Wednesday, November 16, 2016

গল্প: পাগলামি

গল্প: পাগলামি

-এই ওভাবে চলে আসলে কেন তুমি?
-নিশ্চুপ।
-জান সবাই কত কি বলাবলি করছিল।
-নিশ্চুপ।
-তুমি কিন্তু খুব ভাগ্যবান জান নিশার মত
একটা সুন্দরী পরী মেয়ে তোমাকে এখনো
ভালবাসে।
-মায়া প্লিজ থাম।
-কেন থামব?তুমি দেখনি ওর চোখের কোনে
ভালাবাসার অশ্রু জমেছিল টুপ টাপ
ঝরছিল।
-প্লিজ মায়া এসব বাদ দাও।আমি যদি
জানতাম ও ওখানে আসবে আমি কখনই.....
-তুমি কখনই কি বল?থামলে কেন?
-বিশ্বাস কর আমি কখনই ওখানে যেতাম না
এমন কি তোমাকেও নিতাম।
-উহু তুমি এটা কখনই করতে পারবে না।
-পারব না মানে কি?
-কারনটা হচ্ছে তুমি অনেকটাই দুর্বল।
-হোয়াট?
-আচ্ছা শুভ্র তোমার নিশাকে দেখে এতটুকুও
কষ্ট হয়নি?যদিও অবাক হয়েছিলে বহুদিন পর
ওভাবে নিশাকে দেখে।মেয়েটা অনেকটা
পাল্টে গেছে আগের থেকে অনেক সুন্দরীও
হয়েছে।
-আগের থেকে মানে তুমি ওকে আগে থেকে
কিভাবে চিন?
-আগে থেকে চিনিনা তবে ওর একটা ছবি
তোমার ডায়েরীতে দেখেছিলাম।সরাসর
ি দেখার খুব ইচ্ছে ছিল।সত্যিই মেয়েটা
অনেক সুন্দর আমার থেকেও অনেক।
-ও মোটেও তোমার থেকে সুন্দর নয়।প্লিজ
মায়া ওই বিষয়টা আর না উঠালেই ভাল হয়।
-একটা ব্যাপার কি তুমি বুঝতে পেরেছ শুভ্র?
-কি?
-মেয়েটার সাথে যখন তোমার বন্ধুরা
আমাকে পরিচয় করে দিয়ে বলল আমি
তোমার স্ত্রী।ও উইশ করতে গিয়ে গলাটা
কেমন ধরে এসেছিল,মনে হচ্ছিল এই বুঝি
কেঁদে দিবে কিন্তু কান্নাটা চেপে গেল।
-সে কাঁদল কি হাসল সেটা দেখার কোন
প্রয়োজন বোধ করিনা।
-তুমি না করতে পার কিন্তু আমি একটা
মেয়ে আর একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা
মেয়ের দুঃখ আমি বুঝি।
-তুমি কি বুঝাতে চাইছ বলত?
-এইযে নিশা তোমাকে সত্যিই খুব
ভালবাসে শুভ্র।ওর চোখের পানির মূল্য
দিতে তুমি বাধ্য।
-কি বলতে চাইছ কি তুমি?
দেখ শুভ্র নিশা হয়ত একটা ভুল করেছে না
বুঝে কিন্তু তুমি তো বুঝ তুমি কেন ভুল
করবে।
-তুমি কি বলতে চাইছ বলতো?
-তুমি দেখেছ শুভ্র নিশার চোখের দিকে
তাকিয়ে কতটা শুদ্ধতম ভালবাসা জমে
আছে তুমি ছচুঁয়ে দিলেই যেন টলে পড়বে।
-উফফ মায়া এসব বলার মানে কি?কতবার
বলব ওর কি হল না হল সে ব্যাপারে ভাবার
কোন ইন্টারেস্ট আমার নেই।
-শুভ্র একবার ভেবে দেখ ও আজ ভীষন অসহায়
শুধু পাশে থাকার মত একটা সম্বল খুঁজছে ও।
আর সেই সম্বলটাই হচ্ছ তুমি।
-আমি?
-হ্যা তুমি।তুমি চাইলেই কিন্তু ওর হাতটা
ধরতে পার।নতুন করতে বাঁচতে শেখাতে পার
মেয়েটাকে।
-তুমি কি পাগল হয়ে গেছ মাথা ঠিক আছে
তোমার?
