Wednesday, November 23, 2016

গল্প--এক টুকরো ভালবাসা

গল্প--এক টুকরো ভালবাসা
.
.
একা একা বসে আছি ক্যাম্পাসে। বসে মোবাইল
টিপছি। আমার যে বন্ধু বান্ধব নেই তাই কিন্তু নয়।
আবার আমি যে খুব ভাব ওয়ালা ছেলে তাও না।
আসলে আমি একটু অদ্ভুত টাইপের অন্যরকম
ছেলে। যেমন কখনো খুব বাচাল টাইপের, না হয়
কখনো সবার সাথে বন্ধু সুলভ, আর না হয়
কখনো একে বারে নিশ্চুপ হয়ে একা একা থাকা।
বলা যায় একরকম উদাসী ছেলে। আর এবার অনার্স
থার্ড ইয়ারে পড়ছি।
.
তো বসে বসে মোবাইলে কক খেলছি। কিন্তু
খেলাটা আমি একেবারেই পারি না। গত সপ্তাহে
জমিরের কাছ থেকে এই গেইমটা এনেছি। জমির
হল আমার এক মাত্র ফ্রেন্ড। আসলে একমাত্রও
বলা যাবেনা আমার আরো কয়েকজন বন্ধু আছে।
তার মধ্যে জমির আর সাগর এই দুজন আমার এক মাত্র
ফ্রেন্ড। এখন অনেকে বলতে পারেন
ফ্রেন্ড দুজন আবার এক মাত্র হল কিভাবে?
আসলে এই দুজনকে আমি মনের এক জায়গায়ি স্থান
দিয়েছি। মনের এক বারে গভীরে। আর
কয়েকটা মেয়ে বন্ধুও আছে। তবে তারা তাদের
রোমিওদের নিয়ে ব্যাস্থ। তবে এদের মধ্যে
একটা মেয়ে আছে নাম তামান্না। ওর কোনো
ছেলে ফ্রেন্ড নেই শুধু আমি আর জমির, সাগর
ছাড়া। তবে মেয়েটা আমাদের দু বছরের জুনিয়র।
কেমন করে যেন আমাদের সাথে বন্ধুত্বটা
হয়ে যায়। যাক সে কথা যেটা নিয়ে বসেছি দেখি
সেটা আগে ভাল ভাবে শিখা যায় কিনা। কিন্তু সত্যি
বলতে এখনো এই গেমটা খেলা শিখতে পারলাম
না। দেখি সারাদিন বসে জমির গেমটা খেলে। আমি
তখন বলতাম।
.
"কিরে সারাদিন তুই এই গেম নিয়ে পড়ে থাকিস
কেন? এটার ভেতরে কি আছে?
(তখন জমির বলতো)
"দূর তুই এসব বুঝবি না। তুই হলি একটা জড় পদার্থ।
তখন অনেকটা জিদ করেই ওর কাছ থেকে
গেমটা এনেছি। দেখি গেমটা পারি কিনা। কিন্তু গত
এক সপ্তাহ যাবৎ চেষ্ট করেও কিছু বুঝে উঠতে
পারি নি। ঐ যে কথায় বলে না সবাইকে দিয়ে সব
কিছু হয় না।
.
গেম খেলার এক পর্যায়ে মোবাইল থেকে
চোখটা সরে ভার্সিটির গেইটের দিকে গেল।
দেখলাম তামান্না আসছে। ওর হাবভাব দেখে বুঝা
যাচ্ছে আজকে মনে হয় কিছু একটা হবে। আমি
আর ওর দিকে না তাকিয়ে মোবাইলে
মনোযোগী হলাম। কেননা গুরুজন বলেছেন
যেই কাজ কর না কেন মনযোগী হয়ে সেটা
করবে। তাহলে তুমি সাকসেস হবে। তামান্না খুব
ঝড়ের বেগে এসে আমার পাশে বসলো।
কিন্তু আমার সেদিকে খেয়াল নেই। আসলে
খেয়াল আছে তবে বুঝাতে চাইছে যে ও যে
এসেছে সেদিকে আমার খেয়াল নেই।
আড়চোখে ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম চেহারাটা
লাল হয়ে আছে। তার মানে মেয়েটা এখন খুব
রেগে আছে। কিন্তু কার উপর রেগে আছে?
আমি তো কিছু করিনি। হঠাৎ করে রাগী কন্ঠে
তামান্না বলে উঠলো।
.
"এই আমি যে অনেক আগে এসে তোমার
পাশে বসেছি সেদিকে খেয়াল নেই।
(এটা কিন্তু মিথ্যে কথা ও এসেছে ঠিকমত ২ মিনিটিও
হয় নি আর বলছে অনেক আগে এসেছে। আমি
মোবাইলে চোখ রাখা অবস্থায় বললাম)
"ওহ তুমি তা কতক্ষণ আগে এসেছো?
"কতক্ষণ আগে মানে?
"না তুমি বললা না যে অনেক আগে এসেছো।
তাই জিজ্ঞাসা করলাম কতক্ষণ আগে এসেছো।
"ঐ তুমি আমার সাথে ফাজলামি কর?
"আরে এখানে ফাজলামির কি হল? আমি তো শুধু
জিজ্ঞাসা করলাম যে তুমি কতক্ষণ আগে
এসেছো।
"যতক্ষণ আগেই আসিনা কেন তোমার জানার
দরকার নাই।
"আচ্ছা ঠিক আছে আমার জানার দরকার নাই।
.
কিছু সময় নীরব থাকার পর মেয়েটা আর সহ্য
করতে না পেরে আবার বলে উঠলো।
"ঐ তুমি কাল আমার ফোন ধরলা না কেন? সন্ধ্যা
থেকে তোমাকে ফোন দিচ্ছিলাম তুমি ফোনটা
একবারের জন্যও রিসিব করলানা কেন?
"আরে তেমন কিছু না কালকে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে
পড়ছিলাম তাই আর তোমার ফোন রিসিব করতে পারি
নি।
"তাই বলে সন্ধ্যা সাতটার সময় ঘুমিয়ে পড়ছিলা।
"হ্যা আর তাছাড়া কালকে কিছুই ভাল লাগছিল না তাই
ঘুমিয়ে পড়ছিলাম।
"ও তাইতো তোমার আবার ভাল লাগবে কেন?
"আরে এতে রাগের কি হল। ঘুমিয়ে পড়ছিলাম তাই
ফোনটা রিসিব করিনি। আর যখন ঘুম ভাঙলো তখন
দেখলাম রাত ১২:১৭ তাই আর কল ব্যাক করিনি।
"১২ টার সময় যখন ঘুম ভাঙলো তখন তো কলটা
ব্যাক করতে পারতা?
"আমি ভাবলাম আরো তুমি হয়তো ঘুমিয়ে
পড়েছো তাই আর কল ব্যাক করিনি।
"কি আমি মাত্র ১২ টার সময় ঘুমিয়ে পড়েছি...!! এই
তোমাকে কে বলল?
"কেউ বলেনি এমনি মনে হল আরকি। আর তাছাড়া
তুমি মেয়ে হয়ে এত রাত পর্যন্ত জেগে
থাকতে পারো সেটা আমি বুজিনি। আর তাছাড়া
তোমার তো বয়ফ্রেন্ডও নেই যে রাত
জেগে তার সাথে কথা বলবা।
"হুম তোমাকে বলেছে।
"কি তার মানে তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে..!!! কিন্তু
আমাদেরকে এখনো বলনি?
