Saturday, November 5, 2016

গল্প: জীবন টা এতো সুন্দর ক্যারে

গল্প: জীবন টা এতো সুন্দর ক্যারে

প্রথম থেকেই মেয়েটাকে আড়চোখে
ফলো করছি। বুঝতে পেরেছে কি না
কে জানে। তবে আমার দিকে মাঝে
মাঝে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে
নিচ্ছে। বিয়েবাড়ি বলে কথা।
মেয়েদের একটু রিস্ক বেশিই থাকে।
সারাক্ষন যদি আমার দিকে ড্যাব
ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে তাহলে
লোকে দেখলে বলবে কি? সেই ভয়ে
হয়ত মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে। আমি
কিন্তু কোন কিছুর পরোয়া করছিনা।
তাকিয়েই আছি। মেয়েটা একটু দুরে।
তার সামনে দিয়ে অনেক মানুষ হেঁটে
যাচ্ছে। তাই মাঝে মধ্যে ঘাড়
নাড়িয়ে দেখতে হচ্ছে। মেয়েটাও
দেখছে। বিষয়টা কে কেমন ভাবে
নিচ্ছে আমি জানিনা।কিন্তু একি
মেয়েটা কই। ওকে এখন দেখা
যাচ্ছেনা কেন? বারবার ঘাড়
নাড়িয়ে দেখছি। কিন্তু না
মেয়েটাকে দেখছিনা। হঠাত আমার
পেছন থেকে কোন মেয়েলি কন্ঠ
শুনলাম। পিছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখি
মেয়েটা।
-- সমস্যা কি আপনার??
- জ্বি.. আমার কোন সমস্যা নেই তো।
-- জীবনে কোন দিন মেয়ে দেখেন
নি?
- দেখেছি। কিন্তু কেন?
-- আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে
আছেন কেন?
- না মানে আপনার মত মেয়ে আগে
কখনো দেখিনি।
-- মানে কি। সব মেয়ে তো একই রকম
- মোটেও না। আপনার চেহারা কি
অন্য কোন মেয়ের সাথে মিলে
নাকি। আপনার চেহারা আপনার মত
অন্য মেয়ের চেহারা অন্য মেয়েদের
মত।
-- এত কিছু বুঝিনা। আপনি আমার দিকে
আর তাকাবেন না।
- কেন?
বলেই আমি সানগ্লাস টা চোখে
পরলাম। তারপর মেয়েটির দিকে
তাকালাম।কিছু বলছেনা। মুচকি মুচকি
হাসছে।আমি বললাম
- কেন সেটা বলবেন না??
-- এমনিতেই তাকাবেন না। আর
রাতের বেলা সানগ্লাস চোখে
দিছেন কেন?
- আচ্ছা আপনি সূর্যের দিকে খালি
চোখে তাকাতে পারবেন??
-- আমি বলছি কি আর আপনি বলছেন
কি??
- বলেন না। আমার কথার উত্তর দেন।
-- সূর্যের দিকে কেউই খালি চোখে
তাকাতে পারবেনা।
- হুম.... আপনিও ঠিক সুর্যের মত সুন্দর তাই
এখন খালি চোখে তাকাতে
পারছিনা। চোখ ঝলসে যাবে।
-- এটা কোন কথা হল?? তাহলে এতক্ষন
কিভাবে খালি চোখে
তাকিয়েছিলেন।
- এতক্ষন তো আপনি চাঁদের মত সুন্দর
ছিলেন তাই খালি চোখে
তাকিয়েছিলাম। আর চাঁদের দিকে
সানগ্লাস পরে তাকালে চাঁদের
আলোর অবমাননা করা হবে।
-- কি সব বলছেন আপনি। কিছুই বুঝতে
পারছিনা।
- বেশি বোঝা ভালোনা।
-- তাই নাকি?
- হুম।
-- সে যাই হোক। আপনি আমার দিকে
আর তাকাবেন না।
বলেই মেয়েটি চলে যাচ্ছে।
একবারো পিছনে তাকাচ্ছেনা।
তাড়াতাড়ি করে সানগ্লাস খুলে
ফেললাম। কেউ যদি দেখে আমি
রাতের বেলা সানগ্লাস পরেছি
তাহলে সবাই ভাববে আমার মাথার
তার ছিঁড়ে গেছে। মেয়েটা ঘরের
ভিতর চলে যায়।
.
মেয়েটাকে যে আমি আজ প্রথম
দেখলাম,তা নয়..এর আগেও এই
মেয়েকে আর একবার দেখেছি।
কয়েকদিন আগেই একবার শপিংমলে
মেয়েটাকে দেখে আমি থমকে যাই।
আসলে আমি ভাবতে থাকি..আমি কি
মেয়ে দেখলাম, নাকি একটা পরী
দেখলাম?
.
