Wednesday, November 16, 2016

"ঘুমন্ত পরী"

"ঘুমন্ত পরী"
_
লেখকঃ Arif Jahan Shishir(অনিকেত প্রান্তর)
_
_
অবনী ঘুমানোর জন্য বিছানা রেডি করে
শুয়ে পরতেই। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে।
অবনী ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সেই
চিরচেনা নাম্বার। ফোনটা একবার বাজতে
বাজতে কেটে যেতেই দ্বিতীয় বার ফোনটা
কানে তোলে। দ্বিতীয় বার ফোন ধড়া
নাকি এটা অবনীর স্টাইল। অবনী ফোনটা
কানে তুলেই।
_ কি বলবে তাড়াতাড়ি বলে ফেলো। আমার
অনেক কাজ পরে আছে।
_ "আমি তোমার কাছে একটা জোৎসনা ভরা
রাত চাই। তুমি একটা সাদা শাড়ী পরে
আমার পাশে এসে দাঁড়াবে। তোমার
খোলা চুল বাতাস এলোমেলো করে দিবে।
তোমার চোখে মুখে তোমার অবাধ্য চুল
গুলো এসে ভিড় করবে। তোমার চুলের
ঝাপটা কিছুটা আমার গালেও পড়বে। শীতল
সুখদায়ক বাতাসের উপরে কিঞ্চিৎ বিরক্ত
হবে তুমি। দু একটা কথার মাঝে তুমি হাসতে
হাসতে ভেঙে পরবে। তোমার হাসির শব্দ
আমার বুকের ভিতরে ফেনীল ঢেউ এর মতো
আছড়ে পরবে। এমন একটা জোৎসনা ভরা
রাতের সঙি হবে আমার?"
.
অবনী চুপ করে আছে! কি বলবে বুঝতে পারছে
না। অবনী সিরিয়াস রাগী একটা মুড নিয়ে
থাকে। যখনি ছেলেটা ফোন দিবে ওমনি
ঝাড়ি দিয়ে ছেলেটা ভাব ছুটিয়ে দিবে।
প্রতিবার এরকম ভাবে সিরিয়াস মুড নিয়ে
কথা বলতে চায় অবনী। কিন্তু ছেলেটার
প্রথম কথা গুলোতেই গলে যায় অবনী।
নিমিষেই ঝাড়ি গুলো ছেলেটার প্রতি
ভালবাসা জন্ম নেয়। কিন্তু আজ অবনী
সকাল থেকে ঠিক করে রেখেছে আজ তাকে
যতোই মন গলানো চেষ্টা করুক কিছুতেই
ছেলেটাকে সফল হতে দিবে না। আজ তাকে
ঝাড়ি দিবেই। অবনী একটু চুপ থেকে
সিরিয়াস একটা ভাব এনে রাগী গলায়
বলো।..
_ শুনো তোমার এই ন্যাকামো কথায় আমার
মন আজ ভুলাতে পারবেনা বলে দিচ্ছি।
অপর প্রান্ত থেকে হাসির শব্দ শুনা গেলো।
অবনী ভেবে পায়না সে কি এমন হাসির
কথা বলছে যে তার হাসতে হবে। অবনীর
ইচ্ছা করছে এক গুছা চুল তার মুখের ভিতরে
ঢুকিয়ে দিতে। তারপর দেখবো এতো হাসি
কোথায় থেকে আসে। অবনীর আরেকটা
দুর্বল পয়েন্ট হলো। অবনী যে মানুষ টার
উপড়ে রাগ করেছে সেই মানুষটা যদি হেসে
দেয় তাহলে অবনী সব রাগ ভুলে অবনীও তার
সাথে হাসবে। অবনী এই মুহূর্তে নিজের
হাসি আটকে রাখতে নিজের ঠোট কামড়ে
ধরে প্রাণপণ চেষ্টা করছে হাসি আটকে
রাখতে। অপর প্রান্ত থেকে ছোট একটা
কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বললো।
_ প্রতেকটা নারী কে সব সময় সুন্দর লাগে
না। কাউ কে বা সকালের মিষ্টি আলো তে
সুন্দরী লাগে। কাউ কে দুপুরবেলার, দুপুরের
ঝলমলে রৌদ্রের মতো সুন্দরী লাগে। আবার
কাউ কে বিকেলের সূর্যের লাল আভা তার
মুখে পরতেই তার সৌন্দর্য উপচে পরে।
তোমাকে কখন সবচাইতে বেশি সুন্দর লাগে
বলবো?
_ হুঁ।
_ তুমি যখন রাগ করে, নিজের হাসি আটকে
রাখতে দাঁত দিয়ে ঠোট কামড়ে ধরে হাসি
আটকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করো তখন
তোমাকে দেখতে অসম্ভব সুন্দরী লাগে।
মনে হয়! যেন জলের মধ্যে মিশে থাকা জল
রঙ আলো।
অবনী এবার সত্যি সত্যি হেসে ফেলে।
অবনী ভাবে এই বজ্জাত ছেলেটা একটু রাগ
করেও থাকতে দিবেনা। এভাবে কেউ কারও
প্রশংসা করে? ইসস এখন নিজের মাঝেই
কেমন লজ্জা লাগছে। একটু চুপ থেকে অপর
