Tuesday, February 21, 2017

গল্প: "ভদ্র জামাই"

গল্প: "ভদ্র জামাই"

-এই যে আমার ভদ্র জামাই কোথায় আপনি?
-এই তো ঘুমে।
-মহারাজ একটু উঠেন এদিকে আসেন তো।
-এখন হবেনা আরও ঘুম বাকি।
-তোমার ঘুম বের করছি আমি একটু ওয়েট কর।
-তোমার যা ইচ্ছা কর তো।
(পানি এনে মুখে ঢেলে দিয়েছে)
-এই এটা কি হল?(রাগী স্বরে বললাম)
-তার আগে বল ওখানে অতগুলো জামাকাপড়
রেখেছে কে?
-কোথায় জামাকাপড় কার জামা কাপড়
কিসের কি?(চোখ মুখ কচলিয়ে বললাম)
-এই একদম ঢং করবেনা।ওখানে তোমার
নোংরা জামাকাপড়গুলো কেন রেখেছ?
-ধুর আমি তো ঘুমে ছিলাম,আমি কেন
রাখতে যাব।তাছাড়া তুমি তো নিজের
জামাকাপড়গুলো ধুয়ে দিচ্ছ আমারগুলোও
ধুয়ে দাও।
-কিইইই কি বললে তুমি?কি ভেবেছ আমাকে
তুমি? আমি কি রোবট?সারাদিন বাসার
কাজ একা করি কখনও কিছু বলিনা।আর এখন
দেশের সব নোংরা কাপড় এনে বলছ ধুয়ে
দিতে পারবনা আমি এই বলে দিলাম।(চোখ
রাঙিয়ে বলল)
-প্লিজ আমার সোনাবউ।দেখ না তোমার
জামাইয়েরই তো কাপড় ধুয়ে দাও প্লিজ....
-পারবনা বললাম তো পারলে নিজে ধুয়ে
নাও।আর হ্যা সত্যি করে বল ওসব কাপড়গুলো
কখন রেখেছ?
-ইয়ে মানে....
-লজ্জা করেনা তোমার?
-কেন লজ্জা করবে?
-বাহ ভুলে গেছ...বিয়ের আগে প্রেম করার
সময় তো খুব বলতে জান পাখি ময়না পাখি
তোমার সব দুঃখ কষ্ট আমি ভাগ করে নিব।
তোমার নরম শরীরে কখনও আঁচড় লাগতে
দিবনা।কোথায় গেল সব দরদ...(ভ্যাংচি
কেটে বলল)
-ইয়ে মানে দরদটা এখনও আছে গো কিন্তু....
-আবার কিন্তু কি?নির্লজ্জ একটা।
-স্বামীর সকল কাজে সাহায্য করা স্ত্রীর
কর্তব্য।প্লিজ আমার সোনাবউ ধুয়ে দাও
আমার কাপড়গুলো।
-পারব না।
-প্লিজ।
-নিজে ধুয়ে নাও আজ তো ছুটির দিন।
নিজের কাজ নিজে কর।
-তাহলে তুমি পারবেনা?
-আচ্ছা বাই।
-বাই মানে?
-আমি এখন ঘুমাব তাই গুড বাই।(বালিশটা
নিয়ে ওদিক ফিরে শুয়ে পড়লাম)
-এই কি হচ্ছে কি নাস্তা করবে না?আবার
ঘুমাচ্ছ কেন?
-নিশ্চুপ।
কিছুক্ষন পর....
-তাহলে এখানকার যত জামা কাপড়
হাওয়ায় উড়ে এসে পড়েছিল আমি আবার
হাওয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছি কিন্তু।কারো কোন
ক্ষতি হলে আমি দায়ী না।(জোরে চিৎকার
করে বলল আমাকে শুনিয়ে)
-এই এই এই সোনাবউ আমার এমন করেনা।
(একলাফে বিছানা থেকে উঠে চলে
আসলাম)
-কি হল তুমি না ঘুমাইতেছিলা?উঠল
ে কেন?
-ইয়ে মানে তুমি তো বললে.....
-কি বললাম আমি?
-ইয়ে মানে জামা কাপড় ফেলে দিবে।
-ও হ্যা তাইতো।তো তুমি উঠলে কেন জামা
কাপড়গুলো তো তোমার না তুমিও রাখনি।
যাও তুমি ঘুমাও ওগুলো আমি ফেলে দিব।
-ইয়ে মানে কেন ফেলে দিবে কে?
-আমার ইচ্ছা কারন ওগুলো ভূতের জামা
কাপড় ভূতে রেখেছে।
-এই না না এটা করনা।তুমি তো জান ওগুলো
আমার আমিই রেখেছি।
-কেন রেখেছ?
