Saturday, November 26, 2016

.........অসম.........

.........অসম.........
১/
--রাফি,এই রাফি,রাফি রাফি রাফি রাফি
রাফি রাফি(একনাগাড়ে ডেকে যাচ্ছে
সাবিহা আপু)-বিরক্ত করছ কেন?সকালে
হলেও অন্তত ঘুমাতে দাও।--কি আমি তোরে
বিরক্ত করি?দাড়া দেখাচ্ছি।এই বলে
সাবিহা আপু আমার কান ধরে সোজা ঘুম
থেকে তুলে দিল।(প্রতিদিনই শান্তির ঘুম
এইভাবেই নষ্ট হয় )
বাংলাদেশে আত্নিয় বলতে এই খালার
বাসাই আছে।বাবা মা অস্ট্রেলিয়া
থাকেন,কিন্তু আমার ওইখানে ভাল লাগে
না,তাই গত ৪ বছর ধরে এইখানেই আছি।যদিও
বাবা মা অনেক চেষ্টা করেছেন আমাকে
নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু তারা সব ভাবেই
ব্যার্থ হলেন।সাবিহা আমার খালাতো
বোন।আমার থেকে ৩ বছর ২ মাসের বড়।
সারাদিন তার সাথে ঝগড়া লেগেই থাকে।
কিন্তু তবুও তার ব্যাপারে কেমন যেন একটা
অনুভূতি হয়।পরক্ষনেই চিন্তা করি কি
ভাবছি এইসব?
বাথরুমে ঢুক্লাম হাতে ব্রাশ নিয়ে
দাঁড়িয়ে আছি, আবার কখন যে ঘুমিয়ে
পড়লাম জানি না।চেতনা পেলাম মাথায়
গুতা খেয়ে।--কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘোড়ার
মত ঘুমাচ্ছিস বেয়াদব?
-কি আমি বেয়াদব?
--তা নইতো কি?১০ মিনিট আগে তরে ঘুম
থেকে তুলে গেলাম তুই এখনো ফ্রেশ হস
নাই???
-ঠিক আছে আমি বেয়াদব তো আমার সাথে
কথা বলছ কেন?
আপু কে রুম থেকে বের করে দিয়ে আমি রূম
লক করে দিলাম।আর কোন রকমে ব্রাশ করে
মুখ ধুয়ে বেল্কনিতে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
কিছুক্ষন পরে খেয়াল করলাম কেও একজন
আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল।
--অলে বাবা বাবুটা দেখি রাগ ও করতে
জানে!!
আমি চিন্তা করছি দরজা তো লক ছিল
তাহলে আপু ঢুকল কি ভাবে?পরক্ষনেই
খেয়াল হল আমার রুম আর স্টোর রুমে একটা
লিঙ্কড দরজা আছে,অইটা দিয়েই সাবিহা
আপু ঢুকছে।
-ছাড় আমি বাবু নই...
--তাহলে তুই বেয়াদব।
-না আমি বেয়াদব নই!!(উচ্চ স্বরে বল্লাম)
--তাহলে তুই বাবু।।
আমি আর কথা বাড়ালাম না।।
--চল না ভিষন খিধে পেয়েছে।
-তুমি এখনো নাস্তা কর নি?
--তোকে ছাড়া কখনো খেয়েছি?
-আচ্ছা ঠিক আছে।এখন ছাড় তো আমার
অস্বস্থি লাগছে?
--কি আমি জরিয়ে ধরলে তোর অস্বস্থি
লাগে?
-তুমি জান না মেয়েরা ছেলেদের জড়িয়ে
ধরলে কেন অস্বস্থি লাগে?তাও আবার
পিছন থেকে!!!
--কি তলে তলে এত পেকে গেছিস,ফাজিল!!!!
দাড়া আজ খালু ফোন করুক আমি যদি
নালিষ না করছি তবে আমার নাম নয়।
-ঠিক আছে তোমার নাম “নয়”।এখন চল আমার
ও ভিষন খিধে পেয়েছে।
২/
নাস্তা করেই পড়তে বসছি কারণ মাস
খানিক পরেই SSC পরিক্ষা।
কিছুক্ষণ পরেই ডাক দিলাম সাবিহা
ফিজিক্স এর এই পড়াটা বুঝতেছি না।
তাড়াতাড়ি আস।
পিছনে ফিরেই দেখি সাবিহা আপু তার
চোখ গুলো ছোট ছোট করে কোমরে হাত
দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
--এই পাজি তুই আমাকে কি ভাবে
ডেকেছিস?
