Monday, February 20, 2017

বোঝাপড়া

বোঝাপড়া
.
অফিসে বসে কাজের চাপে হিমসিম
খাচ্ছি। আজ কাজ বেশি নাকি আমি হতাশ
সেটা বুঝতে পারছিনা।
-রাব্বি, আসব?
দরজায় তাকিয়ে দেখলাম বস দাঁড়িয়ে
আছে। আমি সেদিকে তাকিয়ে বললাম
-হ্যা স্যার, আসুন।
রুমে ঢুকে বস সামনের চেয়ারে বসল।
চেয়ারে বসে বলল
-তুমি কি জান আমি তোমাকে অনেক
বিশ্বাস করি এবং সন্মান করি।
-জ্বি স্যার জানি।
-তোমার কাজের জন্য তুমি আমার কাছে এত
বেশি মুল্য পাও।
-ধন্যবাদ স্যার।
-তোমাকে এখন একটা কাজ করতে হবে।
-কি কাজ?
-তোমাকে আমাদের উত্তরার অফিসে
যেতে হবে। আমি ফোনে সব বলে দিয়েছি।
তুমি গেলেই কাজটা করে চলে আসবে।
.
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে আছি। আমাকে
চুপ থাকতে দেখে বস'ও চুপ করে আছে।
-কি হল!! কোন সমস্যা?
স্যারের কথা শুনে টেবিলের দিকে
তাকিয়ে বললাম
-যেতে তো আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু
কাজের চাপ।
-আরে এ নিয়ে তোমার চিন্তা করার কিছু
নাই। এইসব কাজ আমি অন্য কাউকে দিয়ে
করিয়ে নিচ্ছি।
-ওকে স্যার।
.
-রাব্বি দাঁড়াও।
দরজা খুলে বের হওয়ার আগে স্যার আমাকে
থামিয়ে দিলেন। আমি পিছন ফিরে বললাম
-জ্বি স্যার।
-আমার গাড়িটা নিয়ে যাও। এই নাও চাবি।
চিন্তার কিছু নেই, ধিরে সুস্থে যাও।
-ঠিকাছে স্যার।
.
নিজেই বসের গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
নিজে গাড়ি চালানোর মধ্যে আলাদা
একটা সুখ আছে। কলেজে থাকা অবস্থায়
প্রায়'ই কাকার গাড়ি চালিয়েছি। মাঝে
মাঝে গাড়ি গাড়ি ধুয়ে দিতাম একটু
চালানোর জন্য। কিন্তু এখন তেমন ঝোক না
থাকলেও ভালই লাগে।
.
উত্তরার অফিসে আসলে আমার খুব অসুবিধা
হয়না । এখানের অনেকেই চেনা জানা।
অনেকের সাথেই ভাল সম্পর্ক আছে। তাই
কাজের জন্য এদের সাহায্য ঠিক পাই।
.
-রাব্বি ভাই। কেমন আছেন?
মামুন ভাইয়ের কথায় ডানে তাকালাম।
মামুন ভাই আমাদের আগের অফিসের
সহকারী ছিলেন।
-এইত ভাই, ভাল আছি। বস ফোনে কি
বলেছে?
-আপনার আসার কথা বলেছে।
কথা বলতে বলতে সামনের দিকে এগিয়ে
যাচ্ছি।
.
রুমের ভেতরে এসে মামুম ভাই কাজের কথা
বলে চা আনতে গেল। আমি আমার মত
কাজে মন দিলাম।
.
★★
.
দুপুর হয়ে গেলেও কাজ শেষ হয়নি। বস এত
সমাদরে আমাকে বাশ দিবে সেটা বুঝতে
পারিনি। আগেরবারে ঠিক থাকলেও
এবারের বাশটা বেশি বড়।
.
অনেক্ষন ফোন বাজলেও ধরার সময়
পাচ্ছিনা। কাজের চাপে মাথা গুলিয়ে
গিয়েছে প্রায়। তার উপর আবার ফোন।
উপায় না পেয়ে জেরিনের ফোন রিসিভ
করতেই হল।
-হ্যালো! ফোন ধরতে এতসময় লাগে?
ওপাশ থেকে জেরিনের কথা শুনে রাগ
দেখালাম না। অফিসের রাগ ঘরের বউ এর
উপর দেখিয়ে লাভ কি!!
.
আমি ঠান্ডা গলায় জেরিনকে বললাম
-কাজে ব্যাস্ত আছি।
-আজকে তোমার তারাতারি বাসায় ফেরার
কথা মনে আছে তো?
-হুম। ভুলে যেওনা কিন্তু।
.
জেরিনের ফোন কেটে দিয়ে চুপ করে বসে
থাকলাম। অবিবাহিত বসের আওতায় চাকরি
করা এই এক ঝামেলা। বউ এর জালা বুঝতে
পারেনা। সকালবেলা বলেছিলাম
তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। আর
তিনি সেটা জেনেও এইরকম কাজ ধরিয়ে
দিলেন!!
.
★★
.
কাজ শেষ করে বের হতে প্রায় সন্ধা
সাতটা বেজে গেল। এতক্ষণে মনেহয় একটা
গজবের হাত থেকে মুক্তি পেলাম। আজকের
সারাদিনের কাজ গজবের মত ছিল।
তারপরে আবার জেরিনের ফোন। তাকে শুধু
বলেছি "এইত আরেকটু সময় পরেই আসছি"
.
অফিসে ঢুকে সোজা রুমে এসে বসলাম।
এতক্ষণে যেন একটু সস্তির নিশ্বাস ফেলতে
পারছি। জেরিন ফোনের পর ফোন দিলেও
ফোন রিসিভ করছি না। বাসায় গিয়ে
