Thursday, November 10, 2016

ভালবাসি তোকে পেত্নী

ভালবাসি তোকে পেত্নী

এসো হাত ধরো হাতে,
চলো অন্তহীন পথে,
এসো তুমি, আর আমি,
দু’চোখে স্বপ্ন হয়ে নামি…

“ঐ থাম, হইসে। শাহবাগ মোড়ে এইভাবে
চিৎকার করিস, ভালো ভিক্ষা পাবি।
আমার কানের কাছে না।“
অপ্রস্তুত হয়ে থেমে গেলাম আমি। এই
মেয়েটার মুখে কিছুই আটকায় না। সেই
ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। কিন্তু
আজও অভ্যস্ত হতে পারিনি। আমি অবশ্য
কথা না বাড়িয়ে মুখ কুঁচকে পাশে সরে
গেলাম । আজ পেত্নীটার মন খারাপ। ওর
জানের জান আরেফিনের আজ জন্মদিন।
ক্লাস টেনে পড়ার সময়ই “প্রেম-প্রীতি”
নামক বিদ্যায় বেশ পারদর্শী হয়ে
উঠেছিলো আমার এই “পেত্নী”। আরেফিন
নামের এক গিটারিস্ট এর প্রেমে পড়ে যায়,
বলতে গেলে, কোনোরকম সতর্কীকরণ বার্তা
ছাড়াই।তারপর আর কি ! মায়ের মোবাইলে
লুকিয়ে লুকিয়ে ওর সাথে কথা বলতো। আর
কি নির্লজ্জ মেয়ে রে বাবা! প্রতিদিন
আমার কাছে এসে আরেফিনের সাথে কি
কথা হতো, সব বলতো! আরেফিন কি খেতে
পছন্দ করে, কি রঙ ওর বেশি পছন্দ, ও কতো
ভালো গিটার বাজাতে পারে, এসব শুনতে
শুনতে আমার মুখস্থ হয়ে গেলো।
প্রতিদিনই বলতাম, “তোর এই আরেফিনের
প্যাঁচাল বন্ধ করতো।”
তখন ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে
বলতো,“আমার আরেফিন এর কথা, আমি
বলবো, না তো কি বাইরের মানুষ বলবে? আর
তোকে বলি কারণ তুই একটা গাধা, একটা
গার্ল ফ্রেন্ড জুটাইতে পারলি না, ছাগল…
আয়নার দিকে তাকায়া দেখছিস
কোনোদিন, তোর কান গুলা পুরা খরগোস এর
মতো………আর হাসলে………”
“আল্লাহর দোহাই লাগে, তুই থাম, যেভাবে
বলছিস, মিরপুর চিড়িয়াখানার লোকজন
কেউ শুনতে পেলে নির্ঘাত আমাকে ধরে
নিয়ে চিড়িয়াখানায় ভরে রাখবে…তার
থেকে বরং “তোর আরেফিন” এর প্যাঁচাল শুরু
কর, শুনছি।”
কথাগুলো বলেই প্রমাদ গুনলাম, না জানি
এখন কত কিলোমিটার লম্বা ঝাড়ি শুনতে
হয়।
কিন্তু আমাকে অনেকটা অবাক করে দিয়েই
হেসে উঠলো পেত্নীটা। আস্তে করে
দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, এতো সুন্দর করেও
মানুষ হাসতে পারে !!!
কি কথা বলতে গিয়ে কোথায় চলে এসেছি,
হায়রে কপাল। হ্যাঁ, যা বলছিলাম। আমি
আর পেত্নী বসে আছি টি, এস, সি তে।
আমার হাতে এক প্যাকেট টিসু পেপার ।
পেত্নী ফোঁপাচ্ছে, আর আমার দায়িত্ব
হচ্ছে একটু পরপর ওর হাতে টিসু ধরিয়ে
দেওয়া, আর ওর নাক ঝাড়ার দৃশ্য দেখা।
শুধুমাত্র এই কাজের জন্য সকাল আটটায়
আমার অতি প্রিয় ঘুম ভাঙ্গিয়ে এনেছেন
পেত্নী বিবি। এই “আরেফিন” নামটা আমি
একেবারেই সহ্য করতে পারিনা, এটা
জেনেই বোধহয় আমাকে দিয়েই এসব কাজ
করায়। ওর মন ভালো করার জন্যই গান
গাইতে গিয়ে ঝাড়ি খেলাম, ওর বোধহয়
আমার কাঁচুমাচু মুখ দেখে একটু মায়া হল।
ফোঁপাতে ফোঁপাতেই জিজ্ঞেস করলো,
“রাতে খেয়েছিলি?”
“হু।”(মিথ্যে কথা, সত্যটা বলে আবার ঝাড়ি
খাওয়ার কোন মানে হয় না)
“ঘুমাইছিস কয়টায়?”
“১১ টা।”(সত্য কথা)
“১১ টা বাজে ঘুমালে এত হাই মারিস কেন?
অসভ্যের মতো?”
“হাই মারাতে অসভ্যতার কোন এলিমেন্ট
আছে বলে আমার জানা নেই।” (আবার হাই
তুললাম, এবার নকল হাই)
“দাঁত মাজছিস সকালে?”
নকল হাই এর মাঝপথে এসে থেমে গেলাম,
দাঁত মাজি নি। দাঁত মাজার মতো ফালতু(?)
কাজে আমার মতো ব্যস্ত(!!!) মানুষের আবার
টাইম কই ? আমাকে চুপ থাকতে দেখেই যা
বুঝার বুঝে নিলেন, পেত্নী মহাশয়া… “ইয়াক
থু” করে বলল, “এ জন্যই ভাবছিলাম, এতো
দুর্গন্ধ আসছে কোত্থেকে… ইয়াক থু” করে
সত্যি সত্যি একদলা থুথু আমার পায়ের
কাছে ফেললো।। মনে মনে ভেবে পেলাম
না, আমি স্বীকার করার পর পরই গন্ধ
ছড়াল???
“ব্রেকফাস্ট তো করিস নাই। চল, কোন এক
রেস্টুরেন্টে ।”
কিছু না বলে, সায় দিলাম মাথা নেড়ে।
পেত্নীটাও, যেন কিছুই হয়নি এমন ভাব করে
উঠে দাঁড়ালো। এতক্ষণ যে ফোঁপাচ্ছিল,
দেখে বোঝার উপায়ই নেই। এখনো বুঝতে
পারিনা মেয়েটাকে।
আচ্ছা, ও কাঁদছিল কেন আর আরেফিনই বা
কোথায়, সে কথা কি বলেছি? মনে হয় না।
কারণ, সেটা “ইট ওয়াজ এ লং স্টোরি” টাইপ
ঘটনা।
সংক্ষেপে জানিয়ে রাখি, আরেফিন,
আমার পেত্নীর সাথে কথা বলে, সময়
কাটাত, আর কিছুই নয়। আমরা যেটাকে বলি
“টাইম পাস”। আর এ কথা যেদিন জানতে
পারে ও, সেদিন আমার কাছে এসে সমগ্র
পুরুষ জাতিকে তুলে শাপশাপান্ত করতে
লাগলো। এরপর থেকে আর আমাকে
“আরেফিনের প্যাঁচাল’ শুনতে হয় নি। তবু ছয়
বছর ধরে মাঝে মাঝে পুরানো কথা মনে
পরে, পেত্নী মহাশয়ার।। আর তা শুনতে হয়,
আমাকেই। আমি হাই তুলতে তুলতে টিসু
তুলে ধরি। বিনিময়ে ফ্রি ব্রেকফাস্ট পাই,
খারাপ কি? (আমার পেত্নী, আমার পেত্নী
করছি কেন? শোধ নিচ্ছি বলতে পারেন, ও
আগে ‘আমার আরেফিন’ বলতো সেটার
শোধ। হে হে হে)
আরেফিন চ্যাপ্টার ক্লোজ… অসহ্য। আমার
ভাষায়, “হালায় পেইন একটা”।
পেত্নীর নাম এখনো বলি নি… দরকারই বা
কি বলুন! ধরে নিন আমার পেত্নীর নামই
পেত্নী!!!
এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, আমি
এই “মুখে কোন কথা আটকায় না” টাইপ
মেয়েটিকে অনেক ভালবাসি …! আজকাল
নয়। যখন আমাদের বয়স ৮, তখন থেকেই আমি
দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, বড় হয়ে এই পেত্নীটাকেই
বিয়ে করবো। সাধারণত ছোটবেলার
ভাবনা- চিন্তাগুলা ছোটবেলাতেই শেষ
হয়ে যায়, আমার ক্ষেত্রে হয়নি। কেন যে
হয়নি সেটা ভেবেই আমি অবাক হয়ে যাই।
একটা দিনও ঠিকমত কথা বলতো না, কি
একটা ‘ভাব’ যে মারে আমার সাথে!
ছোটবেলা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত
যতবার ই ‘প্রিয় বন্ধু’ নিয়ে রচনা লিখতে
গিয়েছি,প্রিয় বন্ধু হিসেবে আমি লিখেছি
ওর নাম, আর ও লিখেছে আমার নাম, কিন্তু
আমাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো।
তারপরও আমি ওর পিছে লেগে ছিলাম … ।
কেন?
জানি না।
হয়তো ভালোবাসি, তাই ।
###
ভালোবাসার সংজ্ঞা একেক মানুষের
কাছে একেক রকম। আমার কাছে মনে হয়,
যাকে ভালোবাসা হয় তাকে সেটা না
বললেও হয়। ভালোবাসাটা অনুভব করার
ব্যাপার। চিৎকার করে বলার মতো কিছু নয়।
আমরা সবাই বাবা-মা কে ভালবাসি,
কিন্তু আমরা কি তাদের কাছে গিয়ে
কখনো বলি,“মা/বাবা, আই লাভ ইউ”? মুখে
হয়তো বলি না। কিন্তু মনে মনে ঠিকই
স্বীকার করি। তাহলে, আমরা কেন প্রপোজ
করি? বলছি।জন্মসূত্রে আমরা মা-বাবা’র
সাথে সম্পর্কযুক্ত। নতুন করে কোন সম্পর্কে
জড়াতে হয় না। কিন্তু যাকে ভালবাসি,
তার সাথে সম্পর্কে জড়াতে চাই বলেই ,
আমরা এই কাজটা করে থাকি।
পশ্চিমাদের মতো গার্ল ফ্রেন্ড,বয় ফ্রেন্ড
নামক শব্দে আমি বিশ্বাসী নই। কারণ, এক্স
গার্ল ফ্রেন্ড, এক্স বয় ফ্রেন্ড এসব কথা
আমরা শুনে থাকি। কিন্তু ভালোবাসার
মানুষের সাথে এক্স,প্রেজেন্ট এসব শব্দ
শোনা যায়না। কেননা, আমার মতে,
ভালোবাসার মানুষ একজনই হয়। আমারও
আছে, আর সেটা এই ‘পেত্নী’।
তাই, আরেফিন এর সাথে ওর ‘ব্রেক আপ’ এর
পর ভাবলাম, এটাই সুযোগ।
একদিন পেত্নীটার কাছাকাছি চক্কর
দিচ্ছি, কিভাবে কি বলবো, ভাবতে
ভাবতে। যথারীতি পেত্নীর ‘পিঞ্চ মার্কা’
ডাক,
“বান্দরের মতো লাফাইতেছিস কেন?” মনে
মনে আল্লাহরে বললাম… এইটারেই
জুটাইলা!!!
“লাফাইলাম কই? হাঁটছি কেবল।”
“তো আমারে কেন্দ্র করে ঘুরছিস কেন?
আমি পৃথিবী আর তুই চাঁদ নাকি? তা চান
মানিক… কি বলবি , বলে ফেল।”
৭০০ মেগাবাইটের মুভি ডাউন লোড দেওয়ার
পর ৯০% ডাউন লোডের পর যদি দেখা যায়,
যে ইন্টারনেট প্যাকেজ শেষ, তখন যেমন
অনুভূতি হয়, তেমন লাগছিলো আমার। সারা
রাত কতো রোমান্টিক লাইন মুখস্থ
করেছিলাম, কিচ্ছু মনে পরছে না, এখন।
পেত্নীটা সামনে না থাকলে নিজের
মাথায়ই দু,চারটা গাট্টা মারতাম। আমার
অবস্থা বুঝেই কি না কে জানে, পেত্নীটা
তার নতুন কেনা চশমার ফাঁক দিয়ে আমার
দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠলো,
“ঐ গাধা, কি হয়েছে বলত। আমাকে
ভালোবাসিস , এটাই তো বলবি নাকি?”
নিজের কানকেও বিশ্বাস হচ্ছিল না যেন
আমার। কোনোমতে বললাম,
“হ… হু… না… না মানে… এই তো… মানে হ্যাঁ
আর কি।”
“আমিও তো তোকে ভালবাসি। তো? এতে
বলার কি আছে?”
খুশিতে আমার চোখ দিয়ে যেন পাঁচশ’
ওয়াটের বাল্ব জ্বলে উঠলো, মনে হল যেন
গ্যাস বেলুনের মত শূন্যে ভাসছি।
“তোকে আমি এত্তো ভালোবাসি যে, তোর
সাথে ঝগড়া না করতে পারলে সত্যিই
আমার খাবার হজম হয়না। বিয়ের পর আমার
জামাইকে বলে ডেইলি তোর সাথে এসে
ঝগড়া করে যাবো,তুই তোর জন্য একটা
ভালো দুলাভাই খোঁজ নারে…প্লীজ।”
আমার চোখে সদ্য জন্ম নেওয়া বাল্বগুলো
ফট করে ফিউজ হয়ে গেলো।শূন্য থেকে ধপ
করে মাটিতে এসে পরলাম।কুইনাইন
চাবানোর মতো মুখ-চোখ করে মনে মনে
ভাবলাম, এই মেয়ের সাথে কথা বলার
চেয়ে, সাত তালার উপর থেকে লাফিয়ে
মরে যাওয়া ভালো, কিন্তু আমি হাল
ছাড়লাম না। সিরিয়াস মুড নিয়ে পেত্নীর
দিকে তাকালাম,
“আমি সেটা মিন করি নাই।”
“তাহলে কোনটা মিন করছিস?”
