Saturday, November 12, 2016

গল্প: একদিন ঠিকই বলবে ভালবাসি।

গল্প: একদিন ঠিকই বলবে ভালবাসি।

------------------------
ফারিয়ার কথা
------------------------
কয়দিন থেকেই ফারিয়া ব্যপারটার লক্ষ্য
করছে । সকালের ঠিক নির্দিষ্ট একটা সময়ে
ওর ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে । তাও আবার সকাল
ছয়টার আশেপাশে । আগে যেখানে সাড়ে
নয়টা দশটার আগে ঘুমই ভাঙ্গত না ।
সেখানে কোন এলার্ম ছাড়া এতো সকালে
ঘুম ভাঙ্গা একটু আশ্চর্যের বিষয় ।
আজ থেকে ঠিক ১৯ দিন আগে ফারিয়ার
প্রথম এমনটা হয় । প্রথমে চোখ খুলে ওর মনে
হল যে হয়তো এখন অনেক বেলা । কিন্তু
মোবাইলে দেখে মাত্র ছয়টা বাজে ।
খানিকটা বিরক্ত হয়েছিল । এতো সকালে
কেন ঘুম ভাঙ্গল ! ও পাশ ফিরে শুল আর ঠিক
কখনই ওর কাছে মনে হল জীবনের সব থেকে
সুন্দর দৃশ্যটা ও দেখল ।
আকাশ কাত হয়ে শুয়ে আছে । মুখটা ওর
দিকে ফেরানো । কেমন বাচ্চাদের মত
জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে । সকালের শুভ্র আলো
আকাশের মুখের উপর পড়ছে । ফারিয়া
কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়েই থাকল ।
কি নিঃপাপ লাগছে ওকে ! দৃশ্যটা কি
সুন্দরই না লাগছে ! ওর মনে এমন একটা দৃশ্য
দেখেই ও ওর সারা জীবন কাটিয়ে দিতে
পারবে । সেদিন যতক্ষন আকাশ ঘুমিয়ে ছিল
ততক্ষনই ফারিয়া ওর দিকে এক ভাবেই
তাকিয়ে ছিল । কি অদ্ভুদ একটা ভাল
লাগার অনুভুতি যে ওকে ঘিরে রেখেছিল
তা ও বলতে পারে না ।
তারপর থেকে প্রতিদিন ঘুমুবার সময়
আল্লাহর কাছে কেবল এই একটা দোয়া করে
যেন সকালে আকাশের আগে ওর ঘুম ভাঙ্গে
। আজকেও ওর ঘুম সকাল সকালই ভেঙ্গেছে ।
প্রতিদিন ঘুম ভেঙ্গে প্রিয় মুখটা দেখতে
পাওয়া বড় ভাগ্যের একটা ব্যাপার ।
হঠাৎ ও দেখল আকাশের ডান গালটাতে
কেমন জানি একটু লাল লাল । ও খুব
সাবধানে আলতো করে ঐ জাগাটা স্পর্শ
করল । হুম জায়গাটা কেমন ফোলা ফোলা ।
মশা কামড় দিয়েছে ।
ফারিয়ার খুব রাগ হল । “বেটা ফালিজ
মশা” ! ও মনে মনে বলল । “তুই কেন আমার
আকাশের গালে কামড় দিলি ? ঐখানে
কেবল আমি কামড় দিবো” । মনে মনে কথা
বলেই ও লজ্জায় পড়ে গেল । নিজের কাছেই
লজ্জা । মনে মনে বলল “এ কি বললাম” !
লজ্জায় একটা লাল আভা ওর পুরো মুখে
ছেয়ে গেল ।
কিছুক্ষন পর ও নিজেকেই বলল “আমি ভুল
কিছু বলি নি । আমার স্বামীর সব কিছুর
উপর কেবল আমার অধিকার । অন্য কেউ কেন
তাতে ভাগ বসাবে” !
“ আচ্ছা এখন যদি ওর গালে একটা চুম খাই ও
কি রাগ করবে” ?
“কেন রাগ করবে” ?
