Thursday, July 21, 2016

___স্নিগ্ধিত আকাশ___ (4th part)

___স্নিগ্ধিত আকাশ___
(4th part)
=====
অবশেষে সেই প্রতিক্ষিত সময় এলো।
বন্ধুদের সামনে বুকের পাটা দেখালেও এখন
কেমন জানি বুকটা দুরু দুরু করছে।।
এটাও জানি যে, আজ আর আমার রক্ষে নেই। ওর
ঝাড়ি খেয়ে আজ আমার রফা দফা বের হবে।।
.
অনেক সাহস সঞ্চয় করে অবশেষে ক্লাস
শেষে ওর সামনে দাড়িয়ে বললাম,,
"আপু! এই চিরকুটটা নিন। এটা আপনার জন্যে।"
এই বলে চিরকুটটা স্নিগ্ধার হাতে দিলাম।
ও আমার দিকে বিষ্ময়ে তাকিয়ে রইল। ও যেন
বিশ্বাসই করতে পারছে না যে, আমার কি করে এত
সাহস হলো!!
.
স্নিগ্ধা চিরকুটটা নিয়ে পড়তে লাগল।.
বলে রাখা ভালো যে, আমি এই চিরকুটটা খুলেও
দেখিনি। মাথায় এতটাই জিদ চেপেছিল যে,
চিরকুটটা খুলে ভিতরের নামটাও দেখিনি যে, কার নাম
লিখা আছে!!
.
স্নিগ্ধা চিরকুটটা পড়ছিল আর ক্ষণিক বাদে বাদে ভ্রুঁ
কুঁচকে আমার দিকে তাকাচ্ছিল। আমি ওর সামনে
ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। আসার সময় অনেক কস্ট
করে সাহস জমা করলেও এখন সেগুলো যেন
বাতাসে মিলিয়ে গেছে।।
ওর সামনে অটোমেটিক ঘামতে শুরু করেছি
আমি।।
.
আমি অপরাধীর মত নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলাম
আর মাঝে মাঝে স্নিগ্ধার দিকে তাকাচ্ছিলাম। যখনই
তাকাচ্ছিলাম তখনই দুজনের চোখাচোখি হচ্ছিল।।
.
অবশেষে ও চিরকুটটা পড়ে শেষ করল।। অতঃপর
আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,
"নাম কি??"
আমার চেহারা উদ্ভাসিত হয়ে উঠল,. বুঝলাম, হয়ত ও
লাভ লেটারটা এক্ছেপ্ট করবে। আমি একটু অবাক
হয়েই বল্লাম,,
"এ কি!! লেটারে ওর নাম লেখা নেই??"
পরক্ষণেই আবার বলে উঠলাম,,
"ও আচ্ছা!! আসলে হয়েছে কি, ও খুব ভয় পায়
তো আপনাকে! তাই ভয়ে নাম লেখেনি। আর তা
ছাড়া আমিও জানিনা এটা আমার কোন ফ্রেন্ড।। আমার
ফ্রেন্ডরা শুধু বলেছে এটা আপনার কাছে র্পৌছে
দিতে। আর আপনাকে র্পৌছে দিলেই ওরা ওর নাম
বলবে।
আর আমিও এটা খুলে দেখিনি। তাই আসলে,,,,,,,,,,,,"
.
আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে স্নিগ্ধা বলে
উঠল,,
"তোমাকে আমি ভাষণ দিতে বলিনি। কারো নামই
জিগ্যেস করিনি। তোমার নাম জিগ্যেস করেছি!"
আমি অবাক হয়ে গেলাম!! আমার নাম জিগ্যেস
করছে কেন ও!! হেডস্যারের কাছে বলে
দিবে নাতো আবার!!
.
ও আমায় চুপ থাকতে দেখে তাড়া দিয়ে বলে
উঠল,,,
"কি! নাম বলছো না কেন? (কিছুটা রাগত স্বরে)"
ভয়ে কোনমতে বললাম,,
"আআকাশ।"
"হুম, এখন যাও! কাল আবার দেখা করবে আমার
সাথে!"
আমি কোনমতে মাথাটা নাড়িয়ে দ্রুত সেখান
থেকে চলে এলাম।।
.
আমি অবাক হয়ে গেলাম স্নিগ্ধার আচরণে।।
ভাবতেও পারছিলাম না যে, আমাকে এত সহজেই
ছেড়ে দিবে! এতটা নরম ব্যবহার করবে আমার
সাথে।
.
বন্ধুদের কাছে ফিরে এসে পুরো ঘটনা খুলে
বলতেই সবার চোখ যেন বেড়িয়ে আসতে
চাইল।
থমথমে ভাব কেটে যেতেই রিয়াদ বলে উঠল,,
"বলেছিলাম না! আকাশকে স্নিগ্ধা কিছুতেই কিছু
বলতে পারবে না।। দেখলি তো!!"
.
এবার আমার চোখ বেড়িয়ে যাবার পালা হলো! মাথাটা
কয়েক চক্কর অলরেডি দিয়ে ফেলেছে।
কি হচ্ছে কিছুই বুঝলাম না আমি!!
