Sunday, November 6, 2016

****রাগী বউ****

****রাগী বউ****

পার্কে বসে আছি. সেই সকাল 10টা
থেকে ....(ঘড়ির দিকে তাকিয়ে 11.10)
ধুর আর বলবো না। মনে হচ্ছে 7/8ঘন্টা
কিন্তু ঘড়ি বলছে 1ঘন্টা। কারোর উপর রাগ
করে থাকলে মনে হয় সময় তাড়াতাড়ি
যায় না তাও যদি হয় নিজের বউয়ের
উপর তা হলে তো কথাই না। ভাবছেন
আমি কেন পার্কে এলাম? ।কেন?
পার্কে কি শুধু অবিবাহিতরাই আসবে।!!!?
তবে সহজে আসি না। এই যেমন আজকে
বউয়ের উপর রাগ করে বের হয়ে সোজা
পার্কে চলে এলাম। আচ্ছা আমি যে
বউয়ের উপর রাগ করে বাড়ি থেকে
চলে আসছি এ কথা আপনাদের বলতে
যাবো কেন? ও বুঝছি একটু শুনছেন এখন
পুরোটা শুনতে চাইবেন তাইতো। কি
আর করা বলছি। তার আগে আমার
পরিচয়টা দিয়ে দেই তা না হলে পরে আর
শুনতে পাবেন না। তখন শুধু আপসোস
করবেন। আমি আকাশ আর আমার যে বউ
আছে মানে দুনিয়ার এক নম্বর রাগীনি
মহিলা সে হচ্ছে নীতু। সারাদিন যে ভাবে
আমার উপর খবরদারি করে ওর অর্ধেক যদি
আমার মা করতো তাহলে হইতো আমার
নামটা বিল গেইটসের পরে থাকতো।
আপনারা হইতো আবার বলবেন
আপনাকে বেশি ভালবাসে বলে
হইতো বেশি শাসনে রাখে। আমারও
মাঝে মাঝে তাই মনে হয়। ধুর মিয়া
এটাকে আবার ভালবাসা বলে নাকি?
আচ্ছা আজকের সকালের ঘটনা শুনুন।
সরকার কি সুন্দর করে আমাদের মতো
চাকরিজীবিদের শুক্রবারে ছুটির
ব্যবস্থা করেছেন। একটু ঘুমানো বা ঘুরতে
বের হওয়ার জন্য কিন্তু ওনার কথা দেরি
করে ঘুমানো যাবে না। ওনাকে নিয়ে
বেড়াতে যেতে হবে, বাজার করতে
হবে, শপিং করতে হবে ..ইত্যাদি।
আল্লাহ বাঁচাওওওওওও। সরকার যদি
বুঝতো আমাদের ঘরের লক্ষী আমাদের
এভাবে খাটায় তাহলে হইতো ছুটি
বাদ দিয়ে দিতো ও কি যেন বলছিলাম
আজকের সকালের কথা ...সকালে কি
সুন্দর ফ্রেস মনে ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ
করে পানির ঝাপটা আমি উঠে
ছাদের দিকে তাকিয়ে আছি ছাদ
ফেটে পানি পরছে কিনা তা দেখার
জন্য কই ছাদতো ঠিকই আছে তাহলে
পানি আসলো কোথা থেকে? পাশে
তাকিয়ে দেখি বাংলার সিনেমার
রীনা খান জগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে
কিছু বলতে যাবো ওমনি বাজারের
ব্যাগ, বাজার লিষ্ট হাতে ধরিয়ে
দিয়ে বলল উঠো ফ্রেশ হয়ে নাস্তা
করে বাজারে যাও। এই বলে যাওয়ার
সময় দেখলাম একটা মুচকি হাসি দিয়ে
চলে গেল। রাগে বাসা থেকে চলে
আসছি আর আসার সময় ব্যাগটা ভুলে সাথে
নিয়ে আসছি কি আর করার ব্যাগ
পেতে আপনাদের সাথে গল্প করছি
তবে ওযে একেবারে আমাকে
