Tuesday, February 21, 2017

**ভালবাসার অপর নামই বুঝি পাগলামি**

**ভালবাসার অপর নামই বুঝি পাগলামি**
↓↓
↓↓
""কি করছো টা কি তুমি..আচ্ছা এত রাতে
এসব পাগলামির কোনো মানে হয়
বলোতো??""
-
-
কথাটা বলে আমি বোধহয় বিরাট রকমের ভুল
করে ফেলেছি। মেয়েটার চাহনি দেখে
ঠিক তেমনটাই বুঝা যাচ্ছে..কি
সাংঘাতিক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়েছে রে
বাবা, মনে হচ্ছে আরেকটা শব্দ করলেই
নির্ঘাত কোনো বড়সড় বিপদ নির্ধারণ হয়ে
যাবে আমার উপর।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তাই
একটু মৃদু গলাতে সুর দিলাম....
-
<-না মানে বলছিলাম...শরীরটা খুব ক্লান্ত
লাগছে,তাছাড়া দেখো কত রাত হয়েছে।
সাঁজার জন্যে দিনে তো কত সময়ই পরে
আছে তাই না বলো। এসোনা এখন ঘুমিয়ে
পরি। কাল যে আবার অফি......
"স" টাও উচ্চারণ করতে দিলনা..ড্রেসিং
টেবিলে বসে থাকা শ্যাম বর্ণের মেয়েটার
চোখজোড়া আমার কথা শুনে ক্রমশ বড়ই
হতে চলেছে। রাগে গজগজ করা গালদুটো
ফোলাচ্ছে আর কেমন করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে
আমার দিকে তাকিয়েছে। যেন পারছেনা
জ্যান্ত গিলে খায় আমায়।
-
ধ্যাত-তেড়ি! কথা বলার ইচ্ছেটাই থামিয়ে
দিলাম। মনে মনে খুব রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে
করছে ঠাস করে দুটো চড় মেরে গাল
ফোলানো বন্ধ করে দিই কিন্তু নাহ ভূলটা
যে আমারই সেটা বুঝতে পেরে নিজেই
নিজের গালে চড় মেরে অপরাধী মুখটাকে
নিচু করে রাখলাম।।
-
আসলেই মেয়েটার তো কোনো দোষ নেই।
আজ অনেক দিন পর বের হয়েছিলাম ব্যস্ত
শহরটাকে রিধীর সাথে আবার নতুন পরিচয়
করিয়ে দিতে।
(("রিধী"! মানে হচ্ছে আমার বউ। যার জন্য
এই গভীর রাতে ঘুমেভেজা চোখদুটো
জবরদস্ত মেলে রাখতে হচ্ছে আমায়))
-
আমাদের বিয়ে হয়েছে ১১মাস এর
কাছাকাছি হবে। বাবা-মায়ের পছন্দ করা
মেয়েকেই গলায় ঝুলাতে রাজি হয়ে যাই।
তবে যদিও এতদিন ভাবতাম না বাট বিয়ের
পর আমি নিজেকে একজন লাকি পার্সন
দাবি করি কেননা রিধীর মতো সুন্দর মনের
একটি মেয়েকে আমি নিজের জীবনসঙ্গিনী
হিসেবে পেয়েছি।
-
বিয়ের পর মেয়েটাকে নিয়ে অন্যসব
কাপলদের তুলনায় ততোটা বাইরে ঘুরতে
যাওয়া হয়নি। কয়েকদিন বলেছিল যদি সময়
পাই তাহলে ওকে নিয়ে যেন বাহিরে
কোথাও একটু ঘুরতে যাই। সব মেয়ের ই ইচ্ছে
হয় নিজের প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে
অজানা-অচেনা বা দূরে কোথায় হারিয়ে
যেতে। যেখানে থাকবেনা তাদের ইচ্ছাতে
বাধা দেবার মতো কেউ,থাকবে দুটি মনের
শুধুই ভালবাসার ঢেউ।
-
সময়ের অভাবে মেয়েটার এই ছোট্ট
ইচ্ছেটুকুরও মূল্য দিতে পারছিলাম না। অথচ
এতে বিন্দুমাত্র তার কোনো অভিযোগ
নেই।
-
আজ অফিসে কাজ কম থাকায় বসের থেকে
ছুটি চেয়ে নিলাম বউটাকে নিয়ে একটু ঘুরতে
বেরুবো বলে। পরন্ত বিকেলে সূর্যের তাপ
যখন কিছুটা কোমল হয়ে চারদিকে ছায়া
ছড়িয়েছে তখন দুজন বাসা থেকে বের
হলাম। গেট থেকে বের হয়ে যেই রিক্সা
ডাক দিব অমনি রিধী আমার হাত ধরে
থামিয়ে দিয়ে বলল-রিক্সাতে উঠবো না,
আমার হাটতে ইচ্ছে করছে।
কি করা তাই আর রিক্সা ডাকলাম না।
দুজন কপোত-কপোতী একে অন্যের হাতে
হাত রেখে শহরের ফুটপাত দিয়ে হাটতে শুরু
