Monday, February 20, 2017

গল্প: "বাড়িগুলো আমাদের না। আমগো বাপের।"

গল্প: "বাড়িগুলো আমাদের না। আমগো বাপের।"

অল্পনা বয়সের ছকিনা ছেড়ি আমার মনটা
কেন
করলি চুরি?
অলিনের চায়ের দোকানে বসে আড্ডা
দিতাছি
আর গান গাইতাছি আমি,অয়ন,শান্ত আর
ধ্রুব।
তবলা নাই দেইখা বেচারার বেঞ্চে
থাপড়াইতাছি।
চায়ের দোকান বললে ভুল হবে।
এটা একটা ফাস্ট ফুডের দোকান।
.
.
>কিরে তোর ম্যাডাম কই?(অয়ন)
>মাত্র ১১টা বাজে,,,১২টা বাজলেই টের
পাইবা।
(শুভ্র)
>হুম।তাইতো মনে হচ্ছে,,কেমনে যে এই
মহারানীরে পাইলি?
>ইউ হেভ টু বুঝতে হবে।
>হুম।তোর মত হইলে এতদিনে কি আর
অলিনের
দোকানে বইসা বইসা মাইয়া দেখতাম
খালি।
>হাহাহাহা।
.
শুভ্র,ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে সবে উঠছে।
বাপের
হোটেলে খায় আর সারাদিন অলিনের
দোকানে
হবু বউরে দেইখা বিল বাড়ায়।
.
>শুভ্র ওই দেখ জানালা খুলছে।(অয়ন)
>হুম দেখলাম।এখন আমায় ফোন দিবো।
(শুভ্র)
.
বলতে না বলতেই শুভ্রর ফোনে কল আসে।
.
>হ্যালো জান কি করো?(শুভ্রা)
>চোখ কোথায় আমার দিকে নাকি অন্য
দিকে?
>তোমার দিকে।এত থাপরাচ্ছো কেন
বেঞ্চটাতে?
>আমার শ্বশুর আব্বারে আরেকটা বিয়া
করাবো
সেই সুখে।
>হিহি।টাক মাথা,বউয়ের অভাব হবেনা।
>টাক মাথা হইছে দেইখাই তো আজ আমার
বাড়ির ভাড়াটিয়া।
>কি বললা তুমি?আজই বলব এই বাসা ছেড়ে
দিতে।
>যেই বাসায় সারাজীবন থাকবা সেটা
কিভাবে
ছাড়বা?
>তুমি একটু বেশিই ইনসাল্ট করো আমার
আব্বুকে
সর্বদা।
>দুঃখিত।
>আজ বাসায় গেস্ট আসবে তাই বেশি কথা
বলতে
পারবোনা।
>আচ্ছা।বাই রাখছি।
>এই শুনো।
.
শুভ্র ফোন কেটে দিল রাগ করে।প্রচুর রাগ।
শুভ্রা
সবে এসএসসি দিছে।এক বাসাতেই থাকে।
একটু পরে শুভ্রাদের বাসায় গেস্ট আসল।
একটা
মেয়েও আছে।অয়ন দেখেত পুরাই ক্রাশ।
.
>শুভ্র তোরে একটা কথা বলব রাখবি?(অয়ন)
>হুম।
>ওই মেয়েটারে আমার খুব পছন্দ হইছে।একটু
ট্রাই
করবি আমার সাথে
>দাড়া,শুভ্রারে ডাক দেই।
>অই করস কি?ওর বাবা মা আছেত।
>আমি কে?শুভ্র,এতটা বোকা নাহ।
.
শুভ্র আবার গান ধরে জোরে জোরে আর
সবাইরে
তাল দিতে বলে
ও মধুরমা গেছোস কিনা ভুইলা আমারে?
আমি
এখন দাড়াইয়া আছি তোর অপেক্ষাতে।
শুভ্রা ২মিনিট পরেই শুভ্রর সামনে হাজির।
অয়ন
আর বাকিরা তাকাইয়া আছে।
.
>ওই কি হইছে?(শুভ্রা)
>না,মানে ওইটা কি আমার শালী?(শুভ্র)
>হুম।(ভাব নিয়া মুখ অন্য দিকে ঘুরাইয়া
বলে)
>খুব সুন্দর, বুকিং?
>আমি কিভাবে বলব?মাত্র আসছে। ভাল
করে
রুমটাও ঘুরাইতে দিছো তুমি?
