Tuesday, November 15, 2016

গল্প :ছোট্ট সংসার

গল্প :ছোট্ট সংসার
.
.
অফিসে প্রচুর কাজের চাপ, বস আমাকে
একটা কাজ দিয়েছে আজকেই করে দেখাতে
হবে। কিছুতেই মিলাতে পারছিনা, সময়
শেষ হয়ে যাচ্ছে, কখন যেনো ডাকে
আমাকে, বলতে না বলতেই আমাকে ডাকে।
কি বলবো??? এখনো তো কাজ শেষ করিনি।
রুমে গেলাম যখন কাজ শেষ হয়নি দেখছে??
বস রাগ করে আমাকে। এই নিয়ে তিন দিন
বসের কাছে ঝাড়ি শুনলাম।
.
এদিকে মাসের শেষের দিকে হাতে টাকা
পয়সা নেই। আমার ক্লোজ বন্ধুকে টাকা ধার
দিয়েছি। এই টাকা টা আমার অপারেশনের
জন্য রেখে দিয়েছিলাম। আমার পলিপাস
প্রবলেম বাড়ছে। মাসের শেষে অপারেশন
করার ডেট। আমি যে বন্ধুকে টাকা
দিয়েছি?? এটা তরু জানে না। তরু জানলে
তো রাগারাগি করবে। তরু অপরেশন জন্য
তো চাপ দিবে, কি বলবো তরুকে???
.
অফিসে বসের ঝাড়ি, তারপর সেরকম হাতে
টাকা নাই। কিভাবে কি করবো??? বন্ধুকে
না দিলেও হতোনা, ও জীবনে অনেক উপকার
করেছে আমার। তাই ও চাওয়ার পরে না
করতে পারিনি।
.
এসব চিন্তা করতে করতে বাসায় এসে যাই,
বাসায় এসে দেখলাম তরু পরীকে সবজি
খিচুড়ি খাওয়াচ্ছে, পরীর বয়স দুই বছর।
অনেক দুরন্ত হয়েছে কিন্তু কিছুই খেতে
চায়না।তরুর দিনে বারো ঘন্টার আট ঘন্টায়
পরীকে খাওয়াতে যায়.। অনেক কথা, গল্প
বলে বলে খাওয়াতে হয়। তরুর অনেক ধর্য্য
এতো জ্বালায় তবু কিছুই বলেনা। আমি
শিউর অন্য কোন মা হইলে এতো জ্বালা সহ্য
করতোনা । এতো ধর্য্য সহকারে কেউ
খাওয়াতে পারেনা।
.
পরী আমাকে দেখে কোলে আসে, বাবাই
বাবাই বলে খুশিতে পাপ্পা দেয়। আমি একটু
আদর করে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটব নিয়ে
অফিসের কাজে বসি। আজ রাতে
মিলাতেই হবে। তানা হলে আবার বসের
ঝাড়ি শুনতে হবে। তরু আগে খেয়ে নিতে
বললো। হ্যাঁ খেয়ে দেয়েই বসলাম কাজে।
.
আমি কাজ করছি পরী এখন আমার কোলের
মধ্যে এসে বসে। আমাকে ওকে নিয়ে হাঁটতে
বলছে। তরু এখনো খাওয়াচ্ছেই পরীকে আর
খাবেনা তাই আমার কোলে লুকিয়ে আছে।
আমি বললাম যাও আম্মুর কাছে এখন কাজ
করছি আমি। পরী যাবে না বলছে, আর হাত
দিয়ে ল্যাপটব বন্ধ করে দিচ্ছে। একটা
জোরে ধমক লাগিয়ে দেই,আর একটা জোরে
পিঠে মার লাগিয়ে দেই।দিন দিন দুষ্টু হয়ে
যাচ্ছো বেশি, কথা শুনোনা !!!
.
পরীর একটা অভ্যাস আছে, ওর মা হাজার
বকলে, মার দিলে? ধমক দিলে? শুধু কাঁদবে
আর কিছুই না। কিন্তু আমি পরীর গায়ে
হালকা জোরে মার দিলেই বমি টমি করে
অস্হির হয়ে যায়। যার জন্য তরু আমাকে
কখনো পরীর গায়ে হাত দিতে দেয়না।
.
তরুর কথা যা শাসন করার আমি করবো তুমি
করবানা।পরীর মা এর কথা আমার মেয়েকে
শুধু আমি মারবো , তুমি মারলে কষ্ট লাগে।
.
পরী কাঁদছে, তরু এসেই আমাকে ঝারি
দেওয়া শুরু করছে। সারাদিন বাড়ি থাকো
না। আবার এখন একটু রাখতেই অস্হির হয়ে
গেছো??? দেখো সারাদিন আমারকে কত
জ্বালায় তবু পিটা দেয়না। এইটুকু জ্বালাতে
তুমি মারলে?
