Thursday, July 21, 2016

**** রংধনুর আড়ালে ভালবাসার পূর্নতা ****

**** রংধনুর আড়ালে ভালবাসার পূর্নতা ****
.
লেখা : Adhora Zafrin
.
এই উঠো না সেহরির সময় হয়ে গেছে তো
আর কত ঘুমাবা??……… কি উঠোনা কেনোও.……!!
>>> : আরে কি বলো এত তারাতারি ……??
( ঘুম ঘুম চোখে আলভী মোবাইলটা হাতে
নিয়ে সময়টা দেখল মাএ ১:৩০ বাজে।)
আলভী : মাএ ১:৩০ এখন কিসের সেহরির সময়??
আরো দেরি আছে এখন নাতো।
>>> : ও সরি আমি টাইমটা দেখিনি……… ওকে তুমি
ঘুমাও।
আলভী : আচ্ছা।
কিছুক্ষণ পর …………………( ২:২০ )
.
>>> : এই এবার সময় হয়ে গেছে উঠো …… কি
হলো উঠো……
আলভী : আরে বাবা আমিতো এলার্ম দিয়ে
রেখেছি।সময় হয়নি তো এখনো।
( ঘুম ঘুম কন্ঠে )
>>> : ও..... আচ্ছা সমস্যা নাই উঠো আমরা গল্প
করি। সেহরির সময় হলে খেয়ে নিব।
আলভী : কি বলো পাগল হয়ে গেলে নাকি, এখন
গল্প করব মানে কি??
>>> : পাগল এর কি দেখলে আর ঘুমাবানা এটাই শেষ।
আলভী : আরে বলে কি??
>>>: হুম ঠিকই বলেছি। উঠো………
.
আমার স্ত্রী হিয়া।ভালবেসে পরিবারের মতে
আমরা বিয়ে করি।আমাদের বিয়ের ৪ মাস হতে ৮
দিন বাকি। হিয়ার সাথে এই প্রথম রোজা আমার্।এর
আগের রোজায় হিয়া ওদের বাড়িতে ছিল এবার
আমাদের বাড়িতে আমার সাথে। তখন ও ফোন
দিয়ে উঠাত কিন্তু এত তারাতারি না। আজ কি হয়েছে
এত রাতে গল্প করার বায়না ধরেছে। এত বড়
মেয়ে অন্যের বউ হয়ে গেছে এখনো
স্বভাবটা বাচ্চাদের মতো। মাঝে মাঝে ওর কান্ড
দেখলে ভীষণ হাসি পায় তবে দুঃখ একটাই হাসা
যাবে না। হাসি চেপে রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে
ছাড়তে হয়। হাসতে দেখলেই খবর আছে।
ওকে ভালবেসে পাগলী বলেই ডাকি।
আমার পাগলীটা।
.
গল্প করতে করতে সেহেরির সময় হয়ে গেল
বুঝতেই পারলাম না।
হিয়া : চলো চলো ফ্রেস হবা। ফ্রেস হয়ে
টেবিলে আসো খাবার দিচ্ছি।
আলভী : হুম যাও আসছি।
হিয়া : আসছি না তারাতারি আসো।
আলভী : আচ্ছা যাও আসছি তারাতারি।
হিয়া : হি হি হি আচ্ছা।
.
ফ্রেস হয়ে টেবিলে এসেই চোখ দুটো
আমার ছানা বড়া। টেবিল খাবার দিয়ে সাজানো। সাথে
মা-বাবা ও ফ্রেস হয়ে বসে আছেন। আমার প্রিয়
খাবার ও রান্না করা হয়েছে।
.
আলভী : বাহ…… আমার প্রিয় খাবার্। কি সুন্দর ঘ্রাণ
বের হয়েছে কে রান্না করল নিশ্চয় মা তুমি
করেছো?? …… ( চেয়ারটা টেনে বসতে
বসতে বলল )
মা : নাহ…… আমার বউমাই সব রান্না করেছে।
আলভী : কি বলো?? (এই ফাকে পা থেকে মাথা
অবধি দেখে নিল হিয়ার )
মা : হুম ঠিকই তো বললাম।
আলভী : আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। হিয়া তুমি
ঠিক আছো তো??
হিয়া : কেনো??……… ( ভ্রু কুচকে বলল)
আলভী : না মানে ……… তুমি তো যখনই রান্না
ঘরে যাও কিছু করতে। তখন কিছু না কিছু একটা করে
ফেলো। হয়তো হাত কাটবে নইলে পুড়ে
যাবে নইলে রান্নায় গোলমাল।
হিয়া : দেখেছেন মা আপনার ছেলে কিভাবে
আমাকে নিয়ে মজা করছে??
মা : এই আলভী এটা কিন্তু ঠিক না।
আলভী : মা সত্যি তো বললাম আর তাইতো তুমি
ওকে রান্না ঘরে যেতে দাও না। রান্না ঘরে গিয়ে
তোমার কাজ কমানো বাদে বারিয়ে দেয়।
হিয়া : মা …………
মা : হ্যা সেটা মাঝে মাঝে।
হিয়া : মা আপনিও……… বাবা কিছু বলবেন না।
বাবা : আলভী কি পেয়েছো হুম আমার
বউমাটাকে। মা ছেলে মিলে মজা নেয়া হচ্ছে??
আলভী : আচ্ছা আচ্ছা আর নিব না।
হিয়া : হি হি হি
আলভী : আজ এত ভালো রান্না কিভাবে
পারলে ?? ভালোই হয়েছে তাই না মা ………??
( খেতে খেতে)
বাবা : আলভী ……………
আলভী : সরি বাবা।
হিয়া : বাবা আপনি কিন্তু আমার দলে।
আমার কথাই বলবেন।
