Tuesday, February 14, 2017

গল্পের নামঃ আসিফ ও নিশার পথচলা

গল্পের নামঃ আসিফ ও নিশার পথচলা

লেখাঃ Asif Shawon (সাঝেঁর মায়া)
.
--হাই নিশা
--আরে আসিফ কেমন আছিস....???
--এইতো ভালো আছি।তুই কেমন
আছিস....???
--ভালো আছি।কখন আসছিস...??
--মাত্রই এলাম
--যাক ভালোই হয়েছে তুই আসছিস।আমি
একটু পর তোকে
নিয়ে বের হব
--বের হবি মানে....??? কই যাবি....???
--একটু মার্কেটে যাব।কিছু কেনাকাটা
আছে
--আচ্ছা ঠিকাছে
--তাহলে তুই এখন একটা কাজ কর.....!!
ফ্রেশ হয়ে এসির
নিচে যা।আমি দশ,পনেরো মিনিটের
মধ্যেই আসছি
--আচ্ছা
.
.
বড় ফুফির বাসায় আসছি।পরশুদিন মানে
শুক্রবার ওনার বড়
মেয়ের বিয়ে।আমাকে আগে আগে চলে
আসতে বলেছে।
তাই আমি বুধবারের চলে এসেছি।এসেই
যে আমার ভাগ্য
এমন করে খুলে যাবে সেটা কে জানত......!!
নিশা আর
আমি একসাথে শপিং এ যাব এটা সম্পূর্ণ
আমার কল্পনার
বাইরে ছিল।ছোটবেলা থেকেই নিশার
প্রতি আমি
কিছুটা আকৃষ্ট ছিলাম।নিশাকে অনেকটা
পছন্দ করতামও
আমি।অবশ্য আমরা একই ক্লাসে পড়ি।
.
.
--আসিফ এই আসিফ
--হ্যা (আচমকা)
--তুই এখনও এখানেই দাঁড়িয়ে
আছিস......??? তোকে না
বললাম ফ্রেশ হয়ে আসতে......??? আমি
এখনই বের হয়ে যাব
--তুই এক মিনিট দাড়া আমি ফ্রেশ হয়ে
আসছি
.
বলেই একদৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে বের
হয়ে নিশার সামনে গেলাম।নিশা
এখানেই দাঁড়িয়ে ছিল
.
--এইতো আমি রেডি
--আচ্ছা এখন চল।অনেককিছু কেনাকাটা
করতে হবে
.
কথা না বাড়িয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা চলে
গেলাম
বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স এ।
প্রায় ৩ ঘন্টা লেগে গেল নিশার শপিং
শেষ হতে।এই
হলো মেয়েদের প্রধান সমস্যা।শপিং এ
একবার ঢুকলে আর
বের হতে চায় না।জিনিস কিনবে ৪,৫ টা
কিন্তু দোকান
ঘুরবে ২৫,৩০ টা.....!!!
.
--নিশা আরো শপিং করবি.......???
--হাহাহা কেন খুব ক্লান্ত লাগছে
বুঝি.....???
--ভাই তুই জলদি আয়।আমার আর ভালো
লাগছে না
--এইতো শেষ।চল এইবার
--ধন্যবাদ আয় জলদি
.
.
আর কিছু না ভেবেই গাড়িতে উঠে
পড়লাম। আমরা দুইজনই
পিছনে বসেছি।ড্রাইভারের সাথে কেওই
বসে নি।
.
মাথাটা খুব ব্যাথা করছে।তাই মাথাটা
আস্তে করে
নিশার কাঁধে এলিয়ে দিলাম।যদিও এটা
আমার নিজের
ইচ্ছাতেই করেছিলাম....!! এখন
প্রতিক্রিয়া কি হয় শুধু
সেটা দেখার পালা......!!
.
--আসিফ মাথা কি খুব ব্যাথা করছে.....???
(মাথা এখনও
নিশার কাঁধে)
--হুম
--মাথায় হাত বুলিয়ে দিব.....????
.
