Tuesday, November 15, 2016

গল্প : জার্নি বাই বাস

গল্প : জার্নি বাই বাস
.
.
আজ ভার্সিটিতে যেতেই হবে। সবাই কে
ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করছিল না। ক্লাস শুরু
হয়ে গেছে, তাই এবার যেতেই হবে। বাসের
মধ্যে বসে আছি, বাসটা তেমন ভাল ছিলো
না, যাকে বলে লুকাল বাস। পাবনা থেকে
রাজশাহীতে যাচ্ছি। বাস পুরোপুরি সিট
বুক হয়ে গেছে। তবু দাশুরিয়ায় থেকে আরও
কিছু লোক তুললো, এখন যারা উঠেছে??
সবার দাড়িয়ে থাকতে হবে।
.
আমার কাছে এসে একটা মেয়ে
দাড়ালো,আমি একনজরে দেখে নিলাম,
ব্যাগ সাথে ছিলো দুটো, একটা কাধ ব্যাগ
অন্য একটা বড় ব্যাগ, হাতে দুটো বই।
.
--ইক্সকিউজ মি!!!! আমার বই দুটো একটি
ধরবেন?
--- জী, আমাকে বলছেন???
--- হ্যাঁ, আপনাকে বলছি। এটা বলেই আমার
হাতে দুটো বই ধরিয়ে দিলো।
---আপনার যদি কোন প্রবলেম হয়?? আপনি এই
সিটে বসতে পারেন। আমি দাড়িয়ে যেতে
পারবো। (আমি)
-- না, না আমি দাড়িয়ে যেতে পারবো।
আপনার সিটে আপনি বসেন। (মেয়ে )
--আমি অবশ্যই কয়েক বার রিকোয়েস্ট
করলাম বসলো না। খুব জেদি মেয়েটা মনে
মনে ভাবলাম, কষ্ট করবে তবু সিটে বসবে
না। (আমি)
.
আমি বই গুলো দেখতেছিলাম, অনার্স
সেকেন্ড বর্ষ বাংলায় পড়ে মেয়েটার বই
দেখে বুঝলাম। ছোট্ট করে নাম লেখাও
আছে, "তরুলতা"।মেয়েটা দেখতে ভীষণ
মায়াবিনী, খুব ফর্সা না,তবে সুন্দর।
হোয়াইট কালারের ড্রেস আর উপরে কালো
কটি, হোয়াইট কালারের ওরনা সালোয়ার।
মেয়েটাকে দেখতে কেন জানি ভালো
লাগছে বারবার আড় চোখে দেখছি।
মেয়েটা আমার দিক হয়ে দাড়িয়ে, এক পাশ
হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।গাড়ি
চলছে লুকাল গতি তে .......
.
.
--- আমার পাশে থাকা লোকটি কিছু দূর
যেয়ে নেমে যায়।গাড়ির কন্টাক্টর এসে
তরুলতাকে আমার কাছে বসিয়ে দিয়ে যায়।
আমি অবশ্যই উঠে দাড়ায় আর সে জানালার
পাশে বসে। পরে আমি আমার সিটে বসি।
মেয়েটার দেখলাম বারবার ফোন
আসছিলো, রিসিভ না করেই কেটে
দিচ্ছিলো, পরে সুইচ অফ করে দিলো। খুব
গম্ভীর মনে হচ্ছিলো।
.
--- কিছু সময় পরে আমাকে বলছে আপনার
কাছে পানি হবে???? (তরু)
-- হ্যাঁ, এই যে নেন। ( আমি)
-- আচ্ছা ধন্যবাদ। (তরু)
-- একটা কথা বলবো? (আমি)
--- হ্যাঁ, বলুন। ( তরু)
--- আপনি এই লুকাল বাসে কেন উঠলেন????
একটু লেট করলেই তো ভাল বাসে আসতে
পারতেন? (আমি)
---দেখেন লেট করার সময় আমার হাতে
ছিলো না। আমি বাবা মার উপরে রাগ করে
হোস্টেলে চলে যাচ্ছি। আমি যদি বাস
স্ট্যান্ডার্ডে লেট করতাম??? আমার বাবা
ঠিক এসে বুঝিয়ে নিয়ে যেতো। তাই এই
থার্ড ক্লাস বাসে উঠছি।কিছুটা মুখে
বিরক্তি নিয়ে বলছে .. (তরু)
.