এটা আমার বন্ধু শাকিলের বিয়ে। ও
আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। হবু ভাবি আর
শাকিলের জন্য কেনাকাটা নিয়ে
সবাই যখন ব্যাস্ত,আমি একটু সিগারেট
খাওয়ার জন্য একপাশে সরে আসি।
উপরে চোখ যেতেই এই মেয়েটাকে
দেখি। এক ঝলক... মুহুর্তেই হারিয়ে
গেলো। তারপর অনেক খুজেছিলাম।
শপিং বাদ দিয়ে পুরো শপিংমল
মেয়েটাকে গরু খোজা খুজলাম কিন্তু
পেলাম না। শেষে আবার বকাও
খেলাম বন্ধুদের কাছে হুট করে না বলে
যাওয়ার জন্য। আমি তো আশাই ছেড়ে
দিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যে থাকলে,
কি না হয়? মেয়েটাকে আজ পেয়ে
গেলাম বিয়ে বাড়িতে। সেদিনে
হারিয়ে গিয়েছিলো, সেই ভয়েই
মেয়েটাকে আজ চোখের আড়াল
করতে ভয় হচ্ছে। আবার যদি হারিয়ে
যায়? বিয়েতে যেহেতু এসেছে,
সেহেতু নীরা ভাবির আত্মীয়, নয়তো
বান্ধবী। এই একটা ভরসা আছে।
.
খাওয়ার পর্ব শেষ। কিছুক্ষন পর ই নীরা
ভাবিকে নিয়ে আমরা শাকিলের
বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হবো। এর মধ্যে
আমার পরীটাকে আমি আর দেখিনি।
ইস..একটু যদি দেখতে পারতাম। আমার
দু'চোখ এদিক সেদিক শুধু পরীটাকেই
খুজে যাচ্ছে।
.
আমার এ অবস্থা,বন্ধুদের চোখ এড়ালো
না। রিহান আমার পাশে একটা চেয়ার
টেনে বসতে বসতে বললো..........
--কি অবস্থা দোস্ত?
--কি?
--এদিক ওদিক তাকাস কেন?কাকে
খুজোস?
--কই..নাতো।কাকে খুজবো?
--কাউকে না খুজলে উকি-ঝুকি
মারতাসোস কেন?
--আসলে...মানে...
--কি?বল...
--নীরা ভাবিকে নিয়ে আসেনা
কেন?দেখিই নাই এখনো তাকে।
--কিইইই???তুই ভাবিকে দেখোস নাই?
শাকিল আর ভাবির এংগেজমেন্ট এর
সময় ও তো তুই ছিলি। গতকাল গায়ে
হলুদেও তো দেখলি।
--আসলে.....উমমম...বিয়ের সাজে তো
দেখিনি।
--চল...দেখিয়ে আনি।এখানে বসে
থাকলে দেখবি কিভাবে?
--ভিড় তো প্রচুর..
.
রিহান আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে
যাচ্ছে। আমি চাইলেই ওকে পরীর কথা
বলতে পারতাম। কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে,
আমার বন্ধুরা জানে আমি প্রেমের
বিরোধী। এর অপকারিতার উপর প্রায়ই
ওদের লম্বা লম্বা ভাষন দেই। সেই
আমি কিভাবে বলি,আমি প্রেমে
পড়েছি।
.
নীরা ভাবির রুমে প্রচুর ভিড়।
অনেকেই ছবি তুলছে। ভিড় ঠেলে
যেতে ইচ্ছা করছে না। রিহান হাত
ধরেই রেখেছে, ছাড়ছে না।
কোনোমতে নীরা ভাবির পাশে
গিয়ে দাড়িয়েই আমি আবার থমকে
গেলাম। পরীটা ভাবির পাশেই বসে
আছে গম্ভীর মুখে। দু'চোখে কালো
মেঘ জমেছে।
.
চট করে আমার মাথায় একটা বুদ্ধি
এলো। আমি রিহানকে আমার ফোনটা
দিয়ে বললাম ভাবির সাথে আমার
ছবি তুলতে। নীরা ভাবি পরীটার হাত
ধরে বসে আছে। তারমানে পরীটা
উঠবে না। আমি পরীটার সাথেই ছবি
তুলতে পারবো। বিয়ে বাড়িতে,কে
কার সাথে ছবি তুলছে..এ নিয়ে কেউ
নিশ্চই মাথা ঘামায় না।ছবি তোলার
পরপরই আমি রিহানকে ভেতরে রেখে
বাইরে চলে আসি।
.
বাইরে এসে মোবাইলটায় আমার
পরীটার ছবি দেখছি। কিন্তু পরী
অন্যদিকে ফিরে আছে। নীরা ভাবি
মাঝখানে বসে আছে। আমি হ্যাবলার
মত একপাশে দাঁড়িয়ে আছি।
পরীটাকে দারুন লাগছে। এমন সময়
রিহান আসে।
- কিরে মোবাইলে কি দেখছিস?
আমি মোবাইল টা পকেটে রেখে
দিয়ে বলি
-- কই.... কিছুনা.. তো
- তখন দেখলাম এদিক ওদিকে কাকে
খুজছিস আর নীরা ভাবির সাথে ছবি
তোলার পর দেখছি মোবাইলে ভাবির
ছবি দেখছিস। ঘটনা কি?? ভাবির উপর
ক্রাশ খাইছস নাকি?
-- ঐ বেটা ভাবির উপর ক্রাশ খাইলে
শাকিল আমারে আলুর ভর্তা বানিয়ে
ফেলবে।
- তাইলে কি ভাবির বান্ধবীর উপর?
-- ভাবির বান্ধবী কে?
- আরে ঐ যে ভাবির পাশে বসা ছিল ঐ
মেয়েটা। নামটা কি যেন........ হ্যাঁ
মনে পড়েছে। মেয়েটার নাম ইরা।
-- ইরা??? তাহলে তো আমার সাথে
মিল আছে..
- তোর সাথে আবার কিসের মিল?