-কিভাবে ডেকেছি?
--তুই আমার নাম ধরে ডেকেছিস কেন?
-তাতে কি হয়েছে?আল্লাহ কে সবাই নাম
ধরে ডাকতে পারে আর তুমি তো মানুষ।
--তুই তো দেখি সত্যিই বেয়াদব হইছস!!!
(রাগে ফুলছে)
-তুমি সবসময় বেয়াদব বেয়াদব কর কেন?
-তো কি আপনাকে সালাম করব?
--করবে!!!!?ধর।এই বলে আমি চেয়ার থেকে পা
দুইটা তুলে দিলাম।
-সাবিহা আপু রাগে কটমট করতে করতে এসে
দুই হাতে আমার দুই পা ধরে এক টানে
চেয়ার থেকে ফেলে দিল।আর হনহন করে
চলে যেতে লাগল।
হাত টেবিলের উপরে ছিল বলে হঠাৎ টাল
সামলাতে না পেরে মাথাটা সোজা
ফ্লোরের উপরে পড়ল।কেমন যেন চিনচিন
করে উঠল মাথাটা,ভার ভার লাগছে।তবুও
আসতে করে দাঁড়িয়ে গেলাম আর মাথার
পিছনে হাত বুলাতে লাগলাম।কিরে
মাথার পিছনটা গরম লাগছে।হাতটা তে
সামনে আনতেই দেখি সারা হাত লাল হয়ে
গেছে।করুণ কন্ঠে লম্বা করে বলে উঠলাম
সাআআআবিহাআআ্..
.......
সাবিহা আপু পিছন ফিরতেই চিৎকার দিয়ে
উঠল রাফি.........আর কিছু মনে নেই।।
চোখ খুলে দেখি আমার সামনে খালা আর
খালু দাঁড়িয়ে আছেন।পাশে তাকাতেই
দেখি চোখ ভরা পানি নিয়ে সাবিহা আপু
আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-HI SABIHA!!!!
খালাম্মা আর খালু একটু জোরেই হেসে
দিলেন।।
সাবিহা আপু আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে
কাঁদতে শুরু করল।
--ভাই আমাকে মাফ করে দে প্লিজ ,আমি
আসলে এমনটা হবে ভাবিনি।
আমি আপুকে ছোট করে বল্লাম।–সাবিহা
এখন ঐ দিনের থেকেও বেশি অস্বস্থি
লাগছে।
আপু হেসে বল্ল--ফাজিল তুই কখনো
শোধরাবি না।
৩/
পরিক্ষাটা শেষ হল।ফ্রি তাই রাত জেগে
থাকলেও সামস্যা নেই।একদিন রাতে বসে
বসে ইন্টারনেট এ ব্রাউজিং করছি এমন সময়
দেখি ছাদে কে যেন কথা বলছে।আমার
কৌতুহল জাগল।রাত প্রায় পৌনে একটা,এত
রাতে তো কারো ছাদে থাকার কথা নয়!!!!
ভুত টুত নই তো!!!!(আমি আবার এসবে ভয় পাই
না)হুম নতুন এক্সপেরিয়েন্স হবে।হাতে ছোট
একটা টর্চ নিয়ে ছাদে গেলাম।গিয়ে দেখি
সাবিহা আপু মোবাইলে কথা বলছে!!আমি
ডাক দিলাম সা...বিহা আপু!!! সাবিহা আপু
আমাকে দেখার সাথে সাথে ভুত দেখার মত
চমকে উঠল।
--রাফি?তুই এখানে কি করছিস?এখনো ঘুমাস
নি?
-না।কিন্তু তুমি কি করছ?
