Saturday, November 5, 2016

গল্প: বন্ধুত্ব+ভালবাসা

গল্প: বন্ধুত্ব+ভালবাসা

-কি রে হনুমান।(শুভ্র)
-হুম বানর।(রাত্রি)
-তোর এত ভাব কিসের?
-আজিব আমি আবার ভাব দিলাম কখন।
-তুই ভাব দেস না,তাহলে ঠোটে এত কড়া লিপিষ্টিক
লাগিয়েছিস কেন?
-আজিব ব্যাপার আমার ঠোটে আমি লিপিষ্টিক লাগালে
সেটা ভাব হয়ে গেল।
-হ্যা ভাবই তো।তুই কাল থেকে হিজাব পরে
আসবি।
-আজিব কেন?
-আমি বলছি তাই।
-তোর কথা আমায় রাখতে হবে কেন?
-কারন তুই আমার.......
-কি হল থামলি কেন বল।ভীতু একটা।
-কি আমি ভীতু?
-হ্যা ভীতুই তো।তা না হলে বল আমি তোর কি?
-তুই আমার ইয়ে মানে ভাল বন্ধু।(একটু ইতস্তত
হয়ে
বলল)
-এই ছাড়া আর কিছু না?
-না।
-আচ্ছা আমি আজ থেকে তাহলে বেশি করে
সাজব,ঠোটে লিপিষ্টিক দিব,হিজাব পরব না দেখি তুই
কি
করতে পারিস।
-মেরে তোর ঠ্যাং ভেঙে দিব।
-তাহলে তো ভালই হল।সারাজীবন তোর
কোলে
থাকতে পারব।
-ইসস শখ কত।
-হ্যা অনেক।
-চল বাসায় যাই।
-না রে।এখন অন্য ডিপার্টমেন্টের ছেলেরা
বেরোবে।একটু ক্রাশ খেতে হবে।
-কি বললি তুই?মেরে তোর মুখ ভেঙে দিব।
-তাহলে তো ভালই হবে,সবাই বলবে শুভ্রর
বউয়ের মুখ বাকানো।
-কি বললি।
-কই কিছু না তো চল।
-চল মানে কোথায়?
-ফুসকা খাওয়াবি।
-আমি কি পাগল তোকে ফুসকা খাওয়াতে গিয়ে কে
সামলাবে শুনি,ঝাল খেয়ে কান্না করে আমার শার্টটা
নষ্ট করবি।
-না রে করব না।
-সত্যি।
-হুম চল তো।
-চল।
শুভ্র আর রাত্রি দুজন খুব ভাল বন্ধু।শুন্ধু বন্ধু
বললে
ভুল হবে ওরা একে অপরের প্রতি অনেকটাই
দুর্বল।কিন্তু শুভ্র কখনও সেটা প্রকাশ করে না।
তবুও
রাত্রি বোঝে শুভ্রকে।জানে শুভ্র তাকে
অনেক
ভালবাসে।এজন্য তো রাত্রি শুভ্রর অপছন্দের
কাজ
গুলো করে।শুধু একটিবার তার মুখ থেকে ভালবাসি
কথাটি শোনার জন্য।কিন্তু শুভ্র প্রতিবারই ওই একই
জায়গায় থেমে যায়।তবু রাত্রি আশায় আশা ছাড়েনি।
যেভাবেই হোক শুভ্রর মুখ থেকে কথাটি বের
করবে।
পরেরদিন ক্যাম্পাসে,
শুভ্র হন হন করে হাটছে অজানা গন্তব্যে।
নিজের
চোখকে বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।এটা
কিভাবে পারল রাত্রি।রাত্রি কি বোঝে না ও ছাড়া শুভ্র
অচল।তবু কেন করল এমনটা।
কিছুক্ষন আগে,
শুভ্র একা একা হেটে ক্লাসের দিকে
যাচ্ছে,কিছুদূর
এগিয়ে দেখে রাত্রি একটা ছেলের সাথে
হেসে
হেসে কথা বলছে।
শুভ্রকে ডাক দিল রাত্রি।
-দোস্ত এদিকে আয়(রাত্রি)
-বল কি হয়েছে।(রাগী সুরে)
-দোস্ত আমার জানু এইটা কেমন হয়েছে?(ঐ
ছেলেটাকে দেখিয়ে বলল)
-জানু মানে?
-বুদ্ধু আমার বি এফ।
-ভাল।থাক।শুভকামনা রইল।
-এই শুভ্র দাড়া না।দেখতো দুজনকে কেমন
লাগছে।
-অনেক সুন্দর রে।আসি।
-এখনই যাবি।ভেবেছিলাম তিনজনে ফুসকা খাব।
-তোরা খেয়ে নে।আমার কাজ আছে।
