Tuesday, February 14, 2017

গল্পঃ সাইকো গার্লফ্রেন্ড

গল্পঃ সাইকো গার্লফ্রেন্ড
.
📝 লেখাঃ প্রিয় নীলকাব্য (স্বপ্নপরির হবু
বর)
.
-:ওই তুই অর্দির সাথে এত কি কথা বলিস?
তোকে না বলছি, কোন মেয়ের ধারের
কাছেও না ঘেষতে।
--কোই ঘেষলাম। সর্দি থুক্কু অর্দির সাথে
আমিতো নোট নিয়ে কথা বলছিলাম।
-:নোট-ফোট জাই হোক, আর কোন মেয়ের
সাথে ভুলেও কথা তো দূরে থাক চোখ তুলে
দেখলে তোর পিন্ডি এক্কে বারে গেলে
দিবো।
--কিন্তু....(কিছু না বলতে দিয়েই হন হন করে
চলে গেল)
.
এতক্ষন কথা হচ্ছিলো মৌ আর নীলের
সাথে। মৌ অত্যন্ত রাগি। বড়লোক বাপের
একমাত্র মেয়ে। আর ওভার প্রসেসিভ
টাইপের একটা মেয়ে। কিন্তু নীল শান্ত,
ভদ্র, আর একটু ফাজিল টাইপের ছেলে।
তারা দুই জনই দুজনাকে ভালবাসে। সাড়ে
এক বছর থুক্কু কি বলি, দেড় বছর তাদের
রিলেশনশিপ। তাদের রিলেশন শুরু হইছে
নীলের গালে দুইটা ঠাডা পরে। সরমের
কথা আর বলতে চাচ্ছি না। তাহলে বুঝেন
কতটা প্যারাই থাকে নীল।
.
আজকাল মৌ নীলকে একটু বেশিই প্যারা
দিচ্ছে। যেমনঃ
সকাল সকাল ঘুমাতে যাওয়া। (যদি রাতে
ফেবুতে দেখে, তাইলে আমার চৌদ্দ গুষ্টি
উদ্ধার)
খুব ভোরে উঠে নামায পড়ে হাটতে যাওয়া।
(ঘুমালে বাড়িতে এশে তুল কালাম বাধিয়ে
দেয়)
ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করা। বন্ধুদের সাথে
আড্ডা না দেওয়া। (দিতে দেখলে কান ধরে
এনে রাম কেলান কেলায়)
আর অন্য মেয়েদের সাথে কথা তো দূরে
থাক দেখলেয় কি করবে তা বুঝতেই
পারছেন।
.
তাই নীল অনেক ভাবা ভাবি করে (দুই
এক্কে দুই, তিন এক্কে তিন মিললো) তারপর
ঠিক করলো সে আর রিলেশন রাখবে না। সে
জানে রিলেশন না রাখলে কি হবে তার।
তবুও এত প্যারা আর সহ্য করতে পারছে না
নীল। তাই ঠিক করলো সে ব্রেকআপ করবে।
.
কলেজে পুকুর পাড়ে বসে আছে দুইজনঃ
-:কেমন আছে, আমার বাবুটা? (মৌ)
--ভাল আছি, তুমি?
-:আমার বাবুটার মুখ দেখলেই আমি ভাল
হইয়া যায়।
--আচ্ছা ভাল। তোমার সাথে আমার একটা
জরুরি কথা ছিল।
-:তোমার একটা কথা কেন? সারা জীবন শুধু
তোমার কথায় শুনে যেতে চাই। বলো, কি
বলবে?
--আমার ব্রেকআপ চাই।
মৌ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে
পারছেনা
-: কি বললে?
--হ্যা, আমি ব্রেকআপ চাই। আমি আর
তোমার সাথে রিলেশন রাখতে চাই না।
-:কি বলছ? প্লিজ এইসব ফালামি কর না।
ভাল লাগে না আমার এইসব। (চোখে পানির
ঢেউ বইছে)
--আমি ফাজলামি করছি না। আমি একদম
সিরিয়াস। আমার ব্রেকআপ লাগবে।
-:প্লিজ নীল এইসব করো না। তুমি জানো
তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।
কি দোস করেছি আমি? তুমি এমন করছো
কেন? (কেদে দিয়ে)
--আমার ভুল তোমার সাথে রিলেশন করে।
আর সেই ভুল করতে চাচ্ছি না। তুমি ভাল
থেকো। আমাকে ভুলে যাও।
-:নীল...নীল..