কথাটা বলার পর আমি সাথে সাথে কাঁধ
থেকে মাথা
উঠিয়ে নিশার দিকে তাকালাম
.
--কি হল এভাবে তাকিয়ে আছিস
কেন.....???
--নিশা তুই........!!!
--আমি কি....??
--তুই তো আগে আমাকে দেখতেই পারতি না
আর এখন
তুই.....!!
--আগে ছোট ছিলাম কিছুই বুঝি নি।এখন
বড় হয়েছি।এখন
অন্য হিসাব
--অন্য হিসাব মানে.....???
--চুপ কর তুই।চুপ করে কাঁধে মাথা রাখ।
আমি হাত বুলিয়ে
দিচ্ছি
.
আমি আর কোনো কথা না বলে বাধ্য
ছেলের মত নিশার
কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলাম।নিশা আমার
মাথায় আস্তে
আস্তে হাত বুলাচ্ছিল।আমার কাছে যে
কেমন ভালো
লাগছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মত
না....!! শত হলেও
আমার পছন্দের মানুষ.....!!
.
নিশার কাঁধে মাথা এলিয়ে দেয়ার পর
সাথে সাথে
ঘুমিয়ে পড়েছি।আর কিছুই মনে নেই।
.
ঘন্টাখানিক পর নিশার ডাকে ঘুম ভাঙল
.
--আসিফ আসিফ (আস্তে আস্তে)
--হুম (চোখ দুটা সামান্য খুলে)
--এইতো বাসায় চলে এসেছি।চল নেমে
পড়ি
--বাসায় এসে পড়েছি....???
--হুম এসেছি তো
--রাত কয়টা বাজে....???
--রাত ৯:০০ টা বাজে
--আমি তো চোখ মেলে তাকাতে পারছি না
--আচ্ছা আমি তোকে ঘরে দিয়ে আসছি আয়
.
অত:পর নিশা আমার হাতে ধরে আমাকে
আমার রুমে দিয়ে
গেল।রুমে যাওয়ার সাথে সাথে আমি
ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুমের তাড়নায় রাতের খাবারটাও
খাওয়া হয়নি।
রুমে গিয়ে আর ফ্রেশ হইনি।ঘুমে চোখ
মেলে তাকাতেই
পারছি না।তার উপর আবার মাথা
ব্যাথা........!!!
.
.
পরেরদিন সকাল ১০ টায় ঘুম ভাঙল।
.
ঘুম থেকেই উঠে কোনমতে ফ্রেশ হয়ে
নিলাম।তারপর
সামান্য কিছু খেয়ে নিলাম কারন রাতে
কিছুই খাই নি।
.
চারদিকের পরিবেশ দেখে মনে হল সবাই
খুব ব্যস্ত।কারন
আজকে নওরিন আপুর (বড় ফুফুর মেয়ে) গায়ে
হলুদ।সবাই
হলুদের জিনিসপত্র জোগাড় করায় ব্যস্ত।
.
কাল তো ফুফির সাথে দেখাই করা হয়নি।
তাই জলদি
গিয়ে ফুফির সাথে দেখা করে আসলাম।
তারপর আমি
নিজেও হলুদের জিনিসপত্র জোগাড় করার
কাজে লেগে
পড়লাম।
.
সন্ধায় হলুদের সময়
.
সারাদিন অনেক ধকল গেছে শরিরের উপর
দিয়ে।এখন
একটু বিশ্রাম না নিলেই নয়।অবশ্য
বিশ্রাম নেবার জন্য
খুব বেশি সময় পাব না কারন আর
কিছুক্ষন পরেই হলুদের
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।
.
৫ মিনিট বিশ্রাম নেবার পর ওয়াশরুমে
ঢুকলাম গোসল
করার জন্য।দ্রুত গোসল করে চলে
আসলাম।তারপর একটা
নীল কালারের পাঞ্জাবি আর একটা
প্যান্ট পড়ে পা
বাড়ালাম স্টেজের দিকে।
.