"ঐ তোমাকে কে বলল যে আমার বয়ফ্রেন্ড
আছে।
"তাহলে হুম বললা যে।
"দূর তুমি কিছুই বুঝো না। আসলে তুমি একটা গাধা।
"হয়তোবা গাধা। আচ্ছা বাদ দাও এখানে আর কতক্ষণ
বসে থাকবে ক্লাস নেই।
"হ্যা আছে। কিন্তু তুমি এখানে বসে কি করছো
তোমার ক্লাস নেই।
"হ্যা আছে কিন্তু আজ আর ক্লাস করবো না।
"তাহলে আমিও আজ ক্লাস করবো না।
"কেন? তুমি ক্লাস করবে না কেন?
"এমনি ভাল লাগছে না তাই ক্লাস করবো না
.
আমি তামান্নারর কথা শুনে বসা থেকে উঠলাম। এই
মেয়েটা কেন যে এত বেশি আমার উপর ঝুকে
আছে বুঝতে পারছিনা।
.
"এই পাবেল কোথায় যাচ্ছো?
"না ক্লাসে যাবো।
"এই না বললা ক্লাস করবা না আবার এখন বলছো ক্লাস
করবা বুঝলাম না?
"আগে বলছি আগেরটা শেষ। এখন ক্লাস করতে
ইচ্ছে করছে তাই ক্লাসে যাবো যাও তুমিও
ক্লাসে যাও।
"আচ্ছা তুমি সব সময় আমার সাথে এরকম কর কেন?
একটু সময় তোমার সাথে বসে গল্প করা যায় না।
তুমি নানান অজুহাত দেখিয়ে চলে যাও। কেন?
"আরে কি বল আমি আবার কখন তোমার সাথে
বসে গল্প করিনি? এইতো এই ৫ মিনিট যে
তোমার সাথে বসে গল্প করলাম।
"এটা কোনো সময় হল? অন্যদের সাথে তো
দেখি ঠিকি ঘন্টার পর ঘন্টা বসে আড্ডা দাও।
"আরে বাদ দাও তো যাও তুমি ক্লাসে যাও।
.
কথাটা বলার পর দেখলাম তামান্না রাগ করে উঠে
চলে যাচ্ছে। আমিও আর কিছু বললাম না। কেননা এই
মেয়েটা এমনিতেই আমাকে মায়ার জ্বালে বন্ধী
করার চেষ্টা করছে। জানি না পারবে কিনা। তবে
আমাকে তো আর ওর মায়ার জ্বালে বন্ধী হলে
চলবে না। আর তাছাড়া আমার মত একটা
উদ্দেশহীন ছেলের কাছ থেকে ও কি বা
পাবে। ওর দিকে চেয়ে ওর কথা ভাবতে ভাবতে
ভার্সিটির গেইটের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। না আজ
আর এখানে থাকা যাবে না। যাই বাসায় গিয়ে একটা
ফ্রেশ মনে ঘুম দেই। আমি বুঝি না এই মেয়ে
আমার থেকে দুবছর জুনিয়র ব্যাচ হয়েও কিভাবে
যে আমাদের সাথে এসে বন্ধুত্ব করলো? আর
আমিও বা কিভাবে ওর বন্ধুত্বে সারা দিলাম বুঝে
উঠতে পারছিনা।
.
একদিন ক্যাম্পাসে বসে আছি আমি,জমির আর সাগর।
বসে একটু টুকটাক কথা বলছি। হঠাৎ একটা মেয়ে
কোথা থেকে এসে আমাদের সামনে হাজির
হল। মেয়েটাকে দেখে পরিচিত মনে হচ্ছে
না। আমি জমির আর সাগর একে অপরের দিকে
তাকাচ্ছি। আমাদের দৃষ্টি শুধু একটা প্রশ্নই করছে
আর সেটা হল। হয়তোবা মেয়েটা আমার বা
জমিরের আর না হয় সাগরের পরিচিত। কিন্তু আমরা
কেউ তো মেয়েটাকে চিনতে পারছিনা। তখন
মেয়েটা নিজেই বলে উঠলো।
.
"কি ব্যাপার আপনারা একজন অন্যজনের দিকে
এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আরে আপনারা
কেউ আমাকে চিনবেন না আমি এই ভার্সিটিতে
নতুন।
(তখন জমির বলে উঠলো)
"তা নতুন যখন এখানে কি? নাকি নিজের ক্লাস খুঁজে
পাচ্ছো না?
"না তা না আসলে আমি আপনাদের সাথে
ফ্রেন্ডশিপ করতে চেয়েছিলাম।
(কথাটা শুনে তো আমরা অবাক। এই মেয়ে বলে
কি ভার্সিটিতে নতুন এসেছে আর এসেই
সিনিয়রদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে চায়। তখন
সাগর একটু গম্ভীর গলায় বলল।)
"আরে কি বল এটা? তুমি জানো আমরা কোন
ইয়ারে পড়ি আর তাছাড়া নতুন এসেই সিনিয়রদের
সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে চাও?
"আরে আপনারা রাগেন কেন? দেখেন তো
এবার যারা নতুন এসেছে তারা সবাই কেমন যেন
পিচ্চি পিচ্চি ওদের সাথে কিভাবে ফ্রেন্ডশিপ
করবো বলুন। আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি
ওদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করলে মানাবে।
"মানাবে কি না তা জানি না তবে তোমাকে মানিয়ে
নিতে হবে।
(তখন আমি সাগরকে থামিয়ে দিয়ে বললাম)
"তা তোমার নাম কি?
(মেয়েটা তার মুখে স্পিত হাসি এনে বলল)
"জ্বি আমি তামান্না। আপনারা?
.
(তখন জমির আর সাগর আমার দিকে কেমন করে
যেন তাকালো। মনে হচ্ছে ওরা আমার উপর খুব
বিরক্ত যে আমি জুনিয়র একটা মেয়ের সাথে
বন্ধুত্ব করছি। তবুও ওদেরকে ইশারায় কিছু বলতে
মানা করলাম আর ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করার কথা
বললাম)
.
"আমি জমির।
"আমি সাগর।
(তখন মেয়েটা আমার দিকে হাত বাড়ালো। আমি
তখন হাত না মিলিয়ে বললাম)
"আমি আমিই।
(মেয়েটা একটু অবাক হয়েই বলল)
"আমি মানে কি। আপনার তো একটা নাম আছে
সেই নামটা কি জানতে পারি না?
"হ্যা জানতে পারবা না কেন অবশ্যই জানতে পারবা।
ফ্রেন্ড যখন হয়েছো তাহলে চলতে চলতে
জেনে যাবা।
"তাহলে এখন বললে সমস্যা কোথায়?
"বললাম তো চলতে চলতে জেনে যাবা।
"আচ্ছা ঠিক আছে এটা কোনো ব্যাপার না। আর হ্যা
আমরা সবাই যখন এখন ফ্রেন্ড তখন আমি কিন্তু
সবাইকে তুমি করেই বলবো।
"আচ্ছা ঠিক আছে বল।
"তাহলে এখন আমি যাই ক্লাস আছে আমার। আর হ্যা
তোমাদের ক্লাস কখন শেষ হবে?
"এইতো ১:৩০ এ।
"ও আমার আবার সাড়ে ১২ টায় ক্লাস শেষ হয়ে
যাবে। আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাদের জন্য
ক্লাস শেষে অপেক্ষা করবো। তোমাদের
যখন ক্লাস শেষ হবে তখন সবাই মিলে একসাথে
আড্ডা দিব।
.
