Saturday, November 5, 2016

গল্প: আমার পাগলী

গল্প: আমার পাগলী

-ডাক্তার, প্লিজ সিনথির কিছু হবে না
তো। হাত থেকে প্রচুর রক্ত ঝরছে।
- বেশি কিছু না যাস্ট সেলাই লাগবে। বাট্,
হাতের স্নায়ুগুলো কেটে গেলে অনেক বড়
প্রব্লেম হয়ে যাবে। অনেক চিকিৎসা করতে
হবে। আচ্ছা, আমরা দেখছি।
এভাবে বেড ট্রলিতে সিনথিয়াকে শুইয়ে
দৌড়ের উপর থেকে কথাগুলো বলছিলাম।
নাহ্, ও হাত কাটে নি। ওর এক্সিডেন্ট
হয়েছে। আমার জন্য। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার
বের হয়ে আসলো, বলল, "উনার সাথে
গারডিয়ান কে ? কিছু ইমপর্টেন্ট কথা
আছে।"
- আমিই ওর গার্ডিয়ান। আমাকে বলুন।
- নাহ্, ওর ফ্যামিলি মেম্বারদের জানানো
উচিত। ইটজ এবাউট পেশেন্টস হেলথ।
- ডক্টর, ওর বাবা মা এখানে থাকে না। ও
ঢাকাতে আসছে পড়াশোনার জন্য। তাই,
আমি চাচ্ছি না, ওর বাবা মাকে কিছু
জানাতে। প্লিজ, ওর আর আমার ফ্রেন্ডসরা
মিলে সব হেন্ডেল করে নিবো। প্লিজ
ডক্টর।
- ওকে। লিসেন, পেশেন্টকে দেখে মনে
হচ্ছে, পেশেন্ট খুবই দুর্বল। অত্যাধিক।
খাওয়া দাওয়াও মনে হয় ঠিক মত করে না।
আর, মনে হচ্ছে, মেয়েটি কোন ডিপ্রেশনে
ভুগছে। অনেক বড় কোন টেনশন, যার জন্য
এতটা দুর্বল দেখতে পাচ্ছি। ওর হার্টবিট,
পালস, কোন কিছুই নরমাল না। জানি না
কিসের টেনশন, বাট্, আই থিংক তার অনেক
যত্নের প্রয়োজন। তাই, বাসায় পাঠিয়ে
দিলে ভাল হ। আর, কাচের টুকরো গুলো
যেভাবে তার হাতে গেথে গিয়েছে, মনে
হচ্ছে সেলাই লাগবে কয়েকটা।, এক ব্যাগ
রক্ত লাগবে।, এই ফরমালিটিজ গুলো পূরণ
করে আসুন।
এগুলো বলে ডক্টর চলে গেলেন। আমি ফরম
নিয়ে দাড়িয়ে আছি। কিছু ভাবতে পারছি
না। মেয়েটির এই অবস্থা শুধুমাত্র আমার
জন্য। আমিই দায়ী। কষ্টে বুকটা ফেটে
যাচ্ছে। এই মুহূর্তে আমাকে শক্ত হতে হবে।
সাথে সাথে সবকিছু ম্যানেজ করার জন্য
বন্ধুদের কল দিলাম, কিছু টাকা আর কাথা
বালিশ যা যা লাগবে নিয়ে আসার জন্য।,
সাথে সাথে ওর রুমমেট নিলীমাকেও
জানিয়ে দিলাম বিষয়টা, যাতে ও ঐ
দিকটা ম্যানেজ করতে পারে।
.
ফরমালিটিজ পূরণ করে বসে আছি। আর
মাথায় ওর সাথে আমার খারাপ আচরণগুলো
ঘুরতেছে। আমি এতটা খারাপ কীভাবে হতে
পারি। চোখ ছলছল করছে। চিৎকার করে
কাদঁতে মন চাইছে।
.
৪ থেকে ৫ ঘন্টার আগের কথা :
- কতোদিন পর দেখা করলে আমার সাথে।
- হুম, কি জন্য দেখা করতে বলছো
তাড়াতাড়ি বলো।
- আমার দিকে একটাবার তাকাও।
- কি হইছে টা কি। আমি তোমাকে একটা
কথা ক্লিয়ারলি বলে দিছি না, আমার
পক্ষে রিলেশন কন্টিনিউ করা সম্ভব না।
তারপরও, এত জ্বালাচ্ছো কেন,?
