Thursday, November 10, 2016

গল্প: ভালবাসায় ভালবাসি

গল্প: ভালবাসায় ভালবাসি

-এ পর্যন্ত কয়টা মেয়ের সর্বনাশ করছিস? (মায়া)
-একটা নিয়েই তো পারিনা।(বিড়বিড় করে
বললাম)
-কি বললি?
-নাহ কি বলব!তাছাড়া সর্বনাশ বলছিস কেন
প্রেমিকা বলতে তো একমাত্র তুই।
-তাই না?
-হুম তো।এইতো বুকে কান পেতে শোন শুধু
তোর নাম শোনা যাবে।
-চুপ কর লুইচ্চা।সত্যি করে বল কবে থেকে
চলছে এসব?
-মানে কি?ভাল হচ্ছে না কিন্তু মায়া।
-ভাল তুই হতে দিচ্ছিস শয়তান।কয়টা মেয়ের
সাথে এমন লুতুপুতু মার্কা প্রেম করিস বল।
-দেখ মায়া তুই যা ভাবছিস তা নয়।
-তবে কি?তুই বিয়ে করেছিস তাহলে?
-উফফ হে খোদা এই মাইয়ারে তুমি বুঝাও।
-কি বুঝাবে হুম আমি ঠিকই বুঝেছি।
-কি বুঝেছিস শুনি?
-তুই আমাকে ভালবাসিস না।
-কচু বুঝেছ।
-শুভ্র কেন করলি এমন আমার সাথে?
-আরে পাগলী বিশ্বাস কর আমি শুধুই তোকে
ভালবাসি।
-মিথ্যে কথা।
-নাহ সত্যি রে।
-তাহলে এই লিপিষ্টিক কার জন্য কিনেছিস
লুকিয়ে।
-আমার খালাত বোনের জন্য।
-তোর খালাতো বোন দেখতে খুব সুন্দরী
তাইনা?
-মানে কি?
-মানে কি বুঝিস না?লুকিয়ে লুকিয়ে যার
জন্য লিপিষ্টিক কিনলি সে তো অনেক
সুন্দরী।
-মোটেও লুকায়নি আমি এমনিতেই তোকে
দেখাতাম।
-চুপ শয়তান তুই দেখাতিস আমায় মিথ্যুক
কোথাকার।
-হ্যা আমি মিথ্যুক হইছে।আমি ওকে
ভালবাসি হইছে।
-কিইইই কি বললি তুই আবার বল আমি তোকে
খুন করে ফেলব।
-কেন এতক্ষন ধরে তো এটাই শুনতে
চাইছিলি।
-যা তোর সাথে ব্রেক-আপ।
-হ্যা ব্রেক-আপ তো তোমার কাছে দুধভাত।
কিছু হলেই শুধু এটা বলতে পার।
-এবার সত্যি সত্যি ব্রেক-আপ।
-হ্যা দেখব কেমন পারিস।
-পারব হাজারবার তোর মত লুইচ্চার সাথে
প্রেম থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল।
-আমি লুইচ্চা আর তুমি সাধু ক্লাসে বসে তো
ছেলেদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকিস।
-কিইই কি বললি তুই?
-কানে শুনিস না গাধী।
-দূর হ তুই।তোর মুখ যেন আর কোনদিন না
দেখি।
-তুই দূর হ।কাল থেকে চোখে কাপড় বেধে
আসবি।
-কেন?
-আমায় দেখতে হবেনা।
-চুপ শয়তান তুই থাক।
-তুই থাক।
দুজন দুইদিকে হাঁটা দিলাম।এই মেয়েটা
আসরত একটা পেইন।সারাদিন সন্দেহ আর
সন্দেহ।ওরে আমি তোর বিএফ তাই এত
স্বামী হলে তো নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে
চাইবি।যাই হোক সহ্যের সীমা পেরিয়ে
গেছে।সন্দেহ ভাল তবে সবসময় নয়।
.
হাজারবার বলছি লিপিষ্টিকটা আমার
খালাত ছোটবোনের জন্যমহারানীর
বিশ্বাসই হচ্ছেনা।একই ক্লাসের মেয়ের
সাথে প্রেম করা মানে বোকা বনে
যাওয়া।একটু এদিক ওদিক করলেই ক্লাস
শেষে কোমর বেধে ঝগড়া শুরু করবে।কেন যে
গিয়েছিলাম এই মেয়েটার সাথে প্রেম
করতে আল্লাহই জানে।
.
সকালে বাসা থেকে রওনা দিব কলেজে
আসার জন্য।খালাতো বোন মীম এসে
হাজির।দরজার সামনে দাড়িয়ে পাকা
বুড়ির মত ঠোঁট চেপে হাসছে।
-কিরে বুড়ি হাসিস কেন?
-বলব না।
-এ মা কেন?
-আন্টিকে বলব।
-কি বলবি?
-এইযে এই আপু টা.....(একটা ছবি দেখাল)
-ততক্ষনাৎ মানিব্যাগে হাতড়িয়ে দেখলাম
মায়ার ছবিটাই গায়েব
-কি হল চিনতে পেরেছ?
-লক্ষী বোনটি আমার দিয়ে দাও।
-না দিবনা।
-কেন?
-এমনি।দিতে পারি এক শর্তে।
-কি শর্ত?
-আমাকে একটা লিপিষ্টিক এনে দিতে হবে।
-বলে কি এই মেয়ে।বয়স মনে হয় ৮ হবে এই
বয়সে লিপিষ্টিক।কিছু বলার নেই মাথা
নাড়লাম।
-অবশেষে ছোট্ট আব্দার পূরন করে ছবিটা
ফেরত দিল।
.
এই লিপিষ্টিকটাই আজ সব পন্ড করল।ওটা
ব্যাগের ভিতর রেখে বাথরুমে গেছি অমনি
মায়া এসে ব্যাগ সার্চ করে এটা দেখে
রেগে খুন।এমনিতেই কারন ছাড়া যে ঝগড়া
করে তার সামনে এখন প্রমান পড়ে আছে
কমে ছাড়বে কি।বলেই তো দিল যা ইচ্ছে
তাই।প্রতিবার ঝগড়া হবে বলবে ব্রেক-আপ।
পরেরদিন আমার বেঞ্চিতে এসে পা দুলাবে
স্যার না থাকলে।এই হল মহারানীর রাগের
দূরত্ব।
.
সত্যি বলতে মায়া আমার প্রথম প্রেম।যদিও
কলেজ লাইফে এসে ওকে পেয়েছি।বিয়ে
তো এখনও অনেক দেরি।নিজেকে
প্রতিষ্ঠিত করেই তারপর ওর দায়িত্ব নিতে
হবে।যাই হোক বিয়ে করতে হলে এই
মেয়েটিকেই করব।বাসায় অবশ্য জানিয়ে
রেখেছি তবুও সবসময় ভয় হয়।এই মিষ্টি
মেয়েটাকে যে আমি কিছুতেই হারাতে
চাই না।
.
চারদিন হল বাসার বাইরে যাইনা।
কলেজ,ব্যাচ একেবারে অফ।কেন জানি ওর
উপর অভিমান করেই যাইনি।ফোনটা তো অফ
কিন্তু আমার বন্ধুদের কাছে হাজারটা খবর
পাঠিয়েছে তবুও গুরুত্ব দেয়নি।এত কেন
সন্দেহ করবে সে।
.
পঞ্চম দিন......
কলেজে ঢুকেই চারিদিকে একটা চক্কর
দিয়েছি বন্ধুদের সাথে।কোথাও নেই
মহারানী।সত্যি বলতে একদিনে অনেকটা
মিস করেছি একটিবার দেখতে পেলে হয়ত
ভাল লাগত।কিন্তু তার চিহ্নটুকুও কলেজে
নেই।
ক্লাসে বসে আছি অফ প্রিয়ড।একটা মেয়ে