>তা ঠিক।আমার সাথে মানাবে??
>আনারস আর দুধ একসাথে খাইছো কখনো?
>হাপ।
>হাপ কি হুম?যখন খুশি ডাক দিবা না
আসলে রাগ
করবা।তোমার বাপেরটা খাই না পড়ি?
রিলেশন
রাখলে রাখবা না রাখলে নাই।বেশি দাম
দি
দেইখাই আজ রাগ করার চান্স পাও।অলিন
ভাইয়ের বউয়ের মত যদি শাসন করতাম
তাইলে
বুঝতা।ব্যাচারা কোন জামা পড়তে গেলেও
বউয়ের পারমিশন নেয় কোনটা পড়ব।
>কি থেকে কি হইল?মাথা ঠিক আছে?
>একদম চুপ,আজ যদি আরেকবার গান গাইছো
তাহলে তোমার গরুর মত হাম্বা মার্কা গলা
ফাটাইয়া ফেলব।
>কি?
.
শুভ্রা চলে যায়।শুভ্র পুরাই থতমত খেয়ে চুপ
হয়ে
যায়।
.
>আমার গলা কি আসলেই গরুর হাম্বা
মার্কা গলা
শান্ত?
>এতদিন আমরা বলতে চাইছি পারিনা আজ
শুভ্রা
বইলা দিল।
>কি কইলি?
>দোস্ত বিশ্বাস কর।
>আচ্ছা। আজ গেলাম আর আসুমনা।বাসায়
যাইয়া
ঘুমাবো।
>আচ্ছা।বাই
.
শুভ্র বাসায় যায় আর ভাবে আসলেই কি তার
গলা
এত খারাপ?
অতঃপর অয়নের প্রবেশ।
.
.
>কিরে মন খারাপ কেন?
>আচ্ছা ভাইয়া আমার কন্ঠ কি গরুর হাম্বা
মার্কা?
>না তো? কে বলছে?
>শুভ্রা বলল।
>ওওওওও
>ও কি?
>না মানে ও আসলে একটু ভুল বলছে।
>কিরকম?
>আসলে তোর কন্ঠ হইলো গিয়া কালকের
মত।
>কিইইইইই। তুমিও
>হি হি হি হি
>কেলাবা না।
>আচ্ছা বাদ দে চল ছাদে যাই। গান গাই।
>না আমার কন্ঠ ভ্লা না। গামু না
>দুর ব্যাটা। কে বলছে ভ্লা না। সুন্দর কন্ঠ
তোর।
>ও আচ্ছা। তাইলে চল। (খুশিতে গদগদ)
>ওকে। যা তুই আমি গীটার নিয়ে
আসতেছি।
>ওকে।
.
.
.
.
অতঃপর দুইভাই ছাদে গিয়ে গীটারে সুর
তুলতেছি।
♬♬আজ আমায় স্বপ্ন দেখাবি আয়।
এক নতুন গল্প শুনাবি আয়।
তুই মিশে যা আমার কল্পনায়।
তুই মিলে যা আমার গল্পটায়। ♬♬
.
.
প্রথম লাইনটা আমিই গাইলাম।
পরের লাইন শুভ্র গাইতেছে।
♬♬দুজনের একা হওয়া আমাদের দেখা
হওয়া
যেন লিখে রাখা ছিল তাই।
দুটি পাখি একই ডালে হাওয়াদের তালে
তালে
পাশাপাশি উড়ে চলে যায় ♬♬
.
.
অতঃপর একটা চিৎকার শুনতে পেলাম।
সামনে তাকিয়ে দেখি শুভ্রা আর ওদের
বাসায়
আসা গেষ্ট মেয়েটা। যার উপরে আমি
ক্রাশ।
.
.
শুভ্রা বলা শুরু করেছে
>তোমার গান শুনে ঘরে বসে থাকতে
পারলাম
না।
>এতো সুন্দর গান গাইছি? (চোখ বড় করা
খুশির
ইমুর হবে)
>ভালো না ছাই।
>তাইলে?
>ভাইয়ারটুকু ভালোই হইছিল।
কিন্তু তোমার কন্ঠ শুনে তিনটা কাকে
সুইসাইড
করছে।
>(আহত মনের ইমু হপে)

.