- এভাবে, বলো না, আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে
যাবে তোমাকে না পেলে। আমি মরে
যাবো। পাগলের মত ভালবাসছি আমি
তোমাকে। ( সিনথি অনবরত কেঁদে যাচ্ছে
আমার সামনে।)
- উফ! এই ন্যাকা কান্না থামাও। বিরক্ত
হয়ে গেছি আমি। অসহ্য!
- (একদম হাটু গেড়ে মেয়েটি হাত জোর করে
কাঁদতে কাঁদতে বলল) প্লিজ, আমাকে ছেড়ে
যেও না। আমি কোথায় যাবো।
- দেখো, আমার পক্ষে সম্ভব না রিলেশন
কন্টিনিউ করে চলা। আমি কীভাবে
রাখবো তোমাকে, কোথায় রাখবো। তার
থেকে বরং আমরা আলাদা থাকি। ভাল
হবে।
- (সিনথি আমার দিকে একনজরে ছলছল
চোখে তাকিয়ে আছে)
- আচ্ছা, তুমি বাসায় চলে যাও, আমাকে
যেতে হবে।
আমি চলে যাচ্ছিলাম। একবারো ওর দিকে
ফিরে তাকাই নি। হুম, আমিও ওকে অনেক
ভালবাসি। কিন্তু, দারিদ্রতার সামনে
আমার ভালবাসা অসহায়। এভাবে সম্ভব
না। আর ও কাদঁছে। জানি না কেন ওর
কান্না দেখে আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না।
হয়ত, ওর প্রতি আমার ফিলিংসই উঠে
গেছে।
কিছুক্ষণ পর শুনতে পারলাম, কতগুলো মানুষ
বলতে বলতে দৌড়ে যাচ্ছে একটি মেয়ে
নাকি এক্সিডেন্ট করেছে। বাইক দিয়ে বড়
কাচের গ্লাস নিয়ে যাচ্ছিল দুইজন লোক
আর আনফরচুনেটলি, বাইক স্লিপ খায় আর
তার শিকার হয় একটি মেয়ে।
আমি তা শোনার সাথে সাথে স্পটে দৌড়
দিলাম, গিয়ে দেখি সিনথির হাতের উপরে
একটি বড় কাচের গ্লাসের টুকরো ঢুকে
গেছে। আমি সিনথিকে ডাকছি, সে
ততক্ষণে সেন্সলেস।
.
আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে আর
ভাবছি আজ যদি ওর কিছু হয়ে যেত তখন
সারাজীবন আমি দায়ী থাকতাম। কি হয়ে
গেলে হঠাৎ করে মেয়েটার। হঠাৎ আকাশের
ডাকে ঘোর কাটলো। ওর দিকে মাথা তুলে
তাকালাম। হঠাৎ ওকে দেখতে পেয়ে মনে
হলো যেন কাধের কাছে একটি হাত খুঁজে
পেয়েছি। ওকে দেখেই সাথে সাথে জড়িয়ে
ধরে কাদঁতে শুরু করি।
- হইছে! চুপ হো। ভাই না ভাল, চুপ হো। কি
অবস্থা এখন সিনথির।
- জানি না। কিচ্ছু জানি না।
- এখন কেন কাদঁতেছিস এভাবে। কতোটা
খারাপ আচরণ করছিস মেয়েটার সাথে তুই
জানিস। মেয়েটা মরে গেলেই বা তোর কি
আসে যায় তোর, হা???
- ( আমি চুপ... শুধু অনুভব করতে পারছি, আমার
কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে সিনথির জন্য।
এরকমটা তো আমি চাই নি)
- চুপ কর। (এই বলে ও আমাকে ওর বুক থেকে
আলগা করে সিটে বসায়। আর কাধে হাত
রেখে বলে) মনে হয় না জীবনে কোনদিন
কারো জন্য এভাবে কাদঁছিস তুই। পাগল তুই
মেয়েটার জন্য। কখনও খেয়াল করছিস।
নিজের হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে দেখ, যে
মেয়েটা তোর দেয়া শত কষ্ট সহ্য করার পরও
তোকে ছেড়ে যায় নি, তোর পিছনে পিছনে
ঘুরঘুর করে আসছে শুধু তোর একটু পাত্তা
পাওয়ার আশায়, তোর অবহেলায় যে অন্য
কোন ছেলেকে তার কাছে আসতে দেয় নি -
তুই এরকম একটি মেয়েকে ছাড়তে
যাচ্ছিলি???? হায়রে, এরকম মেয়েকে
কোটিতে একটি হয় রে। কি ভাগ্য তোর!