(ওরে বাব্বাহ মেয়েটাকে দেখি যতই পাত্তা দিচ্ছি
ততই কথা বলার পরিমাণ বাড়িয়ে চলেছে। আর
এদিকে মেয়েটার কথা শুনে জমির আর সাগর
আমার দিকে একটু রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি আর ওদের দিকে তাকালাম না মেয়েটাকে
বললাম)
.
"আচ্ছা ঠিক আছে এখন তুমি ক্লাসে যাও ক্লাস
শেষে দেখা যাবে।
"দেখা যাবে মানে কি? আমাদের ফ্রেন্ডশিপ
সবে মাত্র শুরু হল আর প্রথম দিনি সবাই যার যার মত
চলে যাব তা কি হয়?
"আচ্ছা ঠিক আছে ক্লাস শেষে সবাই মিলে আড্ডা
দিব।
"মনে থাকে যেন।
"হ্যা মনে থাকবে।
"ওকে ২ ঘন্টার জন্য বাই।
"২ ঘন্টার জন্য বাই মানে?
"দূর তুমি একটা গাধা আরে ২ ঘন্টার জন্য বাই মানে
তো ২ ঘন্টা পর আবার দেখা হবে তাই এই ২ ঘন্টার
জন্য বাই।
"ওহ আচ্ছা ঠিক আছে এখন যাও ক্লাসে যাও।
.
মেয়েটা আর কিছু বলল না চলে গেল। আর ঐ
দিকে জমির আর সাগর আমার উপর তো এখন
বেজায় চটেছে। পারলে এখন আমাকে ওরা
মারবে। তাই আমি ওদের দিকে চোখ তুলে আর
তাকাচ্ছি না বারবার চোখ নামিয়ে ফেলছি। না এভাবে
তো ভয় পেলে চলবে না। তাই এবার চোখ
তুলে বললাম।
.
"কি ব্যাপার কি হয়েছে তোরা এভাবে তাকিয়ে
আছিস কেন? আরে মেয়েটার সাথে আর
কিভাবেই বা কথা বলতে পারতাম বল। আর
মেয়েটাও তো দেখতে ছোট না দেখলে
তো আমাদের মতই মনে হয়। আর এসব ছোট
বড় কোনো ব্যাপার নাকি হ্যা? বন্ধু তো বন্ধুই এর
মধ্যে আবার ছোট আর বড় কি?
.
তখন জমির বলে উঠলো
.
"তাই বলে জুনিয়র ব্যাচের একটা মেয়ের সাথে
কেন? ভার্সিটির অন্যান্যরা দেখলে কি বলবে?
"দূর তোরা এতসব চিন্তা করছ কেন আমরা যার
সাথে ইচ্ছা তার সাথে চলবো এতে কার কি?
"তাই বলে।
"দূর বাদ দে তো চল ক্লাসে চল।
.
ক্লাস শেষে বের হলাম। বের হয়ে জমির আর
সাগরকে বললাম যে।
.
"চল।
তখন সাগর বলে উঠলো।
"কোথায়?
"কোথায় আবার ক্লাসে আসার আগে আমাদের
নতুন বন্ধুকে কথা দিয়ে আসলাম না যে ক্লাস
শেষে ওর সাথে কিছুক্ষণ বসে গল্প করবো।
"না ভাই আমি যাবো না তুমিই যাও গিয়ে তোমার ঐ
নতুন পিচ্চি বন্ধুর সাথে গিয়ে তুমি গল্প কর আমার
গল্প করার ইচ্ছা নাই।
"দেখ সাগর মেয়েটাকে কিন্তু আসার আগে
আমরা কথা দিয়েছিলাম যে ক্লাস শেষে ওর সাথে
বসে কিছুক্ষণ গল্প করবো।
.
আমার কথা শুনে জমির বলে উঠলো।
.
"না ভাই আমরা কথা দেই নাই বরং তুমিই মেয়েটাকে
কথা দিছো যে ক্লাস শেষে গিয়ে মেয়েটার
সাথে জমিয়ে আড্ডা দিবা সো তুমিই যাও।
"তার মানে তোরা যাবি না?
"না ভাই তুমিই যাও তোমার নতুন বন্ধু বলে কথা।
"সত্যিই তোরা যাবি না তো?
"এক কথা কতবার বলবো।
"দেখ মেয়েটা কিন্তু আমাদের জন্য অপেক্ষা
করছে এই শেষ বারের মত বলছি যাবি তো চল।
"না যাবো না।
"তাহলে তোরা থাক আমি গেলাম।
.
এই কথা বলে পিছন ফিরে হাটা ধরলাম। কয়েক পা
এগুনোর পর জমির ডাক দিল।
.
"এই পাবেল দাড়া।
"কি হইছে আবার পিছন পিছন ডাকছিস কেন?
"ঐ কোথায় যাচ্ছিস আমাদের রেখে আমাদের
নিবি না?
"তোরাই তো যেতে চাচ্ছিস না তাহলে আমিই
যাই যেহেতু আমি কথা দিয়েছি।
"ঐ তোকে কোথাও একলা যেতে দিয়েছি নাকি।
যেখানেই যাই তিনজনি তো এক সাথে যাই তাহলে
এখন যাবো না কেন?
"তাহলে চল দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
"আচ্ছা চল কিন্তু যাস্ট ১০ মিনিট থাকবো এর চাইতে
বেশি না।
"হুম আচ্ছা ঠিক আছে চল।
.
আসলে ওরা এরকমি প্রথমে অনেক বড় বড় কথা
বলবে পড়ে ঠিকি মেনে নিবে। আর কখনো
একা কোনো কিছু আমরা করিনি।
.
কিছুক্ষণ হাটা পর দেখলাম মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে।
আমাদেরকে দেখেই ঠোঁটের কোনে
স্ফিত হাসি দিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে
লাগলো। কাছে এসেই বলে উঠলো।
.
"যাক বাবা তোমরা তাহলে এসেছো তাহলে
আমিতো আরো ভাবছিলাম আসবে না।
তখন আমি বললাম।
"শুনো যেহেতু কথা দিয়েছি সেহেতু
আসবো কেননা কথার বরখেলাপ করার মত বন্ধু
আমরা না।
"আরে রাগ কর কেন আমি তো এমনিই বললাম।
আচ্ছা ঠিক আছে চল ঐ পাশটায় গিয়ে বসি।
"আচ্ছা ঠিক আছে চল।
.
কথাটা বলে জমির আর সাগরের দিকে তাকালাম।
দেখি ওরা তেমন কিছুই বলছেনা। আসলে না বলার
কারণ হল ওদের মোবাইল। ওরা যে মোবাইলে
কি পেয়েছে সারাদিন এই মোবাইল নিয়েই পড়ে
থাকে। কি যে আছে এই মোবাইলে এক মাত্র
তারাই জানে। তামান্নার সাথে হাটতে হাটতে ভার্সিটির
একটা কোনায় এসে বসলাম। জায়গাটা আমার ও
অনেক পছন্দের। যখন একা থাকতে ইচ্ছে
করে তখন এখানে এসে বসে থাকি। জায়গাটার
চারদিকে অনেকটা গাছ আর নিচে পুরো মাঠ সবুজ
ঘাসে ঢেকে আছে। এই জায়গাটায় বসলেই
যেকোনো কারো খারাপ মনটা নিমিষেই ভাল
হয়ে যাবে। জায়গাটার একটা পাশে এসে তামান্না
থামলো আর বলল।
.