--কিছু না যা এখন ঘুমা গিয়ে।
আমার অবশ্য বুঝতে বাকি রইল না কি হচ্ছে।
কথাটা চিন্তা করতেই মাথাটা কেমন
যানি চক্কর দিয়ে উঠল।কেন এই চক্কর?আমি
কি আপুর প্রতি.........নাহ আর ভাবতে
পারছি না।
সকাল থেকেই কেমন জানি অস্বস্থি
লাগছে,কিছুই ভাল লাগছে না।।কেন জানি
না।
সাবিহা আপু দুপুরে খাওয়ার সময় বল্ল,
--কিরে কি হয়েছে আজ পুরোদিন এত চুপচাপ
ক্যান?
-আজকের দিনটা কেমন জানি ভাল লাগছে
না।
--চল বিকালে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি।
আমি কিছু বল্লাম না।.........শুয়
ে আছি।সাবিহা আপু আমার রুমে এসে বল্ল
--কিরে তুই এখনো রেডি হস নি?
-রেডি?কেন?
--ওমা তোকে বল্লাম না বিকালে ঘুরতে
যাব?উঠ উঠে ৫ মিনিটের মধ্যে রেডি হ।
-আচ্ছা। রেডি হয়ে একসাথে রিক্সা
উঠলাম।
--আজ তোকে একজনের সাথে মিট করাব।
-কে?
--গেলেই বুঝতে পারবি।(মিষ্টি হেসে)
একটা পার্কে এসে রিক্সা থেকে নামলাম।
দেখি একটা অডি আমাদের সামনে এসে
থামল।সেটা থেকে একটা ছেলে বের হয়ে
আসল,আর সাবিহা আপুকে বল্ল
_ কেমন আছ?
--ভাল।
_এই বুঝি রাফি?
--হ্যাঁ।
_HI.I’M RIZVI
-HI. I’M RAFI. NICE TO MEET U.
_ME TOO.(সাবিহা আপুর উদ্দেশ্যে)তো
যাওয়া যাক।
--চল।
আমরা তার গাড়িতে করে একটা
রেস্টোরেন্ট এ উঠলাম।ছেলেটার পোশাক-
আশাক আর গাড়ির অবস্থা দেখে বুঝলাম
অভিজাত পরিবারের ছেলে।
তাদের কথাবার্তা আর হাসিঠাট্টা দেখে
আমার গা কেমন জানি কাটা দিয়ে উঠল।
আর সহ্য করতে পারছিনা।
পেটে হাত দিয়েই উ করে উঠলাম।সাবিহা
আপু দেখে বল্ল।
--কিরে কি হয়েছে?
-পেট কেমন জানি ব্যাথা করছে...আউ...
--কি বলিস?
-হ্যা।আপু তুমি থাক আমি বাসায় চলে যাই।
--না তুই একা কেন যাবি?আমিও চলে যাব
চল।
_আচ্ছা আমি তোমাদের ড্রপ করে দিচ্ছি।
বাসায় এসেই রুমে ঢুকে দরজা দুইটাই বন্ধ
করে দিলাম।সাবিহা আপু এসে বলছে
--রাফি কি হয়েছে?দরজা বন্ধ করলি কেন?
ব্যাথা কি বেশি লাগছে?
-আমি ঠিক আছি,এখান থেকে যাও আর
আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
দেখলাম অই পাশ থেকে আর কোন কথা
আসল না।আমি নিজেও বুঝতে পারছি না
আমার কেন এমন হচ্ছে?কেন আমি সাবিহা
আপুকে আর কারো সাথে দেখতে পারছি
না!!!আমি কি তাহলে............না না সবসময়
আমার মাথায় এইটা কেন আসে? সাবিহা
আমার থেকে বড়।পরক্ষনেই চিন্তা করলাম
বড় বলে কি ভালবাসা মানা নাকি?এই রকম
অসম কত কাপল দেখলাম। সার্ভে করে দেখা
গেছে শুধুমাত্র এই ধরনের জোড়ায় নাকি
শতকরা ৯৮.৭ ভাগ জোড়াই শক্ত বন্ধনে
থাকে।
সাবিহার সাথে কথা কমিয়ে দিলাম।
আগের মত গুতাগুতি করতাম না।স্বাভাবিক
থাকতাম।কিন্তু সবসময়ই আড়চোখে
দেখতাম।চোখাচোখি হলে চোখ নামিয়ে
নিতাম। কয়েক সপ্তাহ পর বাবা মা আসবে
বলছে।
৪/
এরি মাঝে একদিন বিকেলে আমি ছাদে
দাড়িয়ে আছি আর দূরের লাল হয়ে যাওয়া
সূর্যটাকে দেখছি।এমন সময় সাবিহা আপু
ছাদে এল।আর আমাকে উদ্দ্যেশ্য করে বল্ল
--যে ছেলের আমার সাথে ঝগড়া না করে
একটা ঘন্টা ও কাটতো না সে গত ৩ সপ্তাহ
ধরে আমার সাথে ভাল ভাবে কথাও বলে
নি!!! কি সমস্যা তোর?সারাদিন শুধু কোনা
চোখে তাকিয়ে থাকিস আর কিছু বলিস না?
