Saturday, November 5, 2016

গল্প: আমার রাইসা!!!

গল্প: আমার রাইসা!!!

আজ খুব অপ্রত্যাশিত ভাবে রাইসা দেখে
বেশ অবাক হলাম।কারণ ও আজ শাড়ি পড়ে
আমার সাথে দেখা করতে এসেছে।দূর থেকে
মনে হচ্ছিল যেন সেই জায়গায় অন্য কেউ
বসে আছে।কাছে এসে আমার ঘোরটা
ভাঙ্গল।কারণ দূর থেকে আন্তাজ করতে
পারছিলাম না যে এটা রাইসা।ও অন্যদিকে
মুখ করে তাকিয়ে আছে।আমাকে এখনো
দেখতে পায় নি।আমি ওর কাছাকাছি
দাড়িয়ে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি।
হাল্কা বাতাসে চুলগুলো উড়ছে।মুখে এক
ধরনের মায়া ফুটে উঠেছে।বেশ সুন্দর
লাগছে আজ রাইসাকে।সবসময় সুন্দর লাগে
না তা নয়।হয়ত বাঙ্গালী মেয়েদের
শাড়িতে তাদের সৌন্দর্য পুরোপুরি ভাবে
প্রকাশ পায়।কিছু একটা টের পেয়ে ও ঘুরে
আমার দিকে তাকাল।আমাকে দেখে একটা
হাসি দিল।কিছুটা শুকনা হাসি বলা যায়।
কারণ এর মধ্যে অপেক্ষা করার বিরক্ত বোধ
টা পুরোপুরি ফুটে উঠেছে।কারণ আজ ও
দেখা করতে বেশ একটা লেট করেছি।কিন্তু
এতে ও রাইসার কোন আক্ষেপ নেই।আমার
সাথে দেখা করতে পারলেই মেয়েটা খুশি।
আমি কিছু না বলে ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
দেখলাম ও কিছু বলছে না।কিছুক্ষন
নিরবতার পর আমি বললাম।
.
-তোমাকে কিন্তু আজ অনেক সুন্দর লাগছে।
.
আমার কথাটা শুনে ও লজ্জা পেয়ে নিচের
দিকে তাকিয়ে আছে।ওর উড়ন্ত চুল গুলো ওর
কাছে গুছে দিতে খুব একটা শখ হল আমার।
তাই দেরি না করে ওর চুল গুলো ওর কানে
গুছে দিলাম।এতে ও আরও বেশি লজ্জা
পেল।ওর লজ্জা পাওয়া মুখটায় যেন আরও
বেশি মায়া ফুটে উঠেছে।ও লজ্জা মুখে
আমাকে বলল।
.
-চলনা এই দিক থেকে একটু হেটে আসি।
.
আসলে তাই বিকাল বেলা বিদায় তেমন
একটা রোদ ও নেই।চারদিকে সাদা কাশফুল
পাশে প্রবাহমান নদী।বাতাসে কাশফুল
গুলো দোলছে।এরকম একটা সুন্দর পরিবেশে
প্রিয় মানুষটির সাথে হাটা মন্দ হবে না।
ওর কথায় সায় দিয়ে বললাম চল।দুইজনে
নদীর পাশ গেয়ে হাটছি।আমি হঠাৎ
রাইসাকে বললাম।
.
-তোমার হাতটা একটু ধরি।
.
ও আমার কথাটা শুনে ক্ষীণ দৃষ্টিতে আমার
দিক চেয়ে আছে।এভাবে কোনদিন ও আমার
দিকে তাকায়নি।মনে হচ্ছে এটা জ্ঞিজেস
করাতে খুব একটা ভুল করে ফেললাম।
.
-কি এটা আমাকে জ্ঞিজেস করতে হয়
নাকি।
.
আমি বেশ খুশি হয়ে ওর হাতটা ধরে আবার
ও হাটতে লাগলাম।এতে মনে পড়ে
সেদিনের কথা যেদিন ক্লাস শেষ হবার পর
কান্না মুখ নিয়ে কলেজের এক কোনায় বসে
ছিলাম।কারণ তার পরেরদিন ছিল পরীক্ষার
ফি দেওয়ার শেষ তারিখ।কিভাবে এত
টাকা জোগাড় করব মাথায় কিছু আসছিল
না।দুইটা টিউশনির অগ্রিম টাকা নিয়ে ও
এতে অর্ধেক টাকা ও হল না।বাবা অসুস্থ
অন্যদিকে পরিবার সামলানো এসবের মধ্যে
কোন মুখে বাবার কাছে থেকে টাকা চাইব।
আমার মাথায় কোন কিছু কাজ করছিল না।
তখন কান্না করা ছাড়া আমার কিছু করার
ছিল না।
কারণ এই টাকা জোগাড় করতে না পারলে
চোখের সামনে তিল তিল গড়ে তোলা
সপ্নটা নিমিষের ভেঙ্গে যাবে।হঠাৎ
পিছনে আমার কাধে কারো হাতের স্পর্শ
পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি রাইসা
দাড়িয়ে আছে।
ওকে দেখে কোনমতে চোখ মুছার চেষ্টা
করছিলাম।
.
আমি কিছু বুঝে উঠার আগে ও আমার হাত
ধরে কোথায় যেন আমাকে নিয়ে যাচ্ছে।