কি বলবো বুঝতে পারলাম না… মনে মনে
আবার নিজেকে গালি দিলাম ৪,৫ টা। মুখে
বললাম,
“দেখ, তুই তো সব বুঝিসই………”
“কই? না তো। আমি কিছুই বুঝি না…”
“প্লিজ, বোঝার চেষ্টা কর…” অসহায়ের
মতো বলতে গেলাম আমি।
“হবে না… বাদ দে…”
“হবে না মানে?”
“তুই আমাকে ভালোবাসিস … না?”
“হু।”
‘তো, আমি কি করবো? জানাতে চেয়েছিস,
জানলাম, ব্যাস। আমি গেলাম।”
“আরে, দাঁড়া । তুই রাজি না?”
সরাসরি আমার দিকে তাকাল এবার
পেত্নী…
“কি করতে পারবি আমার জন্য?”
“তুই কি চাস?” থতমত হয়ে বললাম।
“চাকু দিয়ে হাত কেটে আমার নাম লেখতে
পারবি?”
“মানে………” আঁতকে উঠলাম আমি।
“রোজ রাতে আমার বাসার সামনে এসে
দাঁড়িয়ে থাকতে পারবি?”
ভূত এর ভয়ে বাঁচি না, আর আমি ওদের
বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো? পাগল
নাকি? ভাবতে লাগলাম।
“আমার প্র্যাকটিকাল্ এর লেখাগুলো লিখে
দিতে পারবি?”
নিজের গুলোই করতে পারিনা…আর তোর
টা… আমার কিসের ঠেকা।ভাবলাম মনে
মনে।
“যখন তখন আমার মোবাইলে টাকা দিতে
পারবি?”
টাকা পয়সার ব্যাপারে আমি খুব
সেনসিটিভ , চুপ করে থাকাই উত্তম।
“রাত জেগে আমার সাথে ফোনে কথা
বলতে পারবি?”
আমি মারাত্মক ঘুমকাতুরে মানুষ।আমার
জন্য সারা দুনিয়া একপাশে আর ঘুম
অন্যপাশে । তাই শুধু ঢোক গিলতে লাগলাম।
“দেখলি তো? কিছুই করতে পারবি না তুই,
আমার জন্য। যেদিন পারবি, সেদিন বলবি,
তার আগে না।”
----
পাঁচ বছর পার হয়েছে সে দিনটির পর… আমি
আমার কথা রেখেছি।ওকে আর বলিনি যে
আমি তোকে ভালোবাসি । এখন আমি
ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার
সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং
ডিপার্টমেন্টে পড়ছি। আর পেত্নীটা
ফিজিক্সে।অনেকগুলো দিন পার হয়েছে এর
মাঝে। একবারের জন্যও মনে হয়নি যে,
পেত্নীকে ভালোবাসার কথাটা পাগলামি
ছিল। তবে আমি ওকে বুঝতেও দেইনি যে, ওর
প্রতি আমার ভালোবাসা এখনো আগের
মতোই আছে(বাড়তেও পারে)। আমি কিন্তু
সেদিনটির কথা ভুলি নি। চেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছি।
লুকিয়ে লুকিয়ে টাকা জমাচ্ছি পেত্নীর
মোবাইলে দেয়ার জন্য।
বার ঘণ্টা ঘুমের বদলে মাত্র দশ ঘণ্টা (!)
ঘুমাই এখন।
ভূতের ভয় কাটানোর জন্য হরর মুভি দেখা
ছেড়ে দিয়েছি একদম।যত ধরনের দোয়া দরুদ
পারছি, মুখস্থ করে ফেলছি।
প্র্যাকটিকাল করে দিতে পারবো এখন,
‘হিংসা’ কমেছে।
সব পারলেও হাত কেটে নাম লেখার
ব্যাপারটা নিয়ে টেনশনে আছি। নাম
লেখার দরকার হলে চাইনিজ ইঙ্ক ব্যবহার
করলেই তো পারি…নাকি চাকু দিয়ে হাত
কাঁটার ব্যাপারটা বেশি রোমান্টিক? কে
জানে… হতেও পারে…। আগে তো আর
কোনোদিন প্রেম করিনি যে এসব জানবো।
মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, কেন যেন
আগে কেন প্রেম করি নাই, সেটা নিয়ে খুব
আফসোস হচ্ছে ।
১৯শে সেপ্টেম্বর, রাত ১১ টা। হাই মারছি
একটু পর পর।
আমার ঘুমানোর সময় হয়ে গেছে। কিন্তু
ঘুমাতে পারছি না। কালকে আমার আর
পেত্নীর দু’জনেরই জন্মদিন। পেত্নীর কড়া
আদেশ, সবার আগে যাতে আমি উইশ করি।
না হলে সারাজীবনেও আর আমার সাথে
কথা বলবে না। “সারাজীবন কথা বলার
অধিকার” হারানোর ভয়ে… ঝিমাতে
ঝিমাতে ফেসবুকে কি স্ট্যাটাস দেয়া যায়
ভাবছি।
কালকে শুধুমাত্র আমার জন্মদিনই না।
কালকে সিরিয়াস কিছু একটা করার ইচ্ছা
আছে। কি করা যায়?? পেত্নীকে প্রপোজ
করতে পারি। ওদের ডিপার্টমেন্টের বড় এক
ভাই এর মতিগতি ভাল্লাগছেনা… যা করার
দ্রুত করতে হবে। কালকের দিনটাই মোক্ষম।
রাত ১১ টা ৪৫ মিনিট।
দু’চোখ আর খোলা রাখতে পারছি না।
মোবাইল টা নিয়ে গৎবাঁধা ইংরেজিতে
দ্রুত লেখলাম, “Happy b’day , petni. Many many
happy returns of the day.” প্রায় সাথে সাথেই
রিপ্লাই, “………(কিছু গালি বসিয়ে নিন)
এতো আগেভাগে কেন? কার সাথে এত ব্যস্ত
তুই………(আরও কিছু গালি)… HBD to you , too.”
রিপ্লাই দিলাম,“ আমার ঘড়ি ১৫ মিনিট
স্লো। আর তোদের ডিপার্টমেন্টে নতুন যে
মেয়েটা আসছে , তার সাথে চ্যাট করছি।
মেয়েটা তো খুব সুন্দরী।” আজ বিকেলেই
মেয়েটার কথা আমাকে জানিয়েছে
পেত্নীটাই … দেখি খেপানো যায় নাকি।
রিপ্লাই আসলো,“তোর ঘড়ি কতো মিনিট
স্লো এটাও জানিস, ফাইজলামি করিস
আমার সাথে!!! তোর আমি…………(ভয়ানক কিছু
গালি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ‘গালিমাতা’ হয়ে
যেতে পারে) ঐ মেয়েরে তুই পাইলি
কিভাবে? আর কালকে শহীদ মিনারের
সামনে আসবি ১০ টার মধ্যে … ঐ মেয়ের
সাথে কতটুকু প্রেম করলি, পুরো বর্ণনা
দিবি।”
ল্যাপটপটা নিয়ে ফেসবুক ওপেন করলাম, ঘুমে
আমার চোখ এর পাতা ভারি হয়ে আসছে…
তারপরও স্ট্যাটাস দিলামঃ
২২ টা গ্রীষ্ম গেলো, পহেলা বৈশাখে লাল-
পাড় সাদা শাড়ি পরা কোন সঙ্গী পেলাম
না,
২২ টা বর্ষা গেলো, কারো হাতে হাত
রেখে বৃষ্টিতে ভেজা হল না,
২২ টা শরৎ গেলো, কারো কোলে মাথা
রেখে নীল আকাশ দেখা হল না,
২২ টা হেমন্ত গেলো, কারো চোখে চোখ
রেখে গোধূলির সোনালী রঙ এ চোখ
রাঙ্গাতে পারলাম না,
২২ টা শীত গেলো, ধোঁয়া ওঠা গরম কফির
মগে চুমুক দিতে দিতে কেউ আমার
এলোমেলো চুল না আঁচড়ানোর জন্য
রাগারাগি করলো না,
২২ টা বসন্ত গেলো, মনের মাঝে কোন
কোকিল ডেকে উঠলো না।
এ জীবনে কি তাহাকে পাওয়া হইবে না ???