খুব সুন্দর করে স্টেজটা সাজানো হয়েছে।
হলুদের
আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে।হঠাতই
আমার চোখ আটকে
গেল স্টেজের প্রথমদিকে বসে থাকা
একটা মেয়ের
দিকে।আরে এটা তো নিশা.....!! আমি কিছু
ভুল দেখছি না
তো.....??? নিশাকে আজকে অনেক সুন্দর
লাগছে।আগের
তুলনায় অনেক বেশি।চোখে সামান্য
কাজল,ঠোঁটে
লিপিস্টিক,হাতে কিছু কাচের চুড়ি....!!
আর সবচেয়ে
বেশি অবাক হলাম নিশার পরনে শাড়িটা
দেখে।কারন
শাড়িটার কালার ছিল আমার পরনে
পাঞ্জাবির
কালারে মত।নীল কালার।মনে হয় এই
নীল কালারের
শাড়িটাই নিশাকে আরো বেশি মানিয়ে
তুলেছে।আমি
আস্তে আস্তে নিশার সামনে গেলাম
.
--নিশা এই নিশা
--কিরে (আমারদিকে তাকিয়ে)
--একটু এইদিকে আয়
--দাড়া আসছি
.
--বল (সামনে এসে)
--তোকে আজ দারুন লাগছে
--ধন্যবাদ এন্ড তোকেও
--দেখ আমাদের দুইজনের গায়ের
পোশাকের কালার একই
রকম
--হুম এই জন্য চিমটি
--আউউউউউউউউউউউ..........!!!
--কিরে লেগেছে নাকি.....???
--এত জোরে কেও চিমটি কাটে নাকি.....??
--স্যরি রে ভাই আমার
--ভাই.....???
--ভাই বলব না তো কি বলব.....??
--এহহেম এহহেম........!! জামাই বল (চোখ
টিপ মেরে)
--জুতা.......!!
--তোকে না আজ দারুন লাগছে।ইচ্ছে
করছে তোকে এখনই
বিয়ে করে ফেলি
--তোর মুখে জুতা......!!
--আই লাভ ইউ বাবু
--আই হেইট ইউ বাবু
--চল একটা সেল্ফি তুলি
--না তুলব না
--চল না প্লিজ
--উফফফ আসিফফ তুই যে কি.....!! নে তুল
--এইভাবেই দাঁড়াবি.......?? গালে একটা
কিস দে ছবিটা
খুব সুন্দর হবে
--চুপ কর বান্দর
--দে না নিশা
.
.
--আসিফ এই আসিফ (বড় ফুফি)
--জ্বি ফুফি আসছি
.
--নিশা জলদি দাড়া একটা সেল্ফি তুলি
--আম্মু ডাকছে।এসে তুলিস।আমি এখানেই
আছি
--না এখন তুলব
--আরে বাবা বললাম তো আমি আছি।কেও
আমাকে নিয়ে
যাবে না পাগল।আম্মু ডাকছে।জলদি যা
.
অত:পর নিশা জোর করে আমাকে পাঠিয়ে
দিল।
.
ফুফির কাছে যাবার পর ফুফি আমাকে
বাজারে
পাঠালেন একটা সদাইয়ের জন্য।
.
বাজার থেকে বাসায় ফিরতে প্রায়
আধাঘন্টার মত
লেগেছে।ফুফিকে সদাইটা দিয়েই আমি
সোজা স্টেজে
চলে গেলাম।বর পক্ষের লোকজন কনেকে
হলুদ দেয়ার জন্য
অলরেডি চলে এসেছে।সবাই হলুদ নিয়ে
মাখা মাখি
করছে।কিন্তু আমার সেদিকে কোনো
ভ্রুক্ষেপ নেই।আমি
নিশাকে খুজছি কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না।
নিশার তো
এখানেই থাকার কথা ছিল।তাহলে
কোথায় গেল
মেয়েটা.......????
