Tuesday, February 21, 2017

ভালবাসার প্রাপ্তি

ভালবাসার প্রাপ্তি

Written by Tanjina Akter Tania (হিমাদ্রির মেঘ)

আমি মেয়েটা দেখতে ফর্সা, এই কথাটা
কেউ কখনো বলেনি।তবে আমি হাসলে
গালে টোল পড়ে এই কথাটা অনেকের মুখে
অনেকবার শুনেছি।আর এটাও সবাই বলে যে
আমার হাসিটা নাকি অন্য সবার থেকে
আলাদা।অর্থাৎ অন্যরকম সুন্দর।এমনকি
কলেজেও বন্ধুরা নানান কিছু বলে আমাকে
হাসানোর চেষ্টা করে শুধু আমার হাসিটা
দেখার জন্য।এ নিয়ে আমি অবশ্য খুব
গর্ববোধ করি।মনে মনে ভাবি আল্লাহ
অন্তত একটা দিকতো দিয়েছেন আমায়,যা
দিয়ে মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করা
যায়।
অবশ্য সবাই আমার দিকে আকৃষ্ট হোক সেটা
আমি চাই না।
আমিতো শুধু চাই,রোজাইন আমার দিকে
আকৃষ্ট হোক।
কারন এই ছেলেটার প্রতি আমার বিশেষ
ধরনের দুর্বলতা আছে।
ভালোবাসা কাকে বলে আমি জানিনা।
তবে রোজাইনকে দেখলে বুকের মধ্যে এক
ধরনের অস্থিরতা অনুভব করি।চোখে মুখে
একটা লজ্জার আভা ফুটে উঠে।হার্টবিট
ক্রমশ বাড়তে থাকে।চোখে এক ধরনের
নেশা তৈরী হয়ে যায়।ওর সাথে একটু কথা
বলার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠে।
এই অনুভূতিগুলোর নাম কি আমি জানিনা।
যদি এর নাম ভালোবাসা হয় তবে আমি
রোজাইনকে ভালোবাসি।।
কিন্তূ আফসুস,দুই বছর যাবৎ আমরা ওদের
বাসায় ভাড়া থাকি,তবুও উনার সাথে
একদিনও কথা হয়নি।
শুধু দু চোখ ভরে দেখেছি।
আমার মায়ের সাথে আবার উনার মায়ের
অনেক ভাল সম্পর্ক।রোজ আসা যাওয়া হয়।
উনার মা আমাকে প্রায় সময়ই যেতে বলে
উনাদের রুমে।আমারও যেতে খুব ইচ্ছে
করে,কিন্তূ কি ভেবে যেন যাইনা।কোথায়
যেন একটা অদৃশ্য বাঁধা আমাকে আটকে
দেয়।
আমি যখন রোজ সকালে জানালার পাশে
আমার টেবিলেটাতে পড়তে বসি,তখন উনি
নীচে বাগানে পানি দেয়।অবশ্য আগে
দিতেন না।আমরা যখন প্রথম এ বাসায়
এসেছিলাম তখন দেখতাম একজন বৃদ্ধ লোক
পানি দিতেন বাগানে।কিন্তূ কিছুদিন পর
থেকেই দেখছি ঐ লোকটির বদলে রোজাইন
পানি দিচ্ছে বাগানে।
হয়তবা লোকটি চলে গেছে তাই।
উনি যখন বাগানে পানি দেয় তখন আমি
উনাকে চুপি চুপি দু চোখ ভরে দেখি।কিন্তূ
এই ব্যাটা কোনদিন ভুল করেও আমার দিকে
তাকায় না।হয়তো উনি এটাও জানেন না যে
আমি এখানে পড়তে বসি রোজ সকালে।মনে
মনে খুব রাগ হয় উনার প্রতি।আমি যতদূর
জানি ছেলেদের মেয়ে মানুষের প্রতি একটু
না একটু দুর্বলতা থাকেই।কিন্তূ এই ছেলের
মধ্যে আমি এরকম কিছুই দেখিনা।ওদের
বাসতেই যে একটা প্রাপ্ত বয়স্ক মোটামুটি
সুন্দরী মেয়ে বাস করে সেদিকে উনার কোন
খেয়ালই নেই।
মায়ের কাছে শুনেছি উনি নাকি বি বি এ
ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র।আমার মনে প্রশ্ন
জাগে উনি যখন ছাত্র তাহলে প্রতিদিন
সকালে উঠেতো পড়তে বসতে হয়।কিন্তূ উনি
পড়ার
বদলে বাগানে কাজ করেন।
নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয় এই
বাসাটাতে
ভাড়াটিয়া হয়ে আসায়।নইলেতো