---তরুর কথা শুনে কৌতুহল আরও বাড়লো।
বললাম কেন রাগ করে আসছেন????
.
--আমার এলাকার একটা ছেলের সাথে
আমার বিয়ে কথা বলেছে আমার মতামত
ছাড়াই। বিষয় টা জানার পরে রাগারাগি
করি। পরে না বলেই বাসা থেকে বের
হয়েছি। আমি এখন বিয়ে করবোনা, তবু
বিয়ের জন্য গায়ে পরে উঠেছে, বিয়ে তারা
এখুনি দিবে।
.
--- এইবার বিষয় টা বুঝলাম, আমার কথায়
ঠিক মেয়েটা একটু জেদি। আমি বললাম,
মিস তরু এখুনি তো আপনার বিয়ে করার
সুন্দর সময়। বাবা মার কথা শুনলেই তো
পারেন।
.
--আমার দিকে রাগি ভাব নিয়ে তাকিয়ে
বলছে, আমি অনার্স কম্পিলিট করে বিয়ে
করতে চাই।
.
--সেইটা বাবা মাকে বুঝাতে পারতেন??
এভাবে রাগারাগি করে চলে এসে কি লাভ?
(আমি)
.
--আসলে বিষয় টা শুনে খুব রাগ হয়ে
গিয়েছিল তাই বুঝাইনি উল্টা সবাই কে কষ্ট
দিয়ে চলে আসছি। এটা বলেই কাঁদছে ....
.
-- মেয়েদের এইতো স্বভাব একটা কিছু
হইলেই কান্নাকাটি শুরু করবে। আমি এখন
কি বলি???? বললাম দেখেন, না কেঁদে
আপনি বাসায় একটা ফোন করে দেন। সবার
সাথে কথা বলেন ভাল লাগবে। আমার কথা
শুনে তরুলতা ফোন অন করে কল দিলো
বাসায়। সবার সাথে কথা বললো, দেখলাম
সুন্দর করে বুঝাচ্ছে ....আমি অনার্স
কম্পিলিট করে বিয়ে করতে চাই। পরিবার
মনে হয় তাই মেনে নিলো। তরুলতা
হাসতিছে।
.
--- আপনাকে ধন্যবাদ।(তরু)
--- কেন??? (আমি )
-- আপনি ভাল বুদ্ধি দিয়েছেন তাই। আপনি
বাসায় সবার সাথে কথা বলতে বললেন তাই
বললাম। হ্যাঁ এখন খুব ভাল লাগছে।
.
--- আমি শুধু হাসি দিলাম। মনে মনে
ভাবলাম রাগি হলেও একটু বোকা মেয়েটা।
কথা বলে অনেক সুন্দর করে। মাঝে মাঝে
তাকাচ্ছি, যত দেখছি ততই ভাল লাগছে।
.
----আচ্ছা জানলাম না তো!! আপনি কই
থাকেন??? কিসে পড়াশোনা করেন?নাম
কি? (তরু)
.
--- আমার নাম সামির। আমি এবার
ইংলিশে অনার্স করছি, ফাইনাল ইয়ারে
আছি।
.
--- ওওও,খুব ভাল। আমি বাংলায় অনার্স
সেকেন্ড ইয়ারে।
.
---আমি হাসি দিয়ে বললাম, আপনার বই
দেখেই বুঝতে পেরেছি।
.
---এসব কথা বলতে বলতে বাস গন্তব্যে এসে
থামছে, দুজনেই নেমে যায়। দুজন দুজনকে
বাই দিয়ে চলে আসি। রুমে আসার পরে
কয়দিন শুধু মেয়েটার কথায় মনে পড়েছিল।
.
---আমি যদিও ওর ডিপার্টমেন্ট নাম
জানতাম তবু কেন জানি সামনে যেতে
ইচ্ছে করতোনা। তাই তরুলতা নামে
ফেসবুকে সার্চ দিলাম অনেক গুলো আসলো
তার ভিতরে একটা রাজশাহী ভার্সিটি
লেখা। ওটাই চেক করতে যেয়ে দেখি
তরুলতার একটা ছবি আছে। আরও একটা বিষয়
অবাক করা হলো এই মেয়ে আমাকে অনেক
আগেই রিকোয়েস্ট দিয়েছে।অনেক দিন
আগে এক্সেপ্ট করার জন্য মেসেজে অনুরোধ
করেছে।
.
