Wednesday, November 9, 2016

------- আপেল ------ভালবাসা

------- আপেল ------

.আজকে আমার বিয়ে হয়ে গেল।যদিওএর পুরোটাই অঘটন। তানি, আমার বউ,প্রচুর কান্না করার পর এখন ঘুমিয়েছে।আসলে বিয়েটা ঠিকভাবে ও মেনেনিতে পারেনি।আমিও যে নর্মালভাবে মেনেনিয়েছি এমন ব্যাপার ওনয়।তানি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল,আমার কাছে এর চেয়ে বেশী কিন্তুওর কাছে আমি শুধু ফ্রেন্ড ছিলাম।কখনোই ও আমাকে নিয়ে এসবভাবেনি হয়ত। অথচ আজ দুর্ঘটনাবশত ওআমার বউ হয়ে গেল। যদিও আমরা ভালবন্ধু, কিন্তু তানি যে আমাকে মেনেনিবেনা এটা ধরেই নেয়া যায়। বন্ধুআর স্বামী তো এক বিষয় নয়! আসলেতানির সাথে যে ছেলের বিয়ে ঠিকহয়েছিল, সেই ছেলের বাবা সন্ধ্যায়তানির বাবাকে ফোন দিয়ে বললেনযে, ওনার ছেলে পালিয়েছে বাসাথেকে। ছেলে অন্য কাউকেভালবাসে, আর তাকেই বিয়ে করবে।একথা শোনার পরই তানির বাবা হার্টএটাক করেন। আর আমার বাবা!! উনিইবাকি সব ইতিহাস তৈরী করলেন।ফোনটা আসার আগেও যেই বাড়িতেবিয়ের রব ছিল, সেটার চিত্র বদলাতে২ মিনিট ও লাগেনি। আর আমারবাবার বদৌলতে সেটামোটামুটিভাবে পুর্বের অবস্থায় চলেআসে!! ব্যাপারটা খুলেই বলি! হয়েছেকি, তানির বাবার এরকম অবস্থাদেখে বাবা ওনাকে বলে দিলেনযে, ওনার আপত্তি না থাকলে এইঅবস্থাতেই আমার সাথে তানিরবিয়ে দিতে চান আমার বাবা!! কিসাংঘাতিক! আমি তখন বাড়িরগেটের সামনে বসে ছ্যাকাময় গানশুনছিলাম, কারণ আমি তখনো জানতামনা তানির বিয়ে হচ্ছেনা!! অবশ্য মাএসে যখন বললেন, তানির বিয়েহচ্ছেনা, মনে হল এই বাড়িতে আমিইএকমাত্র ব্যাক্তি যে খুশি হয়েছি!কিন্তু পরক্ষনেই আমাকে অবাক করেদিয়ে মা বললেন, "বাবা, একটা কথারাখ,,। আমি ঢোক গিলে বললাম,কিমা? মা বললেন, তুই তানিকে এখনিবিয়ে কর! আমি মনে মনে খুশি হলেওউপরে উপরে না টাইপের ভাবদেখিয়ে ২ মিনিট পরেই রাজি হয়েগেলাম। অতঃপর বিয়ে!! কিন্তু মনটাখারাপ হল বাসর ঘরে এসে। এসেইদেখি তানি কাঁদছে!! কিচ্ছু বলতেপারিনি ওকে। চুপচাপ বারান্দায় চলেএসেছি। তার অনেকক্ষন পর ওর সাড়াশব্দনা পেয়ে গিয়ে দেখি মেয়েটাকাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে গেছে!আসলে এরকম একটা শক ও ঠিক কভারকরতে পারেনি।,,,অনেকদিন হয় নিকোটিনের ধোয়াটানা হয়না। এর কারণটা তানিই। ওরসাথে পরিচয় হবার পর থেকে আরসিগারেট খেতে দিত না ও। তবুও লুকিয়ে খেতাম। তবে এবারে সর্বশেষ সিগারেট টেনেছি ৩ মাস আগে! আর আজকে এক প্যাকেট কিনেছিলাম,কারণ টা ছিল তানি অন্যের হয়েযাবে। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে ও আমারই হয়ে গেল। এক্ষেত্রে যদিও আমার সিগারেট ফেলে দেয়া উচিত, কিন্তু তানির কান্না দেখার পরথেকে কেমন একটা অপরাধবোধ কাজকরছে।.তানির সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়আমাদের বাসায়। ওরা আমাদেরপাশের বাসায় নতুন আসে। আমি একদিনরুমে বসে ফোন টিপছি, ও ওর মায়েরসাথে এল আমাদের বাসায়।তারপরআম্মু ওর মা আর ওর সাথে আমার পরিচয়করিয়ে দিল। আর এটাও শুনলাম যে ওআমার ভার্সিটিতে নতুন এডমিশননিয়েছে। কিন্তু ঝামেলা হল, কিচ্ছুচেনেনা, তাই আমাকে ওর সাথেযেতে হবে প্রতিদিন। আমি তখন ৩য় বর্ষআর ও কেবল ১ম। ব্যাস পরদিন থেকেইপাল্টে গেল আমার জীবন। যদিও ১মদিকে ওর সাথে কথা বেশী হতনা।আস্তে আস্তে আমরা ফ্রি হচ্ছিলাম। ১মদিকে কেবল ভার্সিটিতে যাওয়াআসা ছাড়া কিচ্ছু করতাম না। একদিনআসার পথে জিজ্ঞেস করলাম ফুচকাখাবে?? মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ামেয়েটা মাথা দুলিয়ে উত্তর দিল,, হু।সেদিন এর পর থেকে আরো ফ্রি হলামআমরা।