রোজাইনের মত
নূরানী চেহারার ছেলেটার সাথে দেখা হত
না।
রোজ সকালে উনাকে দু চোথ ভরে দেখি আর
মনে মনে বকা দেই দুটো কারনে।এক
নাম্বার
কারন হচ্ছে আমি উনার দিকে একটানা
তাকিয়ে থাকি
তবুও উনি কেন আমার দিকে তাকায় না।আর
দ্বিতীয়
কারন আমার সকালের পড়াতে ব্যাঘাত
ঘটানো।ব্যাটা
নিজেতো পড়েই না, আমাকেও পড়তে
দেয়না।
কারন উনি যতক্ষন বাগানে পানি
দেন,আমি কেবল
উনার দিকেই তাকিয়ে থাকি।আমি চেষ্টা
করলেও
চোখ ফেরাতে পারিনা।অবশ্য উনিতো আর
এটা
জানেনা।জানলে হয়তো সকালে পানি
দিতে এসে
আমার পড়ার ডিষ্টার্ব করতনা।
বরাবরের মত আজকেউ ঘুম থেকে উঠে
পড়তে বসলাম।না মানে রোজাইন
সাহেবকে
দেখতে বসলাম।দেখতে বসলাম বললাম এই
জন্য
যে কারন আমার ডেইলি রুটিন হচ্ছে প্রথম
আধাঘন্টা
উনাকে অপলকে দেখব তারপর পড়া শুরু করব।
সময়মত উনি বাগানে এলেন পানি দিতে।
আর আমিও
উনার চাঁদ বদন খানি দেখতে শুরু করলাম।
আজকে
উনাকে বরাবরের চেয়েও বেশী সুন্দর
লাগছে।উনি একটা নেবেব্লু কালারের
ট্রাউজার
পড়েছেন আর সাথে কালো টি শার্ট।উনার
চুলগুলো ছোট ছোট করে ছাঁটা।সম্ভবত জেল
ব্যবহার করেন উনি চুলে।যার কারনে উনার
চুলগুলো খুবই আকর্ষনীয় দেখায়।
উনার বাগানটা খুব সুন্দর।পুরু বাগান জুড়ে
অনেক রকম
ফুল গাছের সমাহার।সকালে যখন সবগুলো ফুল
একসাথে ফুটে তখন চমৎকার লাগে
বাগানটা।আজও
ফুলে ফুলে ভরা বাগানটা খুব সুন্দর লাগছে।
তবুও পুরু
বাগানটা থেকে উনাকে বেশী সুন্দর মনে
হচ্ছে আমার কাছে।তাই গুন গুন করে ঐ
গানটা
গাইতে মন চাচ্ছে
"তুমি হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ"
তাড়াহুরা করে ছাদ থেকে শুকনো কাপড়
নিয়ে যখন
সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম অমনি ফিল্মি
কায়দায় রোজাইন
সাহেবের সাথে ধাক্কা খেলাম।উনি ছাদে
উঠতে
যাচ্ছিলেন।
ধাক্কা খেলাম সেটা কোন ব্যাপার
ছিলনা।কিন্তূ ব্যাপার
হল যে ধাক্কা খেয়ে উনার চোখের চশমাটা
সিঁড়িতে পড়ে ভেঙে গেছে।আমি সরি
বলতে
যাব তার আগেই উনি ইটস অকে বলে ছাদে
উঠে
গেলেন।
সাড়া রাত ঘুমোতে পাড়লাম না।নিজেকে
খুবই
অপরাধী মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে আমার
জন্যইতো উনার চশমাটা ভাঙল।তাই আমারই
উচিত
উনাকে একটা চশমা কিনে দেওয়া।
মাকে দিয়ে রোজাইনের চশমার পাওয়ার
কত সেটা
আন্টির কাছে জিজ্ঞাসা করালাম।তারপর
একটা চশমা
কিনে আনলাম।কিন্তূ আমি সেটা নিজের
হাতে
উনাকে দিতে চাচ্ছিলাম।কিন্তূ কিভাবে
দিব সেটাই
বুঝতে পারছিলাম না।
উনার সাথে সামনা সামনি দাড়িয়ে কথা
বলাটা একেবারেই
অসম্ভব আমার পক্ষে।আর আন্টির কাছেই
বা কি
বলে দেব।এটা বলব যে,আপনার ছেলের
সাথে
ধাক্কা খেয়ে উনার চশমা ভেঙে ফেলেছি।
এখন
এটা জরিমানা স্বরুপ দিচ্ছি।এটাতো
একেবারেই
অসম্ভব।
অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করলাম যে করেই
হোক উনার ফোন নাম্বার সংগ্রহ করতে
হবে।
কিন্তূ কিভাবে?