ওই মেয়েটা বলা শুরু করল আমাকে
>ভাইয়া আপনার কন্ঠটা দারুন।
>ধন্যবাদ (এত্তোগুলা লজ্জার ইমু হপে)
>আমার নাম আনিকা।
>আমার নাম অয়ন।
.
.
এভাবেই আনিকা আর আমার পরিচয় হয়।
আমি যখনই ছাদে আসতাম তার কিছুক্ষন
পরেই
দেখতাম ও এসে হাজির।
ও এসে আমার কাছে গান শুনতে চাইত।
আমি বুঝতে পারতাম ও আমার প্রতি
অনেকটাই
দুর্বল।
তারপর হঠাৎ একদিন বিকেলে দেখি ও নেই
ছাদে
আসছে না।
পরে জানতে পারলাম ও চলে গিয়েছে।
শুভ্রা আমার হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে
দিল।
তাতে লিখা ছিল ....
"আপনি এতো গাধা কেন?
ভালোবাসেন সেটা বলার সাহস হয় না?"
তারপর একটি ফোন নাম্বার দেওয়া।
.
.
.
রাতে কল দিলাম সেই নাম্বারে।
ফোন ধরার সাথে সাথেই বলে দিলাম
I love u…
রিপ্লেটা আসল I love u too
বলে।
অতঃপর আমাদের রিলেশন।
.
.
.
এদিকে শান্তার থুক্কু শান্তর আবার একটা
মেয়েরে দেইখা হুশ উইড়া গেল।
মেয়েটা রিক্সা থেকে নামছে।
শান্ত অনেকক্ষন যাবৎ তাকিয়ে আছে
মেয়েটার
দিকে এক পলকে।
ধ্রুব তার হাতের আংগুলটা নিয়ে অলিনের
দোকানের গরম চায়ের পানিতে ডুবিয়ে
দিল।
শান্ত ওমাগো বলে চিল্লানি দিল।
মেয়েটা শান্তর চিল্লানি আর লাফানি
দেখে
হাসি দিল।
এই হাসি দেখে শান্ত পুরাই ফিদা হয়ে
গেল।
.
.
কিন্তু এইডা কিতা?
সবাই আশ্চর্য হয়ে গেলাম।
কারন মেয়েটা আমার মানে অয়নের
বিল্ডিংয়ে
যাচ্ছে।
সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করল
>মেয়েটা কে রে?(সবাই একসাথে)
>হি হি হি(আমি)
>হ্লার পু কেলাস না। বল কেডা মেয়েটা?
(ধ্রুব)
>কইতাম না। (আমি)
>না কইলে তোর একদিন আর আমার যে
কইদিন
লাগে। (শান্ত)
>আরে মেয়েটা আমাদের বাসার তিনতলার
ফ্লাটে নতুন আসছে।
>তাইলে দোস্ত তুমি সব ম্যানেজ করে
দিবা।
(শান্ত)
>হ্লার পু আমারে মারবি নাকি?(আমি)
>কেন? (সবাই)
>আব্বে ওই মেয়ের একটা গন্ডার মার্কা
ভাই
আছে নাম হৃদয়।যদি জানতে পারে ওর
বোনের
লগে তুই লাইন মারতে চাস তাইলে তোরে
সহ
আমারেও কুইট্টালব।(আমি)
>আচ্ছা আগে বল মেয়ের নাম কি?
(শান্ত)
>শান্তা
>দেখছস রাবনে বানাদি জোরি আমার
নামের সাথে কত মিল।{শান্ত }
.
.
ওই দেখ শান্তার ভাই হৃদয় আসতেছে।
আমি বলে উঠলাম।
ওয়া মোর খোদা এইদা দেহি হাতির পাচ
নাম্বার বাচ্চা।
ধ্রুব বলে উঠল।
আমরা সবাই হেসে দিলাম।
শুভ্র হৃদয়কে ডাক দিল।
>ওই বড় ভাই এদিকে আস।(শুভ্র)
>আমি? (হৃদয়)
>হুম।
>আরে অয়ন ভাই আপনি এইখানে। আড্ডা
দিতাছেন নাকি? (হৃদয়)
>আরে না। আড্ডা দিমু কেন? লুঙ্গী ডান্স
দিতাছি দেখ না? (আমি)
>কই আপনিতো লুঙ্গী পড়েন নাই। ডান্স
কেমতে
দিবেন?(হৃদয়)
>আব্বে হ্লার পো।(শান্ত)
>আমারে কিছু বললেন?(হৃদয়)
>হুম বললাম আপনি কিসে পড়েন? (শান্ত)
>ওহহ আমি ক্লাস ১০ এ পড়ি। সাইন্স গ্রুপে।
(হৃদয়)
>ফহিন্নির পুত মশকরা করস আমগো লগে?
