Monday, November 7, 2016

গল্পঃএক মায়াবী কন্যা

গল্পঃএক মায়াবী কন্যা
.
- স্যার উঠেন সকাল হয়েছে।
- আরেহ কি স্যার স্যার লাগায়ে
রাখছো কানের ভিতরে?এখনো আমি
তোমার স্যার নাকি?
- তো কি?
- হাব্বি
- তাই?
- হুম
এতক্ষণ ঘুম ঘুম চোখে বাবাকে এইসব
উল্টাপাল্টা বলছিল তৌসিফ।নিজেও
জানেনা কাকে কি বলেছে।ঘুম ঘুম
চোখেই বাবার হাতটা ধরে টান
দিয়ে খাটে বসিয়ে তার কোলে
মাথা রাখে।
- তুমি গ্যাবাডিং প্যান্ট পড় কবে
থেকে?
- তোর শনি শুরু যেদিন থেকে। (বাবা
রেগে বলল)
তৌসিফ মাথা ঝাড়া দিয়ে উঠে।
সর্বনাশ! এটাতো বাবা।
- তো এত বলি বিয়ে কর।বাসায় নতুন
একজন যোগ হবে।আমারো বাসায় একা
ভাল লাগেনা।তা নয়। প্রেম করছিস
কিন্তু বিয়ে করছিস নাহ।
- বাবা আসলে এমনি আরকি কিছুনা।
- থাপ্পড় দিবো।কে সে?
বাবার সাথে ছোট থেকেই অনেকটা
ফ্রি।মা ছোটবেলায় মারা গেছে।
বাবাই তৌসিফকে মায়ের আদর
দিয়েছে।টাকা পয়সার দিক দিয়ে
বিরাট ধনী।নিজেদের কোম্পানী
আছে।বর্তমানে তৌসিফ সব দেখাশুনা
করছে।আর তৌসিফের বাবা বাসায়
বসে বই পড়ে সময় কাটায়। মাঝেমধ্যে
বাগান ঘুড়ে দেখে।
- ফ্রেশ হয়ে নেই বাবা।তুমি
খাবারের টেবিলে বসো।আমি
আসছি
- আচ্ছা আয়।
তৌসিফ হাতমুখ ধুয়ে খাবারের
টেবিলে যায়।টুকটাক কথা বলে
প্রতিদিনের মত ব্লেজার, কোট, টাই
এবং সু পড়ে ড্রাইভারকে গাড়ী বের
করতে বলল।অফিসে যাওয়া মাত্রই সব
কর্মচারীরা সালাম জানালো।
নিজের কেবিনে যেয়ে বসা মাত্রই
একটা মেয়ে কড়া নাড়লো।
- ম্যা আই কামিং স্যার?
- ইয়েস। কাম ইন।
- স্যার শুপ্রভাত
- আপনাকেও।
- স্যার কেমন আছেন?
- এইতো ভাল আপনি?
- আমিও।স্যার আজকে বৃষ্টি ম্যাম
আসবেনা সম্ভবত।
- কেনো কেনো?(অবাক হয়ে বলল)
- জানিনা।তবে বলছে তার বাবার
হার্টের চিকিৎসা করা লাগবে।এজন্য
কি যেন কাজ আছে।
- বলেন কি?আচ্ছা আপনি আসুন আমি
বাকিটা দেখছি
- আসি স্যার
বৃষ্টিই সেই মেয়ে যার জন্যে তৌসিফ
দিনের বেলায় তার বাবাকে বউ মনে
করে।মানে বৃষ্টি মনে করে।যেদিন
প্রথম চাকরির জন্যে ইন্টার্ভিউ দিতে
আসছিলো সেদিনি বৃষ্টির প্রতি দুর্বল
হয়ে পড়ে।তাইতো বৃষ্টিকে সবার
আগে সিলেক্ট করে।যদিও বৃষ্টির
ফলাফল সবার থেকে ভালোই ছিল।
তাই সবার আগে এপোয়েনমেন্ট
লেটার আগে বৃষ্টি পায়।বৃষ্টি মেয়ে
হিসেবেও খুব ভালো।দেখতেও
অপরূপা।মাথার চুল কোমড় পর্যন্ত ছড়িয়ে
গেছে।চোখগুলো টানাটানা।মায়া
আছে চোখের চাহনীতে।পরিবারের
আর্থিক স্বচ্ছলতা এখন ভালোনা।আগে
ভাল ছিলো।গতমাসে বড় ভাইয়া
মারা যায় বৃষ্টির যার জন্যে
পরিবারে কালো ছায়া নেমে
আসে।বৃষ্টিকেও চাকুরীর জন্য পথে
নামতে হয়।মেধা ভাল থাকায় বেশি
ঘুরতে হলোনা।যদিও অনেকজায়গায়
টাকার জন্য চাকুরী পায়নি।
তৌসিফের যখন যেটা প্রয়োজন পরবে
সবার আগে বৃষ্টিকে ডাক দিবে।
কেবিনও বৃষ্টির কথামত সাজানো।
সবাই এখন একটা জিনিস ভাল করেই
জানে তৌসিফ সাহেবের কিছু
লাগবে মানেই বৃষ্টিকে সবার আগে
লাগবে।
তৌসিফ ফোন করলো বৃষ্টিকে। বৃষ্টি
ফোন রিসিভ করল।
- তোমার বাবার অবস্থা কেমন?