"এই জায়গাটায় বসা যায় তোমরা কি বল।
(আমি মাথা দিয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলাম। তারপর চারজন
গোল হয়ে বসলাম। বসার পর তামান্না বলে
উঠলো)
"তা তোমাদের আর বন্ধু কই? নাকি তোমরা এই
তিনজনি সব সময় এক সাথে থাকো?
"আর বন্ধু নেই তা না আছে তবে আমরা তিনজনি
সব সময় একসাথে থাকি।
"ওহ ভাল তাহলে আজ থেকে আমিও যোগ হলাম
মোট চারজন।
(কথাটা শুনে জমির আর সাগর মোবাইল থেকে
চোখটা তুলে তামান্নার দিকে তাকিয়ে আমার দিকে
তাকালো। আমি তখন ওদের দিকে তাকিয়ে
বললাম।)
"হ্যা তা তো আবশ্যই।
"হুম তাই। আর জানো চারজন মিলে সব কিছু করা
যায়।
"যেমন।
"যেমন ধর যেকোনো ধরনের খেলা চারজন
মিলে খেলা যায়। কোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়া।
আর সব থেকে ভাল আড্ডা দেওয়া যায়।
"হয়তোবা।
"এই তুমি এমন কেন বলত? আগেও তোমাকে
নাম জিজ্ঞাসা করলাম তুমি নাম বললা না আবার এখন
কিরকম কথা বলছো।
কথাটা শুনেই সাগর বলে উঠলো।
"হ্যা এই তোমার নামটা কি যেন। ও হ্যা তামান্না তুমি
ঠিকি বলেছো আসলে ও একটা জড় পদার্থ তবে
এক দিক থেকে ভাল কারো সাথে কখনো
মিথ্যে কথা বলে না।
সাগরের কথা শুনেই তামান্না অনেকটা রেগে
বলল।
"এই তোমরা দুজন কি পেয়েছো সেই কখন
থেকে দেখছি মোবাইলেই পড়ে আছো
তোমাদের আর কোনো কাজ নেই? দেখি
মোবাইলটা আমার কাছে দাও তো?
.
এই কথা বলেই তামান্না ওদের কাছ থেকে
মোবাইল কেড়ে নিয়ে গেল। আর ওরা অবাক
চোখে তামান্নার দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে
তামান্নার এই কান্ডে আমি নিজেও অবাক হয়েছি। এত
সহজে যে কি করে আমাদের কে আপন
ভেবে নিল আমি বুজে উঠতে পারছি। তবে একটু
বেশি কথা বলে। তামান্না মোবাইল হাতে নিয়ে
একটু দেখে আবার ওদের কাছে দিয়ে বলল।
.
"এই নাও ধর এটার ভিতর যে কি আছে সেটা একমাত্র
তোমরাই জানো। আচ্ছা তোমাদের কি কারোরি
প্রেমিকা নেই?
.
কথাটা শুনে আমরা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি।
আসলে এই মেয়েটাকে যতই দেখছি ততই অবাক
হচ্ছি।
"কি হল কথা বলছো না কেন তোমাদের কি
একজনের ও প্রেমিকা নেই?
এবার আমরা তিনজনি মাথা দিয়ে না বললাম।
"আসলে আমিও আইডিয়ে করেছিলাম যে
তোমাদের কোনো প্রেমিকা ট্রেমিকা
থাকবে না। কেননা তোমরা তিনজন যে আজব
ক্যারেক্টার এর ছেলে। শুনো ছেলেদের
দুটা জিএফ একটা হল মোবাইল আরেকটা হল রিয়েল।
এই দুটা থেকে যেকোনো একটাকে ভালভাবে
ধরতে হয় যদি মোবাইলের প্রতি আসক্ত থাকো
তাহলে তোমার আসল ভালবাসার মানুষটাকে হারাতে
পারো। কেননা তুমি এইটাকে সময় দিতে গিয়ে
আসলটাকে অবহেলা করবে। আর অবহেলার
কেউই সহ্য করতে পারে না।
.
ওর কথা শুনে আমরা তিনজনি একটু দীর্ঘশ্বাস
নিয়ে হু বললাম। মনে হল যেন বড় কেউ
আমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছে আর আমরা সেটা
খুব মন দিয়েই শ্রবন করছি। তখন তামান্না আমার
দিকে তাকিয়ে বলল।
.
"আচ্ছা আজকে আমাকে কেমন লাগছে?
"হ্যা ভাল লাগছে।
"শুধুই কি ভাল লাগছে?
"না অসাধারণ লাগছে অসাধারণ।
"জানো তোমাকে কেন জিজ্ঞাসা করলাম?
"না।
"ঐ যে ওরা বললা না যে তুমি কখনো মিথ্যে কথা
বল না তাই তোমাকে জিজ্ঞাসা করলাম। আসলে
আমরা চার বোন আমি তিন নাম্বার বড় দুজনেরই
বিয়ে হয়ে গেছে। আর আমার থেকে ছোট
যেটা আছে ও ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
তবে ও আর আমার মধ্যে সব সময় একটা কম্পিটিশন
হয় কে বেশি পরিপাটি হয়ে বের হতে পারে।
আর এই নিয়ে প্রতিদিনি আমাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি
হয়।
"ও আচ্ছা।
"এই ও আচ্ছা কি ও আচ্ছা কি সেই কখন থেকে শুধু
আমিই কথা বলে যাচ্ছি তোমরা শুধু উত্তরটাই
দিচ্ছো তোমাদের কি কোনো কথা নেই?
আমরা এখন নতুন বন্ধু প্রথম দিন একটু জমিয়ে
আড্ডা দেব। তা না সবাই চুপ করে আছো আর
আমি একাই কথা বলে যাচ্ছি।
"আরে না না কি বল। এটাই তো অনেক তুমি একাই
কথা বলছো এটাই তো হজম করতে পারছি না
আমরা আর কি বলবো।
"কি বলবে মানে কত কিছু বলার আছে ভেতরের
কথা বাহিরের কথা। আরে বন্ধুর সাথেই তো প্রাণ
খুলে কথা বলবা আর মন উজাড় করে হাসবা। তা না
হলে কিসের জন্য বন্ধু হলাম।
"আচ্ছা বাবা ঠিক আছে এখন বলবো।
.
তারপর ওর সাথে আরো অনেক কথা বললাম।
ধীরে ধীরে দেখলাম জমির আর সাগর ওর
সাথে খুব ভাল ভাবে আড্ডায় মেতেছে।
আসলে তামান্না খুব মিশুক টাইপের মেয়ে সবার
সাথে সরল মনে কথা বলে আর যা বলে সরাসরি
বলে কোনো কারচুপি করে না। আর ও
দেখতে খুন আহামরি সুন্দরী না হলেও চেহারায়
অনেক মায়া। যেকোনো কারো মনটা কেড়ে
নেওয়ার মত। টিয়া কালারের একটা বোরকা সাথে
মেচিং করে স্কার্ফ করা দেখতে খুব ভালই
লাগছে। ঠিক যেমনটা ভালবাসার মানুষটাকে আশা করা
যায়। চোখ বন্ধ করে বলা যায় ভালবাসি তোমায়।
.
যখন ও চলে যাবে তখন আমাকে বলে উঠলো।
"এই তুমি তোমার নামটা কি যেন?
"আমিই।
"আবার আমি? আরে আমি কি? তোমার নাম নেই
নাকি? না আকীকা দিয়ে নামটাই মুছে দিয়েছো?