আমি কোন কিছু না বলে ওর সাথে
যাচ্ছিলাম।রাইসা আমাকে একটা বাড়িতে
নিয়ে এল।পরে বুঝতে পারলাম এটা ওদের
বাড়ি।আমাকে বসিয়ে রেখে ও কোথায়
যেন গেল।কিছুক্ষন পর এসে ও আমার হাতে
একটা খাম দিল।আমি জানতে চাইলাম এটা
কি।
.
-এটা দিয়ে তোমার পরীক্ষার ফি এর
ব্যবস্থা হয়ে যাবে।(রাইসা)
.
আমি কোনমতে এই টাকাটা নিতে
চাচ্ছিলাম না।তবুও আমাকে জোড় করে
টাকাটা পকেটে ডুকিয়ে দিয়ে এই কথা
বলেছিল।
.
-পরে যখন তোমার টাকা হবে তখন না হয়
আমাকে দিয়ে দিও।
.
সেই থেকে রাইসার সাথে আমার বেশ
একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে।আস্তে আস্তে
মেয়েটা আমার প্রতি এতটা দায়িত্ববান
হয়ে উঠবে এটা আমি কখনো ভাবতে পারি
নি।সবসময় আমাকে কেয়ারিং করত।একদিন
অসুস্থতার কারণে ক্যাম্পাসে না
যাওয়াতে ও খবর নিয়ে আমার মেসে চলে
আসে।এবং এতে আমাকে অনেক বকাবকি
করে।কারণ বিষয়টা ওকে জানায় নি বলে।
আমি চুপচাপ ওর কেয়ারিং আর বকাবকি
শুনছিলাম।সেদিন আমাকে ও নিজ হাতে
খাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে আমি সুস্থ
হওয়া পর্যন্ত আমার পাশেই ছিল।ধীরে
ধীরে বুঝতে পারলাম রাইসা আমাকে ভীষন
ভালবাসে।মেয়েটা মুখ ফুটে কিছুই বলে না।
যা বলার আমাকে বলতে হবে বলে সিদ্ধান্ত
নিলাম।সেদিন ওকে ফোন করে এই নদীর
পারটাতে দেখা করতে বললাম।
.
সকাল থেকে বেশ নার্বাস হয়ে
পড়েছিলাম।কীভাবে কথাটা বলা যায়।
নদীর পারে এসে দেখলাম রাইসা আমার
আগেই এসে বসে আছে।আমি ওর পাশে
গিয়ে বসলাম।নার্বাস হওয়ার কারণে মুখ
দিয়ে কিছু বের হচ্ছিল না।হয়ত ও কিছু আছ
করতে পেরেছিল বিদায় যার কারণে
আমাকে দেখে হাসতেছিল।এতে আমি
পুরোপুরি নার্বাস হয়ে পড়ি।কারণ
ভালবাসা কথাটি ভালবাসার মানুষটিকে
বলাটা চট্টেখানি কথা নয়।সারাজীবন
পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা করার মত।
ভালবাসি শব্দটি মূলত চার অক্ষরের হলে ও
এটি চার অক্ষর বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
মনের ভেতর তিলতিল গড়ে তোলা কঠিন
অজানা হাজার হাজার অনুভূতি আবেগ রাগ
অভিমান দ্বারা শত শত শব্দ অক্ষর দ্বারা
এটি সীমাবদ্ধ।আমার এভাবে চুপ করা দেখে
রাইসা বলল।চল এই দিক থেকে হেটে আসি।
আমি ওর সাথে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ এক কান্ড
করে বসলাম।একটা কাশফুল নিয়ে হঠাৎ ওকে
প্রপোজ করে বসলাম।আমার এভাবে প্রপোজ
করা দেখে ও হেসে বলেছিল।
.
-তুমি এতটাই বোকা প্রপোজ টা পর্যন্ত ঠীক
করে করতে পার না।
.
আমি কথাটা শুনে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে
থাকলাম।পরে বুঝতে পারলাম কথাটার
মানে কি।
আমি উঠে কাশফুল টা ওর কানে গুছে দিলাম
গোলাপ ফুলের মত করে।এতে আমার কাছে
বেশ সুন্দরই লাগছিল।সেদিন হাত ধরে
প্রতিজ্ঞা করেছিলাম।কোনদিন এই হাত
ছাড়বনা।আজ ও সেই হাত ধরে হাটছি।
.
হঠাৎ রাইসা কাশির শব্দে কল্পনা জগৎ
থেকে বাস্তবে ফিরে দেখলাম ও আমার
দিকে বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি ওর দিকে তাকাতেই ও হেসে উঠল।
আমি হাসিটার দিকে তাকিয়ে আছি এক
দৃষ্টিতে।এই হাসির মালিককে চিরদিন
কাছে পাওয়ার সুখের অনুভূতি নিয়ে।

No comments:

Post a Comment