Wednesday, November 16, 2016

গল্প--মিস, প্রেমিকা

গল্প--মিস, প্রেমিকা
.
প্রতিদিনের মত আজও দেরি করে
কলেজে এসেছি । আসলে কলেজে
আমার দেরি করে আসা এক প্রকার রুটিন
হয়ে দাঁড়িয়েছে । হয়তো কোনো দিন
১০ মিনিট লেট না হয় ২০ মিনিট আর এ
কারণে আমাকে প্রতিদিন কোনো না
কোনো মিথ্যে গল্প বানিয়ে স্যারের
কাছ থেকে ক্লাসে ডুকার অনুমতি
নিতে হয়। কিন্তু আজ একটু বেশি দেরি
হয়ে গেছে। আর এর একমাত্র কারণ হল
আমার স্বাদের ঘুম। কেননা এই ঘুম
আমাকে সকালে সহজে ছুটি দেয় না
আর যখন ছুটি দিবে তখন আমার ১২ টা
বাজিয়ে ছুটি দিবে। কিন্তু আজ ঘুমের
কাছ থেকে ছুটি নিয়ে আসতে একটু
বেশি সময় লেগে গেছে। যার কারণে
দীর্ঘ ২৫ মিনিট লেট করে ক্লাসে
এসেছি । তো দেরি করে হোক আর যাই
হোক এখন তো আমাকে ক্লাসে ডুকতে
হবে। তাই ভাবছি নতুন কি গল্প
বানিয়ে স্যারকে বলবো। এসব কিছু
ভাবতে ভাবতে আমার ক্লাসের
সামনে এসে দাঁড়ালাম। যখন ক্লাসের
দরজার সামনে এলাম তখন বিরাট
টাসকি খেলাম। আমাদের ক্লাসে
উনি কে? উনাকে তো আগে দেখিনি।
মনে হয় আমাদের নতুন ম্যাম যাই হোক
আমাকে এবার ক্লাসে ডুকতে হবে তাই
ম্যামের উদ্দেশ্যে বলে উঠলাম.
.
"ম্যাম আসতে পারি?
"ওহ তুমি মনে হয় এই ক্লাসের ছাত্র
তাইনা?
(ম্যাম এটা কি বললেন আমি যদি এই
ক্লাসের ছাত্র না হতাম তাহলে কি
ডুকতে চাইতাম? কথাটা বলার ইচ্ছা
ছিল কিন্তু বললাম না কেননা প্রথমেই
আমি ম্যামের কাছে খারাপ হতে চাই
না)
"জ্বি ম্যাম আমি এই ক্লাসেরই ছাত্র
এখন কি ডুকতে পারি ম্যাম।
(ম্যাম তখন উনার হাতের ঘড়ির দিকে
একবার তাকালেন তারপর আমার দিকে
তাকিয়ে বললেন)
"এখন আর ক্লাসে ডুকে কি করবা
ক্লাসের তো আর মাত্র ১৫ মিনিট
বাকি আছে যাও বাইরে গিয়ে
অপেক্ষা কর আমার ক্লাসের সময় শেষ
হলে তারপর ডুকবা।
"প্লিজ ম্যাম এবারের মত ডুকতে দিন
এরপর থেকে আপনার ক্লাসে সময়মত
উপস্থিত থাকবো।
"আচ্ছা ঠিক আছে তবে আমার কোনো
ইচ্ছে নেই যে তোমাকে ক্লাসে
ডুকানোর কিন্তু তোমার ক্লাসমিটরা
যদি তোমাকে ডুকাতে রাজি হয় তবে
ডুকতে পারবে তবে আমি যাকে
জিজ্ঞাসা করবো সে যদি তোমাকে
ডুকতে দেয় তাহলে ডুকতে পারবা তা
না হলে পারবা না।
.
ম্যামের কথা শুনে আমার মনে আশা
জাগলো এই ভেবে যে আমি ক্লাসে
ডুকতে পারবো কেননা ক্লাসের সবাই
আমাকে মোটামুটি পছন্দ করে তাই
ক্লাসে ডুকার সম্ভাবনা আছে।
.
তখন ম্যাম একটা মেয়েকে দাড়
করালেন ক্লাসে ডুকার অনুমতি
নেওয়ার জন্য। হায়রে দুনিয়া দিন দিন
আরো কত কি সিস্টেম চালু হবে সেটা
এক মাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন।
কিন্তু ম্যাম যে মেয়েটাকে দাড়
করালেন সেই মেয়েকে দেখে আমি
তো এক প্রকার শক খেলাম এই মেয়েকে
আমি কালকে একবার দেখেছিলাম।
ক্লাসের উদ্দেশ্যে সিঁড়ি বেয়ে
উঠছিলাম তখন সিঁড়িতে মেয়েটির
সাথে আমার মুলাকাত হয়েছিল।
তো ম্যাম মেয়েটিকে দাড় করিয়ে
জিজ্ঞাসা করলেন যে।
"তুমি কি চাও যে এই মিস্টার. লেট কে
ক্লাসে ডুকাই"ল?
(তখন মেয়েটা আমার দিকে একটু
তাকিয়ে একবার ম্যামের দিকে
তাকালো তারপর বলল)
"না ম্যাম যারা সময়ের মূল্য বুঝেনা
তাদেরকে একটু শিক্ষা দেওয়া উচিত
তাহলেই এরা শুধরাবে আর না হলে
এরা কোনো দিনি শুধরাবেনা তাই
এদের কে বুঝাতে হবে যে সময়ের কাজ
সময়ে করতে হয় অসময়ে আসলে কিছু
মাশুল দিতে হবে।
আমি তো মেয়েটার কথা শুনে পুরাই
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম আর
আমার সাথে পুরো ক্লাসও মেয়েটার
কথা শুনে মেয়েটার দিকে অবাক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ম্যাম
তো মেয়েটার কথায় সায় দিয়ে
আমাকে ক্লাসেএ দরজা থেকেই
বিদায় জানালেন।
এটা কি হল মেয়েটার সাথে তো
আমার পূর্ব শত্রুতা নেই। তাহলে
আমাকে এ কথা বলল কেন?
.
তবে আমি কিছুটা আছ করতে
পেরেছিলাম যে মেয়েটা না করতে
পারে কেননা। গতকাল যখন সিঁড়ি
দিয়ে উঠছিলাম তখন মেয়েটা আমার
পিছন থেকে ডাক দিয়েছিল।
"এই যে শুনছেন ।
"আমাকে বলছেন?
"জ্বি আপনাকেই বলছিলাম একটু হেল্প
করবেন প্লিজ। আমি এই কলেজে নতুন
যদি সাইন্সের ক্লাসটা একটু দেখিয়ে
দিতেন।
"আমি পারবোনা এমনিতেই আমার
অনেক দেরি হয়ে গেছে দেখুন অন্য
কাউকে পান কিনা আর না হলে
নিজেই খুজে বের করুন।
.
এই কথা বলেই আমি চলে আসলাম।
জানি মেয়েটা আমাকে অনেক
খারাপ ছেলে ভাববে কিংবা পড়ে
যখন আমি এভাবে মেয়েটার কাছে
কোনো ব্যাপারে সাহায্য চাইবো তখন
হয়তো এর সুদে আসলে আমার কাছ
থেকে উশুল করে নিবে। কিন্তু এভাবে
আমাকে ক্লাসে থেকে বের করার মত
ক্ষমতা মেয়েটা পেয়ে যাবে সেটা
ভাবিনি।
কিন্তু মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দর
এবং কিউট আর এ কারণেই আমি ওর উপর
প্রথম মুলাকাতেই বিরাট একটা ক্রাশ
খাই।
.
মেয়েটার সাথে যখন আমার প্রথম দর্শন
হয়েছিল। তখন যখন মেয়েটা সাহায্য না
করে চলে আসছিলাম তখন প্রায় ক্লাসে
কাছে আসতেই মনে হয়েছিল যে। আরে
আমিও তো সাইন্সে পড়ি মেয়েটা
তো আমাদের ক্লাসেরই এড্রেস
চেয়েছিল।
ইশ আমার যে কি হয়েছে নিজে কি
নিয়ে পড়ছি সেটাই ভূলে গেছি ।
জানিনা জীবনে চলার পথে আরো
কতকি ভূলে গেছি আর যদি সেগুলা এখন
মনে পড়ে তাহলে শুধু আফসোস করা
ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।
.
ক্লাস তো আর করতে পারলাম তাই
ক্লাসের বারান্দার এক কোনে
দাঁড়িয়ে আছি ম্যাম বের হলেই
ক্লাসে ডুকতে হবে। দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপছি কখন আমার
ডিজিটাল ম্যাম বের হবেন। অবশেষে
ম্যাম বের হলেন আর আমাকে বললেন
যেন এবার ক্লাসে ডুকতে পারবো। এহ
এখন না বললেও আমি ক্লাসে ডুকবো
আপনাকে এখন বলতে হবে না কথা টা
বলার ইচ্ছা ছিল কিন্তু বললাম না
ম্যামের দিকে তাকিয়ে একটা আবাল
মার্কা হাসি দিয়ে ক্লাসে ডুকে
গেলাম। কিন্তু সমস্যা বাদলো আরেক
জায়গায় ক্লাসে তো ডুকলাম কিন্তু
সীট খুজে পাচ্ছি না যে বসবো। কিন্তু
সারা ক্লাসে ঐ মেয়েটার(যে
আমাকে ক্লাসে ডুকার অনুমতি দেয়
নি) পাশের সীটটা ছাড়া আর কোনো
সীট খালী নেই তাই বাধ্য হয়েই
মেয়েটার পাশে বসলাম। কিন্তু যখন
মেয়েটার পাশে বসতে গেলাম তখন
মেয়েটা হঠাৎ করে বলে উঠলো।
.
