Tuesday, February 21, 2017

আজ রুপার জন্মদিন

[আজ রুপার জন্মদিন]
.
প্রতিদিনের মত আজকে আমাকে টেনে ঘুম
থেকে তুলা হয়েছে সেজন্য নাস্তার টেবিলে
বসে বসে ঝিমাচ্ছি আগে আম্মু কান ধরে ঘুম
থেকে তুলতেন বিয়া করে পরছি আরো বিপদে
রুপা অবশ্য কান ধরে না তবে ওর কামড়ানোর
অভ্যাস আছে সে আমাকে কামড়িয়ে তুলে।।
প্রেমময় জীবন ভালই ছিল বিবাহিত জীবন পুরাই
তেজপাতা কথায় বলেনা "সুখে থাকতে ভূতে
কিলায়"
-এই তুই এইরকম ঝিমাচ্ছিস কেন??(রুপা)
তুই করে বলায় আপনারা আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই
প্রথমে ছিল বেষ্ট ক্রাশ এরপর বেষ্ট বান্ধবী
পরে হইছে বেষ্ট প্রেমিকা তারপর এখন হইছে
বেষ্ট বউ সুতরাং তার পদ উন্নতি হয়েছে ঠিকি কিন্তু
মুখের ভাষা তুই থেকে তুমিতে উন্নত হয়নি।।।
-তর কামড়ে বিষ ছিল সেজন্য ধীরে ধীরে
মৃত্যুর দিকে যাচ্ছি মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি
বাক্সের ভিতর ঢুকে যাব।।
এমন সময় টেবিলে আম্মু আসলেন আম্মু
চেয়ারে বসেই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন...
-এই তর গাল লাল কেন???(আম্মু)
বাঁশ দেয়ার উত্তম সুযোগ হাত ছাড়া করা যায় না।।।
-আর বলিও না আম্মু কুত্তা কামড় দিয়েছে।।।(আমি)
-বলিস কি কুত্তা কোন দুঃখে তরে কামড় দিতে
যাবে।।।
-সেইটা কুত্তারে জিজ্ঞাস করতে হবে।।।
রুপা কুত্তা শুনে আমার দিকে অগ্নি চোখে
তাকাচ্ছে যেন চান্স পাইলেই আমারে বুমা
মেরে উড়াইয়া দিবে.....যাই হউক আমি টেবিল
থেকে উঠে রুমে এসেছি বর্তমানে তারা বউ-
শ্বাশুড়ি গল্প করছেন এই গল্প অনেক্ষন
চলবে।।।।
.
আমি অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি যত তাড়াতাড়ি যাওয়া
যায় ততই ভাল হঠাৎ দেখা যাবে রুপা এসেই আমাকে
গলা টিপে বাক্সের ভিতর ঢুকিয়ে দিবে এই মেয়ে
অনেক ডেঞ্জারাস।।।যা ভেবেছিলাম সেটাই হল
রুপা এসেই আমার দিকে গুল্লি করা শুরু করছে
অর্থাৎ অগ্নি বাক্য বলা....অগ্নি চোখে আমাকে
বলল,,
-তুই আমাকে কুত্তা বললি কেন..(রুপা)
-তরে কখন বললাম....
-গালে তো আমিই কামড় দিছি।।।
-সরি তাহলে কুত্তি হবে তুই তো আর ছেলে না
যে কুত্তা হবি।।
-দেখ বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমি এখন
তর বন্ধু না তর বউ হই।।
-সেটাই তো আফসুস রে নিজ ইচ্ছায় গলায় দড়ি দিছি
এখন তো ফাঁসিতে ঝুলতেই হবে।।।
-মানে...
-কোন মানে নাই সুইট বউ মানে খুঁজতে
গেলেই বিপদ অনিবার্য।।আমি এখন যাচ্ছি কামড়া না
দিয়ে গালে একটা কিচুমিচু দাও তো।।।
-ইচ্ছা করছে একটা থাপ্পড় দিতে।।
-তাহলে থাক আর লাগবে না।।।
.
অফিসে চলে আসলাম আজ রুপাকে রাগিয়ে দিয়ে
এসেছি সো আজকে সারা দিন ওর মুড অফ
থাকবে।।এবার রুপা সম্পর্কে বলি উনি আমার এত্তু
গুলান বান্ধবীদের মধ্যে বেষ্ট বান্ধবী
ছিলেন আর ক্রাশের মধ্যে ছিলেন সর্বোচ্চ
ক্রাশ নাম্বার প্রাপ্ত বালিকা।।এবার বিয়ে টা কিভাবে হল
বলি আম্মুর কাছে এই মেয়েটা অনেক কিছু উনি
মত একটাই দিয়েছেন তর যদি বিয়ে করতে হয়
তাহলে রুপাকেই করবি নইলে চিরকুমার থাকবি লও
ঠ্যেলা তারপর আমিও বহু ভেবে চিন্তে দেখলাম
সত্যিই এই মেয়েটা ছাড়া আমার লাইফ টা পরিপূর্ণ
হবেনা হউক না দিনে ১০০বার জগড়া সেই জগড়ার
মধ্যে থাকবে রাগ,অভিমান,কেয়ারিং আর অনেক
ভালবাসা।।।
.