-হ্যা আমার সব ঠিক আছে শুধু তুমি ঠিক নেই
তাই তোমাকে ঠিক হতে হবে।
-মায়া ভুলে যাচ্ছ তুমি আমার স্ত্রী।আমার
উপর তোমার সম্পূর্ন অধিকার আছে।তোমার
সকল দায় দায়িত্ব আমার।আর তাছাড়া
ওরকম একটা মেয়ে যে কিনা আমাকে নিয়ে
খেলেছে তার জন্য তুমি এতটা ভেবে
ফেলেছে।মায়া প্লিজ তুমি চুপ যাও।ভুলে
যাও আজকের দিনটা।
-কি করে ভুলব বল।নিরীহ মেয়েটার
কান্নামুখটা ভেসে ওঠে বারবার।দেখ
আমার তো সব আছে।অনেক কপাল নিয়ে
জন্মেছি তাই তোমার মত একজন আদর্শ
স্বামী পেয়েছি। আমার বাবারও অঢেল
সম্পত্তি বাকি জীবনটা তোমার স্মৃতি
আকড়ে সুখেই থাকব।কিন্তু ও তো অসহায়
প্লিজ তুমি ওর পাশে গিয়ে দাড়াও।
-মায়া এবার কিন্তু সত্যি সত্যিই বেশি হয়ে
যাচ্ছে।
-প্লিজ শুভ্র আমার একটা কথা রাখ।আমি
জানি তুমি আমাকে ভীষন ভালবাস।আর
সেই ভালবাসার জন্যে হলেও তুমি ওকে
নিজের করে নাও।
-মায়া তুমি খুব ভালভাবেই জান এটা কখনও
সম্ভব নয়।তাছাড়া বাইরের একটা মেয়েকে
নিয়ে নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য করার
কোন প্রশ্নই ওঠেনা।যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
-প্লিজ শুভ্র আমার এই কথাটা অন্তত রাখ।।
(হাত ধরে ফেলেছে)
-মায়া ফ্রেশ হতে যাও।
-না আমি কিছুই করবনা আগে বল তুমি ওর
পাশে দাড়াবে।
-মায়া পাগলামীর একটা সীমা আছে।
-শুভ্র আমার দিকে তাকাও।আমি জানি
তুমি এখনও ওকে ভালবাস প্লিজ....
-মায়া হাত ছাড়।
-ছাড়বনা আগে বল...
-ঠাশ.....
একটা থাপ্পড় মারলাম কিছুক্ষন ওর চোখের
দিকে তাকিয়ে আছি।ওর চোখের মাঝে
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি হিংসা ভালবাসা
আবেগ একেবারে মিলেমিশে একাকার হয়ে
অশ্রুতে ভরে উঠেছে....
-প্লিজ শু.....
এক মুহুর্তও দাড়ালাম না।সোজা গিয়ে
ওয়াশরুমে ঢুকলাম।আমি জানি মায়া যে
কথাগুলো বলছে একপ্রকার উদ্বেগ আর
উত্তেজিত হয়েই বলছে।আদৌ কি সম্ভব
সুন্দর বর্তমানটাকে আড়াল করে কুৎসিত
অতীতটাকে প্রকাশ্যে দাড় করানো।কোন
ব্যাক্তি সজ্ঞানে হয়ত কখনই চাইবেনা।
আমি জানি আমার স্ত্রী মায়া অনেক
সুন্দর নিশা তার ধারে কাছেও পড়েনা।
সেটা হোক মনের দিক থেকে হোক শরীরের
উজ্জলতার দিক থেকে।তবু আমি ওই
শারিরীক উজ্জলতাকে কখনও চাইনি।আমি
জানি মায়ার মত বউ পাওয়া অনেক ভাগ্যের
ব্যাপার।ও আমার এমন একটা লক্ষী বউ যে
কিনা তার স্বামীর প্রথম প্রেমের
কাহিনী ডায়েরীতে পড়েও স্বভাবে একটুও
কাঠিন্যভাব আনেনি কখনও।এই নিশা
মেয়েটা আমার একটা কুৎসিত অতীত বটে।
হ্যা আজ থেকে তিনবছর আগে নিশা
মেয়েটা এসেছিল আমার জীবনে।
মেয়েটাকে এত বেশি ভালবাসতাম যে
ভালবাসার মোহে অন্ধবিশ্বাস করতাম।
জীবনের প্রথম ভালবাসাটা ভেবেছিলাম
হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করব।কিন্তু সেই
বিশ্বাসের হৃদয়টাকে ওরকম নৃশংস
মেয়েটার ছিড়ে ফেলতে একমূহুর্তও সময়
লাগবেনা স্বপ্নেও কল্পনা করিনি।জীবনের
সবথেকে প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে
পেলাম বিশ্বাসঘাতকতার আঘাত।হ্যা
নিশা আরো কয়েকটি ছেলের সাথেও
এডিক্টেড ছিল।যখন বুঝতে পারি তখন
আমার আর ফেরার উপায় ছিলনা।এতটাই
দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম যে নিজেকে
কিছুতেই বুঝাতে পারছিলাম না আমি
বাস্তবে প্রতারনার শিকার।যে ব্লেড হাত
দিয়ে ধরতে ভয় লাগত সেই ব্লেড দিয়ে
নিজের হাতের রক্ত বের করেছি।নিজের
চোখকে বিশ্বাস করাতে পারিনি আমি
অবিশ্বাস আর মিথ্যা মায়ার কাছে হেরে
গেছি।নিশাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম
এমনটা কি না করলেও হতনা?প্রতিদানে
পেয়েছিলাম ভর্ৎসনার একটা হাসি।সেই
থেকে নিজেকে নিজের ঘৃনা লাগত।আব্বু
আম্মু বিষয়টা খেয়াল করে তাই পড়াশুনা
চালানো অবস্থায় মায়ার মত একটা মিষ্টি
পরীকে এনে দেয় আমার জীবন সঙ্গিনী
করে।সত্যি মেয়েটা অনেক জাদু জানে।
প্রথমে যখন নিশাকে ভুলতে পারিনি
মেয়েদের প্রতি একটা ঘৃনা জন্মে উঠেছে
ঠিক তখনই মায়া আসে আর সবথেকে খারাপ
ব্যাবহারটাই ওর সাথে করতাম।মেয়েটা এত
লক্ষী যে সবকিছু সহ্য করে আশা রাখত হয়ত
একদিন ঠিকই আমি বুঝতে পারব ওকে।হ্যা
আমি বুঝতে পেরেছি সবাই এক হয়না
পৃথিবীতে ভালবাসা বলে একটা পবিত্র
বন্ধন আছে আর এই বন্ধনটা আমি বুঝতে
পেরেছি শুধু মায়া পাশে ছিল বলে।আর
সেই কালো অতীতটা ভুলিয়ে যে আমাকে
সুন্দর একটা জীবন উপহার দিয়েছে আমি
কিনা তাকেই ভুলে যাব।এটা কখনই সম্ভব
নয়।আমি জানি নিশা তার ভুল বুঝতে
পেরেছে।তাই সে অনুতপ্ত কিন্তু এই নয় যে
আমার সুখের জীবন ভেঙে তার সুখ এনে
দিব।
.
আজকে সন্ধ্যায় আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড
অভীকের জন্মদিন ছিল।মায়াকে নিয়ে
গিয়েছিলাম সেখানে।আমি যদি ভুলেও
জানতাম এই সুন্দর সন্ধ্যায় আমার জীবনের
কালো অতীতটা হাজির হবে আমি কখনই
যেতাম না।আমাকে না জানিয়েই
নিশাকে ইনভাইট করা হয়েছিল।কারন
নিশা আমাদের ক্লাসমেট ছিল।যদিও
বাইরে গিয়েছিল কিছুদিন হল দেশে
এসেছে তাই ইনভাইট করেছে।এক পর্যায়ে
মায়ার সাথে ওরা নিশাকে পরিচয় করিয়ে
দিল।খেয়াল করেছিলাম নিশা একদৃষ্টিতে
আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।চোখের কোনে
পানিও জমেছিল হয়ত অনুতপ্ত হয়ে।কিন্তু
একদিন আমিও ঠিক এভাবেই চোখের পানি
ঝরিয়েছি কেউ দেখেনি।মায়া যেহেতু
ডায়েরী পড়েছে পুরানো ছবি দেখেছে
সেহেতু চিনতে বেশি কষ্ট হয়নি তাই একটু
ইতস্তত বোধ করছিল।কাজের অজুহাত
দেখিয়ে তাড়াতাড়ি চলে এসেছি ওখান
থেকে।কিন্তু বাসায় এসেই তো আমার
আবেগী বউ জন দরদী হয়ে উঠেছে।আমি
জানি ও যে ভীষন অভিমানী অভিমানে
কথাগুলো বলেছে।যদিও ওর কথাগুলোর
পিছনে যথেষ্ট যুক্তি আছে।কিন্তু ও কেন
বুঝছেনা ওকে আমি বৃদ্ধগাছ যেভাবে মাটি
আকড়ে বাঁচে সেভাবে আকড়ে বেঁচে আছি।
মাথাটা প্রচন্ড গরম হল বিয়ের পর এই
প্রথমই ওর গায়ে হাত তুললাম।আমি জানি ও
আমাকে এই নিয়ে কিছু বলবেনা।কিন্তু
যতক্ষন ওর মাথা থেকে নিশা ভুতটা না
নামানো যাবে অভিমানে ও যা কিছু করতে
পারে।
.