"আরে কি বল নাম থাকবে না কেন নামটা একটা
আছে।
"তাহলে বল।
"পাবেল।
"হুম। আচ্ছা চল।
ওর শেষের কথাটা শুনে আমি একটু অবাক হলাম তাই
অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম।
"কোথায়?
"আরে এমন ভাবে বলছো যেন তোমাকে
নিয়ে আমি জাহান্নামে যাবো।
"আরে না কিন্তু কোথায় সেটা তো বলবে।
"কোথাও না বাসায় যাবো আমাকে একটা রিকশা ঠিক
করে দাও আসো।
"কেন একা যেতে পারবে না।
"আরে তোমাকে তো আর আমার সাথে
যেতে বলিনি শুধু বলেছি একটা রিকশা ঠিক করে দিবা।
(কথাটা শুনার পর আমি কিছু বলছি না চুপ করে
জমিরদের দিকে তাকিয়ে আছি। দেখলাম ওরা ও মাথা
দিয়ে যেতে বলল)
"আচ্ছা ঠিক আছে চল।
.
তারপর তামান্নাকে একটা রিকশা ঠিক করে দিলাম। আর
এভাবেই শুরু হল আমাদের বন্ধুত্ব আর এরপর
থেকে এক সাথে উঠাবসা। তবে এই মেয়েটা
ওদের চাইতে আমার সাথে একটু বেশিই মিশে।
আর কোনো কোনো দিন রাতে ফোন
করে অনেক সময় ধরে কথা বলে। কথা বলার
ফাঁকে যখন আমি চুপ করে যাই তখন বলে উঠে
"এই তুমি চুপ করে আছো কেন" আমি তখন ওর
কথা শুনে বলি "কেন চুপ করে থাকবো না তো
কি করবো?" আর এদিকে আমি কিছু বলতেও পারিনা।
আর সব সময় আমার উপর এক প্রকার শাসন
প্রয়োগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু কেন যে
এমন করছে সেটা আমি বুঝতে পারিনা।
.
কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে ঘুর কাটলো।
তাকিয়ে দেখি একটা আকাশী গাছ যেটার সাথে
আমি ধাক্কা খেয়েছি। আর ধাক্কাটাও একটু জুড়ে
লেগেছে যার কারণে ডান হাতের কনুতে খুব
ব্যাথা পেয়েছি। আসলে তামান্নার দিকে তাকিয়ে
ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে এই গাছটার সাথে
এসে ধাক্কা খেয়েছি নিজেই বলতে পারিনা।
কনুইতে হাত দিয়ে একবার তামান্না যেখানে দাঁড়িয়ে
ছিল ঐদিকে একবার তাকালাম। দেখি তামান্না নেই
মনে হয় ক্লাসে চলে গেছে। আমিও আর
দাঁড়ালাম না বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। ভার্সিটি
থেকে বের হয়ে ভাবলাম রিকশা করে বাসায়
যাবো। কিন্তু রিকশাও পাচ্ছি না তাই হেটেই বাসার পথ
ধরলাম। আর তাছাড়া অনেকদিন হল হাটি না তাই
শরীরটা কেমন যেন বসে গেছে। আমার
বাসায় যেতে এখান থেকে প্রায় ৪০ মিনিটের মত
লাগবে। তবে কোনো সমস্যা নেই চারদিকের
এই ব্যাস্ত নগরীর ব্যাস্ত মানুষদেরকে দেখে
দেখে না হয় পৌছে যাবো আমার গন্তব্যে। তাই
ফুতফাত ধরে হাটা শুরু করলাম। আসলে এই বিচিত্র
পৃথিবীর বিচিত্র মানুষগুলা খুব বিচিত্র ভাবেই তারা
তাদের জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
.
বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই আম্মু এসে দরজা
খুলে দিল। আর দরজা খুলেই আম্মু আমাকে
দেখে একটু অবাক হলেন।
.
"কিরে তুই এই সময় বাসায়? তুই না ভার্সিটিতে গেলি?
তাহলে চলে আসলি যে? ক্লাস নেই নাকি?
"আরে আম্মু ক্লাস আছে কিন্তু আজ ক্লাস
করতে ভাল লাগছে না তাই চলে আসছি।
"কেন শরীর খারাপ নাকি?
"আরে আম্মু তুমি যে কি বল না। আচ্ছা বাদ দাও
তো বাসায় তো আমাকে ডুকতে দিবা।
"হ্যা আয়।
.
তারপর বাসায় ডুকে আম্মু কে আর কথা বলার
সুযোগ না দিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে
গেলাম। গিয়ে দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে
পড়লাম।
.
আজকে কিছুদিন ধরে তামান্না আমাকে খুব
ভাবাচ্ছে। আচ্ছা ঐ মেয়েটা আমার উপর এত মায়ার
প্রভাব ফেলার চেষ্টা করছে কেন? নাকি ও
আমাকে? আরে না না আমি এসব কি ভাবছি এটা
কিভাবে হবে। আর তাছাড়া আমি যেরকম ঘাটছাড়া
একটা ছেলে ও আমার সাথে কিভাবে কি। না এসব
ভাবতে আর ভাল লাগছে না। আচ্ছা ওকে নিয়ে এত
ভাবছি কেন? এখানে কি কোনো মায়ার প্রভাবে
পড়েছে? না এসব নিয়ে আর আমাকে ভাবলে
হবে না। তাই এসব চিন্তা না করে ভাবলাম একটা ঘুম
দেওয়া যাক। শান্তিমত একটা ঘুম দিলে হয়তো মাথাটা
ফ্রেশ হবে।
তাই আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করলাম আর
ঘুমটাকে নিজের চোখের পাতায় আনার চেষ্টা
করলাম।
ঠাৎ জুড়ে কারো ধাক্কা ঘুম থেকে এক
প্রকার লাফ দিয়ে উঠলাম। ভাবলাম হয়তো
ভূমিকম্প শুরু হয়েছে আর তাছাড়া ইদানীং
যে হারে ভূমিকম্প শুরু হইছে বলা তো যায়
না কখন কি হয়। যার জন্য আমাকে এভাবে
আর্জেন্ট ভাবে ঘুম থেকে ডেকে তুলা
হচ্ছে। কিন্তু না ঘুম থেকে উঠে দেখি সব
কিছু ঠিকি আছে পাশে তাকিয়ে দেখি
নীলা (আমার ছোট বোন) দাঁড়িয়ে আছে।
ওর দিকে তাকাতেই ও বলে উঠলো।
.
" কিরে ভাইয়া মরার মত এত ঘুম তর কোথা
থেকে আসলো?
"ও তুই আমি আরো ভাবছিলাম হয়তো
কেয়ামত শুরু হয়ে গেছে।
"হ্যা আমি আচ্ছা তুই এই সময় আজ ঘুমাচ্ছিস
ব্যাপারটা কি বলতো।
"দূর ব্যাপার আবার কি? ঘুম তো ঘুমি এটার
আবার সময় অসময় লাগে নাকি।
"হ্যা লাগে।
"আচ্ছা বাদ দে তো তা তুই আমাকে এভাবে
ঘুম থেকে ডেকে তুললি কেন? কিছু হয়েছে
নাকি?
"হ্যা অনেক কিছু হয়েছে।
"তা কি হয়েছে।
.
কথাটা বলার পর দেখলাম নীলা আমার
মোবাইলটা আমার চোখের সামনে তুলে
ধরছে। আমি তখন বললাম।
.
"হ্যা এটা আমার মোবাইল তো কি হয়েছে?