-ক্লাসে যাবি না।
-না।
-কেন?
-তোকে বলতে হবে নাকি?
-হ্যা বলতে হবে।
-আমি বাধ্য নই।(বলেই হাটা দিল শুভ্র)
-না তুই যেতে পারবি না।(পিছন থেকে হাতটি ধরল
রাত্রি)
-হাত ছাড় রাত্রি।
-না ছাড়ব না।বল যাবিনা।
-যাব।
-ছাড়ব না।
-রাত্রি মাথা গরম হচ্ছে কিন্তু।
-কি করবি মাথা গরম হলে,মারবি তো মার।
ঠাশ...........
কিছুক্ষন দুজনের চোখাচোখি হল,তারপর দুজনে
চোখের পানিতে বিদায় নিল।
আজ অনেক বেশি মন খারাপ শুভ্রর।না ওভাবে
মারাটা
উচিৎ হয়নি মেয়েটাকে।তবে কেন করল এমন।ও
জানেনা ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।
বিকেল থেকে এখন রাত বারটা পর্যন্ত শুভ্র
ফোনে ট্রাই করে যাচ্ছে কিন্তু ফোন অফ
বলছে।নিজেকে অপরাধীর মত লাগছে।
পরেরদিন ক্যাম্পাসে,
শুভ্র বসে আছে একাকী মাঠে।খুব মনে
পড়ছে
রাত্রির মুখটা।এটাই হল একমাত্র জায়গা যেখানে রাত্রির
দেখা পাওয়া যাবে।
কিছুক্ষন পর একটি রমনী,ধীরে ধীরে এগিয়ে
আসছে।কে হতে পারে।কাছে আসতেই শুভ্র
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।কে এটা,রাত্রি হিজাব
পরেছে।ঠোটে লিপিষ্টিক নেই,মুখে মেকাপ
নেই শুধু ফোলা চোখে কাজল লাগিয়েছে।
অন্যরকম সুন্দর লাগছে রাত্রিকে।অবশ্য ভীষন
কান্না করেছে ওর চোখ দেখে বোঝা
যাচ্ছে।
-কে এটা?(শুভ্র কেদে কেদে বলল)
-কেন চেনা যাচ্ছে না হনুমান কে।(রাত্রি কেদে
কেদে বলল)
-হুম তবে এ তো হনুমান নয় এ তো পরী।
-তাই।
-হুম।
-তো পরীকে কি মাফ করা যায় না?
-কেন?পরী তো কোন দোষ করেনি,দোষ
করেছি আমি।পরী আমাকে মাফ করবে তো।
-ধ্যাত পাগল দোষটা আমারই।
-বলছি না আমার দোষ পাগলী।
-আচ্ছা মানলাম।এবার বল তো আমাকে ওই
ছেলেটির
সাথে দেখে এত রাগ হল কেন?
-জানিনা।তা তোর বিএফ কেমন আছে।
-ওটা আমার বিএফ না।
-তাহলে কি?
-তাহলে তোর মাথা।
-হুম।
-আচ্ছা তুই কি আমাকে কখনও বলবি না?
-কি বলব?
-জানিনা।(বলেই রাত্রি উঠে পড়ল)
-এই মেয়ে শোন,আমি তোমার পাশটাতে
হাটতে
চাই,তোমার মনের আকাশে রঙধনু হতে
চাই,তোমার
চোখের কাজল হতে চাই,বিনিময়ে শুধু ভালবাসা দিও
আমায়।থাকবে তুমি আমার মন পাজরে।
-বুদ্ধু এভাবে না ভালবাসি বল।
-আমি তোমাকে ভালবাসি বালিকা।(হাটুগেড়ে হাত
ধরে
বলল)
-আমিও তোমাকে খুব ভালবাসি বালক।
-পাগলী একটা।
-হুম শুধুই তোমার।এই চল তো
-কোথায়?
-ফুসকা খাব।
-না তুমি সেদিনও আমার শার্ট নষ্ট করেছিলে।
-হ্যা করেছি আর করব এখনও বুঝেছ।
-চল।
-না।
-কি বললে?(কলার চেপে ধরেছে রাত্রি)
-এই ছাড় যাচ্ছি তো।
-হুম সুবোধ বালক।হি হি হি।(বুকে ঝাপিয়ে পড়ে
মুখ
লুকালো রাত্রি)
-হুম সুবোধ বালিকা।
ভালবাসা কয়েকটা শব্দগুচ্ছ নয়,একটা অদৃশ্য বন্ধন।
যে
বন্ধন দুটি মনকে একত্রিত করে।।।।

No comments:

Post a Comment