---আজ আমি এক্সেপ্ট করলাম। আমার অবশ্যই
রিয়েল নামে ছিলো না। কোন ছবিও
দেওয়া নাই। সময় পাইলে লেখালেখি করি
এই আরকি।
.
--- আমি যাস্ট একটা স্মাইল মেসেজ
দিলাম।
.
--রাত দশটায় দেখি, রিপ্লাই এতোদিন
পরে?????
.
---জী আজ দেখলাম। তাই
---আচ্ছা ধন্যবাদ।
জানেন??? আমি আপনার গল্পের খুব ভক্ত।
আপনার গল্প পড়তে খুব ভাল লাগে।
.
---আমি আবার স্মাইল ইমো দিলাম।
---আচ্ছা আপনি কি কথা বলতে পারেন
না??? শুধুই ইমো দেন কেন???? (তরু)
--- হুম বলেন। (আমি)
---কি করছেন?????
---লেখালেখি করছি পরে কথা হবে বাই।
(আমি)
--আচ্ছা। (তরু)
.
.
---আমি সেই বাসের ঘটনা টা সুন্দর করে
সাজিয়ে টাইমলাইনে পোস্ট করি। পোস্ট
দিয়েই আমি লগ আউট করি।
----ওইটা পড়ার সাথে সাথে তরু আমাকে
""""মেসেজ করে আপনি সামির???
কি হলো রিপ্লাই করেন না কেন??
আপনি কে বলুন।
কই আপনি বিজি?""""""
.
এরকম অনেক মেসেজ দেয়। আমি দশমিনিট
পরে যখন ফেসবুকে যায় দেখি 32 টা
মেসেজ।
---আমি শুধু যেয়ে হ্যাঁ বললাম, আমি সামির।
.
---তরু খুশি হইলো, এর পর থেকে চ্যাট করতে
করতে আমি আর তরু খুব ভাল বন্ধু হয়ে
গেলাম। ওর সব কিছু সেয়ার করতো, আমিও
করতাম। আমার অবশ্যই প্রথম থেকেই তুরুকে
ভাল লাগতো।
.
তরু একদিন বললো, তুমি আমার
ডিপার্টমেন্টর, সামনে আসো তোমাকে
দেখবো।এই কয়দিনে দুজন দুজনকে তুমি করে
বলি।
.
আমি গেলাম, দুজন ভালোই ঘুরাঘুরি করলাম
অনেক গল্প করলাম। এভাবে এক মাস কেটে
গেলো তুরুকে কিছুই বলতে পারলাম না।
সামনে ঈদের ছুটি বাসায় যাব, আমি আর তরু
এক সাথে যাচ্ছি। রাতে ভাল ঘুম হয়নি, তাই
কিছু দূরে যাওয়ার পরে আমি ঘুমিয়ে যায়,
ঘুম ভাংগার পরে নিজেকে আবিষ্কার
করলাম তরুর কাধেঁ মাথা রেখে ঘুমাচ্ছি।
.
---তরু আমাকে বলছে, তোমার ঘুম হয়ে
গেলো????
---বললাম হ্যাঁ, হটাৎ ঘুমিয়ে গেছি। সরি
---কিসের সরি?
--না কিছু না, এমনি বাদ দাও। বাসায় যেয়ে
কল দিও।আচ্ছা ঠিক আছে দিবো। এখন তো
আমার নামতে হবে। আচ্ছা ঠিক আছে
সাবধানে যেও।
.
---তরু নেমে যাচ্ছে, মনটা কেমন যেনো করে
উঠছে মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে
ফেলছি। বাকি পথ আর একা একা ফুরাচ্ছে
না।
.
---বাসায় পৌঁছার আগেই তরু কল দিয়ে বলে,
আমি বাসায় এসে গেছি। তোমার সাথে
রাতে কথা হবে।
.
আমিও বাসায় আসি, আগের মতোই চ্যাট
করা ফোনে কথা বলা তরুর সাথে হয়।
.
তরু আর আমার ঈদের পরের দিন দেখা করার
কথা, তরু ঈদের পরের দিন পাবনা ওর
খালামনির বাসায় আসবে। তারপর বিকেলে
আমরা ঘুরতে যাব। আমার খুব খুশি খুশি
লাগছে কেন যে ঈদের দিনটা আসছে না!!!!
ভাবছি তুরুকে এইবার মনের কথা টা
জানাবো। এভাবে আর ভালবাসা কে
লুকিয়ে রাখতে পারবোনা। এইবার তুরুকে
বুঝাতে হবে আমি ওকে ভালবেসে
ফেলেছি।
.