“আমি ওর বিয়ে করা বউ না” ? তবুও ফারিয়া
খানিকটা ইতস্তত করল ।
“কি হয়েছে ? রাগ করবে কেন ? আর করলে
করুক । তাছাড়া ওর ঘুম বেশ গাঢ় । ও টের
পাবে না” ।
তারপর খুব আল্তো ঠোটে ফারিয়া
আকাশের গালে একটা চুম খেল । এতো যে
ভাল লাগল ওর । ঠিক করল এবার থেকে
প্রতিটি দিন ও এভাবে আকাশ কে চুম খাবে
। ও যদি রাগ করে করুক ।
ফারিয়া মনে মনে বলল “আকাশ সাহেব
শুনতে পাচ্ছেন ? আমি কিন্তু আপনাকে
অনেক ভালবাসি” ।
কথাটা বলার পর ফারিয়ার মনটা খারাপ
হল । ফারিয়া খুব ভাল করে জানে আকাশ
ওকে ভাল বাসে না । আকাশ ঐ মেয়েটাকে
ভালবাসে । এই জন্য আকাশ ওকে প্রথমে
বিয়ে করতে চায় নি । বলা যায় ফারিয়ার
আগ্রহেই বিয়েটা হয়েছ । ফারিয়ার মনে
বিশ্বাস ছিল যে একদিন না একদিন আকাশ
ওকে ভালবাসতে শুরু করবেই । ফারিয়া
কেবল ঐ দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছে ।
আকাশের সাথে ফারিয়ার পরিচয় ওর বড়
চাচার অফিসে । ফারিয়া তখন সবে
পড়ালেখা শেষ করে চাচার অফিসে যোগ
দিয়েছে । একে ফারিয়া দেখতে সুন্দর , শুধু
সুন্দর বলতে খানিকটা কম বলা হয় , তার উপর
বসের ভাতিজি অফিসের মোটামুটি সব
ব্যচেলর ফারিয়ার জন্য পাগল প্রায় । বিয়ে
করার জন্য সদা প্রস্তুত । এসব নিয়ে
ফারিয়া কিছু মনে করতো না । কারন স্কুল
জীবন থেকে মানুষের কাছ থেকে ও এই রকম
ব্যবহার পেয়ে আসছে । ও মনে করতো এমনই
হবে । এটাই ওর কাছে স্বাভাবিক ছিল ।
আকাশও ওর সাথে কথা বলত । কিন্তূ অহেতুক
কোন কথা না । তারপর একদিন ওর চাচাই
ফারিযাদের বাসায় হাজির হল । ফারিয়া
বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে । বড় চাচা যখন ওর
বাবা মার সাথে কথা বলছিল ফারিয়া তখন
আড়াল থেকে শুনছিল । বড় চাচা আকাশের
কথা বললেন । বললেন যে ছেলেটা খুব ভাল ।
তোমরা বললে আমি ছেলেটার সাথে কথা
বলতে পারি । ফারিয়ার বাবা মাও রাজি
হল । আজ কাল ভাল ছেলে আর পাওয়া যায়
কোথায় ? ফারিয়া অমত করেনি । খারাপ
কি !
কিন্তু যেদিন বড় চাচা বললেন যে ছেলেটা
বিয়ে করতে চাচ্ছে না ফারিয়ার বাবা মা
বেশ অবাক হয়েছিল । এমন প্রস্তাব মানুষ
ফিরিয়ে দেয় কিভাবে । কিন্তু সব থেকে
বেশি অবাক হয়েছিল ফারিয়া নিজে ।
কোন ছেলে যে ওকে রিজেক্ট করতে পারে
এটা ও বিশ্বাস করতে পারল না !
প্রথমে খুব মেজাজ খারাপ হল । কিন্তু
মেজাজ খারাপটা ক্রমেই মন খারাপের
দিকে । বার বার মনে হল ছেলেটা কেন
ওকে রিজেক্ট করল ?