কিছু না বলতে দিয়েই নীল চলে গেল। আর
মৌ অঝর ধারাই কাদছে।
.
দুই দিন চলে গেল। নীল খুব ভালই আছে।
স্বাধীন ভাবে যাখন যা ইচ্ছা তাই করছে।
তবে মৌ কে একটু মিস করছে। তা মজা করার
পিছনে ভুলে যাচ্ছে।
এক সপ্তাহ হয়ে গেল। মৌ কে নীল
দেখিনি। কলেজেও আসেনা। বিকেলে
আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাড়িতে
ফিরছে হেটে হেটে। চারিদিকে অন্ধকার,
হঠাৎ পিছন থেকে মাথার উপরে সজরে
একটা বাড়ি। এক বাড়িতেই বেহুশ নীল।
অনেকক্ষণ পর নীলের জ্ঞ্যন ফিরলো।
মাথাই প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে। চোখ
খুলতেই নীল নিজে আবিষ্কার করলো সে
কোন পুরাতন গোডাউনে একটা চেয়ারে
বাধা অবস্থায়। মাথার উপরে শুধু একটা
লাইট জলছে। তাছাড়া সব অন্ধকার। এসব
দেখে নীলের আর বুঝতে বাকি থাকলো না
সে কিডন্যাপ হইছে। অনেক চেঁচামেচি
করলো। তাতে তো কোন লাভ হইলো না।
আরো ভয় দেখিয়ে গেল:
--:সালার বেটা, বেশি চিল্লা-পাল্লা
করলে জিভ টাইনাছীড়া ফালাবোনে।
এই কথা শুনে নীল তো একদম চুপশে গেল। আর
কোন কিছু করল না।
সেদিন সারা রাত ইদুরের পার্টির জন্য
ঘুমাতে পারল না। সকালে একটু ঘুম লাগলেও
কিছু কথা শুনে ঘুম ভেংগে গেল।কথা গুলো
ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না।
কিছুক্ষণ পর দরজা দিয়ে তিন জন ভিতরে
ধুকলো। অন্ধকারের জন্য কিছুই বোঝা
জাচ্ছিল না। নীলের মাথার উপর লাইট
জলছিলো আর তার তার সামনে আশতেই
নীল দেখে এমন ভাবে আতকে উঠল, যে ভুত
দেখলেও এমন ভাবে অবাক হতো না।
হ্যা সে মৌ কে দেখল।
নীল মৌকে দেখে মাথাই দশ বারটা ঠাডা
পড়ল। নীলের কিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছে
না। সে হা করে অবাক চোখে মৌ এর দিকে
তাকিয়ে আছে।
-:আপনারা বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করেন।
আমি যা করার করবো।(মৌ)
---জি আফা।(গুন্ডা)
কথা শুনে নীলের হুশ আসলো।
--তাহলে তুমি আমাকে কিডন্যাপ করেছে!
কিন্তু কেন?
-:খুব অবাক হচ্ছো। তাই না? আমিও
হইছিলাম তুমি যেদিন আমার সাথে
ব্রেকআপ করেছিলে।
--কিন্তু তাই বলে কিডন্যাপ?
-:হ্যা, কিডন্যাপ!
ব্যাগ থেকে বড় একটা চুরি বের করল। আর
আমার সামনে একটা টেবিল নিয়ে এশে
বসলো। এতক্ষণে নীল বুজতে পারল, তার
জীবনের টাইম টা ফুড়ুত হতে চলেছে। সে
আরও দেখল মৌ এর চোখ ফুলে লাল হয়ে
গেছে। মৌ ব্রেকআপের পর থেকে আর ঘুমাই
নি, শুধু কেঁদেছে।
-:জানো নীল, তোমাকে না আমি অনেক
ভালবেসেছিলাম। তোমাকে আমার জীবন
দিয়ে ছিলাম। কিন্তু তুমি তার কখনই দাম
দাও নি। শুধু অভিনয় করেছিলে। আর এই
জীবনে যেহেতু তুমি নেই, তাহলে আর লাভ
কি বেচে থেকে? (কেদে কেদে)
এই বলে মৌ নিজের হাতে এক পোস
মারলো। গল গল করে রক্ত গরিয়ে পড়তে
লাগল।
--মৌ প্লিজ এসব করনা। তুমি দরকার হই
আমাকে মার তবুও নিজে কে মের না।
-:তোমাকে নিয়ে অনেক সপ্ন বেধেছিলাম।
ছোট্ট একটা সংসার হবে আমাদের, ছোট্ট
একটা পরিবার। কিন্তু....
