Tuesday, February 21, 2017

ভালবাসার সাইড এফেক্ট

ভালবাসার সাইড এফেক্ট

লেখাঃ নিলাভ্র নিল(হিমু)

পদার্থবিজ্ঞানের মোটা বইটা হাতে
নিয়ে আপনমনে হাটছি । মনে মনে নিউটন ,
আইনস্টাইন , ফ্যারাডের সূত্রগুলো
আওড়াচ্ছি আর ঐ ব্যাটাগুলোর চোদ্দগুষ্টি
উদ্দার করছি । একটু পর স্যারের বাসায়
পরিক্ষা । অথচ যা পড়েছি সবই ভুলে গেছি
প্রায় । হটাত্ ঠাস্ করে মাথার পিছনে কে
যেনো থাপ্পড় দিলো । আমার তখন মেজাজ
এমনিতেই গরম । তার উপর মাথার মধ্যে
এতো নিখুঁত চপোটাঘাতের পর মগজের
টেম্পারেচার গলনাংক থেকে স্ফুটনাংক
পৌছে গেলো ।
দাড়িয়ে গেলাম । হাতের মুঠো পাকিয়ে ,
দাতে দাত চেপে ঘুরেই একটা ঘুষি দিতে
গেলাম থাপ্পড়ের অসভ্য মালিককে ।কিন্তু
আমার হাত মাঝপথেই থেমে গেলো ।
আমার সামনে নিশা দাড়ানো । ভারি
পাওয়ারের চশমার আড়াল থেকে বড় বড়
মাথাময় চোখগুলো দেখতে পেলাম ।
সেখানে তখন ভয় খেলা করছে। হাত
নামিয়ে ঝাঝালো কন্ঠে বললাম "এখনই
তো মাইর খাইতি । তারপর হসপিটালে
নিয়ে যেতে হতো আমার ।" নিশা দ্বিগুন
ঝাঝালো কন্ঠে বললো "তো কি করবো ?
ধ্যান্দা পোলা । কয়বার ডাকছি জানিস !
কি চিন্তা করিস এতো ?"
আমি তখন বিমর্ষ কন্ঠে বললাম "আরেহ্
বলিস না । ঐ ব্যাটা নিউটন , আইনস্টাইনের
সূত্র পড়তে পড়তে লাইফটা হেল হইয়া গেলো
। টাইম মেশিন থাকলে অতিতে গিয়া
সবডিরে খুন করতাম ।" আমার কথা শুনে
নিশা হেসে কুটিকুটি । হাসতে হাসতে ওর
চোখে পানি এসে গেলো । হাসলে ওকে
বেশ ভালো লাগে । আমি মুগ্ধ হয়ে
তাকিয়ে থাকি তার দিকে ।
ইন্টারের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
হয়েছি । নিশাটাও ভর্তি হয়েছে এখানে ।
বুয়েটে টিকার পরও কেনো সে এখানে ভর্তি
হলো ঐ রহস্যের সমাধান হাজার ভেবেও
খুঁজে পেলাম না । আমাদের আড্ডার প্রধান
ছিলো নিশা । আমার বরাবরই এসব আড্ডা
ভালো লাগে না , তার চেয়ে নিজের জগত্
নিয়ে থাকতেই বেশি ভালো লাগে । কিন্তু
নিশার জন্য আড্ডাতে বসতেই হয় । কত যে
ফন্দি করি পাগলিটার হাত থেকে বাচার !
কোন লাভই হয় না । একেবারে গ্রিক বীর
হারকিউলিসের মতো দুর্নিবার নিশা ।
একবার বাসায় শুয়ে আছি । ও বার বার ফোন
দিচ্ছিলো । আমি ইচ্ছা করে ফোন রিসিভ
করিনি ।
নিশা বাসায় আসে । আম্মাকে জিজ্ঞেস
করে "আন্টি সিয়াম কই ?" আম্মা
হাসিমুখে দেখিয়ে দেন আমার রুম । আম্মা
আব্বা নিশাকে এত্তো আদর করে আর
সাপোর্ট করে যে মাঝে মাঝে কনফিউজ
হয়ে যাই আসলে তাদের সন্তান আমি !
নাকি নিশা !
নিশা রুমে ঢুকে অনেকক্ষন ডাকাডাকি করে
আমি । আমি তখন ভান করে আছি ঘুমানোর
। নিশা একের পর এক ঝাড়ি দিচ্ছে । আর
আমি প্রতিজ্ঞা করেছি আজকে আর যাই
হোক ঘুম থেকে উঠবো না। একটু পর নিশা
চলে গেলো । আর আমি তখন খুশিতে
আটখানা । এখন আমার ছাম্মাকছাল্লো
টাইপের নাচ দিতে ইচ্ছা করতেছে ।
মুখে ৩৬০ ওয়াটের বাল্বের আলোর মতো
হাসি ফুটে উঠলো । হটাত্ ছপাত্ করে আমার
সারা শরীরে পানি পরলো । আমি ধড়মড়
করে উঠে বসলাম । তাকিয়ে দেখি নিশা
একটা বালতি নিয়ে দাবাং স্টাইলে
দাড়িয়ে আছে । ঐ দিন আমার কপালে
নানান দুর্ভোগ জুটেছিলো । থাক ওসব না
বলাই ভালো । তারপর থেকে আমি
একেবারে ভালো ছেলে হয়ে গেছি ।
নিশার সব আজাইরা কাজে আমাকে
হাজির দেখা যেতো।মাঝে মাঝে নিশার
আড্ডায় আসতে একটু দেরি হত সেই দিন
আমার কপালে শনি চড়ে যেত।মাঝে মাঝে
নিশা আমাকে কানে ধরে উঠ-বস করাত আর
আমি যেন কোন এক কারনে ওর সব
পানিশমেন্ট মাথা পেতে নিতাম ।
এভাবেই চলছিলো সব । হটাত্ একদিন শুনি
নিশার বাবা মারা গেছেন । খবরটা
শোনার পর স্তব্ধ হয়ে গেলাম । আঙ্কেল
আমাকে ভীষন আদর করতেন । আব্বা
আম্মাকে নিয়ে দ্রুত তাদের বাসায় গেলাম
। গিয়ে দেখি সেখানে অনেক মানুষ ।
আঙ্কেলের লাসটা যেখানে রাখা তার
পাশেই আন্টি আর নিশা আহাজারি করছে
। আম্মা দ্রুত গিয়ে নিশার আম্মুকে ধরলেন
। নিশাকে ওভাবে কখনো কাদতে দেখি
নি।
ঐ দিনই প্রথম নিশার জন্য আলাদা একটা
টান অনুভব করেছিলাম । মনের গহিনে
নিশা যে তার নিজের স্থান করে নিয়েছে
সেই দিনই প্রথম খুঁজে পেলাম । ঐ দিন
আঙ্কেলকে কবর দিয়ে আসার পর নিশা
আমার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিলো ।
তার দিকে এগিয়ে গেলাম । প্রাণচন্বল
নিশার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না ঐ
নিশার মধ্যে । বুকের ভিতর একটা বিশাল
শূন্যতা টের পেলাম সেদিন । নিশার
কাছাকাছি যাওয়ার পরই , সে হু হু করে
কেঁদে জড়িয়ে ধরলো আমাকে । শক্ত করে
ধরে রইলো আমাকে । আমি সেদিন হতভম্ব
হয়ে যাই । নিশাকে পাল্টা জড়িয়ে ধরার
সাহস ছিলো না । কষ্ট হচ্ছিলো খুব ।
তারপর পুরো এক মাস নিশার সাথে দেখা
করিনি । ওকে কিভাবে বলবো যে ওকে
আমি ভালবাসি । দোটানায় আছি । ও কি
আমাকে ভালবাসে ? এই ছাইপাশ চিন্তা
করতে করতে এক মাস চলে গেলো । নিশা
তখন আঙ্কেলের মিলাদ আর বাসার টুকটাক
কাজ নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো । আস্তে আস্তে
সে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে লাগলো আবার ।
আরো কয়েকমাস পর । নিশা তখন পুরোপুরি
স্বাভাবিক । আমি অপেক্ষায় আছি ১৪ই
ফেব্রুয়ারির । ঐ দিন যেভাবেই হোক ওকে
বলবই বলবো । ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভোরে ওকে
ফোন করে টিএসসিতে আসতে বললাম । ও
জানতে চাইলো কেনো । কিন্তু আমি কিছু
না বলে ফোন কেটে দিলাম ।
দাড়িয়ে ছিলাম । দূর থেকে দেখলাম নিশা
আসছে । লাল সাদা একটা শাড়ি পরেছে সে
। অপূর্ব লাগছে তাকে । পান্জাবিটা ঠিক
করে নিলাম । ফুলগুলো আড়াল করে এগিয়ে
গেলাম তার দিকে । তার কাছাকাছি
গিয়ে তাকে অবাক করে দিয়ে একটা হাটু
গেড়ে তার সামনে বসলাম । তারপর গোলাপ
গুলো তার সামনে ধরে বললাম . .
"তোমায় নিয়ে হৃদয়ে আমার হাজার সপ্ন
আঁকা , তুমি আমার সেই রাজকণ্যা , সপ্নে
যাকে দেখা ।
তোমার জন্য হৃদয়ে আমার অনেক ভালবাসা
, যেথায় আছে একটা ঘর , সুখ আনন্দে ঠাসা