হাতের লক্ষী পা দিয়ে ঠেলে দিচ্ছিস।
- তো, আমি কি করতাম বল। কি করতাম বল।
কি আছে আমার। কোথায় রাখবো ওকে। কি
খাওয়াবো আমি। সাধারণ একটা চাকরি
করি।
- যে তোর জন্য তোর হাত শক্ত করে ধরে
রাখতে পারে, সে তোর জন্য, সকল কষ্টের
সামনাসামনি ও করতে পারে। আমি এই
মেয়ের ধৈর্য্য দেখেছি। আর, এখনকার যুগে
স্বামী স্ত্রী কি একসাথে জব করতেছে না?
ভালভাবে থাকতেছে না? নিজের
চিন্তাধারা বদলা। কোনদিন যেন এমন না
হয়, ভবিষ্যতে তোর সব থাকবে, কিন্তু,
আগামীকালকের কথা ভেবে তুই যাকে আজ
ছেড়ে দিচ্ছিস, সেই মানুষটিই আর তোর
হবে না।
- তো আমি কি করবো বল।
- যেতে দিস না ওকে। চোখের পানি ছাড়া
কিছুই পাবি না জীবনে। এতদিনের সম্পর্ক,
তুই ভাঙবি, কিন্তু, মারা যাবে মেয়েটা।
পাপ হবে দোস্ত। বিশ্বাস কর, সত্যিই পাপ
হবে। ভবিষ্যতে যাই হোক না কেন,
একসাথেই সমাধান করে নিবি। শিক্ষিত
তোরা দুজন। কত টাকা লাগে জীবনে সুখি
হতে? দুজনে মিলে যদি ইনকাম করিস, হবি
না তোরা সুখি, চলবে না তোদের জীবন,
পারবি না কিছু করতে? বল!
- (আমি তখনও চুপ)
- তোকে বুঝানো আমার পক্ষে আর সম্ভব
না।
.
একটু পর দেখি, ডাক্তার কেবিন থেকে বের
হচ্ছেন।
- জ্বি! তাকে পেইন কিলার দিয়ে দিছি,
আর ঘুমের ইঞ্জেকশনও। বাট্, পেইন
কিলারের কাজ শেষ হয়ে গেলে রোগীর
ব্যথায় জ্বরও আসতে পারে।
- ডাক্তার, আমরা কি ওকে এখানে ৩-৪ দিন
রাখতে পারি। প্লিজ ডক্টর। এতে আমাদের
জন্য অনেক সুবিধা হয়।
- ওকে। আপনাদের ইচ্ছা। আর, হ্যা, রোগীর
ভাগ্য ভাল, উনার হাতের রগগুলো ঠিক
আছে। যদি রগগুলোতে আগাত পেত তবে
রোগীর হাত অবশও হয়ে যেতে পারত।
আমি কোন শব্দ করতে পারি নি। শুধু মনে
মনে দোয়া পড়ে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিতে
থাকি। পাশথেকে আকাশ বলে উঠে,
থ্যাংকইউ ডক্টর। থ্যাংকইউ সো মাচ।
.
ডক্টর চলে যান। আকাশও ঔষুধ কিনতে চলে
যায়। সেই সময় সাথে অন্য বন্ধুরাও আসে।
নীলিমা, রূপা সিনথির ফ্রেন্ড। আমি আর
আমাদের সব বন্ধুরা একসাথে কেবিনে
ঢুকলাম। নিস্তব্ধ একটি শরীর শুয়ে আছে।
ওকে যতই দেখছি ততই খারাপ লাগছে
আমার। গলা ভারী হয়ে আসছে।
.
