Friday, November 18, 2016

গল্প: আরিপ্পাস।।।প্রথম দেখায় ই বালুবাসা।।।।

গল্প: আরিপ্পাস।।।প্রথম দেখায় ই বালুবাসা।।।।

_এই যে মিষ্টার জানালার ধারে
ক্যান বসছেন।
_বাসটা কি আপনার যে জানালার
ধারে বসা কি মানা।
কথা হচ্ছে শ্রাবনের সাথে একটি
অচেনা অজানা একটি মেয়ের।
শ্রাবন ঢাকা মহাখালী থেকে
সিরাজগঞ্জ যাচ্ছে।
_আজব তো যেতে বলছি যান,এতো কথা
বাড়ান কেনো।
_আচ্ছা যাচ্ছি অস্থির কোনহার।
_থ্যাংকু।
_উক্খে।
_ওয়েক্খাম।
বাস চলছে দুজনে বসে আছে।
_হঠ্যাৎ শ্রাবন জিজ্ঞাসা করলো।
_এই যে আপু আপনার নামটা কি জানতে
পারি।
_জ্বী না।
_নাম জানলে কি আপনার বিয়ে
ভেঙে যাবে।
_উফ আপনি না আসলেই বান্দর।
_মানলাফ তবুও বলুন।
_জান্নাত খুশি তো এবার।
_খাপে খাপ।
_মানে।
_আপনার নাম তিন অক্ষরের আমার নাম
ওহ্ তিন অক্ষেরের তাই একটু টান অনুভব
করছি আর কি।
.
_ওহ্ আচ্ছা তাই।
_হুম,তো আপনার বাসা কই কিসে পড়েন।
_বাসা সিরাজগঞ্জ,পড়ি ডিগ্রী
ফাইনাল ইয়ার।
_বাহ্ সুন্দর আমার বাসাও সিরাজগঞ্জ।
_ওহ্ সেটা কি জানতে চাচ্ছি।
_না,একই এলাকার তারপরেও দুরের
রাস্তা বাঙালি তো বাঙালিকে
চিনবে।
_ভাল,তো আপনি কিসে পড়েন।
_এইতো এমবি করছি হ্যাকাউন্টিং এর
উপর।
_হ্যাকাউন্টিং আবার কেমন
সাবজেক্ট।
_আরে এ্যাকাউন্টিং পারিনা তো
তেমন অংক করলো মাথা হ্যাং হয় তাই
হ্যাকাউন্টিং নাম রাখছি।
_কেনো অংক পারেন না,না পারলে
এমবিএ ওহ্ এমনি এমনি করছেন না।
.
_আরে যে স্কুল লাইফে একদিন ওহ্
অংকে পাশ করেনি সে কিনা
অংকের বস হবে বলেন।
_এটা কোনও কথা না বিল গেটস তো
কম্পিউটার সাবজেক্ট পারতো না তার
বন্ধু অনেক পারদর্শী ছিলো,এখন বিল
গেটস সফটওয়ার কোম্পানির মালিক
আর তার বন্ধু সেই।
_এই যে থামেন থামেন এসব মুখস্ত আছে
ম্যাডাম।
_এই ম্যাডাম বললেন ক্যান।
_যে ভাবে লেকচার শুরু করছেন তাতে
বাস থেকে লাফ দেবার ইচ্ছা করছে।
.
_ভাল কথা গায়ে লাগবে না জানতাম
তো।
অনেকক্ষন পর।
_কি করেন হেড ফোন লাগিয়ে।
_হেড ফোন লাগিয়ে সবাই কি করে।
_ঐইতো প্রেম করে।
_সব মেয়েকে এক মনে হয়।
_না তা না।
_তো কি।
_প্রেম করেন।
_না।
_কেনো।
_মনের মতো কাউকে পাই না তাই।
_প্রেম করবেন।
_কার সাথে,কেমন করে।
_পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দেই।
হঠ্যাৎ জান্নাত ডাক দিলো
কন্টেকটারকে।
_মামা একে বের করে দিন তো।
_কেনো।
_ফালতু লোক কোথাকার বেশি বুঝে।
শ্রাবনকে বাস থেকে নামিয়ে দেয়া
হলো মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেলো।
হঠ্যাৎ বাসটা থেমে
গেলো,যাত্রীরা সবাই নামতাছে।
শ্রাবন এগিয়ে গেলো,জান্নাতের
সাথে দেখা।
_কি হইছে ম্যাডাম।
_আমার কপাল গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে
যাবে না বলতাছে।
_দেখছেন আমাদের কি মিল।
_হুম,সরি।
_কেনো কেনো।
_আপনার সাথে খারাপ ব্যাবহার করার
জন্য।
_নো প্রবলেম বাঙালি তো
বাঙালিকে চিনবে।