"আরে আরে আপনি এখানে বসছেন কেন
যান অন্য কোথাও গিয়ে বসুন।
"কেন আপনি কানা নাকি দেখছেন না
অন্য কোথাও জায়গা খালি নেই।
"তো এখন কি আমার পাশেই বসতে হবে?
" হ্যা আপনার পাশেই বসতে হবে
কেননা শুধু আপনার পাশের এই মূল্যবান
সীটটা ছাড়া আর যে সীট খালি নেই।
"সীট খালি নেই তো ফ্লোরে বসুন
এখানে অনেক জায়গা খালি আছে ।
(মেয়েটার এই কথাটা শুনে আমার
রাগের পরিমাণ আরো বেড়ে গেল তবুও
নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে বললাম)
"কি আমি ফ্লোরে বসবো আপনার
মাথায় সমস্যা আছে নাকি? না আগে
যেখানে ছিলেন ওখানে সব সময়
ফ্লোরে বসতেন আর যদি এই অভ্যাস
থেকেও থাকে তাহলে এখানেও
ফ্লোরে বসতে পারেন কিন্তু আমি
পারবোনা কেননা এরকম কোনো ভাল
বদ অভ্যাস আমার নেই ।(এই কথা বলে যখন
ব্যাগটা রাখতে গেলাম তখন আবার
মেয়েটা বলে উঠলো)
" আরে আরে আপনাকে না আমি মানা
করলাম এখানে বসতে তবুও বসছেন।
তাছাড়া একটা মেয়ের পাশে বসছেন
কেন?
"অনেক হয়েছে এবার চুপ করুন দেখছেন
না ক্লাসের অনেকেই মেয়েদের
পাশে কত ক্লোজ হয়ে বসেছে আমি
তো আপনার সাথে ঘেষে বসছি না?
" কি বাজে বকছেন আর আমি তো
আপনার প্রেমিকা বা বন্ধুও না যে
আমার পাশে ক্লোজ হয়ে বসবেন।
"প্রেমিকা কিংবা বন্ধু না হোন শত্রু
তো আর শত্রুদের পাশে বসার মজাই
আলাদা যেটা আপনার এই ছোট্ট
মাথায় ডুকবে না।
.
এই কথা বলার পর আর মেয়েটার কোনো
কথার অপেক্ষা করলাম না বসে পড়লাম
মেয়েটার পাশে।
আমি মনে মনে এই মেয়েটার উপর অনেক
রেগে আছি যখন মেয়েটাকে বাগে
পাবো তখনি আমি আমার রাগের সদ্ব
ব্যবহার করবো। মেয়েটার পাশে বসে
আছি দেখলাম মেয়েটা আমার দিকে
মাঝে মাঝে আড় চোখে তাকাচ্ছে।
আর মেয়েটার ঐ চাহনি দেখেই বুঝা
যাচ্ছে যে মেয়েটা আমার উপর কতটুকু
বিরক্ত। আর যাই হোক ঐ দিকে আমার
কোনো মাথা ব্যাথা নেই আমি আমার
বন্ধুদের সাথে খুনশুটিতে ব্যাস্ত। কিন্তু
স্যার কেন যে আসছেন না কিছুই বুঝতে
পারলাম না তাই ভাবলাম মেয়েটা
যেহেতু আমার সাথে শত্রুতা দিয়ে শুরু
করেছে সেহেতু মেয়েটা কে আরেকটু
বিরক্ত করা দরকার। তাই নাহিদ সহ
(আমার বন্ধু) আমার বাকি বন্ধুদের বললাম
যে চল সবাই মিলে একটা গান গাওয়া
যাক। সবাই আমার কথায় সহমত জানালো
তাই সবাই মিলে গান গাওয়া শুরু
করলাম। তখন আমি বললাম এই থাম থাম..
"নাহিদ তুই যা দেখে আয় তো স্যার এখন
কোন লোকেশনে আছেন।
.
তখন নাহিদ উঠে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর
নাহিদ আসলো এসে বলল.
"আরে দোস্ত চিন্তা করিস না স্যারকে
নিচে দেখলাম নতুন ম্যামের সাথে
পরিচয় পর্ব সারছেন আসতে মনে হয়
এখনো ১০ মিনিটের মত লাগবে।
" তাহলে চল শুরু করা যাক।
আমার কথা শুনার পর নাহিদ ওর জায়গায়
এসে বসে পড়লো এবং পরে
ব্রেঞ্চিতে হাত দিয়ে ঢুল বাজাতে
লাগলো ওর সাথে রাজও ঢুল বাজাতে
শুরু করলো আর ঐ দিকে আমি জমির আর
সাগর মিলে গান গাওয়া শুরু করলাম..
"বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর পায়ে দিয়ে
সোনার নুপুর..
বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর পায়ে দিয়ে
সোনার নুপুর..
পাশে বসে ট্যাড়াচোখে কোন রুপসী
দেখে যায়..
পাশে বসে ট্যাড়াচোখে কোন রুপসী
দেখে যায়...
হ বৃষ্টি পড়ে....
তখনি নাহিদ আমার মাথায় একটা
থাপ্পড় দিয়ে বলল .
.
"ঐ ফইন্নি এটা কিরকমের গান গাচ্ছিস
এইটা কোনো গান হল?
তখন রাজ বলে উঠলো
"আরে নাহিদ তুই বুজস না কেরে হালা
ফইন্নির পাশে তো রুপসী বসে আছে আর
এজন্য মুখ দিয়ে যা আসছে তাই বলে
যাচ্ছে।
.
আমি রাজের এই কথাটা শুনার পর
মেয়েটার দিকে তাকালাম দেখলাম
মেয়েটা একটু ভাব নিচ্ছে। কিন্তু একটু
আগে মেয়েটা অনেক রেগে ছিল
কিন্তু রাজ ফইন্নি ওকে রুপসী বলে ভাব
বাড়িয়ে দিয়েছে। তখন আমি বলে
উঠলাম..
"আরে তোরা কি বলিস আমার পাশে
সুন্দরী বসে আছে কই আমি তো দেখতে
পাচ্ছি না যাকে দেখতে পাচ্ছি
তাকে তো রিনা খানের মত লাগছে।
কথাটা বলার পরপরই মেয়েটা রাগে
উঠে ক্লাসের বাইরে চলে গেল।
আমরা আবার আমাদের গান শুরু করলাম।
কিছুক্ষণ পর মেয়েটা রেগে এসে বলল..
"এই যে ইয়ো ইয়ো কাউয়া ব্যান্ডের দল
এবার আপনারা আপনাদের কা কা টা
বন্ধ করেন স্যার আসছেন।
মেয়েটার কথা শুনে আমরা আমাদের
হিপহপ গানটা বন্ধ করে ঠিক হয়ে
বসলাম। কিন্তু হঠাৎ আমার মনে হল আরে
মেয়েটা কি বলল আমরা কাউয়া ব্যান্ড
আর আমরা কা কা করছি? তখন আমি
মেয়েটার দিকে চেয়ে রেগে
মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করলাম...
"এই যে মিস.রিনা খান আপনি একটু
আগে আমাদেরকে কি বললেন?
"কেন শুনেননি বললাম যে আপনাদের
কা কা টা একটু বন্ধ করার জন্য স্যার
আসছেন।
"ঐ আমরা কি কা কা করছিলাম
দেখছিলেন না আমরা গান
গাচ্ছিলাম।
"ও মাই গড এটাকে গান গাওয়া বলে
নাকি আমি তো আবার ভাবছিলাম
যে এক ঝাক কাকের দল মিলে কা কা
করছে।
"কি এত বড় কথা.! আপনাকে আমি..
.
আর কিছু বলতে পারলাম না তার আগেই
স্যার ক্লাসে প্রবেশ করলেন। তারপর
কোনোমতে রিনা খানের পাশে বসে
ক্লাস শেষ করে বের হলাম। কিন্তু এখনি
বাসায় যাবো না একটু বন্ধুদের সাথে
আড্ডা দিবো তারপর বাসার উদ্দেশ্যে
রওনা হব। তাই ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা
দিচ্ছি তখন দেখছিলাম ঐ মেয়েটা
আমাদের থেকে একটু দূরে বসে
আমাদের ক্লাসের অন্যসব মেয়েদের
সাথে কথা বলছে। নতুন বলে সবাই ওর
সাথে পরিচিত হচ্ছে দেখলাম
মেয়েটা খুব হাসিখুশি ভাবেই সবার
সাথে কথা বলছে। মেয়েটাকে
দেখলে মনেই হয় না যে এই মেয়েটা খুব
ঝগড়াটে।
.
