Saturday, November 5, 2016

গল্পঃ নাম নাই

গল্পঃ নাম নাই
.
-কপালের টিপটাতে আজ তোমায় দারুন
লাগছে।
কথাটা শুনেই আমার দিকে তাকালো
মেয়েটা, আমি ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেলাম
তার বড় বড় চোখের দৃষ্টিতে। কথাটা বলার
আগে ভেবে দেখিনি মেয়েটা এত কিউট
হবে আর চোখের ব্যাপারটা স্বপ্নেও
ভাবিনি।
মেয়েটা আমাত্র দিকে সেকেন্ড কয়েক
নিস্পলক তাকিয়ে চোখের ভ্রু কুচকে
জিজ্ঞাস করলো, “কে আপনি?”
-হেহে! তুমি আমাকে চিনবে না।
-চিনবোনা তো আপনি আমার টিপ নিয়ে
কথা বলছেন কেন?
-বারে! টিপটাতে সুন্দর লাগছে বলেই তো
বললাম, এটাতে এতো রাগ করার কী আছে?
-এই যে হ্যালো…
-জ্বী হ্যালো বলুন, আমি শুনতে পাচ্ছি,
নেটওয়ার্ক ঝকঝকে ক্লিয়ার…
মেয়েটা আমার কথায় চরম ক্ষেপে গেল। মুখ
দিয়ে ‘ডিসগাস্টিং’ শব্দটা উচ্চারন করলো
খুব প্রেশার দিয়ে। যার জন্য আমি শুনতে
পারলাম অনেকটা ‘ডিচ্চগাস্টিং’ এর মত
করে। স্ত সুন্দর একটা শব্দ রাগ উঠার ফলে
এত প্রেশার দিয়ে বলার কী আছে এটা খুব
জানার ইচ্ছা হল কিন্তু ততক্ষনে মেয়েটি
আমার আশপাশ থেকে উধাও হয়ে গেছে।
.
-আরেহ! তুমি এখানে? সেদিন কথা বলতে
বলতে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে?
মেয়েটা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে
বলল, “এক্সকিউজ মি! হু আর ইউ?’
অবাক আমিও হয়েছি। সেদিনের সেই
মেয়েটাকে এভাবে পেয়ে যাব ভাবিনি।
তাও আবার ফুচকার দোকানে একা একা।
আমিও অবশ্য একা একাই খেতে এসেছি।
-আমাকে চিনতে পারছ না?
-না, আগে কি দেখেছি?
-আচ্ছা চেনা লাগবেনা। আজ টিপ না
পড়াতে অনেক কিউট লাগছে তোমাকে।
-ওহ! মনে পড়েছে আপনি সেদিনের সেই
লোকটা না, যে আমাকে বাস স্টপে টিজ
করছিল?
-আরেহ! টিজ করলাম কখন? আমি তো
কমপ্লিমেন্ট দিয়েছিলাম, টিপটাতে সুন্দর
লাগছে তাই বলে।
-ওহ! আপনার কাজ কি সব মেয়েদের সামনে
গিয়ে তাদের টিপ নিয়ে কমপ্লিমেন্ট
দেওয়া নাকি?
-না না, ছি! আমি অমন ছেলেই না।
-হ্যা, আমার আর বুঝতে বাকি নেই আপনি
কেমন ছেলে। আর বাই দ্য ওয়ে, আপনি
আমাকে তুমি তুমি বলছেন কেন?
অপরিচিতজনকে আপনি বলতে হয় এটা
জানেন না?
-তুমি কি আর আমার অপরিচিত? এই যে
আমরা কথা বলছি, তার মানে আমরা
পরিচিত হয়ে গেছি। তাই নয় কি?
-আচ্ছা আপনার মতলব টা কী বলুন তো?
আপনি কি আমাকে ফলো করছেন নাকি?
-জ্বী হ্যা, ফলো করছি। উপরের নির্দেশ
আছে তোমাকে কড়া নজরদারিতে রাখার
জন্য।
-মানে কী? কে বলেছে? কেন? উপর এ কে
আছে?
মেয়েটার ঘাবড়ে যাওয়া চেহারাটা
অসাধারন। ভয় পেলে মেয়েদের কপাল কুচকে
যেতে দেখেছি, কিন্তু এর ব্যাপারটাই
আলাদা। মুগ্ধতা আরেকবার মন ছুয়ে গেল।
আমি ফুচকার দোকানে বিলটা না মিটিয়ে
দোকানি কে বললাম “ভাই, আমার বিলটা
মেয়েটা দিবে। আসছি”
-এইযে শুনুন, কোথায় যাচ্ছেন?
-আজকার মত তোমার উপর নজরদারি শেষ,
তাই অন্য কাজে যাচ্ছি।
-আপনি কি তামাশা করছেন আমার সাথে?
মশকরা পেয়েছেন নাকি? ভেবেছেন আমি
ভয় পেয়ে যাব?