ওরা দুই ঘন্টা ছিল হসপিটালে। তারপর,
সবাই যে যার মত তাদের বাসা, হোস্টেলে
চলে যায়। আমি ওর পাশে টুল নিয়ে বসে
থাকি। ওর ডান হাতটায় সামান্য সার্জারি
করা হয় কাচের জিনিসের জন্য। আমি ওর
বামপাশে। ওর হাত ধরে বসে আছি।
বারবার ওর নিথর হাতটি দিয়ে আমার
চোখের পানিগুলো মুছতেছি আর বলতেছি,
"আইএম সরি জান। প্লিজ, আমাকে মাফ করে
দাও।"
.
আকাশ চলে যাওয়ার আগে, একটি শপিং
ব্যাগ রেখে যায় যেখানে আমার একটি
গেঞ্জি আর একটি ট্রাওজার ছিল। আমি ওর
হাতটি ওর শরীরের পাশে আলতো করে
রেখে, চেঞ্জ হতে গেলাম। এসে দেখি ও
নাড়াচাড়া করছে। আমি দৌড়ে কাছে এসে
মাথায় হাত রেখে বলি, "কষ্ট হচ্ছে
তোমার? "
ও চোখ খুলে কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায়।
নাড়াচাড়া করতে থাকে অনেক।
- এত নাড়াচাড়া করো না। ব্যথা পাবে।
- আপনি এখানে কি করছেন? আমার মা
বাবা কোথায়? আপনি চলে যান...
- তোমার মা বাবাকে বলি নি তোমার যে
এই অবস্থা।
- কেন বলেন নি। আমার আপনাকে দরকার
নাই।
-তুমি থেকে এখন আপনি হয়ে গেলাম?
- আমি আপনাকে চিনি না। কেন তুমি করে
বলবো?
- প্লিজ, তোমার কষ্ট হচ্ছে। কথা বলো না।
- তাতে আপনার কি। আপনাকে আমার ভাল
লাগছে না দেখতে। চলে যান আপনি।
- হাত পা নাড়াচ্ছো দেখেই এখন ব্যথা
পাচ্ছ। দেখো তোমার চোখ দিয়ে পানি
পড়ছে। চুপ করো, প্লিজ। প্লিজ চুপ করো।
মেয়েটা শান্ত হয় এবার।
- আমার হাতটা খুব ব্যথা করতেছে।
- কি!!!?? ডাক্তার ডাকবো? দাড়াও।
- না (আমার হাতের কণিষ্ঠা আঙ্গুলটা ধরে
ও আমাকে বাধা দেয়।) লাগবে না। হালকা
ব্যথা।
- তুমি কিছু খাবে?
- না।
- কিছু খাও। এখানে নীলিমা খাবার দিয়ে
গেছে।
- না।
- রাত ১ টা বাজে। প্লিজ।
- স্যালাইন দিছে, আমার ক্ষুধা নাই।
- আচ্ছা, তাহলে ঘুমাও।
- আপনি আমার চোখের সামনেই থাইকেন
না। আমি ভাল থাকবো। (এই বলে মাথা
ঘুরিয়ে রাখে সিনথি.)
-কে বলেছে? তুমি না আমাকে ফোন দিয়ে
বলতে, "আমার খুব জ্বর উঠেছে। তুমি আমার
সাথে একটু কথা বলবে। তুমি সাথে থাকলে
আমি অনেক ভাল থাকি।" আমি জানি,
আমি সাথে থাকলে আমার জানটা খুব দ্রুত
সুস্থ হয়ে যাবে।
সিনথি জানালার দিকে মুখ করে কাদঁছে।
পরে আর ও আমার দিকে তাকায় নি। না
তাকিয়ে আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে যায়।
সারারাত ওর পাশে বসে থাকি আমি। ও
ব্যথায় মাঝরাতে হঠাৎ জেগে উঠে। আর
আমি ওর পাশে থেকে ওকে সাপোর্ট দিই।
জানি না কতটা কষ্ট হচ্ছে ওর। শেষ রাতে
জ্বর আসে। আমি ওকে জুস, রুটি খাইয়ে, ঔষুধ
খাইয়ে দিই।
.