আমি দূর থেকে মেয়েটাকে দেখেই
যাচ্ছি আসলে মেয়েটাকে যতই
দেখছি ততই মেয়েটার প্রতি আমার
দূর্বলতাটা বেড়েই যাচ্ছে।
কিন্তু না আমার এই দূর্বলতা এত সহজে
প্রকাশ করলে চলবে না। কেননা
সুন্দরিরা এমনিতেই একটু বেশিই ভাব
নে যার কারণে যদি এখনি ওর সাথে
লুতুপুতু করে কথা বলি তাহলে উনি ভাব
একটু বেশিই নিয়ে নিবেন আর আমাকে
বানরের মত নাচাবেন। সো একারণেই
সুন্দরী মেয়েদের সাথে একটু ভাব
নিয়ে কথা বলতে হয় প্রয়োজনে মাঝে
মাঝে ঝগড়াও করতে হয়।
আমি দূর থেকে ওর দিকে তাকিয়ে
আছি আর কথা গুলু ভাবছি। দেখলাম
মেয়েটাও আমার দিকে মাঝে মাঝে
তাকাচ্ছে। তখন হঠাৎ রাজ বলে উঠলো..
"ঐ রিয়াদ তুই এভাবে নিপার দিকে
তাকিয়ে আছিস কেন?
"আরে না কিছু না। কি নিপা কে ওকে
তো চিনলাম না?
(নিপা নামের কোনো মেয়ে
আমাদের ক্লাসে নেই যার কারণে এই
নামে কাউকে আমি চিনিনা)
"আরে ঐ যে ঐ নতুন মেয়েটা যার
সাথে তুই ক্লাসে একসাথে
বসেছিলি।
"ও তাহলে ওর নাম নিপা । কিন্তু তুই
জানলি কিভাবে যে ওর নাম নিপা।
"আরে ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় ওর
সাথে একটু কথা হয়েছিল তখন নামটা
জানতে পারলাম।
"ও আচ্ছা।
আসলে মেয়েটার সাথে এমন ভাবে শুরু
হয়েছে যে মেয়েটার নাম টা পর্যন্ত
জিজ্ঞাসা করার সুযোগ পাই নি। তবে
মেয়েটার নাম কিন্তু অনেক সুন্দর ঠিক
যেমন ভাবে মেয়েটা সুন্দর।
.
বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস
থেকে বের হয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা
করছি। দেখলাম নিপাও আসছে হয়তো
বাসায় যাবে। কিন্তু ও আমাকে দেখে
বিরক্তি ভাবটা প্রকাশ করে একটু দূরে
গিয়ে দাঁড়ালো। ও হয়তো ডানদিকে
যাবে কিন্তু আমি বাম দিকে যাব।
তাই রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
ভাবলাম নিপার সাথে একটু
ফাজলামি করা যাক কেননা ওর
কারণে আমি আজ ক্লাসে ডুকতে
পারিনি আর তাছাড়া ও আজ
আমাদেরকে কাউয়া বলেছে। সো ওকে
বুঝানো দরকার যে আমি কি জিনিস।
তাই ডানদিকে গিয়ে ওর থেকে দুহাত
দূরে দাঁড়ালাম। নিপা আমাকে দেখে
একটু বিরক্ত হল অবশ্য ও প্রথম থেকেই
আমার উপর বিরক্ত।
একটু পর দেখলাম একটা রিকশা আসছে
কিন্তু রিকশাটা ওর সামনে দিয়ে
আসছে। দুজন মিলে একসাথে রিকশাটা
কে ডাক দিলাম। কিন্তু রিকশাটা একটু
স্পিডের মধ্যে ছিল যার কারনে আমার
সামনে এসে রিকশাটা দাঁড়ালো।
তাই আমি জিজ্ঞাসা করলাম.
"এই মামা সামনে যাবেন?
তখন রিকশাওয়ালা মামা বলল
"হ্যা মামা যাব।
আমি তখন ছট করে রিকশায় উঠে পড়লাম।
তখনি নিপা রাগে এসে বলল..
"এটা কি হল রিকশাটা আমি আগে
ডেকেছি আর আপনি বানরের মত লাফ
দিয়ে উঠে বসে পড়লেন।
"এই যে আমি বোবা নাকি যে আমি
কথা বলতে পারিনা। আমি কি
রিকশাটাকে ডাক দেই নি আর
তাছাড়া আমি আগে উঠেছি সো
আমিই যাব আপনি অন্য একটা রিকশা
নিয়ে যান।
"মামার বাড়ির আবদার নাকি যে উঠে
গেছেন বলে আপনিই যাবেন নামুন
বলছি আমি আগে রিকশাটাকে
ডেকেছি আমি যাব।
"হ্যা মামার বাড়ির আবদার। রিকশাটা
আমার ডাক পেয়ে আমার সামনে এসে
দাঁড়িয়েছে সো আমিই যাব। আপনি
দরকার হলে হেটে যান।
"আমি হেটে যাব মানে আমি রিকশা
ডেকেছি আমিই যাব। আপনাকে
নামতে বলেছি নামুন আর হামাগুড়ী
খেতে খেতে যান।
"ঐ আপনি কানা নাকি আমাকে
হামাগুড়ি দিতে বলছেন আমি কি
শিশু। আর আমি রিকশা থেকে নামছি
না এই মামা যান তো এখানে রোদের
মধ্যে বসে আমার চেহারাটা নষ্ট হয়ে
যাচ্ছে।
"কি আমি কানা? আর দেখতে তো
বানরের মত মুখ তার আবার চেহারা নষ্ট
হয়ে যাচ্ছে হু।
"এই যে মিস.রিনা খান অনেক হয়েছে
এবার থামুন। আর মামা চলুন তো এখানে
যত্তসব ফাউল মার্কা মেয়েদের সাথে
কথা বলে আমার লাভ নাই।
"কি আমি ফাউল মেয়ে। আসলে তুই
একটা তুই একটা ফাউলের বস্তা,না
ফাউল না তুই একটা ছাগল,না ছাগলও তুই
একটা তুই একটা তুইই।
এটা কি হল এই মেয়ে আমাকে তুই করে
বলছে কেন ।
"এই মামা চলেন তো চলেন চলেন ।
.
তারপর রিকশা নিয়ে আমি মেয়েটার
সামনে থেকে চলে আসলাম। কিন্তু
আমার বাসা তো এ দিকে না বা এ
দিকে আমার কোনো কাজও নেই তাই
ভাবলাম একটু দূরে গিয়ে নেমে যাব
তারপর আবার অন্য একটা রিকশা নিয়ে
চলে আসবো। তাই প্রায় ৫ মিনিট পর
রিকশা থেকে নেমে অন্য একটা
রিকশা নিয়ে চলে আসলাম। যখন
কলেজের সামনে আসলাম তখনও
দেখলাম নিপা রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে
আছে। এটা দেখে আমার খুব খারাপ
লাগছিল কিন্তু আমার মনের ভাব এই
মেয়েকে বুঝতে দেওয়া যাবে না।
তাই ওকে দেখিয়ে রিকশা চলা
অবস্থায় মুখ ভেংচি দিয়ে একটা
সেলফি তুললাম। তখন নিপার দিকে
তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে চেয়ে
রাগে ফুসফুস করছে আর এমন ভাবে
তাকিয়ে আছে যেন বুঝাতে চাইছে.
"তোমারে বাগে পাইয়া লই চান্দু
তোমার খবর আছে"
কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগছে যে
নিপা এভাবে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে
আছে যাই হোক আমি তো মেয়েটার
প্রেমে পড়ে আছি। আর যাকে
ভালবাসি থাকে তো আর কষ্ট দিতে
পারি না। তাই নিপার চোখের
কিছুটা আড়াল হয়ে আমি রিকশা
থেকে নেমে পড়লাম। তারপর আমি যে
রিকশায় এসেছি ঐ রিকশাটাকে
বললাম যেন নিপার কাছে গিয়ে ওকে
ওর জায়গা মত নামিয়ে দিয়ে আসে
আর সাথে বাড়াটাও দিয়ে দিলাম।
হয়তো ও ভাববে রিকশাওয়ালা ওর কাছ
থেকে বাড়া নিল না কেন কিন্তু কিছু
বুঝতে পারবেনা যে বাড়াটা আমি
দিয়েছি। তারপর আমি হেটে নিজের
বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
.
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে
শুয়ে আছি আর নিপার কথা ভাবছি।
আচ্ছা নিপাকে কিভাবে বলবো যে
আমি ওকে ভালবাসি। আর তাছাড়া ওর
সাথে তো আমি ঝগড়াতেই লেগেই
থাকি যার কারণে ওকে প্রপোজ
করলেও ও রাজী তো হবেই না বরং
আমার গালের অবস্থাও খারাপ হয়ে
যেতে পারে। না ওর সাথে আর ঝগড়া
করা যাবেনা কেননা আমি যদি ওর
সাথে সবসময় ঝগড়াতে মেতে থাকি
তাহলে তো আর নিপা আমার প্রতি
ইম্প্রেস হবে না। এখন থেকে ওর সাথে
ভালভাবে কথা বলতে হবে।
.