হঠাত দেখতে পেলাম স্টেজের এক কোনায়
চেয়ারে
নিশা বসে আছে।সাথে একটা ছেলেকেও
দেখা যাচ্ছে।
খুব হাসিখুশি ভাব নিয়ে তারা কথা
বলছে।ছেলেটা
আমাদের আত্নীয়দের মধ্যে কেও না।
আত্নীয়দের মধ্যে
হলে ছেলেটাকে অবশ্যই চিনতাম।তাহলে
নিশ্চয় বর পক্ষ
থেকে এসেছে। তাদের কথা বলার অবস্থা
দেখেই মাথায়
রক্ত উঠে গেল।ইচ্ছে করছে সামনে গিয়ে
ছেলেটার দু
গালে কষিয়ে দুটা চড় মারি......!!! বিয়ে
বাড়িতে তো
আরো অনেক মেয়ে আছে।শেষ পর্যন্ত
নিশাকেই চোখে
পরল.........!!! না এটার কিছু একটা করতেই
হবে।আমি আস্তে
আস্তে হেটে তাদের সামনে গেলাম
.
.
--কিরে নিশা
--কখন আসলি.......?? (উপরেরদিকে
তাকিয়ে)
--মাত্রই এলাম
--বস পরিচয় করিয়ে দেই।এ হচ্ছে
দুলাভাইয়ের ছোট ভাই।
মানে আমার বিয়াই
--হাই আমি আদনান (হাত বাড়িয়ে)
--হ্যালো আমি আসিফ (ভদ্রতার খাতিরে
আমিও হাত
বাড়ালাম)
--আদনান ভাই এ হচ্ছে আমার ফুফাতো ভাই
আসিফ (নিশা)
--অহহ আচ্ছা
--আসিফ তুই বস এখানে
.
আমি সামনে থেকে একটা চেয়ার নিয়ে
তাদের সাথে
বসে পরলাম
.
--নিশা তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে
(আদনান)
--ধন্যবাদ আদনান ভাই
.
আদনানের কথা শুনে মেজাজ গেল খারাপ
হয়ে।নাহ
এখানে কিছু একটা বলতেই হবে।
.
--আদনান ভাই আপনার গার্লফ্রেন্ডের
খবর কি....???
--নিশার মত এমন কিউট একটা মেয়ে
থাকতে
গার্লফ্রেন্ডের দরকার হয় নাকি.....???
(অট্টহাসিতে)
.
মেজাজ গেল আরো খারাপ হয়ে।ইচ্ছে
করছে শালারে
এখন এইখানে গুলি করে মারি......!!!
.
--আদনান ভাই নিশার দিকে নজর না
দেয়াই ভালো মনে
হয়
--কেন....???
--নিশা শুধুই আমার
--মানে.....?? (চোখ বড় বড় করে)
--মানে সেই ছোটকাল থেকেই নিশার
সাথে আমার বিয়ে
ঠিক হয়ে আছে।নওরিন আপুর বিয়ের পরেই
আমাদের বিয়ে
হবে
.
মনে যা চেয়েছিল তাই বলেছি।কথাগুলো
শুনে আদনানের
মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে
গিয়েছিল।আর নিশা
তো আমার কথা শুনে পুরাই অবাক হয়ে
গেছে।আমি যে
এখন এই কথাগুলো বলব সেটা নিশা কখনই
আশা করে নি
.
--নিশা চল
--কোথায়......??? (আমারদিকে তাকিয়ে)
--যেতে বলেছি যাবি এত কথা বলিস
কেন.....?? (চোখ
রাঙিয়ে)
.
নিশা কোনো কথা না বলে আমার পিছু পিছু
চলে আসল
.
--আসিফ আমাকে কোথায় নিয়ে
যাচ্ছিস......???
--আমার রুমে
--তোর রুমে কেন....????
--এমনি দরকার আছে
--সারা বাড়ি হলুদ দেয়া নিয়ে ব্যস্ত আর
তুই আমাকে
তোর রুমে নিয়ে যাচ্ছিস......???