:( :( :(
মোবাইলটা আবার হাতে নিয়ে পেত্নীকে
টেক্সট দিলাম, সাদা সালোয়ার কামিজ
পরবি, কালকে… প্লিজ…
১ মিনিটেরও কম সময়ে রিপ্লাই…
আমার তো খাইয়া দাইয়া কাজ নাই, যে
বিয়ের আগেই বিধবার ড্রেস পড়বো।
আমি যথারীতি আমার ‘বিখ্যাত
দীর্ঘশ্বাস’ ফেলে নিরীহ মানুষের মতো
ঘুমাতে চলে গেলাম…
এক ঘুমে রাত পার করে দিয়ে সকাল নয়টায়
ঘুম ভেঙ্গে ল্যাপটপ নিয়ে ফেসবুক চেক
করতে বসলাম।
ও খোদা…! ২০ লাইকস, ৫০+ কমেন্টস! এ যে
অভাবনীয়… ভালোমতো দেখে হতাশ হতে
হল।
আমার ভার্সিটির ৩ বন্ধু আমার
স্ট্যাটাসের কমেন্টের মধ্যেই ঝগড়া
করেছে। আর তাই এতো কমেন্টের উদ্ভব ।
আর বাকি যারা কমেন্ট করেছে, সেগুলোও
“সেইরাম পেইন” মার্কা। একটা অংশ
দিলাম…
রাফিঃ ওরে ***(আমার কোড নেম,
কিঞ্চিত অশ্লীল) তোর আবার বাল-ও-বাসা
জেগে উঠেছে দেখছি।:D :D :D
রাহাতঃ মামা, পহেলা বৈশাখের সঙ্গী
পাস না? তৌফিক রে শাড়ি পরাইয়া
পাঠায়া দিবনে নেক্সট টাইম, মনে করায়া
দিস…:D (তৌফিক আমাদের মধ্যে একটু ইয়ে
টাইপের, মানে বুঝেনই তো,হাফ স্যাম্পল
আর কি। আমরা ফ্রেন্ডদের পিঞ্চ মারার
জন্য তৌফিকের নাম শ্রদ্ধাভরে (!) স্মরণ
করি।)
তৃষাঃ ভাইয়া, মাত্র বাইশ??? আপনাকে
দেখে তো মনে হয় না, কতো বছর
লুকালেন? ;) (জুনিয়র ব্যাচের একটা মেয়ের
থেকে যদি এমন কথা শুনতে হয়, কেমন লাগে,
ভেবে দেখেন!!!)
ইরফানঃ চান্দু, তোমারে দেখলে তো এতো
নিমকি শয়তান বলে মনে হয় না। তলে তলে
এতো রস :D
শাম্মীঃ তোর ঘিলুতে তো এরকম কথা
থাকে নারে, কোন পেজ থেকে কপি মারলি
এটা ? :P
…………এরকম করে চলছেই… দুঃখ ভরা চোখে
তাকিয়েই থাকলাম। কিছু লেখলাম না।এক
‘হালা’ও উইশ করে নাই, কিন্তু খোঁচা
মারতে ছাড়ে নাই। মোবাইলটা দেখা
দরকার। ২৮ টা মিসকল। ১৩ টা মেসেজ…!
সবগুলো পেত্নীর ! মেসেজ সবগুলোই কল কেন
ধরছি না আর কেন ফট করে ঘুমিয়ে গেলাম,
সেগুলো লিখে লিখে শেষে গালি দেওয়া ।
কপালে আজ দুঃখ আছে। রেডি হতে
লাগলাম। লেমন কালারের একটা শার্ট
পড়লাম, এটা পেত্নী একদমই দেখতে পারে
না, কিন্তু ওকে খেপালে যে মজাটা পাই,
তা অতুলনীয় । একটা গিফট কর্ণার থেকে
রঙ্গাচঙ্গা একটা পুতুল আর একটা ডায়রি
কিনলাম, প্রতিবছরই দেই। প্রতিবারই
বিরক্ত হয়। আর এটা দেখেই মজা পাই আমি।
যারা অল্পতেই খেপে যায়, তাদের
খেপানোর মজাই আলাদা। শাহবাগ থেকে
ফুল কিনলাম, নিবে, নাকি ভাব মারবে, কে
জানে!!! তবে আজকে ওকে আবার
‘ভালোবাসি’ বলবই। যা হবার হবে।
শহীদ মিনারের কাছে এসে রিকশা থেকে
নামলাম, আর সাথে সাথেই কল।
“কুত্তা, কই তুই? কতক্ষণ ধরে ওয়েট করবো
আর?’
“সারাজীবন।” হাই তুলতে তুলতে জবাব
দিলাম আমি।
“তোর……”
লাইন কেটে দিলাম আমি, সেধে গালি হজম
করার কোন মানে হয় না।
রাস্তা পার হওয়ার আগেই পেত্নীকে খুঁজতে
লাগলাম। সাদা সালোয়ার-কামিজের
একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে । পেত্নী তো
সাদা ড্রেস পরবে না বলেছিল, তাহলে???
এদিকেই আসছে মেয়েটা। ভালোমতো
দেখার জন্য, মেয়েটার দিকে তাকিয়েই
রাস্তা পার হতে লাগলাম। মাঝামাঝি
আসার পরই আবিষ্কার করলাম, এটা তো
আমার পেত্নীটাই!!! ঠিক এই সময়ই হঠাৎ
করে যেন মাটি ফুঁড়ে একটা মাইক্রো বাস
তেড়ে আসলো আমার দিকে… শেষ মুহূর্তে
চোখ পড়লো আমার সে দিকে, তবে ততক্ষণে
অনেক দেরী হয়ে গেছে। প্রচণ্ড ধাক্কা
খেলাম আমি, হাতের ডায়রি,ফুল ছিটকে
দূরে গিয়ে পড়লো। রাস্তাটা এতোটা লাল
হয়ে আছে কেন? রক্ত? রক্তের রঙ এতো লাল
হয় নাকি? পেত্নীটা কি আমাকে দেখেছে?
