Wednesday, November 16, 2016

গল্প:ক্রিকেট পাগলী

গল্প:ক্রিকেট পাগলী
.
লিখা:Mridul Ahmed
.
.
মেয়েটার নাম মুন্নি।বাবার একমাত্র
মেয়ে।
বাবার বললাম কারন,মুন্নির জন্মের সময়
তার মা মারা যান।
তারপর আর মুন্নির বাবা বিয়ে করেনি।
কারন,সৎ মা যদি খারাপ ব্যবহার করে এই
কথা চিন্তা করেই একমাত্র মেয়েক নিজের
হাতে লালন পালন করে বড় করেছেন।
.
মুন্নি এবার ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে।
মেয়েটা যথেষ্ট শান্ত এবং ভদ্র।বাবার
কাঁরি কাঁরি টাকা থাকা সত্ত্বেও বিন্দু
মাত্র অহংকার নেই।
খুব সাধারন ভাবেই চলা ফেরা করে।
দেখে মনেই হবে না মেয়েটা ধনীর দুলালী।
.
মুন্নির একটা প্রিয় শখ হচ্ছে ক্রিকেট খেলা
দেখা।যেখানেই ক্রিকেট সেখানেই মুন্নি
হাজির খেলা দেখার জন্য।
হোক সেটা পাড়ার মাঠ কিংবা
স্টেডিয়ামে।
গত তিন বছরে বাংলাদেশের যতোগুলা
খেলা দেশের মাটিতে হয়েছে প্রত্যেকটা
খেলা মুন্নি গ্যালারিতে বসে দেখেছে।
টিভিতে সবসময় ক্রিকেটীয় চ্যানেল গুলাই
দেখে।এক কথায় ক্রিকেট পাগলী যাকে
বলে আরকি!!!
.
প্রতিবছরই মুন্নিদের গ্রামে ক্রিকেট
টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়।
মুন্নি মনে মনে ঠিক করলো এই বছর যে
টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ভালো খেলবে
তাকেই আমি বিয়ে করবো।যেকোন মূল্যেই
বিয়ে করবো।জোর পূর্বক হলেও তাকেই
বিয়ে করবো।
.
দীর্ঘ একমাস রাউন্ড,কোয়াটার এবং সেমি
খেলার পর আগামী বুধবার ফাইনাল খেলা
হবে।
খুব বড় সড় আয়োজন।
মাঠের চতুর দিকে মানুষ যাতে বসে খেলা
দেখতে পারে সেই জন্য চেয়ার এর ব্যবস্থা।
মাথার উপরে প্যান্ডেল সাজানো যাতে
রোদ পোহাতে না হয়।
টুর্নামেন্টটা পরিচালনা করেন মুন্নিদের
গ্রামের কিছু পঁয়সাওয়ালা লোকেরা।
মুন্নির বাবাও তাঁদের মধ্যে একজন।
.
সব জল্পনা কল্পনা শেষে আজ বুধবার।
মুন্নির বহু প্রতিক্ষিত দিন।
মুন্নির বাবা আজ প্রধান অথিতি।
যেই দুই দল ফাইনাল খেলছে তাদের নাম:
১.টেকপাড়া ক্রিকেট একাদশ
২.হাজিপাড়া ক্রিকেট একাদশ।
.
প্রথমে টসে জিতে হাজিপাড়া
ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন।৫০ ওভারে
হাজিপাড়া তিনটা ফিফটির সাহায্যে ২৭৬
রান করে।
টেকপাড়া ক্রিকেট একাদশের টার্গেট হলো
২৭৭ রান।
.
