Thursday, February 23, 2017

গল্প : গল্পের নাম নেই

গল্প : গল্পের নাম নেই

লেখা :উপমা পরি (পরির আম্মু)
.
---হ্যালো, এই শুনছো? বাজার থেকে কি কি
নিয়ে আসবো????
---তুমি এই সময়ে বাজারে কেন????তোমার কি
অফিস শেষ???
---হ্যাঁ শেষ করে বের হয়েছি ভাবলাম শুক্রবার টা
পুরোপুরি তোমাদের সাথে কাটাবো তাই বাজার
করতে আসলাম। এইবার বলো কি কি কিনতে
হবে?????
----আচ্ছা পাঁচ মিনিট পর কল দাও, আমি দেখি কি কি
কিনতে হবে?
---আচ্ছা তারাতারি দেখো আমি ওয়েট করছি।
----পাঁচ মিনিট পরে কল করে, তারাতারি বলো।
----আচ্ছা বলছি তুমি একটু লিখে নাও। তারপর সব কিছু
বলে দিলাম।
---শিশির ছোট্ট করে একটা লিস্ট লিখে নেয়।
.
.
---একটু পরে আবার শিশির কল দিয়ে বলে, এই
শুনছো????
---হ্যাঁ বলো।
---অনেক সুন্দর বাইম মাছ উঠছে। কিনে নিয়ে
আসি???
---এই না, না কিনো না আমি কাটতে পারবেনা। তুমি
তো জানো আমি ভয় পাই।
---না আমি কিনে আনবো তোমাকে শিখিয়ে
দিবো কিভাবে কাটতে হয়, তারপর তুমি কাটবা ।
.
--তোমার যা খুশি নিয়ে আসো, আমি রাখছি।
.
-- আর একটা কথা পরী মামুনীর জন্য কি নিয়ে
আসবো????
----পরীর জন্য কিছু আনতে হবে না।কমলা আর
আঙ্গুর নিয়ে আসো অন্য সব কিছু তো
আছেই।
---আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখন রাখছি।
.
----আমি ফোনটা রাখার পরে হাসি। আমি জানি শিশির
বাইম মাছ নিয়ে আসবে না। শিশির বাইম মাছ খুব
পছন্দ করে কিন্তু আমি কাটতে পারিনা তাই নিয়ে
আসেনা। শিশির আমায় খুব ভালবাসে আমার কোন
কিছুতে কষ্ট হোক সেটা চায়না।কিন্তু আমি
এতোটাই ভয় পাই যে বাইম মাছের দিকে
তাকাতেও ভয় পাই।
.
যখন পরীর দাদুর বাসায় আর নানুর বাসায় যায়, তখন ও
বাইম মাছ কিনে। শিশিরের পছন্দের খাবার খাওয়াতে
পারিনা এজন্য ভাল লাগেনা।এবার আম্মুর কাছ থেকে
আমার শিখতেই হবে মাছ কাটা।
.
---রাত আটটার দিকে শিশির অনেক বাজার নিয়ে বাসায়
আসে। আমি পরীকে মাত্র খাইয়ে দিছি, পরীর
বয়স সাত মাস। আমাদের বিয়ের দুবছর পরে পরী
আমাদের ঘরে আলোকিত করে আসে।
.
---শিশির এসেই পরীকে কোলে নিতে
যাবে!!! আমি পরীকে কোলে না দিয়ে বললাম
আগে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো, তারপর
পরীকে কোলে নাও। শিশির হাসে আচ্ছা ঠিক
আছে।
.
---শিশির প্রতিদিন এই একই কাজ করে, আর আমার
কাছে বকা খায়। বাইরে থেকে এসে কোলে
নিতে যায়। বাইরে থেকে আসলে অনেক রকম
জীবানু সাথে নিয়ে আসে, হাত মুখ না ধোয়া
পর্যন্ত কোলে নিতে দেয়না। শিশির বাসায়
এসেই অলস হয়ে যায়।আমার বলে বলে করাতে
হয়। যখন পরীকে কোলে দেয়না তখুনি
ফ্রেশ হতে যায়।
.
.
----শিশির পরীকে নিয়ে আদর করছে, আমি বাজার
গুলো ঠিক করছি।কিছু সময় পরে পরীকে
কোলে নিয়ে শিশির এসে বলছে কি ব্যপার
তোমার কাজ কতদূর?? আমাদের বাপ বেটির পেট
তো ক্ষুধায় চো চো করছে। এইতো হয়ে
গেছে আর একটু ওয়েট করো।
.
.