হঠাৎ একদিন কোথা থেকেএকটা ফ্রেন্ডশিপ ব্রেসলেট এনেআমার হাতে পরিয়ে দিল, তারপরবলল,আমরা আজ থেকে ফ্রেন্ড,,। আমিঅবাক হলাম না। ভালই চলছিল আমাদেরবন্ধুত্ব। কিন্তু ওর ক্লাসের অনেক মেয়েআমাকে ওর বয়ফ্রেন্ড ভাবত। যদিওআমার সাথে ওর এরকম সম্পর্ক নাই!আসলে ওর ডিপার্টমেন্ট পার হয়েআমার ডিপার্টমেন্ট যাওয়া লাগত,ফলে ভার্সিটিতে ওর সাথে আমারক্লাস বাদে আরো সময় দেখা হত। তবেআমরা ১ম দিকে প্রয়োজন ছাড়া কথানা বললেও ফ্রেন্ড হবার পর থেকেঅনেকটাই ফ্রি হয়ে গেলাম।ভার্সিটিতে যাওয়া, ঘুড়ে বেরানো,খাওয়া, আড্ডা সবই চলছিল।.....সকালে উঠে দেখি তানি নেই। ওকি!নতুন বউ কি বাপের বাড়ি গেল!! আরবাপের বাড়ি যাবে কি, আমাদের ঘরথেকে বের হলেই ত ওর বাসা। পরেবারান্দায় চোখ পরতেই দেখলামদাড়িয়ে আছে।কাছে গিয়েদাড়ালাম। ও আমার উপস্থিতি টেরপেলেও চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। আমিবললাম, "দেখো ভাগ্যে যা ছিল তাহয়ে গেছে, এখন এসব ভেবে লাভ নেই।তোমার পুরো জীবন পড়ে আছে। তুমিকালকের সব ভুলে যাও। তানি আমাকেথামিয়ে দিল,, "বিশ্বাস করো, আমিতোমাকে কখনোই বন্ধু ছাড়া অন্য কিছুভাবিনি "।। তানির এই কথাই আমাকেসব বুঝিয়ে দিয়েছে। বুঝতে পারলাম ওকি বলতে চাচ্ছে। শুধু বললাম, আমরাযেমন বন্ধু ছিলাম সেরকমই থাকি?? , ওফ্যাকাসে ভাবে হেসে দিল। আমিআর কিছু না বলে চলে এলাম সেখানেথেকে।.আকাশটা কেমন মেঘলা হয়ে আছেআজকে। আকাশটাও যেন আমার কষ্টটাবুকে ধারণ করে আছে। মনে হচ্ছেকিভাবে যেন সেও জেনে গেছেআমার কষ্টের কারণ। প্রিয় মানুষটাকেপেয়েও পাইনি আমি, আর আমারকষ্টের সাথে সমানভাবে ব্যথিতহয়েছে যেন আকাশটা। মায়ের ডাকেচমকে উঠি। এই একটা মানুষ কিভাবেযেন আমার মনের অবস্থা বুঝে ফেলেনসবসময়। মা বললেন, "সব ঠিক হয়ে যাবেদেখিস, কিছুদিন যাক, তানির এইকষ্টটা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।মেয়েটাকে একটু হেল্প করিস। চোখেরসামনে এতদিন ধরে ওকে দেখলাম, ওতো আমার মেয়ের মতই। " আমি মায়েরকথায় হাসলাম। মায়েরা এমনই,সন্তানের চিন্তায় অস্থীর সবসময়।বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। বিল্ডিং বাড়িহবার কারণে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দশোনা যাচ্ছেনা। একবার শুনেছিলাম,তানি শুনিয়েছিল। তাও অনেক আগে।আমি তখন বৃষ্টিতে ভেজা অপছন্দকরতাম। মানুষ যে কতটা পাগল হলে হাতপা খুলে বৃষ্টিতে ভেজে সেটানিয়েই ভাবতাম তখন, আর আমার সবচিন্তা চেতনা মুছে দিল তানি,সেবারই প্রথম অনুভব করলাম বৃষ্টিতেভেজার আনন্দ। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটাগায়ে পড়ার সাথে সাথে মনটাওপাল্টে গেল আমার। তানির সাথেহাত ধরে সেদিন অনেক ভিজলাম। আরসেদিনই প্রথম ওর প্রেমে টুক করেপড়লাম আমি। হু,, সেদিনই প্রথম। ওজানতে পারেনি। এখনো বোধহয়জানেনা। পাগলি মেয়ে একটা।সেদিনের সেই স্মৃতিটা আজ প্রচন্ডমাথা চাড়া দিচ্ছে। তখন বর্ষাকালছিল। ভার্সিটিতে গেলে ছাতানিয়েই যেতাম।সেদিনও ছাতানিয়েই গিয়েছি। মেঘলা আকাশ ছিলসেদিন। বাসায় আসার আগে, তানিরসাথে মাঠে বসে গল্প করছি। হঠাৎকরে বৃষ্টি শুরু। আমি ত ছাতা বের করেওকে তাড়া লাগালাম,,, "এই চলো,ভিজে যাব তো,। কিন্তু তানিএমনভাবে তাকাল যেন আমি মস্ত কোনভুল করেছি। ওকে বোঝার জন্য ভ্রু কুচকেতাকালাম ওর দিকে। ও যা বলল, তাআমি মানতে রাজি হলাম না। ওরকথার অর্থ হচ্ছে, ভিজতে হবে, ছাতাবন্ধ করতে হবে এখনই। আমি বলে দিলামপারব না। ও রেগে বলল, তাহলেবাসায় বলে দিব তুমি প্রেম করো,,!!