মেয়েরা খুব অদ্ভুদ। খুব বেশি ভয় পেয়ে
গেলে তারা খুব বেশি মিথ্যা কথা বলা শুরু
করে। মেয়েটাও তাই করছে, সে নাকি ভয়
পায়নি। কিন্তু আমি তার শরীরের
কাপুনিটাও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
-কী হল? কথা বলছেন না কেন? কে আপনি?
-আমার নাম ‘চুয়াং ফ্যু’
-হোয়াট? এই যে শুনুন আপনার সাথে কথা
আছে আমার। চলুন…
-ওকে চল, বাট তার আগে আমার বিলটা
দিয়ে দাও। দেড় প্লেট ফুচকা সাথে দুইটা
এক্সট্রা সিদ্ধ ডিম।
-আমি কেন আপনার বিল দিব? আপনি
খেয়েছেন আপনি দেন।
-আমি বিল দিলে তোমার উপড় আজ
সারারাত নজরদারি করবো কিন্তু, তুমি যখন
ঘুমাবে আমি তোমার বাসার নিচে
দাঁড়িয়ে থাকবো।
মেয়েটি আর কথা না বাড়িয়ে বিলটা
পরিশোধ করলো।
-তোমার ব্যাগে রাখা দশটাকা আর
দুইটাকা নোট টা বের করে ওই টাকাটা
নিয়ে ঐযে দেখতে পাচ্ছ দোকানটা ওখানে
গিয়ে একটা বেনসন লাইট কিনে নিজে মুখে
লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে নিয়ে আসো।
-হাউ ডেয়ার ইউ? আমি কেন…
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি আমার
প্যান্টের পকেটে রাখা মোবাইলটা পকেটে
রেখেই উপর দিয়ে দেখিয়ে বললাম, “এইযে!
কথা কম। যা বলছি তাই কর, নইলে দেখলো।
রিভালবার’।
মেয়েটি প্রায় কাদো কাদো হয়ে গেছে,
চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়া শুরু
করেছে ইতোমধ্যে। এই মেয়েটার বুঝি সব
কিছুই সুন্দর তাই কান্নাটাও সুন্দর। চোখের
পানির ফোটাগুলো হাত বাড়িয়ে ধরতে
পারলে ভাল হতো, কেননা সেই পানির
ফোটাগুলোও সুন্দর হবে আমি জানি।
-কী হল? যাচ্ছ না কেন? কথা কানে যায়না?
মেয়েটি এবার সত্যিই কেদে দিল, কাদলে
সবার ভাংগা গলার আওয়াজ বের হয়,
মেয়েটির মিস্টি গলার আওয়াজ শুনতে
পেলাম,
-আমি এটা পারবোনা, আমি জীবনেও
সিগারেট হাতে নেইনি। আপনি কে? কেন
এমন করছেন আমার সাথে? আমি কী দোষ
করেছি? আপনি কেন আমাকে মারতে
চাইছেন? আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ। আমি
আপনার পায়ে পড়ি, প্লিজ ছেড়ে দিন।
.
মেয়েটি হড়বড় করে এতগুলো কথা বলে গেল।
অন্যান্য সব মেয়েদের সাথে এই একটি মাত্র
মিল খুজে পেলাম আমি। মেয়েরা খুব রেগে
গেলে মানে ঝগড়ার মুডে থাকলে আর
ইমোশনাল হয়ে গেলে রেডিও স্টেশনের মত
কথা বলা শুরু করে। আমি একসাথে এতগুলো
প্রশ্ন শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। কারন সব
গুলিয়ে ফেলেছি।
.
.
আমরা ধানমন্ডি ১৫ নাম্বার এর বিখ্যাত
‘স্টার কাবাব’ রেস্তোরায় বসে আছি।
মেয়েটি আমার সামনে মাথা নিচু করে
বসে আছে। একটু পর পর তার কান্নার
ফুপানির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। আমার
উচিত মেয়েটার দিকে কনসেন্ট্রেট করা আর
তাকে সামলানো। তার কান্নাটা বন্ধ
করানো। কিন্তু আমার কনসেন্ট্রেশন অন্য
দিকে চলে গেছে। আমি ভাবছি এত নাম
থাকতে এই রেস্তোরার নাম ‘স্টার কাবাব’
কেন? গরু, মুরগী, খাসি এসবে কাবান হয়
শুনছি কিন্তু স্টার এর কাবাব হয় কখনো
শুনিনি। আমি মেয়েটার দিকে কনসেন্ট্রেট
করলাম,
-কত টাকা আছে সাথে?
আমার কথা শুনে মেয়েটি যেন চমকে গেল
এমনভাবে আমার দিকে তাকালো। তারপর
হাত দিয়ে নাক মুছে পার্সটা হন্তদন্ত হয়ে
খুজে যা সব টাকা পেল সব আমার দিকে
হাত বাড়িয়ে এগিয়ে দিল। “যা আছে সব
দিলাম, নিন”
-আমি টাকা চাইনি, কত আছে জানতে
চেয়েছিলাম। দামী খাবার খাবো তো
তাই।
-ওহ আচ্ছা। যা খাবেন অর্ডার করুন, আমি
পে করবো।
ওয়েটার সামনে এসে দাড়ালো। বেহায়ার
মত তার হাতগুলো সামনের ‘লজ্জাস্থানে’
ঢেকে রেখে আমাদের দিকে ঝুকে এসে
জিজ্ঞাস করলো, “স্যার কি লাগবে বলুন”?