কিন্তু তরু কি আমাকে গ্রহণ করে নিবে??
নাকি ফিরায়ে দিবে? আমার কেন জানি
মনে হয় তরু আমাকে ভালবাসে কিন্তু
বুঝাতে দেয়না।
.
নাহ এসব চিন্তা করবোনা, এবার আমাকে
বলতেই হবে।
.
ঈদের আগের দিন হটাৎ তরুর বাবা অসুস্থ হয়,
তরু কল দিয়ে কান্নাকাটি করে। ওর
বাবাকে পাবনা পপুলার ক্লিনিকে ভর্তি
করে। .
.
আমার বাসা যেহেতু অনন্ত বাজারে ছিলো
তাই প্রায় সময় ক্লিনিকে ওদের সময়
দিয়েছি। আম্মুকে বলেছি বন্ধুর বাবা অসুস্থ
পপুলার ক্লিনিকে আছে তুমি রান্না করে
দিবে। আম্মু রান্না করে দিতো আমি নিয়ে
আসতাম।
.
আম্মুকে বললাম, আম্মু একটা মেয়েকে পছন্দ
করি এখনো বলতে পারিনি। আম্মুর সাথে
খুব ফ্রি তাই বলে দিলাম। আম্মু কিছু সময়
আমার দিকে তাকিয়ে আছে, তারপর বললো
কোথায় থাকে? আমাকে আগে দেখাবি।
আমি বললাম আম্মু তুমি চলো ক্লিনিকে ওর
বাবায় অসুস্থ ও এখন ওখানেই আছে।
.
আম্মু বললো ঠিক আছে চল, তরুর আম্মু আন্টি
ছিলো এই দুদিনে সবাই আমাকে আপন করে
নিয়েছে। আম্মুকে নিয়ে আসলাম সবার
সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। আম্মু তুরুকে
দেখে খুব খুশি হলো। এখন তরুর বাবা সুস্থ
আছে চলে যাবে বাসায়।
.
আম্মুকে নিয়ে বাসায় আসলাম, রাস্তায়
আম্মু বললো তরুকে আমার পছন্দ হয়েছে।
আমি ওর পরিবারের সাথে কথা বলবো।
আম্মুর কথা শুনে কিছুটা হালকা হলাম।
.
--ঈদের ছুটির পরে আমি আর তরু এক সাথে
ভার্সিটিতে আসি। আমার ফাইনাল
পরীক্ষা কয়দিন পরে তাই তরুর সাথে
ফোনে কথা হতো, ফেসবুকে আর যাওয়া
হতোনা।
.
পরীক্ষা শেষ হইলে তুরুকে বললাম তরু আমি
বাসায় যাব তুমি কি যাবে????? তরু বললো
দুদিন ওয়েট করো বৃহস্পতিবারের দিন দুজন
এক সাথে যাব।
.
দুদিন পরে তরুর হোস্টেলের সামনে দাড়িয়ে
আছি। ফোন বের করে কল দিলাম, তরু কই
তুমি?? আমি তোমার হোস্টেলের সামনে।
-আচ্ছা তুমি দাড়াও এখুনি আসছি।
-তরু দশমিনিট পরে আসে দুজন রওনা দেয়।
ভার্সিটির গেট থেকে বাসে উঠি। কিন্তু
একটা সিট খালি আছে, আমি তুরুকে বললাম
তুমি বসো আমি দাড়িয়ে যাচ্ছি। তরু বললো
চলো নেমে যায় অন্য বাসে যায়। আমি
বললাম না তুমি বসো, কিছু দূরে গেলে সিট
খালি হবে তো।
.
-নাটোরের এসে সিট খালি হয়, দেন তরু আর
আমি একসঙ্গে বসি। তরু আর আমি একইসঙ্গে
বসলেও মাঝে অনেক টা ফাকাঁ রেখে বসা
হতো। .
-মনে মনে ভাবলাম তরুকে এখন বলি। তরু
বাইরের দৃশ্য দেখছিলো। আমি ডাকলাম
তরু....
-হ্যাঁ বলো কি হয়েছে?
-আমি তরুর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে
পারলাম না। তরু শুনার জন্য অধীর আগ্রহী
তাকিয়ে আছে। আমি বললাম শুধু
তোমায় লাল ড্রেসে সুন্দর লাগছে।
-তরু আমার দিকে রাগের ভাব নিয়ে আবার
বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। তরু হয়তো
এর থেকে বেশি কিছু শুনতে চাচ্ছিলো
কিন্তু আমি না বলাতে মুখ ফিরিয়ে
নিয়েছে।
.