"এখন কয়টা বাজে তোর খেয়াল আছে?
"কয়টা বাজে?
"বিকাল ৪ টা।
(নীলা ৪ টা বাজে এমন ভাবে বলল যেন ৩
টার সময় আমার অনেক বড় কিছু একটা কাজ
ছিল কিন্তু সেটা আমি এই ঘুমের কারণে
মিস করে ফেলেছি)
"তো ৪ টা বাজলো তো কি হইছি। ৪ টা তো
বাজতেই পারে। আর তাছাড়া সময় তো আর
কারো জন্য অপেক্ষা করে না।
"আরে দেখ তুই একবার মোবাইলটা হাতে
নিয়ে দেখ তামান্না আপু তকে কতবার
ফোন করেছে।
"ও তামান্না ফোন করেছিল।
.
(কথাটা বলে মোবাইলটা হাতে নিলাম।
এবং দেখি তামান্নার ১৭ টা মিসকল। আমি
কিছু বলার আগে নীলা বলে উঠলো)
.
"শেষ পর্যন্ত তকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে
না পেরে আমিই ফোনটা রিসিব করি।
(আমি নীলার কথাটা শুনে তেমন একটা
অবাক হলাম না। কেননা শুধু নীলাই না
আম্মু ও তামান্নাকে খুব ভালভাবে চিনেন।
কেননা একদিন জমির সাগর আর
তামান্নাকে নিয়ে আমাদের বাসায়
এসেছিলাম। আর সেদিন থেকে তামান্নার
সাথে আম্মু আর নীলার খুব ভাব। আম্মু
মাঝে মাঝে নীলার মোবাইল থেকে ফোন
করে তামান্নার সাথে কথা বলেন। যেদিন
তামান্না আমাদের বাসায় এসেছিল
সেদিন তামান্না যাবার পর আম্মু আমাকে
এসে বললেন।
"মেয়েটা কিন্তু খুব লক্ষী ঠিক যেমনটা
আমি চেয়েছিলাম" (আমি তো আম্মুর কথা
আগামাথা কিছুই বুজলাম না তাই আম্মুকে
জিজ্ঞাসা করলাম)
"আম্মু এসব কি বলছো মেয়েটা লক্ষী আর
ঠিক যেমনটা চেয়েছো এসবের মানে কি?
আম্মু তখন বলল
"তর এসব বুঝতে হবে না আমি আমার
ছেলেটার জন্য এরকম একটা মেয়েকেই বউ
করে আনবো।
"ও এই কথা।
"আচ্ছা ওর বাসা কে কে আছে।
তারপর আম্মুকে তামান্নার সব ডিটেল
দিলাম আর এরপর যখন আম্মু চলে গেল তখন
বুঝতে পারলাম যে আমিই তো আম্মুজানের
এক মাত্র ছেলে আমার তো আর বড় কোনো
ভাই নেই তার মানে আম্মু এতক্ষণ? আর
আমিও কি বোকা ওহ শীট।
.
নীলার ধাক্কায় ঘুর কাটলো
"কিরে ভাইয়া কি ভাবছিস। নাকি জেগে
জেগেই তামান্না আপু কে নেই স্বপ্ন
দেখছিস। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতে
দেখতে এখন জেগে থেকে তামান্না আপু
কে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিস?
"এই তুই না বেশি কথা বলছ যা এখান থেকে।
"যাচ্ছি বাবা এত চিল্লাচিল্লি করতে হবে
না। সত্যি কথা বললেও দোষ। আর হ্যা আপু
বলছে উনাকে একটা ফোন করতে।
"হ্যা করবো যা তুই যা এখান থেকে।
"ওকে যাচ্ছি ধমক দিয়ে কথা না বললে
হয়না।
.
কথাটা বলেই নীলা চলে গেল। আর আমি
এদিকে মোবাইলে হাতে নিয়ে বসে চিন্তা
করছি তামান্নাকে ফোন দিব কিনা। না
একটা ফোন দেওয়া উচিত মেয়েটার ভেতর
আমার প্রতি এমনিতেই অনেক অভিমান
জমে আছে। দেখি হয়তোবা সেই অভিমান
কিছুটা হলেও কমবে। তাই তামান্নাকে
ফোন দিলাম। আমি অবাক হলাম যে
প্রথমবার রিং হতেই তামান্না ফোনটা
রিসিব করলো। ওকি তাহলে আমার ফোনের
অপেক্ষায় ছিল? আসলে মেয়েটাও কিরকম
করে যেন তার মায়ার বাধনে আমাকে
বেধে ফেলছে। আর আমিও কেন যেন এই
বাধন থেকে নিজেকে দূরে রাখতে
পারছিনা। তামান্নার কথায় ঘুর কাটলো।
.
"কি হল ফোন দিয়ে কথা বলছো না কেন?
"ও হ্যা।
"কি?
"কিছুনা না মানে তুমি ফোন দিছিলা তাই
ফোন দিলাম।
"আমি যদি ফোন না দিতাম তাহলে তুমি
ফোন দিতানা?
"না দিতাম। ফোন দেব না কেন বন্ধু যখন
তখন তো খুজ খবর রাখতে হবে।
"হুম দেখি তো কিরকম খবর রাখো।
"আচ্ছা বাদ তা কি জন্য এতবার কল
দিছিলা?
"কেন তোমাকে কি কল করতে হলে কারণ
বের করে কল দিতে হবে?
"আরে না আমি কি তাই বলছি নাকি।
"আচ্ছা তুমি আজকে ভার্সিটি থেকে চলে
গেলা কেন? ক্লাস শেষে তোমাকে অনেক
খুঁজেছি কিন্তু তোমাকে পেলাম না পরে
তোমাকে ফোন দিলাম কিন্তু ফোনটা
রিসিব করলে না। পরে নীলা ফোন রিসিব
করে বলল তুমি নাকি মরার ঘুমাচ্ছো।
"কি নীলা এই কথা বলছে আমি মরার মত
ঘুমাচ্ছি।
"মরার মতই তো ঘুমাচ্ছিলে তা না হলে
এতবার ফোন দেওয়ার পরও ফোন ধরলে না
কেন?
"আরে ঘুমাচ্ছিলাম তো।
"হ্যা সেটাই। আচ্ছা তোমার কি আজ
বিকেলে একটু সময় হবে?
"বিকেল তো হয়েই গেছে।
"হ্যা দেখতে পাচ্ছি। তোমার কি একটু সময়
হবে।
"কেন?
"কেন কোনো কাজ আছে নাকি?
"আরে বাবা আমি বলছি নাকি যে কোনো
কাজ আছে আচ্ছা ঠিক আছে আজকের
বিকেল আমি তোমার নামে লিখে দিলাম।
"ধন্যবাদ। তাহলে তুমি আগামী ৩০
মিনিটের মধ্যে আমার বাসা থেকে
আমাকে এসে নিয়ে যেও আমি রেডি হয়ে
অপেক্ষা করবো।
"আচ্ছা ঠিক আছে আসবো। কিন্তু কোথায়
যাবো সেটা তো এখনো বললে না।
"আমি যেখানে নিয়ে যাবো সেখানে
যাবা। না কি যাবেনা?
"হ্যা যাবো।
"তাহলে মনে করে চলে এসো কিন্তু আমি
রেডি হয়ে থাকবো।
"ঠিক আছে আমি আসছি।
.
