Thursday, November 10, 2016

=== নিয়তি ===

=== নিয়তি ===
.
.
- দেখুন আমি আপনাকে বিয়ে করতে
পারবো না। (পৌষি)
- আমাকে কি করতে হবে? (আমি)
- কিছু না। শুধু বাসায় বলবেন আমাকে
আপনার পছন্দ না।
- কিন্তু আপনাকে তো আমার পছন্দ
হয়েছে।
- তো কি করবো। যেটা বলবো সেটা
করবেন।
কথা বলছিলাম পৌষির সাথে। ইনি
আমার হবু বউ। চেহারা মার্শাল্লাহ্
অনেক সুন্দর। আমি রাফি। চেহারা
মার্শাল্লাহ্ খুব খারাপ। বর্তমানে
একটা কোম্পানিতে ম্যানাজারের
দায়িত্বে চাকুরী করছি। বিয়েটা
ঠিক করেছে আমার মামা। বেশ
কয়েকদিন হলো পৌষির সাথে
দেখা হয়েছিল। আমি আগে থেকে
কাওকে কল দেই না। লজ্জা লাগে
তাই। হঠাৎ করে দেখি অ্যান-নোন নম্বর
থেকে ফোন আসছে। কল ধরতেই বুঝলাম
পৌষি করেছে।
- হ্যালো। (পৌষি)
- জ্বি বলুন। (আমি)
- আমার সাথে দেখা করতে পারবেন?
- কোথায়?
- আমার কলেজের সামনে চলে আসুন।
- আচ্ছা।
কিছু কাজ ছিল তাই ঘন্টা খানেক পর
বের হলাম। পৌছাতে আরোও ২০
মিনিটের মতো সময় লাগছে। দেখি
মেয়েটা গেটের পাশে গাছের
নিচে দাড়িয়ে আছে।
- এইযে শুনছেন? (আমি)
- এতক্ষন লাগে? (পৌষি)
- আসলে একটু কাজ ছিল। তাই দেরি
হলো।
- ঠিক আছে, ঠিক আছে। একটা রিক্সা
ঠিক করুন।
- কিন্তু কোথায় যাবো?
- রিক্সা ডাকুন আমি বলছি।
তারপর রিক্সা ডাকলাম। একটা বিশাল
বড় ক্যাফেতে নিয়ে গেল। অনেকক্ষন
ধরে বসেছিলাম। তারপর আমিই শুরু
করলাম......
- ক্যাফেটা অনেক সুন্দর। আচ্ছা
এখানে কত ধরনের কফি পাওয়া যায়।
(আমি)
- যে ভাব করছেন যেন আগে কোনদিন
আসেন নি। (পৌষি)
- না। আগে কোনদিন কোন ক্যাফেতে
যাওয়ার ভাগ্য হয় নি। (মাথা নিচু করে)
- কেন?
- মামার কাছে বড় হয়েছি। তাই
বিলাস করার জন্য টাকা চাইতে
পারি নি।
- ওওওও।
- তো কেন ডেকেছিলেন?
- আপনার বাসায় বিয়ে ভাঙ্গার কথা
বলেছিলেন?
- না।
- কেন?
- আপনাকে তো আমার পছন্দ হয়েছে।
তাহলে মিথ্যা কথা বলবো কেন?
- আমি আপনাকে বিয়ে করতে
পারবো না তাই। সো আজকে গিয়ে
বাসায় বলবেন।
- চেষ্টা করবো।
- হু।
- ওও এটা আপনার জন্য। (পৌষির জন্য
একটা শো-পিস কিনেছিলাম)
- কি এটা?