সারারাত আমার আর ঘুম হয় না। ও একদম
সকাল ১০ টায় উঠে। উঠতেই যখন আমি ওর
পাশে যাই, হাত ধরে উঠানোর জন্য, ও
আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে : আমি
পারবো যেতে। আপনাকে লাগবে না।
- তুমি এখনও দূর্বল।
- না। আমি ঠিক আছি। লাগবে না।
নাহ্, তারপরও ওকে দূর্বল দেখছি। আমি
সাথে সাথেই ছিলাম। এক নার্স রুমের
মধ্যে আসে রোগীর প্রেসক্রিপশন চেক
করার জন্য। আর সিনথির পালস দেখে বলে,
এখনও অনেক দূর্বল রোগী। আর, এই কেবিনের
টয়লেটের পানির কল নষ্ট। অন্য টয়লেটে
যেতে হবে।
.
- চলো, আমার হাত ধরো। আমি নিয়ে যাই।
- না, প্লিজ, আমি একা যেতে পারবো।
ও আমাকে জোর করেও ধরতে দেয় না। আমি
ধরতে আসলেই ও ভয় পেয়ে দুকদম পিছনে চলে
যায়। আমি আর পরে ওকে জোর করি না।
এতে ওর ব্যথা পাওয়ার সম্ভাবনা হতো।
.
কেবিন থেকে বের হয়ে ও আস্তে আস্তে
হাটছে। আমি ওর পাশে পাশেই থাকি।
মোটামুটি মানুষের কোলাহল অনেক। এরকম
সময় হঠাৎ একটি বেড ট্রলি খুব তাড়াতাড়ির
মাঝে আসছিল, আর বলছিল, সামনের থেকে
সরে দাড়ান। আর্জেন্ট রোগী।
সিনথি এটা দেখতে পেয়ে দুপা পার্শ্বদিক
দিয়ে হেটে আমার বুকের কাছে এসে সম্মুখ
বরাবর হয়ে দাড়ায়। একদম ওর ছিপছিপে
চিকন শরীরটা যেন আমার বাহুডরের
মাঝখানে চলে আসে। শুধু এক ইঞ্চি মনে হয়
ওর বুকের সাথে আমার বুকের দুরুত্বটা হবে।
আমার হার্টবিট বাড়তে থাকে। কতোটা
কাছে ও আমার। ও আশেপাশে মাথা
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভ্রু কুচকে দেখছে আর আমি
ওর দিকে।
ঠিক তখন ও আমার দিকে তাকায়।
- কি?
- (মাথা নেড়ে) কিছু না।
.
ও সরে গিয়ে হাটতেছে। মুখ ধুয়ে আসে,
আমার কোন সাহায্য ছাড়া।
নীলিমা খাবার নিয়ে আসে। ওর সাথে ওর
এক বন্ধুও থাকে, নাম রাতুল। সিনথিরও
ফ্রেন্ড। ওরা বসে গল্প করছে। আর আমি
পাশে দাড়িয়ে আছি। রাতুল আমাকে দেখে
জিজ্ঞাস করল, "ও কে!"
নীলিমা বলার আগেই সিনথি বলে উঠে,
"তেমন কেউ না। আমার কাজিন।"
আমি চুপ করে থাকি।
.
সিনথি: আমার খুবই ক্ষুধা লেগেছে।
ওর কথা শুনে আমি ওর জন্য খাবার রেডি
করতে থাকি।
আমি : আসো, খেতে খেতে কথা বলো।
- না! (আমার হাত থেকে বাম হাত দিয়ে
প্লেটটা নিয়ে সিনথি বললো,) আজ রাতুল
আমাকে খাইয়ে দিবে।
আমি আর কিছু বললাম না।
রাতুল সিনথির হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে
বললো, "আমি কীভাবে?"
- কেন? আমাকে দেখতে আসছিস না? কেন
খাইয়ে দিবি না। বন্ধু লাগিস না তুই
আমার? দে না দোস্ত, প্লিজ।
- আচ্ছা ঠিকাছে।
রাতুল সিনথিকে খাইয়ে দিচ্ছে, আর, আমার
তা দেখে গা টা এত জ্বলছে।
- খুব টেস্টি দোস্ত। তোর হাতের খাবার
এত্ত টেস্টি জানলে তোকে আগে প্রপোজ
করতাম। পরে তুই আমাকে বিয়ের পর
প্রতিদিনই খাইয়ে দিতি।
- তো করতি প্রপোজ। তোর মত সুন্দরী
কাউকে পাওয়া তো, ভাগ্যের ব্যাপার।
নাকি আমাকে করতে হবে?
