবনা,
--তাহলে যা, তোর ঐ জিঞ্জার ভার্শন
বান্ধবীটাকেই নিয়ে আয়, তোকে
রান্নাবান্না করে খাওয়াক!
.
কথাটা বলেই নওশিন হাতের কাছের কাচের
গ্লাসটা ভেঙ্গে রুমে গিয়ে ভেতর থেকে
ছিটকানি মেরে দিলো। আর এদিকে ইমু
পিছন পিছন গিয়ে দরজায় নক করতে করতে
গিয়ে দু'হাত লাল করে ফেলল। বেশ কিছুক্ষণ
পর নওশিন চোখ মুছতে মুছতে এসে দরজা
খুলল। ইমু বলল---
--কি ব্যাপার তুমি কান্না করছো কেন?
--কেন তুই জানিস না! তুই শুধু অন্য মেয়েদের
কথা আমায় শুনাস! তুই অন্যদের কেই
ভালবাসিস, তাদের সাথেই থাকিস। আমার
কথা তোর শুনতেও হবেনা, আর বলতেও
হবেনা।
.
এইটা হলো দিনের ২য় পর্বের ঝগড়া। অনুভব
করা যায় কতটুকু ভালবাসা তাদের মাঝে?
আমি কিন্তু দিশেহারা। ইমু তারপরেই তার
কর্মস্থলে চলে যায়। আর নওশিন একা একাই
রুমের মাঝে এটা ওটা পায়চারী করতে
থাকে। যতটুকু সময় ইমু বাহিরে থাকে ততটুকু
সময়ই নওশিনের মুখ বন্ধ থাকে। তবে এর
মধ্যেও যদি ইমু কিছু উলটপালট করে রাখে
তাহলেই ফোন কলে শুরু হয় দিনের ৩য় পর্বের
ঝগড়াঃ
.
--হ্যালো,
.
নওশিনের হাই/হ্যালো বাদ দিয়েই বকতে
শুরু করে---
--ঐ তোকে না বলছিলাম কাল বাজার থেকে
ভেন্ডী, আলু, পোটল আনতে! তুই করোল্লা,
ড্যারোস আনছিস কেন? আজ বাসায় আর
রান্না হবেনা। বাইরেই কিছু খেয়ে নিশ!
--তুমি?
--আমার কথা তোর ভাবতে হবেনা, আমি
আমার জন্য অনেক আগেই ফ্রিজে দুইখন্ড
তেলাপিয়া মাছ রেখে দিয়েছিলাম।
সেটাই রান্না করে খাবো।
--তাহলে আমি আসবোনা কেন?
--তুই আগের সাপ্তাহে বাজার থেকে
তেলাপিয়া মাছ এনেছিলি?
--না,
--তাহলে খেতে চাস কি করে? আর তাছাড়া
তুই খুব ভালো করেই জানিস তেলাপিয়া
মাছ আমার খুব পছন্দের, খেতে গেলে
দুইটুকরাই লাগে।
--আচ্ছা ঠিকাছে রান্না করে খাও,
.
ইমু খুব ভালো করেই জানে নওশিন
রান্নাবান্না শেষ করে তার জন্য অপেক্ষা
করবে। আর এইটাও জানে ওর কথা বলার
ইচ্ছে হয়েছিলো তাই ফোন দিয়ে
আবোলতাবোল বকলো। বিকেলটা একটু
ব্যস্ততায় যায় বলে আর ঝগড়া হওয়ার সুযোগ
থাকেনা। রাতের খাবার শেষ করে যখন
ঘুমাতে যায়। তখনই শুরু ৪র্থ পর্বের ঝগ্রা।
নওশিনের ঠিকঠাক করা বিছানাটার উপর
ইমু গড়িয়ে পরে। নওশিন খাবারের প্লেট
ধুয়ে মেজে রুমে এসে দেখে ইমু শুয়ে আছে।
নওশিন ইমুকে একলা শুয়ে যাওয়া দেখে
বলে---
--কি ব্যাপার! তুমি শুয়ে পরলে কেন?
মশারী টানাবে কে? উঠো উঠে মশারী
টানিয়ে শুয়ে পর।
.
ইমু ঘুম ঘুম গলায় বলে---
--ইমু ঘুমিয়ে গেছে, ওকে আর ডেকো না!
--ফ্যাজলামি করো উঠো বলছি, বিছানা
আজ আমি ঠিক করছি, তুমি মশারী
টানাবে। এইটায় কথা ছিলো। উঠো,
--তুমি আজ টানাও, কাল আমি সব করবো!
--আমাকে আজ দুইদিন ধরে একই বাক্য
শুনাচ্ছো, আমি এতটা বোকা নই, উঠো
বলতেছি,
.
নওশিন ইমু টেনে তুলল। অতঃপর মশারীর
দু'কোনের রশি ইমুর হাতে ধরিয়ে দিলো।
ইমু ঘুম ঘুম চোখে পাগলী বউটার কথা শুনেই
শুয়ে পরলো। আর নওশিন বরাবরের মতো
তার বুকে।

No comments:

Post a Comment