- রাখুন বাসায় গিয়ে দেখবেন।
তারপর বিল দিয়ে বাসায় চলে
আসলাম। রাতে ভাবছিলাম মামাকে
সব কথা বলবো। তবে পৌষির বাবা
মামার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই মামা
পৌষিকে খুব পছন্দ করে। আমি যদি এখন
বিয়ে করতে না চাই তাহলে মামা
কষ্ট পাবে। আবার পৌষি যদি
বিয়াটা ভাঙ্গতে চায় বলি দুই
পরিবারই কষ্ট পাবে। তাই আর কিছু না
ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম কপালে যা
আছে তাই হবে ভেবে। রাত ১২.০০ টা
হঠাৎ করে মোবাইল বেজে ওঠলো
অচেনা নম্বর থেকে ফোন। ভাবলাম
এতো রাতে আবার কে দিবে। রংনম্বর
হবে হয়তো তাই আর ধরিনি। পরে
আরোও দুইবার দেওয়াতে ফোন ধরলাম।
- ঔ ফোন ধরছিলেন না কেন?
(অপরিচিতা)
- জ্বি কে বলছেন? (আমি)
- আমি পৌষি।
- ও সরি। আসলে বুঝতে পারি নি।
- কেন আমার নম্বর আপনার ফোনর সেইভ
নাই?
- আপনিতো সেভ করতে বলেন নি। তাই
করি নি। আচ্ছা প্যাকেটটা খুলছিলেন?
- হুম। তবে ঔসব Never leave me Alone শো-
পিসে লিখে দিলেই আমি আপনার
প্রেমে পরবো না।
- হঠাৎ এতো রাতে কেন ফোন দিলেন?
- যেটা করতে বলেছি সেটা করছেন?
- না।
- পরশু আমাদের বিয়ে সো আজকে,
এখুনি বিয়ে ভাঙ্গবেন।
- পারবো না।
- ঠিক আছে। যেদিন বিয়ে হবে সেই
রাতে আমি পালিয়ে যাবো।
- আপনার যা খুশি করেন।
দেখি লাইন কেটে গিয়েছে। মনে হয়
কেটে দিয়েছে। আজ পরশু শেষ হলো।
মানে বিয়েটা হলো। রাতে বাসর
ঘরে ঢুকতেই দেখি মেয়েটা কাঁদছে।
আমাকে দেখেই বলতে লাগলো।
- দেখুন আমি আপনাকে বিয়ে করতে
চাই নি। (পৌষি)
- সেটা জানি। তবে আমাকে বিয়ে
করবেন না সেটা আপনার বাসাতে
বললেও পারতেন। আমাকে বিয়ে
করতে চাইছিলেন না কেন? (আমি)
- আমি আব্বুর কথা না করতে পারি না
তাই এ বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। আর
আপনার চেহারা আমার পছন্দ না।
শেষবারের মতো বলছি খবরদার আমার
কাছে আসবেন না।
- কাছে আসলে কি হবে? শুধুতো
আপনার দেহটা পাবো। মন পাবো না
তাইতো? আর শুনেন এইসব বাংলা ছবির
ডাইলগ আমার ভালো লাগে না, তাই
দিব না।
-...........
- চিন্তা করবেন না। আমি আপনার
চারপাশ থেকে দশহাত দূরত্ব বজায়
রাখবো।
বারান্দায় চলে আসলাম। মনে
করেছিলাম হয়তো এমনিতে বিয়ে
করতে চাইছিল না। তবে এখন দেখি
আমার চেহারায় তার পছন্দ না।
শেষমেষ সোফাতে এসে শুয়ে পড়লাম।
সকালে দেখি মিলি ডাকছে। মিলি
আমার মামাতো বোন ...
- ভাইয়া ওঠ। ঔ ওঠ।
- পরে ওঠবো। এখন যা।
- ঔ ক্যাইফা ওঠ। নইলে ভাবীরে কমু
আমি তোরে ক্যাইফা বলে ডাকি।
এবার ইজ্জতের ওপর হাত দিছে। পৌষি
শুনে নি তো? না এখনো ঘুমাচ্ছে।
- বোনরে ইজ্জতের ফালুদা বানাইস
না।
- হুম ঠিক আছে। ঠিক আছে।
তারপর পৌষিকে ডেকে তুললাম। কি
কি নিয়ম থাকে তা করা হলো। সেদিন
পৌষির সাথে রাত ছাড়া আর কথা
হলো না। মাসখানেক পার হয়ে গেল।
একদিন রাতে আমি নিজেই বললাম
- ছাদে যাবেন? (আমি)
- কেন? (পৌষি)
- গাছে নতুন ফুল ফুটছে মনে হয়। দেখবেন।
- চলুন।
ছাদে আসলাম।
- আজ আকাশের চাঁদটা অনেক সুন্দর।
(আমি)
- হ্যাঁ। (পৌষি)
- দোলনাতে বসবেন?