-- আরে আমার নাম ইমরান পরীর নাম
ইরা।
- পরী আবার কোথাথেকে আসলো। এই
তোর ভাবগতি ভাল দেখতাছিনা। তুই
কি ইরার উপর ক্রাশ খাইছস??
-- দোস্ত জানিনা রে।
আমার কথা শুনে রিহান আমার মাথায়
থাপ্পড় মারতে মারতে বলল
- ঐ ফইন্নি ঐ.. এতদিন আমরা তোমারে
প্রেমের কথা বললে তুমি লম্বা লম্বা
ভাষন দিতা এখন দেখি ডুবে ডুবে জল
খাও।
রিহানের কথাটাই ঠিক। কিন্তু কি
করব। ক্রাশ তো খেয়েই ফেলেছি। এখন
তো আর উগলে ফেলে দিতে পারবনা।
ওটাকে হজম করে নিতে পারলেই হয়।
রিহানকে সবকিছু খুলে বলি। রিহান
বলল
- ব্যাপার না। ইরা নীরা ভাবির
সাথে যাবে আজ।
-- কোথায় যাবে?
- কোথায় আবার,, শাকিলের
বাড়িতে।
-- তুই জানছ কেমনে??
- আরে ওরা ভেতরে কথা বলার সময়
শুনছি।
মনে মনে ভাবছি এইটাই মোক্ষম সুযোগ।
কাজে লাগাতে হবে। আমি আবার
প্রেম টেমের ব্যাপারে এক্কেবারে
আনাড়ি। কি করব কিছুই বুঝতে
পারছিনা।
.
নীরাভাবিকে নিয়ে গাড়িতে উঠল
শাকিল। সাথে ইরাও আছে। আমিও চট
করে ঐ গাড়িতে উঠে পড়ি। আমি
ড্রাইভারের সাথে বসে আছি।
নীরাভাবির হাত ধরে ইরা বসে
আছে। আমি বারবার পেছন ফিরে
ইরার দিকে তাকাচ্ছি।ইরাও
ব্যাপারটা খেয়াল করেছে।সে
জানালা দিয়ে বাইরের দিকে
তাকিয়ে আছে। মুখ দেখে বোঝা
যাচ্ছে যে সে অনেক কষ্টে মুচকি
হাসিটাকে চেপে রেখেছে।
- ঐ ইমরাইন্না কি দেখছ বারবার পেছন
ফিরে।
হঠাত এই বাক্যটা শুনে আমি চমকে
উঠলাম।পিছনে ফিরে বুঝতে পারি
শাকিল বলছে।
-- শাকিল্লা.... আমার নাম কি তোর বউ
রাখছে নাকি। সুন্দর করে ডাকবি।
- ও আচ্ছা.... ইমরান ভাইয়া আপনি
বারবার পেছন ফিরে কি দেখছেন??
-- দেখতেছি তোরে বর সাজে কেমন
লাগে। আর ভাবতাছি কবে আমিও
শেরওয়ানি পরব।
- তোর আর শেরওয়ানি পরা হবেনারে।
তোর কপালে বউ নাই।
-- কেন তোর একথা মনে হল??
- আরে তোরে সেই কলেজ লাইফ
থেকে দেখে আসছি। আসলে তোর
প্রেমে,বিয়ে এই দুটোতে এলার্জী
আছে। তাই আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের
মুখে জান ডাকা শুনতে পারিসনি।
-- আরে দেখিস..... বিয়ে করে যখন ঘরে
তুলবনা তখন দেখবি আরো অনেক কিছুই
ডাকবে।
শেষ কথাটা ইরার দিকেই তাকিয়ে
বললাম। ইরা আর হাসি আটকে রাখতে
পারেনি। আর কি? সে হাসছে। আমি
দেখছি। ভাবছি কিভাবে ওর সাথে
কথা বলা যায়। শাকিল আমার কথা
শুনে বলল
- আগে তো কর তারপর দেখিনা
তোরে কি বলে ডাকে।
-- দেখে নিস সমস্যা নাই।
- কিরে একটা ব্যাপার বুঝলাম না
তো?
-- কি?
- এত দিন তোরে প্রেম বিয়ের কথা
বললে তুই হ্যাবলা মার্কা ভাষণ দিতি
আর আজ প্রেম বিয়ের কথা বলতে তোর
মুখে আটকাচ্ছেনা। ঘটনা কি??
-- এ আবার কি ঘটনা। আমি কি
ছেলেনা? আমার কি বিয়ের শখ নাই।
তুই বিয়ে করতে পারিস আমি পারবনা
কেন?
- আচ্ছা। তা মাইয়া টাইয়া পছন্দ করে
রেখেছিস নাকি?
-- ঐ শাক ফইন্নি... মাইয়া টাইয়া কি
রে?? পরি বল পরি।
- বাবা.... হ্যাবলা আজ হঠাতই রোমিও
হয়ে গেছে।
-- আরে জুলিয়েট সামনে থাকলে সব
হ্যাবলাই রোমিও হয়।
- আচ্ছা তোর জুলিয়েট টা কে?
-- কে আবার??? তোর বউ।
- ঐ ফইন্নি তাইলে আমার বউয়ের দিকে
নজর দিতাছ। চোখ খুইলা ফালামু
কইলাম।
-- ওমা... আজই বউ পাগলা হয়ে গেলা
নাকি? তুই তো মনে হয় আগামী একমাস
ঘর থেকে বেরই হবিনা।
শাকিল কিছু একটা বলতে যাবে এমন
সময় আমার পরী ইরা বলল
- এই নীরা... তোর বর আর ঐ হ্যাবলা এত
প্যাক প্যাক করছে কেন জিজ্ঞেস কর
তো??