কেন করল ? ও দেখতে খারাপ হয়ে গেছে ? ও
কি আর দেখতে সুন্দর না ? সারাটা দিন
কেবল এই কথাটা ওর মনে হতে লাগল ।
ফারিয়া কিছুতেই এটা থেকে মুক্তি পেল
না । অবেশেষে ও ঠিক করল যে আকাশের
সাথে কথা বলবে ? কারনটা জিজ্ঞেস করবে
। তা না হলে ও শান্তি পাবে না ।
অফিস গিয়ে সরাসরি কথাটা জিজ্ঞেস
করল । আকাশের চেহারা দেখে কেন জানি
মনে হল ও যেন জানতো ফারিয়া এমন কিছু
একটা কথা একদিন না একদিন বলবে ।
ঐ দিন আকাশ অনেক কথা বলেছিল । একটা
মেয়েকে ও ভালবাসে । যদিও মেয়েটার
বিয়ে হয়ে গেছে তবুও তার প্রতি বিন্দু
মাত্র অনুভুতি পরিবর্তন হয় নি । এখন
একজনকে মনের মধ্যে রেখে অন্য জন কে
বিয়ে করা কি ঠিক ? যদি বিয়েটা হয়
তাহলে তো ফারিয়ার প্রতি অবিচার করা
হবে ।
আকাশ যুক্তি দেখা বিয়ে হলে সে না
পারবে ঐ মেয়েটা ভুলতে না পারবে
ফারিয়াকে ভালবাসতে । নতুন করে তখন
জটিলতা তৈরি হবে । কি দরকার বলুন ?
ফারিয়া কোন জবাব দিতে পারে নি ।
বাসায় এসে ওর মন টা আরো খারাপ হয়ে
গেল । কি একটা না পাবার আফসোস রয়ে
গেল । ফারিয়ার মনে এর আগে কখনও কোন
জিনিসের জন্য আফসোস হয় নি । তবে আজ
ওর মনে হল ইস এমন একটা ভালবাসার মানুষ
ওর থাকতো ! জীবনে আর কিছু চাইবার
থাকতো না !
ঐ দিন রাতে ফারিয়া তার মা বলে দিল
যে সে আকাশকেই বিয়ে করবে ? ও ছাড়া
আর কাউকে না । এরপর আকাশ আর অমত করে
নি ।
বিয়ের আগে কেবল ফারিয়া বলেছিল যে
সব কিছু জানার পরেও যখন তুমি বিয়ে করতে
চাইছ তখন আমি আপত্তি করবো না ।
স্বামী হিসাবে আমার যা দায়িত্ব তা
আমি পালন করবো কিন্তু এর বেশি কিছু
তুমি আশা করবে না । আর অবজেকশন দিতে
পারবে না ।
তারপরই ওদের বিয়ে হয়ে যায় । তাও প্রায়
মাস খানেক ।
ফারিয়া উঠে পড়ল । একটু পরই আকাশে ঘুম
ভেঙ্গে যাবে । ওর জন্য চা বানাতে হবে ।
আগে কাজটা বুয়া করত । ওর নিজের কাজটা
করতে খুব ভাল লাগে । শুধু চা না আকাশের
জন্য প্রত্যেকটা কাজ করতে ওর খুব ভাল
লাগে । এখন মনে হয় কেন যে ভাল করে
রান্নাটা শেখেনি !
চা নিয়ে এসে দেখে আকাশের ঘুম ভেঙ্গে
গেছে । চা টা বাড়িয়ে দিয়ে ফারিয়া একটু
হাসল ।
বলল “ঘুম ভাল হয়েছে” ? আকাশও হাসল ।
আস্তে করে পেয়ালাতে চুমুক দিল ।
আকাশের চায়ে চুমুক দেওয়ার স্টাইলটা বেশ
সুন্দর । বাচ্চাদের মত । বাচ্চাদের মত একটু
একটু করে খায় ।
ফারিয়া তাকিয়েই থাকে । চোখ ফেরাতে
পারে না । চা খাওয়া শেষ হলে আকাশ
বাধরুমে গেল ফ্রেস হবার জন্য ।
ফারিয়া কাপ নেওয়ার পর দেখল আজও একটু
চা রয়ে গেছে । এই ছেলেটা না ! কোন
কিছুই সম্পুর্ন খায় না ।
প্রথম যেদিন এমনটা দেখলো ফারিয়া বলল
“চা ভাল হয় নি” ? উত্তরে আকাশ বলল “না
না ভাল হবে না কেন ? ভাল হয়েছে” ।
“তাহলে খাও নি যে” ?