ভালবাসে না তা নয়। আমার প্রতি খুবই
কেয়ার নেয়। এই ধরুন গত এক সপ্তাহে
সেভ হইনাই , আমাকে নাকি বনগরু
দেখাচ্ছিল তাই গতকাল সন্ধ্যায় কি
সুন্দরভাবে আমাকে সেভ করে
দিল এদিক থেকে আমাকে ভাগ্যবান
মনে করতে পারেন কারণ আমার মনে হয়
আমিই একমাত্র পুরুষ যে কিনা তার
বউয়ের কাছ থেকে সেভ করে নেই
তবে এর বিনিময়ে কিছু দিতে হয় এই
দাড়ান অন্য কিছু ভাববেন না আর
যেটা ভেবেছেন সেটা হয় কোন
ব্যাপার না আমি বলছি টাকা দিতে
হয়। তবে 20থেকে 30টাকা কারণ ও
জানে সেলুনে সেভ করানো
30টাকা ও একটা কথা আপনারা আবার
ওকে বলবেন না যে সেলুনে এখন সেভ
করানো 50টাকা প্লিজ আমার এ
ব্যবসাটা মাটি করবেন না তবে এ
টাকা আবার সপ্তাহ শেষে ঘুরানোর
সময় ফুসকার বিল দেয়। আপনারা
ভাবছেন ভাল এই জায়গায় ই তো সমস্যা।
যখন আমি বলব আজকে ঘুরতে যেতে
পারবো না টাকা পয়সা নাই তখনি
বলবে ঘোরার সময় রিক্সা বিল আর
খাওয়ার টাকা তো আমি দিই তুমি
কোন দিন দিসো নাকি। গেল লেটা
চুকে আমি যে অন্য কিছু খাওয়াই সেটা
এর ভিতরে হারিয়ে গেল। এই দাড়ান
তো মনে হচ্ছে ভুমিকম্প
হচ্ছে। ধুর মিয়ারা বলবেন তো যে
আমার ফোন টা ভাইব্রেশন করছে আমি
আবার ভাবলাম বউয়ের উপর রাগ করে
আসছি তাই হইতো ভুমিকম্প শুরু হলো। একি
এ দেখি আমার আম্মু ফোন
দিছে মারছে রে! সবাই বলে বউ
শাশুড়ির যুদ্ধ আর আমার বেলায় হলো বউ
আর শাশুড়ি মিলে আমার সাথে যুদ্ধ.
:আম্মু বলো (আমি একটু নিচু স্বরে)
:তাড়াতাড়ি রুমে আসো তোমার
সাথে কথা আছে।
যেখানে গেলে বাঘের ভয় সেখানে
গেলে রাত পোহায় আমার বেলায়
হলো তাই। বেলা 12.30 মিনিট একজন
আমার পছন্দের নীল শাড়ি পড়ে আমার
দিকে আসছে বুজতে পারলাম কে
আসছে তাইতো একটু রাগে অন্যদিকে মুখ
দিয়ে বসে আছি।
:এই ঠিকানাটা একটু বলবেন প্লিজ(নীতু)
আমি ওর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা
মনে করতে চেষ্টা করলাম (হ্যাঁ এই
শব্দটা ছিল তার আর আমার মাঝে প্রথম
বুলি। সেদিন টায় ঠিক আমি এখানে
বসে ছিলাম। তবে সময়টা ছিল বিকাল
বেলা ও এখানে ওর ফুফুর বাসায়
বেড়াতে আসছিল। পার্কটা রাস্তার
পাশে হওয়াতে ভিতরে এসে আমাকে
জিজ্ঞেস করছিল আমি অবশ্য বলছিলাম
এতো মানুষ থাকতে আমাকে কেন
জিজ্ঞেস করলেন? ওর বলছিল আমাকে
নাকি ওর বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছিল
ওর ফুফুর বাসা ছিল আমাদের বাসার
কয়েকটা বাসার পরে আমি ওকে
বাসায় পৌছে দিয়ে আসি তারপর
থেকে যা হওয়ার তাই প্রথম দেখাই
ভাল লাগলে যা হয় আরকি.)