কি হয়েছে?
আমি সিচোয়েসনটা সামলে নেওয়ার জন্য
মুখে কোন রকমে হাসি এনে বল্লাম কিছু
না।আর এই বলে আমি ছাদ থেকে নেমে
যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।সাথে সাথে
সাবিহা আপু আমার হাতটা ধরে ফেল্ল।
আমি একবার তার হাতের দিকে আরেকবার
তার চোখের দিকে তাকালাম।
--কিছু একটা স্বাভাবিক নয়।কি হয়েছে
তোর?
-তুমি বুঝবে না।
--কেন বুঝব না?বল আমাকে।
-বুঝলে তুমি আমাকে এই প্রশ্নগুলো করতে
না।
--মানে?
কিছুক্ষন পরে বল্লাম
-দেখ।আমি তোমাকে অন্য কারোর সাথে
দেখতে পারি না।অন্য ছেলের সাথে কথা
বলতে দেখলেও আমার ভিষন খারাপ লাগে।
--মানে?তুই কি বোঝাতে চাস?
-আমি প্রেমে পড়েছি।
--কার?
-তোমার।
কথাটা শুনেই সাবিহা আপু হাসিতে ফেটে
পড়ল।হাসছে আর হাসছে।কিন্তু আমার
চোখের গভীর চাহনি দেখে তার হাসিতে
ছেদ পড়ল.........
--ARE YOU SERIOUS?ও আল্লাহ এই ছেলে বলে
কি?তুই তো দেখি সত্যি সত্যি পাজি
হয়েছিস!!!আমি কখনো বুঝতে পারি নি তুই
এত দূরে চলে যাবি!!!তোর মাথা আসলেই
খারাপ হয়ে গেছে!!!তোর একজন
সাইকাট্রিস্ট এর প্রয়োজন!!!(অনেকটা
আশ্চর্য আর রাগান্বিত স্বরেই বল্ল কথা
গুলা)
আমি মাথা নিচু করে চলে আসলাম।এর পর
থেকে সাবিহা আপুর সাথে আর কথা হয় নি।
অবশ্য সাবিহা আপু অনেকবার চেষ্টা
করেছিল।কিন্তু আমি এড়িয়ে গিয়েছি।
সাবিহা আপু আমার সামনে অনেক বার
খালাম্মা কেও নালিস করেছিল যে আমি
কথা বলছি না।খালাম্মা বল্ল তোদের
ব্যাপার তোরাই সামলা মাঝখানে পড়ে
আমাকে কেন টাঞ্ছিস?পরে আব্বা আম্মা
কেও নালিষ করেছিল কিন্তু কোন লাভ হয়
নি।
৫/
বাবা মা চলে আসলেন।রাতে একদিন
ডিনারের সময় আমি বল্লাম।আব্বু আমি
অস্ট্রেলিয়া চলে যাব।এই কথা শুনে তো
সবাই রিতিমত অবাক!!!কার মুখ থেকে কি
শুঞ্ছে?বাবা তো মুখে নেওয়া পানি
ফেলেই দিলেন খেতে না পেরে।
ঃ কি বলছিস?.........তুই সিরিয়াস তো?
-কেন তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমার
সাথে ফাজলামো করছি?
ঃহঠাৎ এই মত?
-কেন আমি কি যেতে পারব না?
