Tuesday, November 8, 2016

"ঝগড়াটে মেয়ে"

"ঝগড়াটে মেয়ে"
.
-কিরে তুই ছাদে অাসলি কেনো?
(অামি)
-এমনি অাসছি,তোর কি? (সে)
-অামার কি মানে? তুই কেনো
অাসলি?
-সকালের অাকাশ দেখতে এসেছি!
দেখ কত সুন্দর অাকাশ! তাতে তোর
কোন সমস্যা?
-অাসলি ভালো কথা ?হাসছিস
কেনো তাহলে?
-মন চাইছে,তাই হাসতেছি!
-তোরে না বলছি অামি যখন ছাদে
ব্যায়াম করবো। তখন তুই ছাদে অাসবি
না।
-এমনটা কি লেখা অাছে, যে তুই
ছাদে থাকলে অামি ছাদে অাসতে
পারবোনা? নাকি এমন কোনো অাইন
অাছে?
-অামি না করছি। তাই অাসবিনা!
অামি যখন ব্যায়াম করি তখন কেনো
অাসস?
-ব্যায়াম করতে হলে, নিজের রুমে
গিয়ে করবি!ছাদে নয়!
-যাবি? না হয় থাপ্পড় দিবো একটা!
-দে,দেখি তোর কত সাহস!
-থাপ্পড় মেরে বত্রিশটা দাঁত ফেলে
দিবো!
-অায় না! দেখি তোর হাতে কত জোর!!
-তুই যাবি এখান থেকে।ব্যায়াম করতে
দে!
-হাহাহা, যতই ব্যায়াম করো। সালমান
খানের বডি হবেনা।
-এই যাবি তুই, না হয় তোর গায়ে ঢিল
মারবো! (হাতে ইটের টুকরা নিয়ে)
-দেনা ঢিল। দেখি দিতে পারস
কিনা? (হাতে ইট নিয়ে)
-যা ছেড়ে দিলাম!
-হইছে, তুই কি ছাড়বি! তোর তো
সাহসি নাই!
-অাচ্ছা তুই থাক! অামি'ই যাচ্ছি!
-হাহাহা,যা না!
.
কি অার করার? শেষ পর্যন্ত অামি'ই
ছাদ থেকে নেমে অাসলাম। মেয়ে
তো দেখছি ওর মতো মেয়ে একটাও
দেখিনাই! সারাক্ষণ অামার সাথে
লেগেই থাকে! এরকম ঝগড়াটে মেয়ে
একটাও চোখে পড়েনা! এ হলো ইপ্তি।
অামার ফুফুর মেয়ে। অামাদের
বাড়িতেই থাকে। এবার
ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। এস.এস.সি
পাশ করার পর, অামার শ্রদ্বেয়
অাম্মিজান, তাকে অামাদের
বাড়িতে নিয়ে অাসেন! অার তার
লেখা-পড়ার ভার অামার বাপজানে
বহন করে।অামার অাম্মু অাব্বুর কাছে
অাহা কি লক্ষি মেয়ে!ভাজা মাছ
উল্টিয়ে খেতে জানেনা।অার
অামার কাছে একটা বদের হাড্ডি!
.
যতক্ষণ বাসায় থাকবো ততক্ষণ অামার
পেছনে লেগে থাকবে! সারাটাক্ষণ
ঝগড়া করে অামার সাথে। যখন অাম্মু
অাব্বুর সামনে থাকি। তখন সুন্দর করে,
রাহাদ ভাইয়া বলে ডাকে।মা-
বাবার সামনে রাহাদ ভাই। অার
অাম্মু অাব্বু না থাকলে তুই করে বলে।
এমন ভাবেই রাহাদ ভাইয়া ডাকে,
অাম্মুর কাছে তার নামে নালিশ
দিলেও বিশ্বাস করেনা। যে সে কিছু
করছে।সেই দিন ল্যাপটপে কাজ করছি।
এমন এসে বলে
-এই অামার একটা বই লাগবে। (ইপ্তি)
-তুই যা তো এখান থেকে! অামি কাজ
করছি! (ধমক দিয়ে)
-কাজ করা লাগবেনা। অামার সাথে
যেতে হবে।
-পারবোনা!