জড়িয়ে নাও আপন করে এই আমাকে , হৃদয়
দিয়ে বলছি তোমায় , ভালবাসি তোমাকে
।"
আবার বুক তখন ধুকপুক করছে । নিশার
হাস্যজ্জ্বল মুখটা থেকে হাসি মুছে গেলো
। আর আমার হৃদপিন্ড একটা বিট্ মিস করলো
। নিশা কিছু বলছে না । চুপ করে দাড়িয়ে
আছে । আমি আর কিছু না বলে উঠে
দাড়ালাম । ঘুরে হাটা ধরলাম । হটাত্ ঠাস্
করে মাথায় থাপ্পড় মারলো কে যেনো ।
মেজাজ সপ্তমে চড়ে গেলো । ফুলসহ মুঠো
এক করে ঘুরেই ঘুষি দিতে গেলাম ।
মাঝপথেই থেমে গেলো আমার হাত ।
নিশা দাড়িয়ে আছে । তার চোখে অশ্রু
মেশানো হাসি খেলা করছে ।
আমার পান্জাবির কলার ধরে হ্যাচকা টান
দিয়ে বলল "টানা ৫ বছর লাগিয়েছিস
কথাটা বলতে । আর এক বছর গেলে তোকে
খুন করতাম আমি ।" কুত্তা একটা আমি ও
তোকে খুব ভালবাসি ।আমি তখন খুশি হব
কি ! বাতাসের অভাবে খাবি খাচ্ছি । উফ্
কলারটা এত্তো জোরে ধরেছে ! একেই
হয়তো বলে ভালবাসার সাইড এফেক্ট !

No comments:

Post a Comment