আলভী : এখানে দল আসলো কোথা
থেকে? ?
হিয়া : হুম দলই…… তুমি আর মা …… আমি আর বাবা।
সবাই স্বজোরে হেসে উঠলো…………
.
খাওয়া শেষ পেট পুরো ফুল এসে শুয়ে পড়লাম
বিছানায়। চলে আসছে পাগলী।
হিয়া : এই তুমি শুইছো কেন??
আলভী : আরে একটু রেস্ট নিচ্ছি। অনেক
খেয়ে ফেলছি।
হিয়া : কোথায় এত খেলে?? উঠো রেডি হও।
আলভী : আরে কি বলে এখন আবার কোথায়
যেতে বলবে??
হিয়া : মসজিদে নামাজ পড়তে যাবা।
আলভী : বাসায় পড়ি??
হিয়া : না বাসায় না বাবার সাথে মসজিদে যাবে। যাও
উঠো বলছি।
আলভী : হ্যা যাচ্ছি।
হিয়া : আচ্ছা……
.
নামাজ পড়ে এসে দিলাম এক ঘুম সকালে অফিস
আছে।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে
বেড়িয়ে গেলাম অফিসের জন্যে। পাগলীটা
কিছুক্ষন পর পর ফোন দিয়ে খবর নিচ্ছে।
অনেক সময় পর ফ্রী হলাম আমি এবার ফোন
দিলাম। ফোন ধরার তো কোন খবরই নেই
কারো।আবার দিলাম ফোন বেজেই চলছে। যাক
অবশেষে ধরার সময় পেলেন উনি।
.
আলভী : হ্যালো
হিয়া : কি বলো ?? এখন ফোন দিছো
কেনো ?? আমি কাজ করছি ব্যস্ত আছি বাসায় চলে
এসো তারাতারি। রাখছি……
আলভী : এই শুনো!!!
হিয়া : হুম বলো তারাতারি ……
আলভী : যাই করো সাবধানে করো কিন্তু আর
মাকে সাথে রেখো একা একা রান্না ঘরে কিছু
করতে যেও না…… তুমি করো কিন্তু মাকে
রেখো সাথে।
হিয়া : কেনো??আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে একা
একা কিছু করতে পারবো না??
আলভী : হ্যাঁ বাচ্চাই আপনি। সাবধানে কাজ করো।
হিয়া : হুম আচ্ছা রাখছি।
আলভী : ওকে।
.
অফিস শেষ রোজার জন্যে তারাতারি ছুটি হয়ে যায়।
যাক ভালোই হয় ইফতারটা বাসার সবার সাথে করা যায়।
বাসায় যাওয়ার সময় সবার জন্যে গরম গরম জিলেপী
নিয়ে নিলাম। বেল টিপছি কেউ খুলে না কেনো
আবার ও বাজালাম। দেখি বাবা দরজা খুলে দিলেন।
ভিতরে ঢুকেই দেখি আমার বউ সব ইফতার মাটি
করে দিছে। হাত পুড়িয়ে ফেলেছে গরম
তেলে। মা বাবা দুজনেই উনাকে নিয়ে ব্যস্ত।
খুব রাগ হচ্ছে হিয়ার উপর বার বার বারন করা সত্ত্বেও
মেয়েটা রান্নাঘরে ইফতার বানাতে গেছে একা।
.
হিয়া ভয়ে ভয়ে আমার দিকে আড় চোখে
তাকাচ্ছে। আমি চুপ করে আছি কিছুই বলিনি কিভাবে
পুড়েছে কি হয়েছে কি না।নাহ আর পারলাম না চুপ
করে থাকতে।
আলভী : অনেক বড় হয়ে গেছো তাই না?
খুবতো বললে বাচ্চা না পারবে তো এখন এটা কি
করলে??তোমাকে না করেছিলাম বলেছিলাম
মাকে সাথে রাখতে। কথা কি শুনো আমার……
একদমই শুনো না।………
( দেখলাম নিরীহ বাচ্চাদের মতো মাথা নিচু করে
অভিমান করে আছে।)
মা : থাক অনেক হয়েছে আর কিছু বলতে হবে
না। তুই খুশি হবি বলেই তো ও রান্না করতে
চেয়েছে। কিন্তুু এমন হবে এটা তো বুঝতে
পারেনি। তুই ফ্রেস হয়ে আয় ইফতারের সময়
হয়ে গেছে।
আলভী : হুম ………(চলে গেলাম ফ্রেস হতে
…………)
ইফতার করা হলো মোটামুটি। এখনো আমার
সাথে একটা কথা ও বলেনি হিয়া। এমন করে বলা ঠিক
হয়নি আমার জন্যেই তো করতে চেয়েছিল খুশি
হবো বলে।
.
নিজেই বললাম আবার……আর এমন করো না
জানোতো তুমি পারো না, তো দরকার কি করার
আমি তো এমনি অনেক খুশি তোমাকে
পেয়ে।মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল শুধুমাএ। আর এখন
রাত ১০:৩০ বাজে। ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিচ্ছি আমি।
উনি খাচ্ছেন আর মিটি মিটি হাসছেন।
.
আলভী : এত হাসির কি? হাসিটা বন্ধ করুন।
হিয়া : হি হি হি …………… ( স্বজোরে হেসে দিল
সাথে আমিও হাসতে শুরু করলাম )
.
উতসর্গঃ হাসান মুহাম্মদ ওমরফারুক তোফা।

No comments:

Post a Comment