Thursday, November 10, 2016

এক চিলতে সুখ

এক চিলতে সুখ
.
.
তৈরী হচ্ছিলাম অফিসে যাওয়ার জন্য। প্রায় তৈরীই
হয়েই গেছি শুধু টাই টা লাগানো বাকি। কিন্তু টাই টা
নিজে থেকে কখনো লাগাই নি।
টাই টা আমাকে নীলিমা বিয়ের পরদিন গিফট্
করেছিলো। হঠাৎ দৌড়াদৌড়ির শব্দ শুনতে পেলাম
নিচে।
টাই টা নিয়ে চলে এলাম নিচে। এসেই দেখি মা-
মেয়ে দৌড়াদৌড়ি করতেছে আর দর্শক হিসেবে
আমার মা দাড়িয়ে আছে। আমিও মায়ের সঙ্গি হলাম।
.
নীলিমার চোখ বাধানো একটি নীল ওড়না দিয়ে
আর প্রিয়তি মা এর চোখ বাধানো অবস্থা ফাকিঁ দিয়ে
দৌড়াছে। অর্থ্যাৎ ওরা কানামাছি খেলতেছে।
.
নীলিমা আমার স্ত্রী আর প্রিয়তি পাচঁ বছরের
মেয়ে। প্রিয়তির ছোট বেলা থেকেই একটাই
বায়না তার সাথে কানামাছি খেলা। প্রতিদিন সকালে তার
সাথে কাউকে না কাউকেই খেলতে হবে। আমি
অফিসে যাই বলে তার মায়ের সাথে প্রতিদিন
খেলে। আর নীলিমার ও খুব পছন্দ কানামাছি
খেলার। বিয়ের পর সবচেয়ে বেশীই কানামাছি
খেলার জন্য বায়না ধরতো। তেমনি আমার প্রিয়তি
টাও হয়েছে তার মায়ের মতো। প্রিয়তির চেহারা
অভ্যাস সব মায়ের মতো দেখতে হলেও
মেজাজ টা নাকি আমার মতো।
.
ওদের খেলা দেখার সৌভাগ্য আর বেশীক্ষণ
থাকলো না। ফিরে আসতেই নীলিমা তার চোখ
থেকে বাধঁন টা খুলে কাছে এসে টাই লাগিয়ে
দিলো। টাই টা লাগিয়ে দেওয়ার সময় হালকা সুগন্ধি
অনুভব করলাম ওর ভেজা চুল থেকে। চোখ টা
বন্ধ হয়ে গেলো, এতে লজ্জা পেয়ে
নীলিমা চলে গেলো। পাশ ফিরে দেখি প্রিয়তি
দাড়িয়ে মুচকি হাসছে। এতে আমার ও অস্বস্থি
লেগে উঠেছিলো। ওকে কাছে ডাকতেই
দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। আস্তে করে ওর
কপালে আর নরম মুখে চুমু দিলাম। এতে প্রিয়তি ও
প্রতিদান হিসেবে আমার মুখে আব্বু বলে চুমু
খেলো।
.
পাশে ফিরে তাকিয়ে দেখি নীলিমা আমাদের বাবা-
মেয়ের ভালবাসা দেখতেছে। সময় ঘনিয়ে
এলো বলে উঠে পড়লাম অমনি নীলিমা কাধে
লেপটপ এর ব্যাগটা দিলো। আর বাই বললো,
নীলিমার সাথে প্রিয়তিও বাই বাই আব্বু বললো।
একটু পথ অগ্রসর হয়ে বাড়ির প্রথান ফটকের
সামনে আসতেই পেছনে তাকিয়ে দেখি
এখনো মা-মেয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দাড়িয়ে
আছে, প্রিয়তি ততক্ষনে তার মায়ের কোলে
উঠে পড়েছে।
.
প্রায় পচিঁশ মিনিট পর অফিসে পৌছাঁলাম। নিজের
কক্ষে এসেই ব্যাগটা খুলে ল্যাপটপ টা বের করে
অন করলাম। আজ অফিসে সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে।
পিয়ন কে ডেকে জানে পারলাম আজ অফিসে
মাংস-বিরিয়ানী রান্না হবে। তাই কিছুটা ফাকিবাজ হয়ে
নিজের কাজ করা বন্ধ করে দিলাম। আর বসে মানুষ
গুলো অবস্থা দেখতেছিলাম। এসির শীতল
বাতাসে চোখে হালকা ঘুম লেগে আসলো।
হঠাৎ পূর্বের কিছু একটা মনে পড়তেই ঘুমিয়ে
পড়লাম কখন নিজেও বুঝতে পারলাম না।
.
"সদ্য নতুন চাকরী পেয়েছিলাম। বেশ হাসিখুশি
আর নতুন চাকরীতে মায়ের সাথে দিন কেটে
যেতো। একদিন বিকেলে বাসায় ফিরছিলাম ক্লান্ত
শরীরে। রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা সিএনজি এর
সামনে এসে পড়লাম এবং ধাক্কায় পড়ে খেলাম।
পায়ে অনেক ব্যাথা পেয়েছিলাম যার কারণে
উঠতেই পারছিলাম না আর মাথায় কিছুটা রক্তপাত