পরদিন ক্লাসে বসে আছি। আজকে অবশ্য
তাড়াতাড়ি কলেজে এসে গেছি তা
না হলে যদি আবার ক্লাসে ডুকার
অনুমতি না পাই তাহলে তো আবার
বারান্দায় দাঁড়িয়ে সময় কাটাতে
হবে। ক্লাসে বসে আছি আর বন্ধুদের
সাথে কথা বলছিলাম। কিন্তু এখনো
নিপা ক্লাসে এসে পৌছায় নি। আর
এদিকে ম্যাম ক্লাসে এসে ডুকে
পড়েছেন। সো আর কি করবো মনযোগ
দিয়ে ম্যামের লেকচার শুনছিলাম
হঠাৎ একটা মেয়ে বলে উঠলো "ম্যাম
আসতে পারি"। চেয়ে দেখি নিপা
ক্লাসের দরজা সামনে দাঁড়িয়ে আছে
নিপা আজ প্রায় ১৫ মিনিটের মত লেট
করে এসেছে। তবে মনে মনে দোয়া
করছিলাম আমাদের নতুন এই ডিজিটাল
ম্যাম যেন কালকের পদ্ধতিটা আবার
প্রয়োগ করেন। আর আমার কাছে থেকে
যেন নিপার ক্লাসে ডুকার অনুমতি
নেন। যা ভাবছিলাম তাই ম্যাম
কালকে আমাকে যেভাবে কথা
শুনিয়েছিলেন ঠিক সেইভাবে
নিপাকেও কথা শুনিয়ে বললেন যে
আমাদের মধ্যে যদি কেউ ওকে ক্লাসে
ডুকার অনুমতি দেয় তাহলে ও ক্লাসে
ডুকতে পারবে তা না হলে বাইরে
দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তবে সমস্যা
বাধলো আসল জায়গায় ম্যাম আমাকে
দাড় না করিয়ে আমার সামনে বসে
থাকা জমিরকে দাঁড় করিয়ে বললেন
যে নিপাকে ক্লাসে ডুকানো যাবে
কি না। আমি জানি জমির নির্ঘাত
নিপাকে ক্লাসে ডুকা থেকে বঞ্চিত
করবে। কেননা আমি ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড আর
যেহেতু কালকে নিপা আমাকে
ক্লাসে ডুকার অনুমতি দেয় নি তাই
জমিরও অনুমতি দেবে না। আর তাই হল
জমির সোজা মানা করে দিল যে
ক্লাসে ডুকা যাবে না আর সাথে কিছু
কথা শুনিয়ে দিল। আর এতে নিপার
মনটা খারাপ হয়ে গেল তখন আমি পাশ
থেকে উঠে বললাম "ম্যাম কাউকে
একবার সুযোগ দেওয়া উচিত তাহলে
সে তার ভুলটা শুধরে নেওয়ার সুযোগ
পাবে। আর তাছাড়া আপনি তো
একজনের কথায় কাউকে ক্লাস থেকে
বের করে দিতে পারেন না। আমাদের
সবার তো মত নেওয়া উচিত। তাই
বলছিলাম ওকে এবারের মত ক্লাসে
ডুকতে দিন এরপর থেকে না হয় সময়মত
ক্লাসে আসবে"। আমার কথা শুনে ম্যাম
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন আচ্ছা
ঠিক আছে তা তোমাদের সবার কি মত
ওকে কি ক্লাসে ডুকাতে চাও। তখন
আমি ক্লাসের সবার দিকে একবার
তাকালাম যেহেতু আমাকে সবাই একটু
পছন্দ করে সেহেতু কেউ আমার কথার
উল্টো কথা বলবে না। আর তাই হল সবাই
ওকে ক্লাসে ডুকার জন্য অনুমতি দিল।
তখন নিপার ঠোঁটের কোনে একটু হাসি
ফুটে উঠলো। যাক শেষ পর্যন্ত মেয়েটার
মুখে ক্ষনিকের জন্য হলেও হাসি
ফুটাতে পেরেছি। আর আমি এই
ক্ষণস্থায়ী হাসিটাকে চিরস্থায়ী
করতে চাই। আর এ জন্য নিপার মনে
আমার প্রতি ভালবাসাটা জন্মাতেই
হবে। কিন্তু ওর সাথে যদি সব সময়
ঝগড়াতে মেতে থাকি তাহলে তো
আর আমার প্রতি ও ইম্প্রেস হবে না বরং
হিতে বিপরীত হতে পারে।
.
নিপা ক্লাসে ডুকে বসার জন্য কোনো
সীট খালি পাচ্ছে না তবে আমার
পাশের সীটটা খালি আছে। আসলে
আমি ক্লাসে যখন প্রথম ডুকি তখন
থেকেই আমি আমার পাশের সীটটা
খালি রেখেছি যাতে নিপা এসে এই
সীটটায় বসতে পারে। নিপা
চারদিকে তাকিয়ে দেখছে বসার জন্য
কোনো সীট খালি আছে কিনা। কিন্তু
কোনো সীটি খালি শুধু আমার পাশের
সীটটা ছাড়া আর যার কারণে
নিপাকে বাধ্য হয়েই আমার পাশে
বসতে হল। তবে নিপা আমার পাশে
বসাতে এক প্রকার বিরক্ত সেটা বুঝা
যাচ্ছে। ভাবলাম ওকে ক্লাসে ডুকার
সুযোগ করে দিয়েছি হয়তোবা আর কিছু
না হোক ধন্যবাদটা মনে হয় পাবো
কিন্তু কিসের কি। উল্টো আরো
বিরক্তিকর ভাব দেখাচ্ছে। আর যাই
হোক ক্লাসটা আগে শেষ করি পরে না
হয় সুযোগ বুঝে ওর সাথে পরিচয় পর্বটা
না হয় সেরে ফেলা যাবে।
.
তো ম্যাম প্রায় ২০ মিনিট পর উনার
মূল্যবান বক্তব্য রেখে ক্লাস থেকে
বিদায় নিলেন। তা বরাবর যা হয় আর
কি ম্যাম যখন ক্লাস থেকে চলে
গেলেন তখন ক্লাসের সবাই আবার
আগের মত গল্প করায় ব্যাস্ত হয়ে গেল।
তাই আমিও এ সুযোগে দেখি নিপার
সাথে কথা বলা যায় কিনা..
"হাই আমি রিয়াদ ।
আমার এ কথাটা শুনে নিপা যেন অনেক
অবাকই হল আর বিরক্তিকর ভাব করে বলল..
"তা আপনি রিয়াদ হোন আর রিয়া হোন
আমি কি করবো?
"না মানে আপনার সাথে একটু পরিচিত
হতে চেয়েছিলাম।
"তা পরিচিত হয়ে কি করবেন?
"না একসাথে পড়ি তাই চেনা জানা
হল এই আরকি।
"চেনা জানা হয়ে লাভ নেই এতে
অনেক ঝামেলা বরং যেভাবে আছেন
সেভাবে থাকেন আর সামনে এক্সাম
সো পড়াতে একটু মন দিন।
(এই মেয়ে এটা কি বলল পরিচিত হলে
এখানে আবার কি ঝামেলা আর
তাছাড়া কালকে তো ঠিকি অন্য সব
ছেলে মেয়েদের সাথে হেসে হেসে
পরিচিত হয়েছিল। রাগটা কন্ট্রোল
করে বললাম)
"হ্যা তা ঠিক আছে আচ্ছা নামটা কি
সেটা তো জানতে পারি।
(অবশ্য আমি ওর নামটা জানি তবুও ওর মুখ
থেকে শুনতে চাইছি)
"নিপা।
"ধন্যবাদ।
"আপনাকেও ধন্যবাদ ।
"আমাকে আবার ধন্যবাদ কেন?
"আমাকে ক্লাসে ডুকার চাঞ্চ করে
দেওয়ার জন্য।
"ওহ এটা কোনো ব্যাপার না । আচ্ছা
আপনি চাইলে আমাকে তুমি করে
বলতে পারেন যেহেতু একসাথে পড়ি।
"সরি।
"কেন সরি কেন?
"কালকে তোমাকে ক্লাসে ডুকতে না
দেওয়ার জন্য।
"ওহ এটা কোনো ব্যাপার না আর
তাছাড়া একদিন ক্লাস মিস দিলে
তেমন কিছু যায় আসে না। আচ্ছা আমি
আপনাকে তুমি করে বলতে পারি?