.
পরী জোরে জোরে কান্না করছে।
.
আমার আর এসব কথা সহ্য হচ্ছে না। আমার
একটাই চিন্তা কাল অফিসে কাজ কম্পিলিট
করে বসকে দেখাতে হবে। আর আজকেই
আমার কাজ শেষ করতে হবে।আমি ল্যাপটব
নিয়ে ছাদে চলে যাই।
.
মন দিয়ে কাজ করতেছি। ছাদে কাজ শেষ
করতে করতে বারোটা বেজে যায়, পাশের
বাসার ভাইয়া আর ভাবি কি যেনো ছাদে
রোদে দিয়েছিল নেওয়ার কথা ভুলে গেছে।
এখন মনে পরাতে নিতে আসছে। আমাকে
বলছে রুহান তুমি কই ছিলা??? পরী তো খুব
কান্নাকাটি করলো। অনেক বমি করছে,
আমরা সবাই গিয়েছিলাম।তুমি ছাদে
আছো??? তরু তোমাকে খুঁজছে, কল করলো
তোমার ফোন রুমেই ছিলো।
.
হটাৎ মনে পরলো আমি তো পরীকে
মেরেছি। পরীকে মারলে তো আমাকে
ছাড়া চুপ হয়না। আমি থাকলে অল্পতেই চুপ
করে। আমি বুঝি না পরীর গায়ে আমি হাত
দিলেই বমি করে কেন???? আসলে পরী
আমার বকা মার খাইনা এজন্য হয়তো আমি
কিছু বললে কষ্ট পাই জিদ উঠে যায় । আর যে
কান্না শুরু করে বমি তো করবেই।
.
আমি ভাবিদের কাছে শুনা মাত্রই নিচে
চলে আসি। এসে দেখি তরু আর পরী ঘুমিয়ে
গিয়েছে। মেঝেতে পরীর বমি পরে আছে।
আমি রুম পরিষ্কার করে, বিছানায় যাই।
.
পরীর গায়ে হাত দিয়ে তরু ঘুমিয়ে আছে।
পরীর চোখে এখনো পানি লেগেই আছে।
ইশস আমার এতো আদরের কিউট মেয়েকে
কিভাবে মার দিয়েছি!??? কাজ না হয়
সকালে করতাম??? এখন নিজের কাছে কেমন
যেনো লাগছে। পরীর কপালে একটা পাপ্পা
দেয়। আস্তে করে তরুর হাত সরিয়ে পরীকে
বুকের উপরে নিয়ে তরুর কাছে এসে ঘুমায়।
বেশীর ভাগ রাতেই পরী আমার বুকে ঘুমায়।
.
আজ তরু জেগে থাকলে পরীকে আমার কাছে
কখনো দিতোনা। ভাগ্য ভাল তরু ঘুমিয়ে
গিয়েছে।তরুর সাথে রাগারাগি হলে
পরীকে আমার কাছে দিতে চাইনা কিন্তু
পরী আমার কাছে চলে আসে।তরু জেগে
থাকলে আমার আদরের কলিজা কে আদর
করতে পারতাম না, সাথে নিয়ে ঘুমানো
তো দূরের কথা। আসলে আমারি ভুল পরীকে
মার দেওয়া মোটেও ঠিক করিনি। ইশস বমি
করে মেয়েটা শরির খারাপ করে ফেলছে।
.
সকালে আমি যতসময় ঘুমায়? পরী তত সময়
আমার কোলের ভিতরে ঘুমায়। আমি উঠবো
পরীও উঠে যায়। এটা বাবা মেয়ের
প্রতিদিনের রুটিন।
.
সকালে উঠি, পরী আজ উঠেনি। পরী বমি
করে উইক হয়ে গিয়েছে,এখুনি তুলে খাইয়ে
দিতে হবে। তরু পরীর খাবার নিয়ে আসে,
তরু আমার সাথে কোন কথা বলছে না।
.
আমি বললাম তরুলতা সরি, কাল রাতে মন
মেজাজ কোন টাই ভাল ছিলো না।যখন তরু
রাগ করে? তখন ওকে পুরা নামে ডাকি
"তরুলতা "
.
তরু কিছু বলছে না, আমিই বলা শুরু করলাম,
কাল বস আমাকে রাগারাগি করেছে। যার
জন্য মন মেজাজ কোনটাই ভাল ছিলো না।
সরি তরুলতা, দেখো পরী তো আমারও মেয়ে
আমারও কষ্ট হয়েছে। তুমি এভাবে থাকলে
আমার আরও কষ্ট হবে।
.
