Thursday, July 21, 2016

"বউ এর আদর"

"বউ এর আদর"

-এই একদম খুক খুক করবানা।
-কাশি আসলে কি করব।
-মুখ চেপে থাকবা।
-নিশ্বাস নিব কেমন করে।
-ঢং করে বৃষ্টিতে ভেজার সময় খেয়াল
ছিলনা।
-তখন কি জানতাম নাকি বৃষ্টি আমাকে এমন
শাস্তি দিবে।
-ন্যাকা খোকা জাননা বৃষ্টিতে ভিজলে
ঠান্ডা লাগে।
-আগে তো কখনও লাগেনি।
-এবার তো বেহায়ার মত ভিজেছ তাই
লেগেছে।
-বেহায়ার মত মানে।
-কি আমার জন দরদী জামাই রে নিজের
ছাতা কলিগকে দিয়ে নিজে ভিজে ঠান্ডা
লাগিয়েছে।
-মেয়েটা ভিজে গেলে তো ওর জ্বর হত।
-চুপ।কোন মেয়ে ভিজল কি না ভিজল সেটা
দিয়ে তুমি কি করবে।
-মানুষের উপকার করা ভাল কাজ তাইনা?
-এটা কোন উপকার না।মেয়ে দেখলে ঢং
করতে ইচ্ছে করে তাইনা।
-ঢং বলছ কেন ও আমার সহকর্মী ওর বিপদে
এগিয়ে আসা আমার কর্তব্য।
-তো যাও রাম্তায় গিয়ে দেখ কোন মেয়ে
ছাতা আনেনি তাকে দিয়ে এস।
-বলছি শোননা হাঁ...আ...চি।
-চুপ একদম চুপ থাকবা।
-আমি কি জানতাম নাকি বৃষ্টি এতক্ষন
থাকবে ভেবেছিলাম একটু পরে থেমে
যাবে।
-আমাকে নিয়ে কখনও ভিজেছ বৃষ্টিতে।
-ধ্যাত তুমি যে কি বল সেই বয়স কি আর
আছে নাকি।
-কিইইইই বিয়ে করেছ পাঁচমাস হয়েছে এর
মধ্যে পুরানো লাগছে।
-এই দেখ কি বললাম আর কি বোঝ।আচ্ছা
কাল বৃষ্টি হলে তোমার সাথে ভিজব।
-থাক দরকার নেই।আমি তো পুরানো বুড়ি
হয়ে গেছি একটা ভাল টুকুটুকে বউ এনে তখন
ভিজ।
-এই দেখ আমার মিষ্টি বউটা শুধু রেগে যায়।
-আমি মিষ্টি না তেতো।
-আর কখনো এমন হবেনা বিশ্বাস কর।
-তোমাকে বিশ্বাস করব?
-হ্যা।
-মনে আছে আমার সাথে লাইন মারতে এসে
পাড়ার ছেলেদের হাতে আদর খেয়ে
পরেরদিন আমায় বলেছিলে,বিশ্বাস কর
তোমার সামনে আর কোনদিন আসব না।
-আরে ওটা তো তোমাকে দুর্বল করার জন্য
বলেছিলাম।
-কিইই?তারমানে তুমি আমাকে ভালবাসতে
না অভিনয় করেছ?
-এই আমি অতসব বলতে পারব না মাথাটা
একটু টিপে দাও তো।
-শখ কত ডাক না তোমার কলিগ কে ও এসে
টিপে দিবে।
-সত্যি সত্যি ডাকব কিন্তু।
-কিইইই?
-ইয়ে মানে দাও না একটু টিপে।
-পারব না আমার হাতে অনেক কাজ।
-মায়া শোন.......মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল।
পাগলী বউ আমার।সবকিছুতেই আমার
বাড়াবাড়ি। এই বাড়াবাড়িগুলোই সহ্য করে
এই মেয়েটা।ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে
এই পাঁচমাস।কিছুটা এ্যারেঞ্জ ম্যারিজের
মত।তবু ওকে আমি আগে থেকে চিনতাম।
প্রেম প্রস্তাব দিয়ে ওর থেকে উত্তর
পাওয়ার আগেই আম্মুকে দিয়ে ওর বাসায়
বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম।ওর আব্বু
অবশ্য রাজি হয়ে গিয়েছিল কারন শুভ্র তো
ছেলে হিসেবে খারাপ না কখনও।যাই হোক
বিয়ের পর মায়া আমাকে শাসনেই রাখে।
আজকের মত এমন শাসন টুকিটাকি বিষয়
নিয়ে প্রায়ই করে থাকে।ভাল লাগে শুনতে
কিন্তু মেয়েটা বেশি কথা বলতে চায়
মাঝে মাঝে নিজেরই রাগ হয়।আজকে
বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পথে বৃষ্টি
নেমেছে।সাথে ছিল আমার কলিগ নিতু।
মেয়েটার বাসা মেইন রোড থেকে অনেক
ভিতরে।একে তো বৃষ্টি তারপর একা তাই
ছাতাটা ওকে দিয়েই আমার বাসার সামনে
নেমে গেলাম।আমার বাসাটাও একটু
ভিতরে।বাচ্চাদের মত তো দৌড়ে আসা
যায় না।তাছাড়া বৃষ্টি আমার প্রিয় যদিও
ঠান্ডা লাগে তবুও সুযোগ পেয়ে ইচ্ছেমতই
ভিজলাম।যার ফলাফল সন্ধ্যা নামতেই