হুম!একটা উপায় আছে,উনি নিশ্চয়ই বাসার
সামনের
দোকানটা থেকেই ফ্লেক্সি করেন ঐ
দোকানের আংকেল আবার আমাকে অনেক
আদর
করেন।উনাকে উল্টা পাল্টা বুঝিয়ে
নাম্বার নেয়া
যাবে।
প্ল্যানমত আংকেলের কাছে নাম্বার
চাইলাম কিন্তূ
আংকেল বললেন উনি নাকি কার্ড কিনেন
ফ্লেক্সি
করেন না।কি যন্ত্রনা।এইবার কি করি!
ভাবলাম আমার
নাম্বারটা কোনভাবে উনার কাছে
পৌছানো যায় কিনা।
কলেজ থেকে ফেরার পথে দেখি রোজাইন

ফ্লেক্সি আংকেলের দোকানে বসে আছে।
তাই
এই সুযোগটা কাজে লাগাতে ফোনে
ব্যালেন্স
থাকা সত্বেও আবার ফ্লেক্সি দিতে
গেলাম।
উদ্দেশ্য জোড়ে জোড়ে বলে উনাকে আমার
নাম্বারটা দেওয়া।কিন্তূ আশায় নিরাশ
হলাম কারন আমি
নাম্বারের চার ডিজিট বলতেই আংকেল
বলল, আর
বলতে হবেনা তোমার এই নাম্বারটা আমি
জানি।তুমি
বাসায় চলে যাও আমি লোড করে দিচ্ছি।
এইবার
আংকেলের প্রতি খুব রাগ উঠল।
আংকেলের জন্যই উনাকে নাম্বারটা
জানাতে পারলাম
না।আর জানালেই কি!উনি যে আমাকে
ফোন দিত তার
কি নিশ্চয়তা আছে?অগত্য কোন উপায় না
দেখে
একদিন সরাসরি গিয়ে হাজির হলাম
রোজাইনদের
ফ্ল্যাটে।গিয়ে দেখি ওদের ড্রাইনিং রুমে
অনেক
লোক।মনে হয় মেহমান এসেছে।গিয়েতো
পড়লাম আরও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে।
কিন্তূ এখন
যে বের হয়ে আসব সে উপায়ও নেই।আন্টি
আমাকে দেখেই বলল
-আরে মিথি মা।কি ব্যাপার আজ বুঝি
আসতে মন চাইল?
-না মানে আন্টি এই যে চশমাটা।
-চশমা?কিসের চশমা?
-রোজাইন ভাইয়ার চশমাটা আমি ভুলবশত
ভেঙে
ফেলেছিলাম তাই এটা উনার জন্য।
চশমাটা আন্টির হাতে ধরিয়ে দিয়ে আর
এক মুহুর্তও
ওখানে দাড়ালাম না।এক দৌড়ে আমি
আমার রুমে চলে
এলাম।
যবে থেকে আমার পরীক্ষা শুরু হয়েছে
রোজাইনকে আর বাগানে পানি দিতে
দেখিনা।ওকে
দেখতে খুব মন চাচ্ছে।কিন্তূ কিভাবে
দেখব?উনার
একটা ছবিওতো নেই আমার কাছে।ছেলেটা
কেন
যে বাগানে আসেনা।প্রতিদিন বিকেলে
ছাদে গিয়ে
অপেক্ষা করি।যদি উনি ছাদে যায়।কিন্তূ
না।উনি ছাদেও
যায়না।
কিন্তূ ছাদে উনার কাপড় থাকে যা শুকাতে
দেওয়া হয়।
আমি প্রতিদিন উনার গায়ের জামাগুলোর
খুব কাছে
গিয়ে সেগুলোর ঘ্রান নেওয়ার চেষ্টা করি।
কেন
যেন মনে হয় এই জামাগুলোর মাঝে
রোজাইনের গায়ের গন্ধ মিশে আছে।
একদিন উনার একটা সেন্টু গেঞ্জি চুরি করে
নিয়ে
এলাম।যাতে সবসময় ওটার গন্ধ শুকতে
পারি।যদিও
নিজেকে চোর চোর মনে হচ্ছে তবুও ওর
একটা গেন্জি নিজের কাছে রাখতে পারব
ভেবে
খুব ভাল লাগছে।
আমি মনে হয় এবার পাগল হয়ে যাব।এই
ছেলেটা
আমাকে কি যাদুমন্ত্র করল কে জানে?আর
যাদুমন্ত্রই যদি করবে তাহলে দূরে সরে
আছে
কেন?