বিকেল ২টা
রুপা ফোন দিয়েছে আমি তো দেখে অবাক
ভেবেছিলাম আজ ফোন দিবেনা বাসায় যাওয়ার পর
কথাও বলবে না।।।
-হ্যালো...(আমি)
-তুমি কি তাড়াতাড়ি আসবে।।।
-কিছু কি হয়েছে।।।
-হবেটা আবার কি আসতে বলছি আসবে।।।
-আচ্ছা আসব।।।
.
ফোন রেখেই আমি শার্লাক হোমসের মত
গভীর ভাবে ভাবতে লাগলাম নিশ্চই বিশেষ
কোন কারণ আছে এমনিতেই আমি সব কিছু ভূলে
যাই আজকে হয়ত কোন বিশেষ দিন আর আমি
ভূলে বসে আছি।।।আজ কি আমাদের বিবাহ
বার্ষিকী দূর যা বিয়েই তো করলাম ৫মাস হবে
তাহলে রুপার জন্মদিন খাইছেরে রুপার জন্ম তারিখ
ভূলে গেছি অবশ্য আমার নিজের টাই সব সময়
মনে থাকে না ওর টা কেমতে থাকবে।।।অতঃপর
মোবাইলের নোটস গুলা দেখতে লাগলাম যা
ভেবেছিলাম সেটাই রুপার জন্মদিন আর আমি
মেয়েটাকে সকালে জন্মদিনের উইশ না করে
উল্টা রাগিয়ে দিয়ে এসেছি।।।
.
ভেবেছিলাম আজ তাড়াতাড়ি ছুটি পেয়ে যাব কিন্তু
কপাল খারাপ সবার শেষে যেতে হল শালার চাকরি
মন চাচ্ছে বস সাহেব রে গুল্লি কইরা খুল্লি উড়াইয়া
দেই।।।এখনো রুপা ফোন দিচ্ছে আমি ধরছিনা
কারণ এই নিয়ে কম হলে ৩৩বার ফোন দিয়েছি
প্রতিবারই বলছি এইত ৩০মিনিটের ভিতর চলে
আসছে এখন আর মিথ্যা বলতে ভাল লাগছেনা।।।
রাত ১০টার দিকে বাসায় আসলাম।।।এসে দেখি আম্মু
আর রুপা গভীর মনযোগ সহকারে টিভির দিকে
তাকিয়ে আছেন আব্বু মনে হয় পাশের রুমে,,
-আম্মু তোমাদের কি খাওয়া শেষ।।।
-হ্যাঁ আমরা খেয়ে নিয়েছি।।।
-বল কি আমাকে রেখেই খেয়ে ফেলেছ।।।
-অবশ্যই যা তুই গিয়ে এবার খেয়ে নে।।।
অতঃপর বুঝিতে পারিলাম তাহারা ভিতরে ভিতরে আমার
উপর ভয়ংকর রকম রাগান্বিত কিন্তু বাহিরে সেটা
প্রকাশ পাচ্ছেনা।।।আমিও তাহলে একটু ভাব মারি...
-আচ্ছা তাহলে তো হয়েই গেল আমিও ফ্রেন্ড
একটার বাসায় খেয়ে এসেছি।।
-ভালই তাহলে ঘুমাতে যা রুপা আমার কাছে
ঘুমাবে।।।
শুকনা গলায় আমিও বললাম আচ্ছা আমি একাই ঘুমাই।।।।
.
বিছানায় এসে পরলাম বিপদে এক খালি পেট দুই
কোলবালিশ নাই আমি আবার কোলবালিশ ছাড়া
ঘুমাতে পারি না এখন এইটা খুঁজলেও পাব না বিয়ের পর
রুপা ওইটাকে কেটে টুকরা টুকরা করছে।।।কিছুক্ষণ
বিছানায় গড়াগড়ি করে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম এসেই
চমকে উঠলাম রুপা গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে
কোন ফাঁকে যে বারান্দায় এসেছে বলতে পারব
না।।রুপাকে চাঁদের আলোয় অসম্ভব সুন্দর
লাগছে কিন্তু ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে
নিঃশব্দে শুধু মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে
উঠছে।।।
-এই তোমার কি হয়েছে এইরকম ভাবে কাঁদছ
কেন???