আসলে মেয়েটা এরকম কেন আমি বুঝিনা।
সব কথা নিজের মনের মধ্যে রেখে কাউকে
কিছু বলেও না আর বুঝতেও দে না। যাই
আগে ফ্রেশ রেডি হয়ে কিছু একটা খেয়ে
বের হই সারাদিন তো ঘুমের মধ্যেই খরচ
করলাম খাওয়া দাওয়া তো আর কিছুই করা
হয়নি। তাই এখন যা করার একটু তাড়াতাড়ি
করতে হবে কেননা অভিমানী মেয়েটা যে
রেডি হয়ে বসে থাকবে আমার জন্য।
.
বাসার নিচে দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য
অপেক্ষা করছি। কিন্তু একটা রিকশারও
চেহারা দেখতে পাচ্ছিনা। ভাবলাম
হেটেই রওনা দিব নাকি। কিন্তু হেটে
গেলে তামান্নাদের বাসায় পৌছাতে
দেরি হয়ে যাবে। আর এমনিতেই ১৫ মিনিট
চলে গেছে। যাক অবশেষে একটা রিকশা
পেলাম তবে ভাড়াটা একটু বেশি। তবে
সমস্যা নেই রিকশাওয়ালা মামাদেরকে
ভাড়া একটু বেশি দিলে উনারা আরো মনে
থেকে খুশি হন কেননা রিকশা চালানো
অনেক কঠিন আর পরিশ্রমের কাজ। একদিন
আমি একটা রিকশাওয়ালা মামাকে বলে
জমিরকে রিকশায় তুলে ১০ টা প্যাডেল
দিতে পারিনি। তার আগেই আমার জানের
পানি শুকিয়ে গিয়েছিল। সেদিন
বুঝেছিলাম রিকশায় বসে হাওয়া খাওয়া
যতটুকু আরামের তার থেকে শতগুণ বেশি কষ্ট
হয় রিকশা চালাতে।
.
প্রায় ১৫ মিনিটের মধ্যে তামান্নাদের
বাসার সামনে পৌছে গেলাম। দেখলাম
নিচে কেউ দাঁড়িয়ে নেই তার মানে
তামান্না এখনো রুমে বসে আছে। রিকশা
থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে তামান্নাকে
ফোন দিলাম। ফোনের রিং বাজতে না
বাজতেই ফোনটা রিসিব করে নিল। আর
অবাক হলাম যে ও আমাকে কিছু বলার
সুযোগ না দিয়ে বলে উঠলো।
.
"তুমি একটু দাঁড়াও আমি আসছি।
.
আচ্ছা ও বুঝলো কিভাবে যে আমি চলে
এসছি? আর ওদের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে
আছি। হয়তোবা এটাই ভালবাসার টান যা
দিয়ে ভালবাসার মানুষটার প্রতিটা
পদক্ষেপ চোখ বুঝে ফেলা যায়। প্রায় ৩
মিনিট পর দেখলাম তামান্না ওদের বাসার
গেইট থেকে বের হচ্ছে। ওকে আজ দেখতে
খুব ভাল লাগছে। নীল কালারের একটা লং
ড্রেস পড়ে এসেছে সাথে হালকা সেজেছে।
তবে আজকে স্কার্ফ করেনি চুল খুলেই
এসেছে। তবে চুল গুলাকে খুব সুন্দর করে
আঁচড়িয়েছে। কিছু চুল ডানদিকে এনে
ফেলেছে। আর বাকি চুলগুলা পিছনে
রেখেছে। এই হালকা সাজে এই অভিমানী
মেয়েটাকে অসাধারণ লাগছে। ইচ্ছে করছে
আলতো করে চুল গুলাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে
আসলে আমি এর আগে তামান্নাকে খুলা
চুলে কখনো দেখিনি আজকেই প্রথমবার।
.
তামান্নার ডাকে ভাবনা থেকে বাস্তবে
ফিরলাম।
"এই যে মিস্টার এভাবে তাকিয়ে আছেন
কেন নজড় লাগবে যে?
(আমি তামান্নার কথা শুনে একটু লজ্জা
পেলাম তাই মাথা নিচের দিকে করে
রাখলাম)
"হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবেনা। রিকশা
কোথায়?
"রিকশা কে তো ছেড়ে দিয়েছি।
"আসলে তুমিও না। যাও গিয়ে একটা রিকশা
ঠিক করে আনো।
"আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি কিন্তু কোথায়
যাবো?
"জাহান্নামে।
"আমিতো রাস্তা চিনিনা।
"আমি চিনি যাও বলছি রিকশা ঠিক করে
আনো।
"আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি।
"এই দাঁড়াও এদিকে আসো।
.
(তামান্নার ডাকে আমি পিছন ফিরে ওর
একটু কাছে গেলাম। তারপর দেখলাম
তামান্না এগিয়ে এসে আমার শার্টের
কলার ঠিক করে দিচ্ছে আর বলছে। "এত বড়
ছেলে হয়েছো আর ঠিকমত শার্ট ও পড়তে
পারোনা"। আমি তখন কি বলবো বুজতে
পারছি। এই প্রথম আমি তামান্নাকে এত
কাছ থেকে দেখছি। সত্যি খুব ভাল
লাগছিল। যখন তামান্না আমার শার্টের
কলারটা ঠিক করে দিচ্ছিল মনে হচ্ছিল যেন
খুব আপন কেউ যত্ন করে আমাকে গুছিয়ে
পরিপাটি করছে। ইচ্ছে করছিল তামান্না
চুলগুলা আলতো করে একবার ছুঁয়ে দেখতে।
আচ্ছা এত সুন্দর কেন ওর চুল? আমি
ইচ্ছেটাকে আর ধরে রাখতে পারিনি বাম
হাত দিয়ে ওর ডানদিকের চুল গুলাকে
কানের পিছনে গুঁজে দিলাম আর বললাম।
"তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে আর তার
চাইতে বেশি সুন্দর লাগছে তোমার চুল
গুলা"। আমার কথাটা শুনে তামান্না কেমন
যেন একটু লজ্জা পেল। তাই আমি আর কিছু
না বলে রিকশা আনতে চলে গেলাম।
.
রিকশায় উঠে আমি ডান পাশে আর
তামান্না বাম পাশে বসে আছে। ও শুধু
রিকশাওয়ালা কে বলল নতুন ব্রিজটাতে
যেন নিয়ে যায়। আমিও আর কিছু বললাম না
চুপ করে আছি। তবে এখন দুজনি চুপ করে
আছি। এরকম না যে ওর সাথে আমি এর আগে
কখনো রিকশায় চড়িনি। হ্যা একসাথে
রিকশায় ছড়েছি তবে আজকের মত এরকম
কখনো মনে হয়নি। আজকে তামান্নার
পাশে বসতে আমার কেমন যেন লাগছে। খুব
Uneasy uneasy লাগছে তাই কোনো রকমে
বসে আছি বলা যায়। ও আমার এরকম করা
দেখে বলে উঠলো।
.
"কি ব্যাপার তুমি এরকম ভাবে বসে আছো
কেন? স্বাভাবিক হয়ে বস।
"না ঠিক আছে আমি তো ঠিক আছি।
"কিছুই ঠিক নাই তুমি এরকম একটা ভাব
করছো যেন এর আগে কখনো তুমি আমার
সাথে রিকশায় চড়নি।
"আরে বললাম তো ঠিক আছি। আচ্ছা এই সময়
হঠাৎ নতুন ব্রিজে যাওয়ার কারণটা কি?