আজব মেয়ে, নিজে ভিজবে ভাল,,আমাকে টানার কি আছে? আর মানুষকি ভাববে? ও বলল, কে কি ভাবল তাজানার দরকার নাই। আর ততক্ষনে বৃষ্টিরবেগ বেড়ে গেল। তানি আমার হাতথেকে ছাতা কেড়ে নিল। নিজেরঅনিচ্ছাতেও ভিজতে লাগলাম, এইমেয়ে বেশী সুবিধার না। আসলে ওনিজের কাজ হাসিল করার জন্যআমাকে অনেকবার ফাসিয়েছে তাওআমার বাসায় আমার নামে বিচারদিয়ে!!! আফসোস!! এখন আমার কাজ ছিলকোন সেইফ প্লেসে দাড়িয়ে বৃষ্টিরচৌদ্দ গুষ্টির তুষ্টি করা, অথচ আমিবৃষ্টিতে ভিজছি! আর তানি পারে ওবটে! দুই হাত তুলে মুখটা আকাশেরদিকে করে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।পাশেই একটা গাছ ছিল, আমি গাছেরপাশে গিয়ে দাড়ালাম। একটু পর ওআমাকে দেখে কাছে এল, আসলে ওরআসার অর্থ ছিল আমাকে টেনে নিয়েআবার ভেজানো। কি জানি, আম্মুরকাছে হয়ত শুনেছে আমি বৃষ্টিতেভেজা পছন্দ করিনা তাই! কেমনমেয়ের ফ্রেন্ড হয়েছি, শুধু প্যারার উপরথাকে থুক্কু রাখে!!তানি কাছে এসে কিছু বলবে ঠিকতখনই জোরে বাজ পড়ার শব্দ হলো,, ব্যসবাকিটা ইতিহাস,,,!! ও দুই হাত দিয়েআমাকে জাপটে ধরে আছে! তানিরএত কাছে কখনোই আসিনি। আমার বুখেওর ভেজা চুল লেগে আছে। ওর চুলথেকে শ্যাম্পুর হালকা গন্ধ আসছে।আমি কেমন যেন মোহময় হয়ে গেলাম।আবার বাজের শব্দ হলো, এবার তানিআরো জোরে চেপে ধরল আমাকে। উহ..ওর হাতের নখ আমার পিঠে গেথেগেল মনে হচ্ছে। মেয়েটা ভয়েআমাকে ধরে আছে। অথচ আমারসেদিকে খেয়াল নেই। নিজেকেকেমন যেন প্রেমিক পুরুষ মনে হতেলাগল। মনের ভিতর টর্নেডো বয়েযাচ্ছে আমার। একটা শীতল হাওয়াআমাকে যেন ঠান্ডা করে যাচ্ছে।আমার মনে হচ্ছিল আমি কোনবাগানে আছি আর আমাকে জড়িয়েআছে অসংখ্য প্রস্ফুটিত গোলাপ। হুশফিরে পেতেই তানি আমাকে ছেড়েদিল। এবার মনে হল আমার বুকটা খালিহয়ে গেল কিছুটা কমতি আছে। তানিকিছু না বলে আবার একটু দূরে গিয়েভিজতে লাগল, এবার ওর দিকেতাকালাম। কিন্তু এ সেই তানি নয়। ওঅন্য কেউ। আমার ফ্রেন্ড তানিকে ওরমাঝে খুজেঁ পাচ্ছিনা আমি।তানিকে হা করে দেখছি, আর ও মুখআকাশের দিকে করে দাড়িয়ে আছে।ওর ভেজা চুল থেকে টুপ টুপ করে পানিপড়ছে, ঠিক যেন সদ্য ফোটাগোলাপের পাপড়ি বেয়ে পানিপড়ছে। তানির গালের এক পাশে কিছুচুল লেপ্টে আছে, ইচ্ছে করছে চুলগুলোকানের পাশে গুজেঁ দেই। আচ্ছা ওহঠাৎ করে এত সুন্দর হল কি করে? ঠিকযেন আমার সামনে একটা প্রতিমা ঠায়দাড়ানো। বৃষ্টি বিলাশে মত্ত এইমেয়েটার রুপ যেন ঠিকরে পড়ছে,আচ্ছা ওর রুপের বর্ণনা দেবার মত কিছুকি আছে? না কিচ্ছু নেই। আমি কিছুভাষা খুজেঁ পাচ্ছিলাম না। অথচ এইমেয়েটাকে আমি অনেকদিন হলচিনি। এখন মনে হচ্ছিল, ইশ কেন আগেভিজলাম না। এখন মনে হচ্ছিল ও যেনএকটা রংধনুর সব রং মেখে তৈরী একপাথর যার মাঝে আছে অসম্ভবহারিয়ে যাবার ক্ষমতা, যাকেদেখলে নিমেষেই মনটা ভাল হয়েযায়। মনের অজান্তেই মুখ থেকে একটাবাক্য বের হয়ে গেল,, "তুমি প্রিয়তমেষুআমার.."ব্যস সেদিন থেকেই শুরু! বলতে লজ্জাহলেও এটাই সত্যি যে সেদিনের পরথেকে তানির প্রতি আমার সবচিন্তাধারা পাল্টে গেল! এতদিনওকে একটা সাধারন মেয়েই মনে হত,যে সবসময় মোটা ফ্রেমের কালোচশমা পড়ে থাকত। অথচ সেদিনের পরথেকে কি যে হল আমার! তানির সবকিছুই অনন্য হয়ে উঠল আমার কাছে,,!!ওরচোখ দুটো যেন মায়ার মহাসাগর, যারকোন কূল নেই, ওই দুচোখের মায়ায় যেনহারাতে কোন বাধা নেই আমার। ওরখোলা চুল যেন শরতের কাশফুল,, যদিওচুলগুলো কালো ছিল। বাতাসে ওরখোলা চুলগুলো যখন উড়তো, আমার মনেহত চারিদিকে ঘুর্নিঝড় শুরু হয়ে গেছে,এ যেন ভালবাসার ঘুর্নিঝড়! মোটাফ্রেমের চশমাটা কে যেন মনে হত ওরচোখের কাজল! আজব ব্যাপার,সেদিনের আগে আমি এসবকে এভাবেকখনোই ভাবিনি! আমি পাল্টেগেলাম,, হ্যা আমি পাল্টে গেলাম।সম্পুর্ন তানির হয়ে গেলাম। কিন্তু ওকেবুঝতে দেইনি যে আমি ওর প্রেমেহাবুডুবু খাচ্ছি। তবে একটা ব্যাপারআমি কখনোই নিজেকে সামলাতেপারিনি, ও যখন কথা বলত হা করেইশুনতাম। এজন্য কত যে ঝাড়ি খেয়েছি!