Saturday, November 5, 2016

আমার দিনলিপি।

আমার দিনলিপি।
.
.
আমার বিয়ে হয়েছে ৫ মাসের মত। আমি
ভালই এই সংসারে মানিয়ে নিয়েছি।
আমার শাশুরি এখন আমার আপন মায়ের মত
হয়ে গেছে। সেদিন ইচ্ছা করেই গিয়ে
বললাম মা দেখেন তো এই জামার বুতামটা
ছিরে গেছে একটু লাগিয়ে দেন এমন না যে
আমি বুতাম লাগাতে পারি না। আসলে এই
কাজটা করলাম এতে শাশুড়ি মনে করবে
আমি তাঁকে সব কাজে প্রাধান্য দেই তখন
আর সে আমাকে তার প্রতিপক্ষ মনে করবে
না।মনে করবে তার অনুগত। আর মুরব্বিদের
কাছে ছোট হতে লজ্জার কিছু নেই।এতে
আমি কোন ভুল করলেও সে আমার সাথে
চিল্লা চিল্লি করবে না বরং সঠিক কাজটা
করতে সাহায্য করবে। এই বুদ্ধি আমার
স্বামী আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে
বোকাটার বুদ্ধি ভালই কাজ করছে।
.
আম্মা সাথে সাথে রাগে গজগজ শুরু করল
সেটা আসলে খুশির রাগ। বলল আরে কি যে
কর তোমারা এই বয়সে কি আমি চোখে
দেখি এখন কি আর এই গুলো পারি? কিছু
শিখলা না। নেও সুইয়ে সুতাটা সুয়ে গেথে
দেও। সে বুতাম লাগায় আর দুনিয়ার গল্প
করে কি করে এই সংসার সামিলিয়েছে
সেই গল্প। আমি বসে বসে শুনি ভালই লাগে
এমন অনেক কাজ আছে আমি একা করতে
পারি কিন্তু তা আমি আমার শাশুরি কে
নিয়ে করি তাতে সে অনেক খুশি হয় কিন্তু
ভাব দেখায় অনেক বিরক্ত হইছে ।
.
আমার অদ্ভুত স্বামী মাঝেই বাইরে থেকে
ফল নিয়া আসে । মজার ব্যাপার হল সে কখন
ফল নিয়ে আমাদের রুমে ঢুকে না বাইরে
খাবার টেবিলে রেখে দেয়। আরেকটা
ব্যাপার হল কেউ ঐখান থেকে নিজের হাত
দিয়ে কিছু নিবে না শুধু মাঝে মাঝে
আমার ননদ দুই-একটা নেয়।তাই আমি সব সময়
ভাগ করে দেই। একদিন বোকাটা আমাকে
জড়িয়ে ধরে ( স্বামী) বলে সবাইকে ভাগ
করে দেও ভাল কথা কিন্তু মা-বাবা কে যা
দিবে তার সাথে একটা কেটে দিবে এতে
তারা অনেক খুশি হবে এবং সামনে থেকে
বসে তাদের খাইয়ে দিয়ে আসবা এতে
তারা তোমার উপর অনেক খুশি হবে।আর
আমার বউয়ের উপর কেউ খুশি হলে আমিও
অনেক খুশি হব।
তারপর থেকে ও কোন ফল আনলে আমি
সাথে সাথে বাবা-মা কে কেটে দিতাম
যদিও মুখে তারা কিছু বলত না কিন্তু
চেহারা দেখলেই বুঝতাম তারা অনেক খুশি
হয়েছে।বাবা সাধারণত কম কথা বলে সেও
একদিন বলে দেখি মা হা করত বলে আমার
মুখে একটা আপেলের টুকরা ভরে দিল। ইস
এইভাবে আমার বাবা আমকে খাইয়ে দিত।
অনেক দিন পড়ে সেই কথা মনে পড়ে গেল
নিজের অজান্তেই চোখটা ভিজে গেল ।
সম্মান্য একটা আপেলের টুকরা