করলাম। বেশ ক্ষানিকটা পথ হাটার পর
ফুচকাওয়ালার দোকান চোখে পড়ল। রিধীর
ফুচকা অনেক প্রিয় তবে আমারও কম নয়।
দোকান দেখে লোভ সামলাতে পারলাম
না। দুটো ফুচকার প্লেট অর্ডার করে দুজনে
ইচ্ছে মিটিয়ে খেলাম। সন্ধ্যার আগ অবধি
বেশ আনন্দ নিয়েই দুজনার ঘুরাঘুরি হল।।
-
রিক্সায় করে যখন বাসায় ফেরার উদ্দ্যেশে
রওনা হলাম..রাস্তায় ট্রাফিক সিগনাল
পরায় রিক্সাটা থেমে পড়ল। থামানো
রিক্সা থেকে রাস্তার পাশে দেখে মনে
হল হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছে এমন
অবস্থায় থাকা একটা মেয়ের দিকে হঠাৎ ই
আমার চোখ আটকে গেল। অনেক সুন্দর করে
সেজেছে মেয়েটা।সেটা দেখানোর জন্য
রিধীকে বললাম দেখো দেখো "মেয়েটা
কি সুন্দর করে সেজেছে,ল্যামপোস্টের
আলোতে যেন সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি
পেয়েছে" ব্যাস এইটুকুই।
রিধী মেয়েটার দিকে একবার তাকালো
তারপর আমার দিকে.......
চুপচাপ কিছুই বলল না।
-
বাসার সামনে এসে রিক্সা থেকে নেমে
আমাকে রেখেই গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে
গেল। বললো ও না যে 'আমি গেলাম!' যাক
তখন ব্যপারটা অতো সিরিয়াসলি নিলাম
না।
-
রাতে খেতে বসেছি,আব্বু-আম্মু সবার
সাথেই কথা বলছে কিন্তু আমাকে যেন
চিনেই না।কেমন অদ্ভুত আচরণ খাবার সব
চেয়ে চেয়ে নিতে হচ্ছে। ঘটনা কি? মুখটা
কেমন গোমড়া করে রেখেছে। মাথায় তো
কিছুই কাজ করছে না। এই মেয়ের হলো টা
কি হঠাৎ?
-
খাওয়ার পর্ব শেষ করে যখন ঘুমানোর জন্য
রুমে গেলাম। হায় হায় এটা কি! আমিতো
আরো অবাক..বিছানার মাঝে কোলবালিশ
দিয়ে বর্ডার তৈরি করে রেখেছে কেন।
-
→আচ্ছা এসব কি হচ্ছে আমি কি জানতে
পারি (রিধীকে জিজ্ঞাস করলাম)
→কই কিছুনাতো..শুধু অসুন্দর মানুষটাকে
একটা সুন্দর মানুষের থেকে দূরে সরিয়ে
রাখার চেষ্টা করছি।
→মানে কি?
→কিছুনা..ঘুমোতে আসুন।
→আপনি করে বলছো কেন???
→অযোগ্য পাত্রী হয়ে..আপনি বলার
সৌভাগ্যই বা কজনার হয় বলুন।
→আচ্ছা তোমার হয়েছে টা কি।এমন
পাগলামো কেন করছো আমার সাথে। কি
করেছি আমি।
→আমি তো বলিনি আপনি কিছু করেছেন।
→তাহলে?
→কিচ্ছু না..লাইট অফ করে শুতে আসুন
তো..অনেক রাত হয়েছে।
-
লাইট অফ করে শুতে আসলাম। মাঝখানের
বর্ডারটা এখনো দেওয়া।
→আচ্ছা তুমি হঠাৎ করেই এমন চেঞ্জ হয়ে
গেলা কিভাবে।
→(কোনো শব্দ নেই)
→বালিশ টা সরাবো?
→অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে আছে। (ফুঁপিয়ে
ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ পেলাম)
→আরে এ কি তুমি কাঁদতেছো কেন।
→(কেঁদেই যাচ্ছে)
→প্লিজ কেঁদোনা। কি হয়েছে বলো আমায়।
→আমি তোমার মনের মত নই তাই না।
(কান্না জড়িত কণ্ঠে)
→কখন বললাম।
→আমি অতোটা সুন্দর নই যতোটা তোমার
পছন্দ (কান্না বেড়ে)
→কিসব আজেবাজে বকছো বলোতো। আমি
কি কখনো বলেছি তুমি আমার পছন্দের নও।
→তাহলে তুমি ওই মেয়েটাকে ওভাবে
দেখছিলে কেন আবার আমায় ই বা দেখালে
কেন। (কান্না শেষ..)
-
ওরেশ্লা এই হচ্ছে তাহলে আসল কারণ। (মনে
মনে)
-
আরে পাগলি বউ আমার। দেখোতো কিসব
চিন্তা মাথায় ঢুকিয়েছে। বিশ্বাস করো
সত্যি বলছি আমি কোনোরকম খারাপ মতলব
নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকাই নি হঠাৎ