“ও ! খেয়েছি । আসলে আমার এটা একটা বদ
অভ্যাস । কোন কিছুই আমি পুরোপুরি খেতে
পারি না” ।
সত্যি তাই । এ কয়দিনে ফারিয়া লক্ষ্য করল
আকাশ সবকিছুই নষ্ট করে ।
আকাশের রাখা চা টুকু খেয়ে ফেলে এক
চুমুকে । এর স্বাধ টাই আলাদা । আগে
ফারিয়া কখনও কারো এতো করা কিছু খায়
নি এমন কি ছুয়ে পর্যন্ত দেখতো না আর এখন
আকাশের এটো করা জিনিস ও কি আনন্দের
সাথেই না খায় । মানুষ প্রেমে পড়লে কত
কিছুই না পরিবর্তন হয় !
------------------------
আকাশের কথা
------------------------
আকাশ বরাবরই একটু ঘুমাতে পছন্দ করে ।
বিয়ের পর যেন অভ্যাসটা যেন আরো একটু
বৃদ্ধি পেয়েছে । আগে তো অফিস যাবার
সময় সকাল সকাল উঠতে হত । বসের ভয় ছিল ।
কিন্তু এখন সেই ভয় টা একটু কম । কারন
অফিসের বসের ভাতিজির সাথেই ওর বিয়ে
হয়েছে । বসের ভয় একটু কম ।
অফিসে আকাশের সুনাম ছিল ছিল বরাবরই
। একে বারে ভাল ছেলে বলতে যা বোঝায়
আকাশ সে রকমই একজন ছেলে । সবার
সাথেই আন্তরিক সে কিন্তু ফালতু প্যাচাল
কারো সাথেই না । আর কাজ কর্মে ছিল খুব
সিনসিয়র । অফিসের সবাই আকাশকে পছন্দ
কর । মহিলা কলিগদের মধ্যে আকাশকে
নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয় । বিশেষ করে
অবিবাহিত কলিগরা আকাশকে নিয়ে বেশ
আগ্রহ দেখাতো ।
ঠিক এমন সময় বসের ভাতিজি অফিসে
জয়েন করল । ফারিয়া । দেখতে শুনতে দারুন
। অবিবাহিত । একে তো বসের ভাতিজি
তার উপর সুন্দরী । অফিসের আলোচনার
কেন্দ্রবিন্দু ফারিয়ার দিকে ঘুরে গেল ।
এভাবেই দিন চলছিল । ফারিয়ার সাথেও ওর
আন্তরিক সম্পর্ক ছিল । কিন্তু এর বেশি
কিছু না । আকাশ কোন দিন মেয়েদের
প্রতি বেশি আগ্রহ দেখায় না । এর অবশ্য
কারন ছিল ।
তারপর একদিন হঠাৎ অফিসের বস আকাশ কে
ডেকে ফারিয়ার সাথে বিয়ে প্রস্তাব দেয়
। ও খানিকটা অবাক হল । এতো ছেলে
থাকতে ও কেন ? খুব আন্তরিক ভাবেই সে
প্রস্তাফটা না করে দিল । খবরটা শুনে
অফিসের সবাই খুব অবাকই হয়েছিল ।
বলছিল এরকম সোনার হরিণ কেউ মিস করে ?
কিন্তু তারা যদি জানত !