সেসময় বারবার মনে হত, ইস এইমেয়েকে বউ করতে হবে, নাহলেজীবনের অর্ধেকটাই অদেখা থেকেযাবে যে আমার!! আর এখন মনে হচ্ছে,বিয়েটা করে ভুল হয়ে গেল। ও কিকখনো আমায় মেনে নিতে পারবে?তানির আজকে বৃষ্টিতে ভিজবারকথা, কিন্তু ও ভিজছেনা। ঘরেরজানালায় দাড়িয়ে বাইরের আকাশদেখছে,, আর আমি দেখছি ওকে...।। আরভাবছি একটা গানের লাইন, ইচ্ছে করেওকে খুব জোরে লাইনদুটো শুনিয়েদেই, কিন্তু পারছিনা। তাই আপন মনেইবকে যাচ্ছি,, " আমার ভিতর - বাহিরেঅন্তরে অন্তরে,, আছো তুমি হৃদয় জুড়ে.."".বিয়ের প্রায় ১ মাস হয়ে গেলআমাদের। তবে এখনো তানির সাথেআমি ফ্রি হতে পারিনি। এমনকিআমরা আগে ফ্রেন্ড হিসেবে যেরকমফ্রি ছিলাম এখন আর সেরকম নই।ব্যাপারটা আমার আর তানি দুজনেরজন্যই বোরিং আর ঠিক নয়, আর এরকমচলতে থাকলে ওকে কখনোই আমিনরমাল করতে পারব না। আর এটাআমাদের সাংসারিক লাইফে অনেকইফেক্ট ফেলছে আর ফেলবে। আমারবাবা মায়ের সাথে তানিমোটামুটি কথা বলে অথচ আমারসাথে তার ছিটে ফোটাও হয়না!হঠাৎ করেই সকালে মা এসে বলছেন,"তানিকে নিয়ে কক্সবাজারে ঘুড়েআয় কয়েকদিন, মেয়েটার মনটা ভালহবে। ব্যপারটা আমার মনে ঢুকে গেল।তাই সেদিনই অফিস থেকে স্যারেরকাছে কিছুদিনের ছুটি নিয়েনিলাম। তানিকে মা কক্সবাজারযাওয়ার কথা বলে রেখেছিলেন।পরেরদিন সকালে আমরা রওনা হই।সন্ধ্যার সময়েই আমরা কক্সবাজারেপৌছে যাই। আমার শ্বশুর মশাই মানেতানির বাবা হোটেলে রুম ঠিক করেরেখেছিলেন। আমরা সরাসরিহোটেলে উঠে যাই, সেদিনের মত আরঘোরা হয়নি। কারণ আমি আর তানিদুজনেই ক্লান্ত ছিলাম, ফলে রাতেখেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।,সকালে তানির ডাকে ঘুম ভাঙল। মনেহচ্ছে কেবল গোসল করে এল, ভেজাচুলে অপ্সরীর মত লাগছিল ওকে। আমিকম্বলের নিচে থেকে চুপ করে ওকেদেখছিলাম। ও টের পায়নি। কিছুক্ষনপরে উঠে ফ্রেস হয়ে দুজনে একসাথেনাস্তা করলাম, তারপর আবার রুমেএলাম। সেই সকালে ও আমায় ডেকেছিল, তারপর আর কথাই হয়নি। মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে দুটো চড় মারিমেয়েটাকে। আরে আগে যেভাবেকথা বলতি সেভাবেও তো বিহেবকরতে পারিস নাকি?? হুহ....।।.আমি টিভি দেখছিলাম, হঠাৎ করেতানি পানি খেতে গেল। টিভিতেসে সময় রোমান্টিক সিন হচ্ছে, আমিহা করে দেখছি।দেখছি না ঠিক,গিলছি,,,হি হি হি। হঠাৎ করে তানিএসে দেখল আমি হা করে ওই সিনদেখছি। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেলেদ্রুত চ্যানেল পাল্টে দিলাম, আর বলতেলাগলাম যে, কিসব যে আজকালদেখায়,,, ধুর!! তানি ফ্যাকাসে ভাবেহাসল। আমি একটু সাহস পেয়ে গেলাম,ওকে বললাম যে বাইরে যাবে কিনা?ও মাথা নেড়ে বলল, বিকালে গেলেভাল হয়।আমি আর কিছু বললাম না।.সৈকতে হাটছি দুজনে, আমি আরতানি। ও শাড়ি পড়েছে, কালো রঙেরশাড়িতে ওকে খুব সুন্দর লাগে। আমিমাঝে মাঝেই আড়চোখে দেখছিওকে। কিন্তু ও টের পাচ্ছেনা। কারণআমরা পাশাপাশি হাটছিনা। যদিওওর বিয়ের আগে পাশাপাশি হাটতামকিন্তু এখন হাটছিনা!সন্ধ্যে হচ্ছে, পাখিরা সব চলে যাচ্ছেতাদের ঘরে, আমি আর তানি হাটতেহাটতে অনেকটা ফাকা স্থানেএসেছি। ফাকা বলতে আমাদের পাশেমানুষ নেই, সবাই একটু দুরে। সুর্যটা অস্তযাচ্ছে আকাশে। আকাশটার রং ঈষৎলালচে টাইপের হয়ে গেছে,ক্যামেরা বের করে আকাশের ছবিতুললাম। ঘুরে দেখি তানি অস্তপ্রায়সুর্যের দিকে চেয়ে আছে। ওর মুখেলালছে আভাটা পরায় ওকে অপুর্বলাগছে। একদম একটা আলাদা সৌন্দর্যপ্রকাশ পাচ্ছে ওর থেকে। থেমেথেমে হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে।আমি তানির পিছনে কিছুটা দূরেদাড়ালাম। এখান থেকে ওকে অপরুপলাগছে। অস্তমিত সুর্যের রং, শাড়িপড়া একটা মেয়ে, হালকা বাতাসেউড়ছে তার খোলা চুল। আমি যেনহারিয়ে যাচ্ছি ওর মায়ায় আবার।