ঃকেন যেতে পারবি না?এত দিন তো অনেক
করে বলেছি তুইই তো জাচ্ছিলি না!!আজ
হঠাৎ করে বলছিস তাই একটু অবাক হলাম।
-আমি আমার পাসপোর্ট রিনিউ করছি।
আপনাদের সাথেই আমি চলে যাব।
মা বল্ল এত তাড়া কিসের তোর রেসাল্ট টা
বের হোক তারপর আস্তে ধীরে যাবি!!
সাবিহা আপু দেখি আমার দিকে বিষ্ময়ের
সাথে তাকিয়ে আছে।আমি তার চোখের
দিকে তাকিয়েই বল্লাম,
-আমি আপনাদের সাথেই যাব ব্যাস।(বলেই
আমি উঠে গেলাম)
খাটে মাথা নিচু করে বসে আছি।হঠাৎ
জোরে দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনে সামনে
তাকালাম,দেখি সাবিহা আপু দরজায় খিল
লাগিয়ে দিয়ে আমার দিকে হনহনিয়ে
আসছে।আমি অপর পার্শে মুখ ফিরিয়ে
নিলাম।
--হঠাৎ করে তুই চলে যেতে চাচ্ছিস কেন?এই
ছেলে আমার দিকে তাকা।
-কি হয়েছে?
--এইটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয়।(চোখ দুটো
লাল হয়ে আছে)
-ইচ্ছে হল তাই।
--না নয়......
এবার হাটু গেড়ে বসে বিনয়ের সাথে বল্ল
--তুই আমার সাথে রাগ করে চলে যাচ্ছিস
না?
-আমি কেন তোমার সাথে রাগ করব?আর
আমি রাগ করলেই বা তোমার কি?
--আমি তোরে ব্যাপারটা বোঝাব।প্লিজ
ভাই আমাকে ছেড়ে যাস না,প্লিজ।
--আমি কারো ভাই নই(রেগেই বল্লাম)
সাবিহা কাদতে কাদতে চলে গেল।।
বাবা মা খালা খালু সবাই এই অবস্থা
দেখে অস্থির।সাবিহা কাদছে কেন?কেন
আমি সাবিহার সাথে কথা বলছি না?আর
কেনই বা হঠাৎ করে চলে যাওয়ার জন্য
উঠেপড়ে লাগলাম।।সবাই অনেক প্রশ্ন
করল,অনেক ভাবে বোঝাইল কিন্তু আমি
আমার সিদ্ধান্তে অটল।অবশেষে যাওয়ার
সময় এসে গেল সাবিহার চোখ থেকে পানি
পড়ছে অঝোর ধারায়।আমার চোখের
কোণেও পানি জমল কারণ জানি আমি আর
ওকে সামনাসামনি দেখব না।হয় তো
কখনোই না। গাড়িতে উঠার সময় সাবিহা
শেষ বারের মত আমার সামনে এসে
দাড়ালো আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।দু
জনের চোখেই পানি।কিন্তু মানষিক দিক
ধেকে আলাদা।আমি কোন কথা বল্লাম
না,সোজা গাড়িতে উঠে বসলাম।
৬/
পুরনো পরিবেশ,তবোও মানিয়ে নিতে সময়
লাগছে।এই ৪ বছরে বিরাট পরিবর্তন হয়েছে
এইখানের। নতুন একটা স্কুলে ভর্তি হলাম
(এইখানে ক্লাস ১২ পর্যন্ত স্কুল ধরা হয়)।
পড়াতে কিছুতেই মন বসছে না।শুধু সাবিহার
কথাই মনে হচ্ছে।আব্বা আম্মা প্রায় প্রতি
দিনই বাংলাদেশে ফোন দেন।
বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক কিছুটা উন্নত
হয়েছে বলে এখন সরাসরিই ভিডিও কল করা
যায়।সাবিহা যতবার ই মোবাইলের সামনে
এসেছে ততবারি আমি সরে গেছি।বাবা-মা
আর খালাম্মা অনেক ভাবে আমাদের
মাঝে কথা বলানোর চেষ্টা করেছেন।কিন্তু
আমি তাকে দেখলেই সরে পড়তাম।
মা একদিন জিজ্ঞাসা করেই বসলেন।কিরে
তুই সাবিহার সাথে অইরকম আচরন করিস
কেন?মেয়েটা তোর সাথে কথা বলার জন্য
কত কিছুই না করছে!!!কি হয়েছে আমাকে
বল!!!