আকাশ তার সারাতটা জীবন দিয়ে কেবল
একটা মেয়েকেই ভালবেসেছে । অন্য কোন
মেয়ের প্রতি তাই ও কথনও আগ্রহ দেখাই নি
। একজনকে মনের ভিতর রেখে অন্যজনকে
কাছে টানা কিছুতেই সম্ভব না । মাঝে
আকাশের মা খুব জোড়াজুড়ি করত বিয়ের
জন্য । বলত বিয়ের পর বউয়ের উপর মায়া
এমনিতেই জন্ম নেই । তুই এমনিতেই তাকে
ভালবাসতে শুরু করবি । উত্তরে আকাশ বলত
আমি সে চান্স কেন নেব । যদি ভালবাসা
জন্ম না নেয় ! তাহলে আর একটা মেয়ের
জীবন নষ্ট করে কি লাভ । ঠিক একই কথা
গুলো সে ফারিয়াকেও বলছিল । কিন্তু
তারপরও যখন ফারিয়া ওকে বিয়ে করতে
চাইল বেশ জোর দিয়েই চাইল তখন আকাশ
কেন জানি রাজি হয়ে গেল ।
তাছাড়া বিয়ে না করার ব্যাপারে মানুষ
জন অন্য ইঙ্গিত দেওয়া শুরু করেছিল । তাই
বিয়েতে আর অমত করেনি । আর ফারিয়ার
চোখে কি যেন একটা ছিল , আকাশ সেটা
উপেক্ষা করতে পারে নি । তারপর ওদের
বিয়েটা হয়ে যায় । তারপর থেকে সবকিছু
ভালই চলছে বলতে হবে ।
“ঘুম ভাল হয়েছে” ? ফারিয়া ধুমায়িত চা
নিয়ে হাজির ।
আকাশ আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বলল
“হুম” । এই মেয়েটা কি যেন বুঝে যায় ওর কখন
কি দরকার । ঘুম ভেঙ্গেই প্রতিদিন গরম চা
নিয়ে হাজির হয় । একটু অপেক্ষা করতে হয়
না । মনে হয় যেন ও ঠিক জানতো এখনই
আকাশের ঘুম ভাঙ্গবে আর এখনই ওর চা
দরকার ।
আর কেবল চা ই না ওর প্রত্যেকটা জিনিস
যখন যেটা দরকার ঠিক তখনই ফারিয়া ওটা
নিয়ে হাজির হয় ।
সপ্তাহ খানেক আগে আকাশ লক্ষ্য করল
ফারিয়া অফিস যাচ্ছে না । খাওয়ার
টেবিলে কথাটা জিজ্ঞেস করল ।
“অফিস যাচ্ছ না কেন তুমি” ?
“ভাল লাগে না” ।
“কেন” ? আকাশ বেশ অবাক হল । “সারা দিন
বাসায় কি কর” ?
“রান্না শিখি । মাঝে মাঝে মনে হয় কেন
যে আরো আগে রান্নাটা শিখি নি” ?
“রান্না করার কি দরকার ? বুয়া আছে না” ?
“তুমি খেতে অনেক পছন্দ কর না তাই রান্না
শিখি । তোমাকে নিজের হাতে রান্না
করে খাওয়াতে পারলে আমার খুব ভাল
লাগবে” ।
আকাশ অবাক হয়ে ফারিয়ার দিকে
তাকিয়ে রইল । এমবিএ করা এই মেয়ে কি
বলছে ?
কিন্তু অফিস যাবার সময় আকাশের কেন
জানি অদ্ভুদ ভাল লাগার অনুভুতিতে ছেয়ে
রইল ওর মনটা । ফারিয়ার মত একটা মেয়ে
ওর জন্য এমনটা করছে । ভাবতেই ভাল
লাগছে ।
নাস্তার টেবিলে আকাশের কেন জানি
মনে হল ফারিয়া কিছু বলতে চায় ।
“পরোটা তুমি বানিয়েছে” ?
ফারিয়া মাথা ঝাকাল ।
“ভাল হয়েছে । বুয়া পরোটা বানালে তো
মনে হয় তেলের পুকুর থেকে ডুবিয়ে এনেছে ।
খেতে ভাল লাগছে” ।
আকাশ লক্ষ্য করল এই টুকু কথায় ফারিয়ার
চোখের পানি চলে এসেছে । আশ্চর্য ।
“কিছু বলতে চাও” ।
ফারিয়া আবার মাথা ঝাকাল ।
“বল” ।
“তোমার আজ বিকেলে কোন কাজ নেই
তো” ?