ওকে যদি আমি ভালবাসার কথাটা না
বলতে পারি আমিতো
ফাঁপর আটকে মরে যাব।এসব যখন ভাবছি
তখনই মা
বলল বাড়িতে নানু অনেক অসুস্থ।বাবা মা
দুজনেই
চলে যাবেন।কিন্তূ আমারতো পরীক্ষা তাই
আমি
যেতে পারবনা।মা বলল যে আন্টির সাথে
কথা
হয়েছে আমি আন্টি মানে রোজাইনদের
পরিবারে
থাকব।যদিও বাবা মা চলে যাবে শুনে খুব
কষ্ট লাগছিল
তবুও রোজাইনদের ওখানে থাকব ভেবে
মনটা
আনন্দে নেচে উঠল।
দুদিন ধরে রোজাইনদের এখানে আছি।
আন্টি
আমাকে নিজের মেয়ের মতই দেখছেন।
কিন্তূ
রোজাইনকে এত কাছে থেকে দেখেও ওর
সাখে কথা না বলতে পারার কষ্টটা
আমাকে কুড়ে
কুড়ে খাচ্ছিল।আচ্ছা আমি না হয় মেয়ে
মানুষ নিজে
থেকে কথা বলতে লজ্জা পাই।ও কি
পারেনা আমার
সাথে একটু কথা বলতে।ও যদি আমার সাথে
একবার
একটু কথা বলত আমার ভেতরের সব যন্ত্রনা
চলে
যেত।
আজ যখন কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে বের
হলাম। দেখি রোজাইন বাইক
নিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখে
এগিয়ে
এসে বলল
-গাড়িতে উঠ।মা বলেছে যতদিন তোমার
বাবা মা না
ফিরছেন ততদিন তোমাকে খুব দেখে
রাখতে
হবে।তাই তোমাকে বাবা কলেজে দিয়ে
যাবেন
আর আমি নিয়ে যাব।কারন সকালে আমারও
ক্লাস
থাকে।নইলে সকালেও দিয়ে যাবার
দায়িত্বটাও হয়ত
আমার উপরই পরত।
এই প্রথম রোজাইন আমার সাথে কথা বলল।
তাও
আবার আজ ওর বাইকের পেছনে বসব আমি।
আমারতো খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।
আমি ওর পেছনে বসলাম।ও বলল ভাল করে
ধরে
বস।আমি কিন্তূ ড্রাইভার ভাল না।ওর কথা
শুনে কিছুটা
ভয়ে আর কিছুটা ভালবাসার টানে ওকে
পেছন
থেকে এমনভাবে ধরে বসলাম যেটাকে হাফ
জড়িয়ে ধরাও বলা যেতে পারে।আমার
একটুও
লজ্জা লাগছেনা।কেন জানি মনে হচ্ছে
এটা আমার
অধিকার।
ঐদিনের পর থেকে রোজাইনের সাথে
বিকেলে ছাদে ঘুড়তে যাই।তিনবেলা
একসাথে
বসে খাই।ও আমাকে কলেজ থেকে রোজ
নিয়ে আসে।সব মিলিয়ে আমার দিন ভালই
কাটছিল।
কিন্তূ ঝামেলাটা বাঁধল তখনই যখন বাবা
মা ফিরে এলেন
আর বাবা জানালেন যে তাঁর অন্য জায়গায়
পোষ্টিং
হয়ে গেছে।আমারতো একথা শুনার পর
থেকে
নাওয়া খাওয়া হারাম হয়ে গেছে।গোপনে
গোপনে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিও
শুকিয়ে যাচ্ছে।আমি রোজাইনের থেকে
দূরে গিয়ে বাঁচব কিভাবে?