-যাত্রাবাড়ীতে আমার এক পরিচিত
কবিরাজ আছেন। একশিরার যবতীয় সমস্যা
তিনি চুটকিতেই সারিয়ে তুলতে পারেন,
আপনি কোনদিন এসে উনার যোগাগোগ
নাম্বার আর ঠিকানা দিয়ে যাব। আপনি
ওখানে যেতে পারেন। ১১০% কাজের
গ্যারান্টি। বিফলে দ্বিগুন মুখ্য ফেরত।
.
আমার কথাগুলো শুনে ওয়েটার প্রথমে
আমার দিকে কিছুক্ষন ফ্যালফ্যাল করে
তাকিয়ে রইলো, তার মানে সে আমার
কথার আগামাথা কিছুই বুঝেনি।
-সরি স্যার, আমি আপনার কথা বুঝতে
পারিনি।
-ভাই, লজ্জা পেতে হবেনা। ওরকম সমস্যা
অনেকেরই হয়।
-স্যার আমি আপনার কথা বুঝতে পারিনি
এখনো।
-যাওয়ার সময় বুঝিয়ে দিব। আপনি বরং
একটা ইয়োলো স্টার এর কাবাব দিন আর এই
মেয়েটাকে একটা পিংক স্টার…
-এই পিংক স্টার চলবে তো নাকি?
__মেয়েটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম।
মেয়েটির বিস্ময় অনেকটা কেটে গেছে
সাথে ভয়টাও। সে এখন অন্য এক দৃষ্টিতে
আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন তার
সামনে এক পাগল বসে প্রলাপ বকছে।
ওয়েটার বলল, ‘স্যার আপনি যে খাবারের
কথা বলছেন তা এখানে নাই, আপনি আসলে
কী চাইছেন আমি বুঝতে পারছিনা’
-আরে আজব তো! স্টার কাবাবে ঢুকে স্টার
মানে তারার কাবাব চাইছি। আর আপনি
বলছেন আপনি কিছুই বুঝছেন না?
ওয়েটার কিছু না বলেই চলে গেল। কিছুক্ষন
পর কয়েকজন লোক এসে আমাকে মোটামুটি
চ্যাংদোলা দিয়ে রেস্তোরার বাইরে এনে
আটার বস্তার মত ধপাত করে ফেলে দিল।
চ্যাংদোলা অবস্থায় বেশ আরাম
পাচ্ছিলাম, কিন্তু এভাবে আটার বস্তা
বানাবে জানলে আগেই সতর্ক হতাম। আমার
সাথে সাথে মেয়েটিও বের হয়ে এল।
আমাদের আর কিছু খাওয়া হলোনা।
.
আমরা ধানমন্ডি লেইক এ বসেছি।
মেয়েটির আবার সেই একই প্রশ্ন, ‘কে আপনি’
-আমি চুয়াং ফ্যু
-আচ্ছা, তা কে পাঠিয়েছে আপনাকে?
-সিয়াম, তোমার বয়ফ্রেন্ড।
-কিইইই!!! সিয়াম? সিয়াম কেন পাঠাবে?
-হ্যা, কারন সে চায় তোমাকে ভয় দেখাতে।
তুমি নাকি কিছুতেই ভয় পাওনা, চ্যালেঞ্জ
করেছিলে ।
মেয়েটির মুখে হাসি ফুঠে উঠলো, কিন্তু মুখ
দিয়ে ফুটে উঠলো অন্য কথা “সিয়ামের
বাচ্চা তোরে আমি খাইসি’ শালার বাচ্চা
তুই আমার লগে এই গেইম খেললি?”
-এইযে ম্যাডাম, সিয়ামের বাচ্চা হয়নি তো
এখনো। আনম্যারিড পাব্লিক বুঝেনই তো।
তাছাড়া তুমি তো তাকে শুধু তোমার হাত
ছাড়া আর কিছুই ধরতে দাওনা, কেম্নে কী?
-হোয়াট! ও এসব কথা আপনাকে বলেছে? হাউ
ডিসগাস্টিং… প্রাইভেট কথা অন্য কাউকে
বলে বেড়ানো, ছি!!
.
আমি আমার নাকের নিচের নকল মোচগুলা
আর মাথার পরচুলা খুলে ফেললাম হঠাত
করে। আমার দিকে তাকিয়ে মিথিলা
প্রায় মুর্ছা যায় যায় অবস্থা। তারপর
মুখদিয়ে ইদুর বিড়ালের মত কিছু চিকচুক
আওয়াজ শুনলাম আর আমার ইনোসেন্ট বুকে
ধপাধপ কিছু কিল, ঘুষি অনুভব করলাম।
বাকিটা ইতিহাস…

No comments:

Post a Comment