"কারণ কিছুনা। তোমার তো সময় নেই
আমাকে নিয়ে একটু সময়ের জন্য বের হওয়ার
তাই নিজ থেকেই তোমাকে নিয়ে বের
হলাম।
"ওহ আচ্ছা।
.
তারপর রিকশা চলতে চলতে ব্রিজের
মাঝখানে এসে থামলো। রিকশা থেকে
নেমে ভাড়া মিটিয়ে তামান্নার পাশে
একসাথে হাটছি। তবে ওর হাতটা ধরতে
পারছিনা কেন যেন খুব ইচ্ছে করছে ওর
হাতে হাত রেখে এই পথটা হাটতে। কিন্তু
সাহস করে উঠতে পারছিনা। আর এদিকে
দুজনি চুপ করে আছি। নীরবতা ভেঙে আমি
নিজেই বলে উঠলাম।
.
"কি হল কথা বলছো না কেন?
"কি বলবো?
"যা ইচ্ছে হয় তাই বলবা।
"তোমাকে আর বলে কি হবে তুমি আমার
কথাগুলু বুঝবে না।
"আরে বুঝবোনা কেন?
"হ্যা যদি বুঝতে তাহলে অনেক আগেই বুঝে
যেতে।
"আচ্ছা বাদ দাও। আচ্ছা তোমার বয়ফ্রেন্ড
নেই কেন?
"তোমার গার্লফ্রেন্ড নেই কেন?
"প্রশ্নটা আমি আগে করেছি। সো তুমি
আগে উত্তর দিবে।
"কারণ একটা বোকা হাদারাম কে আমি
ভালবাসি যার কারণে অন্য কেউ এসে
আমার সাথে ভাব নিতে পারেনা।
"কে সেই বোকা।
"আছে একজন যাকে অনেকবার বুঝাতে যেও
বুঝাতে পারিনি যে আমি থাকে কতটা
ভালবাসি।
"তাহলে বলে দাও না কেন বোকাটাকে
যেহেতু ছেলেটা বোকা।
"আমি বলবো কেন ও বুঝে নিতে পারেনা।
"আচ্ছা ও যদি বুজেও না বুঝার ভান করে
তখন তুমি কি করবে।
"খুন করে ফেলবো।
"আরে এখানে খুন করার কি হল। বোকাটা
যখন বুঝে না তাহলে থাকে বুঝাবা।
"হুম বুঝাতে বুঝাতে একদিন নিজেই হারিয়ে
যাবো তখন আর বুঝানোর মানুষ থাকবেনা।
(কথাটা তামান্না একটু অভিমান মিশ্রিত
কন্ঠে বলল)
"আরে তুমি হারিয়ে যাবা কেন?
"আচ্ছা বললে না তো তোমার গার্লফ্রেন্ড
নেই কেন?
"সেইম কাহিনী বলে লাভ নেই।
"তার মানে তুমিও আমার মত একজন কে
ভালবাসো? কে সেই মেয়েটা বলনা প্লিজ?
"আছে একজন যাকে সব সময়ই পাশে পাই।
যে সব সময় আমার খেয়াল রাখে, সব সময়
আমাকে চোখে চোখে রাখে। যার সাথে
কথা বলতে আমার খুব ভাল লাগে। যার
সাথে সময় কাটাতে আমার ভাললাগে।
যাকে নিয়ে আমার স্বপ্ন দেখতে ভাল
লাগে।
"তা কে সেই রাজকুমারী?
.
(কথাটা বলে তামান্না দাঁড়িয়ে গেল।
আমি কিছু পা সামনে গিয়ে পিছন ফিরে
তামান্নাকে দেখলাম সে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি পিছন ফিরে তামান্নার সামনে এসে
বললাম)
.
"আচ্ছা তামান্না তুমি কি আমাকে
ভালবাসো?
(কথাটা শুনে তামান্না অবাক চোখে
আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ও ঠিক
বিশ্বাস করতে পারছেনা যে আমি ওকে
কথাটা বলেছি। ওর চুপ করে থাকা দেখে
আমি আবার বলে উঠলাম)
"কি হল বলছো না কেন? তুমি কি আমাকে
ভালবাসো? যানো আমি কিন্তু তোমাকে
ভালবাসি।
(তামান্না দেখি এখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে
আছে। তবে চোখটা কেমন চিখ চিখ করছে
এর কারণ কি বুঝলাম না। আমি যখন আর কিছু
বলতে যাবো ঠিক তখনি দেখলাম তামান্না
দৌড়ে এসে আমার বুকে মাথা লুকালো। আর
ওর মায়াবী চোখের নোনা পানি দিয়ে
আমার শার্টটা ভিজিয়ে দিল। তখন আমি
বলে উঠলাম)
.
"আরে কাঁদছো কেন? আমি তো তোমাকে
প্রপোজ করছি। এখানে কান্নার কি হল
আমি বুজতাছি না।
"ঐ শয়তান চুপ করে থাকো একটা কথাও বলবা
না।
"আচ্ছা ঠিক আছে চুপ করলাম। কিন্তু তুমি
তো কিছু বলছো আমি এখন কি ধরে নিব?
"যা মন চায় ধরে নাও।
"আচ্ছা ধরলাম তোমাকে।
"আচ্ছা তুমি কি আমার সাথে প্রেম করবা?
(কথাটা শুনে আমি একটু অবাক হলাম।
তামান্না এরকম কথা বলার কারণ কি। তাই
আমিও বলে উঠলাম)
"না আমি তোমার সাথে প্রেম করবো না।
তোমাকে আমি ভালবাসবো আর আমার
ভালবাসা প্রেম না।
"সত্যি তো?
"হুম সত্যি। কিন্তু আমি যে তোমাকে
প্রপোজ করলাম তুমি কোনো উত্তর দিলে
না?
"এই শয়তান এক কথা কতবার বলবো?
"আরে তুমি কোন কথাটা আবার কতবার
বললা?
"এবার মাইর খাবা কিন্তু?
"ঠিক আছে তুমি তো আর মুখে কিছু বলবে
না। আর আমিতো তোমাকে প্রপোজ করছি
কিন্তু তুমি কিছুই বললেনা। এখন যদি তুমি
আমাকে মারো তাহলে বুঝবো আমাকে তুমি
ভালবাসো না আর যদি ভালবাসো তাহলে
চুপ করে আমার হাতটা ধরে থাকবা।
.
(কথাটা বলার পর তামান্না আমার
শার্টটাকে ভিজিয়ে মুখ উপরে তুলে আমার
দিকে তাকালো আর তারপর ওর দুহাত
আমার ডান হাতটা ধরে রাখলো। আমি বুজে
গেলাম যে পাগলীটাও আমাকে ভালবাসে।
তাই বললাম)
.
"তা ভালবাসো যখন শুধু শুধু আমার এই
শার্টটা ভিজানোর কি দরকার ছিল।
(তামান্না আমার কথা শুনে রেগে বলে
উঠলো)
"ঐ তোমার কোনো সমস্যা? তোমার ঐ
জায়গায়টার শুধু আমিই মালিক। আমি
ওখানে মাথা লুকাবো আর আমি তোমার
শার্ট ভিজাবো আর কেউ না।
"ঠিক আছে মহারাণী আপনি যা বলেন।
"...
"তাহলে চল হাটি........
.
তারপর দুজন মিলে আমাদের ভালবাসার
পথটা চলতে শুরু করলাম। চলছি দুজনে এক
অজানা গন্তব্যে।
.
লিখা--Ariyan Mahbub Riyad (হিমুর ছোট ভাই)

No comments:

Post a Comment