"আমাকে তুমি করে বল আর তুই করে বল
আমার কোনো সমস্যা নেই তবে
সাবধান বেশি পার্ট মারতে আসবা
না।
"আরে কি বল তোমার কি মনে হয় আমি
তোমার সাথে পার্ট মারছি নাকি আর
তাছাড়া আমি সেরকম ছেলেই না।
"হ্যা সেটা তোমাকে দেখে খুব ভাল
করে বুঝা যায় আর এখন চুপ করে পারলে
বই বের করে পড় আর আমাকেও একটু পড়তে
দাও।
(নিপা প্রথম কথাটা এমন ভাবে বলল
যেন আমাকে খুব ভাল করেই চিনে)
আমি আর কিছু বললাম না ওর কথা মত
আমি ব্যাগ থেকে বই বের করলাম। কিন্তু
আমি আর পড়া জীবনে মনে হয় এক হতে
পারবোনা। কেননা কেউ যদি আমাকে
বলে যে কি ব্যাপার তোমার
পড়ালেখার কি খবর তখন আমি বলি যে
"পড়ালেখা পড়ালেখার জায়গায় আর
আমি আমার জায়গায় আমরা কেউ
কাউকে ডিস্টার্ব করিনা "
কেননা বই কিনার পর থেকে আজো
অব্দি বই খুলে দেখেছি কিনা সন্দেহ
আছে। শুধু ব্যাগে করে বই গুলা আনা
নেওয়া করি। তবে এর মধ্যে একটা
ভাললাগা কাজ করে। আর যে কেউ
দেখলে বলবে যে এই ছেলে নির্ঘাত A
+ এর ছাত্র। কিন্তু কেউ তো আর জানে
না যে এই A+ এর ছেলেটা কখনো
ব্যাগের ভেতরের বইগুলা খুলে দেখার
সময় পায়নি।
.
যাই হোক নিপার কথামত বই খুলে
সামনে রেখে বসে আছি। কিন্তু আমার
তো আর বই পড়াতে মন নেই আমি শুধু
নিপাকে নিয়েই ভাবছি। আচ্ছা
মেয়েটা এরকম কঠিন করে কথা বলে
কেন একটু নরম গলায় কথা বলতে
পারেনা। নাকি শুধু আমার বেলাই
কঠিন? অন্য সবার সাথে তো দেখি খুব
ভাল ভাবেই কথা বলে।
.
এভাবে নিপাকে দেখে দেখে ভালই
দিন কাটছিল। আমি সব সময় ওর পিছন
পিছন থাকি যাতে ওর প্রতি আমার যে
ভাল লাগা সেটা যেন বুঝতে পারে।
কোথাও যেন শুনেছিলাম মেয়েরা
নাকি ছেলেদেরকে খুব ভাল ভাবে
বুঝতে পারে। ১০০ হাত দূর থেকে কোন
ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে আছে
তারা নাকি বুঝতে পারে। কিন্তু
কিসের কি আমি তো আর নিপার ১০০
হাত দূরে থাকি না প্রায় কাছেই
থাকি তবুও কেন মেয়েটা আমার মনের
কথাটা বুঝতে পারেনা। নাকি বুঝেও
না বুঝার ভান করে আসলে মেয়েদের
এই একটা ভাল দোষ ওরা খুব ভাল ভাবে
ভাব নিতে যানে। যার কারণে
আমাদের মত ছেলেদের অবস্থা কাহিল
হয়ে যায়।
.
এভাবে ওকে দূর থেকে দেখতে
দেখতে দিন গুলা ভালই কাটছিল। আর
ওর সাথে মাঝে মাঝে আবার একটু
বিষয় নিয়ে ছোটখাটো ঝগড়া হত।
আসলে মেয়েটা কেন যে আমার
সাথে এরকম করে আমি কিছুই বুঝিনা।
একদিন সিড়ি বেয়ে উঠছি। আমি
আবার সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় দৌড়ে
উঠে আবার নামার সময়ও দৌড়ে দৌড়ে
নামি। সো এখনো ঠিক এভাবে সিড়ি
বেয়ে উঠছি আর মোবাইল হাতরাচ্ছি।
হঠাৎ একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা
খেয়ে আমার সাধের মোবাইলটা হাত
থেকে পড়ে গেল। হাত থেকে পড়ে
যাওয়ার কারণে মোবালটা একটা
একটা করে সিঁড়ি নামতে নামতে শেষ
সিঁড়িটার ঠিক দুটা সিঁড়ি উপরে এসে
থামলো। আমি মোবাইলটা হাতে
নিয়ে দেখি মোবাইলটার ব্যাক
কাভারটা একটু ফেটে গেছে সাথে
গ্লাসেও একটু আচড় পড়েছে। আমি
রাগে মেয়েটার দিকে তাকালাম
কিন্তু একি এ তো নিপা আর আমার
দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন
পারলে আমাকে খেয়ে ফেলে। আমি
তখন কিছু বলতে যাবো তখন নিপা
রাগি কন্ঠে বলে উঠলো।
.
"কি চোখ কি পকেটের ভেতরে রেখে
হাটো? চোখে দেখো না? সুন্দরী
মেয়ে পেলেই ধাক্কা মারার ইচ্ছা
করে তাইনা।
(এই মেয়েটা আর ঠিক হবেনা । ধাক্কা
খেয়ে ক্ষতি হয়েছে আমার আর রাগ
করছেন উনি তখন আমি রেগে বললাম)
"জ্বি না আমার চোখ জায়গা মতই আছে
আর তাছাড়া তুমি কি এমন সুন্দরী হলে
যে তোমাকে দেখে ধাক্কা মারার
ইচ্ছে হবে বরং তুমিই ইচ্ছে করে ধাক্কা
মেরেছো তাছাড়া এত বেশি ইস্মার্ট
হয়ে গেছি যে মেয়েরা এখন ইচ্ছে
করেই আমার সাথে ধাক্কা খেতে
চায়। আর তাদের মধ্যে তুমিও একজন।
"কি? নিজের চেহারা কখনো আয়না
দেখেছো চেহেরা তো পুরো আবুলের
মত।
"আবুল!!ও আবার কে তোমার বয়ফ্রেন্ড
নাকি? আর তাছাড়া তোমার মত
মেয়ের আবুল ছাড়া আর ভাল কেউ
জুটবেনা আবুলই তোমার জন্য পারফেক্ট
আর তাছাড়া যেরকম ভেটকি মাছের
মত চেহারা আবুল ছাড়া আর কাউকে
পাবে বলে আমার মনে হয় না।
"ঐ কি বললা আমি তোমাকে বলেছি
আবুল। আর সিঁড়ি দিয়ে কি কানার মত
দৌড়ে দৌড়ে উঠে সিঁড়ি দিয়ে
কিভাবে উঠানামা করতে হয়
শিখোনি নাকি নিজেকে উসাইন
বোল্ট ভাবো?
"এই যে আমি নিজেকে আবুলও ভাবি
না আর উসাইন বোল্ট ও ভাবিনা আমি
নিজেকে আমিই ভাবি। আর এটা জাস্ট
একটা এক্সিডেন্ট আমি তো আর ইচ্ছে
করে তোমাকে ধাক্কা দেই নি
তাছাড়া এতে আমারি বেশি ক্ষতি
হয়েছে।
"কোনটা এক্সিডেন্ট আর কোনটা
ইচ্ছাকৃত সেটা আমি খুব ভালভাবেই
বুঝি আর তোমার আবার কি ক্ষতি
হয়েছে?
"কানা নাকি দেখছোনা আমার
মোবাইলটার কি ক্ষতি হয়েছে এখন কি
আর এই মোবাইল নিয়ে কি আমি আর
স্টাইল করতে পারবো? ও শীট আমার
স্বাদের মোবাইলটা গেল রে।
"ঐ চুপ কর শুধু তোমার কি একাই ক্ষতি
হয়েছে আমার কোনো ক্ষতি হয়নি?
(আমি নিপার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে ওর
দিকে তাকিয়ে বললাম)
"তোমার আবার কি ক্ষতি হল তুমি
ঠিকি আছো পড়ে গিয়ে তো আর
মাথা ফাটেনি। অবশ্য তুমি না পড়ারি
কথা কেননা যে মুঠকি মার্কা শরীর
আমারি পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল
যাক পড়ে যাই নি।
"কি আমি মুটকি ঐ তুমি নিজেকে কি
ভাবো হু? এত জুড়ে ধাক্কা দিছো
আমার ব্যাথা লাগেনি? কই সরি বলবা
তা না উল্টো আরো গলা উঁচু করে কথা
বলছো।
"ঐ চুপ কর এত ঝগড়া করা কোথা থেকে
শিখছো একটু হাসিমুখে থাকতে পারো
গুমড়া মুখো।
.
এই কথা বলে আর দাঁড়ালাম না চলে
আসলাম। কেননা এই মেয়ের সাথে যতই
কথা বলবো ততই ঝগড়া করবো। আসার সময়
নিপার দিকে একবার পিছন ফিরে
তাকালাম দেখালাম ও সেই
চিরচেনা রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে
আছে (দূর এই মেয়েটা এরম কেরে একটু
নরম গলায় কথা বলতে পারেনা)
.