--তুই হলুদ দিবি নাকি ওই আদনানের
সাথে কথা
বলবি......??? (পেছন ফিরে)
--আসিফ তুই কি বলছিস এইগুলা.....?? উনি
আমার বড়
--বড় দেখেই তো জ্বালা।ছোট হলে তো
কিছুই বলতাম না
--মানে কি আসিফ.....???
--আর কোনো কথা না। আগে আমার রুমে আয়
তারপর সব
বলছি
.
নিশাকে আমার রুমে নিয়ে আসলাম
.
--রুমে তো আসলাম।এইবার বল কি
বলবি....???
--ওই আদনানের সাথে তোর কি....???
--উনার সাথে কথা বলছিলাম বসে বসে
--উনি কি বলেছে একটু আগে
শুনেছিস.....???
--হুম শুনলাম তো কিন্তু উনি তো মজা
করেছেন
--মজা.....??? ইচ্ছে করছিল ওকে খুন করে
ফেলি ওখানে
--তোর এত জ্বলছে কেন হুম.....???
--কারন আমি তোকে........!!!
--হুম তুই আমাকে কি বল......???
--আমি সিরিয়াসলি বলছি আমি তোকে
ভালবাসি নিশা
.
কথাটা শোনার পর নিশা আমারদিকে বেশ
কিছুক্ষন
তাকিয়ে ছিল।
.
--কি বললি তুই......??? তুই আমাকে
ভালবাসিস.....????
--হুম নিশা।সত্যি আমি তোকে ভালবাসি
--তোর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি
আসিফ
--এখানে সাহসের কি দেখলি তুই.....???
--নিজের ফুফাতো বোনকে তুই প্রেমের
অফার করলি
শালা......???
--ভালবাসি তাই করেছি
--হারামী এখন ইচ্ছে করছে তোকে ধরে
পচা পানিতে
চুবাই
--কি করব বল......??? সেই ছোটবেলা
থেকেই আমি তোকে
কিছুটা পছন্দ করতাম।তোকে আমার খুব
ভালো লাগত।
আস্তে আস্তে যখন বড় হতে লাগলাম তখন
এই পছন্দ বা
ভালো লাগা,ভালবাসায় পরিণত হয়েছে।
জানিস আমি
তোদের বাসায় আসি শুধুমাত্র তোকে এক
নজর দেখার
জন্য।জানিস ওইদিন মার্কেট থেকে
বাসায় আসার সময়
আমি ইচ্ছে করেই তোর কাঁধে মাথা
রেখেছিলাম।আমি
দেখতে চাচ্ছিলাম তোর প্রতিক্রিয়াটা
কি হয়.......!!
কিন্তু তুই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে
দিয়েছিলি।বিশ্বাস
কর ওই মুহূর্তে আমার কাছে এমন
লেগেছিল যে আমিই
মনে হয় এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি
মানুষ।সত্যি বলছি
নিশা আমি তোকে অনেক ভালবাসি অনেক
.
এক নিঃশ্বাসে সবগুলো কথা নিশাকে বলে
দিলাম।তাই
এখন একটু রেস্ট নিচ্ছি
.
--সত্যি আমাকে ভালবাসিস......???
--হ্যা সত্যি তোকে অনেক ভালবাসি
--আব্বু,আম্মুর সামনে গিয়ে বলতে পারবি
যে তুই আমাকে
ভালবাসিস......????
.
কথাটা শোনার পর কেমন জানি ভালো
লাগা কাজ
করছিল মনের ভিতর।তার মানে কি
নিশাও আমাকে
ভালবাসে......????
.
--আগে বল তুই আমাকে ভালিবাসিস
কিনা......???
--যদি বলি হ্যা তাহলে......????
--যদি তুই হ্যা বলিস তাহলে আমি এক্ষুনি
ফুফির কাছে
যাব এবং গিয়ে সব বলব
--বলতে পারবি তো.....???
--হুম পারব কিন্তু তার আগে তুই বল তুই
আমাকে
ভালবাসিস কিনা.....???
--এতক্ষন তাহলে কার সাথে বকবক
করলাম.....???
