Tuesday, February 14, 2017

গল্প: "হলুদ পরী"

গল্প: "হলুদ পরী"
.
.
লেখকঃ Naimul Islam Rubel (নিশ্চুপ জীবনের
লুকোচুরি)
.
.
চাঁদের আলো চুপসে পড়ছে আমার গায়ে।খুব
একটা ভুল বলিনি কারণ আজকে অনেকদিন
পর গ্রামে আসলাম।রাত্রে বেলা
মোবাইলটা হাতে নিয়ে ধানের মাঠের
দিকে গিয়ে বসে আছি,শুকনো ধানের খড়ের
উপরে।আজকে পূর্ণিমারাত তাই চাঁদেরকণা
জোছনা ছড়াচ্ছে,আমিও তাই গায়ে মেখে
নিচ্ছি।
.
আমি রাদ,এইবার অনার্স ফাইনাল দিলাম।
খুব একটা গ্রামে আসা হয়না কিন্তু
চাচাতো বোনের বিয়ের জন্য আসতে হলো।
কিছু সময় পরে আম্মুর ফোন খাওয়ার জন্য
ডাকছে।আমিও চলে যেতে লাগলাম,কিন্তু
মনে হচ্ছিলো ওইপাশের বাড়ি থেকে
গাছের আড়াল থেকে কেউ আমায় দেখছে।
গাছের আড়াল থেকে সাদা একটা ওড়না
ভেসে আছে,তখনই সন্দেহ হলেও দেখার
ইচ্ছা করছিলো না।
.
পরের দিন সকাল বেলা,চাচাতো বোনের
গায়ে হলুদ,পিচ্চি ভাই বোনেরা সবাই রঙ
দিচ্ছে, চাচীরা সবাই মিলে গান করছে।সে
এক অন্য রকম বিয়ের পরিবেশ যা সাধারণত
গ্রামে দেখা যায়না।বোনের বান্ধবীরা
সবাই বোনের কপালে হলুদ লাগাচ্ছিলো।
আর আমি এই সব কর্মকাণ্ড ফ্রেমে বন্ধী
করছি।
.
কিছু সময় পড়েই ছেলে বাড়ি থেকে অনেক
মেয়েরা আসে,সবার হলুদ শাড়ি পুরাই এক
একজন হলুদের কন্যা।কিন্তু সবার মাঝে
একটা হলুদ পরীকে ক্যামেরার ভিতরে খুব
ভালো করেই চোখে লেগে যায়।মনে হচ্ছে
উনিই সবাইকে লিড দিচ্ছে।মেয়েটা
বোনের গায়ে হলুদ দেয়।আমার চাচী বাড়ির
মেয়েরা সবাই আর কিছু ছেলেরা মিলে
ছেলে পক্ষের আসা মেয়েদের গায়ে রঙ
দিতে থাকে।আর আমি আপন মনে দৃশ্য গুলি
ক্যামেরা বন্ধী করছি।
.
সবাই খুব মজা করলো,এর মাঝে এক পিচ্চি
এসে এক বালতি পানি এনে ওই লিডারের
গায়ে মেরে দেয়।একি হলুদ পরী দেখি
কালো পরী হয়ে গেছে।গ্রামের বাচ্চা
গুলিও কম ফাজিল না,বালতিতে কাদা
গুলিয়েই সেই পানি দেয়।আমি দেখে আর
হাসি থামাতে পারছিলাম না।আমার
হাসি শুনে হলুদ পরীটা আমার দিকে
রক্তচক্ষু করে তাকায়।আমি অন্য দিকে
তাকিয়ে ভদ্র ছেলের মত ভিডিও শুরু করি।
.
একটু পর পিছন থেকে কেউ বলছে এই যে
শুনেন,তাকিয়ে দেখি হলুদ পরী দাঁড়িয়ে।
আমার আর তার মাঝে ১২ ইঞ্চির ফাকা।
আমি বলি জী বলুন।কিছু না বলেই দুই
হাতের দুই মুঠো বাংলা রঙ গোলানো
হাতের মধ্যে থাকা রঙ আমার পুরা মুখে
লেপটে দিতে থাকে,আমিও বোকার মত
দাঁড়িয়ে আছি একটুও বাধা দেওয়ার চিন্তায়
নেই।রঙ মাখা শেষ করে,ক্যামেরাটা
আমার হাত থেকে নিয়ে হলুদ পরী আমার
মুখের দিকে ধরে রাখে আর বলে পরে
নিজেকে একটু ভিডিওতে দেখে নিবেন।
.
এই বলেই তারা সবাই চলে যেতে
থাকে,আমি তখনো দাঁড়িয়ে আছি।কারো
একজনের ডাকে ঘোর ফিরে।এর পরে পুকুরের
বসে ১টা সাবান ব্যয় করা লাগে আমার
মুখের ৭০% আগের রূপ ফিরিয়ে আনতে বাকি
৩০% সম্ভব হয়নি তখনো।এ যে আবির না পুরা
বাংলা রঙ আরো লাল ও নীল রঙ সম্পূর্ণ
কালো হয়ে যায় দুইটা মিশে।
.
পরের দিন বোনের বিয়ে,খুব ধুম ধাম করেই
বিয়ে হলো।আমি গায়ে হলুদের রাতেই
শুনেছিলাম ওইটা বোনের হবু বরের
