Wednesday, November 16, 2016

``আমার বিয়ে এবং আমি``

``আমার বিয়ে এবং আমি``
~~(রম্য গল্প)~~
.
- - -
খুব সকালে এলার্ম
দিয়ে রেখেও ঘুম
ভাঙ্গেনা আমার।
কমপক্ষে দশ'টা বাজে
ঘুম থেকে উঠতে। তবুও
উঠতাম না যদি
প্রতিদিন ফোন করে
আমার জাদুনিটা
রাগারাগি না করতো।
আজও তেমন সকাল
ন'টায় কানের কাছের
মোবাইলটা বিকট
উত্তেজনায় কাপঁতে
থাকে। ফোনটা হাতে
নিয়ে দেখি ইংরেজী
বড় হরফে 'JADUNi'
নামটা ভাসছে।
অনিচ্ছা সত্তেও
ফোনটা ধরলাম।

- এই তুই কই রে?
(জাদুনি)
,
> কম্বলের নিচে।
,
- ওফফ। এখনও!! তোকে
না কাল রাতে বলছি
আজ তাড়াতাড়ি
উঠতে।
,
> আমার জন্য
এখনোতো রাত, সকাল
হলেই উঠে যাবো।
,
- শোন, আমি
সিরিয়াস। একা একা
দাড়িয়ে আছি।
,
> তুই ১ মিনিট দাড়া
আমি ২ মিনিটে
আসতেছি।
,
- দেখ, এবার কিন্তু
রেগে যাচ্ছি।
,
> আগে চুমু দে, পরে রাগ
করিস।
,
- ফইন্নি তুই
আসবিইইই?
,
>চুমু দে।
..
টুট টুট।
ওপাশ থেকে লাইনটা
কেটে দিলো আভা। হুম
আমার জাদুনির নাম
আভা। খুব জেদী মেয়ে।
রেগে গেলে অনেক
কিছুই করে ফেলে।
কিন্তু রাগগুলো বেশি
আমার উপরই করে।
.
আমরা খুব ভালো বন্ধু।
আমি ওকে প্রতিদিন
বলি "জাদুনি তোরে
ভালোবাসি বা বিয়া
করমু" কিন্তু ও
সবসময় হাসির মধ্যেই
উড়িয়ে দিতো। আমার
সবসময় ইচ্ছে ওর
হাসি দেখতে। কিন্তু
মেয়েটা সেই সুযোগ
দেয়না।
.
এসব ভাবতে ভাবতেই
পার্কে পৌঁছে গেলাম।
মেয়েটা এখনও একই
জায়গায় বসে আছে।
বুঝা যাচ্ছে মেয়েটা
বসে বসে কাদঁছে।
.
> জাদুনিটা কাঁদে কেন?
,
- (....)
,
> এইযে কাঁদছিস কেন?
,
- (....)
,
> আচ্ছা বাবা, সরি।
এই দেখ কান ধরছি।
,
- কানে ধরলি ক্যান।
,
> তুই হাসার জন্য।
তোর মুখটা কাঁদার
জন্য না, ওটা হাসিতেই
পারফেক্ট।
,
- এখন থেকে আর
হাসবো না, শুধু কাদঁবো।
,
> কাঁদিস না বেশি,
সর্দি হবে।
,
- ধ্যাত। যদি একটা
গাছের সাথেও কথা
বলতাম তাহলে সেও
আমার কষ্টটা বুঝতো।
,
> ওইইই দেখা যায়
তালগাছ।
,
- ফইন্নি, তুই আর
একটা কথাও বলবিনা,
আমি তোর জাদুনি না।
,
> সরি সরি। দেখ
জাদুনি কান ধরে উঠ-
বস করছি। এবার বল
কি হয়েছে?
,
- বাদ দে। তুই শুনবি না।
,
> না না আমি শুনবো,
প্লিজ।
,
- আসলে, ঘর থেকে
আমার জন্য পাত্র
দেখা শুরু করেছে।
আব্বু অসুস্থ, তাই
তাড়াতাড়িই আমার
বিয়েটা দিতে চাইছেন।
,,
কথাটা শুনেই খুব খারাপ
লাগলো। আমি কিছু
বলতেই পারলাম না।
কিছু বলতে ইচ্ছে
হচ্ছিলো কিন্তু মুখ
দিয়ে আসছেনা। মনে
হচ্ছে খুব দামী
জিনিসটা হারাচ্ছি।
,,
- আমি তোকে ছাড়া
এক মুহুর্তো থাকতে
পারবো না, জাদু। (আভা)
,
> আচ্ছা তোর বিয়ের
পর কি আমাদের আর
ঝগড়া হবেনা? তুই
আমাকে আর ঘুম থেকে
ডেকে দিবিনা, তাই না?
,
- মানে?
,
> নাহ। কিছুনা।
(দীর্ঘশ্বাস)
,
- আমি তোর জাদুনি
হয়ে থাকতে চাই
সারাজীবন। তুই রাখবি
আমাকে?
,
> হুম। তোর হাসিটা
সারাজীবন নিজের
কাছে রাখতে চাই।
,
- তাহলে তোর মা-
বাবাকে বল, আমার
কথা।
,
> মানেএএএ (অবাক)
,
- মানে, তুই বাসায় গিয়ে
বলবি আমাকে বিয়ে
করতে চাস?
,
> আআ...আমার এত
সাহস নেই।
,
- ফিটার খা। এত বড়
কোন ছেলেকে ভয়
পেতে শুনেছিস।
,
> আমি যে পাই।
,
- আমি কিছু বুঝি না।
তুই গিয়ে আমার কথা
বলবি। তানাহলে
আমি...
,
> ওকে ওকে বলবো।
,
- আমাকে ছুঁয়ে প্রমিস
কর?
,
> এই নে, তোর
লিপ্সটিক ছুয়ে
প্রমিস করছি।
,
- আব্বার!! একটুতো
সিরিয়াসলি নে।
,
> সিরিয়াসলি বলছি,
একটু লিপ্সটিক
খাইতে দে।
,
- যা ভাগ!!