রাস্তায় বসে আছি আসলে বসে আছি
না দু পায়ের উপর যেভাবে বসে থাকা
আরকি সেভাবে বসে আছি। বসে একটা
পথশিশুকে খিচুড়ি খাইয়ে দিচ্ছি।
একটু আগে এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ
এই পিচ্চিটাকে দেখে খুব মায়া হল।
যখন পিচ্চিটার কাছে আসলাম তখন
পিচ্চিটা আমার কাছে টাকা
চাইলো। পিচ্চটার বয়স এই ৬ কিংবা ৭
হবে কিন্তু হাটতে পারেনা। হয়তোবা
কেউ ওকে এখানে বসিয়ে রেখে চলে
গেছে সময় হলে আবার এসে নিয়ে
যাবে। আমি আবার এইসব পথশিশুদের
প্রতি একটু বেশি সহানুভূতিশীল কোনো
পথশিশু যদি আমার কাছে এসে টাকা
বা অন্য কিছু চায় তাহলে আমি যা
পারি দিয়ে দেই। যখন এই ছেলেটা
আমার কাছে টাকা চাইলো তখন
ছেলেটাকে দেখে একটু বেশি মায়া
হল তাই এখানে বসে ওকে জিজ্ঞাসা
করলাম।
"কি রে ভাই এই রোদের মধ্যে এখানে
বসে আছিস কেন?
ও তখন করুণ কন্ঠে বলল
"ভাই হারাদিন দরে কিছু খাই নাই মায়
যে বিয়ান বেলা বসাইয়া রাইখা
গেছে এহনো আহে নাই।
তারপর ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলাম
বেলা ১ টা বাজে অথচ এই পিচ্চিটা
কিছুই খায়নি। যাই হোক পকেটে যখন
কিছু টাকা আছে দেখি হোটেল
থেকে কিছু এনে ওকে খাওয়ানো যায়
কিনা। আসলে আমি এ পথ দিয়ে
যাচ্ছিলাম এই পথ দিয়ে আসার উদ্দেশ্য
হল নিপাকে এক নজর দেখা। কেননা আজ
কলেজে যাই নি সকালে যখন ঘুম থেকে
উঠলাম তখনি মা আমাকে বলল সে
খালামনির বাসায় আমাকে যেতে
হবে। আমি মাকে বললাম যে ক্লাস
আছে বিকেলে না হয় যাবো কিন্তু মা
বলল এখন যেতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে
খালামনির বাসায় গিয়েছিলাম। একটু
আগে খালামনির বাসা থেকে
এসেছি তাই ভাবলাম একবার এদিকে
এসে আমার নিপার সেই রাগী
মায়াবী চেহারাটা একবার দেখা
দরকার।
.
হোটেল থেকে এক প্লেট খিচুড়ি আর
দুটা সিংগারা আর একটা হাফ লিটার
পানি নিয়ে আসলাম। হোটেলটা
তেমন দূরে ছিল না তাই ওরা আমাকে
খিচুড়ি প্লেট বাইরে নিয়ে আসতে
বাধা দিল না। খাবার গুলা নিয়ে
এসে ছেলেটাকে বললাম যে "নে ভাই
এবার খা"। কিন্তু ছেলেটা যখন
খাওয়ার জন্য হাতটা বের করলো তখন
দেখলাম হাতে অনেকটুকু কাটা। আমি
তখন ওকে থামিয়ে বললাম..
"এই থাম থাম দাড়া আমি তকে খাইয়ে
দিচ্ছি।
তারপর খিচুড়ির প্লেটটা আমার হাতে
নিয়ে চামচ দিয়ে ওকে খাইয়ে দিতে
দিতে বললাম।
"কি রে হাত কাটলো কিভাবে আর এত
টুকু হাত কেটে গেল এখন ও ডাক্তার
দেখালি না কেন?
কিন্তু ছেলেটাকে দেখলাম আমার
কোনো কথায় কান দিচ্ছে না শুধু
খাবারের দিকে চেয়ে আছে আর
চামচে যতটুকু উঠছে তার পুরোটাই
খেয়ে নিচ্ছে। আসলে ছেলেটার খুব
খিদা লেগেছে যার কারণে তার
কোনো দিকে খেয়াল নেই। তখন হঠাৎ
করে ছেলেটা হেচকি দেওয়া শুরু
করলো যার কারণে খাওয়া থামিয়ে
ওকে পানি খাওয়ালাম। ছেলেটাকে
পানি খাওয়ানো পর যখন পানির
বোতলটা রাখতে গেলাম তখন দেখলাম
আমার সামনে দিয়ে একটা রিকশা
যাচ্ছে ।
.
সাথে সাথেই দেখলাম রিকশা থেকে
নিপা আমার দিকে উকি দিয়ে
তাকাচ্ছে। মেয়েটা আমার দিকে এমন
ভাবে তাকাচ্ছে যেন চোখের মাঝে
অনেক প্রশ্ন আমাকে নিয়ে মনে হয়
আমার কাছে থেকে এরকম একটা কাজ
আশা করে নি। তবে একটা জিনিস লক্ষ্য
করলাম নিপার আজকের চাহনিতে
কোনো প্রকার রাগ বা অভিমান নেই ও
শুধু আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছে মনে মনে কি যেন
ভাবছে। অনেক্ষণ ধরে নিপা আমার
দিকে তাকিয়ে ছিল। রিকশাটা যখন
তার আপন গতিতে আমার কাছে থেকে
একটু সামনে চলে গেল তখন দেখলাম
নিপা রিকশার পিছন দিক থেকে
থেকে আমাকে উকি মেরে দেখছে।
হয়তোবা ভেবেছিল আমাকে দিয়ে
কিচ্ছু হবেনা যার কারণে এটা দেখে
একটু বেশি অবাক হয়েছে। রিকশাটা
দেখতে দেখতে সামনে মোড়ের
কাছে গিয়ে বামদিকে চলে গেল
যার কারণে নিপাকে আর দেখতে
পারলাম না। যদি সামনে এই মোড়টা
না পড়তো তাহলে হয়তো যতদূর পর্যন্ত
আমাকে দেখতে পাওয়া যায় তাহলে
আমাকে দেখেই যেত। আমি জানি যে
পুরোটা রাস্তা আমার কথা ভেবে
ভেবে যাবে। হয়তোবা বাসায় গিয়ে
কিছু সময় আমার কথা ভাববে।
.
যাক সে কথা তারপর ছেলেটাকে
খাইয়ে খিচুড়ির প্লেটটা নিয়ে
হোটেলে যখন বিল দিতে গেলাম তখন
ম্যানেজার বলে উঠলো..
"ভাই আপনার এই কাজটা দেখে খুব ভাল
লাগছে তাই আপনার কাছ থেকে এই
খাবারের বিলটা আমি রাখবো না ।
আল্লাহর রহমতে প্রতিদিন ভালই
বিক্রি হয় সেখান থেকে না হয় একটা
ভাল কাজে সহযোগীতা করলাম।
লোকটার কথা শুনে মনটা ভরে গেল
আমি তখন হাসি মুখে প্লেটটা দিয়ে
যখন বের হয়ে আসবো তখন লোকটা পিছন
থেকে আমাকে ডাক দিল। আমি
দাঁড়িয়ে বললাম কি ভাই কিছু বলবেন।
তারপর দেখলাম লোকটা ক্যাশ থেকে
বের হয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
সত্যি তখন যে কি ভাল লেগেছে আমি
বলে বুঝাতে পারবোনা।
.
তারপর হোটেল থেকে বের হয়ে আবার
ঐ ছেলেটার কাছে গেলাম দেখলাম ও
আমার দিকে তৃপ্তি সহকারে তাকিয়ে
আছে। আমি তখন পকেট থেকে একটা ৫০
টাকার নোট ওকে দিলাম। হয়তোবা ঐ
খাবারের বিল এই ৫০ টাকার মতই হত
তাই এই টাকা আর আমার কাছে রেখে
লাভ নেই ওকে দিয়ে দিলেই ভাল
হবে। আমি যখন টাকাটা রাখতে
গেলাম তখন পিচ্চিটা ওর দুহাত দিয়ে
আমার গলায় ধরে বলল...
"ভাইজান আফনে খুব ভালা ।
.
আমি তখন ওর দিকে চেয়ে একটা
মিষ্টি হাসি দিয়ে সেখান থেকে
চলে আসলাম।
এরপর থেকে প্রতিদিনি কলেজে
যাওয়া আসা হয় নিপার সাথে দেখাও
হয় তবে কোনো প্রকার কথা হয় না।
আসলে ওর সাথে কথা আর কিভাবেই
বা বলবো ওর সাথে কথা বলতে গেলেই
সেই ঝগড়া। অবশ্য তবুও ওর সাথে কথা
বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু চাইলেই তো
আর এই রাগী মেয়েটার সাথে কথা
বলা যায় না। তবে আমি একটা জিনিস
লক্ষ্য করলাম যে নিপা আমার দিকে
যেন কেমন করে তাকিয়ে থাকে। আর
ওর চাহনীতে কোনো প্রকার রাগ নেই
কেমন যেন একটা অদ্ভুত চাহনী। ও যখন
আমার দিকে চেয়ে থাকে তখন মনে হয়
আমাকে নিয়ে যেন গভীর চিন্তায়
মগ্ন। কিন্তু কি সেই চিন্তা?
.