-মামি দেখেন রাহাদ ভাইয়া
অামাকে ধমক দেয়। অামি বই কিনতে
যাবো। বলছি যেতে, যায় না।
-রাহাদ যা তুই ইপ্তির সাথে (মা ডাক
দিয়ে বললো)
-অামি যাবোনা! তুই একা যা! (অামি)
-তুই যদি না যাস, তাহলে মামির
কাছে বলে দিবো তুই সিগারেট খাস।
মামি রাহাদ ভাইয়া না!
-যাবো,তুই রেডি হ।
.
তারপর কি করার তার সাথে গেলাম।
সেদিন বই কিনতে গিয়েছিলো
নাকি অন্য কিছুর জন্য বুঝতে পারিনি।
সেদিন তার বান্ধবিদের সামনে
অামার হাত ধরে চলে, যেন অামি
তার বয়ফ্রেন্ড।।
.
অাম্মু চা দিয়ে যাও!
-এই নে তোর চা!
-তুই,অাম্মু কই?
-মামি, তোর চাচার বাড়ি গেছে।
-ও অাচ্ছা। তুই যা তাহলে এখান
থেকে!
-যাবোনা, এখানে বসে থাকবো, কি
করবি তুই!
-দেখ ইপ্তি।এই কাজটা অামার শেষ
করতে হবে। না হয় বসের কাছে কথা
শুনতে হবে । অার অামি স্যারের
কাছে কথা শুনতে চাই না।
-তুই স্যারের কাছে কথা শুনবি তাতে
অামার কি? অামি এখানে বসে
থাকবো ব্যাস!
-যাবিনা?
-না!
ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিলাম। দিয়ে
বললাম এবার যা!থাপ্পড় দেওয়ার পর
কিছু না বলে রুম থেকে বের
হয়েগেলো ইপ্তি। অার অামি অামার
কাজে মনযোগ দিলাম।
.
অাজ স্যারের কাছে অাবার
প্রশংসিত হলাম। কাজটা ঠিকঠাক
ভাবে শেষ করেছি বলে, স্যার
প্রশংসা করলেন।
-এই নে তোর চা (অাম্মু)
-অাম্মু খাবার রেডি করো,খুব ক্ষুদা
লাগছে।
-অাচ্ছা তুই অায়!
.
মানিব্যাগটা বালিশের নিচে
রাখতে গিয়ে একটা কাগজ পেলাম
ভাজ করা। কাগজা হাতে নিয়ে খুলে
পড়লাম। পড়ে তো অামি রীতিমত
অবাক।ইপ্তি লেখা ছোট একটা চিঠি।
চিঠিতে লেখা ভালো থেকো। খুব
বেশি জ্বালাতন করি তাই না।অাজ
থেকে অার জ্বালাতন করবোনা। তুমি
খুব ভালো ভাবে কাজ করতে পারবে।
তোমাকে অার কাউকে অসহ্য করা
লাগবেনা। একটা কথা কি জানো?
কবে যে তোমাকে ভালোবেসে
ফেলেছি তা অামি নিজেই
জানিনা। তাই হয়তো সবমসময় তোমার
পাশে থাকতে চাইতাম সবসময়, তবে
তুমি কখনোই অামাকে সহ্য করতে
পারতেনা। তবুও তোমাকে না দেখলে
যে ভালো লাগেনা। তাই তোমার
কাছে বার বার যেতাম। তোমাকে তুই
করে বললে অামার খুব ভালো লাগে।
যখন তুই করি বলি তখন তুমি যে মুডটা ধর -
তা অামার কাছে অনেক ভালো
লাগে। তোমাকে রাগাতে ভালো
লাগে। কিন্তু তোমাকে অামি
ভালবাসি এটাই সত্য।ভালো থেকো।
.
ইপ্তি ভালোবাসে! কথাটা শুনে মনে
মনে হাসছিলাম। ইপ্তির লেখা
চিঠিটা পড়ে এতোটা ইমোশন কাজ
করেনি!.