----পরীর বাবা খেতে আসো খেতে দিছি
খেয়ে নাও।
---আচ্ছা আসছি। পরী টা ঘুমিয়ে গেছে একটু
এদিকে আসো তো বিছানা ঠিক করে দাও।
.
----ও ঘুমিয়ে গেছে ঠিক আছে আসছি।
---পরীকে শুয়ে দিয়ে দুজন খেতে বসি। একটু
পরে হটাৎ পরী কান্না করে উঠে, আমি হাতে
ভাত নিয়ে রুমে যেয়ে পরীকে নিয়ে আসি।
শিশির খাওয়া শেষ করে এসে বলে, দাও আমার
কাছে পরীকে দাও। তুমি খেয়ে নাও।
.
---পরীর বাবা পরীকে কোলে নিয়ে শুতে
যায়। আমি খেয়ে দেয়ে সব কাজ শেষ করে
রুমে আসি। পরী পরীর বাবার গলা ধরে শুয়ে
আছে।
.
----সকালে উঠে নাস্তা তৈরি করে, শিশিরকে ডাকি।
আজ এতো বেলা হয়েছে তবু পরী ওর বাবার
সাথে ঘুমাচ্ছে। পরী প্রতিদিন ফজর আজানের
সময় উঠে। সেই কখন খেয়েছে তবু উঠছে
না তাই পরীর বাবাকে বললাম ঘুম থেকে উঠাও
খাওয়াতে হবে।
.
---পরীকে খাইয়ে দেই পরীর বাবা ফ্রেশ
হয়ে নাস্তা করতে বসে। পরীকে কোলে
নিয়ে খেতে বসে আমিও পাশে বসি।
.
----পরী ওর বাবার সার্ট ভরে বমি করে দেয়।
পরী মাত্র খেয়েছে হয়তো পেটে চাপ
লাগছে তাই বমি করে দিছে। আমি বলি পরীকে
আমার কাছে দাও তুমি সার্ট চেন্জ করে এসে
খেতে বসো। পরীর বাবা বলে না আমার
কাছেই থাক আমি এমনি খেতে পারবো। আমি
অবাক হয় সাথে খুশিও বাবা মা তো এমনি হয়।
.
পরী পরীর বাবার জীবন, পরীর কোন কিছু
হইলে আমাকে ছেড়ে কথা বলেনা। শিশিরের
একটাই কথা পরীকে কাঁদিয়ে তোমার কোন কাজ
করতে হবে না। তুমি যদি রান্না নাও করতে পারো?
করোনা কিন্তু পরীকে কাঁদাবা না।
.
.
----শুক্রবারে ওর এক বন্ধুর বাসায় আমরা দাওয়াতে
যায়। সেখান থেকে আসতে লেট হয়ে যায়।
রাস্তায় পরীটা ঘুমিয়ে যায়, রাতে কিছু খাওয়া হয়না
দুজন শুয়ে পরি।
.
----ফজরের আজান হইলে পরী ঘুম থেকে
উঠে পরে। আমি পরীকে নিয়ে অনেক সময়
হাটাহাটি করি, বিছানায় থাকতে চায়না।
.
সাতটা বাজলে শিশিরকে ঘুম থেকে ডেকে
তুলে পরীকে কোলে দিয়ে আমি নাস্তা তৈরি
করি। শিশির ঘুম থেকে সকালে উঠতে চায়না, একটু
ঘুমায় অফিসে নাস্তা করে নিবো।
.
কিন্তু আমি না করি, বাইরের খাবার খেতে দেয়না।
সকালে ঘুম থেকে তুলে পরীকে কোলে
দেয়। আমি নাস্তা তৈরি করি।
.
.
---- এভাবেই যাচ্ছে দিন, অফিসে সময় পাইলেই
শিশির কল করে খোঁজ খবর নিবে।
.
----হ্যালো শিশির শুনছো??
----হ্যাঁ বলো।
---জানো আজ প্রথম আমার পরী বাবা বলে
ডাকছে।
--- তাই ???? আচ্ছা পরীর কাছে ফোন দাও আমি
শুনবো, খুব উচ্ছ্বাস শুরে ....
---পরী বাবা বলোতো, এই যে পরী বলো
বলো বাবা বলো .....।পরী বলছে বা -বা-বা
----শিশির শুনেই খুশি, প্রথম যখন পরীর মুখ
দেখে খুশি হয়েছিলো তেমনি আজো খুশি।
শিশিরের এতো দিনে এটাই মনে হয় চাওয়ার
ছিলো।নিজের সন্তান যখন বাবা বলে ডাকে তখন
সব ছেলের অনুভূতিগুলো সীমাহীন বুঝানো
যায়না।
.