টপাটপ কয়েকটা ছবি তুললাম আমি। ওখেয়াল করেনি।.সন্ধ্যার পরে হাটছি দুজনে। একটাস্থানে এলাম, এখানে অনেক পাথর, বড়বড় পাথর। আর হিমেল হাওয়া, মনটাজুড়িয়ে যাচ্ছে। এমন আবহাওয়ায়প্রেমিকা বা বউকে নিয়েপাশাপাশি বসে এক হেডফোন কানেদিয়ে রোমান্টিক গান শোনা আরহাতে হাত রেখে পাথরের উপর বসেরোমান্টিক কথা বলা যেত যদি!! উফফ,কিন্তু তানির জন্য এটা সম্ভব করতেপারছিনা। আচ্ছা ওর মনটা কি এখনোখারাপ? উহু এত সুন্দর আবহাওয়ায় মনখারাপ হতে পারে? আকাশে চাঁদউঠেছে, সেই আলোয় ওকে ঠিক কি রকমলাগছে বলে বুঝাতে পারব না। আচ্ছাআমি ওকে বারবার এত প্রশংসা করিকেন?? মনে হয় মন থেকে ভাল বাসলেপ্রিয় মানুষটাকে বারবার ভাললাগে, সেটা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণথেকে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে।আমিতানির কাছের পাথরটায় গিয়েবসলাম। ও আমাকে দেখে আবারসমুদ্রের উত্তাল ঢেউ দেখায় মন দিল।দুজনে চুপ করে আছি।কিন্তু এই নিরবতাআমার সহ্য হচ্ছেনা। কোথায় ইচ্ছা ছিলবাড়ি গিয়ে সবাইকে সুসংবাদ দিব,সেখানে ওর সাথে কথাই বলিনিএখনো ঠিকমত। অথচ আমরা নাকিফ্রেন্ড!!!তানিকে একবার গান শুনিয়েছিলাম,ও বলেছিল আমার গানের গলা ভাল।আজকে এই আবহাওয়াটা গানের জন্যউপযুক্ত। তানির মনটা ফ্রেশ করারউদ্দেশ্যে তাই গান ধরলাম,," আমার কল্পনা জুড়ে যে গল্পেরা ছিলআড়ালে সব লুকোনোসেই গল্পেরা সব রঙিন হল পলকেতোমাকে হঠাৎ পেয়ে যেন.....প্রেম তুমি আসবে এভাবে, আবারহারিয়ে যাবে ভাবিনিআজো আছে সে পথ শুধু নেই তুমি, বলকোথায় আছো অভিমানি..,,,,অভিমানি..।.একটু বলেই চুপ করে গেলাম। দেখিতানি ঘুরে আমার দিকে ফিরল।- গানটা গাওয়া বন্ধ করলে যে?-ভাবলাম ভাল লাগছেনা তোমার-কই না তো- আচ্ছা, এখন ভাল লাগছে?- হুম, অনেক বেটার, আবার শুরু করোগানটা।.আমি আবার শুরু করলাম.."প্রেম তুমি আসবে এভাবে, আবারহারিয়ে যাবে ভাবিনি,,আজো আছে সে পথ,, শুধু নেই তুমি, বলকোথায় আছো অভিমানি,,,অভিমানি..।।গানটা শেষ করেই হোটেলে ফিরলামআমরা। আসার সময় টুকটাক কথা হয়েছে।তানি এখন অনেকটাই ফ্রি হয়ে উঠছে,জড়তা কাটিয়ে উঠছে। কিন্তু আসারসময় একটা কথা বলেছে, যেটা আমারএকদম ভাল লাগেনি। খুব খারাপলেগেছে। তানি ভাবছে এ বিয়েতেআমারো মত নেই! তার উপর আমাকেবলেছে, আমি চাইলে ওকে ডিভোর্সদিয়ে দিতে পারি, আমাকে ও দোয়াকরেছে, যেন একটা মিষ্টি বউ পাই। কতরাগ যে উঠেছিল ওর উপর,, যদি ঝাড়তেপারতাম,,, মাথাটা গরম করে ছেরেছেমেয়েটা। আমি কেন ওকে ছাড়ব হু?? ওশুধু আমার, আর কারো নয়।একদিন সময় পেলে ওকে বলব,, "ঝুমবৃষ্টিতে বাড়ির ছাদে তোমার হাতধরে ভিজতে চাই। ইচ্ছে করেতোমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে চাই,আমি শুধু তোমার, তুমি শুধু আমার।রৌদ্রতেজ বিকেল বেলায় তোমারহাত ধরে নদীর তীরে হাটতে চাই। আরগোধূলীতে তোমার সাথে বসে নদীতীরের শীতল বাতাস উপভোগ করতেচাই। শুধু তোমার হাতে হাত রেখে,,সন্ধ্যাটা কাটিয়ে দিতে চাইতোমার হাতে বানানো চা আরবিস্কুট দিয়ে, দুজনে দাড়াব আমাদেরছোট্ট ঘরের ছোট্ট বাড়ান্দায় আর তুমিআমাকে আদেশ করবে,, " ওগো দেখো,কৃষ্ণচূড়া ফুঁটেছে, এনে দাও নয়তো কথাবলব না,, হু.. " আমি তোমার নাক টেনেবলব, পাগলি একটা। লজ্জায় লাল হয়েতুমি আমার বুকে মুখ লুকাবে। আমি শক্তকরে জড়িয়ে ধরব।.....................বিপ্লব ঘুমিয়ে গেছে। তানি জেগেআছে। বিছানা ছেড়ে উঠে ও এখনজানালার ধারে দাড়িয়ে আছে।