--তুই আগে নিজের মুখে বল
--এতকিছুর পরে এখন আবার মুখ দিয়ে
বলতে হবে.....????
--হুম হবে। বল তুই
--তুই পিছনের দিকে তাকা
--কেন.....????
--বারেহ আমার লজ্জা লাগে না বুঝি
বলতে (মুচকি হাসি
দিয়ে)
--আচ্ছা এই আমি পিছন ফিরে তাকালাম।
এইবার বল
(পিছন ফিরে)
--বলব......???
--আরে জলদি বল
--দাড়া এক মিনিট জিরিয়ে নেই
--দেখ রে নিশু (ধমক দিয়ে)
--ওই তুই চুপ কর (উলটা আমাকে ধমক
দিয়ে)
--আরে বাবা বল না। সেই কখন থেকে
শোনার অপেক্ষায়
আছি
--হুম বলছি অপেক্ষা কর
.
২ মিনিট পর
.
--আসিফ আমি তোকে ভালবাসি (আমার
কানে কানে)
--কবের থেকে.....???
--অনার্স ১ম বর্ষ থেকে
--এতদিন বলিস নি কেন....??
--মেয়েরা কখনও আগে বলে না হুহ
--আমিও তোকে ভালবাসি (নিশার দিকে
মুখ ঘুরিয়ে)
--কষ্ট দিবি না তো আমাকে.....????
--না কখনও না রে
--আম্মুর কাছে বলতে পারবি তো.....???
--হুম অবশ্যই পারব (কিছুক্ষন ভেবে)
--তাহলে ঠিকাছে
--চল
--কোথায়......???
--ফুফির কাছে
--এখনই....???
--হুম এখনই। চল
--বিয়েটা তো আগে শেষ হতে দে
--ধুর বাদ দে।চল এখনই বলব
--আচ্ছা চল
.
অত:পর ফুফির কাছে যাচ্ছি আমাদের
ভালবাসার কথা
বলতে।আল্লাহই জানে বলার পর কি
হয়......!!!
.
.
ফুফি,ফুফা,আব্বু,আম্মু সবাই একসাথে বসে
কথা বলছিলেন
তাদের রুমে।আমাদের দুইজনকে দেখে
ফুফি বললেন
.
.
--কিরে সারা বাড়িতে হলুদ নিয়ে সবাই
ব্যস্ত আর তোরা
দুইজন এখানে কি করছিস.....???
--ফুফি তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার
--আচ্ছা পরে কথা বলিস। এখন যা হলুদে
যা
--ফুফি কথাগুলো এখন না বললে পরে আর
বলা হবে না।
তোমাকে এখনই শুনতে হবে
.
আমার কথা শুনে ফুফা,আব্বু,আম্মু উনারা
সবাই খুব
মনোযোগ সহকারে আমারদিকে তাকালেন
.
--কি এমন কথা যে এখনই বলতে
হবে....???
--ফুফি কথাগুলো শুধু তোমাকে একা বলব
না।এখানে যারা
আছেন তাদের সবার উদ্দেশ্যে বলব
--হুম কি কথা বল শুনি
.
কিছুক্ষন নিচেরদিকে তাকিয়ে বলা শুরু
করলাম
.
--ফুফি সেই ছোটবেলা থেকেই আমি
নিশাকে ভালবাসি।
আমি এই বাড়িতে আসি শুধু নিশাকে
দেখার জন্য।নিশার
জন্য আমার মনের ভিতর অন্যরকম একটা
জায়গা সৃষ্টি হয়ে
গেছে।যেই জায়গায় নিশাকে ছাড়া
অন্যকাউকে স্থান
দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।আমি
নিশাকে ছাড়া চলতে
পারব না।নিশাকে আমি অনেক বেশি
ভালবাসি।নওরিন
আপুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।নিশাই সবার
ছোট।তুমি হয়তবা
আর কিছুদিন পর নিশাকে একটা ভালো
পাত্র দেখে
বিয়ে দিয়ে দিবে।কিন্তু আমি সেটা
মোটেই সহ্য করতে
পারব না।কারন আমি নিশাকে অনেক
ভালবাসি।তাই
আমি চাই নিশাকে বিয়ে করতে।নিশাও
আমাকে
ভালবাসে এবং বিয়ে করতেও রাজি।আমি
নিশাকে
বিয়ে করতে চাই।আমার মতামত আমি
তোমাদের
জানিয়ে দিলাম।এখন তোমরা কি করবে
সেটা তোমাদের
ব্যাপার।তবে আমি বলব নিশাকে আমার
সাথে বিয়ে
দিলে ও খুব সুখেই থাকবে
.