প্রান্ত থেকে আবার বলে।
_ খুব রাগ করে ছিলে বুঝি?
_ হুঁ! রাগ করে থাকবো না? সারা দিন
একবার নিজে থেকে খবর নিছো?
_ আমার এতো ব্যস্ততা কার জন্য? আমাদের
পরিবারটাকে সুন্দর রাখার জন্য। আমাদের
ঘর আলো করে রাজকন্যার মতো একটা
মিষ্টি মেয়ে আসবে। তখন আর তোমার
সারাদিন একা একা লাগবেনা। ওকে নিয়ে
এতো ব্যস্ত হয়ে পড়বে যে আমার দিকে ঠিক
মতো তাকানোর সময় পাবে না।
কথা গুলো শুনতে শুনতে অবনীর মাঝে সুখময়
অনুভূতি গুলো এসে ভিড় করে। ঠোটের কণে
মিষ্টি হাসি। স্বপ্ন গুলোর কথা ভাবতে
ভাবতে অবনীর চোখে তন্দ্রা চলে আসে।
চোখ বুজে তলিয়ে যায় স্বপ্নের রাজ্যে।
অপর প্রান্ত থেকে এখনো বকবক করেই
যাচ্ছে ছেলেটা। ছেলেটা ঠিকি বুঝতে
পারে অবনী ঘুমিয়ে গেছে। ছেলেটা
ফোনটা রেখে বেড রুমে এসে দেখে। অবনী
ফোনটা কানের রেখেই ঘুমিয়ে গেছে।
ঠোটে কণে হাসিটা লেগেই আছে।
জানালা দিয়ে কিঞ্চিৎ জোৎসনা এসে
পড়েছে অবনীর মুখে। মনে হচ্ছে একটা ঘুমন্ত
পরী ঘুমিয়ে আছে। এতখন অবনী যে
ছেলেটির সাথে কথা বলছিল সে ছেলেটি
আর কেউ নয় আমি। আর অবনী আমার স্ত্রী।
অবনীর সাথে হঠাৎ করেই পারিবারিক
ভাবে বিয়ে হয়ে যায়। দুজন দুজনা কে শুধু
একনজর দেখেছিলাম। আমাদের আলাদা
ভাবে কথা বলার কোন সুযোগ দেওয়া
হয়েছিল না। বিয়েটা হয়ে গেলো। রাত্রে
বাসরঘরে ঢুকে অবনীর পাশে বসতেই
মেয়েটা চিৎকার করে বললো।
_ একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন
না। যদি আসেন তাহলে শরীর পাবেন তো
মন পাবেন না।
একদম বাংলা সিনেমার ডায়লগ। আগে
যানতাম এসব সিনেমাতে হয়। এখন দেখছি
রিয়ালিটি তেও হয়। তাও সেটা আমার
সাথে। আমি একটু কাতর সুরে মুখ কাছুমাছু
করে বললাম।
_ দুটোই পেতে হলে কি করতে হবে?
মেয়েটা এক টান দিয়ে ঘোমটা সরিয়ে
আমার গাঁ ঘেসে বসে বললো।
_ দুটো পেতে হলে আগে আমার সাথে প্রেম
করতে হবে।
আমি অবাক চোখে মেয়েটার দিকে
তাকালাম। মেয়েটার কথায় প্রথমে
ভেবেছি বয়ফ্রেন্ড আছে হয় তো। মেয়েটি
মিটমিট করে হাসছে। তারপর আরেকটু কাছে
এসে আমার হাত ধরে বললো।
_ আমার বান্ধুবী গুলো সবাই কম বেশি
একটা দুটো করে প্রেম করতো। আমিও
প্রপোজ পাইনি তা কিন্তু না? আমার
একটাই স্বপ্ন ছিলো আমি আমার স্বামীর
সাথে বিয়ের পর প্রেম করবো। থাকবেনা
কোন হারিয়ে যাওয়ার ভয়। নির্ভয়ে যেন
তার পাশে বসে মন খুলে কথা বলতে পারি।
করবেন আমার সাথে প্রেম?
মেয়েটা কথা গুলো বলেই আমার দিকে
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি
মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম।
_ হুঁ! প্রেম করতে পারি। যদি আমাকে তুমি
করে বলতে পারও।
মেয়েটি আমার হাত শক্ত করে ধরে হেসে
দিলো। মেয়েটার হাসির মাঝে বিশেষ
একটা গুণ আছে। এই ধরণের হাসি দিকে
একবার কেউ তাকালে নিশ্চিত প্রেমে পরে
যাবে। আমিও প্রথম দিনেই মেয়েটার
প্রেমে ডুব দিলাম। তারপর অবনী আমাকে
শিখিয়ে দিলো কিভাবে প্রেম করতে হয়।
একি বাসায় থেকে দুজন দু রুম থেকে ফোনে
কথা বলা। একটু লুকোচুরি করে দেখা। এই
মুহূর্তে জানালা দিয়ে চাঁদের আলো
অবনীর মুখে পরে অবনীকে বড্ড মায়াবী
লাগছে। আমি অবনীর দিকে ঘোড় চোখে
তাকিয়ে আছি কিছুতেই দৃষ্টি সরাতে
পারছিনা।

No comments:

Post a Comment