.
অাস্তে অাস্তে বুঝতে পারলাম,
ইপ্তিকে বিষণ মিস করছি। তার সাথে
ঝগড়াগুলো খুব বেশি মিস করছি।
সকালে কেউ অার ছাদে গিয়ে
বলেনা "ব্যায়াম রুমে গিয়ে কর " কেউ
এখন কাজ করার সময় পাশে বসে থেকে
ঝগড়া করেনা। খুব মিস করতে থাকি।
মিস করলেও কোন দিন ফোন করে খোজ
নেই না।
.
-হঠাৎ একদিন অাম্মু এসে বললো ইপ্তির
বিয়ে অামাদের সবাইকে যেতে
বলেছে। অাম্মুর মুখে ইপ্তির বিয়ের
খবর শুনার পর এতোটা খারাপ লাগছে
বলে বুঝাতে পারবোনা। এতোটা
খারাপ কখনোই লাগেনি। অাস্তে
অাস্তে ইপ্তিকে ফিল করতে
লাগলাম। খুব বেশি মিস করতে
লাগলাম। কি করবো বুঝতে পারছিলাম
না।লাজ সরম ভুলে "অাম্মুকে বললাম
ইপ্তিদের বাড়িতে যাবো "।যেই বলা
সেই কাজ।
.
-অাপনি এখানে? (ইপ্তি)
-হুম! (অামি)
-হুম কি? অাপনার এখানে কি চাই?
-তোর নাকি বিয়ে?
-হুম, কয়েকিদন পর! দাওয়াত তো
পাইছেন!
-হুম। তাই তোকে দেখতে অাসলাম!
-অামাকে দেখার কিছুই নাই! অামি
ভালো অাছি!
-সত্যিই তোর বিয়ে?
-অাজব তো। কেনো অাপনার বিশ্বাস
হয় না! ছেলে ভালো কোম্পানিতে
চাকরী করে। শুনেছি প্রমোশন হয়েছে
অস্ট্রেলিয়া। বিয়ের পর অামাকে
নিয়ে অস্ট্রেলীয়াতে সেটেল হবে।
-
ছেলে ভালো কোম্পানিতে চাকরী
করে? অস্ট্রেলিয়াতে সেটেল হবি।
তোকে খুন করে ফেলবো!(চুলের ধরে,
চোখে চোখ রেখে)
-এই ছাড়েন ব্যথা পাচ্ছি তো!
-তুই চুলে ব্যথা পাচ্ছিস।অার অামার
যে বুকটা ফেটে যাচ্ছে! তাতে কিছুই
না।
-কি ফেটে যাচ্ছে?
-কিছুই না সরি! (ছেড়ে দিয়ে) চলি
ভালো থাকিস। তোর বিবাহিত জীবন
সুখের হোক।
এই বলে ছাদ থেকে বের হয়ে যাওয়ার
জন্য পা বাড়ালাম। পেছন থেকে
হাতটা টান দিয়ে পিছন ফিরিয়ে
"শার্টের কলার ধরে বললো "
.
কই যাস তুই? অার এক পা সামনে
বাড়াবি, তাহলে তোর টেঙ ভেঙ্গে
অামার সামনে বসিয়ে রাখবো
সারাজীবন। ভালো থাকবো মানে?
অাচ্ছা তুই কি অামাকে এতুটুকু বুঝবি
না? অামি তোকে ছাড়া ভালো
থাকতে পারবোনা। এই কয়েকটা দিন
তোকে ছাড়া কেমনে কাটিয়েছি -
তা তো তুই বুঝবি!
-ছা-ছা-ছাড় অা-অা-মাকে।অামি
যাবো।
-তুতলাচ্ছিস কেনো? কই যাবি?
-অানন্দে তুতলাচ্ছি।বেশি খুশি হলে
অামার তুতলানো উঠে। অার কাজি
অফিসে যাবো তোকে বিয়ে করতে।।
অতঃপর পাগলীটা লজ্জায় বুকে মুখ
লুকালো।।

No comments:

Post a Comment