তরু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,
জানি তরু আমার সাথে যেমনি করুক কিন্তু
আমাকে কেউ ইনসাল্ট করলে তরুর কষ্ট হয়।
তরুর একটু রাগ কমছে মনে হয়, শুধু বললো
তোমার অফিসের বেলা হয়ে গেলো তুমি
রেডি হয়ে খেয়ে নাও আমি পরীর খাইয়ে
দেয়।
.
আমি ঘরিটির দিকে তাকিয়ে, ফ্রেশ হতে
যায়।পরীর খাওয়া শেষে পরী বিছানায়
খেলছে, আমি যেয়ে কোলে নিয়ে আদর
করি, পরীকে সরি বলি। মামুনি বলো
তোমার জন্য কি নিয়ে আসবো??ছোট তো
ভুলে গেছে আমাকে বলছে....
--বাবাই তুমি আমার জন্য চকলেট, আইসক্রিম
কিনে নিয়ে আসবে।
--আচ্ছা ঠিক আছে মামুনি।
--আমার গালে পাপ্পা দিয়ে বলছে। আমার
বাবাই ভাল বাবাই।
.
পরীকে বিছানায় খেলতে দিয়ে, দেখি তরু
বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছে মন খারাপ করে।
.
আমি পিছন থেকে জড়িয়ে ধরি, পরীর আম্মু
সরি তো বললাম তবু মন খারাপ করে আছো?
তরু আমার দিকে তাকিয়ে বলে, কাল বস
তোমাকে খুব বকেছে না???
.
তুমি এসব নিয়ে ভেবে মন খারাপ করোনা।
চলো খাবে আমার সাথে।
.
--না তুমি খাও আমার খেতে ইচ্ছে করছে
না।
--পরীর আম্মু চলো, অফিসে লেট হয়ে যাচ্ছে
আবার বকা দিবে। আমার বকার কথা শুনে
তরু আমার সাথে খাবার খেতে আসে।
.
তরু বলছে, জানো তুমি মারার পরে পরী খুব
কাঁদছে, বমি করে অস্হির। বলে দিচ্ছি আর
কখনো আমাদের বাবুর গায়ে হাত দিবানা।
.
পরীর আম্মু, আর কখনো মারবো না পরীকে।
পরী তো আমার কলিজা , আজ আমার ভুল
হয়ে গেছে,আর কখনো ভুল হবে না।
.
আচ্ছা পরীর বাবা তোমার ডাক্তার যে
বলেছিল ত্রিশ তারিখে অপারেশন করার
কথা। মনে আছে তো??
.
হ্যাঁ মনে আছে,
.
আজ একবার ডাক্তারের সাথে কথা বলো।
আজ তো আটাশ তারিখ মাঝে আর একদিন
আছে।
.
পরীর আম্মু তোমাকে একটা কথা বলবো রাগ
করবে না প্লিজ।
.
হ্যাঁ বলো।
.
আমার বন্ধু রাসেল ওকে টাকা ধার দিয়েছি
যেটা দিয়ে অপারেশন করার কথা ছিলো।
এই মাসের বেতন পেলে অপারেশন করবো।
দশদিন লেট হবে তাই।
.
তরু আমার উপরে রেগে যাবে, তরুর দিকে
তাকিয়ে রাগ করতে নিষেধ করি।
.
তরু কিছু বলেনা শুধু বলে আমাকে জানাতে
পারতে?
.
এজন্য সরি।
.
তরু মনে মনে কষ্ট পেলেও কিছু বলেনা।শুধু
বলে আমার গহনা আছে ওগুলো বিক্রি করে
অপরেশন করো, তোমার এখুনি করতে হবে।
.
তরু দেখো পলিপাস এর প্রবলেম এটা দশদিন
পরে করলে কোন প্রবলেম নাই তো। শুধু শুধু
তুমি টেনশন করোনা। তোমার গহনা বিক্রি
করতে হবে না। বেতন পাইলে করবো, তুমি
টেনশন করবানা একদম।
.
তরু শুধু তাকিয়ে আছে আমার দিকে এমন
সময়
পরী হেটে আমাদের কাছে আসে, আম্মু
কোলে ....
তরু পরীকে কোলে নিয়ে আদর করছে, আমি
চেয়ে আছি ওদের দিকে, পরী খিলখিল করে
হেসে যাচ্ছে। পরী হাসছে, তরু হাসছে।
ওদের হাসি দেখে আমি নিজেও হাসছি।
সুন্দর একটা মূহর্ত, এইরকম মূহর্ত গুলো সবসময়
দেখতে চাই। এই হাসি গুলো সারাজীবন
ধরে রাখতে চাই। এই সুন্দর মূহর্তের
হাসিগুলো দেখতে দেখতে আমার অফিসের
লেট হয়ে গেলো দেখি কপালে আজ কি
আছে, যা হওয়ার হবে এই হাসি গুলো দেখার
জন্য সব কিছু সহ্য করতে রাজি..... ......

No comments:

Post a Comment