:বললেন না যে (বউ)
আমি কাগজটা নিয়ে দেখলাম তাতে
লেখা আছে "আমি তোমাকে অনেক
জ্বালাতন করি, অনেক কষ্ট দেয় তাই
আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি
আজকে বাবার বাড়িতে চলে
যাবো.আমি চাই না কেউ আমার জন্য
কষ্ট পাক কিংবা বাসা ছেড়ে বাইরে
থাকুক. ভাল থেকো.নিজের প্রতি
খেয়াল নিও.আর আমাকে ক্ষমা করে
দিও."
আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম,
চোখ দুটো অনেক ফুলে গেছে মনে
হচ্ছে কতোদিন কাদঁছে তার ঠিক নাই.
ঠিকমতো যেন দাড়াতে পারছে না
.আমি
হাতটা ধরে পাশে বসালাম.
:আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে তো
(আমি)
:তাই বলেতো আমি কাউকে কষ্ট দিতে
পারি না.
:ভালবাসার মাঝে কিছু কষ্ট থাকতে হয়
তা না হলে ভালববাসা পূর্ণতা পায়
না.
:কিন্তু কষ্টটা বেশি হলে সেখানে
ভালবাসা থাকে না.চলো বাসায়.
আর কিছুক্ষন থাকি না একসাথে ভাল
লাগবে.
:কিন্তু আমার ভাল লাগবে না(একটু
রাগী ভাবে)
:ওকে চলো (এমনি বেশি রেগে আছে
তারপর আর বেশি রাগানো যাবে না.)
:আমি যতদূর জানি তুমি আজ অবধি কারর
উপর রাগ করে কোন দিন বাসা থেকে
চলে আসোনি.শুধু মাত্র আজ আমার উপর
রাগ করে চলে আসছো.ঠিক আছে ভাল.
আমি যখন এতোটাই খারাপ তাহলে এই
মানুষটা পাশে থাকার কোন অধিকার
নাই .
:সত্যিই কি তুমি চলে যাবে?
:হ্যাঁ.
আর কিছু বললাম না. ভাবলাম বাসায়
এসে সব ঠিক হয়ে যাবে তবে ওর
যেতের কাছে হেরে গেলাম. ও চলে
গেছে .বাসায় শুয়ে আছি কিছুই ভাল
লাগছে না.ভাবতে ভাবতে কখন যে
ঘুমিয়ে পরেছি জানি না.রাত 9টা
.টেবিলে দেখলাম ভাত রাখা. প্রচন্ড
ক্ষিধে থাকা সত্ত্বেও খেতে মন
চাইছে না.কিছু যেন মিছ করছি.
বিয়ের দুইবছর হলেও আমরা দুইজন কেউ
কোন দিন রাতে একে অপরকে ছাড়া
ঘুমাইনি. আজকে সকালে কেন যে এমন
করতে গেলাম নিজেরই এখন মারতে
ইচ্ছা করছে. ওর নাম্বারে ফোন দিলাম
দেখি ফোন অফ.না আর বসে থাকলে
আমার জীবনটাই তেজপাতা হয়ে
যাবে. বাইকটা নিয়ে বেরিয়ে
পরলাম. যা আছে কপালে. রাত
আনুমানিক সাড়ে এগারো কয়েকবার
হর্ণ দেওয়ার পর গেট খুলে দিল.ভিতরে
গিয়ে কলিং বেল চাপ দিলাম. একটু পর
শাশুড়ি আর শালিকা এসে দরজা খুলে
দিল.
:আস্সালামু আলাইকুম.ভাল আছেন (আমি)
:ওয়ালাইকুম আস্সালাম.ভাল. কেন যে
এই ছেলেমানুষে কর বুঝি না. তোমরা
কবে যে বড় হবে আল্লাহ যানে.
শালিকাকে কাছে ডাকলাম বললাম
তোমার আপুর কি অবস্থা?