-মা আমি সাবিহাকে পছন্দ করি।
মাঃ কি বলছিস এসব?
(এইখানে এই ব্যাপারগুলা নিয়ে কেও এত
ভাবে না।বয়স কোন ব্যাপার না মনের মিল
হলেই হল।কিন্তু আমাদের দেশের সমাজ
তো এই ব্যাপারগুলা ভালভাবে মেনে নেয়
না।তাই মায়ের মুখে প্রশ্ন)
মাঃসাবিহা জানে?
আমিঃহ্যা।কিন্তু ওর আরেকজনের সাথে
রিলেশন আছে।
মাঃআমার মনে হয় না তোর এই জায়গায়
কিছু করার আছে।মনের ব্যাপারে কখনো
জোর করা যায় না।
আমিঃহুম......
৭/
স্কুল থেকে পাশ করে বের হয়েছি।এইখানে
এত বন্ধু বান্ধব থাকা সত্তেও ভাল লাগছে
না।ভেকেশনটা বাংলাদেশে কাটিয়ে
আসলে কেমন হয়?হুম বাংলাদেশেই যাব
তবে খালাম্মাদের বাসায় নয়।বাসা ভাড়া
নিব।
মাকে বল্লাম ব্যাপারটা।মা বল্ল,আমি আর
এই কথাটা তোকে বলতে চাচ্ছি।যা ঘুরে
আয়।
-আমি কিন্তু খালাম্মাদের বাসায় উঠছি
না।অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকব।
কাপড় চোপড় গুছিয়ে রওনা দিলাম।
এই জায়গাগুলাতে বাসা ভাড়া নেওয়াও
অসুবিধা জনক। চেয়েছিলাম কম দামি একটা
রুম নিয়ে মাসটা কাটিয়ে দিব।কিন্তু
আসার সাথে সাথেই বাসা ঠিক করতে
হচ্ছে।অগত্যা বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও
বাসা একটা নিলাম।আমি একজনের জন্য
গোটা অর্ধেক ফ্ল্যাট!!নিজেই অবাক হচ্ছি।
অবশ্য বাসা ভালই ৪ টা বেড সাথে বেল্কনি
গুলা আমার খুভ পছন্দ হয়েছে।
আম্মা ফোন দিল।।মা ভাল আছ?
ঃভাল পৌছেছিস তুই?
-হ্যা।রুম না পেয়ে অগত্যা একটা ফ্লেটেই
উঠতে হল।তবে ফ্ল্যাট থেকে বাইরের
ভিউটা দারুন ,এই দেখ!!
ঃহুম ।ভাল হয়েছে।আচ্ছা জার্নি করেছিস
এবার রেস্ট নে।বাইরে আছিস আবার
উলটাপালটা কিছু খাইছ না আবার অসুস্থ
হয়ে পড়বি।তোর খালাম্মার বাসায় উঠলা
কি হত?আমাকে আর তোকে নিয়ে চিন্তা
করতে হত না।
-বাদ দাও ।আমি ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া
করব চিন্তা কর না।আচ্ছা মা কাল কথা হবে
আমার টায়ার্ড লাগছে।বাই
সাবিহা কে দেখার জন্য মন কাচুমাচু করছে।
তাই পরের দিন সাবিহার ভারসিটিতে
গেলাম,তবে নিজেকে যথা সম্ভব ঢেকে
রেখে।ও দেখলে আবার ঝামেলায় পড়ব।সেই
দিন তার খোজ পাই নি পরের দুই দিন ও
অনেক খুজেছি পাই নি।খালাম্মাদের
বাসায় যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু সাহস হয়
নি।তাদের বলিও নি যে আমি
বাংলাদেশে আসছি।
৮/
৪র্থ দিন আর যায় নি।মনে হল আর বোধহয়
তাকে দেখব না। দুপুরের দিকে খাওয়ার
জন্য বের হব এমন সময় বেল বেজে উঠল।
আশ্চর্জ হলাম,এইটা আবার কে?মনে হয়
ফ্ল্যাট ভুল করেছে।
দরজা খুললাম দেখি মুখ বাধা একটা মেয়ে
দাঁড়িয়ে আছে।
জি কাকে চা্......(চোখ দেখে কথা আটকে
গেল।চোখ জোড়া চেনা চেনা লাগছে)
আমার হার্ট বিট বেড়ে গেল...