না জানি, কতো গালাগাল করছে।কষ্ট হচ্ছে
খুব। পেত্নীটাকে বলা হল না, এখনো আগের
মতোই ভালোবাসি আমি তোকে…খুব…
খুউউউব।
কালো শার্ট, প্যান্ট পরা কে যেন আসছে
আমার দিকে। ইনিই কি আজরাইল? সালাম
দিবো নাকি? বয়সে তো অনেক বড়ই হবেন,
সালাম দেওয়া যায়। মানুষ হয়ে
ফেরেশতাকে সালাম দিলে সমস্যা হবে
নাকি আবার? এসব ভাবতে ভাবতেই জ্ঞান
হারালাম আমি।
###
চোখ মেলে কোথায় আছি, বুঝতে পারলাম
না।খুব বেশি কিছু না হলে কবরেই থাকার
কথা। চারপাশ অনেকটা অন্ধকার। সেটা
হওয়াই স্বাভাবিক। কবরের মধ্যে নিশ্চয়ই
আমার জন্য কেউ সি, এফ, এল লাইট
জ্বালিয়ে বসে থাকবে না। আচ্ছা, দু’জন
ফেরেশতার না আসার কথা? মুনকার-নাকির
নামের? তারা গেলেন কোথায়? তাদের তো
প্রশ্ন করার কথা।এক ধরণের পরীক্ষা। সেটা
ভেবে কবরের মধ্যে (!) থেকেও ঘামাতে
লাগলাম আমি। জীবিত থাকতে কোনোদিন
পরীক্ষার কথা শুনে খুশি হয়েছিলাম বলে
মনে পরে না। কিরকম প্রশ্ন করবেন উনারা?
চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম আমি। ধরা
যাক, আমি তাদেরকে দেখতে পাচ্ছি না,
কিন্তু অনুভব করতে পারছি । অনেকটা যেন
ভালোবাসার মতো।
একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “এতো
দেরিতে আসলে কেন?” যেহেতু দেখতে
পাচ্ছি না, সেহেতু ধরে নিলাম, উনি আমার
স্কুল লাইফের গোলাম মোস্তফা স্যারের
মতো, ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে
আছেন। ……
কি উত্তর দিবো , বুঝতে পারছি না। জীবিত
থাকতে বহুবার আমাকে দেরিতে আসা
বিষয়ক প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। প্রতিবারই
রাস্তার জ্যাম এর কথা বলে বেঁচেছি। এবার
কি বলবো? আজরাইল দাদুর উপর দোষ
চাপিয়ে দিবো নাকি, ভাবতে ভাবতে
আবার ঘুমিয়ে পড়লাম, নাহলে বলা যায়,
মরে পরে গেলাম!!!
এরপর যখন চোখ মেললাম, চারপাশে অনেক
আলো। ভেবে পেলাম না, এতো আলো
আসছে কোত্থেকে? চারপাশ সম্পূর্ণ সাদা।
মাথা তুলে দেখতে গিয়ে মাথায় টান পরে
ব্যথা লাগলো। কবরে তো ব্যথা বা সুখ
থাকার কথা না… তাহলে? ঘাড় ঘুরিয়ে
আমার পায়ের কাছে চারপাশ উজ্জ্বল করে
সাদা জামা পরা এক মেয়েকে দেখতে
পেলাম। মেয়েটাকে দেখেই বুঝে গেলাম,
এইটা সাক্ষাৎ হুর পরী। কিন্তু ভেবে
পেলাম না, কবরে প্রশ্নোত্তর পর্বের
মুখোমুখি না হয়ে, সরাসরি বেহেশতে চলে
এলাম কিভাবে? অটো প্রমোশন নাকি?
আমার নড়াচড়া টের পেয়েই বোধহয় পরীটা
আমার দিকে মুখ তুলে তাকাল। কিছু একটা
ঘাপলা আছে। হুর পরীদের থাকবে বড়
বড়,দ্যুতিময় চোখ; কিন্তু এর দেখি চোখে
সমস্যা । চশমা ওয়ালী পরীর কথা
কোনোদিন শুনি নি। কিন্তু এই পরীটা
চশমা পরে বসে আছে। কিন্তু তাতে তার
রূপের ঘাটতি পড়েনি। চশমাটা কি সুন্দর
মানিয়ে গেছে। ঠিক যেন আমার পরীটার
মতো। দেখতেও সে রকমই লাগছে। আমি
কিন্তু আমার পেত্নীর নাম বলে দিয়েছি।
মরেই যখন গেছি, তাহলে এতো রহস্য করারই
বা কি দরকার। হুম, ঠিক ধরেছেন। আমার
পেত্নীটার নাম “পরী”।
চশমা ওয়ালী পরীটা আমার দিকে উঠে
আসছে। কি হুকুম দেওয়া যায়? পৃথিবীর মানুষ
দেখার ব্যবস্থা করা যায় নাকি , জিজ্ঞেস
করতে হবে।
“আরনাফ…”
চোখ পিটপিট করে তাকাতে লাগলাম
আমি। ভেবেছিলাম, সার বা বস টাইপ কিছু
ডাকবে আমাকে; তা না বলে সরাসরি নাম
ধরে ডাক? কণ্ঠটাও পেত্নীর সাথে পুরোপুরি
মিলে যায়। জীবিত থাকতে পেত্নীর
ঝাড়ির উপর ছিলাম। মরেও দেখি রেহাই
পাচ্ছি না।
“জী।” খানিকটা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলাম।
“আমাকে চিনতে পারছিস?”
“আপনি পরী।”
“আপনি আপনি করছিস কেন? ঠিক করে
তাকা আমার দিকে, চিনতে পারছিস না?”
“তুই পে…পে…পেত্নী।” পরীকে পেত্নী বলার
অপরাধে বেহেশতে আসার পরও চড়-থাপ্পড়
খাই নাকি, ভয় হতে লাগলো।
কিন্তু পরীটা দেখি খুশিতে লাফিয়ে এসে
আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমো খেলো!!!
এবার আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম, আমি
বেহেশতেই আছি। বেঁচে থাকতে পরী নামক
পেত্নীটার হাত ধরেছি সবমিলিয়ে ছয়
বার। আর প্রতিবারই অনেক বাহানা
দেখাতে হয়েছে। আর এখন কি না, চুমো!!! এ
শুধু বেহেশতেই সম্ভব। উত্তেজনায় হার্ট বিট
বেড়েই যাচ্ছে আমার। পরীটা আমাকে
এখনো জড়িয়ে আছে, চুলের গন্ধ পাচ্ছি।
আহ! বেহেশত যাপনের মজাই আলাদা।
আবারো ঝিমাতে শুরু করলাম আমি । আবছা
ভাবে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,
ইংরেজিতে কি যেন লেখা। বেহেশতেও এই
বিদেশী ভাষাটা থেকে রেহাই পাবো না
দেখছি।ঘুমিয়ে গেলাম……
৫ দিন পরের কথা।
আমার পুরোপুরি বুঝতে ২,৩ দিন লেগেছিল
যে আমি মরে যাইনি। পৃথিবীতেই আছি।
আর আমাকে বেহেশতের হুর পরী জড়িয়ে
ধরেনি। সেটা আমার পেত্নীই ছিল। গম্ভীর
মুখ-চোখ করে মা’র হাতে খাবার খাই, আর
টাইম পেলেই ঘুমাই। ডাক্তার এসে আমাকে
ঘুমন্ত অবস্থায় পেতো বলে, বিরক্ত হয়ে
মা’কে জিজ্ঞেস করতো , আমি কি
সারাদিনই ঘুমাই কি না। আমি জেগেই
থাকতাম, ডাক্তার দেখলেই ঘুমানোর ভান
করতাম। ডাক্তারদের আমার অনেক ভয়।
আমার ২ ব্যাগ রক্ত লেগেছিল, বন্ধুরাই
দিয়েছে।পেত্নী নাকি আমার সুস্থ হওয়ার
জন্য রোযা মানত করেছিলো।ICU তে প্রায়,
৬০ ঘণ্টা অজ্ঞান ছিলাম। এই সময়টুকুতে
পেত্নীটা নাকি একবারও ঘুমায় নি। এই
মেয়ে আমাকে গালাগাল ছাড়া আর কিছু
করতে পারে, সেটা আমার কল্পনাতেও ছিল
না।প্রতিদিনই আমাকে দেখতে আসে, আর
মা না থাকলে জোর করে খাইয়ে দিয়ে
যায়। আর আমি লজ্জার মাথা খেয়ে মাথা
নিচু করে পেত্মীর গালাগাল শুনি আর
খেতে থাকি।
“ওষুধ খাইছিস?”