:কারর সাথে কথা বলছে আর কিছুই
খাচ্ছে না.আচ্ছা আপনারা কি নিয়ে
ঝগড়া করছেন.?
:ও কিছু না.
:আমাকে একটু বলেন আমি না বিয়ের পর
ওর সাথে ঝগড়া করে বাসায় চলে
আসবো.
:এখনি এই অবস্থা যা ভাগ পার শুধু
পুরুষদের জ্বালাতে. আমি এখন ওর
রুমে.লাইট জ্বালিয়ে
দেখি অন্য দিকে ফিরে শুয়ে আছে.
:কেন আসছো এখানে?
:বাহারে আমি আমার বউয়ের ঘরে
আসবো নাকি অন্য কেউ আসবে শুনি.
:আমার এখানে কারর আসতে হবে না.
ওর হাত ধরে আমার দিকে ফেরালাম
(একটু রাগী ভাব নিয়ে পুরুষ মানুষ বলে
কথা)
তুমি ভাল করে জানো আমি তোমাকে
ছাড়া থাকতে পারবো না,তোমার
অবর্তমানে কিছু খাই না.তুমি জানো
তুমি চলে আসার পর প্রতিটা সেকেন্ড
আমার কিভাবে কেটেছে.এসময় টা
আমার কাছে কতো কঠিন মনে হয়েছে.
এর পরও তুমি যদি না বোঝো তাহলে
আমি কাউকে আর বুঝাতে চাই না.আর
সকালে যেটা হয়েছে তার জন্য
সরি.আর কোন দিন এমন হবে না.
:যখন আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে
না তবে ব্যথা দেওয়ার সময় মনে থাকে
না.আর তুমি কি মনে করো তোমাকে
ছাড়া আমি ভালই আছি. না এই
মেয়েকে আর কথা বলতে দেয়া যাবে
না.দেখা যাবে ওনার অভিমানের
কথা ফুরাতে ফুরাতে রাত শেষ হয়ে
যাবে তাও কথা ফুরাবে না(মনে মনে
বললাম)
যাক এখন আর কথা বলছে না মুখ
একেবারে বন্দ সাথে আমার টাও.না
বেশি ক্ষন থাকা যাবে না এভাবে
তাহলে অন্য কিছু হতে পারে. এখন মুখ
খোলা তবে কেউ কথা বলছি না একে
অপরকে জড়িয়ে ধরে আছি. ভাবছি
এভাবে যেন দুষ্ট মিষ্টিতে জীবন টা
পার করে দিতে পারি.
:ক্ষিধে পাইছে (আমি) ?
:হু(ওনি)
:কি খাবে আমি তো আজকে বাজার
করেনি.
:তোমার মাথা খাবো.
:ওমা তুমি আবার মানুষ খেকো হলে
নাকি?
:সেটা বাসায় চলো.বাসায় গেলে
দেখতে পাবে.
:তবে তাই হোক.
বের হতে যাবো তখনি.দুজনে ফ্রেস
হয়ে আসো সবাই একসাথে খাবো.আমি
টেবিলে খাওয়ার দিচ্ছি (শাশুড়ি
আম্মু) কি আর করা. খেয়ে বের হলাম.
আমি বাইক চালাচ্ছি আর ও আমাকে
জড়িয়ে ধরে বসে আছে. বাইকের
আয়নায় ওর চেহারাটা দেখা
যাচ্ছে.রোডের সোডিয়ামের নিয়ন
আলোয় ওকে
অনেক সুন্দর লাগছে.মনে হচ্ছে আকাশ
থেকে নেমে আসা নীল পরীকে
নিয়ে আমি বাসায় যাচ্ছি. এই নীল
পরীকে আবার প্রেমের
জালে জড়াতে হবে. ও ভাল থাকবেন
আপনারা. আমিও দোয়া করবো যেন
সবারই সুন্দর একটা বউ হয় আর যারা
অলরেডি কাজটা করে ফেলেছেন
তাদের বউ যেন তার স্বামীকে
অনেক ভালববাসে.

No comments:

Post a Comment