“না কাজ আর কি ? ছুটির দিনে তো টিভি
দেখা ছাড়া আর কোন কাজ থাকে না” ।
ফারিয়া খানিকটা সময় নিল । তারপর বলল
“বসুন্ধারা সিটিতে একটা সুন্দর ছবি চলছে ।
তোমাকে না বলেই আমি টিকিট কেটে
ফেলেছি । যাবে আমার সাথে” ?
“আরে এতো সংকোচ করে কেন বলছ” ?
আকাশ হাসল । “যাওয়া যাবে । সমস্যা
কি” !
“সত্যি” ?
“ হুম” ।
“আর একটা কথা” !
“বল” ।
“ গাড়ি নিয়ে যাবো না রিক্সা করে
যাবো” ।
“রিক্সা নিয়ে কেন” ?
“এমনি । বল যাবে” ?
“আচ্ছা বাবা রিক্সা নিয়েই যাবো । কিন্তু
আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এসি কার
থাকতে তুমি রিক্সা করে কেন যাবা” ?
“এখন বলব না । এখন বললে তুমি হাসবা । যখন
যাবো এখন বলব” !
আকাশ হাসল । ও খুব ভাল করেই বুঝতে
পারছে ফারিয়া কেন রিক্সা করে যেতে
চাচ্ছে । এই মেয়েটা এতো ছেলে মানুষ !
আবেগ প্রকাশের কি ছেলেমানুষী না
চেষ্টা ! আরো কত কিছুই না ও করে । তার
মধ্যে সব থেকে যেটা না বললেই নয় সেটা
হল ফারিয়া কথনও অন্য গ্লাসে পানি খায়
না । আকাশ যে গ্লাসটাতে পানি খাবে
ফারিয়া বেছে বেছে ও গ্লাসটাতেই পানি
খাবে । প্রথম প্রথম খ্যাল করলেও সিওর
হবার জন্য আকাশ সেদিন একটা পরীক্ষা
করল ।
দুজন রাতের খাবার খেতে বসেছে । দুজনের
সামনেই দুটো পানির গ্লাস । আকাশ
গ্লাসে একটু চুমুক দিয়ে গ্লাসটা এমন একটা
দুরুত্বে রাখল যেন গ্লাসটা নিতে হলে
ফারিয়াকে চেয়ার ছেড়ে উঠতে হবে । ওর
যখন পানি খাবার দরকার হল ও চট করে উঠে
গেল । এমন একটা ভাব যে কোন আইটেম
হয়তো আনতে ভুলে গেছে । তারপর পানির
গ্লাসটা নিল খুব স্বাভাবিক ভাবেই । যেন
এটাই ওর গ্লাস। কিন্তু ওর হাতের কাছের
আর একটা গ্লাস ছিল । ইচ্ছা করলেই ও
নিতে পারতো ।
আকাশের কেন জানি একটা আনন্দ আনন্দ
অনুভব হয় । তাহলে কি মায়ের কথাটাই ঠিক
। স্ত্রীর প্রতি আপনাআপনি ভালবাসা
সৃষ্টি হয় ! ফারিয়ার প্রতি কি ও দুর্বল হতে
শুরু করেছে ?
-----------------------
দুজনের কথা
-----------------------
খুব জোরে বাতাস হচ্ছে । অল্প অল্প মেঘ
ডাকছে ।
আকাশ খুব বিরক্ত মুখে এদিক ওদিক
তাকাচ্ছে । একটা রিক্সাও যদি পাওয়া
যায় ! মনে মনে নিজের উপরই বিরক্ত হয় ! ওর
আগেই বোঝা উচিত্ ছিল । এই সময়ে রিক্সা
সিএনজি কিচ্ছু পাওয়া যায় না ।
গাড়ি না নিয়ে আসাটাই ভুল হয়েছে ।
একটা সিএনজি থামল ।
আকাশ কথা বলতে যাবে ফারিয়া পিছন
থেকে ওর হাত চেপে ধরল । বলল
-সিএনজিতে যাবো না ।
-কেন ?