“সকালেরটা মিস গেলো কেন?”
“একা একা নামতে বলছিল কে তোকে?
আমাকে ডাক দেওয়া গেলো না?”
“তুই আজকেও ল্যাপটপ নিয়ে বসছিস?”
এরকম আরও হাজার ঝাড়ি হজম করছি
প্রতিদিনই। সকালের নাস্তা, দুপুরের
খাবার, রাতের খাবারের সাথে পেত্নীর
ঝাড়ি খাওয়াও আমার নিয়মিত রুটিনে
পরিণত হয়েছে।
তারপর কিছু ঘটনা ঘটলো খুব দ্রুত। যা
জানতে পারলাম, তা অনেকটা এরকমঃ
আমার দেওয়া এই পর্যন্ত যত ডায়রি
পেত্নীটার কাছে রয়েছে, তার সবগুলো
খুঁজে বার করা হল। যা করলো আমার
শ্যালিকা(এখনও হয়নি ,পেত্নীর বোনের
কথা বলছি) । কয়েকটা ডায়রি আমাকে
দেওয়া হল। এমনি এমনিতে অবশ্যি পাওয়া
যায়নি। পেত্নীর ছোট বোন জরিনা বেগম।
(আসল নাম জরী।ও অবশ্য নিজেকে জরী বলে
না। জরী নামটা নাকি ‘ব্যাকডেটেড’,তাই
নিজেকে জারা বলে পরিচয় দেয়। আমি
জারা,জরী কোন নামেই ডাকি না, আমি
ডাকি মিস জরিনা বেগম) এই মিস জরিনা
বেগমকে দিয়েই আনাতে হয়েছে। জরিনাও
বোনের থেকে কম যায় না। নগদ ১ ডজন
সাফারি চকলেট কিনে দিতে হয়েছে
আমাকে, এর জন্য। তারপর ডায়রির
লেখাগুলো পড়ে আমার মাথায় বাঁশ। কিছু
কিছু অংশ দিলামঃ
“শূন্যতার শোক সভা,
শূন্যতার যত গান,
দিলাম তোমার মুকুটে
আমার যত অভিমান।
এটা আজকে আরুকে বললাম। আর ছাগলটা
আমাকে বলে কি না,“বাংলাদেশে কাকের
থেকে কবির সংখ্যা বেশী…বুঝলাম।”
মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। এটা একটা
গানের লাইন । আর ও ভাবছে আমি কবিতা
বানিয়ে বলছি । ওর জন্য আমি এতকিছু করি,
আর আমাকে এইভাবে অপমান করে। কোন
মানে হয় এর? আমি আর পারছি না। ওকে
বলতেও পারছি না। বোঝাতেও পারছি না ,
কতোটুকু ভালোবাসি, আমি ছাগলটাকে।
মাথাটা খুব ধরেছে। খুব ইচ্ছে করছে ,আরুর
কণ্ঠটা একবার শুনতে। কিন্তু আমি কল
দিবো না। আমি চাইনা, নিজে থেকে দুর্বল
হতে। বুঝতেও দিতে চাইনা, কতোটা
ভালোবাসি আমি ওকে। তার জন্য আমার
যত কষ্ট হওয়ার হোক।”
“একটা ব্যাপার আমি খেয়াল করে দেখলাম,
আমি যেসব কাজগুলো বেশি অপছন্দ করি,
আরু গর্দভটা সে কাজগুলো বেশি করে করে।
হুমমম… আমিও ছাড়ছি না। দাঁড়াও চান
মানিক, তোমাকে পেয়ে নিই।”
“হি হি হি। আজ পেয়েছি। লেমন কালারের
শার্টটাতে পুরো নায়কের মতো লাগছিল
আরুকে। গাধাটাকে বললাম, যে ওকে জঘন্য
লাগছে। আমি শিওর, আরু ছাগলটা এখন
থেকে এ শার্টটাই বেশি বেশি করে পরবে।
হি হি হি, আস্তা গরু একটা। লাভ ইউ মাই
ছাগলটা। হি হি হি।”
“গাধাটাকে আজকে শুধুশুধু অনেক বকা-ঝকা
করলাম। আমারই এখন খারাপ লাগছে।
আরেফিন নামে কেউ কখনো নেই, ছিল না।
এই সহজ কথাটা কি করে বুঝাবো আমি এই
ছাগলটাকে। বারবার বলে আরেফিন নাকি
আমার এই-সেই। রাগের মাথায় আমিও বলে
দিয়েছি। হ্যাঁ, আরেফিন আমার সব। যা
আমার চোখের সামনে থেকে, কক্ষনো যেন
আর না দেখি, কল-মেসেজ কিচ্ছু দিবি না।
ওকে আমি কেমন করে বলি যে, আরেফিনের
নাটকটা না করলে যে তুই আমাকে কখনোই
কিছু বলতি না। আমি মেয়ে হয়ে তোকে,
ভালোবাসি কথাটা বলতে পারছিলাম না,
দেখেই তো এই ‘আরেফিন’ বানিয়েছিলাম।
যাতে তুই আমাকে ভালোবাসিস। সেই কবে
একবার বলেছিলি, আর কি বলবি না? নাকি,
শেষ পর্যন্ত আমাকে দিয়েই বলাবি?
ধ্যাত্তেরি… কিচ্ছু ভালো লাগেনা। কিচ্ছু
না। মিসিং ইউ আরু ।”
“ছাগলটা একবারের জন্যও কল করলো না। কি
করে, কে জানে। রাগের মাথায় বলছিলাম,
কল,মেসেজ না দিতে, আর গর্দভটা সেটা
অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে। কিচ্ছু ভালো
লাগছে না। মোবাইলটার দিকে তাকাতে
তাকাতে তো চোখ ব্যথা করে ফেলবো। আর
নবাবজাদা বোধহয় নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে।
প্লীজ আরু, একবার কল কর , প্লীজ।”
এটুকু পড়েই তো আমার আক্কেল গুড়ুম। ৭ টা
ডায়রি আছে টোটাল। সবগুলো পড়া সম্ভব
না। আচ্ছা, আমি হাসপাতালে থাকার সময়
পেত্নীটা কি করেছে, সে ডায়রিটা কি
আছে? খুঁজতে লাগলাম।
পেয়েছি!!! রক্তে ভেজা মলাট। দেখে কেমন
যেন গা শির শির করছিলো আমার।
ডায়রিটা খুলে পড়তে লাগলাম।
“শয়তান, কুত্তা, বদ আরু। বোকার মত কেন
রাস্তার মাঝে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলি?