প্রথম ওভারেই টেকপাড়ার উইকেটের পতন।
তারপর ব্যাটিংয়ে আসেন টেকপাড়ার
নির্ভযোগ্য ব্যটসম্যান আশিক।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাচ্ছে
টেকপাড়া।
কিন্তু একটা প্রান্ত আগলে রেখেছেন
আশিক।
৬ষ্ঠ উইকেটে নামেন মৃদুল।
তখন দলের প্রয়োজন ৩ ওভারে ৩৪ রান।
মৃদুলের ছোট্ট টর্নেডো ইনিংসে(৯ বলে
২০)টেকপাড়া একাদশ শেষ বলে জয় নিশ্চিত
করে।
আর বরাবরের মতোই মৃদুল টুর্নামেন্টের
সেরা খেলোয়ার নির্বাচিত হন।
.
মৃদুলকে আগে বেশি একটা দেখেনি মুন্নি
এই গ্রামে।
মাঝে মাঝে পাড়ার মাঠে স্পেশাল কোন
খেলা থাকলে বল কিংবা ব্যাট হাতে
তাকে দেখা যেতো।
.
মুন্নি ভাবতে লাগলো মৃদুল তো আমাকে
চিনেই না।আগে তো তাঁর সাথে চিনা
পরিচিত হই।
পরদিন খবর নিয়ে জানতে পারলো মৃদুল
দরিদ্র পরিবারের সন্তান।
মৃদুলও ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে।
এখন পড়ালেখা নেই তাই বাবাকে কৃষি
কাজে সাহায্য করছে।
.
মুন্নি প্রতিদিন পাড়ার মাঠে খেলা
দেখতো আর মৃদুলের জন্য অপেক্ষা করতো।
কিন্তু মৃদুল আসতো না।
.
.
রুমে বসে টিভিতে খেলা দেখছিলো মুন্নি।
হাঠাৎ তার চাচাতো ভাই সৌরভের ডাক:-
.
»কিরে এমন গলা ফাটিয়ে ডাকতাছস কে?
.
»আপু আজকে বিকালে একটা খেলা আছে।
পাশের এলাকার টিমের সাথে।তুমি দেখতে
যাবা না?
.
»অবশ্যই যাবো।তুই ঠিক সময় রেডি থাকিস।
.
»আচ্ছা।
.
মুন্নির ভেতর কেমন যেনো একটা অনুভুতি
হচ্ছে।
এতোদিন মৃদুলের কথা ভাবতে ভাবতে
ছেলেটাকে ভালোবেসেই ফেলেছে।
আজ তার সাথে দেখা হবে।কারন,মৃদুল
স্পেশাল কোন খেলা হলে খেলতে আসে।
তার মানে আজও আসবে।
নাহ!আর ভাবতে পারছেনা মুন্নি।কখন যে
বিকেল হবে???
.
অবশেষে বিকেল হলো।মুন্নি যথাসময়ে
মাঠে উপস্থিত খেলা দেখার জন্য।
যথা সময়ে খেলা শুরু হলো এবং মৃদুলও
খেলছেন এই ম্যাচে।
তবে খেলা শেষে ফলাফলটা মৃদুলদের
বিপক্ষে অর্থাৎ পরাজয়।
খেলা শেষে বিষন্ন মনে সবাই বাড়ি
ফিরছিলো,মৃদুলও ফিরছিলো।পিছনে থেকে
মুন্নি ডাক দিলো:-
.
»এই যে শুনুন(মুন্নি)
.
»জ্বি হ্যাঁ,বলুন(মৃদুল)
.
»আপনার সাথে আমার কথা আছে!
.
»কি কথা?
.
»সেটা কাল বিকালে আমতলায় আসলেই
বুঝতে পারবেন।মনে থাকে যেনো!
·
»চেষ্টা করবো।
.
মৃদুল ভাবতে লাগলো মেয়েটা কি বলবে
আমাকে বা কি বলতে পারে?
কোন কিছুই মাথায় ঢুকছেনা মৃদুলের।
তাই ভাবলো কাল আমতলায় গেলেই নাহয়
জানতে পারবো।রাতে খাওয়া দাওয়া করে
ঘুমিয়ে পরলো।
.