রাতে যখন শুয়ে শুয়ে কাঁদছিলাম তখনই মা
আমার
রুমে এসে যা বললেন তা শুনার জন্য আমি
কোনদিন
প্রস্তত ছিলামনা।রোজাইনের মা নাকি
বাবা মায়ের
কাছে রোজাইনের জন্য আমাকে চায়।
রোজাইন
নাকি ওর মাকে বলেছে আমাকে ছাড়া ওর
চলবেনা।
আর বাবার পোষ্টিং এর কথা শুনার পর
থেকে নাকি ও
নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।বলেছে
যতক্ষন
আমার সাথে ওর বিয়ে না হচ্ছে ততক্ষন ও
ঘর থেকেই বের হবেনা আর এক ফোঁটা
পানিও মুখে দিবেনা।
আমি এখন একটা ফুলে ফুলে সাজানো ঘরে
বসে আছি।গায়ে গর্জিয়াস শাড়ি গহনা
অনেক কিছু।সম্ভবত একেই বাসর ঘর বলে।
মনে একটা টান টান উত্তেজনা অনুভব করছি।
আর রোজাইনের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে।ব্যাটা
এখনো আসছেনা কেন?বহুত
তো জ্বালাইছে আমারে।অন্তত বাসর
ঘরটাতে তো টাইমলি আসতে পারে।
রোজাইন আস্তে আস্তে এসে আমার পাশে
বসল।আমি ওকে সালাম করে কিছু বলতে
যাব তার
আগেই ও বলল আজ একটা সুন্দর গল্প দিয়ে
আমাদের নতুন জীবনটা শুরু করব বলেই ও
গল্পটা
বলতে শুরু করল
-প্রায় দু বছর আগে আমাদের বাসায় একটি
পরিবার ভাড়া
আসে।তাদের একটা শ্যামলা বর্নের মেয়ে
ছিল।
মেয়েটা হাসলে গালে টোল পড়ত।আমি
আবার
টোল পড়া মেয়েদের প্রতি একটু দুর্বল।
আস্তে
আস্তে আমার মনে মেয়েটার জন্য একটা
ফিলিংস তৈরী হল।মেয়েটা প্রতিদিন
জানালার
পাশে পড়তে বসত। যাতে আমি রোজ ওকে
দেখতে পারি তার জন্য বাগানের মালিকে
চাকরি
থেকে বরখাস্ত করি আর তার চাকরিটা
নিজের ঘাড়ে
নিয়ে নেই।কিন্তূ মেয়েটা এত সেলফিস
জান!যে
আমি ওকে দেখার জন্য মালির কাজ নিলাম
আর ও
আমার দিকে একটানা এমনভাবে তাকিয়ে
থাকত যে
আমি ওর দিকে তাকানোর সুযোগই পেতাম
না।
এতে অবশ্য মেয়েটার পড়ার ক্ষতি হত।তাই
আমি ওর
পরীক্ষার সময় সকালে বাগানে যাওয়া বন্ধ
করে
দেই।জানি হয়তবা এতে ওর কষ্ট হয়েছে।তবে
আমার কিন্তূ তার থেকে বেশী কষ্ট
হয়েছে।
ওহ!জান মেয়েটার সাথেনা একদিন ফিল্মি
কায়দায় একটা
ধাক্কাও খেয়েছিলাম।সেদিন বুকের
ধরফরানিটা আরও
একগুন বেরে গিয়েছিল।
আর মজার ব্যাপার হচ্ছে ঐদিন আমার
চশমাটা ভেঙে
যাওয়ায় মেয়েটা আমাকে একটা চশমা
গিফট করেছিল।
ঐ চশমাটা চোখে দিলে আমি ফ্রেমের
মধ্যে
শুধু ঐ মেয়েটাকে ছাড়া আর কিছুই দেখতে
পেতাম না।তাই ঐ চশমাটা পড়তে আমার
ভয় করত।
আর সবচেয়ে হৃদয় ছোঁয়া ব্যাপার কোনটা
জান?
যেদিন মেয়টাকে প্রথম আমার বাইকের
পেছনে
বসিয়েছিলাম ও আমাকে এমনভাবে ধরে
বসেছিল
যে আমার মনে হচ্ছিল মেয়েটা শুধুই আমার।
ও আরেকটা কথাতো বলতে ভুলেই গিয়েছি
একদিন বিকেলে রাস্তায় দাড়িয়ে কেরাম
খেলছিলাম। দেখি মেয়েটা আমার একটা
গেঞ্জি
নিয়ে পালাচ্ছে।হা হা হা।
সেদিনই নিশ্চিত হয়েছিলাম যে মেয়েটা
আমাকে
আমার থেকেও বেশী ভালবাসে।
চুরির অপবাদটা ঘোচানোর জন্য একটু কেশে
বললাম
- এতই যখন বুঝতে পারছিলা তো বল নাই
কেন
ভালোবাসার কথা?
-তুমিও তো বলতে পারতে?
-না।ওটা ছেলেদেরই আগে বলতে হয়।
-মেয়েরা বললে বুঝি দোষ হয়?
-না দোষ হবে কেন?তোমার মাথা হয়।আর
আমার
মুন্ডু হয়।
কথাটা বলেই আমি আস্তে করে আমার
মাথাটা ওর
কাঁধে রাখলাম।এতদিনের লালিত স্বপ্নটা
আজ আমার
সত্যি হল।মনে হচ্ছে আমার থেকে সুখী
মানুষ
এই পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টা নেই।

No comments:

Post a Comment