-এভাবে জার্নিটা শেষ হলো, তরু আগেই
নেমে যায়।
-আমি বাসায় গেলে আম্মু বলে তোর জন্য গুড
নিউজ আছে।
--কি আম্মু বলো তারাতারি।
--আম্মু বললো তরুর পরিবারের সাথে কথা
বলেছি তোর বিয়ে ফাইনাল।
-আমি শুনে তো মহাখুশি, আমি বললাম তরু
জানে???
--না জানে না, তবে এখন বাসায় আসছে
জানবে।
-হটাৎ আমার মাথায় দুষ্টামি বুদ্ধি এলো।
আম্মুকে বললাম আম্মু তুমি এখুনি ওর বাসায়
কল করে বলো আমার সাথে বিয়ে হবে এটা
যেনো তরুর কাছে গোপণ রাখে। আম্মু বলতে
চাইনি, আমার রিকোয়েস্ট করাতে ওই
বাসায় বুঝিয়ে বলে।
.
--তুরুকে ওর বাসায় বিয়ের কথা বলে, বিয়ের
কথা শুনে সাথে সাথে তুরু আমাকে কল করে
বলে। সামির বাবা মা আমার বিয়ে ঠিক
করেছে ।
--ও তাই নাকি??? গুড নিউজ তো!!! যাক
অনেক দিন পরে বিয়ের দাওয়াত খেতে
পারবো।
.
--সামির মজা করোনা একদম, তরু মলিন শুরে
বলছে। মজা না সত্যি তোমার বিয়েতে
আসবো খুব মজা করবো।
-সামির আমার বিয়ে, তোমার কি কিছুই
বলার নাই?????
-কি বলার থাকবে??? ও হ্যাঁ, হাজব্যান্ডের
সাথে ভাল ব্যবহার করবে। শশুরবাড়ি যেয়ে
সবার সেবা করবে। হাহাহাহাহা (আমি
জানি তরু আমার মুখ থেকে ভালবাসার কথা
শুনতে চাচ্ছে, কিন্তু আমি তো কিছু
বলবোনা, মনে মনে খুশি হচ্ছিলাম। এখন
আমি শিউর তরু আমাকে ভালবাসে। )
.
.
--সামির তুমি এসব বলতে পারছো? ..ওকে
বাই তুমি আর আমাকে কল দিবানা, এটা
বলে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। সাথে কলটাও
কেটে দেয়। আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ
দেয়না।
.
--এই পাচঁদিন আমার আর তরুর সাথে কথা
হয়নি। আগের দিন আমার বাসায় থেকে ওর
গাঁয়ে হলুদ দিতে যায়, ও নাকি সব সময় মন
ভাড় করে ছিলো। হ্যাঁ যত ছবি দেখলাম সব
মন খারাপ করে আছে সেরকম ছবি।
.
অতপর বিয়ে করতে বর বেসে তরুর বাসায়
যায়।
.
--তরু আর আমার বিয়ে হয়ে যায়, ওর বাসায়
আয়নাতে দুজনের শুভ দৃষ্টি মুখ দেখাবে।
আমি অবশ্যই রাজি ছিলাম না এখন পর্যন্ত
তরু আমার মুখ দেখেনি। ভাবছিলাম বাসর
ঘরে ও সারপ্রাইজ হবে। কিন্তু এখুনি তো
আমাকে দেখে ফেলবে। আমরা দুজন
পাশাপাশি বসে আছি, হ্যাঁ দুজনকে
আয়নাতে মুখ দেখাবে এখুনি।আমি প্রথমে
চোখ বন্ধ করে আছি, পরে চোখ খুলে দেখি
আয়নার মধ্যে তরু অবাক হয়ে তাকিয়ে
আছে। আমি মিষ্টি একটা হাসি দেয়।
আমার হাসি দেখে তরু রাগে বোম হয়ে
যায়। আমি বুঝতে পারলাম আজ আমার খবর
আছে।
.
-বাসার ঘরে যায়, তরু আমাকে বললো তুমি
কেন আমাকে সব কিছু জানালে না???
জানো আমি কত কষ্ট পেয়েছি????