পরেরদিন বিকালে দুজনেই উপস্থিত।প্রথমে
কিছুক্ষন নিরবতা।তারপর:-
.
»আপনাকে এখানে ডেকেছি কিছু গুরুত্বপূর্ন
কথা বলার জন্য(মুন্নি)
.
»আমিও আপনার কথাগুলো শুনার জন্যই কাজ
রেখে এখানে আসছি।এখন জটপট বলে ফেলুন
(মৃদুল)
.
»দেখুন আমি যথেষ্ট ক্রিকেট ভক্ত।এবছর
আমাদের গ্রামের টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার
আগেই আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি
এবার যে সেরা খেলোয়ার হবে তাকেই
আমি বিয়ে করে জীবন সঙ্গীনী বানাবো।
.
»মাথা ঠিক আছে আপনার?আমার আর
আপনার মধ্যে অনেক ব্যবধান।আপনার বাবা
জানতে পারলে আমাকে কচু কাঁটা করবে।
.
»মোটেই না।আমরা ধনী হলেও কোন
অহংকার নেই আমাদের।তাছাড়া আমি
বাবাকে যেটা বলবো বাবা সেটাই করবে।
.
»আপনি একটু বুঝার চেষ্টা করুন...
.
»আর কোন কথা নেই।এই কদিন আপনার কথা
ভাবতে ভাবতে আপনার প্রতি একটা মায়া
জন্মে গেছে।
.
»কিন্তু আমিতো আপনাকে চিনিনা
জানিনা...
.
»বিয়ের পরে চিনে নিবেন।কালকে
আপনাদের বাড়িতে আমার বাবাকে
পাঠাবো দিন তারিখ পাঁকা করতে।
.
»কি মুশকিলে পরলামরে।আগে জানলে এবছর
খেলতামই না।
.
»কোন চালাকি করলে পুলিশ দিয়ে পুরো
পরিবারকে উঠিয়ে এনে আপনাকে বিয়ে
করবো।
.
কথাটা বলেই মুন্নি চলে গেলো।
মৃদুল পরলো মহা টেনশনে।
রাতে খাওয়া দাওয়া না করেই ঘুমিয়ে
পড়লো।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মৃদুল দেখতে পেলো
মুন্নির বাবা আর তার বাবা বাড়িন্দায়
বসে জমিয়ে হাসি ঠাট্টা করছে।
তার মানে বিয়েটা ঠিক হয়ে গেছে!!!
এই দজ্জাল মেয়েটা তো আমার লাইফ শেষ
করে দিবে।
.
কি আর করা।বাবা মা ঠিক করেছেন।
অবশেষে বিয়েটা ধুমধাম ভাবেই শেষ হলো।
.
রাতের ঝামেলা শেষ করে বাসর ঘরে
ঢুকলো মৃদুল।
মুন্নি এসে সালাম করলো।
তারপর বললো:-
.
»কি সাহেব।বলেছিলাম না বিয়ে
তোমাকেই করবো।
.
»এখন খুশি?
.
»হ্যা খুশি তো বটে তবে আরও খুশি হবো
যদি আমাকে একটা ক্রিকেট টিম উপহার
দাও।
কথাটা বলেই দুষ্টু একটা হাঁসি দিয়ে
মৃদুলের বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো।
মৃদুলও জড়িয়ে ধরে কানে কানে বললো,আজ
থেকে শুরু হলো আমাদের পার্টনারশীপ।
ইনশাআল্লাহ কখনো ভাঙবেনা আমাদের
পার্টনারশীপ।ভালোবাসার মাঠে আমরা
দুজন অসাধারন সব ইনিংস খেলবো।আর
তোমাকে একটা ক্রিকেট টিম উপহার
দেবো।
কথাগুলো বলে মুন্নিকে আরও শক্ত ভাবে
জড়িয়ে ধরলো মৃদুল।

No comments:

Post a Comment