জ্ঞানও ফিরছে না। ডাক্তার বলে দিয়েছে
৭২ ঘণ্টার পরও যদি জ্ঞান না ফিরে তাহলে
আর ……… আমি আর ভাবতে পারছি না।
আল্লাহ, তুমি সহায় হও। আমার আরুকে সুস্থ
করে দাও। আমি আর কিচ্ছু চাইবো না।
কোনোদিন আমার এই আরুকে কষ্ট দিব না।”
“আজকে ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি
অনেকক্ষণ, আরু কে নিয়ে। ডাক্তার বললেন,
আরুর যদি জ্ঞান ফিরেও, ওর এম্নেসিয়া
হতে পারে। এতে করে পুরনো স্মৃতি মানুষ
ভুলে যায়। আরুরও কি এমন হবে? ও কি
আমাকে ভুলে যাবে? এই ছাগলটাকে ছাড়া
আমি থাকবো কি করে? ওর জ্ঞান তো
এখনো ফিরছে না। আল্লাহ, তুমি ওকে সুস্থ
করে দাও, আমি আর কিচ্ছু চাইনা। কিচ্ছু
না।”
“গাধাটার আজ জ্ঞান ফিরেছে!!!!!!! আল্লাহ
তোমার দরবারে হাজার শুকরিয়া। আজ
ভোরের দিকে গর্দভটার বেডের পাশে বসে
কাঁদছিলাম, আর হঠাৎ দেখি গাধাটা
আমার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছে।
আমার ডাক্তারের কথা মনে পড়লো । ও কি
তাহলে আমাকে চিনতে পারছে না? কাছে
এসে ডাক দিতেই, আমার সাথে আপনি
আপনি করে কথা বলা শুরু করলো। খুব ঝগড়া
না হলে আরু কখনো আমাকে আপনি বলে
ডাকে না। আমার ভয় হতে লাগলো। তারপর
ও আমাকে হঠাৎ করেই সেই পরিচিত
“পেত্নী” বলে ডাক দিলো । আমি কক্ষনো
এই নামটা সহ্য করতে পারতাম না। কিন্তু
আজকের কথা আলাদা। আমি আমার এই
আরনাফ নামক গাধাটাকেই জড়িয়ে ধরলাম।
আমার একটুও লজ্জা করছিলো না। কেন যেন
এই খরগোশের মতো কানওয়ালা গর্দভটাকেই
আমার স্বামী বলে মনে হচ্ছিলো। যাকে
জড়িয়ে ধরলে পাপ হয়না। নিজেকে পুণ্যবতী
বলে মনে হয়।”
ডায়রি বন্ধ করে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে
রইলাম। কাঁদবো, নাকি হাসবো, বুঝতে
পারছি না।
ডায়রির লেখাগুলো আন্টি (পেত্নীটার মা)
পড়েছেন, নিশ্চয়ই । আমার মা ও জানেন।
এমনকি জরিনা ও জানে। শুধু পেত্নীই
জানেনা যে, আমরা সব জানি!!!
পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। ডাক্তারদের
তো এই সময় আসার কথা না। তাহলে কি
পেত্নী? নাহ। পেত্নীও না। জরিনা বেগম
এসেছেন।
“গুড আফটারনুন, জরিনা বেগম।”
“গুড আফটারনুন, জিজু।”
“কি বললি?”
“গুড আফটারনুন, বললাম।”
“শেষে কি বললি?”
“জিজু ডাকলাম, দ্যাট মিনস দুলাভাই।”
বলেই খ্যাক খ্যাক করে হাসতে লাগল।
“হাসাহাসি বন্ধ কর। আর এইসব জিজু , ফিজু
ডাকবি না। জিজু,ফিজু… হিজু টাইপ। হিজু
মানে বুঝিস? হিজড়া। আমাকে কি হিজড়া
মনে হয় নাকি?”
“তুই কি সারাজীবন এভাবেই কথা বলে
যাবি নাকি, ভাইয়া?”
“নাহ, আরও ভয়ংকর হওয়ার খায়েস আছে।
তোর আপু আসে না,কেন?”
“ওরে, না দেখে আর থাকতে পারছে না।
রাধা বিনে কৃষ্ণ যেন একেলা!!!”
“আরিব্বাপরে , রাধা কৃষ্ণ ও শিখে গেছিস?
আমাদের বিয়ে না করে তো তোর আগে
একটা বিয়ে দিয়ে দেওয়া দরকার। বেশি
পেকে গেছিস।”
“এহ্ , আমি বিয়েই করবো না। আপু সারাক্ষণ
তোর কথা ভেবে কাঁদে। এইসব ঢং এ আমি
নাই।”
“থাকবি, থাকবি। ফট করে একদিন প্রেমে
পড়ে যাবি। আমার তো মনে হয়, অলরেডি
প্রেমে পড়েই আছিস। মেয়েদের প্রেমে
পড়ার প্রথম লক্ষণ ‘আমি বিয়ে করবো না’
টাইপ কথা বলা। বাথরুমে গিয়ে দেখ ,
আয়না আছে। তুই লাল হয়ে গেছিস। তার
মানে আমার ধারনা সত্য। এখন তোর আপু
কেন আসছে না, সেটা বল। নাহলে আমাদের
আগে তোর বিয়ে দিয়ে দিবো।”
“আপু, তোর জন্য স্পেশাল ডিশ বানাচ্ছে।
এসে পড়বে, একটু পরই। এখন মাই ডিয়ার জিজু
, আমাকে কি দিবি বল।”
“তোকে আবার কি দিবো?”
“না দিলে , সবাইকে বলে দিবো , কিন্তু।”
“কি বলে দিবি?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস
করলাম।
“আপু যে তোকে কিস করেছে, সেটা আমি
দেখেছি। সবাইকে বলে দিবো,কিন্তু।”
ষড়যন্ত্রকারীর মতো ভঙ্গি করে
হাসছে,আমার ভবিষ্যৎ শ্যালিকা। স্লো
ইয়র্ক মেরেছে। সামনে এগিয়ে সাকিব আল
হাসান টাইপ সুপার স্কুপ মারতে হবে।
“বল জিজু কি দিবি?”
“তোর হিজু নাম ডাকা বন্ধ কর আগে।”
“ওকে… দুলাভাই কি দিবি,তুই?”
“দুলাভাই ও ডাকিস, আবার তুই তুই ও করিস।
ফাইজলামি?ঠিক করে ডাক।”
“অউউউউউফফ…… ওকে… আমার একমাত্র
আপুর,একমাত্র জামাই। আপনি আপনার
বিয়েতে আমাকে কি দিবেন?”