-যাবো না । যাবো না । যাবো না ।
আকাশ বুঝতে পারে না এই ছেলেমানুষীর
মানে কি ? আকাশ বলল
-এরকম ছেলেমানুষী কেন করছ ?
ফারিয়া মুখ কেমন করল ।
-ছেলেমানুষী কোথায় করলাম ? আর আমি
কি ছেলে নাকি ? বল মেয়েমানুষী !
আকাশ কিছু বলতে গিয়ে হেসে ফেলল ।
সিএনজিটাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
-এখন বাসায় যাবা কিভাবে ?
-বাসায় যাবো না ।
-কোথায় যাবে ?
-কোথাও যাবো না । তোমার সাথে
থাকবো ।
-আকাশের অবস্থা দেখেছ ? মেঘ ডাকছে ।
যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে ।
ফারিয়া আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে
একটু হাসল । বলল
-কই ? আমিতো দেখছি আকাশের অবস্থা
তো ভাল । শুধু একটু বিরক্ত ।
আকাশ সত্যি ভেবে পায় না এই মেয়েটা
নিয়ে কি করবে । বলল
-যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে । বাসায় যেতে
হবে না ? ড্রাইভার কে ফোন করে আসতে
বলি ?
ফারিয়া বাচ্চা মেয়ের মত চিৎকার করে
বলল
-না না না । আমি যাবো না । যাবো না ।
ফারিয়া এতো জোরে বলেছিল যে
আসেপাশে কিছু লোকজন ওদের দিকে
ফিরে তাকাল ।
-আচ্ছা ঠিক আছে । চল তোমার যা ইচ্ছা কর
। আমি কিছু বলব না । যদি বৃষ্টিতে ভিজে
জ্বর বাধাও না তখন দেখ ?
-কি দেখাবা ?
ফারিয়া খুব জোরে হাসতে লাগল । আমার
জ্বর আসলেতো আমি খুব খুশি হব ।
-কেন ? খুশি হওয়ার কি আছে ?
-আমার জ্বর আসলে তুমি সারা দিন আমার
কাছে থাকবে । আমার আসেপাশে থাকবে

আকাশ একটু রাগ করল । বলল
-এই সব কি ধরনের কথা বার্তা ? এরকম
কথাবার্তা আমার একদম পছন্দ না ।
আকাশের রাগ করাটা ফারিয়ার খুব ভাল
লাগে । ও একটু হাসল । বলল
-আমিতো জাস্ট ফান করলাম ।
-এরকম ফান আমার পছন্দ না ।
-আচ্ছা কান ধরছি । আর বলব না । এখন চল
না একটু হাটি । দেখো না কি সুন্দর
ওয়েদায় ! চল না প্লিজ ।
ফারিয়া আকাশের হাত ধরে পান্থপথের
দিকে নিয়ে গেল । এই দিকটায় একটা পার্ক
আছে । পান্থ কুঞ্জ নাম । দুজন
পান্থকুঞ্জের মধ্য দিয়ে হাটতে লাগল ।
ফারিয়া আকাশের হাত ধরে হাটছে । ওর
আজকে খুব ভাল লাগছে । আজ সকাল থেকে
ওর সব ইচ্ছা কেমন পুরন হয়ে যাচ্ছে ।
সকালবেলা ঘুম থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত
প্রত্যেকটা ঘটনা ওকে অসম্ভব আনন্দ দিচ্ছে

এখন বৃষ্টিটা নামে তাহলে ওর আনন্দের
সীমা থাকবে না । বিয়ের পর এই প্রথম ওরা
এক সাথে বের হল মুভি দেখতে ।
নাস্তার টেবিলে যখন ফারিয়া বলেছিল
রিক্সা করে যাবো আকাশ একটু অবাক
