Thursday, July 21, 2016

___স্নিগ্ধিত আকাশ___ (1st part)

___স্নিগ্ধিত আকাশ___
(1st part)
===
পাত্রী দেখতে এসেছি,।
তাই বলে এই না যে, আমি এই বিয়েতে রাজী!!
.
আমার এই বিয়েটা করার ইচ্ছে নেই।। সবে মাত্র
M.B.A পড়ছি,,, এখনই বিয়ে!!!
নিজেকে নিজের পায়ে'ই প্রতিষ্ঠা করতে পারলাম
না, আর এদিকে আরেক জনকে আবার নিজের
মাথায় নিতে হবে।..
.
আর বাবা মা'র ই বা কি হলো, আমাকে এখনই কেন
যে বিয়ে দিতে চাচ্ছে!!!
ধ্যাৎৎৎ!!!
.
.
আচ্ছা আপনারা কি ভাবছেন,,,
আমি প্রেম করি??
আমার লাভার আছে??
আর এই কারণেই আমি এই বিয়েতে রাজি না??
,
আরে না, না... আপনারা যা ভাবছেন তা পুরোটাই
ভুল।..
আমি এমনিতেই স্কুল থেকে এই পর্যন্ত
মেয়েদের সাথে কমই মিশেছি।.
আমি নিজেই বলি, আমার মাঝে কোন
রোমান্টিকতা নেই.. তেমন কারো সাথে
মিশতেও পারিনা।।
.
তো আমার মত এমন গো-বড়া মানুষের সাথে
কে'ই বা গায়ে পড়ে প্রেম করতে আসবে,,
শুনি!??
.
.
আর আমার কাছে বিয়ে মানে অর্ধেক জীবন
শেষ হয়ে যাওয়া।
এই যেমন, মানুষ বলে না যে,"বিয়ে মানে নতুন
জীবনে প্রবেশ করা।।"
তো, শুধু শুধু পুরাতন জীবনটাকে এভাবে বিসর্জন
দেয়ার মানেটাই বা কি!!
এই জীবনেই অনেক সুখী আমি।।
.
আর বিবাহিত জীবন মানেই 'পরাধীনতা'!
তো, কোন প্যারায় আমি আমার এই স্বাধীন
জীবনটা ছেড়ে পরাধীন হতে যাব, শুনি!!!
.
যাকগে! ওসব আজাইরা প্যাচাল বাদ।!
যারা সিংগেল আছেন তারা তো খুব সুখেই আছে..
আর যারা ইতিমধ্যে ডবল হয়ে গেছেন,,,,,
তাদেরকে কিছু বলে আর কষ্ট বাড়ালাম না!!
.
পাত্রীকে দেখতে আমার সাথে আব্বু, আম্মু
আর আমার ফুফাত বোনটা ও এসেছে।
তারা ঠিকই করে এসেছে যে, আজই ফাইনাল
কথাবার্তা সেরে যাবে।।
আমাকে শুধু মেয়েটাকে দেখানোর জন্যই
এনেছে।।
.
প্রাথমিক কথাবার্তা হয়ে গেল। এখন আমাকে
মেয়ে দেখাতে নিয়ে যাবে।।
সারাজীবন দেখে আসলাম মেয়ে সবার সামনে
আসে,,,,
আর এখন দেখছি আমাকেই মেয়ের সামনে
যেতে হচ্ছে।।
,
কি আর করার!! এখন সবজায়গাতেই নারীদের
রাজত্ব।। তারা যা বলেবে তাই!!
.
যাকগে!! ওসব বলে লাভ নেই। মেয়ের খালাত
বোন এসে আমাকে মেয়ের রুমে নিয়ে
চলল...
হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিল আর আমার দিকে তাকিয়ে
মুচকি মুচকি হাসছিল।।
ভাব দেখে মনে হচ্ছিল যে,, আমি বোধহয়
বিয়েই করে ফেলেছি..
আর উনি আমার শালী হিসেবে ঘোষিত হয়ে
গেছেন ইতিমধ্যে!!
.
এমনিতেই লজ্জায় আছি তার মাঝে মেয়েটার এমন
আচরণে অস্বস্তিতেই পড়ে গেলাম।।
.
যাই হোক! অনেক চড়াই উৎরাই করে পাত্রীর
রুমে র্পৌছালাম। মেয়েটা আমাকে রুমটা দেখিয়ে
দিয়ে একটা চোখ মেরে চলে গেল......
.
টাস্কি খেয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম বলতে পারব
না!!
সম্বিত ফিরে আসতেই মনে মনে চিন্তা করতে
লাগলাম,,, "আচ্ছা! আমি কাকে বিয়ে করছি!! এই
মেয়েই নয়তো আবার!!
যেই চোখটা মারল, ভাবে তো মনে হলো
ও'ই আমার হবু বউ!!"
.
অবশেষে দুরু দুরু বুক নিয়ে দরজাটা খুললাম।।
ছোট ছোট পা ফেলে রুমে ঢুকলাম।।
চারিদিকে কয়েকবার তাকালাম....
নাহ!! কাউকেই তো দেখছি না।।
.
ভাবলাম, হয়ত কোথাও গেছে।
মেয়েটাও হয়ত আমার মত লজ্জায় আছে।।
হি.হি.হি. তার মানে মেয়েটাও ভীতু!!
যাক! এখন একটু সাহস পেলাম বুকে।।
.
৩০ মিনিট হয়ে গেল।
কিন্তু এখনও কারো কোন সাড়া শব্দ পেলাম না...
আচ্ছা! টয়লেটে গেল না তো আবার!!