মামাতো বোন,ঢাকাতেই থাকে
মেডিকেলে পড়ে।আমার জন্য সুবিধাই
হলো।যাই হোক বোনের বিয়ের তিনদিন পর
আমাদের বউ ভাতের দাওয়াতে বোনের
শ্বশুরবাড়ি গেলাম।সবাই খুব মজা করছে
আর আমি খুঁজছি হলুদ পরীকে।খুঁজতে খুঁজতে
একটা সময় পেয়ে যাই।
.
কাছে গিয়ে ভাবছি কথা বলবো নাকি
বলবো না।কিছুটা কাছাকাছি গিয়ে আবার
ফিরে আসতে যাই।তখন ই পিছন থেকে
ডাক,এইযে শুনুন।আমি কাছে গিয়ে
দাড়াতেই বলে আপনি কি আমাকে কিছু
বলবেন?আমি কিছুই বলতে পাড়ছি না।একি
মনে হচ্ছে পরী ঘারে ভর করছে।অনেক কষ্টে
জিজ্ঞেস করলাম আপনার পরিচয় কি দেওয়া
যাবে,অহ আমি রাদ আপনি?
.
হলুদ পরী বলল আমি "পরী"ঢাকায় থাকি।
আমি মনে মনে তখন বলছি পরী তো আমি
জানিই কিন্তু আসল নাম কি?মুখ ফুটে
জিজ্ঞেস করেই ফেললাম একটু সুন্দর দেখতে
হলে সবাই তাকে পরীই ভাবে তা পরী
আপনার আসল নাম কি?পরী বলল এইটাই
আমার আসল নাম।কিছু সময় কথা হচ্ছে।
বুঝলাম মেয়েও হয়ত সামথিং সামথিং,
তাই চেয়েই ফেললাম তার নাম্বারটি।না
করলো দিলো,কিন্তু শর্ত দিলো একবারের
বেশি কল দেওয়া যাবে না।আমি বললাম এই
আপনার মাথায় হাত রেখে বললাম আমি
আজীবন আপনাকে মিস কল দিয়ে যাবো কল
না।
.
একটু ফাজিল টাইপের ছিলাম দেখে নিজের
অজান্তেই মাথায় হাত দিয়ে ফেলি।যখন
বুঝতে পাড়ি মাথা থেকে হাত সরিয়ে নেই।
আম্মুর ডাকে পরীকে বিদায় দিয়ে চলে
আসি ওখান থেকে।এর পর বিয়ের দুইদিন পর
আমরাও ঢাকায় চলে আসি।সেই থেকে
নিয়মিত পরীর সাথে একটু একটু করে কথা
বাড়তে থাকে।ফেসবুক এ দুইজন খুব একটিভ
থাকতাম।পরীর গল্প পড়তে ভালো লাগতো
আর আমার লিখতে।কোন নতুন গল্প লিখলে
আগে তাকে ইন-বক্স করতে হবে।যদি কখনো
ভুলে ইন-বক্স না করেই পোষ্ট করা হয়ে
থাকে তবে সেই দিনের জন্য ব্রেকাপ ১০০%
শিওর ছিলো।
.
এমনি করে দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়া,রাগ,অভিমান
আর অফুরন্ত ভালোবাসার মাঝে কেটে যায়
কয়েকটা বছর।এক সময় বাবা-মাকে ওর পরীর
কথা জানাই।তারাও রাজি হন,দুই
ফ্যামিলির কথাতেই সব ঠিকঠাক হয়।কিন্তু
পরীর আবার শর্ত,বিয়ে হবে গ্রামে ঠিক
গ্রামের সাধারণ বিয়ের মত,যেখানে অন্তত
কমিউনিটি সেন্টারের মত,আসবে
খাবে,যাবে টাইপের বিয়ে না।সবাই মিলে
মিশে হাসিখুশি-তেইই হবে বিয়েটা।
.
আমি আর না করার কে,করলে যদি বাসর
রাতেও ব্রেকাপ দিবস পালন করতে হয়।তাই
তো রাজি হয়ে গেলাম।ধুম-ধাম করেই
বিয়েটা হলো।কিন্তু নিজের বাসর ঘরে
নিজের ই যেতে ভয় করছে যদি না পরী
সত্যি ঘারে চেপে বসে।ভয়ে ভয়ে হেটে
যাচ্ছি নিজের বাসর ঘরের দিকে....আর
মনে মনে আল্লাহ্ এর কাছে দোয়া করছি
পরী যেন ঘারে চেপে না বসে। (সমাপ্ত)
.
.
ডেডিকেটেড টুঃ 'লাজুক রাজকন্যা"

1 comment:

  1. দুষ্টু ভালোবাসার সাথে বগুড়ার মিষ্টি । জ্বিভে পানি আসবেই ইনশা-আল্লাহ |সুন্দর পোষ্ট । ভালো লাগলো । ধন্যবাদ আপনাকে । বগুড়ার বিখ্যাত দই এব ৫০+ রকমের সু-স্বাদু মিষ্টি নিয়ে এই সাইটটি দেখতে পারেন ।
    "অনলাইন দই & মিষ্টি সার্ভিস"

    ReplyDelete