.
কথাগুলো বলে নিচের দিকে তাকিয়ে
রইলাম।কারন
উপরেরদিকে তাকাবার মত ক্ষমতা বা
সাহস দুইটার
কোনটাই নেই আমার।বাবা তো মাশাল্লা
অনেক রাগি।
উনার চোখের দিকে তাকিয়ে কোনো সময়
কথা বলেছি
বলে মনে পড়ে না।আর এখন এইগুলো যে
কিভাবে বলেছি
সেটা কিছুতেই মাথায় আসছে না
.
.
--তোরা দুইজন এখন যাহ এখান থেকে।
তোর ব্যবস্থা আমি
পরে করতেছি
.
ফুফির কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে
গেলাম।কি বললেন
উনি এটা......??? আমি তো ভেবেছি
কথাগুলো বলার পর
হয়তবা আমার দুই গালে কষে দুটা চড়
মারবেন.......!!!
.
আর কথা বাড়ালাম না।পিছন দিকে ফিরে
তাদের রুম
থেকে বেড়িয়ে পড়লাম
.
--মানতে হবে আসিফ তোর খুব সাহস আছে
--চুপ কর তুই।টেনশনে শেষ আমি
--কেন কেন.....???
--আল্লাহই জানে কাল আমাকে কয় টুকরা
করে নদিতে
ভাসায়....!!
--আরে ভয় পাস না।কিছুই হবে না
--তুই আমার পাশে থাকলেই হবে
--আমি আছি তো তোর পাশে
--এইতো আমার লক্ষি বউ
--অইই এখনও হয় নি
--হতে কতক্ষন......!!
--হুম তাও ঠিক
--চল স্টেজে চল
--আচ্ছা চল
.
.
খুব ভালোভাবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা
শেষ করলাম।
কনেকে নিয়ে বর পক্ষ চলে গেছে।সবার
থেকে বিদাই
নিয়ে কিছুক্ষন আগে চলে গিয়েছে তারা।
আমি আর
নিশা দুজন দুটা চেয়ারে বসে ছিলাম।
হঠাত ফুফি
আমাদের সামনে এসে বললেন
.
--তোরা দুইজন একটু আমাদের রুমে আয়।
কথা আছে
.
বলেই ফুফি চলে গেলেন।এইদিকে আমি
ভয়ে কাঁপতে শুরু
করলাম।ফুফির রুমে গেলে যদি কিছু হয়ে
যায়......??? যদি
মাইর দেয়......???
.
.
--কিরে আসিফ চল।আম্মু যেতে বলেছে
--আমারে এখন টুকরা টুকরা কইরা
ফালাইব।আমি
বিয়া করুম না।তুই এখানে থাক।তোরে
বিয়া করুম
না
--কি বললি তুই.....??? (চোখ রাঙিয়ে)
--না না কিছু না।চল যাই
--চল
.
.
ফুফির রুমে আসলাম দুইজিন।এসেই মাথা
নিচু করে নিচের
দিকে তাকিয়ে রইলাম।পরিস্থিতি বেশি
সুবিধা মনে
হচ্ছে না
.
--নিশা (আস্তে আস্তে)
--কি.....???
--দৌড় দিতে পারবি তো......???
--মানে.....???
--মানে পরিস্থিতি বেশি ভালো না।যদি
কিছু হয়ে যায়
তাহলে সোজা দৌড় দিবি বুঝলি
--আচ্ছা
.