কিন্তু তাই বলে এত লেট?!
.
এই মেয়ে যদি এখনই এত অলস হয়,,
তবে আল্লাহই জানে, ওনাকে বিয়ে করলে
বিয়ের পর জানি কি করে!!
.
এসব ভাবতেই আবার বিয়ের অপকারিতাগুলো মনে
পড়ে গেল।।
ধ্যাৎ!!
অসময়ে এসব প্যারাময় চিন্তা মাথায় আসার কোন
মানে হলো নাকি!!
.
যাক! অবশেষে অনেক কষ্ট করে এসব আজাইরা
চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ফেলে দিতে সক্ষম
হলাম।।
.
আপতত একটু কৌতুহুলী হয়েই টয়লেটের
উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।..
___ টয়লেটের সামনে গিয়ে দরজার দিকে
ভালোভাবে তাকাতেই হতবাক হয়ে গেলাম,,,,
দরজা বাহির থেকে বন্ধ।।
অর্থ্যাৎ টয়লেটে কেউ নেই।।
.
তার মানে কি ঘরে কেউ নেই??
কিন্তু ওই মেয়েটা যে আমাকে এই ঘরেই
রেখে গেল!!
আচ্ছা, মজা করার জন্য আবার ভুল রুমে রেখে
গেল না তো আবার!!!
.
ধ্যাৎৎৎ! ওসব চুলোয় যাক!!
এখন চুপচাপ বসে থাকাটাই শ্রেয়।
.
.
হঠাৎ আমার কেমন জানি ভয় ভয় লাগতে শুরু করল।।
কোন এক অজানা আশঙ্কায় আমি শিহরিত হচ্ছিলাম।।
আমার কেন জানি মনে হলো, 'মেয়েটাও হয়ত
আমার মতই'।
অর্থ্যাৎ, বিয়ে করতে চাচ্ছে না!!
.
তবে হয়ত ওর কারণ আর আমার কারণ এক না!!
ওর হয়ত লাভার আছে.. কাউকে ভালোবাসে...
তাই সে এই বিয়েটা করতে চাচ্ছে না..
আর তাই হয়ত সে পালিয়েছে..
.
রুমের মাঝে পায়চারী করতে লাগলাম...
রুমটা অনেক বড়. আর খুব সুন্দর করে সাজানো
গোছানো।।
.
বারান্দার দিকে চোখ পড়তেই বাংলা সিনেমার কথা
মনে পড়ে গেল...
'নায়িকার বারান্দা দিয়ে নিচে নেমে সোজা
নায়কের কাছে চলে যাওয়া।'
তো.. হয়ত বারান্দা দিয়ে আমার নায়িকাও পালিয়েছে,,
.
এসব ভেবে হাঁটতে হাঁটতে বারান্দায় চলে এলাম।
মিষ্টি হিমেল বাতাস বইছে,,
বাতাসে একটা মিষ্টি গন্ধও ভেসে আসছে।।
মন অনেকটা ফ্রেশ হয়ে গেল।
.
বারান্দাটার ডান কোণায় হঠাৎ চোখ পড়ল আমার।।
আমি হতচকিয়ে উঠলাম..
সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল আমার।।
এমন দৃশ্য দেখব, তা জীবনেও ভাবিনি আমি।।
.
দেখলাম,
একটা মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে।।
তার মানে, মেয়েটা বিয়েতে রাজী নয় আর তাও
তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে!??
আর তাই সে ফাঁস নিয়েছে???
.
আমি এই দৃশ্য দেখে আর ঠিক থাকতে পারলাম না.
চিৎকার করে উঠলাম..
কিন্তু কেন যেন কোন শব্দ হলো না..
আমি আরো হতভম্ব হয়ে গেলাম..
.
ভালোভাবে অনুভব করতেই বুঝলাম,
একটা কোমল হাত আমার মুখ চেপে
রেখেছে।
এমন হাত সাধারণত মেয়েদেরই হয়।।
.
হাতটা কেমন যেন লাগল.,
মনে হল, অনেকদিনের চেনা এই হাত!!
.
কানে কানে ফিসফিসিয়ে পেছনের ছায়াময়ীটি
বলে উঠল,.,
"যা বলব সব চুপচাপ শুনবে!
এটা কোন মেয়ের গলায় ফাঁস দেয়ার দৃশ্য না। এটা
একটা ম্যাকিনিকি। নাটক!!
তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য নাটকটা সাজানো
হয়েছে।।
একটু উল্টো পাল্টা করবে তো,,,,,,,হুম,,,
এরকম আরো হার্টআট্যাক হতে বেশীক্ষণ
লাগবে না।।"
.
আমি কোনমতে ইঙ্গিতে সম্মতি বুঝিয়ে দিলাম..
অবশেষে মুখটা ছাড়ল কোমল হাতটি।।
পেছনে ফিরতেই সত্যিই আরেকবার হার্টআট্যাক
হবার দশা হলো আমার।।
,
এবার মুখ খোলা থাকা সত্ত্বেও গলা দিয়ে যেন
আর আওয়াজ বেরোতে চাইল না আমার।।।
.
.
চলবে_____,,,,,,

No comments:

Post a Comment