রাতের এই সময়টায় ভালোই লাগছে, মৃদুবাতাস, জোৎস্নার আধো আধোআলোতে নিজেকে একটু ফ্রেশলাগছে তানির। গত মাসেই বিপ্লবেরসাথে ওর বিয়ে হয়েছে। বিয়েটাহবার কথা ছিল আরেকজনের সাথে,কিন্তু বিয়ের দিন হঠাৎ করেই বরেরপরিবার থেকে ফোন করে জানান হলযে ছেলে বিয়েতে রাজী নয়। অবশ্যতানির সাথে বিয়ের আগেছেলেটার ২/৩ বার কথা হয়েছিল,ছেলেটা তখন বললেই পারত। বিয়েরদিনে হঠাৎ করে বিয়ে ভেঙে দেয়াসাধারন কোন ব্যাপার নয়, অন্ততবাঙালী মধ্যবিত্ত পরিবারেরমেয়েদের ক্ষেত্রে, সবসময় সাবধানেচলতে হয় মধ্যবিত্ত পরিবারেরমেয়েদের, পান থেকে চুন খসলেইসমাজে তাদের নামে রটিয়ে দেয়াহয় নানা কথা। বিয়ে ভাঙার কথাটাতানির বাবা মেনে নিতেপারেননি, ফলে হার্ট এটাক করেনউনি। একদিকে সামাজিকভাবেঅবক্ষয়, সাথে বাবার শারিরীকঅবস্থার অবনতি সব মিলিয়ে তানিরওপর প্রচুর মানসিক চাপ এসে পড়ে।বিয়ের দিন বিপ্লব না থাকলে যে কিহত! বিপ্লবের বাবার পরামর্শেইতানির সাথে বিপ্লবের বিয়ে হয়।তানি প্রচুর কান্না করে কয়েকদিন, হয়রকেউ দেখেনি। মানসিক চাপটা হয়তএত দ্রুত কাটতো না। তবে বিপ্লবেরকারণে নিজেকে স্বাভাবিক করারচেষ্টা করছে তানি। ছেলেটাতানির কারণেই ফেঁসে গেল! অথচ নেইকোন অভিযোগ, নেই কোন রাগ!বিপ্লবের কাজই যেন তানিকেস্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।বিপ্লবের মত বন্ধু পেয়ে আজ নিজেকেগর্বিত মনে হচ্ছে তানির। সুখের সময় তঅনেক বন্ধু থাকে, কিন্তু এরকম দুঃখেরসময় কতজন পাশে থাকে??.কক্সবাজার থেকে ফেরার প্রায়কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেছে। তানিআপাতত স্বাভাবিক, সবার সাথেমোটামুটি ভাল ভাবেই নিজেকেখাপ খাইয়ে নিয়েছে ও। বিয়েরসময়ের ঘটনাটা কাটিয়ে উঠতে ওকেপ্রচুর সাহায্য করেছে বিপ্লব।ছেলেটা এসময় স্বামী নয়, একজন ভালবন্ধু হয়ে পাশে ছিল তানির। তবেইদানীং তানি বিপ্লবের মাঝে কিছুচেঞ্জ লক্ষ্য করছে, যেটা আগে লক্ষ্যকরেনি। এই যেমন বিপ্লব অফিস থেকেআসার সময় তানির প্রিয় লাল গোলাপনিয়ে আসে প্রতিদিন, রাতের বেলামাঝে মাঝে তানিকে নিয়ে ছাদেযায়, চাঁদ দেখায়, গান শোনায়। তবেকখনো অধিকার খাটায় না। কিন্তুএসবের উপরেও ছাপিয়েছে আরোকিছু ব্যপার। তানি লক্ষ্য করেছেবিপ্লব ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে,,শুধু দেখে না,,, হা করে দেখে। সেদিনতানি গোসল সেরে যখন রুমে চুলআঁচড়াচ্ছিল তখন বিপ্লব কম্বলের নিচথেকে চোখ বের করে ওকে দেখছে।তানি আয়নায় সেটা দেখে ফেলে।শুধু একদিন না,, প্রতিদিন এরকম হয়, বিপ্লবতানিকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে,প্রথম দিকে অস্বস্তিকর লাগলেও এখনকেন যেন আর অস্বস্তিকর লাগেনাব্যপারটা,বরং তানি উপভোগ করে।কিন্তু একটা ব্যাপার মনের কোনেথেকে যায়, আচ্ছা বিপ্লব কি ওকেমনে মনে পছন্দ করে? কিন্তু কবেথেকে? বিয়ের পর নাকি আগে?? আরপছন্দ করলেও বলেনি কেন? নাকিতানি বুঝেনি আগে?? উফফ তানিরমনে আজকাল অনেক প্রশ্ন।.............................নিজেকে আজকাল কেমন যেন বর বরমনে হয় আমার! তাইতো তানির জন্যপ্রতিদিন ওর প্রিয় লাল গোলাপনিয়ে যাই, যদিও ওকে সরাসরিদেইনি। ফুলগুলো নিয়ে গিয়ে আমিটেবিলে রেখে দেই, ও দেখেও নাদেখার ভান করে মনে হয়! তবেইদানীং দেখছি ও সেঁজে গুঁজেইথাকে সবসময়। আচ্ছা ও কি বুঝেনাআমি ওকে লুকিয়ে দেখি! বুঝলে হয়তসাজুগুজু করত না। আচ্ছা এভাবে চোখেকাজল দিয়ে টানাটানা চোখবানিয়ে, হালকা মেকাপ করে, চুলছেড়ে দিয়ে সবসময় আমার সামনে ওআসে কেন? খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছেকরে,, আর বলতে ইচ্ছে হয়, খুব ভালবাসিপাগলি,, খুউউউউব।..............[ তানি]কিরকম ড্যাবড্যাব করে তাকিয়েআছে হাবলুটা। খুব অস্বস্তি লাগছেআমার। রাতের এই রোমান্টিকহাওয়ায় কিসের কি গান ধরবে তানা,, হা করে তাকিয়ে আছে আমারদিকে। ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়েনিচে ফেলে দেই। উম না, নিচেফেলা যাবে না,, হাজার হোকআমারই ইয়ে মানে বর!আরেএএ আমি ওকে নিজের বর ভাবছি!আচ্ছা আমি ওর প্রেমে পরলাম না তো?ধুর! এতবছর ধরে প্রেমে পড়িনি, এখন পড়বকেন? উহু, এতদিন তো ওকে সেভাবেদেখিনি, কিন্তু এখন তো ওই আমার সব,,ইসস কি ভাবছি আমি!!! ও আমার সব! ওহ,,এখনো তাকিয়ে আছে,,, এবার গাজ্বলছে আমার। একটা দাবড়ানি দিয়েদিব কিন্তু!! উহু,,, পাগলা ছেলেএভাবে কেউ তাকায়,, আমি ত তোমারচাহনীর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি, বিপ্লব।তুমি বুঝোনা??? ধুর এবার আর সহ্যহচ্ছেনা,, দিলাম এক ঝাড়ি,,,- ওই যাও ঘুমাও,,, ( রেগে তানি)- ইয়ে মানে হ্যা যাচ্ছি ( বিপ্লব)- কই যাও?- রুমে- একটা গান শুনিয়ে যাও ( অভিমানীসুরে)- আচ্ছা,,,বিপ্লব গান ধরল,,"আমার ছিপ নৌকোয় এসো ও অন্যমেয়েআড়াল দেয়াল রেখোনা,আমার ছিপ নৌকোয় এসো ও অন্যমেয়েদেখো লাজুক লিরিক্স কল্পনা......"".ওর গলাটাও অনেক সুন্দর, তবে আজঅনেক সুন্দর লাগছে, কেন যানিনা, হয়তআজ ওকে আলাদা করে ভাল লাগছে।.রাতে বিপ্লব বিছানায় শুয়ে ভাবছে,,," ছি কি করলাম আমি! তানি বুঝেগেছে ওকে আমি হা করেদেখছিলাম! তাই তো রাগ করল! বুঝেছিও আমাকে পছন্দ করেনা। এরপর থেকেআর ওকে দেখব না। যতটা পারি ওর কাছথেকে আলাদা থাকব, ওকে ওভাবেদেখব না। ও তো আমাকে পছন্দ করেনা।তাই আলাদা হয়ে ওকে ওর মত থাকতেদেয়াটাই বেটার হবে।.গত কয়েকদিন যাবৎ তানিকে এড়িয়েচলছি, কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে ও এখনআমাকে অল টাইম ঝাড়ির উপর রাখে।ব্যাপারটা বুঝতে পারছিনা! এখন তোওকে লুকিয়ে দেখিনা, ওর জন্য ফুল ওআনিনা! তবুও রেগে যায় কেনমেয়েটা?? ওকে এখনো বুঝতে পারলামনা আমি। তবে কিছু ব্যাপার লক্ষ্যকরছি ইদানীং, মানে ওকে এভয়েডকরার পর থেকেই দেখছি ওর আচরনপাল্টে যাচ্ছে! এই যেমন আমি অফিসথেকে আসলেই ও দরজা খুলে দেয়!আগে বাসার অন্য লোকেরা দিত! আরওর নজর থাকে আমার হাতে! আচ্ছা ওকি দেখে যে আমি ফুল এনেছিকিনা?? ও কি ফুল পাওয়ার আশায় দরজাখোলে? নাকি ফুল আনলে রাগ করবেতাই এমন করে?........রাতের বেলায় তানির কাছে এরকমব্যবহার আশা করিনি! অফিসের মেয়েকলিগের সাথে হেসে হেসে ফোনেকথা বলায় ওর খুব জ্বলেছে!! খুলেই বলিব্যপারটা! আমি বারান্দায় ছিলাম,একটা কল আসলে ওকে ফোনটা আমারকাছে আনতে বলি! স্ক্রিনে লেখাছিল অনামিকা ইজ কলিং! ফোন ধরারসময় তানির এক্সপ্রেশন টা দেখেআমিই অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলাম! আরবাজটা পড়ল কল কেটে দেবার পর! ওউড়ে এসে আমার কলার ধরল! ধরেই প্রশ্নশুরু! এত রাতে কি? এত হেসে কথাবললাম কেন? ও কে? সারাদিনে কিকরেছে? আমি অন্য মেয়ের সাথে কথাবললাম কেন?,,,,,!!!! বাপরে বাপ!! পুরাইটাস্কি খেয়ে গেছি ওর এত প্রশ্নে আরএত রাগ দেখে! সত্যি বলছি ওর সাথেপরিচয়ের যতদিন হল, একদিনেও এতরিএক্ট করেনি ও এতটা যতটা নাআজকে করল! আমি রাগ হবার পরিবর্তেলজ্জা পেয়েছি! সত্যই লজ্জাপেয়েছি আমি! আচ্ছা তাহলে আমিযা ভাবছি তাই কি সত্যি? তানি কিতবে??? ধুর! কি করে সম্ভব! আমি তো ওরশুধু বন্ধু! কিন্তু এত রাগ করল! আচ্ছা এটাআবার আমাদের বিয়ে ভাঙ্গার জন্যইচ্ছে করে বাধাঁনো ঝগড়া নয়তো? উহু,,না, এটা না। ও মনে হয় হেলে পড়েছে!!!হায় হায়! ও আমার প্রেমে পড়েযাচ্ছে? কি লজ্জা কি লজ্জা!! আমারবউ আমার প্রেমে পড়েছে! শুনতেইকেমন বেখাপ্পা লাগছে!! নাহ আরদেরী করা যাবেনা। দেখি কালকেকোন প্লান করতে হবে! আর কত দেরীবিড়াল মারতে!!!..............[তানি]ছিঃ ছিঃ কি করলাম আমি?বিপ্লবের কলার ধরেছি! কি লজ্জারব্যাপার! আর নির্লজ্জের মত ওকে এসবপ্রশ্ন করলাম! উফফ! নিজেকে কন্ট্রোলকরতে পারিনি!