ক্লাসে বসে আছি আজ নিপা আসেনি
যার কারণে কিছুই ভাল লাগছে না তবুও
ক্লাসে বসে আছি। হঠাৎ মোবাইলটা
কেপে উঠলো ভাগ্যিস সাইলেন্ট করা
ছিল যার কারণে রিংটোন বাজে নি।
স্যার কে বলে ক্লাসের বাইরে এলাম
ততক্ষণে ফোন কেটে গেছে। যখন আমি
নাম্বারটা ডায়েল করতে যাবো তখন
আবার ঐ নাম্বার থেকে কল আসলো।
কিন্তু নাম্বারটা আননোন ছিল তবুও
ধরলাম কিন্তু আমাকে কিছু বলার সুযোগ
না দিয়েই অপাশ থেকে একটা মেয়ে
বলে উঠলো।
"এই তোমার রক্তের গ্রুপ কি বি
পজেটিব?
(এ কেমন মেয়েরে বাবা সালাম-
আদাব কিছুই নেই ফোন করেই বলছে
রক্তের গ্রুপ কি। আর কিছু ভাবতে
পারলাম না মেয়েটা আবার বলে
উঠলো)
"এই কি হল কথা বলছো না কেন তোমার
কি বি পজেটিব?
"হ্যা কিন্তু আপনি কে?
"তোমার প্রমিকা। কোথায় তুমি?
(মেয়েটার কথা শুনে আমি একটা বড়
আকারের ধাক্কা খেলাম মেয়েটা
বলে কি? ও আমার প্রেমিকা কিন্তু
কিছুই বুঝতে পারছিনা নিশ্চয় এই
মেয়ের মাথায় চিট আছে)
"ওই কি হল চুপ করে আছো কেন তুমি এখন
কোথায়?
"কোথায় আবার কলেজে।
"তাহলে এক কাজ কর তাড়াতাড়ি
পপুলার হাসপাতালে চলে আসো
একজনের রক্ত লাগবে।
"আচ্ছা ঠিক আছে আসছি কিন্তু
হাসপাতালের কয় তলায়?
"তুমি আসো আমি নিচে দাঁড়িয়ে
আছি?
"কিন্তু আমি আপনাকে চিনবো
কিভাবে আমি আপনাকে চিনি না।
"আরে এত প্রশ্ন কর কেন আসতে বলছি
তাড়াতাড়ি আসো আমাকে দেখলেই
চিনতে পারবা।
"আচ্ছা ঠিক আছে আসছি ।
.
তারপর ফোন রেখে স্যারকে বলে ছুটি
নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা
হলাম। স্যারকে রক্ত দেওয়ার কথা
বলতেই স্যার আমাকে ছুটি দিয়ে
দিলেন আর এটাও বললেন যেন পরে
রোগীর অবস্থা পরে উনাকে জানাই।
.
পপুলার হাসপাতালের নিচে এসে
রিকশা থেকে নামলাম। যখন ভিতরে
যাবো তখনি দেখলাম নিপা আমার
দিকে এগিয়ে আসছে। কি ব্যাপার
নিপা এখানে কেন? নাকি ও আমাকে
ফোন করে এনেছে? নিপা আমার
কাছে এসে বলল.
"আসতে এতো দেরি হল কেন?
"আরে কই দেরি হল মাত্র ১৫ মিনিট
লেগেছে। কিন্তু তুমি আমাকে ফোন
দিছিলা?
"কেন ফোন দিলে অসুবিধা নাকি।
"না তা না কিন্তু তুমি আমাকে কখনো
ফোন দাওনি তো তাই বললাম। কিন্তু
তুমি আমার নাম্বার পেলে কোথায়
আর আমার রক্তের গ্রুপ ও বা জানলা
কোথা থেকে?
"তোমার নাম্বার কি শুধু তোমার
কাছেই আছে তোমার বন্ধুদের কাছে
নেই আর গলায় যেটা জুলিয়ে
রেখেছো ঐ আইডি কার্ডটা ঐ টায় কি
লিখা।
"ও তাইতো কিন্তু তুমি আমাকে ফোন
দিয়ে কি যেন বললা?
"কই কি বললাম শুধু বললাম যে রক্ত দিতে
হবে একজনকে। হ্যা সেটা তো জানি
তারপর যে আরেকটা কথা বললা ঐটা
কি যেন বললা?
"আর কই কি বললাম?
.
বুঝলাম এ নিপা যেনেও না জানার
ভান তাই এ টপিকস বাদ দিয়ে রক্ত
দিতে চলে গেলাম। তারপর নিপার
সাথে ডাক্তারের কাছে গেলাম
দেখলাম সেখানে নিপার বাবা-মা
আর আরেকজন কে দেখলাম। আন্দাজ
করতে পারলাম না যে উনি নিপার কি
হতে পারেন। জানতে পারলাম যে
নিপার খালার ডেলিভারি হবে যদি
রক্ত লাগে তাই আগে থেকে আমাকে
আনিয়ে রেখেছে। অনেক্ষণ হল বসে
আছি। একটু আগে ডাক্তার অপারেশনের
জন্য গিয়েছেন।হঠাৎ নিপা এসে বলল এই
তাড়াতাড়ি আসো রক্ত লাগবে। তাই
আমি রক্ত দেওয়ার জন্য নার্সের সাথে
ভিতরে ডুকলাম। তারপর রক্ত দিয়ে বের
হলাম বের হয়ে বাইরে আসলাম এসে
বসে আছি নিপা এসে বলল যে ওর
খালার একটা মেয়ে হয়েছে। তারপর
দেখলাম ঐ লোকটা (যাকে আমি
চিনতে পারিনি) মিষ্টি আনতে চলে
গেলেন মনে হয় উনি নিপার খালু
হবেন। কিছুক্ষণ পর দেখলাম উনি মিষ্টি
নিয়ে আসলেন। সবাই মিলে আমাকে
এসে ধন্যবাদ জানালেন রক্ত দেওয়ার
জন্য আমি শুধু হাসিমুখে উনাদের কথায়
সম্মতি জানালাম। নিপাও এসে
আমাকে ধন্যবাদ জানালো আর ওর
নিজের হাতে আমাকে মিষ্টি
খাইয়ে দিল। আমি তখন অবাকে
দৃষ্টিতে নিপার দিকে তাকিয়ে
ছিলাম। আসলে এত কাছে থেকে
নিপাকে আমি দেখিনি তাই কেমন
যেন লাগছিল তার উপর ও আমাকে
খাইয়ে দিচ্ছে সব মিলিয়ে অন্য রকম
একটা ফিলিংস। নিপার ডাকে ঘুর
কাটলো
"ঐ তোমার কি হল ওভাবে তাকিয়ে
কি দেখছো?
"না কিছু না। নিপা আমি এখন যেতে
চেয়েছিলাম।
"আচ্ছা ঠিক আছে আমার সাথে আসো।
.
তারপর নিপার সাথে ওর বাবা-মা
এবং খালুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে
চলে আসলাম। নিপার মা বললেন যেন
নিপার সাথে একদিন উনাদের বাসায়
যাই। হ্যা বলে চলে আসলাম। নিপাও
আমার সাথে নিচে আসলো আর বললো।
"আমি কি সাথে আসবো না যেতে
পারবা?
"তোমার আসা লাগবেনা আমি একাই
যেতে পারবো আমি বাচ্চা ছেলে
না।
(কথাটা আমি ইচ্ছা করেই বললাম দেখি
নিপা রাগে কিনা। নিপা কি যেন
বলতে গিয়েও বলল না।শান্ত গলায় বলল)
"আচ্ছা ঠিক আছে দাড়াও আমি রিকশা
ঠিক করে দিচ্ছি।
(নিপা একটা রিকশা ঠিক করে দিয়ে
বলল)
"যাও আর বাসায় গিয়ে আমাকে
জানাবা।
"তোমাকে জানাবো কেন?
"ঐ চুপ কর তুই বাসায় পৌছে আমাকে
ফোন দিবি না হলে কালকে কলেজে
আসবি না তখন দেখবি মজা।
.
দেখলাম নিপা ক্ষেপে গেছে এখন
যদি উল্টাপাল্টা কিছু বলি তাহলে
আরো কিছু ঘটে যেতে পারে তাই আর
কিছু না বলে চলে আসলাম। কিছু দূর
এগিয়ে ভাবলাম একবার পিছন দিকে
তাকিয়ে দেখি নিপা দাঁড়িয়ে
আছে কিনা। কেন যেন আমার মন
বলছিল নিপা আমার দিকে তাকিয়ে
আছে তাই পিছন পিছন ফিরে
তাকালাম। হ্যা নিপা আমার দিকে
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তখন
কেন যেন মনে হল নিপার মনে আমার
প্রতি ভালবাসাটা জন্ম নিয়েছে।
তারপর ঠিক হয়ে বসলাম।
.
পরদিন ক্লাসে বসে আছি ম্যাম এখনো
আসেননি। দেখলাম নিপা ক্লাসে
ডুকছে ডুকে আমার সামনে এসে
দাঁড়ালো। আমার পাশে সাগর বসে
ছিল। তখন নিপা সাগরকে ধমক দিয়ে
বলল..
"ঐ তুমি এখানে বসেছো কেন
জানোনা এটা আমার সীট উঠো বলছি।
(সাগর অবাক দৃষ্টিতে নিপার দিকে
তাকিয়ে আমার দিকে তাকালো।
আমি তাকে ইশারা উঠে যেতে
বললাম। নিপা তখন বসে বলল)
"কেমন আছো শরীরে অবস্থা কেমন?