-তরু সরি .....আসলে তোমাকে সারপ্রাইজ
দেওয়ার জন্য সব কিছু গোপণ রেখেছি।
-তরু সেই রাগ নিয়ে বলে ঠিক আছে, আমার
এখন ঘুম পেয়েছে, আমি ঘুমালাম।আজ ছয়দিন
ঠিক মতো ঘুমাইনা তোমার জন্য।
-তরু আজকের দিনে তুমি ঘুমাবে এখন?
---হ্যাঁ, আর এটাই তোমার শাস্তি, ভুলেও
আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না।
-অতপর মহারানী সত্যি ঘুমিয়ে যায়
আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে। তরু ঘুমিয়ে
আছে আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি,
সত্যি অপরূপ লাগছে। ঘুমানোর স্টাইলটা
একদম বাচ্চাদের মত করে ঘুমিয়ে আছে।
.
--আমি আর জাগালামনা, তরুর মুখের দিকে
তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি নিজেই
কখন যেনো ঘুমিয়ে যায়।
.
--সকালে উঠে দেখি তরু নাই,এতো সকালেই
পাগলীটা উঠে গেছে। ফোনটা হাতে নিয়ে
দেখি অনেকবার কল মেসেজ। কাল দুপুর
থেকে ফোনটা হাতেই নেয়নি। মেসেজে
আছে,আজ বারোটা থেকে ভাইবা পরীক্ষা।
আমার কয়েকটা বন্ধুর কল মেসেজ।আমি তো
অবাক, সাথে সাথে সায়েম কে কল দিলাম
ও বললো শালা তুই ফোন ধরিস না কেন???
আজ ভাইবা পরীক্ষা তারাতারি চলে আয়।
.
আমি ফোন রেখে, আম্মুর ঘরে যায় তরু
আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আম্মু আমার
এখুনি রাজশাহীতে যেতে হবে।
--সেকি কথা বাবা???কেন? দুদিন পরে যা।
.
-না মা আজ বারোটায় আমার ভাইবা
পরীক্ষা যেতেই হবে।
.
--তরু বললো আমিও যাব, আমি বললাম না
তোমার আজ যাওয়ার দরকার নাই। তরু বলছে
আমাদের তো ফরম ফিলাপ চলছে, আজ
তোমার সাথে যেয়ে করে আসি।
--আমার পরীক্ষা শেষ করে দুইদিন পরে
যেয়ে তোমার ফিলাপ করে দিবো। তরু
বললো না আজ দুজন গেলে এক সাথে করা
হয়ে যাবে।
.
--আম্মু বললো তরু ঠিকি বলছে, তাহলে
তোরা দুজন আজি যা তবে আজি ফিরতে
হবে, আগামীকাল তোদের বউ ভাত।
.
--তরু তারাতারি রেডি হয়ে নাও, সময় নাই
বেশি। আম্মু বললো তোরা আই তোদের
খেতে দেয়।
.
--খেয়ে দেয় মহারানীকে নিয়ে বের হলাম,
বাসের সিট নিলাম দুজন। বাস চলছে তরুর চুল
গুলো এদিক ওদিক উড়ছে, তুরুকে বললাম তরু
তোমার হাতটা ধরি????
-তরু নিজেই আমার হাতে হাত দিয়ে
বলছে,সামির আমার ফরম ফিলাপ এখুনি না,
কিছু দিন পরে হবে।
.
-আম কিছুটা অবাক হয়ে, বললাম তুমি
তাহলে মিথ্যা বললে কেন?? এভাবে বাসা
থেকে আসা ঠিক হয়নি।আজই তো ফিরে
আসবো, এতো জার্নি তোমার শরীর খারাপ
করতে পারে,,,,,,!
.
---কিছুই হবে না, আমার ইচ্ছে হয়েছি
বলেছি, আমার তোমার সাথে আসতে ইচ্ছে
হয়েছিলো তাই আসছি।ওকে.
.
-আমি রাগ করবো না হাসবো??? বুঝতে
পারছিনা। মেয়েটার মাথায় আসলেই
প্রবলেম আছে ........
.
--তোমার হাত ধরেছি, তোমার সাথে
এসেছি, এজন্য ভেবোনা আমার রাগ
কমেছে? আমার রাগ কিন্তু ঠিকি আছে .....
.
---আমি শুধু হাসি,জানি মেয়েটা আমাকে
খুব ভালবাসে এই ভালবাসার নাম ........!!!!

No comments:

Post a Comment