একবারে কথা বলব ভাবছি।
.
স্যারের ফোন পেয়ে ফোন হাতে নিলাম।
বউয়ের ফোন রিসিভ না করলেও বসের ফোন
রিসিভ করতেই হল। ফোন ধরে বুঝতে
পারলাম, বস কিছুটা খুশি মনে আছে। বস
বলল
-তোমাকে আজকে কাজের অনেক চাপ
পোহাতে হল। কিন্তু কাজটা করার কারনে
অনেক লাভ হয়েছে আমাদের। তোমার জন্য
পুরষ্কার আছে।
-তাই নাকি স্যার!
-তুমি আমার রুমে আস।
.
বসের রুমে ঢুকতেই চেয়ারে বসতে বলল।
আমি চেয়ারে বসে বললাম
-স্যার একটা কথা ছিল।
-বল।
-স্যার এখন আমাকে বাসায় যেতে হবে। আজ
আমার জন্মদিন। জেরিন আমার জন্য বসে
আছে।
-তাই নাকি! শুভ জন্মদিন। এক্ষুনি যাও।
.
অফিস থেকে যেন ছুটে বেড়িয়ে পরলাম।
আজকে কিছু কিনব নাকি ভাবছি। ভাবতে
ভাবতে জেরিনকে ফোন দিলাম। ফোন
দিয়ে একটু হতাশ হয়ে গেলাম। জেরিনের
ফোন বন্ধ। কয়েকবার চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ
পেলাম। কিছু কেনার চিন্তা বাদ দিয়ে
বাসার দিকে রওনা দিলাম।
.
বাসায় এসেও যেন একটু চিন্তা কাজ করছে।
সারা রাস্তা চিন্তা করতে করতে এসেছি।
দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে জেরিনকে পেলাম
না। মেঝের দিকে তাকিয়ে জেরিনের
ভাঙা মোবাইল দেখতে পেলাম। কিন্তু
জেরিন কোথায়!!
.
জেরিনকে খুঁজতে খুঁজতে বেডরুমে পেলাম।
বিছানায় চুপচাপ শুয়ে আছে। এতক্ষণে একটু
চিন্তা কমল। কিন্তু অসুস্থ হল নাকি এই
ভাবনা মনে আছেই।
.
জেরিনের কাছে গিয়ে মাথায় হাত
রাখতেই রেগে উঠল। বউরা রেগে গেলে গরম
তেলের মত হয়ে যায়, আর স্বামিরা হয়ে
যায় বেগুন। তাইত বউ এর গায়ে হাত দিলেই
তেলে বেগুনে জলে ওঠে। আমি আজ তার
স্বিকার।
.
জেরিনের কাছে চুপ করেই বসে আছি। রেগে
সে আমার সাথে কথা বলছে না। আমি
এবারে জেরিনের দিকে তাকিয়ে বললাম
-ফোন ভাঙছ কেন?
-তোমার জন্য।
-আমার জন্য!!
-হুম। ফোন রিসিভ না করে কিছুক্ষণ পরে
বিজি পেলাম। তাই আছাড় দিয়ে ফোন
ভেঙেছি। বাসায় এলে কেন!! তার কাছে
যাও।
জেরিন কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে
ফেলেছে। আমি এবারে হেসে ফেললাম।
মুচকি হেসে বললাম
-আরে পাগলি, তখন বসের সাথে কথা
বলছিলাম। আর বাসায় এসে সারপ্রাইজ দেব
বলেই তো ফোন ধরিনি।
.
জেরিন আমার কথা শুনেও চুপ হয়ে আছে।
এতক্ষণে রাগটা কমলেও পুরোপুরি কমেনি।
তাই সে চুপ করে আছে। আমি বিছানা
ছেড়ে উঠে বললাম
-তুমি থাক, আমি ফ্রেশ হয়ে এসে সব বলছি।
.
ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে হতে ভাবছি,
কিভাবে জেরিনের রাগ পুরোপুরি
ভাঙানো যায়। আমার ব্যাবহারে সে কষ্ট
পেয়েছে। কিন্তু কি করা যায়।
.
-ফ্রেশ হয়েছ তাহলে?
ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আমি অবাক হয়ে
গেলাম। জেরিন হাসিমুখে আমার সাথে
কথা বলছে। কি এমন হল হঠাৎ! কিছু বলার
আগেই জেরিন বলল
-তোমার বস ফোন করেছিল।
-বস! সারাদিন কাজের চাপে ফেলে এখন
আবার কোন চাপ দিল?
-তোমার প্রোমোশন হয়েছে।
-তাই নাকি!!
-হ্যা। আমি অনেক খুশি।
.
আমি চুপ করে জেরিনের দিকে তাকিয়ে
আছি। সারাদিনের রাগ অভিমান ভুলে
গিয়েছে। এই মেয়েটা আমাকে এত বুঝে
কিভাবে!! আমি ভাবছি আর চুপ করে
দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের মাঝে
বোঝাপড়ার ব্যাপার থাকায় কোন ঝমেলা
হয়না।
.
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম
-বউরে, একবার জড়িয়ে ধরবে?
বলতে দেরি হলেও কাজে দেরি হল না। নতুন
কিছু বলার আগেই জেরিন আমার বুকে
ঝাঁপিয়ে পরল।
.
-- Jubaer Hasan Rabby

No comments:

Post a Comment