আমার উত্তর না
শুনেই উঠে হাটঁতে
লাগলো আভা। তারপর
ওকে বাসায় পৌছেঁ দিয়ে
আসলাম।
.
আজ দু'দিন হল আভার
ব্যপারে বাসায় কিছুই
বলতে পারিনি।
আজকে না বলে না
পারলে কপালে
নিশ্চিত দুঃখ আছে।
কিভাবে নিজের
বিয়ের কথা বলবো
বুঝতে পারছিনা।
.
হঠাত্ মাথায় একটা
বুদ্ধি এলো দুপুরের
দিকে করাত নিয়ে
নিজের খাট মাঝামাঝি
কাটতে লাগলাম। হঠাত্
আওয়াজ শুনে মা দৌড়ে
এলো,
.
- কিরে এসব কি
করছিস?
,
> খাট কাটছি।
,
- কেন? কিহল?
,
> আর ধুর। এত বড়
খাটে কি একা একা
থাকা যায়।
,
- খাট কাটার দরকার
নেই, তোকে ছোট খাট
এনে দিবো (একটু হাসি
নিয়ে)
,
> না। আমি কাটা কাটা
জিনিসে থাকবো।
এরপরে সোফা,
আলমারী কাটবো।
,
- দাড়া তোর বাবা
বাসায় আছে আমি
ডাকি? তোর সমস্যা
তুই বুঝিয়ে বল। এই
বলে মা ডাকতে শুরু
করলো।

আর বাসায় কে থাকে?
এক দৌড়ে অনেকদূর
চলে এসেছি।
রাতে বাসায় যেতেই
ভাবী বলে উঠলো,
সুজয় এত ছোট খাটে
দুজনে কিভাবে
থাকবি?
.
আমি কিছু না বল চলে
আসলাম। বাসার সবাই
ব্যপারাটা জানে।
লজ্জায় আর বাথরুমেও
যেতে পারলাম না, এক
নম্বর কাজটা (হিসু)
জানলা দিয়ে সেরে
দিয়েছি। তারপর রাতে
না খেয়েই ঘুমিয়ে
গেলাম।
.
সকাল নতুন একটা
স্পর্শে ঘুমটা ভেঙ্গে
গেলো। চোখ খুলে দেখি
আভা আমার পাশে বসে
আছে।
.
> ওই তুই এখানে কেন?
,
- তোর বড় খাট থেকে
অর্ধেকটা ভাগ নিতে
এসেছি (লজ্জা)
,
> খাটের ভাগ পরে নিস,
এখন তাড়াতাড়ি খাটের
নিচে লুকিয়ে যা।
,
- মানে? (মুখ ভরা
বিস্ময়)
,
- আরে এত কথা বলিস
কেন? বাবা যদি তোকে
দেখে ফেলে এক কোপে
আমি আরেক কোপে
তুই দুজনেরই হ্যাপি
এনডিং।

আমার কথা শুনেই
আভা হেসে দিলো।
বাইরে থেকে অনেক
আওয়াজ আসছিলো,
তাই বাইরে গেলাম।
গিয়ে অপ্রস্তুত কিছু
দেখি, ওর বাবা মা আর
আমার বাবা মা হেসে
হেসে কথা বলছে।
আর বুঝতে বাকী
রইলো না। পিছনে দেখি
আভা হাসছে।
আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে
বিছানায় ফেলে ওর এত
লিপ্সটিকে হামলা
করলাম। ও বারণ
করছে, কিন্তু কে শুনে
কার কথা??
.
ও একটু ছাড়া পেয়ে
বলছে, জাদু এত খুশি
হয়ে লাভ নেই, তোমার
চাকরী না হওয়া
পর্যন্ত্য আমাদের
বিয়ে হচ্ছেনা।
.
কথাটা শুনে মনটা
খারাপ হয়ে গেলো, মনে
হয় এই জীবনে
কোলবালিশকেই বড়
খাটের ভাগ দিতে
হবে।।।

No comments:

Post a Comment