এত্তানি বড় হইয়া তুই ১০ এ পড়স।(শুভ্র বলে
উঠল)
>হুম। সত্যি। এই দেখেন আমার আইডি
কার্ড।
(আইডি দেখিয়ে বলল)
>ওহ আচ্ছা। তা ভাইয়া তোমার আপু কিসে
পড়ে?
(ধ্রুব)
>আপু ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ে।
>ওহ আচ্ছা। তোমার আপুর নাম্বার আছে।?
(শান্ত)
>হ্যা আছে।
>দাওতো।
>কেন দিমু?
>আমি তোমার আপুকে টিউশনী করাব তাই।
>ও আচ্ছা। এই নেন। 016144901**
>আচ্ছা ভাইয়া যাও।
>ওকে।
.
.
.
এই হ্লায় দেহি বলদ।শুভ্র বলে উঠল।
বলদ না এক্কেরে করাম ছাগল।
অলিন বলে উঠল।
সবাই হেসে দিলাম।
শান্ত ফোন দেওয়ার সাহস পায় না সেই
নাম্বারে।
প্রায় একসপ্তাহ পর শান্তকে দিয়ে রাত
১১:৫৩
মিনিটে ফোন দেওয়ালাম।
রিছিভ করতেই বলে উঠল শান্ত।
>বারান্দায় আসেন।
>কে আপনি।(শান্তা)
>আসলেই বুঝবেন
>ওকে।
.
.
বারান্দায় আসতেই শান্ত চিল্লানি দিয়ে
বলে
উঠল
""আপনি আমার বউ হবেন।?
মানে কি?
শান্তা বলে উঠল।
মানে হল আমি আপনাকে লভাসাবা থুক্কু
ভালোবেসে ফেলেছি।আপনি আমার বউ
হবেন?
.
.
কিছু না বলেই শান্তা রুমে চলে গেল।
তার প্রায় তিনদিন পর।
আমরা সবাই বিকেলে সেই অনলাইন থুক্কু
অলিনের
দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছি।
তখন শান্তা রিক্সা থেকে নেমে শান্তকে
ডাক
দিল।
শান্ত যেতেই হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে
দিয়ে
চলে গেল।
.
.
চিঠি খুললাম সবাই আগ্রহ নিয়ে। শান্তর
হার্টবিট ২০০ পালস এর উপরে উঠে গেল।
আমি চিঠিটা পড়ছি।
"এইভাবে কেউ প্রপোজ করে? গাধা
কোথাকার।
আপনাকে রিজেক্ট করা উচিৎ। "
এইটুকু শুনেই শান্তর মুখ কালো হয়ে গেল।
আমি বললাম আরো আছে।
"কিন্তু আপনাকে আমি রিজেক্ট করব না।
কারন
আপনি খুব ভালো ছেলে।
আর হ্যা আমি আপনার বউ হব। """
.
.
.
শান্ত খুশিতে নাচা শুরু করল।
অলিনের তো নীলিমার সাথে আগে
থেকেই
বিয়ে ঠিক ছিল। তাই ওকে নিয়ে টেনশন
নাই।
আর ধ্রুবর নিধির সাথে রিলেশন ক্লাস ১০
থেকেই।
.
.
.
.
প্রায় তিনবছর পর।.
.
.
পর পর পাচটা বাড়ি সুন্দর করে সুন্দর করে
লাইটিং দিয়ে সাজানো হচ্ছে।
১ম বাড়িটা অনলাইন থুক্কু অলিনের
২য় টা অয়নের মানে আমার।
৩য় টা শুভ্রর।
৪র্থ টা ধ্রুবর
আর
৫ম টা শান্তর।
আজ পাচ বন্ধুর বিয়ে একসাথে।.
.
.
.
.
লিখা:-যৌথভাবে
Tanvir Ahamed Priom (সোনালী দুঃখ)
শুভ্র শিশির (অনুমোদন প্রাপ্ত ভদ্র ছেলে)
স্মার্ট পাগল(অয়ন)

No comments:

Post a Comment