খাওয়ানোতে এত মায়া থাকতে পারে
আগে জানতাম না।
.
এই বাসার লোক গুলাও খুব অদ্ভুত আমাদের
বাসাটা ৩ তালাতে । একটা বাচ্চা ছেলে
ময়লা নিতে আসে বাসয় প্রতিদিন । ঐ
বাচ্চাটা যখনই আসত দেখতাম আমার
শাশুরি বা কাজের মেয়েটা , তাঁকে একটা
কিছু না কিছু খেতে দিত । যেমন একটা
বিস্কুত বা কলা , বা একটা আপেল দিত
মানে হাতের কাছে যখন যা থাকত আর কি।
ছেলেটাকে এই সামান্য জিনিষ পেয়ে
ছেলেটা যে কি পরিমাণ খুশি হত সেটা
লিখে প্রাকাশ করা সম্ভব না।।
.
আমার স্বামী হচ্ছে উপদেশের ভাণ্ডার
প্রতিদিনি কিছু না কিছু উপদেশ দিত তবে
আমি কিছু বলতাম না কি দরকার একটা
ঝামেলা করার তার দেওয়ার দরকার দিক
আমি আমার মতই আছি । আমার সব চেয়ে
সুখের সময় হল রাতে খাওয়ার পড়ে ।। ওর
স্বভাব হল প্রতিদিন রাতে খাবার খাওয়ার
পড়ে এক মগ চা অথবা কফি খাবে
বারান্দায় বসে বসে। বারান্দায় একটা দুই
জনে বসার মত সোফা আছে । বসলে এক
জনের সাথে একজনের গাঁ লেগা যায় । আর
আমি সারাদিন এই সময় টার অপেক্ষায়
থাকি। ঐ সময়টা আমি ওকে জড়িয়ে ধরে
বসে থাকি।
.
গতকাল বলে দেখ কোনদিন কারটা দেখে
হিংসা করবে না। যেমন মনে কর কাউকে
যদি আমি ২ টাকার একটা জিনিষ কিনে
দেই সেটা দেখে কখন বলবা না যে আমাকে
৩ টাকারটা দেও। দেখবে তোমার কি লাগে
সেটার দাম যাই হোক ১ টাকাও হতে পারে
আবার ৫ টাকাও হতে পারে।টাকা দিয়ে
মূল্য পরিমাপ করবে না করবে প্রয়োজন
দিয়ে । তুমি সব সময় দেখবে তোমার যা
লাগবে সেটা তুমি পেয়েছ কি না? আরেক
জনেরটায় নজর দিলে কোন দিন সুখি হতে
পারবা না । নিজের চাহিদা মিটে গেলে
অফ যাও আরেক জনের চাহিদা দেখে কখন
নতুন চাহিদা করবে না।
.
আমি মনে মনে বলি ইস বোকাটা বলে কি
আমার স্বামী আমাকে ১ টাকার জিনিষ
দিবে আরেক জনকে ৩ টাকারটা দিবে আর
সেটা আমি মনে নিব এতই সহজ । আমি কেন
কোন মেয়ের পক্ষেই সেটা মেনে নেয়া
সম্ভব না কোন দিন না । মনে মনে
প্রতিজ্ঞা করলাম যাকে আমার থেকে
বেশি দামি জিনিষ কিনে দিবে তার
কল্লা নামিয়ে ফেলব।আমার বিলাই আর
আমারেই বলে ম্যাও। ইস এই সংসারে এসে
কিছু পাইলাম না আমার জীবনটাই শেষ
হয়ে গেল সেই গত মাসে একটা শাড়ি কিনে
দিছে আর দেওয়ার কোন নাম গন্ধও নাই ।
বেশি তেরি বেরি করলে বাপের বাড়ি
চলে যাব । আমার ছোট বোনটারে এখন ভাল
কিছু কিনে দেয় নাই । আর উনি আসছে
আরেক জনেরে দামিটা কিনে দিতে ......
হাতেম তাই হইছে । আজকে থেকে ওর চা-
কফি খাওয়া বন্ধ ।।

No comments:

Post a Comment