কিছুক্ষন পর রুমে ঢুকলাম.....
-কি ব্যাপার মায়া তুমি ল্যাকেজে কাপড়
ঢুকিয়ে নিচ্ছ কেন?
-আমার যাবার সময় হয়ে গেছে।
-মানে কি মায়া এই আমার দিকে তাকাও?
-হ্যা বল।
-কি হচ্ছে কি এসব তুমি কি সত্যি সত্যিই
পাগল হয়ে গেছ?
-শুভ্র তুমি নিশাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব
বিয়ে করে ফেল।
-মায়া তুমি কিন্তু আবার থাপ্পড় খাবে।
-মার না মার বড় তৃপ্তি আছে তোমার
হাতের ছোয়ায়।
-লক্ষীটি আমার শোন প্লিজ এরকম অবুঝের
মত কাজ করনা।
-প্লিজ শুভ্র আমাকে আর কিছু বলনা।
-মায়া তুমি এটা কখনও পারনা।সামান্য
একটা কারনে এভাবে ছেড়ে যাবে এটা হতে
পারেনা।মায়া প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর
আমি তোমাকে ছাড়া পারবনা ভীষন
ভালবাসি তোমাকে।
-এই ভালবাসাটা ওই অসহায় মেয়েটাকে
দিও।
-সেই কখন থেকে অসহায় অসহায় করছ ওর
ভিতর অসহায়ের কি আছে।
-আছে ওর শূন্যতায় ভরা চোখদুটো।
-এই মেয়ে এই আর একটুও বাড়াবাড়ি নয়।
ল্যাকেজ রাখ যাও ঘুমিয়ে পড়।
-এইতো হয়ে গেল।আজকের রাতটাই তো
আরেকটু সহ্য কর না হয় আমাকে।
-মানে কি মায়া কি বলছ আবোল তাবোল?
-দেখ তোমরা নিশ্চয়ই অনেক সুখী হবে।
-মায়া প্লিজ আমাকে বোঝার চেষ্টা কর।
-পাগল ছেলে আমি তো তোমাকে বুঝি আর
বুঝি বলেই তোমার সুখ তোমাকে ফিরিয়ে
দিতে চাইছি।
-আমি কিছু চাইনা শুধু তোমাকে চাই।
-আমি তো আছি তোমার হৃদয়ে সারাক্ষন।
-তাহলে বল আমাকে ছেড়ে কখনই যাবেনা।
-যেতে তো আমাকে হবেই।
-মায়া আমি হাত জোড় করছি প্লিজ
আমাকে তুমি অন্য শাস্তি দাও তবু আমাকে
ছেড়ে যেওনা।আমার অন্যায়ের কঠিন
শাস্তি কামনা করছি।
-ধুর তুমি তো কোন অন্যায় করনি।
-তাহলে তুমি যাবে কেন?
-আমার আর ভাল লাগে না তোমাকে।
-এটা মিথ্যে আমি জানি তোমার হৃদয়ে শুধু
আমার বসবাস।
-আর ইউ ম্যাড।
-প্লিজ মায়া এরকম করনা।তোমার চোখের
পানি বলছে তুমি অভিমানে বলছ এসব।
-হা হা হা এই যে মিষ্টার শুভ্র আমি তো
নাটক করেছি তোমার সাথে ভালবাসার
নাটক।
-প্লিজ মায়া থাম এবার।
-লিভ মি এলোন।
-প্লিজ...
-আই হেইট ইউ।
-ঠাশ.....
.