.
--এই তোরা কানে কানে কি ফুসুরফাসুর
করছিস......???
(ফুফি)
--ক ক কই কিছু না তো
--হুম যেজন্য ডেকেছ।কাল কি বলছিলি
যেন......???
.
.
হয়েছে এইবার.....!! কি বলব বুঝতেছি না
.
.
--তুই নিশাকে ভালবাসিস এটাই
তো.....???
--ইয়ে না মানে মানে
--কি মানে মানে করছিস....??? (ধমক
দিয়ে)
--ফুফি আমি সত্যি নিশাকে ভালবাসি
(বলেই ফেললাম)
--থাপ্পড় জিবনে খাইসস......???
.
ফুফির কথা শুনে অলরেডি আমার গলা বুক
শুকিয়ে গেছে।
ভাবছি দৌড় দিব কিনা........!!!
.
--ফুফি আমি........!!
--কি আমি হ্যা......??? তুই যদি আগে
আমাকে এই কথাটা
বলে ফেলতি তাহলে আজকে আমি দুই
মেয়ের বিয়ে
একসাথে দিতাম....!!!
.
.
কথাটা শুনে জিবনের সবচেয়ে বড় শকড
টা খেলাম।ফুফি
কি বলল এটা.....??? আমি যেন কিছুতেই
নিজের কানকে
বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না।কি
হচ্ছে এটা আমার
সাথে.....??? সত্যি তো নাকি আমি ঘুমিয়ে
আছি......???
নিজেই নিজের হাতে একটা চিমটি
কাটলাম।নাহ সব তো
ঠিকই আছে।আমি তো জেগেই আছি......!!!
.
.
--চিমটি কাটতে হবে না রে পাগল।আমি
সত্যি ই বলছি।
তুই না বললে ও আমি কথাটা তোকে
বলতাম।যাক ভালোই
হল আমাদের বলার আগেই তুই বলে দিলি
--ফুফি আমি তোমার কথাগুলো কিছুতেই
বিশ্বাস করতে
পারছি না
--বিশ্বাস করে ফেল।তোরা অনার্স
ফাইনাল পরিক্ষা
দিলেই তোদের বিয়ে দিয়ে দিব।আর
আমরা সবাই রাজি।
এখন নিশাকে নিয়ে নিজের ঘরে যা
--আচ্ছা যাচ্ছি
.
.
নিশাকে নিয়েই নিজের রুমে চলে এলাম।
রুমে এসেই
নিশাকে জড়িয়ে ধরে ফেললাম
.
--এই আসিফ কি করছিস তুই.....??? ছাড়
ছাড় বলছি
--আরে দুষ্টামি করব না
--আরে বোকা কেউ দেখে ফেললে সমস্যা
হবে
--এখন আর কোনো সমস্যা নেই।কারন এখন
তুই আমার স্ত্রী
--হই নাই
--হবি
--হুম হব কখনও আমাকে কষ্ট দিবি না
তো....???
--নাহ আমার লক্ষি বউটাকে কখনও কষ্ট
দিব না
--মনে থাকবে তো....???
--হুম থাকবে
--সারাজীবন এই বুকের মাঝে আমার
জায়গা হবে
তো.....????
--হুম এই বুকের মাঝে শুধু তোরই জায়গা
হবে রে আর কারো
না
--অনেক ভালবাসি তোকে অনেক বেশি
--আমিও অনেক ভালবাসি তোকে
--অইই নিজের বউকে তুই করে বলিস
কেন.....????
--তুই ও তো বলতেছিস......!!!
--আচ্ছা আমি এখন থেকে তুমি করে বলব।
তুমিও বলবা বুঝছ
--হুম এখন থেকে আমিও তুমি করেই বলব
--আচ্ছা ঠিকাছে
--অনেক ভালবাসি তোমাকে
--আমিও
.
.
.
.
অত:পর শুরু হতে চলেছে দুটি নতুন
জীবনের পথচলা।

No comments:

Post a Comment