- এইতো স্যার ভালোই।বাবার অবস্থা
বেশি ভালোনা।৬লাখ টাকা
লাগবে অপারেশনের জন্যে।টেনশন
হচ্ছে।
- টাকা নিয়ে?
- হ্যা।এতগুলো টাকা!ভাইয়াও আজ
নেই।
বৃষ্টি কেঁদে ফেলল।কান্না শুনে মনে
হয় নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির।
তৌসিফের কাছে অনেক খারাপ
লাগলো।মনের মানুষটির কান্না
তীরের চেয়েও বেশি জোরে লাগে
হৃদয়ে।
- টাকা নিয়ে টেনশন করোনা।
তোমার বাবার চিকিৎসার সব
দায়িত্ব কোম্পানির।
- স্যার সত্যি?
- হুম।তুমি অফিসে এসে চেক নিয়ে
যাও।
- স্যার ধন্যবাদ অনেক আপনাকে।কি
বলে যে ধন্যবাদ দিবো।
.
অফিসে এসে টাকা নিয়ে যাওয়ার
সময় বলল,স্যার আপনি মানুষ না
ফেরেশতা।
সাদা সিদে মেয়েটার মুখে প্রশংসা
এই প্রথম নাহ।এর আগেও করেছে।শাড়ী
পড়ে থাকে মেয়েটা সব সময়।কথা
বলার ধরণই আলাদা।প্রতিটা জিনিস
যেভাবে উপস্থাপন করে তার জন্যে
সর্বদাই সবার কাছ থেকে সে প্রশংসা
পায়।সবাইকে যথাযথ সম্মানও করে।
কোন প্রজেক্ট মেয়েটা যখন
প্রেজেন্টেশন করে তখন সবাই শুধু
কাজের জন্যে মেয়েটার দিকে
তাকিয়ে রয়।আর তৌসিফ ভালবাসার
দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে মুগ্ধ হয়ে।
মাঝে মাঝে তৌসিফকে ছোট
খাটো শাসন করে।পরে আবার স্যরি
স্যার বলে লজ্জায় গাল লাল করে
ফেলে।
তৌসিফ এখন অন্যচিন্তা করছে।সে
সোজাসোজি বিয়ের প্রস্তাব দিবে
বৃষ্টিকে।নাহ সম্ভব নাহ।ছোট থেকেই
প্রেম করে বিয়ে করার তীব্র ইচ্ছা
ছিলো মনের ভিতরে।জীবোণোটো
একটা তো একটুর জন্যে ইচ্ছেটাকে
কেন হারাবে?
কিন্তু এই মুহুর্তে কিছু করাও ঠিক
হবেনা।তাই চুপ থাকলো বৃষ্টির বাবার
সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত।
সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বৃষ্টির বাবা
সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলো।এবার বৃষ্টিকে
সে ভালবাসার কথা বলতে উদ্যত হলো।
কিন্তু কিভাবে আর কোথায়?