ইরার মুখে হ্যাবলা শুনে শাকিল আর
নীরা দুজনেই হাসতে শুরু করল। আমার
আবার উপস্থিত বুদ্ধি কম। কি বলব
ভাবতাছি। কিছু ভেবে না পেয়ে
বললাম
- যে আমাকে হ্যাবলা বলে সে এক
নম্বরের হ্যাবলি।
আমার দোষ নাই। মুখে এটা আসছে
এটাই বলে দিছি। তবে কেউ রাগ
করেনি। উল্টো সবাই হেসেছে। আমি
তো আমার পরীর হাসি দেখছি।
দেখতে দেখতেই শাকিল এর বাড়ি
কখন যে এসে গেছি তা টেরই পাইনি।
.
রাতে খুব হৈচৈ হলো। আমরা তো
নানান প্লান করে রেখেছিলাম।
সবার মোবাইল নিয়ে শাকিলের রুম এ
১০ মিনিট পর পর এলার্ম সেট করে
লুকিয়ে রেখেছিলাম। আমার
পরীটাও আমাদের সাথে ছিলো। খুব
মজা করে ঘুমাতে গেলাম রাত ৩ টার
পর।
.
সকালে বরফের মতো ঠান্ডা পানির
ছিটা চেহারায় পড়তেই ধড়মড়িয়ে ঘুম
থেকে উঠলাম। মেজাজ বিগড়ে
গেলো। কিছু একটা বলতে
যাবো,তাকিয়ে দেখি আমার পরী
টা হাতে গ্লাস নিয়ে সামনে
দাঁড়িয়ে। ওকে কি আর বকা যায়?
তারপর ও বললাম...
--কি হলো এটা?
--কই? কিছুই তো হলো না।
--আমার উপর পানির ছিটা দিলেন
কেন?
--আমি তো আর আপনাকে গায়ে হাত
দিয়ে ঠেলে তুলতে পারি না। তাই
না
--আমাকে এতো সকালে তোলার ই বা
কি দরকার?
--আসলে গ্লাস এর পানি কোথায়
ফেলবো ভাবছিলাম। আপনাকে
পেয়ে গেলাম,তাই আপনার উপর ই
ফেললাম।
.
বলেই পরী টা হাসতে লাগলো। আমি
একটু রাগী চেহারা নিয়ে ওর সামনে
থেকে উঠে গেলাম। রাগী ভাব
ধরাতে একটা সুবিধা হবে। ও ভাববে
আমি রাগ করেছি। তাই রাগ
ভাঙানোর জন্য আশেপাশে ঘুরঘুর
করবে। আমাকে আর ওকে দেখার জন্য
ওর পিছু নিতে হবে না। .
যা ভেবেছিলাম তাই হলো। ফ্রেস
হয়ে রুম।এ এসে দেখি পরী টা রুম এই
বসে আছে। আমি কথা না বলে শীতের
পোশাক না নিয়ে পড়তে লাগলাম।
ইদানীং বেশ ঠান্ডা পড়ছে। আর এতো
সকালে তো ঠান্ডার কোনো অভাব ই
হয় না। বাড়ি টা এখনো বেশ নীরব।
তেমন কেউ উঠে নাই। কয়েকজন উঠে
হাটাহাটি করছে মাত্র। পরীটা
আমাকে কিছু বলতে যাবে,আমি রুম
থেকে বেরিয়ে গেলাম।
মেয়ে..এবার বোঝো...আমরা
ছেলেরাও কম অভিনয় করতে পারি না।
.
ছাদে বসে আছি। পরীটা আমার
থেকে একটু দূরে বসে বললো...
--সরি...
--...........
--নাহয় একটু সকাল সকাল ঘুম
ভাঙিয়েছি। তাই বলে এতো রাগ
দেখানোর কিছু হয় নি।
--শাকিলের বন্ধু শুধু আমি না। আরো
অনেকে আছে। শাকিলের ভাই ও আছে
অনেকগুলা। তাদের জ্বালান না।
আমাকে কেন?
--সরি..
.
পরীটার চোখ ছলছল করছে। আমি বলে
উঠলাম...
মেঘ জমেছে তোর চোখেতে..
বৃষ্টি যেন না নামে...
মায়াবী চোখের মায়ার বাধনে...
বাধিস না আজ আমারে....
.
পরী টা হেসে ফেললো। বললো...
--বাহ!!!ভালো কবিতা বানাতে
পারেন তো।
--ওই একটু আধটু ....
--আচ্ছা,আমি এখন যাই। নীরার
ফ্যামিলি আসবে আজ। তৈরি হতে
হবে। আপনি যাচ্ছেন তো নীরার
বাড়িতে আড়াই দিনের মেহমান হয়ে?
--হুম।অবশ্যই যাবো।
.
পরীটা উঠে চলে গেলো। আড়াই দিন
না হয়ে ১ সপ্তাহ হলে ভালো হতো। ১
মাস হলে আরো ভালো হতো। যাই
হোক..যা করার এই আড়াই দিনেই করতে
হবে।
.