এসে বলল ভাইয়া মায়া আপনাকে ডাকছে....
একটু তড়িঘড়ি করেই যেতে শুরু করলাম
সেইদিকে....
মহারানী বেঞ্চির উপর বসে পা দুলিয়ে আম
খাচ্ছে...
-কোথায় ছিলেন নবাবপুত্র এতদিন?(মায়া)
-কেমন আছিস তুই?(আমি)
-আমি কেমন আছি না জানলেও চলবে যে
কারনে ডাকা!
-কি?
-আমি একজনকে ভালবেসে ফেলেছি তাই
আপনাকে বলতে চাই আমাকে আর ডিষ্টার্ব
করবেন না।
-মানে কি?মায়া এ কদিন অনেক কষ্ট
পেয়েছি আর ফান না।
-এটা ফান না আমি সিরিয়াস।
-কিছুক্ষন তাকালাম ওর দিকে।
-এত দেখে লাভ নেই এখন নিজের রাস্তা
দেখ।
-মায়া ওটা সত্যিই আমার ছোট বোন রে।
-জানি।
-তারপরেও
-ওটা নিয়ে তো কিছু হয়নি।আমার একটা
ছেলেকে ভাল লেগেছে ব্যাস প্রেম
করেছি।
-কিন্তু আমি?
-আপাতত নেই।
-মানে কি?
-সেদিন বলেছিলাম ব্রেক-আপ এবার
বিশ্বাস হল পারি কি না।
-মায়া....
-প্লিজ এখন যাও।
-আমি তোমায় ভালবাসি মায়া খুব
ভালবাসি।
-ধ্যাত।(বলেই উঠে পড়ল)
.
জানিনা মায়া কেন করল, কেন করছে এমন।
প্রতিবারই তো ব্রেক-আপ বলে আবার ঠিক
হয়ে যায় তবে এবার কেন করল।তবে কেন
আমার বন্ধুদের কাছে আমার খবর জানতে
চাইত।জানিনা আমি কিছু ভাবতে
পারছিনা।চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসছে।।
কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়েছি....
-ভালবাসি রে পাগলটা আমার।(একটা ফুল
এনে সামনে ধরে বলল মায়া)
-পাশ কাটিয়ে হাটা দিলাম।
-রাগ করেছ?
-চুপ করে আছি।
-আমি তো তোমাকে রাগানোর জন্য
বললাম।তুমি কেন বোঝনা তুমি ছাড়া আর
কা্উকে ভাবতে পারিনা অন্য কেউ আমার
জীবনে আসার আগে আমার মরন হবে।
-তাই বলে এতটা?
-কেন নয় তুমি খুব ভাল করেই জান তোমাকে
একদিন না দেখলে আমি থাকতে পারিনা
সেই তুমি চারদিন আমার একটুও খোঁজখবর
নিলেনা?
-তুমি এত সন্দেহ কর কেন হুম?
-জানিনা বড্ড বেশি ভালবাসি তোমায়
এজন্য ভয় হয়।
-পাগলী মেয়ে এত ভয় কেন আমি তো আছি।
-শুভ্র....
-হুম বল....
-তোমার বুকে কান পেতে শুনতে চাই...
-কি?
-ভালবাস কতটা।
-পাগলী বুকে কান পেতে কি কিছু শোনা
যায়?
-হুম যায় তো।
-আচ্ছা বাবা শোন।
-হুম।
পাগলীটা কান পেতে আছে।আমি আলতো
করে ছুঁয়ে আছি।অভিমান ভুলে কখন যে তুই
থেকে তুমিতে এসেছি। ভালইতো বিয়ের পর
কি তুই করে বলবে নাকি এখন থেকে শিখুক।
আদরে জড়িয়ে রাখব সারাটিজীবন
এভাবে।।।

No comments:

Post a Comment