- কেন?
- বসেন বলছি।
পকেট থেকে একটা নুপুর বের করলাম।
- এটা আপনার জন্য।
- লাগবে না আমার।
- আমি পড়িয়ে দেই?
- এইসব করে আমার মন পাবেন না।
- সেটা জানি। সেইজন্য বলছিলাম
আমি পড়িয়ে দেই?
-..................
- নুপুরগুলো আপনার পায়ে ভালোই
লাগছে।
- কোথায় থেকে কিনেছেন এইদুটো?
- কিনি নাই তো।
- তাহলে কি চুরি করেছেন?
বলেই জোরে হাসতে লাগলো।
আমারো হাসি পেল।
- এইদুটো আমার মায়ের। শুনেছিলাম
বাবা নাকি মাকে দিয়েছিল।
- আমি দুঃখিত। আসলে বুঝতে পারি
নি।
- ঠিক আছে। ফুলের গাছগুলো আমার
লাগানো। স্কুলজীবন থেকেই
গাছগুলো লাগাতাম। এখন আর তেমন সময়
হয় না যত্ন করার।
- একটা কথা বলি যদি কিছু না মনে
করেন।
- একটা কেন? হাজারটা বলেন কিছু
মনে করবো না।
- আপনি এমন কেন?
- কেমন?
- এইযে এতোবড় চাকুরী করেন তবুও কম
দামের জামা পড়েন। চাল-চলন কেমন
অদ্ভুতের মতো।
দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলাম।
- জন্মের সময় নাকি মা মারা
গিয়েছিল। তাই মাকে দেখি নি।
তারপর বাবা নাকি আর বিয়ে করে
নি। কয়েকমাস পরে সেও মারা যায়।
মানে বাবা, মা কাওকেই দেখি নি।
আমার দাদা বাড়ি কোথায় সেটা
জানি। তবে কোনদিন সেখানে যায়
নি। বাবা মারা যাবার পর নানু
আমাকে এখানে নিয়ে আসে। মামা
সামান্য বেতনের চাকুরী করেন।
মামিও কোনদিন পর মনে করে নি।
নিজের সন্তানের মতো বড় করেছে।
একটা পরিবারের উপর বোঝা হয়ে
ছিলাম। যদিও তারা কোনদিন এটা
মনে করে নি। ধীরে ধীরে বড় হলাম
স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি শেষ করলাম।
জীবন প্রেম ভালোবাসার ভাগ্য হয় নি
এতিম বলে। কোন ভবিষ্যৎ নেই দেখে।
মনে করেছিলাম বিয়ের পরে বউয়ের
সাথেই প্রেম করবো। যাই হোক বাদ
দিন।
- তারপর?
- তারপর আর কি? একটা এতিম
ছেলেকে এরা যা দিয়েছে যা বলে
বোঝানোর মতো না। এরাই আমার
সব। তাইতো অনিচ্ছা সত্বেও আপনাকে
বিয়ে করেছি। তবে আপনাকে প্রথম
দোখাতেই ভালোবেসে ফেলে
ছিলাম। আচ্ছা এইসব বাদ দিন এবার।
চলেন নিচে যায়। আমার আবার ভূতের
ভয় খুব বেশি।
- হা হা হা। চলেন।
.
.
.