প্লান করে একটা ক্লায়েন্টের সাথে
মিটিং ফিক্সড করলো।বান্দরবন
নীলাচল।
অফিস থেকে তৌসিফ বৃষ্টি এবং আরও
দুইজনের জন্য টিকেট কাটলো।বৃষ্টি আর
তৌসিফের বাসের সিট পাশাপাশি।
ইচ্ছে করেই প্লেনের টিকেট
কাটেনি।বৃষ্টির সাথে সময় বেশি
কাটাতে পারবে।
সময়মত বাস ছাড়লো।তৌসিফ
জানালার পাশে বসলো।
- স্যার একটা কথা বলবো কিছু মনে না
করলে?
- হুম বলো।
- আমাকে জানালার পাশে দিবেন?
আমার খুব ভাললাগে জানালার
পাশে বসে প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো
দেখতে।
- আচ্ছা আসো।
তৌসিফ ইচ্ছে করেই তুমি বলে
ডাকতো বৃষ্টিকে।জানালার পাশে
বসতে দিল বৃষ্টিকে।কথা বলতে
চাচ্ছিল মন খুলে তৌসিফ।বৃষ্টিকে
দেখলেই মনের ভিতর কথার ঢেউ শুরু হয়।
জানালার পাশে বসাতে বৃষ্টির
মাথার চুলগুলো উড়ে যাচ্ছিলো
তৌসিফের মুখে।তৌসিফ চোখ বুঝে
অনুভব করতে লাগল ছোয়াগুলো।বৃষ্টি
বাহিরের দিকে জানালার লাইনে
মুখে হাত রেখে তাকিয়ে রইলো
অপলক দৃষ্টিতে।হটাৎ একটা বীট পার
হওয়ার সময় বাস ঝাক্কুনি দিতেই বৃষ্টি
নড়েচড়ে উঠে।তৌসিফের দিকে
তাকিয়ে দেখল বৃষ্টির সব চুল
তৌসিফের মুখ ঢেকে রেখেছে।বৃষ্টি
লজ্জা পেয়ে চুলগুলো লুফে নিলো।
খোপা করে বেধে রাখলো।
- সৌন্দর্যকে বেধে রাখছো কেন?
- স্যার এইযে দেখুন আপনার নাকে মুখে
ছড়িয়ে দিয়েছিল।আমি আসলেই
কেয়ারল্যাস।
- সেটা কিছুনা।ছেড়ে দেও
- জ্বি স্যার?
তৌসিফ ভালবাসার রঙ্গিন ঘোরে
হারিয়ে গিয়েছিল।খেয়ালি নেই
সে কাকে কি বলছে।
- না কিছুনা।
- ওহ আচ্ছা।
বৃষ্টি আবার বাহিরের দিকে
তাকালো।বাহ বেশ চমৎকার
আবহাওয়া।মাঠের পর মাঠ। সব যেন
পিছনে রেখে চলে যাচ্ছে।সবচেয়ে
বেশি ভাল লাগতো সবগুলো ধান,
কাশবন যদি হাত দিয়ে ছুয়ে ছুটা
যেতো। হয়তো অনুভব করছিলো এমন
কিছুই।তাইতো বৃষ্টি একটা হাত
বাহিরের দিকে বাড়িয়ে দিলো।
বাহ অনেক ভাল একটা অনুভূতি ফিল
হচ্ছে তৌসিফের।বৃষ্টি প্রকৃতি
দেখছে আর তৌসিফ বৃষ্টিকে।কত
স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে বৃষ্টি।পাগলী
টাইপের একটা মেয়ে।এই ট্যুরের প্লান
না করলে।মেয়েটাকে এত কাছে
থেকে হয়তো পর্যবেক্ষণ করা যেতনা।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হলো।আচমকা
বৃষ্টির আবিভার্ব।তুমুল জোরে বৃষ্টি
নামছে।নয়তো গাড়ীর স্পীডে বেশি
মনে হচ্ছে।বৃষ্টি জানালাটা পুরো
খুলে দিলো।তৌসিফ মুখ ঢেকে
নিলো।পিছন আর সামনের সীটের
পেসেঞ্জাররা জেগে গেল ঘুম
থেকে।বৃষ্টি হাত দুটো প্রাকৃতিক
বৃষ্টির মাঝে মেলে দিলো বৃষ্টি
ধরার জন্যে।তৌসিফের নাকে মুখে
পানির ছিটা আসছে তীব্র গতিতে।
তৌসিফ অপলক দৃষ্টিতে দুই বৃষ্টি
মিলিত হচ্ছে।মেয়েটার মুখে পানির
ফোটা।চোখের কাজলগুলো হালকা
হচ্ছে।বৃষ্টি চোখ বুঝে হাত দুটো
বাহিরের দিকে বের করে রাখলো।
হটাৎ তৌসিফ সামনে দিয়ে একটা
ট্রাক আসতে দেখলো।কিন্তু বৃষ্টির
চোখ বন্ধ।তৌসিফ বৃষ্টির টান দিয়ে
নিজের দিকে নিয়ে আসলো।
বৃষ্টি চোখ খুলে দেখলো মাত্রই
জানালার কোল ঘেষের একটা ট্রাক
গেছে।
- আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড?