_বাড়ি যাবো ক্যামনে।
_আরেকটা গাড়িতে চড়ে।
_যে ভীড় দেখছি,একে তো রাত হচ্ছে
দুয়ে তো ভীড় হেটে যাবো নাকি।
_আমি আছি না কাধে নিয়ে যাবো।
.
_ফ্যাযলামো রাখেন।
একটার পর একটা গাড়ি যাচ্ছে সব
ভর্তি।
রাত বাজে আটটা প্রায়,একটা বাস
থামলো তাও ছাদে জায়গা হবে।
_এই যে ম্যাডাম ছাদে যাবেন।
_না যাবো না আপনি যান।
_ধরেন আপনি যদি আমার গার্লফ্রেন্ড
হতেন রেখে যেতে পারতাম।
_না না।
_তো চলেন।
জান্নাত প্রথম দেখায় শ্রাবনকে পছন্দ
করে ফেলছে।
কেই বা পছন্দ করবে না প্রফেশনাল তার
সুপার প্লাস ব্যাকগ্রাউন্ড ওহ্ হিট সব
মিলিয়ে হেব্বি।
শ্রাবনের আগে জান্নাতকে উঠিয়ে
দিলো
শ্রাবন,আর শ্রাবন ওর পিছে পিছে
উঠছে।
_পড়ে যাবো কিন্তু।
_পড়বেন না আমি আছি।
হঠ্যাৎ জান্নাতের পা পিচলে গেলো
হাত ফসকে শ্রাবনের গায়ে পড়লো।
বাস চলতে শুরু করছে ইতিমধ্যে।
_জান্নাত কেদে ফেললো।
_কাদেন কেনো আমি আছি না আমি
থাকতে কিছুই হবে না।
শ্রাবন জান্নাতকে ধরে উপড়ে তুললো।
জান্নাত শ্রাবনকে জড়িয়ে আছে।
উপড়ে উঠলো ওরা দুজন বসে পড়লো
ছাদের এক কোনে।
_উফ ছাদে কেউ নাই।
_ক্যান আমি কি মানুষ না।
_আপনি মানুষ বাট বকবক করেন বেশি।
.
_ওহ্ সরি আর করবো না।
_স্ট্যাচু হয়ে গেলেন ক্যান,সরি তো।
_সরি কেনো।
_আপনি কথা না বললে খারাপ লাগে।
_আমাকে জোকার মনে হয়।
_না আমার বিএফ মনে হয়।
_কি কি।
_সরি মুখ ফসকে গেছে।
_ওহ্।
হঠ্যাৎ ঝুম বৃষ্টি নেমে এলো।
একটা কাগজ মড়িয়ে দুজনে
পাশাপাশি বসে আছে।
এর মধ্যে জোড়ে একটা বিদ্যুৎ চমকালো।
জান্নাত শ্রাবনকে জড়িয়ে ধরলো।
_প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবে না তো।
_ওমা কি থেকে কি ভাবছেন।
_নো আপনি অনলি তুমি প্লিজ।
_ওকে ম্যাডাম।
_আমি তোমাকে বড্ড ভালবাসি।
_একদিন তো মাত্র দেখা এর মধ্যেই
ভাল লাগলো।
.
_ভাল লাগা বা ভালবাসার সময়
লাগে না।
_দেখো তোমাকে আমি লাভ করতে
পারবো না।
জান্নাত শ্রাবনকে জড়িয়ে অবস্থায়
ছেড়ে দিলো।
_কেনো আমি দেখতে খারাপ।
_তা না।
_তো কি।
_তোমাকে চিনলাম না বুঝলাম না
না ভেবে কিছু করা ঠিক না।
_চিনবা সময় আছে তো শুরুতেই না
করবা।
_তুমি যে আর ছেলেদের সাথে এমন
করো নি তার গ্যারান্টি কে দেবে।
_কি বললা তুমি,আমাকে বাজে মেয়ে
মনে হলো।
_আরে বাবা সেটা বলিনি।
_ওকে ভাল থেকো।
_কই যাবা তুমি।
_লাফ দেবো।
সত্যি সত্যি লাফ দিতে গেলো
জান্নাত হাতটা টেনে ধরলো।
_এরকম পাগলামী কেনো করো।
_আমি পাগল তো তাই,ভালবাসবে কি
না।
.
_জোর করে ভালবাসা আদায় করবা।
_আমি সেটা বলছি।
_ওকে আই লাভ ইউ,খুশি তো এবার।
_হুম লাভ ইউ টু।
দুজন বৃষ্টির মধ্যে কাগজটা মড়িয়ে বসে
পড়লো।
দেখতে না দেখতে তারা
সিরাজগঞ্জ এসে পৌছলো।
দুজনে নেমে পড়লো রাত তখন বারোটা
বাজে।
_তুমি বাসায় যেতে পারবে জান্নাত।
_এতো রাতে একা।
_চলো এগিয়ে দিয়ে আসি তোমার
বাসায়।
_চলো।
দুজনে হেটে বাসায় পৌছলে।