আবার হাতে ছুরি দিয়ে পোস মেরে কেটে
দিল। নীল প্রচন্ড জোরা জুরি করছে কিন্তু
কিছুই করে পারছে না। তার শরীর যে
বাধা।
--মৌ, মৌ। দয়া করে থাম। তুমি আমাকে
মেরে ফেল তাও হাত কেটও না। তুমি
বাচবে না।
-:বেচে থাকতে চাই না আমি। তোমাকে না
পেলে.......
অতিরিক্ত রক্ত পড়ে যাওয়ার কারনে মৌ
ঢুলে পড়ে গেল মাটিতে। তা দেখে নীল
চিল্লাতে শুরু করে দিল। বাইরে থেকে
গুন্ডারা এসে মৌ এর অবস্থা দেখে সব
জেনে বুঝতে পারল। তাদের সহায়তায় নীল
মৌ কে হাসপাতালে নিয়ে গেল।
.
হাসপাতালে মৌ কে রক্ত দিল নীল। অনেক
রক্ত দেওয়ায় নীলও অনেক দুর্বল হয়ে
পড়েছে। তাই নীলকেও মৌ এর পাশের
বেডে রাখল।
.
অনেকক্ষণ পর মৌ এর জ্ঞ্যান ফিরল।
জ্ঞ্যান ফিরতেয় মৌ দেখলে নীল তার হাত
ধরে কাদছে। মৌ নীলের হাত শক্ত করে
ধরতেই নীল মৌ এর দিকে তাকাল চোখ
মুছতে মুছতে। কিছু বলতে না দিয়েই নীল
মৌ কে গলাই জড়িয়ে ধরে আরো জোরে
কাদতে লাগল। এই দেখে মৌও আর নিজেকে
সামলাতে পারল না। সেও কেদে দিল।
--তুমি কেন, এমন করলা? তোমার যদি কিছু
হয়ে যেত? (নীল মৌ এর চোখ দুই হাত দিয়ে
মুছতে মুছতে বলল)
-:তুমি কেন, ব্রেকআপ করলে? তুমি জানো
না, তোমাকে ছাড়া আমি বাচব না। (দুই
জনই কাদছে)
--আমি তোমার উপরে কি একটু রাগও করতে
পারব না? আর তুমি কি করে ভাবলে
তোমাকে ছাড়া আমি বাচব।
-:তাহলে কেন ছেড়ে চলে যেতে
চেয়েছিলে? আমি অনেক কষ্ট পাইছি।
--আর কোন দিনও ছেড়ে চলে যাবো না। তার
জন্যই একটা ব্যবস্থা করছি।
-:কি ব্যবস্থা?
--বিয়ে করবে, আমাই? আমার পাগল
বাবুনিটা। (পকেট থেকে আংটি বের করে
সোজা সুজি প্রোপোজ)
মৌ কিছুই বলতে পারছে না। শুধুই কেদে
চলেছে। কিছু না বলতে দিয়েই আংটিটা
পরিয়ে দিল।
-:ওই আমি কি বলেছি। তোমাকে আমি
বিয়ে করবো?
--আইচ্ছা, খুলে দাও। হসপিটালের নার্সগুলা
না যা সুন্দর। তাদের যে কোন একজন কে
পড়িয়ে দিয়ে আসি।
-:ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিব। আমাকে
বিয়ে করে আবার অন্য মেয়ে দের দিকে
তাকানো।
--তুমিই তো বললা, বিয়ে করবা না।
-:কখন বললাম? তোমাকে বিয়ে করবো
নাতো কাকে করবো। খালি বেশি বুঝে!
--সরি, সরি। মাফ করেন, বউ পাখি।
-:হি হি হি।
নীলকে প্যারা থেকে এই জীবনে আর কেউ
বাচাতে পারবে না। এই ভেবে নীলও হা হা
হা.....
.
[চলতে থাক তাদের খুনশুটি ভালবাসা। কোন
কিছু জাতে ভাংতে না পারে তাদের এই
বাধন। সবাই দোয়া করবেন।]

No comments:

Post a Comment