- স্যরি স্যার।
- এতদিন জানতাম তুমি শুধু পাগলী এখন
মনে হচ্ছে কেয়ারলেসও অনেক।
- আমি জানি সেটা
তৌসিফ রাগে কথাগুলো বলে। বৃষ্টি
উদাস হয়ে বসে থাকে আর বাহিরের
দিকে তাকিয়ে থাকে।মন খারাপের
ছাপ চোখেমুখে।তৌসিফেরও কিছু
করা ছিলোনা।এমনিতেই আরেকটু
হলেই গাড়ীর সাথে হাত বারি
খেতো।তখন পুরো ট্যুর মেডিকেলে।
একসময় ঘুমিয়ে পড়লো তৌসিফ বৃষ্টি
দুজনেই।মাঝরাতে তৌসিফের ঘুম
ভাঙ্গলো কাধে কিছুর স্পর্শে।বাসের
সবাই ঘুমিয়ে তখন।বৃষ্টি ঘুমোতে
ঘুমোতে তৌসিফের কাধে মাথা
রেখে ফেলে। তৌসিফ এইবার বৃষ্টির
সৌন্দর্যকে আরো বেশি দেখতে
লাগলো।খোপা থেকে কিছু চুল
সামনে এসে পড়ছে।এক পাশ ঢেকে
রাখছে মুখের।তৌসিফ হাত দিয়ে
সড়াতে চাইলো।কি মায়াবী
চেহারা মেয়েটার।সাহস করে
হাতটা দিয়ে চুলগুলো পিছনের দিকে
সরিয়ে দেয়।ঘুম ভেঙ্গে গেল বৃষ্টির।
- স্যার স্যরি। আসলে ঘুমালে আমার হুশ
থাকেনা।
- সমস্যা নাই।বুঝতে পেরেছি।
- স্যার আমার জন্যে আপনার অনেক
সমস্যা হচ্ছে তাইনা?(মুখ কালো)
- আরেহ নাহ।
- জানি স্যার
- কি জানো?
- এইযে আপনার সমস্যা হচ্ছে।
তৌসিফ মনে মনে ভাবতে লাগলো
যদি বুকে চাপানো ব্যাথার কষ্টটা
এতদিনে বুঝতে তাহলে এই সমস্যাগুলো
আমার কাছে যেমন মধুর লাগছে
তোমার কাছেও লাগতো।
বাসা মধ্যরাতে খাবারের জন্য একটা
নরমাল হোটেলের সামনে রাখলো।
বৃষ্টি বাস থেকে নেমে সব কাজ করতে
লাগলো।খাবার দাবারের অর্ডার
থেকে শুরু করে কোথায় কিভাবে
বসবে।পাগলী আসলেই।
এরপর একটা পানির বোতল কিনে ঘুম ঘুম
মুখটাকে ধৌত করলো।তখনও তৌসিফ
তাকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে।
বাহ কি অপরূপ মুখ ধোয়ার সাথে সাথে
যেন সমস্ত ক্লান্তি ঝেরে ফেলছে।
পরেরদিন কাজ শেষে সবাই যে যারমত
ঘুড়তে গেল কিছুক্ষণের জন্য।তৌসিফ
বৃষ্টির রুমে গেল।দরজা খোলাই ছিল
তাই নক করেনি।
সবুজ আর লাল রংয়ের একটা তাতের
নাকি সিল্কের শাড়ী পড়েছিল।
অসম্ভব মানিয়েছিল মেয়েটাকে।
বলার মত নাহ।এর প্রশংসা করলে
দুনিয়ার সৌন্দর্য্যকে ছোট করা হবে।
- কি ব্যাপার?সবাই বাহিরে যাচ্ছে
তুমি যাবেনা?