কি ভেবেছে কি মেয়েটা।নিজেকে খুব
মহান ভাবে।সামান্য কারন যার সাথে
কোন কিছু নেই তাকে ঘিরেই এতটা
অশান্তি।নিজেকে মহান করতে চায়।আমি
জানি ও ছোট্ট এই মিথ্যেটা বলেছে
আমাকে ওর প্রতি ঘৃনা জন্মানোর জন্য।
কিন্তু আমি তো জানি এটা ওর মনের কথা
নয়।কিন্তু বাড়াবাড়ির একটা সীমা আছে।
একটা ফালতু কারনের জন্য নিজের সংসার
ভাঙার কি কোন প্রয়োজন আছে।আমার
বুকটা ভীষন রকম চিনচিন করছে।যে
মেয়েটার গায়ে একটা ফুলের আচড় লাগতে
দেয়নি তাকে দুই দুটো থাপ্পড় দিলাম।নাহ
আমার জন্ম নেয়াটাই ভুল হয়েছে এ
পৃথিবীতে।
.
পরেরদিন সকাল নয়টা.....
খাটে শুয়ে পাশে হাত বুলিয়ে মায়াকে
খুঁজছি কিন্তু হাতে কিছু ঠেকছে না।এপাশ
ফিরতেই দেখি শূন্য আমি একা শুয়ে আছি।।
দরজাটাও খোলা।কিছুক্ষন ডাকাডাকি
করার পর সারা বাড়ি খুঁজলাম কোথাও নেই।
অবশেষে ফোন করছি সুইসচড অফ।টেবিলের
ওপর চোখ পড়তেই একটা চিরকুট চোখে পড়ল।
ভাঁজ খুলে দেখলাম....
প্রিয় শুভ্র বেশি কিছু লিখলাম না।আমি
জানি তুমি সুখি হবে অনেক সুখি।নিশাকে
বিয়ে কর।আর হ্যা নিজের খেয়াল রাখবে।
আমাকে কখনও খুঁজতে চেওনা মনে রেখ
আমাকে কখনও খুঁজতে আসলে আমার মরা মুখ
দেখবে।
আমি জানিনা ঠিক এই মূহুর্তে আমার কি
করা উচিৎ।আমার পৃথিবীটাই এখন
অন্ধকারে ঢেকে গেছে।আমি চাইলেও আর
আলো আনতে পারবনা।সামান্য একটা
কারনে এত বড় শাস্তি।আচ্ছা ও কি একবারও
ভাবলনা আমি কি চাই আমার কিসে সুখ।
আমার সব সুখ তো ওকে ঘিরেই।আমাকে
কেন বার বার সবকিছু হারাতে হবে।
আঘাতে জর্জরিত হয়ে যাকে আকড়ে বাঁচতে
চাই সেই দূরে ঠেলে দেয়।পৃথিবীর পরে এক
কিংকর্তব্যবিমূঢ় মূহ্যমান প্রানী আমি।
আমি নিজেকে মানুষের মধ্যে পরিগনিত
করিনা।আমার কারনে আমার নিজের
অতীত যা কিনা কালো অধ্যায় কেন
আমাকে বর্তমানেও সুখি হতে দেবেনা।
আচ্ছা আমার কি সুখে থাকার অধিকার
নেই।আচ্ছা একটা মানুষককে কি তার ভুল
শুধরানোর জন্য একটাসুযোগ দেওয়া উচিৎ
নয়।আমি কিছু ভাবতে পারছিনা।পৃথিবীট
া অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে আমি জানিনা
আমি কি জ্ঞান হারাচ্ছি না হৃদকম্পন বন্ধ
হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছি।
.
সতেরদিন পর......
বসে আছি বারান্দায়।আমি জানি
আকাশের নিচে নিসঙ্গ চাতক পাখির মত
আজ আমি ভীসন একা।যাকে এক মূহুর্ত না
দেখলে মনে হত দম বন্ধ হয়ে যাবে সেই
প্রিয় মুখটা আজ কতদিন হল দেখিনা।কেমন
আছে ও,একবারও কি জানতে ইচ্ছা করেনা
আমি কেমন আছি।যাওয়ার সময় ওরকম কসম
দিয়েই বা কেন গেল পাগলীটা।আমি জানি
তো ও ভীষন জেদি তাই বলে এতটা....
টুং টাং আওয়াজ তুলে ফোনটা বেজে
উঠল....স্ক্রিনে তাকাতেই একটা শকড
খেলাম....
-হ্যালো....(ওপাশ থেকে)
-আমি যেন সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।
-শুনতে পাচ্ছ কেমন আছ তুমি?