আমার মুখ দিয়ে তুমি বের হয়ে গেছে সেইটা
শুনে আমি নিজেই অবাক....
-কোন উত্তর নাই।।।
-কি হল....কথা বলছ না কেন??
-কাঁদতে ভাল লাগছে তাই কাঁদছি।।।
-রুপা আজ তোমার জন্মদিন ছিল তাই না।।।
-জানিনা.....
-ভেবেছ আমি ভূলে গেছি।।।
-প্রতিবারই ভূলে যাও সো আজকেও ভূলে গেছ
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।।
-মনে হয় এইবার ভূলি নাই এই দেখ...
আমি একটা প্যাকেট দিলাম রুপার হাতে প্যাকেট
খুলে রুপা অবাক অনেক গুলো পায়েল সেটার
ভিতর.....আমি ইচ্ছা করেই অনেক গুলা কিনেছি কারণ
রুপা সব থেকে বেশি পায়েল পছন্দ করে।।।রুপা
হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে আবার কাঁদতে লাগল অবশ্য
এখন আনন্দেই কাঁদছে...
-রুপা....
-কি????
-চল কেক কাটব....
-কেক কোথায়??
-রুম থেকে বের হলেই তো দেখবে।।।
.
রুম থেকে বেড় হয়ে রুপা আবার পুরাপুরি চমকে
গেছে টেবিলে একটা বেশ বড় একটা চকলেট
কেক সেটার মধ্যে লিখা হ্যাপি বার্থডে
রুপা....আম্মু এবং আব্বু কেক এর পাশেই দাঁড়িয়ে
আছেন আম্মু মিটমিট করে হাসছেন অর্থাৎ আমরা
৩জনেই হাসছি কাঁদছে শুধু রুপা আনন্দের কান্না নাকি
কষ্টের কান্না বুঝতে পারছিনা তবে আনন্দ কান্না
হওয়ার কথা।।।কেক আম্মু আনিয়েছেন এবং
আমাকে ফোন করে বলেছেন যেন একটু
লেইটে বাসায় আসি তাই ৪টার সময় অফিস ছুটি হলেও
এসেছি ১০টায় অর্থাৎ ৬ঘন্টা লেইট।।।যাই হউক
কেক কেটে সেটাকে খেয়ে আনন্দ কান্না
দুঃখের কান্না হাসি-তামাশা সব শেষ করে রুপা আর
আমি রুমে ঢুকলাম।।।রুমে ঢুকার পরেই রুপা আবার
বারান্দায় চলে গেল বিষয় কি বুঝার জন্য আমিও ওর
পিছন পিছন গেলাম....
রুপা গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে....
-কি হল মেডাম এখন কি খুশি......
রুপার চোখ দিয়ে আবার নিঃশব্দে বৃষ্টি ঝড়ছে
অদ্ভুত ব্যাপার মেয়েরা কিভাবে যে এত কাঁদতে
পারে আল্লাহ জানেন অল্প কিছু হলেই কান্না।।।
তাঁরা যখন কষ্ট পাবে তখন তো কাঁদবেই সাথে
বোনাস হিসেবে বেশি আনন্দের সময়ও
কাঁদবে।।।
-তুমি আমাকে আজ সারা দিন এভাবে মন খারাপ করে
রাখলে কেন???
-মন খারাপ ছিল বলেই এখন বেশি খুশি হয়েছ।।।
-উহ কত্ত মন খারাপ হয়েছিল জানো....
-হিহিহি জানিনা....আচ্ছা রুপা লক্ষ্য করেছ আমাদের
ভাষা কিন্তু চেঞ্জ হয়ে গেছে তুই থেকে
তুমিতে চলে আসছে।।।
-সত্যিই তো,,,আচ্ছা ফাহিম একটা কথা বলি।।।
-জ্বী বলেন....
-আমাকে একবার জড়িয়ে ধরবে আগের মত....
এই কথা বলে সে নিজেই আমাকে জড়িয়ে
ধরেছে একটু বেশিই চেপে ধরেছে চাইলেও
ছুটা সম্ভব না।।অবশ্য আমি ছুটতেও চাইছিনা,,,
-রুপা.....
-কি???
-শুভ জন্মদিন...এখন ১১টা ৫৯ বাজে অর্থাৎ তোমার
জন্মদিন শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে বললাম।।।
সবাই প্রথম বলার চেষ্টা করে আমি শেষ মিনিটে
বলার চেষ্টা করলাম ব্যাতিক্রমি ভালবাসা বলতে
পার।।।।রুপা আর কিছু বলল না,জড়িয়েই ধরে
রইল.........
.
লিখা-Ahmed Fahim(Fahim Ahmed Pappu)

No comments:

Post a Comment