বৃষ্টি বারান্দায় বসে বাহিরের দৃশ্য
দেখছিলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
- কোথায় যাবো?আমিতো মেয়ে
মানুষ স্যার।সব জায়গায় একা যেতে
পারিনা। আর এটাতো অচেনা
জায়গা।হারিয়ে গেলে তখন আবার
আপনার মাথায় টেনশন হয়ে চেপে বসব।
.
তৌসিফ রেগে গেলো।
- পরেরটা পরে।আর তুমি একা কোথায়?
আমাকে বললেওতো পারতে।চলো
বের হই।
- স্যার সত্যি বের হবেন?
- হুম।
- কোথায় যাবেন?
- পাহাড়ে।নীলাচল।
- ওয়াও। স্যার আমি শুনেছি এটা নাকি
সবচেয়ে উঁচু জায়গা আমাদের দেশের?
- সম্ভবত
- দারুণ হবে।স্যার ওয়েট আমি চোখে
কাজল দিয়ে নেই।
.
চোখে কাজল দিতে লাগলো বৃষ্টি।
শেষে বের হল।
উঠেই চলেছে। পথ শেষ হয়না।গাড়ীও
বেশিদূর যাওয়া যায়না।অন্যরকমের
জীপ টাইপের গাড়ীতে উপরে উঠা
লাগে উঠার সময় ভয়ে কয়েকবার বৃষ্টি
এমনিতেই জড়িয়ে ধরেছিলো
তৌসিফকে।
উপরে উঠে গেল তারা।সামনে
বিশাল আকাশ নিচে গাছপালার
বিশাল সমারোহ।মনে হচ্ছে আকাশে
বসে আছে।বৃষ্টি একটু সামনে এগিয়ে
দুইহাত মেলে দিলো আকাশের দিকে।
তৌসিফ পিছনে দাঁড়িয়ে শুধু
দেখতেছিলো।হটাৎ তৌসিফ জোরে
বলল,
- বৃষ্টি তোমাকে আমি কিছু বলতে
চাই।
বৃষ্টি পিছনে চলে আসলো।
- কি স্যার?
তৌসিফ বাকরুদ্ধ প্রায়।তবুও বলে ফেলল,
- আসলে আমি তোমাকে পছন্দ করি।খুব
ভালবেসে ফেলেছি তোমায়।
- কি বলেন?
- হ্যা।এটা বলার জন্যেই এই নিবীড়
পরিবেশে আসা আমার।
- কিন্তু আমি প্রেম করতে পারবোনা।
- কেন?
- আপনি আমার পরিবার সম্পর্কেত ভাল
করেই জানেন।এখন আমিই তাদের
ভরসা।আর এরপর আপনার দ্বারা কখনো
ধোকার স্বীকার হলে আমার সুইসাইড
ছাড়া উপায় নেই।
- আমি বিয়ে করতে চাই তোমায়।
- আমার বাবা মা রাজি থাকলে
আমার আপত্তি নাই।
- তাহলে আমি এখান থেকে যেয়েই
বলব।
- যখন বলবেন তখন।এর আগে কিছু নাহ
- আজকের দিনটাইতো।আমার কত শখ
ছিলো প্রেম করব জীবনে।
- বিয়ের পর প্রেম করা যায়না?
- যায়?
- হ্যা যায়।আপনি বুঝবেন নাহ।
সারাদিন অফিস বাসা অফিস বাসা
করতে করতে আপনার মাথা শেষ।
- তো একদিনও কি প্রেম করা যায়না?
- সারাজীবন করবেন একদিন কেন?
কিন্তু বিয়ের পর।
- হুম।আচ্ছা তোমার জন্য একটা জিনিস
এনেছি। নিবে?
- কি?
- এইযে পায়েল।
তৌসিফ ব্লেজারের পকেট থেকে
একজোড়া স্বর্নের পায়েল বের করলো।
- এটা আমি এখন নিতে পারবোনা।
- কেন?