এভাবেই চলছিল। মাঝে মাঝে
পৌষির জন্য ছোটখাটো জিনিস
কেনা। কোনদিন তার কাছে স্বামীর
অধিকার পালন করতেও যায় নি। কিন্তু
আর কত দিন এভাবে থাকা যায়। তাই
ঠিক করলাম তাকে মুক্তি দেয়া উচিত।
- ছাঁদে যাবেন? (পৌষি)
- এতো রাতে? (আমি)
- হুম চলেন। আমার কিছু কথা ছিল।
- আমারো কিছু কথা ছিল। চলেন।
তারপর ছাদে চলে আসলাম। আজকে
কেমন যানি লাগছে। চারপাশে সবাই
থেকেও একা লাগছে। পৌষি
দোলনাতেই বসে আছে। আর আমি
রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছি। আজকে
আমাদের ডিভোর্সের বাপ্যারে কথা
বলে কালকেই উকিলের কাছে
যাবো। হয়তো পৌষিও এটা বলার জন্য
ডাকছে। আজকাল পৌষির কথা
বার্তাও অন্য রকম। পৌষির ডাকে
বাস্তবে ফিরলাম।
- কি বলতে চেয়েছিলেন সেটা বলেন
না।
- আগে আপনি বলেন তারপর আমি বলছি।
- আজকের আকাশটা খুব সুন্দর তাই না?
- চাঁদটাও সুন্দর।
- আজকে ছাদে কোন কিছু পরিবর্তন
লক্ষ্য করেছেন?
- হুম। মনে হয় মিলি এইসব গাছপালার যত্ন
করছে।
- মোটেও না। আমি করেছি। আর
ওদিকে কিছু নতুন গাছও লাগিয়েছি।
- খুব সুন্দর হয়েছে। তা কি বলবেন সেটা
বলুন।
- একটা জিনিস চাইবো দিবেন?
- আপনি কি চান সেটা জানি।
কালকে সেটা পেয়ে যাবেন।
(আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস
ফেলে বললাম)
- আমি কি চাই সেটা জানেন? (আনন্দ
দৃষ্টি তার চোঁখে)
- উকিলের সাথে কথা বলে কালকেই
সেটা পেয়ে যাবেন।
- বারে যেটা চাই সেটা দেওয়ার
জন্য উকিলের কাছে যেতে হবে কেন?
- অাইনের বিষয় তাই উকিলের কাছে
যেতে হবে।
- আপনি কি বলতে চাইছেন সেটা
আমি বুঝতে পারছি না।
- আপনিতো আমার কাছে থেকে
ডির্ভোস চান তাই না? তাই উকিলের
কাছে যাবো কাগজপত্র ঠিক করতে।
- কে বলেছে এইসব?
- কেন আপনি ডির্ভোস পেলেতো মুক্ত
হয়ে যাবেন।
- এতে আপনার খারাপ লাগবে না?
- কাওকে হারানোর কষ্ট আমার চেয়ে
ভালো আর কে বা জানে। তবে
আপনার খুশির জন্য সবকিছুই করতে পারি।
এরপর যা হলো সেটা কোনদিন
কল্পনাও করি নি। হ্যাঁ, পৌষি আমাকে
জড়িয়ে ধরেছে। এই প্রথম সে আমার
এতো কাছে শুধু আসে নি আমাকে
প্রথমবারের মতো জড়িয়ে ধরেছে।
- ঔ বদ, স্টুপিড এত্তোসোজা আমাকে
আপনার কাছ থেকে আলাদা।
আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি
সেটা বলার জন্যই ছাদে এনেছি।
অবাক হয়নি সেদিন। খুব খুশি
হয়েছিলাম। আমিও জড়িয়ে
ধরেছিলাম।
- কেও দেখে ফেলবে। (আমি)
- দেখছে তো। ঔই আকাশটা আর
চারদিকের ফুলগুলো। (পৌষি)
- আমি এগুলোর দেখার কথা বলছি না।
- তাহলে?
- ভূতের ভয় লাগে। তিনারা যদি
দেখে ফেলে।
- হি হি হি। কেও দেখবে না। আমি
আছি না।
- এখনো কি আপনি করেই কথা বলবেন?
- না।
- তাহলে?
- তুমিও তো আপনি করে বলছো।
- ও তাই তো।
- ভালেবাসি। খুব ভালোবাসি।
- আমিতো আগে থেকেই
ভালোবাসি. I Love You Powsi.......

No comments:

Post a Comment