-শুধু ফোস ফোস আওয়াজ করছি।
-কথা বলবেনা?জান তোমাকে খুব দেখতে
ইচ্ছে করছে সময় হবে তোমার।
-নিশ্চুপ।
-কথা বলনা একটু কতদিন তোমার কথা
শুনিনা।
-টুট টুট টুট
কি ভেবেছে কি মেয়েটা আমাকে কাঁদাতে
না পারলে তার শান্তি নেই।এতদিন পর দরদ
একেবারে উতলে উঠছে।আমাকে দেখতে
ইচ্ছে করছে। আমি কেমন আছি এতদিন পর
মনে পড়ল।কতটা স্বার্থপর তুমি হতে পার
কতটা অভিমানী হতে পার আমিও দেখব।
.
পরেরদিন শ্বশুরবাড়ি.....
-কেমন আছ তুমি?
-হ্যা খুব ভাল।
-নিশা কেমন আছে বিয়ে করেছ কবে?
-এইতো কয়েক দিন হল।
-ওকে ও সাথে আনতে।
-আসতে চায়নি।
-ওহ তুমি অনেক চিকন হয়ে গেছ।
-তোমার দেখা হয়েছে আমি উঠব।
-আরেকটু থাক না আর তো কখনও বলবনা।
ডিভোর্স পেপারটা কবে দিবে?
-যত তাড়াতাড়ি পারি।
-ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করো।
-একটা কথা বলব?
-হ্যা বল।
-মায়া তুমি তো সবই জানতে আমার
ডায়েরী পড়ে জেনেছ আমি ঠকেছি
বারবার।যখন সম্বল হিসেবে তোমাকে
আকড়ে ধরলাম তুমি কেন এভাবে দূরে ঠেলে
দিলে।
-ওসব বাদ দাও তো তোমরা অনেক সুখী হও।
-আচ্ছা আমি উঠলাম।(বিরক্তির স্বরেই
বললাম)
-কিছু খেয়ে যাও।
-সময় নেই।
-প্লিজ আর কখনও বলব না তো।
-স্যরি আসি।
-এই শোন....
-ও হ্যা তোমাকে একটা সুখবর দিয়ে যাই।
-কিসের সুখবর?
-তোমার অসহায় মেয়ে নিশা আমাদের
ক্লাসমেট সায়মনের সাথে বিবাহ বন্ধনে
আবদ্ধ হয়েছে বেশ সুখেই আছে সে।বেঁচে
থাকার মত একটা শক্ত সম্বল পেয়েছে।
-মানে?তুমি না বললে তোমরা বিয়ে করেছ?
-যেমন মিথ্যে কারনে তুমি আমাকে ছেড়ে
এসেছ তেমন একটা মিথ্যা আমিও বললাম।
যাই হোক আসি ডিভোর্স পেপারটা খুব
তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবে।
-এই কোথায় যাবে তুমি এই শোন।
-মাথা নিচু করে হাটা দিলাম।
-এই শোন...
-নিশ্চুপ....
-এই বাবুর আব্বু দাড়াও না আমাকে রেখে
কোথায় যাচ্ছ?
-থমকে দাড়ালাম। (বাবুর আব্বু মানে কি)
-পিছন ধেকে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু
করেছে।আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।
বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি।বিশ্বাস
কর তোমাকে ছেড়ে এসে আমি এক মূহুর্তের
জন্যেও ভাল নেই।
-এই ছাড় আমাকে।আর আমাকে বাবুর আব্বু
ডাকলে কেন?
-আগে বল আমাকে মাফ করবে।
-কত রিকুয়েষ্ট করেছিলাম শুনেছিলে
সেদিন।
-আমি অভিমানে করেছি সব মাথা ঠিক
ছিলনা।
-যোগাযোগের পথটাও বন্ধ করেছ।
-স্যরি তো এই যে কানে ধরছি।
-তোমাকে আরেকটা থাপ্পড় দেওয়া উচিৎ।
-উহু বাবুর লাগবে তো।
-বাবুর লাগবে মানে?
-আমার গাধা বর তুমি বাবা হতে যাচ্ছ।
-কিইইই?
-মাথা লুকালো বুকে।পাগলীটা কাঁদছে
কাঁদুক।অভিমানে গাল ফুলিয়ে একা থাকার
কষ্টটা ভীষন ভাবে উপলব্ধি করেছে।এই
পাগলীটার পাগলামীর সাথে বাড়বে
আরেকটা পিচ্চির জ্বালাতন।বুঝতেই
পারছি বাবুটা ওর মায়ের মতই ফাজিল হবে।
কারনে অকারনে ওর মায়ের কাছে নালিশ
করে আমার বকুনি শুনাবে।হোক না আরেকটু
পাগলামী আমারই তো সব....।।।।।

No comments:

Post a Comment