আল্লাহর নাম নিয়ে উঠে পড়লাম
গাড়িতে। আমি, শাকিল,রিহান,নীর
া ভাবি আর আমার পরী আমরা
একসাথে।সবাই কথা বলছে হঠাতই
রিহান বলে উঠল
- শাকিল,,, তুই জানিস হ্যাবলা
ইমরাইন্যা ক্রাশ খাইছে।?
-- কি কছ..... কার উপর
- রিহাইন্যা চুপ করবি? ( আমি)
-- আরে দাড়া বলতে দে।(রিহান)
- হুম তুই বল (শাকিল)
-- কালকে দেখি এদিক ওদিকে
তাকিয়ে কাকে খুজছে আর
মোবাইলে কার ছবি দেখছে।(রিহান)
- কালকে সে প্রেম বিয়ে নিয়েও
কথা বলছে।(শাকিল)
-- কি কছ.... সে তো আগে মেয়েদের
থেকে ১০০ হাত দুরে থাকত।
আমি তো ওদের কথা শুনে চুপ হয়ে
আছি। হঠাত আমার পরীটা বলে উঠল
- তাই বলে কি একটা মানুষ চেঞ্জ হতে
পারেনা।(আমার পরী)
কেউ কিছু বলার আগেই আমি বললাম
-- হুম.... দেখছিস... উনি আমার পক্ষে
আছে।
- তুই হ্যাবলা। তোর পক্ষে তো
হ্যাবলিই থাকবে।(শাকিল)
সবাই হাসতে শুরু করল। আমার পরীটার মুখ
লজ্জায় লাল হয়ে আছে।
- ঐ তোরা ওনারে হ্যাবলি বলছিস
কেন? বললে আমাকে বল।(আমি)
-- ঐ দেখ। হিরোইনের জন্য হিরোর
অন্তরে লাগছে।(শাকিল)
- তার মানে সামথিং সামথিং
(রিহান)
-- নীরা ভাবি.... আপনার বর
শাকিল্লারে সামলান আমি
রিহাইন্যারে দেখতাছি।
- আমি আর কি বলব। সব তো আপনারাই
করছেন। শুধু শুধু ইরারে পঁচাইতেছেন।
(নীরা ভাবি)
-- থাক আমার জন্য কেউ হ্যাবলি ডাক
শুনতে হবে না। ঐ শাকিল, রিহান,
তোরা যা বলবি আমাকে বল কিন্তু
ওনাকে কিছু বলিস না।
সবাই কেমন যেন একটু সিরিয়াস হয়ে
গেল। আর কোন কথা হয়নি। সবাই চুপ
ছিল। আমরা নীরা ভাবিদের
বাড়িতে পৌঁছে গেলাম।
.
পরীটাকে খুঁজছি। কোথাও পাচ্ছিনা।
কি যে করি। হাতে মাত্র সময় আড়াই
দিন। এর মাঝে যদি ওকে ইম্প্রেস করতে
পারি তাহলেই হবে। কিন্তু ওর তো
দেখাই পাচ্ছিনা। অনেকক্ষন পরে
ওকে দেখলাম। একা একা বসে আছে।
আমিও এই সুযোগ টার অপেক্ষা
করছিলাম। আমি পরীটার কাছে
গিয়ে বসি।
- স্যরি
-- স্যরি????? কেন???
- আমার জন্যেই আপনাকে হ্যাবলি
ডাক শুনতে হল।
-- আরে ওটা তো দুষ্টুমি করে বলছে।
সমস্যা নাই।
- আসলে শাকিল,রিহান যা বলেছে
সবই সত্যি। আমি কখনোই প্রেমে আগ্রহী
ছিলাম না। কিন্তু হঠাতই কেমন যেন
হয়ে গেলাম। একজনকে বারবার
দেখতে ইচ্ছে করে। কয়েকদিন আগে
শপিং মল এ মাত্র এক পলক
দেখেছিলাম। তারপর হারিয়ে যায়।
আর দেখিনি। কিন্তু ভাবিনি
শাকিলের বিয়েতে তার সাথে
আবার দেখা হবে।
-- ওয়াও...... তাহলে আমাকে একটু
দেখান না। সেই মেয়েটা কে।
- এখন না পরে। সময় হোক।
-- এখন সমস্যা কি?
- এখনই দেখতে হবে???
-- হ্যাঁ।
- আচ্ছা একটু আয়না আনতে পারবেন?
-- কেন?
- না মানে আমার চুলগুলো
এলোমেলো হয়ে গেছে। ঠিক করতে
হবে।
-- আচ্ছা। আনছি।
ইরা আয়না আনতে চলে গেল। আমি
তো অনেক কনফিউশনে আছি। কি না
কি হয়। আমি যে ওকে পছন্দ করি সে কি
জানে। বলে দেব ভাবছি। পরীটা
আয়না নিয়ে আসে।আমার কাছে দেয়।
আমি আয়নায় চুল ঠিক করা তো দুরের
কথা নিজের চেহারাটাও দেখছিনা।
আয়নাটা হাতে নিয়ে বসে আছি।
-- কি হল? চুল ঠিক করবেন না?
- না।
-- তাহলে আয়না আনার জন্য কেন
বললেন?
আমি এই কথার জন্যেই এতক্ষন অপেক্ষা
করছি। উঠে দাঁড়িয়ে পরীটার মুখের
সামনে আয়নাটা ধরি। আর বললাম
- এইটাই সেই মেয়ে যাকে আমি
ভালবেসে ফেলেছি। যার জন্য আমার
অনুভুতি গুলো বদলে গেছে।
পরীটা কিছু বলতে পারছেনা। লজ্জা
পেয়েছে মনে হয়। লজ্জা পাওয়া ভাল।
লজ্জা নারীর ভুষণ। সে কিছু না বলে
নিচের দিকে তাকিয়ে চলে গেল।
আমি তাকে আর ফেরালাম না।
.