মেয়েটা তার মুখ উন্মুক্ত করার সাথে সাথে
আমি নির্বাক হয়ে গেলাম...
সাবিহা আ...(সাথে সাথে মুখটা হাত
দিয়ে চেপে ধরল)
--খবরদার আপু বল্বা তো।
-তুমি এইখানে কি ভাবে?ফ্ল্যাটের
ঠিকানা পেলে কিভাবে? আমি দেশে
আসছি এইটা তোমাকে কে বল্ল?(একগাদা
প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম তার দিকে)
--তুমি কেন আমার সাথে কথা বলনি?তুমি
যান আমি কত কষ্টে ছিলাম?একবার ও
আমাএ কথা ভেবেছ আমি কিভাবে থাকব?
(এই মাত্র খেয়াল করলাম তার কথার ধরনে
কি যেন পরিবর্তন হয়েছে!!)
-আচ্ছা আগে ভিতরে আস,তারপর যা বলার
বলো
ও ভিতরে এসে সোফায় বসে বল্ল এইটা
আমার প্রশ্নের উত্তর নয়
-এইগুলাও আমার প্রশ্নেরও উত্তর নয়।
--খালাম্মা বলেছিল তুমি দেশে আসছ আর
ঠিকানাটাও দিয়েছে।তুমি জান গত ৩ দিন
ধরে তোমার খুজে এইখানে এসেছি কিন্তু
তোমাকে পাই নি,রুমে তালা মারা ছিল।
(এই জন্য আম্মা বার বার আমার ঠিকানা
ঠিক আছে কিনা জিজ্ঞেস করছিল)
-আচ্ছা তোমার খবর বল।রিজভি ভাইএর কি
খবর?
--কোন রিজবির কথা বলছ?
-ভালই মজা করতে পার দেখছি। অই যে
একবার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলা না!!!
--তুমি চলে যাওয়ার পর আমি তার সাথে
ব্রেক আপ করে ফেলেছি।
-কেন????
সাবিহা আমার দিকে একদৃস্টিতে তাকিয়ে
আছে।
--তুমি আমায় ভালবাস না?(প্রশ্নটা শুনেই
হতভম্ব হয়ে পড়লাম)
-আমি সাইকাট্রিস্ট দেখিয়ে নিয়েছি......
কথাটা শুনেই সাবিহা মাথা নিচের দিকে
করে ফেল্ল দেখলাম ওর চোখ থেকে
ফোয়ারার মত পানি পড়ছে।মেয়েটার
কান্না দেখে বুকের বাম পাশটা ব্যাথা
করছে।নিজেকে কেমন জানি অপরাধি মনে
হচ্ছে।
আমি সাবিহার সামনে গিয়ে দাড়ালাম
আর ওর মুখটা হাতে ধরে তোলার সাথে
সাথে ও দাঁড়িয়ে গিয়ে আমাকে জডিয়ে
ধরল আর ছোট বাচ্চার মত শব্দ করে কান্না
শুরু করে দিল।
--I’M SORRY আমি আর কখনো তোমার সাথে
এই রকম করব না PLEASE FORGIVE ME,PLEASE
PLEASE PLEASE………….আমাকে...মাফ...করে
দাও।(এবার খুভ জোরে সোরেই কাঁদছে
মেয়েটা)
সাবিহার কান্নায় আমার ও চোখ ছলছল
করছে।(সত্যিই কি সাবিহাকে পেলাম?)
এবার ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।আর
কানে কানে বল্লাম
-নাম ধরে ডাকলে বেয়াদব বলবে না তো?
--কক্ষনো না.........
-সালাম করার সময় পা ধরে হেচকা টান
দিবে না তো?
মেয়েটা এবার হেসেই দিল আর লজ্জায়
আমার বুকে মুখ লুকিয়ে বল্ল
--উহুম............

...প্রকৃত ভালবাসার কাছে “অসম” এর অ টা
খুভই নগন্য...

No comments:

Post a Comment