"হুম ভাল আছি।
"তা কালকে না তোমাকে বললাম
বাসায় পৌছে আমাকে ফোন দিতে
দিলা না কেন?
"দিয়েছি তো তোমাকে না একটা
রিকুয়েস্ট কল দিলাম কিন্তু তুমি তো
কল ব্যাক করলা না আমি কি করবো।
(কথাটা শুনার পর নিপা এমন ভাবে
তাকালো যেন আমি খুব বড় ভুল করে
ফেলেছি)
"ঐ তখন আমার মোবাইলে ব্যালেন্স
ছিল নাকি যে আমি কল ব্যাক করবো?
"তাহলে অন্য কারো মোবাইল থেকে
কল করলেও তো পারতা?
"ঐ আমি কি মা কে গিয়ে বলবো যে
মা তোমার মোবাইলটা দাও আমার
প্রে...
(কথাটা বলতে গিয়ে থেমে গেল।
আমিও আর কিছু বলতে পারলাম না
ম্যাম চলে আসলেন)
.
১১ টা বাজে কলেজে এসেছি আজ
আমাদের কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠান
তাই এখন কলেজে এসেছি। এসে
নিপাকে খুজছি ডিসিশন নিয়েছি যে
আজই নিপাকে আমার মনের কথাটা
বলে দিব। কিন্তু নিপাকে খুজে
পাচ্ছিনা তুলিকে(আমার মেয়ে বন্ধু)
ডাক দিলাম।
"এই ট্রলি এদিকে আয়তো।
(তুলি আমার কাছে এসে আমার মাথায়
একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল)
"ঐ তুই আমারে ট্রলি ডাকছ কেন?তুলি
বলে ডাকতে পারিসনা মা কত সুন্দর
একটা নাম রাখছে আর তুই সে নামের
কি একটা উপাধি দিলি।
"আচ্ছা বাদ দে দুস্ত নিপা কোথায়
বলতে পারিস?
"ঐ তো ঐ দেক।
(দেখলাম নিপা একটা কোনায়
দাঁড়িয়ে ওর বান্ধবীদের সাথে কথা
বলছে। মেয়েটা আজ একটু সেজেগুজে
এসেছে তা বুঝা যাচ্ছে। তবে সাজটা
খুবি সামান্য আর রি হালকা সাজে
নিপাকে অপরুপ লাগছে। আমি নতুন করে
আবার ওর প্রেমে পড়ছি)
"আচ্ছা দুস্ত একটা সাহায্য করবি?
"কি সাহায্য বল আমি তো আবার উদ্দার
কারী জাহাজ।
"এভাবে বলিস না দুস্ত তুই আমাকে
সাহায্য করবি না তো কে করবে বল।
"হ্যা বল কি করতে হবে?
"নিপাকে একটু ঐ কর্নারে নিয়ে আসবি
ওর সাথে একটা জরুরি কথা আছে।
"কি প্রপোজ করবি তো তাইনা?
(আমি তুলির কথা শুনে অবাক হয়ে ওর
দিকে তাকিয়ে আছি)
"এই জানস তর সমস্যা কি তুই সব সময় সত্যি
কথা বলিস।
" দেখতে হবে কে তুই জানিস না এই
সাবজেক্টে আমার ২০ বছরের
অভিজ্ঞতা।
"হ্যা জানি এখন যা না নিপাকে
ডেকে নিয়ে আয়।
"আচ্ছা বাবা আনছি তুই যা গিয়ে
ওখানে দাড়া আর হ্যা ফুল এনেছিস
তো?
"এটা আপনাকে বলতে হবে না।
"চালাক ছেলে তুই।
.
কথাটা বলে ট্রলিটা সরি তুলি
নিপাকে আনতে গেল আর আমি
কর্নারটায় গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতে
গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আজকে
যাই হোক নিপা কে বলেই দিব মনের
কথাটা। কিন্তু খুব ভয় করছে যে রাগী
মেয়ে না জানি কখন কি হয়। একটু পর
দেখলাম তুলি নিপাকে নিয়ে আসলো
আমার কাছে এসে তুলি নিপাকে
দিয়ে চলে গেল আর যাওয়ার সময় বলে
গেল বেষ্ট অফ লাক। তুলির কথাটা শুনে
নিপা তুলির দিকে অবাক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে ছিল তারপর আমার দিকে
তাকিয়ে বলল।
"কি কিছু বলবা।কিছু বলতে চাইলে বলে
ফেল পরে যদি অন্য কেউ বলে ফেলে
তারপর পস্তাতে হবে।
"না মানে তোমার সাথে একটা কথা
ছিল।
"জানি তো কিন্তু কি কথা সেটা তো
জানতে চাইছি তাড়াতাড়ি বলতো
দেখি।
"কিভাবে যে শুরু করবো সেটা বুঝতে
পারছিনা।
"দূর তুমি বলবা নাকি চলে যাবো।
"এই না দাড়াও।
.
তারপর নিপার সামনে হাটু গেড়ে বসে
চোখ বুঝে বলতে লাগলাম..
"দেখো নিপা তোমাকে যেদিন প্রথম
দেখেছি সেদিনি আমি তোমার
প্রেমে পড়ে গেছি। কিন্তু ঘটনার
পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ইচ্ছা
অনিচ্ছায় তোমার সাথে ঝগড়া লেগে
যায়। তাই আর মনের কথাটা বলে উঠতে
পারিনি। কিন্তু এভাবে আর কয়দিন
থাকা যায় তুমি বল কেননা তোমাকে
যতই দেখি নতুন করে আবার তোমার
প্রেমে পড়ি। আর এই ভালবাসা আমি
সারাজীবন শুধু তোমার জন্য রাখতে
চাই। আমি চাই যে আমার পুরোটা
ভালবাসার অংশীদার শুধু মাত্র তুমিই
হও। সত্যি তোমার ঐ কাজল কালো
চোখের আমি মায়ায় পড়ে গেছি..
তোমার চুলের প্রতিটা পানির ছিটায়
আমার ভোরের ঘুম ভাঙ্গাতে চাই...
তোমার হাতে হাত রেখে একসাথে
বৃষ্টিতে ভিজতে ভাই...
জোৎন্স্য রাতে তোমার সাথে
জোৎন্স্যা বিলাস করতে চাই....
আমার প্রতিটা আনন্দের মূহুর্ত তোমার
সাথে কাটাতে চাই...
হবে কি তুমি আমার এই মনের রাজ্যের
মালিক...
সত্যি তোমাকে খুব ভালবেসে
ফেলেছি
হবে কই তুমি আমার মিস.প্রেমিকা??
.
কথাগুলা বলে চোখ খুলে নিপার
দিকে তাকালাম। দেখি নিপা আমার
দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে
তারপর আবার সেই রাগী কন্ঠে বলল।
"দাড়াও বলছি।
(নিপার কথামত দাঁড়ালাম কিন্তু
দাঁড়াতেই)
"ঠাশ
"কি হল মারলা কেন?
(দেখলাম নিপার চোখ দিয়ে পানি
পড়ছে)
"তাহলে এই গালেও মারো শুনেছি এক
গালে চড় মারলে বিয়ে হয় না। তুমি
তো এক গালে মারলা পরে যদি
তোমাকে বিয়ে করতে না পারি।
(কথাটা বলার পড়ি নিপা কেঁদে
কেঁদে আমার আরেকগালে অনেক জুড়ে
আরেকটা চড় মেরে আমার বুক পাঁজরে
এসে ঠাই করে নিল। কি ব্যাপার কি হল
এই মেয়েটা আমাকে ভালবাসে?
কিন্তু কিভাবে আমার প্রেমে পড়লো?
দূর যাক সে কথা এত কিছু ভেবে লাভ
নেই রাগী মেয়েটা তো প্রেমে
পড়েছে। কিন্তু চড় মারলো কেন? কি জুড়
রে বাবা হাতে।
"তা মিস.রিনা খান ভালবাসো না
বুঝি আমাকে?
"ঐ চুপ কর আর একটা কথাও বলবা না।
"তাহলে চড় মারলা কেন?
"এটা তোমার শাস্তি।
"শাস্তি! কেন?
"আমাকে কথাটা বলতে এত দেরি
করেছো তাই।
"তাই বলে এর জুড়ে একটু আস্তে মারলেও
তো পারতা।
"সরি বাবু একটু বেশি জুড়ে হয়ে গেছে
বুঝি।
.
দূরে তাকিয়ে দেখি
নাহিদ,জমির,সাগর আর আমার অন্যান্য
বন্ধুরা মিলে আমাকে দেখে হাসছে।
তবে এটা টিটকারি না আনন্দের
হাসি। আমি তখন নিপাকে বললাম।
"তা এখন তো ছাড় আমাকে সবাই তো
দেখছে।
.
কথাটা শুনার পর নিপা আমাকে ছট করে
ছেড়ে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।
এই মেয়েটা প্রথমেই যেভাবে চড়
দিয়ে শুরু করেছে না জানি বাকিটা
জীবন আমাকে কিসের উপর রাখবে।
আল্লাহ তুমি এই অবুঝ ছেলেটাকে রক্ষা
করিও।

No comments:

Post a Comment