Thursday, July 21, 2016

★★★আমার মায়াবতী★★★(ডিসুম

★★★আমার মায়াবতী★★★(ডিসুম)

-তোর নামটা কে রেখেছিল বলতো?
-কেন আমার নাম আবার কি দোষ করল।
-অনেক অসুবিধা তোর নামে।
-কেন বলবি তো।
-তোর নাম মায়া তাইতো?
-হ্যা কেন?
-তোর মনে একটুও মায়া আছে?
-আছে তো।
-হ্যা সে তো দেখতেই পাচ্ছি।
-কি দেখতে পাচ্ছিস?
-সুমিকে মেরেছিস কেন?
-মেরেছি বেশ করেছি আরও মারব।
-তুই কি ডাকাত না সন্ত্রাসী?
-সন্ত্রাসী না সন্ত্রাসীনি।
-কি সাংঘাতিক মেয়েরে তুই?
-সাংঘাতিকের কি দেখেছিস যেদিন তোর নাকটা
ফাটিয়ে দিব সেদিন বুঝবি।
-নাহ রে দরকার নেই।
-ভয় পেয়ে গেলি?
-হুম অনেক।তো সুমিকে মারলি কেন?
-ও অনেক ফালতু কথা বলে।
-কি এমন ফালতু কথা বলল শুনি তোকে?
-বলেছে ও নাকি তোর সাথে প্রেম করবে।
-ওয়াও।তুই কি রে মায়া দেখছিস আমার কপাল
খুলেছে আর তোর সহ্য হল না।
-না হল না।
-কেন?
-ওই মেয়ের সাথে তুই প্রেম করতে পারবি না।
-কেন পারব না বলবি তো।
-ও একটা পেত্নি তাছাড়া ও অন্য ছেলেদের সাথে
টাংকি মারে।
-তবুও প্রথম প্রেমটা তুই এভাবে ভেস্তে দিলি।
-হ্যা দিয়েছি বেশ করেছি।আরেকটা কথা বল তুই
তোর নাক ফাটিয়ে দিব।
-কেন?
-ওই পেত্নির নাম দ্বিতীয়বার উচ্চারন করবিনা।
-আচ্ছা করব না কিন্তু একটা ভাল মেয়ে তোকে
গুছিয়ে দিতে হবে।
-কেন মেয়ে দিয়ে কি করবি?
-প্রেম করব।
-কিইইই?
-প্রেম করব শুনিস নি।
-নে তোর প্রেম করার স্বাদ আমি বের করছি।
(ঢুশ করে ঘুশি ঝেড়ে দিল)
-মা মা করতে করতে নাক চেপে ধরলাম।
-এই উঠ উঠ বলছি লেগেছে খুব?
-হুম।
-আরেকটা দেই?
-মাফ কর।
-ক্লাসে রাজিয়ার দিকে তাকাবিনা?
-এ জন্মে না।
-নিপা কে চিঠি লিখে কে?
-আমি।
-আর লিখবি?
-মরার পরে।
-কিইই।
-বেঁচে থাকতে না।
-আজ থেকে কার দিকে তাকাবি শুধু?
-তোর দিকে?
-কে তোর বউ হবে?
-তুই।
-তুই মানে?
-তুমি।
-হুম।কাল থেকে একসাথে টিফিন করব।
-হুম।
-পড়া না পারলে কাকে বলবি?
-তোকে?
-প্রত্যেকদিন বিকেলে আমাকে ঘুরতে নিয়ে
যাবে কে?
-আমি।
-দেখি নাকটা রক্ত পড়ছে নাকি?
-নাহ কিছুনা দেখা লাগবে না।
-দেখাতে বলছি তোকে।
-দেখাচ্ছি তো।
-ইসস লাল হয়ে গেছে তো।
-হুম।(চোখ দিয়ে পানি পড়ছে)
-এই বস তো এখানে?
-কেন?
-যা বলছি তাই কর।
-ওকে।
-আ ফু উ উ উ উ...
-এত জোরে ফু দিস না উড়ে যাব।
-চুপ করবি তুই।
-করেছি।
-কিছুক্ষন নরম আঙুলগুলো দিয়ে মেসেজ করে
দিল।
-এখন কেমন লাগছে?
-খুব ভাল।
-দেখতে হবেনা মিস মায়ার হাতে কত জাদু।
-সে তো দেখতেই পাচ্ছি।(বিড়বিড় করে বললাম)
-কি বললি?
-কিছুনা তো।
-হুম চল।
-হুম।
.
রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন এভাবে স্কুল থেকে বাসায়
ফিরি।প্রতিদিনের ক্লাসের কর্মকান্ড সি সি ক্যামেরার
মত রেকর্ড করবে।এই যেমন আমি কার সাথে
কথা বলি,কোথায় যাই ইত্যাদি।তো আজকের মত
ঘুষি আগে কখনও খাইনি।ক্লাস সেভেনে এবার
আমি ও সিক্সে।এক ইয়ার ডিফারেন্স হলে কি হবে
সকল খবর চলে যায় ওর কানে।নিজের ক্লাস ঠিকমত
না করলেও আমার ক্লাসের আশেপাশে ঘুর ঘুর
করবে।প্রথম দিন থেকেই জ্বলছি।যেদিন আব্বু
বদলি হয়ে এখানে এসেছিল সেদিনই ওদের
সাথে পরিচয়।পরিচয় না হয়ে উপায় আছে।বাড়িওয়ালার
মেয়ে বলে কথা।আমাদের রুমে ওর আম্মু
সাথে এসে সে কি পাকনা বুড়ির মত কথা।এইটা
ওখানে রাখ ওইটা এখানে রাখ।কোমরে হাত
বেঁধে এদিক ওদিক করতে করতে পা পিছলে