-ইয়ে মানে নোংরা তো তাই ধোয়ার জন্য।
-কেন নিজে ধুয়ে দিতে পারনা।অন্যের
জামা কাপড়ের ভিতর লুকিয়ে রেখে দাও
ধোয়ার জন্য।
-এভাবে বলছ কেন তুমি?
-বলছি কারন আমার কষ্ট হয় আর সেই কষ্টটা
তুমি বুঝবেনা।
-আচ্ছা দুঃখিত আমার সবগুলো জামা
কাপড় আমি নিয়ে যাচ্ছি।(সবকিছু গুছিয়ে
নিয়ে উঠে হাটা দিলাম)
-এই দাড়াও কোথায় যাচ্ছ?
-ঘরে।
-ওগুলো কেন নিচ্ছ ওগুলো তো ধুতে হবে।
-লাগবেনা।
-কেন লাগবেনা?
-আমি প্রয়োজন বোধ করছিনা তাই।
-ওগুলো আমাকে দাও?
-থাক।(বলেই জামাকাপড় গুলো নিয়ে হন হন
করতে করতে রুমে আসলাম)
.
মানুষের কাছে শুনেছি বিবাহিত জীবনে
যখন স্বামী স্ত্রীর সন্তানাদি হয় আবার
সেই সন্তানাদির ও সন্তান হয় যখন তারা
বৃদ্ধ বৃদ্ধা হয় তখনও নাকি ভালবাসা অটুট
থাকে।তবে বৃদ্ধা স্ত্রী বৃদ্ধের ওপর একটু
আধটু বকা ঝকা করে বদভ্যাসের জন্য এই
যেমন সিগারেট অতিরিক্ত খাওয়া পান
খাওয়া ইত্যাদি কারনে তবে সেটা বৃদ্ধ
বয়সে।কিন্তু আমার কি কপাল বিয়ের
পাঁচমাস পূর্ন হতেই বউয়ের মুখের ঝাড়ি
পারবনা কথাটি রোজ সকালের
ব্রেকফাষ্টের বাটারের মতন হয়ে গেছে।
একঘেয়েমি জীবন।এজন্যই লোকে বলে সব
করো প্রেম করোনা।প্রেমের ফলে যে
বিবাহ সম্পন্ন হয় সেই সংসারে প্রেমিকা
তার সর্বচেষ্টা দিয়ে হলেও খুঁজে যাবে
প্রেমের সেই দিনগুলো সে একেবারেই ভুলে
যাবে যে সে এখন আর শুধু একটি ছেলের
প্রমিকা নেই একটা সংসারের মূল
চাবিকাঠি সে।সে এখন সকলের দায়িত্ব
পালন করবে।কিন্তু আমার কপালে শেষমেষ
এমন বউই জুটলো যে কিনা কথায় কথায় সেই
পুরানো দিনের আবেগময় কথা নিয়ে খোঁচা
মারে।কি এমন করেছি শুনি।ছুটির দিন আজ
উঠে দেখি মায়া কিচেনে পাশের রুমে ওর
কিছু জামাকাপড় ভেজানো তাই একটু বুদ্ধি
খাটিয়ে কয়েকটা নিজের জামা কাপড় ওর
ভিতর দিয়েছি যেন ওগুলো ধুয়ে দেয়।কিন্তু
বিচক্ষন এই বুদ্ধিশীল বউটা ঠিকই টের পেয়ে
চিল্লায়ে একেবারে বাড়ি মাথায় তুলেছে।
এটা নিতান্তই অন্যায় নিজের স্বামীর
জামা কাপড় ধুয়ে দিবে এটাতেও না-রাজ।
কি এমন ক্ষতি হয় শুনি।একটাই বউ আমার তুই
আপদে বিপদে তুই তো দেখবি।বউ তো নয়
যেন যান্ত্রিক রোবট।অবশ্য এই রোবটাকে
আমি ভীষন ভালবাসি।মায়া মায়া চাহনি
মায়া মাখা হাসি আবার নামটাও মায়া
এই মায়ার ভুবনে নিজেকেই মাঝে মাঝে
গুলিয়ে ফেলি।মাঝে মাঝে ভাবি ওকে
ছাড়া হয়ত আমার কোন অস্তিত্বই নেই।
কতদিন যে ঘুরেছি ওর পিছে মোটেই
পাত্তা দিতনা।পাত্তা দিতনা বেশ করত
কিন্তু অন্য কোন মেয়ের ছায়া মাড়ালেও
নোটিশ যেত আমার মায়ের কাছে। আর
নোটিশটা মায়া রানীই দিত।এমন ভাবে
পটিয়ে আসত আম্মুকে বাসায় ঢুকলেই তেলে
বেগুনে জ্বলে উঠতেন মা জননী।অবশেষে
অনেক কষ্টের পর প্রেমটা হল কিন্তু প্যারা
তখনও কমেনি।একবার শীতকালের দিনে
সিগারেট খেয়েছি কিভাবে যেন ও টের
পেয়েছে আর পাশের পুকুরে সন্ধ্যেবেলা
দিল ঠেলা মেরে।এমন নির্দয় নিষ্ঠুর নির্মম
মেয়েটাকে সেদিন কিছুই বলতে পারিনি
শুধু চুপ করে দেখে গেছি ওর অভিমানে ভরা
চোখ গুলো।নীরবেই ভালবেসেছি।প্রতিদিন
কারো জন্য বেলি ফুল নিয়ে দাড়িয়ে
থাকাটা ছিল আমার কর্তব্য মানে
দায়িত্ব।আর এই কেউটাই হল আমার
মায়াবতী।বড্ড বেশি ভালবাসি এই
মায়াবতীকে।
কিন্তু আজ আমার ভীষন রাগ উঠেছে ওকে
সহজে ছাড়া যাবে না।কিছুতেই না.....
.
কিছুক্ষন পর....
-চলো নাস্তা করবে।(মায়া)
-নিশ্চুপ।
-কি হল শুনতে পাচ্ছ না নাস্তা করবে চল।
-নিশ্চুপ।
-শুভ্র.... কি বলছি শুনছ না?
-খিদে নেই।
-কেন খিদে নেই কেন?অন্যদিন তো এই
সময়ে খাব খাব করে পাগল করে তোল।
-বললাম তো খিদে নেই তাহলে আবার
কিসের কথা।
-ভালভাবে বললে তো হয় খাবেনা।
-হ্যা খাবনা আর কিছু?
-নাহ ঠিক আছে।
আমি ফোনটা নিয়ে গেম খেলা শুরু করলাম।
আড়চোখে তাকাচ্ছি মায়া খাবার আসে
কিনা।একটু বিরক্ত হয়েই বেরিয়ে গেল।
প্রচন্ড ক্ষুদায় তো পেট জ্বলে।রাগে বলে
দিলাম খিদে নেই।ধুর আশা করাটাই
বেকার আমার বউ এত লক্ষী নয় যে
সিনেমার নায়িকাদের মত এসে আমাকে
গালে তুলে খাওয়াবে।।
.
দুপুরে.....
একটা দৃশ্য দেখে চোখ ছানা বড়া।সকালে
তো রাগ নাস্তা করিনি ভেবেছি ক্ষুধা
পেটে থাকি দুপুর হলে নিশ্চয়ই খেতে
ডাকবে।কিন্তু আমার মায়া রাক্ষসী তো
নিজেই পেট ভর্তি করে যাচ্ছে।খিদে পেটে
এতটাই লোভ হচ্ছে যে মন চাইছে ছুটে গিয়ে
সব খাবার খেয়ে ফেলি এমনকি ওর প্লেটের
খাবার গুলোও।কিন্তু না সেটা করা
যাবেনা।আমি তো রাগ করেছি আর এত
সহজে ওর কাছে হারা যাবেনা।যাই হোক
কোন রকমে ওর চোখের আড়ালে দুটো একটা
শুকনো রুটি পেটে চালান করেছি।কিন্তু
সামান্যতে কি আর খিদে মেটে।ছুটির দিন
কোথায় কোথায় একটু পেট পুরে খাব, একটু
ঘুমাব বউকে নিয়ে ঘুরব এসব সবার কপালে
থাকেনা যেমন আমার কপালে নেই।খাবার
গুলোও মিটশেপে যত্ন করে তালাবদ্ধ
অবস্থায় আছে।পেট চো চো অথচ মুখে বুলি
নেই।
.
সারা বিকেল বাসার ভিতর পায়চারি করেই
কেটে গেল।সারাদিনে কম করে হলেও
দশলিটার পানি খেয়েছি কিন্তু ক্ষুধাটাই
গেলনা।আমি যে এদিকে রেগে না খেয়ে
আছি কোথায় একটু সোহাগ করে খাইয়ে
দিবে তা নয় মহারানী নিজের আনন্দে চুলে
খোপা করছে।ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে কাচি
দিয়ে ওর চুল গুলো সব ছেটে ফেলি।কিন্তু
না হাজার হোক বউটা তো আমারই।
বিকেলটা এভাবে কেটে গেল।যদিও আমি
বাইরে গিয়ে খেয়ে আসতে পারি কিন্তু
যাবনা আজ একটু অন্যরকম হোক....
.
সন্ধ্যায় ক্ষুধা পেটে শরৎচন্দ্রের দাঁতভাঙা
উপন্যাস পড়তে পড়তে ক্ষুধাটাও বেড়ে গেল।
এক সময় আমি অবচেতন হয়েছি।এটা কি ঘুম
নাকি শারিরীক ক্লান্তির জন্য সাময়িক
জ্ঞান হারানো কোনটা বুঝতে পারছি না।
.
কিছুসময় পর হয়ত তন্দ্রাছন্ন ভাবে
চোখজোড়া খোলার চেষ্টা করছি।পাশ
থেকে কেউ একজন মায়াবী কন্ঠে কান্না
কান্না স্বরে ডাকছে এই চোখ খোল এই
শুনছ?ঝাপসা চোখটা একটু ঘোলাটে ভাব দুর
হওয়ায় কান্নামুখটা ভেসে উঠল।এটা তো
আমার বউ হ্যা মায়াই তো।ও আমাকে ধরে
কাঁদছে কেন?ভুলে গেছে নাকি আমরা মান
অভিমানে আছি।
মায়া বলতে শুরু করল এখন রাত ১২ টা আর
আমি ঘুমিয়েছি ৮টার সময়।অনেক্ষন ধরে
দেখছে শুয়ে আছি।কিছুসময় পর আমার
পাশে বসে তখনও আমি ঘুমে একটু পরে ডাক
দেয় তখনও ঘুমে তারপর আমার হাত ধরে
ঝাকুনি দেয় তখনও ঘুমে এর পর ভয় পেয়ে
কান্নাকাটি শুরু করেছে।যাই হোক আমি
তো রেগে আছি।বেশই তো লাগছে মায়ার
কান্না মুখটা কতদিন পর দেখলাম।আহা
মনে পড়ে যায় সেই কতদিন আগের কথা যখন
প্রেম করতাম মাঝে মাঝে ওকে কাঁদাতাম
দেখতে তখন এত মায়াবী লাগে বলে
বোঝানো যাবেনা।কিন্তু বিয়ের পর সেই
সৌভাগ্য আর হয়নি আজ হল তাই সুযোগ বুঝে
একটু দেখে নিচ্ছি।হঠাৎ করে মায়া উঠে
গেল....
একটু পর ভাতের প্লেট এনে ভাত মেখে বলল
হা কর।
এ্যা সবকিছু ওর ইচ্ছেমত নাকি?সারাদিন
আমাকে না খাইয়ে রেখে এখন এসেছে দরদ
দেখাতে।কোথায় ছিল এত দরদ সারাদিন।
না খেয়ে একেবারে অজ্ঞান হয়ে গেছি
আমি এত ভালবাসা এত চোখের পানি
কোথায় ছিল তখন।খাব না আমি।
-লক্ষী জামাই আমার হা কর।
-খাব না।
-এত রাগ কেন তোমার?
-আমার কোন রাগ নেই।
-তাহলে সারাদিন খাওনি কেন?
-খিদে ছিল না।
-মিথ্যে কথা।
-চুপপপ।সত্যি কথা
-আচ্ছা এখন তো খাও।
-আমার জামাকাপড় যে ধুয়ে দিতে
পারেনা তার হাতে আমি খাব না।
-দিয়েছি তো ধুয়ে।
-কেন দিয়েছ?
-আমার জামাইয়ের কাপড় আমি ছাড়া কে
ধুয়ে দিবে শুনি?
-হা হা হা মহারানী আমি সব ঠিক করে
ফেলেছি।
-কি ঠিক করেছ?
-আমি কাপড় ধোয়ার জন্য বুয়া
রাখব,রান্নার জন্য বুয়া রাখব।
-কি বললে তুমি?
-কি বলেছি শোন নাই?
-এত্ত সাহস তোমার আমি থাকতে বুয়া।
-তুমি যদি কর তাহলে আর রাখব না যদিও
কিন্তু....
-আবার কিন্তু কি....
-কান ধর...
-কেন আমি মেয়ে মানুষ কান ধরব কেন?
-আমি বলছি তাই ধরবে।
-না ধরলে হয় না।
-নাহ ধরতে হবে।
-পারবনা।যা খুশি কর।(চোখ বাঁকিয়ে বলল)
-কিইই(ভাত মেখে মুখে পুরে দিয়েছে)
আস্তে আস্তে টলে পড়েছে আমার বুকে।
পাগলীটা এখনও কাঁদছে।কত শুদ্ধতম লাগছে
ওর মায়া মাখা মুখটা।ভালবাসি তো ভীষন
ভালবাসি এই মেয়েটাকে।না খেয়ে
থাকাটা সম্পূর্ন আমার ইচ্ছায় আমার আদুরে
বউয়ের ইহাতে কোন হস্তক্ষেপ নেই সত্যি
বলছি।প্রস্তুত হচ্ছি সামনের সপ্তাহে সুদে
আসলে যত জামা কাপড় আছে ধুইয়ে
ছাড়ব।।।।
.
.
লিখা:অন্তহীন শ্রাবন

No comments:

Post a Comment