কি যে ভাববে ছেলেটা! ধুর! ক্ষমাচাইতে হবে! কিন্তু কিভাবে চাইবক্ষমা? প্রচন্ড লজ্জা লাগছে যে! আচ্ছাও কিভাবে নেবে এই ব্যাপারটা? ওকি রেগে গেছে? কিন্তু ওকে তোদেখলাম প্রচুর লজ্জা পেয়েছে! ধুর!!হাবলুটা কি ভাবার ভাবুক গিয়ে!আমার কি! আমি চিন্তা করব না আর!ছাগলটা বোঝেনা ওর প্রেমেপড়েছি! আর তাহলে এটাও বুঝবেনা,,হুহ।।.......................সকাল থেকেই মাথায় উদ্ভট চিন্তাআসছে! কিছু একটা করা দরকার।তানিকে যে করেই হোক প্রপোজ করব!ছিঃ কথাটা কেমন লাগছে! বউকেপ্রপোজ! ইয়াক!!! বউকে আদর করা যায়,ইয়ে করা যায়, চুলের মুঠি ধরেপিটানো যায় কিন্তু প্রপোজ? সে তোপ্রেমিকার জন্য!! কিভাবে তবেতানিকে প্রপোজ করব? আচ্ছা উদ্ভটকোন উপায় বের করলে হয়না? এই যেমনকষিয়ে ওকে ২ টা চড় দিলাম, তারপরবলব, বুঝোনা ভালবাসি?? কিন্তু এতেরিস্ক আছে, ও যদি ২ টার স্থানে ৪ টাদেয়! তবে তো হাত আর গাল থেকেনামবে না। আচ্ছা সাধু ভাষায় চিঠিলিখে দিই? এই যেমন, " ওহে প্রিয়া, তবহৃদয়খানি মোর হৃদয়খানিকে খান খানকরিয়া দিয়াছে, বালিকা, চাহিবামাত্র ইহাকে দিতে বাধ্য থাকিব! "না না, গুরুচণ্ডালী হলে সমস্যা হবে।একটা উপায় আছে! একটু ফাজিল টাইপসাথে রোমান্টিক টাইপের পদ্ধতিমিশিয়ে দিলে কেমন হয়? এটাই বেস্টহবে। হুম, কিন্তু কি করতে পারি? শাড়িকিনব ওর জন্য? কোন রঙ? ওর তো নীলপছন্দ! উমমম, নূপুর কিনি? একজোড়া!!,, আরকি করতে পারি? খুন্তি কিনে দিতেপারি! আচ্ছা, খুন্তি দিলে ও কিভাববে? কি ভাবতে পারে?? আচ্ছাআমি তো ওকে একটা আপেল দিতেপারি!মানে নিউটনের সুত্র বুঝিয়েআপেল দিব! হ্যা, পেয়ে গেছিসমাধান!!!! ওয়েট ফর দ্যা নাইট।...রাতের বেলায়,,.তানিকে কিছু কথা বলার জন্য ছাদেডাকলাম। আসতেছে বলল। আমিদাঁড়িয়ে আছি আর কি বলব সেটাভাবছি! ওইত এসে গেছে!- কি বলবে, বলো? ( তানি)- ব্যাপারটা হচ্ছে আপেল ( বিপ্লব)- মানে?- বুঝিয়ে বলি।আসলে এই আপেলটা আমার দাদারআঙ্কেল আমাকে দিয়েছিলেন।আসলে এটা ছিল নিউটনের মাথায়পড়া সেই আপেলটা। অবশ্য কথা এটা নয়,আমি তোমার জন্য কিছু গিফট এনেছিতানি। এক জোড়া নূপুর ও একটা নীলরঙের শাড়ি।- থ্যাংকস (তানি)- আর একটা জিনিস আছে, এই খুন্তি- এটা কেন?- তাহলে শোন, নিউটনের গতির ৩য় সূত্রঅনুযায়ী প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ওবিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।এক্ষেত্রে,আমি তোমাকেভালবেসে ফেলেছি অনেক আগেই,বলতে পারিনি, আজ বললাম আরতোমাকে আমি যে গিফট দিলাম তারমধ্যে নূপুর জোড়া যদি পছন্দ হয়, তবে এইখুন্তি দিয়ে কাল থেকে রান্না করো,আর নূপুর জোড়া পা থেকে খুলবে না।আর এসব যদি ভাল না লাগে, আরআমাকে তোমার পছন্দ না হয় তবেবিপরীত প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী তুমিশাড়িটা পড়বে আর খুন্তিটা দিয়ে যাইচ্ছা করবে। কিন্তু এতক্ষন যা বললাম সবকথার এক কথা হল, আমি তোমাকেআজীবন পাশে চাই, খুন্তি দিয়েরান্না করো আর যাই করো, বালিকাতোমায় পাশে চাই!!!- বাহ! ভালোই তো ছ্যাচড়ামি করতেশিখেছো দেখছি? নূপুর জোড়া ভাললেগেছে, সাথে শাড়িটাও, আরআপেল আমার খুব প্রিয় ফল, ওটা আমিইখাব! এখন বল, কি করব? শাড়ি পড়ব? নাকিনূপুর?- কনফিউজড!- আচ্ছা! এই নাও, তোমার জন্যকিনেছিলাম, পাঞ্জাবীটা- নীল পাঞ্জাবী!? ওয়াও থ্যাংকুম্যাম!- হুম, তারাতারি ঘরে এসো! আমিশাড়ি পড়ে রেডি হচ্ছি!- কেন? কি হবে?- (মাথা নিচু করে) জানিনা- বুঝেছি!!! বিড়াল মারতে হবে! ইয়াহু- যাহ দুষ্টু!!!.আজকে রাতে আমার রুমে গানবাজবে, হ্যা রাফার গান!" আমি আকাশ পাঠাব তোমার মনেরআকাশে... "

No comments:

Post a Comment