“দু’গালে ২ টা করে টোটাল ৪ টা থাপ্পড় ।
তারপর তোর কোকড়াচুলো, হ্যাংলা, চশমা
ওয়ালার কথা আন্টিকে বলে দিবো।” হাই
তুলতে তুলতে আন্দাজে ঢিল ছুড়লাম, এই
ছেলেটার সাথে বেশ ক’দিন ধরেই কথা
বলতে দেখেছি জরিনাকে। ঢিল জায়গা
মতোই লেগেছে, জরিনার মুখ পুরো সাদা
হয়ে আছে।
“কি, মিস জরিনা বেগম গিফট পছন্দ
হয়েছে?”
“ভাইয়া, প্লীজ কাউকে বলিস না
কিছু,প্লীজ।”
“হুমমম…এরকম ব্ল্যাক মেইলিং প্ল্যান করলে
আমিও কিন্তু ছাড়বো না। মনে রাখিস।
কিন্তু ছেলেটা কিন্তু ভালোই। তোর পছন্দ
ভালো।”
“হু, আর লাগবে না, পাম মারা।“
“তোর আপু আসে না কেন রে………”
“আহারে …বউ পাগলা দুলাভাই…”
এই সময় পরীর প্রবেশ।
“আরু ভাইয়া, নে তোর নায়িকা হাজির।
আমি গেলাম। নাহলে তোদের ‘প্রাইভেট’
কথাবার্তায় সমস্যা হবে।”
“জারা, বেশি বেশি বলছিস কিন্তু। বাসায়
আয় আজকে, তোর খবর আছে। ”
“তোর খবর তো আরও এক্সক্লুসিভ।” হেসে
বের হয়ে যেতে জারা বলতে লাগল।
আমি চুপচাপ পেত্নীর দিকে তাকিয়ে
আছি। ছয় বছর আগে যেমন অনুভূতি হতো,
সেরকম লাগছে এখন। বুক কাঁপছে আমার।
এতো জোরে হৃৎস্পন্দন হচ্ছে আমার যে, ভয়
হচ্ছে পেত্নীটা শুনে ফেলতে পারে।
“ডাক্তার তোকে রেস্টে থাকতে বলেছে
না? এতো বকবক করিস কেন? বিকালের ওষুধ
খাইছিস? জানতাম, খাবি না। খেলে তো
সুস্থ হয়ে আমার সাথে তোকে ঘুরতে হবে।
সেটা তো আর তুই চাস না……”
গোলাপি রঙ এর জামা তে আজ
পেত্নীটাকে লাগছে গোলাপি পরীর মতো।
ওর এতো ঝাড়ি শুনলে কেউ কি বুঝবে,
কতোটা ভালোবাসা দিয়ে আমাকে ঘিরে
রেখেছে মেয়েটা!
“আমাকে বিয়ে করবি?”
ঝাড়ি থেমে গেলো পেত্নীর।
“কি বললি?”
“তুই আমাকে বিয়ে করবি?”
“উষ্ঠা খাবি।”
“কেন?আমি খারাপ?”
“না তো, তুই বেশি ভালো। এইটাই সমস্যা।”
“তাহলে মা কে বলে বিয়ের কথা বলবো?”
“ছাগলা…ছাগলামি থামা…”
“এই না বললি , আমি ভালো। তোর মতো ১
টা বউই তো আমার দরকার। আমাকে রান্না
করে খাওয়াবি, অসুস্থ হলে আমার সেবা
করবি…”
“ও… কাজের বেটি পাইছিস আমাকে,না?
তাহলে আমাকে কেন? আমার থেকে এসব
কাজ ভালো পারে, আমাদের রহিমা’র মা।
ওনারেই বিয়ে কর গিয়ে…যাহ।”
“তুই তো আমাকে ভালোবাসিস…তাই…”
“এহ…আমার তো ঠেকা পড়ছে…”
“না পড়লে … পড়বে…”
“যা ভাগ…”
এরকম করে কথা আগেও চলেছে…আজও চলছে,
চলবেও। অসম্ভব মায়াবতী এই মেয়েটাকে
পেয়ে আজ নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে
ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে। এই মায়াবতী
“পেত্নী”র মায়া কে অগ্রাহ্য করা আমার
পক্ষে সম্ভব হয়নি। অবশ্য তার দরকারও
হয়নি।
এরপরের ঘটনা আর তেমন কিছু না।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার ২
সপ্তাহের মাথায় আমাদের দু’পরিবারের
পূর্ণ সম্মতিতে, আমাদের বাগদান হয়। আর
বিয়ে হয় দু’বছর পর।
তারও দু’বছর পর…আবারও সেই হাসপাতালে
আসতে হল। না,না…আবারো কারো পৃথিবী
ছেড়ে চলে যাবার আশংকায় নয়। পৃথিবীর
বুকে নতুন এক মুখের জন্য আসা।
আমি আমার ছেলেকে কোলে তুলে নিলাম…
পিট পিট করে তাকাচ্ছে আমার দিকে।
চোখগুলো আমার মতোই হয়েছে দেখতে।
“ওর ডাকনাম তুই দিবি, ভালো নাম আমি
দিবো। তবে যা ই রাখিস, কম্পিউটার
পার্টস এর নামে নাম দিস না, প্লীজ।”
বিয়ের দু’বছর পরও আমরা এখনও তুই,তুই করেই
কথা বলি। আমাদের ছেলে বড় হয়ে
আমাদের অবস্থা দেখে নিশ্চয়ই অবাক হয়ে
যাবে। হলে হবে।
“কি? এখন কি নাম রাখতে ডিকশনারি খুলে
বসবি? বল।”
“এখনই?”
“তো, নয়তো কি? ওর বিয়ের সময় গিয়ে নাম
রাখবি?”
আগামীকাল হরতাল… বাইরে মিছিল চলছে।
হঠাৎ করেই নামটা মাথায় এলো।
“একটা নাম ভাবছি। কিন্তু তুই রাখবি
নাকি, বুঝতে পারছি না।”
“ঐ গাধা, ছেলে কি আমার একার? তুই বাপ
হয়ে নাম দিতে পারবি না? তবে যা-ই
রাখিস, কোন সফটওয়্যার, পার্টসের নামে
নাম রাখা চলবে না। আমার ছেলে
কম্পিউটার না।”
“মিছিল।”
“ফান করে বলছিস, নাকি সিরিয়াসলি?”
“সিরিয়াসলি।”
“হুমমম… নামটা ভালো। আমার পছন্দ
হয়েছে।”
“যাক, শান্তি।”
“কেন? তুই কি ভাবছিলি?”
“না…ভাবছিলাম,আমাদের ছেলেটার যদি
আর একদিন পরে জন্ম হতো, তাহলে নাম
রাখতাম ‘হরতাল’। সারাজীবন একটা পেইন
নিয়ে থাকতে হতো। ওর বন্ধুরা ওর নাম
নিয়ে অনেক হাসাহাসি করতো, রাস্তায়
দেখা হলে বলত, ঐ দেখ, হরতাল যায়।
আন্দোলন করতে।”
এক মুহূর্ত আমার দিকে তাকিয়ে বিখ্যাত
সেই মিষ্টি হাসি দিয়ে কেবিন কাঁপাতে
লাগলো, আমার পেত্নীটা।
মিছিলও হঠাৎ করে কাঁদতে লাগলো। ভয়
পেয়ে, নাকি নিজের নাম নিয়ে বাবার
করা রসিকতা শুনে, তা ঠিক বোঝা গেলো
না।

No comments:

Post a Comment