নীলিমা," তলে তলে এতদূর চিন্তা করে
রাখছিস ওকে নিয়ে তাহলে রাতুল?"
- উমমম! কি টেস্টি তোর হাতের খাবার রে
দোস্ত।
- কি যে বলিস না তুই সিনথি। আমি এর
আগে কখনও কোন মেয়েকে খাইয়ে দিই নি।
তুইই প্রথম।
নীলিমা," কি ব্যাপার? প্রপোজ করবি না
কি আজই, হুম?"
.
আমার বুকের ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে এই দৃশ্য
দেখে। আমি আর সহ্য করতে না পেরে বের
হয়ে যাই। বের হয়ে হাটতে হাটতে হঠাৎ
মনে পড়ে, যদি এই ছেলে ওকে এখন প্রপোজ
করে, তখন!
আবার ব্যাক করে কেবিনে ঢুকে বলি,
সিনথি, তোমার আর খেতে হবে না। উঠো।
- কেন?
- ডাক্তার নিষেধ করেছে এই খাবার খেতে।
নীলিমা ব্যাপারটা বুঝতে পারে, আর বলে,
হ্যা, রাতুল, তুই যা হাত ধুয়ে আয়। যদিও
খাবারটায় মসলা অনেক।
রাতুল ছেলেটা আর কোন কথা বাড়ায় না।
হাত ধুয়ে এসে সিনথির সাথে গল্প করতে
থাকে। এরপরে সবাই দুপুরের দিকে চলে
যায়।
ডাক্তার আসে বিকালের দিকে। ওকে
চেকাপ করে বলে, ভেবেছিলাম ৩ দিন
রাখতে হবে। নাহ্, ওকে কালকেই নিয়ে
যেতে পারবেন।
.
ডাক্তার চলে যাওয়ার পর দেখি সিনথি
মোবাইলে কার সাথে যেন কথা বলছে আর
হাসছে। কথা শুনে বুঝতে পাররাম, ঐ ছেলে
রাতুলই কল দিয়েছে। ও তখন জানালার
সামনে দাড়িয়ে কথা বলছিল। নাহ্, আর
থাকতে পারলাম না। আমি ফোনটা নিয়ে
ফোন কেটে দিই।
- আজব তো। ফোন কেটে দিলেন কেন। দিন।
- তুমি কি বলছিলে?
- কি বলছিলাম?
- আমার হাত থেকে খাবার কেন কেড়ে
নিছিলা তুমি?
- আপনার হাতেরটা কেন খাবো? আপনি
কে? আমার ফোন দিন। ঐ ছেলের হাতের
খাবার অনেক টেস্টি। আমি এই ছেলেকেই
বিয়ে করব। আপনি না বলছিলেন, আমি অন্য
কারো সাথে সম্পর্ক করি আপনার কিছু যায়
আসে না। তো, এখন জ্বলছে কেন। আমার
ফোন দিন।
ওর কোমড়ে হাত দিয়ে আমার কাছে এনে
চাপ দিয়ে ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে
বলি, "শোন মেয়ে, তুমি শুধু আমার। বুঝতে
পেরেছো? আমি তোমাকে অন্য কারো হতে
দিবো না। তুমি শুধু আমার। যাস্ট আমার।
হ্যা, জোর করে হলেও তুমি আমার। I love u."
ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু
হাসছে। ওর চোখে আমি পানি দেখতে
পেলাম। সুখের পানি। দেখে মনে হচ্ছিল
যেন এই শব্দগুলো শোনার জন্য ও কতগুলো
সহস্র রাত জেগে ছিল, কতগুলো সহস্র
চোখের পানি ঝড়িয়েছিল।
ওকে জড়িয়ে ধরি ওর চোখে আমার প্রতি
ভালবাসা দেখে,
"I'm sorry!!! Yes,I love u. I really really really love
u."
ও কাদঁছে, আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।
তারপরও ও কাদঁছে।

No comments:

Post a Comment