---সেদিন তারাতারি অফিস থেকে আসে, পরীর
সাথে সময় কাটায় আর বার বার বাবা বলতে বলে।
পরী একবার করে ভাংগা ভাংগা গলায় ডেকেই মুখ
লুকায় বাবার কোলে। ওর ডাকা শুনে আমরা দুজনই
হাসি, আমাদের হাসা দেখে পরীও হাসে।
পরীকে নিয়ে ভালোই আছি।
.
.
----হটাৎ একদিন আমি দুপুরে রান্না করছি পরীকে
গোসল দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিছি। পরী ঘুম
থেকে উঠলে সাধারণ বসেই কান্না করে।
পরীর কান্নার আওয়াজ শুনে রান্না ঘর থেকে
এসে দেখি পরী মেঝেতে শুয়ে কাঁদছে।
আমি তো অবাক হয়ে গেছি কাছে এসে দেখি
পরীর অনেক টা মাথায় কেটে গেছে রক্ত
বের হচ্ছে। আমি কোলে নিয়ে মাথা ধরে
আছি। পরী ঘুম থেকে উঠে নামতে লাগছে
আর পরে গেছে, নিচে ওর খেলনা ছিলো।
খেলনার উপর পরে মাথায় কেটে গেছে।
.
--পরীর কেটে যাওয়া দেখে তো আমি কান্না
করে উঠি। সমস্ত কষ্ট যেনো আমার কাছে
এসে ভর করছে। কি করবো কিছু ভাবতে পারছি না।
আমার পা টা যেনো থেমে আছে। কি করবো
কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।আমার নিজের নিশ্বাস টা
যেনো আটকে যাচ্ছে।
.
কিভাবে যেনো পরীর মাথায় হাত চেপে ধরে
পাশের ফ্লাটে ভাবির কাছে যেয়ে বলি পরীর
বাবা কে কল দিয়ে এখুনি আসতে বলেন।
.
.
----আমি ভাবির সাথে করে নিচে এক ডাক্তারের
কাছে যেয়ে প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট করি। পরীকে
কোলে নিয়ে কেঁদেই যাচ্ছি, ওই ভাবি আমাকে
বুঝায়। দেখো কিছু হবে না ঠিক আছে তো
একটু কেটে গেছে। এতো টেনশনের কিছু
নাই।
.
আমরা যখন ডাক্তারের কাছে তখুনি পরীর বাবা
আসে, ট্রিটমেন্টে হয়ে গেছে পরীকে
কোলে নিয়ে বাসায় আসে। আমার সাথে কোন
কথা বলেনা।
.
---বাসায় আসার পরে শিশির বলে। পরীর কাটলো
কিভাবে?? খুবই রাগের সুরে।
---আমি যেই না বলছি রান্না রুমে ছিলাম, পরী কান্না
করছে বুঝতে পারিনি এসে দেখি পরী
মেঝেতে।
.
--ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে তোমাকে না
বলছি পরীর কাছে সব সময় থাকবে?? পরীকে
কাঁদিয়ে কিছু করবানা।তোমার একটাই কাজ পরীকে
ভাল ভাবে লালনপালন করা। যেদিন রান্না করতে
পারবে না আমাকে বলবে?? আমি হোটেল
থেকে খাবার এনে দিবো।
.
----আহহ বলে আমি বাম হাত মুখে দিয়ে, বলছি
দেখো পরী আগে উঠে কান্না করে এভাবে
বিছানা ছেড়ে নামে না। আজ কান্না না করেই
নামতে লাগছে মনে হয় আর ......
---চুপ বেশি কথা বলবানা এখান থেকে যাও। পরী
এখন বড় হচ্ছে জানোনা?? ও নিজে নিজে সব
কাজ করতে চাইবে, তাই দেখে দেখে রাখতে
হবে।
.
---দেখো আমি পরীর খাবার গরম করতে গেছি
ওকে খাওয়ানোর জন্য। সরি শিশির কাঁদো কাঁদো
ভাবে।আমি পরীকে কোলে নিতে যাই শিশির
বলে এখন আমার কাছে থাকুক আপনার কাজ থাকলে
করে নেন।
.
----পরী তো ঘুমিয়ে গেছে আমার কাছে দাও,
আর তুমি খেয়ে নাও।
----আমার খিদে নেই, আমি এখন খাব না।
---জানি এখন শিশির আর খাবেনা , পরীর কিছু হইলে
শিশিরের মেজাজ ঠিক থাকে না। উল্টা পাল্টা সব
বলে।
.