হয়েছিল তবে আপত্তি করে নি ।
রিক্সায় আসার সময় ফারিয়া সারাটা সময়
আকাশের হাত ধরে ছিল । এমন একটা ভাব
যেন ওর ভয় করছে । হাত না ধরলে ও নিচে
পরে যাবে ।
আর রিক্সায় ওর এতো কাছে বসতে পেরে ওর
বুকের মধ্যে কেমন যে একটা শিহরন হচ্ছিল ও
বলতে পরবে না ।
ওর বারবার মনে হচ্ছিল এমন করে সারাটা
জীবন যদি রিক্সায় করে কাটিয়ে দেওয়া
যেত ! ওর হাতে হাত রেখে ।
আকাশ নিজেও খানিকটা অবাক হচ্ছে
ফারিয়ার আচরন দেখে । মনে হচ্ছে
ফারিয়া একটা টিন-এজড মেয়ে । নতুন
প্রেমে পড়েছে । নতুন বয়ফ্রেন্ড কর নিয়ে
ছেলে মানুষী করছে । অবশ্য আকাশ নিজেও
এই ছেলেমানুষী টুকু উপভোগ করছে ।
সত্যি সত্যিই বৃষ্টি নেমে গেল । বৃষ্টির হাত
থেকে বাঁচার জন্য আকাশ একটা ছাউনির
দিকে হাটা দিতে দেখল যে ফারিয়া ওর
সাথে নেই । অন্য মানুষ যেখানে বৃষ্টির
হাত থেকে বাচার জন্য গাছ গাছালীর মধ্য
চলে আসছে ফারিয়া তত খোলা আকাশে
দিকে যাচ্ছে ।
আকাশ কে দারিয়ে থাকতে দেখে বলল
- ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন ?
- তোমাকে দেখছি ।
- কি দেখছো ?
- আমার পাগল বৌ টাকে দেখছি ।
ফারিয়ার কেন জানি খুব ভাল লাগল
কথাটা । আকাশ বিয়ের পর এই প্রথম ওকে
বৌ বলে ডাকলো ! হঠাৎ ফারিয়ার কি যেন
হল এই ঝুম বৃষ্টির মধ্য ফারিয়া দৌড়ে এসে
আকাশ কে জড়িয়ে ধরল । ফারিয়ার মনে হল
এমন সময় আর এমন সুযোগ হয়তো আর নাও
আসতে পারে ।
পরে হয়তো সুযোগ আসবে কিন্তু এমন সময় আর
পাবে না হয়ত !!
ফারিয়া এতো জোরে আকাশকে জড়িয়ে
ধরলো আকাশ বলল
-আমি পালিয়ে যাচ্ছি না ।
-তোমাকে আমি পালাতে দিলে তো !!
আকাশ আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু
ফারিয়া ওকে সে সুযোগ দিলো না ।
নিজের সমস্ত আবেগ দিয়ে আকাশের ঠোটে
চুম খেল ।
ফারিয়ার আর কিছু মনে হচ্ছে না । কে
দেখবে কে কি বলবে ওর এসব কিছুই খেয়াল
নাই । শুধু মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে কেবল
আকাশ আর ও আছে । আর কেউ নাই ।
ওদের দুজনের কেউ ই লক্ষ্য করলো না যে
পান্থপথ সিগনালে দাড়িয়ে থাকা গাড়ির
ভেতরের লোকজন গুলো কি অদ্ভুদ চোখে
ওদের দিকে তকিয়ে আছে !!
গাড়িতে বসে থাকা একটা বাচ্চা মেয়ে
তার মাকে জিজ্ঞেস করেই ফেলল
-আম্মু ওরা কি দুষ্ট দেখ !! তুমি সেদি
বলেছিলে না যে চু্ম, খাওয়া ভাল না । দেখ
না ওরা রাস্তার মধ্যে চুম খাচ্ছে!!!
মেয়েটির মা মেয়ে কে একটা ধমক দিলেন ।
তারপর ড্রাইভার কে বললেন গাড়ি
চালাতে ।

No comments:

Post a Comment