চোখে পড়ে গেছে তাছাড়া মেয়েটা সুন্দর
করে সেজেছে তাই তোমাকে দেখালাম।
যদি কোনো খারাপ নিয়ত থাকতো তাহলে
কি তোমায় দেখাতাম বলো।
তুমিই তো একদিন বলেছিলে কাউকে নিন্দে
করতে নেই..আমিতো প্রশংসা ই করলাম।
তাও অন্যের কাছে নয় তোমার কাছে।
তারপরেও তুমি আমায় এভাবে শাস্তি
দিবে।
→কই আমার তো কখনো প্রশংসা করোনি।
(কিছুটা অভিমানী হয়ে)
→না মানে তুমিতো কখনো অমন করে
সাঁজো নি। (জিভে কামড়...আয়-হায় মুখ
ফসকে এটা কি বেরিয়ে গেল)
→কিইহহ।
(রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ল)
→সরি সরি এটা আমি বলিনি। (আকুতি
করে)
→আর কখনো কথা বলবা না আমার সাথে।
(লাইট অন করে....ড্রেসিং টেবিলে যেয়ে
বসলো)
-
হায়রে কপাল!! এক বিপদ নিভাতে না
নিভাতেই আরেক বিপদের উৎপত্তি।।
যদি জানতাম তখনকার সেই ছোট্ট কথাটা
এভাবে ঘাড়ে চেপে আমার বাসা পর্যন্ত
চলে আসবে তাহলে মুখ দিয়ে শব্দই বের
করতাম না। আমি কি ভেবে বললাম আর
উনি কি ভেবে নিল।আসলে মেয়ে মানুষগুলা
হয় ই এরকম বলব পজেটিভ ভাববে নেগেটিভ।
ধ্যাত ভাল্লাগেনা এতো জ্বালা-জ্বালা।
ইচ্ছে করছে চোখদুটোকেই গেলে দিই।।
-
→এই ছেলে বিড়বিড় করে কি বলছো হুম্মম।
→(হা করে তাকিয়ে আছি।
এ আমি কি দেখছি,কাকে দেখছি এটা?
চোখ কচলাতে কচলাতে ভাল করে দেখার
চেষ্টা করলাম)
আরে হ্যা,,,এ তো রিধীই! আমার রিধী!
কিন্তু ওকে এতো অচেনা লাগছে কেন।
হালকা মেকাপ,ঠোটে গাড় করে গোলাপি
লিপস্টিক, চোখদুটো কাজল দিয়ে
সাজানো,কপালে ছোট্ট একটা টিপ কি
অসম্ভব সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।যেন
বিশ্বাস ই হচ্ছে না এটা আমার কল্পনা না
বাস্তব।
→এই অমন হা করে তাকিয়ে আছো কেন
মশা ঢুকবে তো! (হাত দিয়ে মুখটা বন্ধ করে
দিল)
→আচ্ছা তুমি কি আমার রিধী? (বিশ্বাস
করতে পারছি না)
→কেনো..ওই মেয়েটা মনে হচ্ছে বুঝি! (ভ্রু
কুঁচকে)
→না তা নয়।
→তবে?
→তার চাইতেও বেশি নজরকারা এক সুন্দরী।
→যাহ..দুষ্টু! এভাবে কেউ বলে আমার লজ্জা
লাগেনা বুঝি।(মুখটা আঁচলে দিয়ে ঢেকে)
-
সত্যি বলতে কি আমি আজ অবধি আমার
লক্ষী বউটার প্রশংসা কখনোই
করিনি..আসলে ও তেমনভাবে কখনো
সাজতো না। কিন্তু এখন চোখের সামনে
আমি যাকে দেখছি ওর থেকে চোখ
ফেরানোটাই সহজ হয়ে উঠছে না। কি অদ্ভুত
মায়াভরা মুখটাতে এক চিলতে হাসি,আরে
আমার ঘুম! কোথায় গেল? যাকগে আজকে ওর
ছুটি।
-
→(আঁচলটা সরিয়ে আলতো করে বউটার
কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু একে দিলাম)
→ঘুমাও এখন।
→ঘুম তো আসবেনা।
→কেন??
→ঘুমের মধ্যে যে পরীটাকে নিয়ে স্বপ্ন
দেখতাম সে যে আজ আমার বাস্তবতাতেই
এসে হাজির।
→তাই....না (মিটমিট করে হাসছে)
→হুম্মম(আমি কেবল তাকিয়েই আছি ওর
পানে)
→হয়েছে আর ন্যাকামো করতে হবে না।
অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমান।
→এই শোনো! আর কক্ষনো সাজুগুজু করবা
না,,,বুঝছো।
→হুহ...কেন? (ভেংচি কেটে)
→আমার চাকুরী টা যে তাহলে অক্কা
পাবে।
→ হা হা হা..ওকে ওকে।

এতক্ষণ মেয়েটার পাগলামো ছিল...এখন
আবার ছেলেটার পাগলামো আরম্ভ হল।
-
বেঁচে থাকুক ওরা এবং বেঁচে থাকুক ওদের
ভালোবাসার পাগলামি গুলা।।।


written byঃঃ___Neel Ahmed (রাজকন্যার হবু
বর)

No comments:

Post a Comment