------পাগলির ভালবাসা------
.
.
✍═══লেখাঃ"Samiul Hasan"(লীলাবতীর
অপেক্ষায়)
.
-কলিংবেল চাপতেই সুমাইয়া এসে দরজা
খুলে দিল।
.
খুব সুন্দর লাগছে ওকে আজ। সেজে গুজে
আছে।মনে হয় কোথাও বের হবার প্রস্তুতি
নিচ্ছে।
.
- কি আজ এত দেরি করে আসলে যে।
- কি করব বল ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে
গেছে। আংকেলের শরীর এখন কেমন
আছে?
- বাসায় আসতে না আসতেই আংকেলের
শরীর নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছ হুম।
- কই আমাকে কে তো একবারও বল নি কেমন
আছ।
- ও সরি বাবা। ভুল হয়ে গেছে। আচ্ছা বল
কেমন আছ?
- থাক হয়েছে, এখন আর বলতে হবে না। সেই
কখন থেকে সেজে গুজে বলে আছি। আর
তোমার এতক্ষনে আসার সময় হল।
-তুমি আমার জন্য সেজেছ নাকি!
- তা নয় তো কি।
- আমি আবার কখন তোমাকে সাজতে
বললাম।
- তুমি সাজতে বলবে কেন। এভাবেই সাজা
যায় না নাকি। যান আজ না আমরা ঘুরতে
বের হব।
- ঘুরতে বের হবা মানে! আমার এসব ঘুরা
টুরা ভাল লাগে না। আমি যেতে পারব না।
.
- আরে সৈকত কখন আসলা?
- এই তো আন্টি এখনি।
- এই সুমাইয়া, ওকে বাইরে দাড় করিয়ে
রাখবি নাকি। ভেতরে আসতে বল।
- না আজ ও ভেতরে আসতে পারবে না।
আগে বলুক আমাকে নিয়ে ঘুড়তে বের হবে।
- দেখেন তো আন্টি আমি বলছি
আমার এসব ভাল লাগে না। তবুও আমাকে
জোরাজোরি করছে।
- এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারলাম না
বাবা। সকাল থেকেই সাজছে তোমার
সাথে বের হবে বলে। কতবার করে বললাম,
এসব ঘুরাঘুরি বাদ দে। এখন বড় হয়েছিস। একটু
বুজতে শিখ। না আমার কথার কোন
পাত্তাই দেয় না। তোমার সাথে ঘুরতে
যাবেই। তুমি একটু বুঝাও তো ওকে।
( ও বাবা আন্টিকে বললাম বুঝানোর জন্য, আর
আন্টি দেখি আমার উপর দায়িত্ব দিয়ে
চলে গেল। এখন কিভাবে বুঝাই এই পাগলি
মেয়েকে)
.
- কি হল কি ভাবছ। ঘুরাতে না নিয়ে গেলে
কিন্তু আজ ঘরে ঢুকতে দিব না।
.
মেনটেলিটি সমস্যা আছে এই মেয়ের।
যেইটা বলবে সেইটা করবেই। এই
মেয়েগুলোর সভাবটাই আজ পর্যন্ত বুঝে
উঠতে পারলাম না।
এখন আর কি করার বাধ্য হয়ে যেতে হবে।
- আচ্ছা বাবা যাব। এবার তো ঘরে ঢুকতে
দাও।
- ওকে এবার আসতে পারেন স্যার।
.
যাহোক ঘরে ঢুকেই আংকেলের রুমে
আসলাম।
- কে সৈকত ?
- জ্বী আংকেল । আপনার শরীর এখন কেমন
আছে।
- বেশি ভাল না বাবা। দিন দিন শরীরের
অবনতি হচ্ছে। হয়ত আর বেশি দিন বাচঁব
না।
- এসব কি বলছেন আপনি। মনে বিশ্বাস
রাখেন। কিছুই হবে না আপনার।
- আমি ঠিকি বলছি। আমার কিছু একটা হয়ে
গেলে সংসারটা দেখ তুমি বাবা।
- -------------
- কি দেখবে না?
- জ্বী আংকেল দেখব।
- আর আমার এই পাগলি মেয়েটাকে একটু
দেখে শুনে রেখ।
- জ্বী আংকেল।
(মনে মনে, আল্লাহ এই পাগলির হাত থেকে
আমারে রক্ষা কইর)
- কি ভাবছ?