.
সারাদিনে আর পরীটার সাথে কথাই
বলতে পারলাম না। সামনে পড়লেই
দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। বিকেলে
কতগুলা মেয়ে একসাথে বসে আড্ডা
দিচ্ছিলো। নীরা ভাবির বোনেরা
হবে। পরীটা আমাকে এড়িয়ে চলছে
দেখে আমি আর আমার বন্ধু,আর
শাকিলের ভাইয়েরা গেলাম ওদের
সাথে আড্ডা দিতে। সম্পর্ক তো
বিয়াই-বিয়াইন। আড্ডা দিলে কেউ
সিরিয়াসলি নেবে না। মাহি
নামের একটা মেয়ে আছে। নীরা
ভাবির কাজিন। আমি গিয়ে ওর
সাথে ফাজলামি করতে লাগলাম। একটু
পরেই পরীটা উঠে গেলো।
.
কোথাও পরীটাকে খুজে না পেয়ে
ছাদের দিকে ছুটলাম। গিয়ে দেখি এক
কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি আস্তে
করে ওর পাশে দাঁড়িয়ে ওকে
রাগানোর জন্য বললাম.......
--একজন যদি রাজী না হয়, অন্য একজনকে
তো খুজতেই হবে। তাই না?
পরীটা তখনো নীরব। কিছুই বলছে না।
ওদিক ফিরেই আছে। আমি আবার
বললাম.......
--যে যাই বলুক...মাহি কিন্তু খুব সুন্দরী।
এখানে ওর মতো সুন্দরী মেয়ে আর
একটাও নেই।
.
এবারো পরীটা চুপ। আমি ওর বাহু ধরে
ওকে ঘোরালাম। পরীটা কাদছে।
আমার বুকের বাম পাশ টা মোচড় দিয়ে
উঠলো। ইচ্ছা করছিলো ওকে জড়িয়ে
ধরে বলি
"এই পরীটা, কাদো কেন? আমি তো
তোমার ই"
আমার হাত ছাড়িয়ে পরী আবার মুখ
ঘুড়িয়ে বললো.....
--এখানে এসেছেন কেন? মাহি আছে
তো নিচে। শিলা, আভা,
নুসরাত,সাথী, আনিকা,সারিকা,কু
মকুম ..আরো অনেক অনেক মেয়ে আছে।
মেয়ের অভাব নেই। একজন কে না
পেলে অন্যরা তো আছেই।
--হুম। ঠিক ই তো। তাহলে নিচেই যাই।
মেয়ে পটানো লাগবে তো।
বলেই হাটার মিথ্যে অভিনয় করতে
লাগলাম। পরীটা আমার হাত ধরে
বললো....
--মাইর চিনো???
আমি একটু চমকে উঠলাম। পরীটা এই প্রথম
আমাকে তুমি করে বললো। আমি
বললাম.....
--নাতো। মাইর কি? খায় না মাথায়
দেয়?
--পিঠে মাইর পড়লে বুঝবা। যদি খালি
মেয়েদের আশেপাশে ঘুড়ঘুড় করতে
দেখি। মেরে হাত-পা ভেঙে দেবো।
--১ টা প্রশ্ন ছিলো।
--হুম। করো।
--তুমি মেয়ে তো?
--এটা কেমন প্রশ্ন?
--উত্তর দাও। তারপর বলছি....
--হুম। মেয়ে...তো?
--তাহলে তো আমার এখন এখান থেকে
যাওয়া উচিত। মেয়ে,তোমার
আশেপাশে থাকা যাবে না।
--কি বললা?????
--তুমিই তো বললা মেয়েদের
আশেপাশে থাকা যাবে না।
--তাই না??? দাড়াও...তোমার মাথার
চুল গুলা যদি না ছিড়সি আজ....
.
আমি দৌড়াচ্ছি আর পরীটা আমাকে
ধাওয়াচ্ছে। আমি একটু থেমে ওকে
জড়িয়ে ধরে বললাম......
--এই পরী। আমার উত্তর দাও...
--ছাড়ো আমাকে।
--উত্তর না দেয়া অবধি ছাড়বো না।
--কিসের উত্তর?
--ভালোবাসো?
--হুম...ওই আকাশ,পাখি,ফুল দের খুব
ভালোবাসি।
--তাই না???
--হুম...
.
সিড়িতে আওয়াজ হচ্ছে। মানে কেউ
আসছে। পরীটা বললো.....
--এই,ছাড়ো প্লিজ। কেউ আসছে....
--উত্তর না দিলে ছাড়বো না।
--জানিনা...
--তাহলে আমিও ছাড়বো না।
--.................
--এই পরী। বলনা.....
--ভালোবাসি.....
.
আমি পরীটাকে ছেড়ে দিতেই ও
বললো..
--ভালোবাসি না।
বলেই ছুট....আমি লুকানোর জায়গা
খুজতে লাগলাম। কেউ ওকে যেতে
দেখে আমাকে ছাদে দেখলে নিশ্চই
কিছু ভেবে বসবে। কিন্তু লুকানোর
দরকার হলো না। পরীকে খুজতেই
আসছিলো ওরা। পরীটা ওদের নিয়ে
নিচে চলে গেলো। যাক!!!এবারের
মতো তো বেচে গেলাম। মনের মধ্যে
লাড্ডু ফুটছে। পরীটা আমার হয়েই
গেলো।
.
রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে
ফেলেছি। কেমন জানি বোর লাগছে।
সারাদিন পরিটার আর দেখা পাইনি।
হয়তো বা লজ্জায় সামনে আসেনি।
ভীষন লাজুক আমার পরীটা। এখন খুব
দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কোথায়
পরি। দেখছিনা তো। ধ্যাত!!!!! বাইরে
বের হলাম। বের হতেই দেখি পরি
উঠোনের এক কোনে দাড়িয়ে আছে।
আমায় দেখেই সরে যেতে চাইলো।
কিন্তু তার আগেই আমি তার হাত ধরে
ফেলি।
-- এই কেউ দেখবে তো। হাত ছাড়ো।
- তার আগে বল সারাদিন কই ছিলা।
সামনে আসোনি যে।
-- এমনিতে আসিনি।হাত ছাড়োনা।
- ছাড়বনা বলছি ছাড়বনা।
-- ভালো লাগছেনা কিন্তু।
এবার আমি হাত ছেড়ে দিই। পরি চলে
যেতে চাইলো। আমি ডাকতেই আবার
দাড়িয়ে পেছন ফিরে আমার দিকে
তাকালো।
- ইরা... তুমি জানোই যে আমি
তোমাকে ভালবাসি। তারপরো এত
ইগ্নোর করছ কেন?
-- ইগ্নোর করছিনা। অনেক টেনশন হচ্ছে।
- কেন? কি হইছে?
-- আজ বাবা ফোন দিয়েছিল।
তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে বলেছে।
উনি এবার আমার বিয়ের
চিন্তাভাবনা করছেন।
- তুমি কি চাও?
-- আমি কি চাইব?
- আমাকে বিয়ে করার ইচ্ছে নেই?
-- থাকবেনা কেন। মনে হচ্ছে আমি
ভালোবাসিনা।
- তো তুমি চিন্তা করোনা। আমি
ব্যবস্থা করব।
-- সত্যি তো?
- হুম সত্যি।এবার একটা কথা রাখবে?
-- বল
- একবার জড়িয়ে ধরি?
-- না।
- আমি ধরছি।
-- না না।
আমি পরির সামনে গিয়ে ওকে
জড়িয়ে ধরি।পরি একটুও ছাড়ার চেষ্টা
করেনি। আমার বুকে মাথা দিয়ে
রেখেছিল। আমি ওর মাথায় হাত
বুলিয়ে দিচ্ছি। এমন সময় কে যেন ঘর
থেকে বেরিয়ে উঠোনে এল। আমরা
দুজনেই চমকে উঠি। পরি আমায় ছেড়ে
দেয়। আমি মাথা ঘুরিয়ে দেখলাম
শাকিল বের হয়েছে নিরাভাবি সহ।
আমাদের দেখে দুষ্টুমি করে বলছে
- কিরে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছিস
নাকি?
-- হ্যা করছি। তোর সমস্যা।
- বাহবা!!!!!
-- মনে হচ্ছে অবাক হচ্ছিস?
- অবাক তো হবই।
-- কেন হবি?
- তুই আগে কি ছিলি আর এখন কি হলি।
-- আগের কথা বাঘে খাইছে।
- সত্যি?
-- হুম। সত্যিনা তো কি। ভাবি... এই
ফইন্নিরে আপনি আড়ালে নিয়ে যান
আর প্রেম করেন আর আমি এখানে প্রেম
করি। যান।
আমার কথা শুনে সবাই হাসল। তারপর
চারজনে উঠোনে বসে আড্ডা মারি।
.
রাতে আমি আর রিহান শুয়ে আছি।
আমার ঘুম আসছেনা। রিহান বলল
- কিরে কি হইছে তোর?
-- কিছুনা রে।
- বল। আমি জানি কিছু একটা হইছে। বল
সমস্যা নাই।
রিহানের কথা শুনে উঠে বসলাম। ইরার
সাথে আমার যা যা হইছে সবকিছু খুলে
বললাম। রিহান আমায় বলছে
- ধুর গাধা....এটা নিয়ে চিন্তা করার
কি আছে। আমি শাকিল কে সবকিছু
বুঝিয়ে বলব। দেখবি ও ঠিকই একটা
ব্যবস্থা করবে।
-- বলছিস?
- হ্যাঁ বলছি।
-- আয় তোরে একটা লাথি মারি
- কিতা কইলি হ্যাবলা
-- স্যরি আয় তোরে একটা উম্মা দিই।
- ভাগ ফইন্নি। ঘুমা এখন।
তারপর আমি আর রিহান দুজনেই ঘুমিয়ে
পড়ি। আমার ঘুম আসছেইনা। সারাক্ষন শুধু
পরির কথা মনে পড়ছে। ওর কথা ভাবতে
ভাবতেই আমি ঘুমিয়ে পড়ি।
.
সকাল বেলা টের পেলাম আমার মুখের
উপর বৃষ্টি হচ্ছে। এমনিতে শীত লাগছে।
তার উপর বৃষ্টি। চোখ খুলে দেখি আমার
পরি গ্লাস হাতে নিয়ে দাড়িয়ে
আছে। রিহান ঘুমাইতাছে এখনো। আমি
বললাম
- এখন থেকেই আমার ঘুমের বারোটা
বাজিয়ে যাচ্ছ। না জানি বিয়ের
পরে আমাকে ঘুমাতে দিবে কি না।
-- ও তাই নাকি।
- তাই না তো কি। আমার মুখে পানি
ছিটিয়ে দিলে কেন?