---শিশিরের কি একা কষ্ট হচ্ছে??? আমরাও তো
কম কষ্ট হচ্ছে না। এটুকু মেয়ের কত রক্ত
পরছে ব্যথা হবে। ইশস আমার কাটলে তবু হতো
আমার পরীর কেন ব্যথা পেলো? পরীর
কাটাতে আমার মনে বিষন্নতা সৃষ্টি হয়। শিশির আমার
সাথে খারাপ ব্যবহার করলো, কথা বলছে না।আমার
যেনো সময় কাটেনা, কবে পরী ভাল হবে!!!
.
---সন্ধ্যার পরে পরীকে কোলে নিয়ে
আছে শিশির। আমি ওর কোলে থেকে নিয়ে
খাইয়ে দেয়। শিশির ডাক্তারের কাছে কল দিয়ে
সব ঔষুধ খাওয়ানোর কথা জেনে নেয়। আমার
খাওয়ানো শেষ হইলে পরীকে শিশির ওষুধ
খাইয়ে দেয়। আমার সাথে শিশির কথা বলছে না।
.
----পরীকে কোলে নিয়ে টিভি দেখছে,
পরী বাবার কোলের মধ্যে চুপটি করে বুকের
সাথে লেপে রয়েছে। আমি খাবার টেবিলে
দিয়ে শিশিরকে বলি, তোমার খাবার টেবিলে দিছি
খেয়ে নাও।
.
---শিশির আমার কথা শুনেও না শুনার ভান করে
থাকে। এখনো শিশিরের রাগটা কমেনি, কোন মা
কি ইচ্ছে করে সন্তানের ক্ষতি করে??? এটা শিশির
বুঝতে পারছে না কেন???? শিশিরের রাগ কম
কিন্তু পরীর ব্যাপারে কোন কিছু সেক্রিফাইস
করেনা।
.
---পরীর কাটা জায়গায় হটাৎ শিশিরের হাত লেগে
ব্যথা পায়। পরী কান্না করে উঠে আর থামেনা,
পরীর বাবা এতো থামাতে চেষ্টা করে কিছুতেই
থামে না। আমি পরীকে কোলে নিয়ে আদর
করি, একটু চুপ করে। পরীকে খাইয়ে দিয়ে ঘুম
পাড়িয়ে দিতে যেয়ে আমিও ঘুমিয়ে পরি।
.
---রাত এগারোটার দিকে আমার মাথায় কারো হাতের
স্পর্শ পায়। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি পরীর
বাবা, নিমী উঠো চলো খাবে।
.
---আমি কিছু না বলে পরীর দিকে মুখ ঘুরাই।
.
---নিমী সরি, আমার ভুল হয়ে গেছে তোমার
সাথে অনেক দূর ব্যবহার করে ফেলছি। আমাকে
ক্ষমা করে দাও।এখন উঠো খেয়ে নিবে।
.
----আমার খিদে নেই এখন খাবোনা তুমি যাও একটু
অভিমান সুরে ...
---আচ্ছা এতো কথা বলোনা চলো খাবে, বেশি
কথা বললে পরী উঠে যাবে।
---আমি তবু উঠছিনা দেখে আমাকে কোলে
নিয়ে ডায়নিং এ বসায়।
.
শিশির নিজের হাতে খাবার নিয়ে এসে খাইয়ে
দিতে যায়, আমি মুখে খাবার নিচ্ছি না।
---নিমী সরি আমার ভুল হয়ে গেছে, পরে
বুঝতে পারছি এরকম করাটা ঠিক হয়নি। আচ্ছা ঠিক
আছে আর কখনো বকবো না। এবারের মত
ক্ষমা করে দাও।
.
----আমি কাঁদছি, শিশির আমার পরী টা খুব ব্যথা
পেয়েছে। শিশির বাম হাত দিয়ে পানি মুছে দিয়ে
ইশারা করে কাঁদতে নিষেধ করে, কপালে
আলতো করে একটা চুমু দেয়।এবার খাবার মুখে
তুলে দিচ্ছে আমি খাচ্ছি .............
.
(কিছু কিছু বাবারা আছে সন্তানের কিছু হইলে
স্ত্রীর উপর রাগ করে। মা কখনো ইচ্ছে
করে সন্তানকে ব্যথা দেয় নাকি????? সন্তানের
কিছু হইলে বাবার থেকে মা বেশি কষ্ট পায়, এটা
বুঝতে হবে। এই সময় স্ত্রী কে বকাঝকা না
করে।,মেন্টালি সাপোর্ট দেওয়া প্রর্ত্যেক
হাজব্যান্ডের দায়িত্ব)

No comments:

Post a Comment