- ভাবছি আপনার মেয়ের কথা। আপনার
শরীরের এই অবস্থা থাকা সত্বেও নাকি
আমার সাথে ঘুরতে বের হবে।
- যাও বাবা যাও। একটাই মেয়ে আমার। ওর
কোন কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না।
- সারছে, ওনার কাছে একটু বাচঁতে চাইলাম,
আর ওনিও দেখছি ওনার মেয়ের পক্ষে।
.
কি আর করার এখন বাধ্য ছেলের মত ওকে
নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে।
.
সুমাইয়ার চেনা ওদের বাসার পাশেই একটা
র্পাক আছে। সেই র্পাকের উদ্দেশ্যেই রওনা
দিলাম আমরা। একই রিকসায় দুজন। ও আমার
হাত ধরে আছে। বাধা দিলাম না। কারন ওর
যেটা ভাল লাগে সেইটা ও করবেই।কারও
কথা শুনতে রাজি না। তবে ওর এই
অভ্যাসগুলো ভাল না লাগলেও মাঝে মাঝে
আবার ভাল লাগে। যেমন এখন ভাল লাগছে।
আসলেই মেয়েটা অন্য রকম । আমাকে
অসম্ভবরকম ভালবাসে। সেই কলেজ লাইফ
থেকে আমাদের পরিচয়। তখন থেকেই
আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না। জোর করে
বাসায় নিয়ে যাওয়া, আন্টি আংকেলের
সাথে পরিচর করিয়ে দেওয়া।
আর অন্নান্য সব কাজেই আমাকে ছাড়া
যেন চলছেই না ওনর।প্রথম প্রথম এগুলে
বিরক্তি লাগলেও এখন ভাল লাগে।
আংকেল আন্টিও অনেক আদর করে আমাকে।
এই কয়েক বছরে অনেকটা কাছের মানুষ হয়ে
উঠেছি ওদের।আন্টিও প্রতিদিন ফোন দেয়
বাসায় যাওয়ার জন্য। আবার আংকেলের
শরীর খারাপ থাকার কারনে এখন
প্রতিদিনি বাধ্য হয়ে যেতে হয় ওদের
বাসায়।
.
র্পাকে এসে পৌছে গেছি। ভাড়া মিটিয়ে,
টিকেট কেটে র্পাকে ঢুকলাম দুজন। ঢুকে যা
দেখলাম, আমি তো পুরাই হা করে তাকিয়ে
আছি। মনে হচ্ছে প্রেমের আবাস্থল। চুটিয়ে
প্রেম করছে সবাই।
.
- এই তুমি আমাকে এটা কোথায় নিয়ে
আসলে?
- কোথায় নিয়ে আসলাম মানে, র্পাকে
নিয়ে আসলাম।
- এটা র্পাক হল। আমি এখানে থাকতে পারব
না।
- বেশি কথা বল না তে। আস আমরা একটা
নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে বসি।
.
কি আর করার ওর কথার উপর কোন কথা বলতে
পারি না। যা বলবে তাই করতে হবে। তাই
বাধ্য হয়ে একটা নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে
বসলাম আমরা। সুমাইয়া আমার কাধের উপর
মাথা রেখে আছে। আশপাশটা অনেকটা
খালি। শীতল আবহাওয়া । খুব সুন্দর একটি
পরিবেশ। এখন মনে হয় আমারও ভাল
লাগছে। একটু ঝুকে বসলাম ওর উপর। হঠাৎ
মনের অজান্তেই একটা হাত ওর কাধে
রাখলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
খুব নিশ্পাপ একটি চেহারা ওর। মানুষ এত
সুন্দর হয় কিভাবে। আমার এই পাগলিটা যে
এত সুন্দর আগে কখনও খেয়ালি করি নি।
.
হঠাৎ নিরবতা ভেঙ্গে --
সুমাইয়া ---
.
- সৈকত তোমাকে একটা কথা বলব?
- বল।
- যান আমার না একজন রাজকুমার আছে।
- রাজকুমার মানে!
- মানে ভালবাসার মানুষ। অনেক বোকা
সে। কিছুই বুঝে না। কে সে জান?
- কে!
- চোখ বন্ধ করলে বুঝে যাবে কে।
- ওকে বাবা বন্ধ করলাম।
.
হঠাৎ শরীর কেঁপে উঠল আমার। কেউ
আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। এই পাগলিটাই।
আসলে আমিও যে পাগলিটাকে অনেক
ভালবাসি।
কখনও যে বলতে পারি নি।
আজ আমিও জড়িয়ে ধরতে দ্বিধা বোধ
করলাম না।
.