- এমনি।এত দামি গিফট আমার পক্ষে
নেয়া সম্ভব নাহ।বাসা থেকে
উল্টাপাল্টা ভাববে।
বৃষ্টির কথাও ঠিক।তো তৌসিফ
বৃষ্টিকে বলল এই বিশাল খোলা
আকাশের নিচে শুধু একবার পরিয়ে
দিবে।তারপর খুলে ফেলবে।বৃষ্টি
রাজি হয়। তৌসিফ পড়িয়ে দিল।কিন্তু
খুলতে মন চাচ্ছিলোনা তবুও খুলে
ফেলল।
পরেরদিন বাসায় এসে তৌসিফ তার
বাবাকে নিয়ে বৃষ্টিদের বাসায়
বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়।একমাত্র
ছেলের পছন্দ।আর ছেলের পছন্দও খারাপ
হবার নাহ।হ্যা তাই বৃষ্টিকে দেখে
তৌসিফের বাবার পছন্দ হয়।
দিনকাল ঠিক হয় বিয়ের।বিয়ে হয়
ওদের।বাসর রাতে তৌসিফ সেই
পায়েলটা বৃষ্টিকে আবার পরিয়ে
দেয়।আজ খোলার জন্যে নাহ।
আজীবনের জন্য।
পরেরদিন সকালে বৃষ্টি অফিসের জন্য
তৌসিফকে ডাক দেয়।
.
- এইযে স্যার উঠেন।অফিসের টাইম
হয়েছে।
- বাবা যাওতো ঘুমাতে দেও একটু।
সারারাত ঘুমাইনি।(চোখবুঝেই উত্তর
দিল ঘুমের ঘোরে)
- আমি কে তোমার?হুম?
- বাবা।তাছাড়া আবার কে?
- এই তাকাও এইদিকে।
- কি হলো তোমার এমন করছো কেন?
তৌসিফ হাত ধরে ঘুমের ঘোরেই টান
দিল বৃষ্টিকে।বৃষ্টির কোলে মাথা
রেখে ঘুমাতে চেষ্টা করলো।
- বাবা তুমি কি আবার অফিসে জয়েন
করবা?পিচ্ছিল প্যান্ট কেন?
- এইটা প্যান্ট না শাড়ী।
- মানে?
- চোখ খুললেই দেখবা।
তৌসিফ চোখ খুলে দেখলো এইটা
বাবা নয় বৃষ্টি।লজ্জায় মাথা নষ্ট হবার
উপক্রম।এরপর ইচ্ছে করেই জড়িয়ে ধরলো
বৃষ্টিকে বিছানায়।
সকালের নাস্তা করে অফিসের জন্য
বের হলো।আজ যেয়ে ম্যানেজারকে
বলে আসবে আগামী কয়েকদিন
অফিসে যাবেনা সব কাজ গুছিয়ে
রাখতে।
সারাদিন অনেক কাজ করলো।
কয়েকদিন কাজ অগ্রিম সামাল দিয়ে
একটু লেট করেই বাড়ি ফিরলো।বৃষ্টি
হয়তো ঘুমিয়ে পড়ছে।এত রাত।
না বাসায় যাবার পর দেখলো বৃষ্টি
খাবার নিয়ে ডাইনিং এ বসে আছে।
একটু অভিমান।
তৌসিফ এসে জড়িয়ে ধরলো
বৃষ্টিকে।সব অভিমান নিমিষেই শেষ।
মাঝরাতে যখন তৌসিফ এমনিতেই ঘুম
থেকে উঠলো তখন পাশে চেয়ে
দেখলো বৃষ্টি ঘুমিয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।এরপর
এমনিতেই জানালার সামনে গেল।
পর্দাটা টেনে দিতেই জোৎস্নার
আলো বৃষ্টির মুখে যেয়ে পড়ে।
তৌসিফ পর্দা দিয়ে দিলো।আরেকটু
হলেই ঘুম ভেঙ্গে যেতো মেয়েটার।
বাহ কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।
আসলে ঘুমানোর সময় নারীদের
সবচেয়ে সুন্দর লাগে।তৌসিফ চায়
প্রতি মাঝরাতেই যেন তার ঘুম ভাঙ্গে
আর সে এভাবেই বৃষ্টিকে দেখবে।
দেখা যেন শেষই হয়না।

No comments:

Post a Comment