ধপাস।আমি হো হো করে হেসে দিলাম।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমার হাসি থেমে
গেল।ধুমমমম।পেট চেপে ধরলাম।রাগে
ফুঁসতে ফুঁসতে এসে আমার পেটে ঘুষি দিল।
আব্বু আম্মু শুধু হেসেছিল এটা দেখে।সেদিনই
মনে মনে বুঝতে পেরেছিলাম এ জ্বালায়
জ্বলতে হবে বিনা সংকোচে।এখনো জ্বলে
যাচ্ছি।ক্লাস সিক্সে পড়ে এত কৌতুহল জাগার পিছনে
অনেক কারন।সারাদিন সময় পেলে হিন্দী সিনেমা
দেখবে।প্রেম বুঝুক আর না বুঝুক ও আমার বউ।
তাইতো সুমি ওর সাথেই পড়ে আমার সাথে
প্রেম করতে চেয়েছে।ক্লাসের মাঝে ঝগড়া
সুরু করেছে তারপর মারামারি।প্রধান শিক্ষকের
কাছে বেতের বাড়ি খেয়েও একটু কাঁদেনি
মেয়েটা।সেই রাগটা বোধহয় আমার নাকের উপর
ঝাড়ল মেয়েটা।যাই হোক সারাপথ আর কোন কথা
না বলেই চুপ চাপ হেটে বাসায় এসেছি।।
.
দশ বছর পর.......
জানালার পাশে বসে আছি।আকাশটা দেখছি।মনটা
একটু খারাপ।তারপরও একটু খুশি খুশি লাগছে।সেই
দিনের সেই মায়া আজ হারিয়ে গেছে।আজ যে
মায়া আমার কাছে আছে সে আগের মত আর
ঝগড়া করতে জানেনা।আমি যখন এইচ এস সি দিয়েছি
আমাদের বাসায় গুজব ছড়িয়ে দিল আমরা নাকি প্রেম
করছি।অবদানটা মায়াবতীর।এমন কাজ ওই একটি
প্রানী ছাড়া কে করতে পারে।যাই হোক পরিবার
থেকে একটা সিদ্ধান্ত নিল আমি সাবলম্বী হরে
বিয়ে দিয়ে দিবে।উনি তো আহ্লাদে আটখানা।
আমাকে স্বামী মাকে শাশুড়ি বানিয়ে
ফেলেছে।সারাক্ষন শুধু এই চিন্তা।যার জন্য এইচ
এস সি পাশ করার পর কোন ভার্সিটিতেই ভর্তি হয়নি।
শেষমেষ বিয়েটা করেই ছাড়ল।বিয়ে করেছে
তো কি জ্বালানো ভোলেনি।যদিও এখন
আমাকে আর ঘুষি মারেনা তবু রাগ আছে সমানে।
.
আজ কে ওকে বলেছে আমি নাকি অফিসের এক
মেয়ের সাথে প্রেম করি।বাসায় আসতেই
কানের কাছে শুরু হল প্যানপ্যানানি।বিরক্ত হয়ে
রাগের মাথায় বলে দিলাম হ্যা করি।সেই থেকে
মহারানীর রাগ হয়েছে।রাতে খায়নি।পেটে ক্ষুদা
থাকলে কি এত সহজে ঘুম আসে।আমি অবশ্য
বসে আছি দেখছি ওকে রাগে চোখ বন্ধ করে
শুধু এপাশ ওপাশ করছে।
-মায়া যাও খেয়ে আস।
-না খাব না।
-কেন?
-আমার ইচ্ছে।
-দেখ এখনো সেই ছেলে মানুষি করলে
চলে।
-এই ছেলেমানুষি করি বলেই বোকা বানিয়ে
অন্যএকজনের সাথে প্রেম করছ।
-ছি মায়া কে কি বলল আর তুমি বিশ্বাস করলে একটুও
বিশ্বাস নেই আমার উপর।
-না তোকে বিশ্বাস নেই স্কুলে থাকতে কি
করেছিস জানিনা বুঝি।
-ওটা তো কৌতুহল ছিল এখন তো ভালবাসা।
-এই ভালবাসাটা আমি পেলাম না শুধু।
-কে বলেছে?
-আমি।
-আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি।
-কচু।
-হ্যা তোর মাথা থাক না খেয়ে শুয়ে থাক।
(রেগে বললাম)
-ঢুসসসসস।(কখন এসে ঘুষিটা মারল নাকে বুঝিনি)
-কি রে চোখে মুখে আন্ধার দেখিস?
-হুম।
-আর বলবি এমন করে?
-না।
-কাকে ভালবাসবি এখন থেকে?
-তোকে।
-বল?
-ভালবাসি।
-খাইয়ে দিবে কে?
-আমি।
-দেখি নাকটা?
-না।
-কিইই?
-দেখ।
-ইসসসস মেয়েদের মত লাল হয়ে গেছে
লজ্জায়।
-না রে পেত্নি ব্যাথায়।
-কি বললি?
-কিছুনা।
-আ ফু উ উ উ উ
-ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।সত্যি রাগী
মেয়েরা একটু বেশি ভালবাসতে জানে।
কে বলেছে মায়া বদলায় নি।এইতো মেয়েটা
বাচ্চাদের মত কাঁদছে আর আমার হাতে খাচ্ছে।
ভালবাসি তো খুব ভালবাসি আমার মায়াবতীকে।।।।
.
.
লিখা:অন্তহীন শ্রাবন

No comments:

Post a Comment