জান্নাতদের বাসা একদম শুনস্যান,মনে
হয় বাসায় কেউ নাই।
_জান্নাত ডাকছে আম্মু কই তুমি।
_জান্নাতের আম্মু অসুস্থ শরীর নিয়ে
সাড়া দিলো।
জান্নাত দৌড়ে গেলো।
_আম্মু তোমার শরীর কেমন।
_ভাল না মা,ছেলেটা কে।
_আম্মু আমার ফ্রেন্ড রাতে একা একা
আসতে হবে তাই দুজনে আসছি।
_ভাল করছিস,যা তোরা দুজনে কিছু
খেয়ে নে।
_ওকে আম্মু।
_জান্নাত আমি কি বাসায় যাবো না
নাকি।
_যাবা খেয়ে।
_জান্নাত একটা কথা বলি।
_হুম বলো।
_তোমার আব্বু কই।
_আব্বু নেই,জান্নাত হু হু করে কেদে
দিলো।
.
_কাদে না আমি আছি তো।
_জানো শ্রাবন পৃথীবিতে আপন বলতে
আমার আম্মু আব্বুুই ছিলো আব্বু তো
চলেই গেলো।
আম্মু অসুস্থ জানিনা কি হবে,একটা কথা
বলি।
_হুম বলো।
_তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না।
_না যাবো না।
_প্রমিজ করো।
_প্রমিজ।
হঠ্যাৎ জান্নাতের আম্মু চিৎকার
করলো।
ওরা দৌড়ে গেলো এবং হসপিটালে
নিয়ে গেলো।
অনেক দেরি হয়ে গেলো ততক্ষনে।
_আম্মু আর নেই শ্রাবন।
_কি বলছো এসব।
জান্নাত অঝড়ে কাদছে,শক্ত করে
জড়িয়ে ধরে থাকলো শ্রাবন।
হ্যা সব কৃত কাজ সম্পন্ন হলো।
জান্নাত বড় একা হয়ে গেলো কে
দেখবে জান্নাতকে।
_শ্রাবন তুমি চলে যাও বাসায়।
_তুমি একা যে কেমন লাগে বলো।
_দেখো আমার মা,বাবা বলে
পৃথীবিতে কেউ নেই আমার সাথে
জড়িয়ে তোমার জীবনটা নষ্ট হতে
দেবো না।
_তুমি কি আমায় সত্যি ভালবাসতে।
_হুম।
_সব গুছিয়ে নাও।
_কেনো।
_আমার বাসায় যাবা এক্কেবারে।
_তুমি বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ।
.
ব্যাগ পত্র সব গুছিয়ে শ্রাবন
জান্নাতকে নিয়ে গেলো।
শ্রাবন জান্নাত এক সাথেই আসলো
শ্রাবনের বাড়িতে।
_এই যে ম্যাডাম ভিতরে আসুন এইটা
আপনার আসল বাড়ি।
_আম্মু দেখো কাকে নিয়ে আসছি।
_সালাম করো জান্নাত।
_আম্মু তুমি সবসময় বলতে একটা বৌ মা
চাই তাই আজ ধরে আনলাম জোর করে।
_ওহ্ তাই ভাল করছিস কতো সুইট আমার
মা'টা।
_তোমার বাসা কই মা, কে কে আছে।
_জান্নাত অঝড়ে কেদে দিলো।
_শ্রাবন আম্মুকে সব খুলে বললো।
_এ এ আমার বৌ মা'টা কাদে না
আমিই তো তোমার আম্মু না।
জান্নাত জড়িয়ে ফেললো আম্মুকে।
_কে কোথায় আছিস কাজী ডাক বিয়ে
হবে আজ।
_আম্মু আজকেই।
_শ্রাবন কথা কম তোর আম্মু যা বলে
তাই হয়।
অতঃপর বিয়ে সম্পুর্ন হলো।
বাসর ঘড়ে বসে আছে জান্নাত।
_বাঙালি তো বাঙালিকে চিনো
তাই না ম্যাডাম।
_ফাযিল আম্মুকে কিন্ত ডাকবো।
_অভিযোগ কি দিবা।
_তুমি আমায় মারছো ধরে।
.
_বাসর রাতে বৌ কে মারার কথা
শুনলে আম্মু ঝাটা পিটা করবে।
_হিহি ঐই কি করো।
_একটু মারামারি করি আজ।
_ছাড়ো ফাযিল বদমাইশ।
দেখতে দেখতে দুইটা বছর কেটে
গেলো
ওদের ঘড়ে ফুটফুটে একটা মেয়ে এলো
নাম রাখলো ওরা অথৈই।
দেখতে জান্নাতের আম্মুর মতো সেম।
চলতেছে ওদের আগামীর পথচলা
বেচে থাকুক সবার ভালবাসা।
Written By
__________Fardin Ahmed Raju

No comments:

Post a Comment