হচ্ছিলো।
চারপাশে লোকজন চলাফেরা করতেছে কেউ
কাউকে দেখার সময় নেই। তাই হালকা চেষ্টা
করলাম কোনোরকমে উঠতে কিন্তু পায়ের
চোটে উঠতে পারি নি।
.
কিছুক্ষন পর দেখি সমবয়সী একটা মেয়ে রিকসা
থামিয়ে আমার নিকট আসলো। কোনো কথা না
বলেই আমাকে ধরে উঠালো আর রিকশাওয়ালার
সাহায্য নিয়ে রিকশায় বসতে সাহায্য করলো।
রিকশায় শক্ত করে আমাকে ধরে ছিলো। ক্লান্ত
চোখে মেয়েটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
ছিলাম। মেয়েটিকে চেনাচেনা লাগছিলো।
কোনো কথা না বলে ভাবতে লাগলাম মেয়েটি
কে? কে হতে পারে? যে আমাকে এইভাবে
সাহায্য করছে। কিন্তু পেটে আসছে মুখে
আসছে না।
.
কিছুক্ষণ পর একটা বাড়িতে এসে পৌছাঁলাম। সেখানে
আমাকে নিয়ে প্রবেশ করতেই বাড়ির সবাই কিছুটা
ব্যাকুল হয়ে উঠলো। ডাক্তার এনে সব সম্পন্ন
করতেই রাত হয়ে গেলো। ক্লান্ত শরীরে
কখন ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানি না। হঠাৎ ঘুম
ভেঙে গেলো ততক্ষণাৎ মায়ের কথা মনে
পড়লো। তাই পকেট থেকে ফোন খুজতে
গিয়ে দেখি ফোনটা নেই। ঠিক পাশে দেখি একটা
প্লাগ-সকেটে মোবাইলটি চার্জে লাগানো।
মোবাইলটি নেওয়ার জন্য উঠতে চেষ্টা ততক্ষনাৎ
ওই মেয়েটি এসে বললো, "আপনি শুয়ে থাকুন"
আন্টি আমাদের বাসাতেই আছে। মেয়েটিকে
এইবার চিনতে পারলাম। আরে এটা তো মায়ের
বান্ধবীর মেয়ে নীলিমা! ওর সাথেই তো
আগামীমাসে আমার বিয়ে! অবাক হওয়ার পাশাপাশি
বেশ নার্ভাস হয়ে উঠলাম।
.
প্রায় এক মাস পর, একদিন আমাদের বিয়ে হয়ে
গেলো। যদিও এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই
নি কিন্তু মায়ের কারণে বাধ্য হয়ে করতে হলো।
বিয়ের পর অনুভব করলাম একটা মেয়ে কিভাবে
এতো ধৈর্য্যশীল, শান্ত, বেশ গুণী হয়ে
থাকে। সত্যিই বাবা-মা চায় সন্তানকে সবসময় ভালো
কিছু দিতে। তেমনি আমার মা এতো ভাল বউ
নিজের ঘরের বউ করে আনলো।
এইভাবেই চলতে থাকে আমাদের দৈনন্দিন
জীবনের খুনসুটি, ভালবাসা ও শাসন। এরপরেই
তো নীলিমা কোলে আসে আমাদের এই
ভবিষ্যতের স্বপ্ন ও আশা চোখের মণি প্রিয়তি।
কিন্তু কখন যে প্রিয়তিও বড় হয়ে গেলো
বুঝতেই পারলাম না।
.
হঠাৎ পিয়নের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, হ্যাঁ
এতক্ষন চলে যাওয়া রঙিন স্মৃতি গুলো স্বপ্নে
দেখছিলাম।
.
পিয়ন টেবিলে একটা বড় প্যাকেট রেখে
গেছে। খুলে দেখি গরুর মাংসের বিরিয়ানী আর
সাথে কিছু ভাজা চিংড়ি। প্যাকেট আর ব্যাগ নিয়ে উঠে
পড়লাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।
.
যখন বাড়ি ফিরে যাবো প্যাকেট টা দেখে
নীলিমা বলে উঠবে প্যাকেটে কী? আর
আমিও বলবো, "এখানে কিছু বিরিয়ানী রয়েছে"
আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখবো নীলিমা
সালাদ ও টমেটো কেটে এনেছে। আর
দেখবো মা কে খেতে দিয়েছে আর
প্রিয়তিকে খাইয়্যে দিচ্ছে। আমিও রুমে চলে
আসবো আর কিছুক্ষন পর নীলিমা এসে
আমাকেও খাইয়্যে দিবে শুধু সে নয় আমিও তাকে
খাইয়্যে দিবো এতেই তার চোখ থেকে কিছু
অশ্রু বের হতেই আমি মুছে দেবো।
.
হ্যাঁ এটা আমার কল্পনা নয় এটাই একটু পর ঘটবে।
হয়তো এটাই আমার পরিবারে নিত্যদিনের ঘটনা।

No comments:

Post a Comment