একটু পর খেয়াল করলাম, আশেপাশের
অনেকেই আমাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
সবার সামনে লজ্জা পেয়ে গেলাম দুজন।
তবে লজ্জার থেকে আনন্দটাই একটু বেশি
লাগছে। র্পাকে আর থাকতে পারলাম না।
.
সুমাইয়াকে বাসার পৌছে দিয়ে ঘরে ফিরে
আসলাম। বাবা মাকে একটু অন্য রকম লাগছে
আজ। মনে হচ্ছে কোন একটা খুশির সংবাদ
পেয়েছে। কিছু না বলে নিজের রুমে ঢুকে
গেলাম।
.
রাতে ঘুম হচ্ছে না। পাগলিটার কথা মনে
পরছে বার বার।ফোন দিতে ইচ্ছে হচ্ছে,
ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে দিলাম না।
.
যাহোক সকালে ঘুম ভাঙ্গল মিষ্টি একটা
কন্ঠে। চোখ মেলেই হা করে তাকিয়ে আছি
আমি। সুমাইয়া আমার সামনে দাড়িয়ে
আছে। মনে হয় স্বপ্ন দেখছি। চিম্টি কেটে
নিজের অস্তিত্ব নির্নয় করলাম। সবকিছু
ঠিকঠাক আছে। কিন্তু সুমাইয়া এখানে
আসল কিভাবে।
.
- তুমি এখনও ঘুমুচ্ছ!
- ( আমতা আমতা করে) তুমি কার সাথে
আসলা?
- আব্বু আম্মুর সাথে।
- আংকেল আসছে! কিন্তু ওনার শরীর তো
অসুস্ত।
- এখন অনেকটা ভাল আছে।
.
হঠাৎ বউমা বলে কেউ ডাকল পাশের রুম
থেকে। বুঝতে পারছি মা । কিন্তু কাকে
ডাকল। সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে
আমার। কি হচ্ছে এসব।
সুমাইয়া হাসছে..
.
- কি হল হাসছ কেন?
- দাড়াও মা ডাকছে কি বলে শুনে আসি।
.
আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না । এত সকালে
ওরা সবাই আমাদের বাসায়। আবার মা
বউমা বলে ডাকছে সুমাইয়াকে।
-
যাহোক ব্যপার বুঝার জন্য উঠে পাশের রুমে
গেলাম। ওমা সবাই দেখছি মিষ্টি মুখ
করছে। এখনও সবকিছু অবাক লাগছে আমার।
.
আমাকে দেখেই মা..
সুমাইয়াকে ইসারা দিয়ে কিছু বলল।
.
ও আমার হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে
এসেছে।
- কি হচ্ছে এসব আমাকে সব খুলে বল।
- তুমি কি কচি খোকা নাকি, যে সব খুলে
বলব তুমি বুঝে নিতে পার না।
- আহা বল তো।
.
ওর মুখে সবকথা শুনে আর অবাক না হয়ে
পারলাম না।আমাদের বিয়ের কথা বলছে
সবাই। অনেক আগে থেকেই নাকি আমাতের
বিয়ে ঠিক করে রাখা হয়েছ। সুমাইয়াও
নাকি জানত কিন্তু কিছু বলে নি আমায়
সারপ্রাইজ দিবে বলে।
.
সব কিছু এত সহজে ঘটে যাবে ভাবতে পারি
নি।
.
-এই সৈকত আমাকে সারা জীবন আকরে ধরে
রাখতে পরবে তো।
- বলতে পারি না।
- মানে!
- মানে, আরএকটা বিয়ে করার ইচ্ছে আছে
তাই।
.
সুমাইয়া কিছু না বলে রাগ করে চলে
যাচ্ছে। আমি পিছ থেকে ওর হাত ধরে
কাছে টেনে নিলাম।
- এত সুন্দর পাগলি মেয়েটাকে ছেড়ে আর
একটা বিযে করার প্রশ্নই উঠে না।
- সত্যি বলছ?
- তাও বলতে পারি না।
- যা দুষ্ট।
.
মনের মানুষের মুখে দুষ্ট কথা শুনার মজাই
আলাদা। আল এই দুষ্টমিতেই যেন সারাটা
জীবন কাটে আমাদের।
Tuesday, February 21, 2017
------পাগলির ভালবাসা------
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment