Sunday, February 19, 2017

একটি পিক এবং ভালবাসি

একটি পিক এবং ভালবাসি
.
.
.
-আমার একটা পিক দাও তো,যেটা তোমার
কাছে সব চেয়ে ভাল লাগে।
.
রিধির ম্যাসেজ টা সিন করে একটু না
অনেক অবাক হলাম।আমার ভাল লাগা
দিয়ে ও কি করবে ,আর ও কি ভাবে জানে
ওর পিক আমার কাছে আছে?
-তোমার কি মনে হয়, তোমার পিক আমার
কাছে আছে?
-হুম,থাকবেনা কেন?দাও জলদি।তোমার
পছন্দেই প্রো পিক দেব এবার,
-হঠাৎ,
-ইচ্ছা হল,দাও।
-আচ্ছা।
.
রিধির কনফিডেন্স দেখে আমি একটু অবাক
হলাম।ওর পিক আমি রাখব কেন?
যদিও ওর প্রায় শখানেক পিক আমার কাছে
আছে।
রিধি আগে ফেসবুকে পিক দিত,কিন্তু এখন
আর দেয়না।আগের সব পিক আমি সেভ করে
নিয়েছিলাম, কারণ মাঝে মাঝেই দেখতে
হয়।মাঝে মাঝে ঠিক না প্রায় প্রতিদিনই।
ওকে না দেখলে ঘুম আসেনা।কিন্তু এ পিক
সেভ করে রাখার কথাটা রিধির জানার
কথা নয়।
.
-কই দাও,
.
আমার কাছে থাকা ওর সব চেয়ে সুন্দর
পিকটা ওকে পাঠিয়ে দিলাম।সেন্ড করেই
মনে হল অনেক বড় ভুল করলাম। এ পিক টা
তো রিধি কখনো আপ্লোডই দেয়নি,এটা
আমি চুপ করে তুলেছিলাম,ওর অজ্ঞাতেই।
.
একটু পর রিধির ম্যাসেজ
-এটা কোথায় পেয়েছ,
-চুপ করে তুলেছিলাম,সর্যি
-কবে?
-ক্লাস পার্টিতে
-ভাল হয়েছে।
-ধন্যবাদ।
-টি.এস.সি তে আসো কথা আছে?
-কি কথা?
-আসো আগে,
-আচ্ছা।
.
আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম।রিধি কি খুব
রেগে গেল।রাগ করা স্বাভাবিক ব্যাপার,
চুপ করে কোন মেয়ের ছবি তুললে সে মেয়ে
তো রাগবেই।বাট আমি অন্য ছেলেদের মত
না, আমি তো ওকে ভালবাসি। ভালবাসি
বোঝানোর জন্য ও ফ্রেন্ড হওয়া সত্তেও
ওকে কখনো তুই করে বলিনি।
এ নিয়ে আমাদের বন্ধু মহলে চলে নানান
জল্পনা কল্পনা।
সেসবের আমি ধার ধারিনা।আমি তো ওকে
প্রতিনিয়ত বোঝাই যে আমি ওকে
ভালবাসি।মুখে বলিনা কারণ যদি ও রাগ
করে বন্ধুত্তটা ভেঙে দেয়,তখন তো আর
কথাও বলতে পারব না।
.
তবে আজ কি হবে কে জানে?
ও হয়ত খুব রাগ করেছে।অপমান করতে পারে,
চড় থাপ্পড় ও মারতে পারে।মারুক, মারলে
আর কি করার আছে।
.
টিএসসি তে পৌছে দেখি রিধি আমার জন্য
আগে থেকেই অপেক্ষা করছে।দূর থেকে
দেখে ওর মুডের অবস্থা বোঝা যাচ্ছেনা।
সেটা দেখতে হলে ওর কাছে যেতে হবে।
কিন্তু যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা সেটাই
বুঝতে পারছিনা।
এসব ভাবতে ভাবতেই দেখি রিধি ওর হাত
ইশারা করে আমাকে ডাকছে।আর কিছুই
করার নেই,
আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম রিধির
দিকে, কি আছে কপালে দেখা যাবে?
.
রিধির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ও বলল,
-কেমন আছ?
.
আমি ওর কথা শুনে অবাক হলাম।এত সুন্দর
করে কেন কথা বলছে মেয়েটা।আমি স্বপ্ন
দেখছি না তো। এটা কি ঝড়ের পূর্বাভাষ?
.
-কি হল?কেমন আছ?
-হুম,ভাল।তুমি?
-ভাল,
-তুমি তো ভাল ছবি তোল,
-উম,
-আমার কত গুলা পিক আছে তোমার কাছে?
-ঐ একটাই ছিল,
-সত্যি,
-হুম,
-মোবাইল দেখি,
-নাই ভুলে আনি নাই।
(মোবাইলে অনেক পিক আছে আর বাকী
গুলা পিসিতে।মোবাইল ওর হাতে গেলে সব
শেষ)
.
-ওই তো মোবাইল, পকেটে ভেসে আছে।
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,
-ওহ,আনছি তাহলে।
.
আমি মোবাইল টা বের করে রিধির দিকে
বাড়িয়ে দিলাম।টেনশন নাই, পাসওয়ার্ড
দেয়া আছে। রিধি পাসওয়ার্ড দেয়া দেখে
বলল,
-পাসওয়ার্ড বলবানা?
-মনে নাই,
-আমার কিন্তু মনে আছে?
.
আমি একটু হেসে বললাম ,
-তোমার মনে আছে?
-হুম,
-মাইন্ড হ্যাক করে ফেলছ নাকি?
-হুম,তোমার কি মনে হয়?
-মনে তো হয়। বলো তো দেখি পাসওয়ার্ড
টা কি?
-"রিধি"
.
আমি শুনে একটু অবাক হলাম ও কিভাবে
জানল। অবশ্য জানা ব্যাপার না,ছেলে রা
সচারচর যাকে ভালবাসে তার নামই
মোবাইল অথবা ফেসবুকের পাসওয়ার্ড
হিসেবে ইউজ করে।ও কি বুঝে গেছে আমি
ওকে ভালবাসি।
-তুমি কিভাবে জানলা?
-জানি,
.
পাসওয়ার্ড খুলে রিধি বলল,
-ওয়ালপেপার এ ও আমার ছবি,ইমপ্রেসিভ।
-হুম,,
.
টেনশন ওয়ালপেপার নিয়ে নয়,টেনশন
গ্যালারি নিয়ে।ওখানে এত গুলা রিধির
পিকচার আছে যা হয়ত রিধির নিজের
কাছেও নাই।
গ্যালারি ওপেন করে রিধি অবাক হয়ে ওর
পিক গুলো দেখতে লাগল।সব দেখা শেষে
বলল,
-এত্ত গুলা পিক!
-হুম,
-শুধু হুম?আর কিছু বলবেনা?
-হুম
-বল?
-দেখ রিধি পিক গুলার জন্য আমি সরি।চুপ
করে তোলা আমার উচিত হয়নি,
-এটুকুই,আর কিছুই বলবানা?
- হুম,
-তো বল,
-আমি তোমাকে খুব..........
-ভালবাস?
-হুম,
-কবে থেকে,
-ভার্সিটির প্রথম দিন, যেদিন তুমি আমার
পাশে এসে বসলে।সেদিন এক ফোটা ক্লাস
রুমের বোর্ড এর দিকে তাকাইনি।শুধু
তোমাকেই দেখেছি।
তোমার নীল ওড়না টাও একবার ছুঁয়ে
দিয়েছিলাম।
-আমি কি রং পড়ে এসেছিলাম তোমার
মনে আছে,
-হুম,থাকবেনা কেন?
-তিন বছর আগে কথা ওগুলো
-আমার তো মনে হয় ওটা গতকাল,এত সুন্দর
দিন টাকে পুরানা করতে চাইনা।
.
রিধি কিছু বলল না,শুধু হাসল।আমিও
হাসলাম
তারপর আমার পকেট থেকে একটা কানের
ঝুমকা বের করে ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে
বললাম,
-এটা তোমার,
.
রিধি আমার হাত থেকে ঝুমকা টা নিয়ে
বলল,
-এটা ভার্সিটি র প্রথম দিন হারিয়েছিল,
-হুম,
-তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি
পেয়েছ কিনা?
-না বলেছিলাম,
-কেন?
-তখন তোমার কিছুই ছিলনা আমার কাছে,
.
আমার কথা শুনে রিধি আবার হাসল।হাসি
থামিয়ে বলল,
-এখন কি কি আছে তোমার কাছে?
-বেশি কিছু নেই,তবে তুমি আছ।
-যাও আইস্ক্রিম নিয়াসো,
-এই শীতে,
-হুম।
-জর আসবে,
-গার্লফ্রেন্ডের আব্দার পূরণ করা প্রতিটি
বয়ফ্রেন্ডের দায়িত্ত,যাও।
-জি আচ্ছা, আমার গার্লফ্রেন্ড।
.
রিধি আবার খিল খিল করে হাসল।কত সুন্দর
লাগে ওকে হাসলে।
আমি ব্রেঞ্চি থেকে উঠে পা বাড়িয়েছি
তখনি রিধি ডাকল,
-শোন,
-হুম
-একটা আইস্ক্রিম আনবা,
-কেন?
-দুজনে একটাতেই খাব তাহলে ভালবাসা
বাড়বে, আর জরও কম হবে।
-গুড আইডিয়া।
.
এই ঠান্ডায় আইসক্রীম খেলে জর নিশ্চিত।
তবুও খাব,একসাথে আইসক্রীম খেলে
ভালবাসাও বাড়বে।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন

No comments:

Post a Comment