-- গ্লাস এর পানি ফেলবার আর জায়গা
পাইনি তাই।
- ভালো। তোমার ভালোবাসা
ফেলবার জায়গাও যেন আর না থাকে।
-- থাকবেওনা। এত জোরে বলছ কেন।
রিহান ভাইয়া উঠে যাবে তো।
- আরে ঐ ফইন্নি মোষের মত ঘুমায়।
উঠবেনা।
-- তাইলে তো উনার বউরে কেউ
নিয়ে গেলেও উনি টেরই পাবেনা।
- আরে ঐটার কথা বাদ দাও। একবার আই
লাভ ইউ বলনা।
-- না।
- বলনা।
-- না বলছিনা।
- না বললে কিন্তু আবার জড়িয়ে ধরব।
-- বলছি বলছি.... আই লাভ ইউ।
- আই লাভ ইউ টু।
আমি খাট থেকে নামব এমন সময় শুনি
--- আই লাভ ইউ থ্রী
আমি আর পরি চমকে উঠি। কে বলল
কথাটা। তাকিয়ে দেখি রিহান চোখ
খুলে তাকিয়ে আছে।পরি তো লজ্জা
পেয়ে দৌড় দিল।
- রিহাইন্যা উঠার আর সময় পেলিনা।
-- আগে বল আমি মোষ তাইনা।
- না কেডা কইছে।
-- ফইন্নি... ঠাকুর ঘরে কে,আমি তো
কলা খাইনি। তাইনা?
- স্যরি বন্ধু.... আরে বেটা পরির সামনে
নিজেকে হিরো সাজাতে হবেনা।
-- ভাল কথা হিরো সাজবি। আমাকে
কেন জিরো বানালি।
- প্যাঁচাল পাড়িস না।যা কিছু করতে
পারছ কিনা দেখ।
-- ও হ্যাঁ ভালো কথা মনে করেছিস।
আমি এখনই শাকিলের সাথে কথা
বলছি এ ব্যাপারে।
.
১ বছর পর....
প্রচন্ড শীত। এই শীতে সকাল সকাল
আমার পরীটা আমাকে নিয়ে বাইরে
হাটটে বেড়িয়েছে। এটা কিছু হলো?
কুয়াসা প্রচুর। অবশ্য হাটতে ভালোই
লাগছে। আমার ঘুম ভাঙানোর পদ্ধতি
সেই একইরকম আছে। পরীটা গ্লাসের
পানি আর কোথাও ফেলার জায়গা
পায় না। আমার উপর ফেলে।
ভালোবাসাও আর কোথাও ফেলে
নি।
অনেক কষ্টে পরীটাকে নিজের করেই
নিলাম।
.
আড়াই দিন নীরা ভাবিদের ওখানে
থেকে যখন বাড়ি ফিরি। তখন খুব
খারাপ লাগছিলো। পরীকে খুব মিস
করছিলাম। শাকিল আর নীরা
ভাবিকে
সব খুলে বললাম। ওরা আমাকে ভরসা
দিলো ওরা সব ঠিক করবে। অন্যদিকে
ইরার বাবা ভালো ছেলে পেয়ে
তাড়াতাড়ি ইরার বিয়ে দিতে
চাচ্ছিলো। এদিকে আমি কোনো
কাজ
করিনা। আম্মুর সাথে যথেষ্ট ফ্রি
হলেও
নিজের বিয়ের কথা কিভাবে বলি?
.
এর কয়েকদিন পর একদিন হঠাৎ শাকিল
আর নীরা ভাবি আমার বাড়িতে চলে
এলো। নানান রকম কথাবার্তার পর
আমার বিয়ের কথা তুললো তারা। আম্মু
বলেছিলেন যে আমি কাজ করিনা।
ওরা বুঝিয়েছে, আংটি পড়িয়ে
রাখেন। বিয়ে কিছুদিন পর হলো।
তারপর ও কাজ হলো না দেখে নীরা
ভাবি বলেই দিয়েছিলো আমি, ইরা
কে মনে মনে পছন্দ করি। এতে আম্মুর মন
একটু নরম হলো। আব্বুর সাথে কথা বলে
আমাকে আব্বুর অফিসে জয়েন করিয়ে
দিলেন। তারপর প্রস্তাব নিয়ে
গেলেন
ইরার বাড়িতে।
*****************
.
--এই ইমু...চলো না বাড়ি ফিরে যাই।
--আচ্ছা...চলো।
--এই ইমু..
--হুউউউউউম।
--আমার হাতগুলো ঠান্ডা হয়ে গেছে।
তোমার হাতের মাঝে নাও না।
--হুম। এখন চলো।
.
পরীটার হাত নিজের হাতের মাঝে
নিয়ে হেটে যাচ্ছি। পরীটা কথা
বলছে। আমি শুনছি।
.
মাঝে মাঝে জীবনটা কে সপ্ন ভেবে
ভুল করে ফেলি। সময়টাকে আটকে
রাখতে ইচ্ছা হয়। এখানেই থেমে যাক
না সময়। আমি আমার পরীকে নিয়ে
এভাবেই থাকি।

No comments:

Post a Comment