কাশি শুরু মাথা ব্যাথা গায়ে জ্বর আসছে।
উফফ বৃষ্টিতে ভেজা যে এত যন্ত্রনার কারন
হবে আগে জানলে কখনই এই ভুল করতাম না।
তাছাড়া মায়া তো জানেনা আমি ইচ্ছে
করে কিছুক্ষন ভিজেছি জানলে আজকে
কপালে যে কি ছিল।এতটুকুতে তাই রেগে
আগুন।আসলে মেয়েটা আমার ব্যাপারে একটু
বেশিই ভাবে।ভাবুক বউ তার জামাইয়ের
ব্যাপারে একটু বেশি কেয়ারফুল হওয়া
উচিৎ।এই যা মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
চোখগুলো বের হয়ে যাবে মনে হয়।বললাম
কপালটা একটু টিপে দিতে তা নয় উনি
হিংসেয় জ্বলছে কলিগকে কেন ছাতা
দিয়েছি।পাগলী একটা বোঝেনা ও ছাড়া
আমি আর কাউকে ভাবতে পারি না।
.
১৫ মিনিট পর....
এই উঠো....
-কি?
-নাও আদা চা খাও।
-এ্যাক আমি খেতে পারব না ঝাল ঝাল
লাগে।
-মেয়ে মানুষের মত ঢং কর না তো।
-সত্যি আমার ভাল লাগেনা।
-খেতে বলেছি না তোমাকে।
-খাচ্ছি তো।
-হুম নাও।
-ইয়াক..
-খবরদার বের করবেনা গিলে ফেল।
-আমি আর পারব না খেতে।
-খেতে হবে মাথা ব্যাথা কমবে।
-দরকার নেই কমানোর।
-কি বললে?
-কিছুনা খাচ্ছি।
-হুম তাড়াতাড়ি।
-এই শোন না?
-কি?
-মাথাটা একটু টিপে দাও।
দিব আগে চা শেষ কর।
-সত্যি তো।
-হুম।
-এই নাও সব খেয়ে ফেললাম।
-আস্তে পাগল একটা।
-হুম।দাও।
-শুয়ে পড়।
-হুম।
.
মাথা টিপে দিচ্ছে আমি তাকিয়ে আছি
ওর দিকে।সত্যিই মাথাটা অনেক ফ্রি
লাগছে।বউটার হাতে জাদু আছে বলতে
হবে।কিন্তু এত আদর কপালে সইল না।আব্বু
আম্মুকে ভাত দিতে যাবে বলে উঠে গেল।
ধ্যাত আবার শুরু হচ্ছে মাথায় ব্যাথা।তবে
এবার অন্য কারনে চলে গেল বলে।
.
সকালে উঠেই দেখি মায়া ঝিমোচ্ছে।
রাতে ঘুমাওনি জিজ্ঞাসা করতেই চোখ
কটমট করে তাকাল।কারনটা হচ্ছে।
সারারাত বসে কাটিয়েছে।রাত দুইটার
দিকে আমার গায়ে প্রচন্ড জ্বর ওঠে।ঘুমের
ঘোরে প্রলাপ বকেছি।মায়া ভয় পেয়ে আব্বু
আম্মুকে ডেকে আনে।তারপর নিজে আমার
মাথায় পানি ঢালে।সত্যি মেয়েটাকে
অনেক জ্বালাতন করি আমি।এখন অবশ্য
আমি সুস্থ একটু পরে অফিস যাব।কাল ওভাবে
ইচ্ছে করে না ভিজলে মেয়েটার এত কষ্ট হত
না।একটু পর অফিসের জন্য রওনা দিলাম।
মায়া ঘুমিয়ে পড়েছে।না বলে চলে এসেছি
মেয়েটা একটু ঘুমিয়ে নিক।
.
অফিসে কাজ করছি মায়া ফোন করেছে।ওর
নাকি ভীষন খারাপ লাগছে।সর্দি
নেমেছে।সাথে মাথা ব্যাথা।আমাকে তো
শাসিয়েছে ওর যদি আমার মত হয় আমাকে
ছাড়বে না।
.
অফিস শেষে বাসায় ঢুকেই দেখি মায়া
শুয়ে আছে।
-হা হা হা হা
-বেহায়ার মত হাসছ কেন?ভাল লাগছে না?
-না গো তুমি তো বৃষ্টিতে ভিজ নাই তাহলে
তোমার জ্বর আসল কেন?
-সব তোমার দোষ।
-কেন?
-তোমার ছোঁয়াতেই এসব হয়েছে।তোমাকে
আমি ছাড়ব না।
-মোটেও না।
-দাড়াও দেখাচ্ছি বলে উঠতে গিয়েই আবার
ধপাস।
-কি হল?
-মাথা ব্যাথা উঠতে পারছি না।
-থাক উঠা লাগবে না।
-চা খাবে আদা চা।
-না।
-খেতে হবে।
-খুব মজা লাগছে তাই না?
-নাহ মাথা ব্যাথা সেরে যাবে।
-তাহলে আন।
-হুম।
-এই শোন?
-কি?
-মাথাটা...
-টিপে দিতে হবে?
-হুম।
-পারবনা হাতে অনেক কাজ।
-হু লাগবেনা পরেরবার দেখে নিব।
-হা হা হা।
-হাসবানা একদম নাক ছিড়ে নিব।
-হুম।
-বেরিয়ে আসলাম।বউ আমার ছোঁয়াচে
রোগে আক্রান্ত।যাই চা খাওয়াই মাথা
টিপতে হবে?দেই একটু টিপে আমারই তো
বউ।শুধু ভয় হচ্ছে আমার গায়ে সর্দি না
লাগায় যেমন রেগে আছে পাগলীটা।।।।
.
.
লিখা অন্তহীন শ্রাবন

No comments:

Post a Comment