অবশেষে তছলিমকে একটু আড়ালে নিয়ে
জিগ্যেস করলাম,,
"আচ্ছা দোস্ত! বলতো ঘটনা কি?? আমি তো
কিছুই বুঝছি না!"
ও বলল,,
-- ওই চিরকুটে কি লিখা ছিল তুই জানিস??
- না তো! কি লিখা ছিল আমি জানবোই বা কি করে?
আমি তো ওটা খুলেই দেখিনি! কি লিখা ছিল ওটায়??
-- ওটাতে লিখা ছিল,, "আপনি তো খুব রাগী, তাই না!
আচ্ছা, আপনি পারলে আপনার কাছে যে এই চিরকুটটা
নিয়ে এসেছে তার সাথে ঝগড়া করেন দেখি!!
বকা দেন তো পারলে!...... জানি পারবেন না।
হি.হি.হি.
....... কি, পারবেন ধমক দিতে ওকে! জাষ্ট একটা
ধমক.............."
এমন টাইপেরই কিছু লিখা ছিল ওটায়! কিন্তু স্নিগ্ধা তো
তোকে সত্যিই কিছু বলল না!! আমার এখনও ঘোর
ঘোর লাগছে।।
.
তছলিমের এই কথা শুনে আমি তো পুরাই থ..,
অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল আমার।........
এ কি বলছে ও এসব??
সত্যিই এসব লিখা ছিল ওই চিরকুটে???
তাহলে ও আমাকে কিছু বলল না যে! আমার সাথে
এমন নরম আচরণ করল কেন!!!
.
এসব চিন্তা করতে করতেই করতেই সেদিন
ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম।।
.
পরদিন সকালে ভার্সিটিতে ঢুকে ক্লাসে যেতেই
দেখি স্নিগ্ধা আমাদের ক্লাস রুমের সামনে
দাড়িয়ে আছে।। আমাকে দেখেই বলে উঠল,,,
"এই যে মিষ্টার!! কতক্ষণ ধরে ওয়েট করছি
জানেন??............... ক্লাস শেষ করে ওখানে
চলে আসবেন, কেমন!"
আমাকে হাত দিয়ে দূরে একটা গাছের দিকে ইশারা
করে কথাটা বলল স্নিগ্ধা..।
.
আমি মাথা নাড়িয়ে 'হ্যাঁ' বলে চলে গেলাম
ক্লাসে।।
.
ক্লাস শেষ করে স্নিগ্ধার কথা অনুযায়ী জায়গামত
গিয়েই দেখি স্নিগ্ধা সেখানে আগে থেকেই
আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে।।
আমাকে দেখেই ঝাঁঝের সাথে বলে উঠল...
"এতক্ষণ লাগে আসতে, হাহ!!"
আমি বললাম..
"ইয়ে,,,ক্লাসে ছিলাম তো,,,"
"হুমম.. (চোখ গরম করে) এদিকে বসো.."
আমাকে গাছটার নিচে বসতে বলল ও। ও' ও বসে
আমাকে বলল,,,
"আজ থেকে তুমি আমার ফ্রেন্ড,,,, ওকে!!!"
.
আমি অবচেতনভাবে মাথা নাড়ালাম। অতঃপর ও আমার
দিকে ওর হাতটা বাড়িয়ে দিল...
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত ওর হাতটা ধরলাম।।
ওকে স্পর্শ করতেই আমার শরীর শিহরিত হয়ে
উঠল...
সম্পূর্ন ইচ্ছাকৃতভাবে জীবনে প্রথম এই কোন
মেয়েকে স্পর্শ করছি...
.
এবার ভালোভাবে ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম..
ও মুচকি মুচকি হাসছে।।
আর ভালোভাবে লক্ষ্য করতেই দেখলাম,,,
'ওকে আজ অনেক সুন্দরী দেখাচ্ছে।। এত
সুন্দরী মেয়ে বোধহয় আজ অবধি আমার
চোখে পড়েনি....
ওর চেহারা দেখে বুঝাই যাচ্ছিল না যে, ও প্রচন্ড
মেজাজী!!
ওর চেহারা থেকে তখন যেন পৃথিবীর সব মায়া
ঝড়ে পড়ছিল।।'
.
কাজল কালো চোখ.,
কৃষ্ণ কালো দীর্ঘ চুল,,
স্নিগ্ধ কোমল ঠোঁট,,
মোলায়েম দু' গাল,,
হরিণী চাহনি,,
মায়াবী চেহারা,,
এক কথায়, ওকে তখন স্বর্গের কোন অপ্সরী
লাগছিল।।
ওর মাঝে আমি সেই মূহুর্তে হারিয়ে
গিয়েছিলাম।।
.
কিন্তু তখনও বুঝিনি যে,
এই বন্ধুত্ব আমার জন্য কি রেখেছে!!
বা, পরবর্তীতে কি হবে আমার!!!
.
.
.
চলবে______,,,,,,,

No comments:

Post a Comment