Saturday, July 23, 2016

।।।পরিশেষে আমি পেলাম তোমায়।।।

।।।পরিশেষে আমি পেলাম তোমায়।।।

-ও হ্যালো শুনছেন?(মেয়েটি)
-আমি?আমাকে বলছেন?(আমি)
-আপনি ছাড়া এখানে আর কে আছে?
-হ্যা তাইতো।তো কি বলবেন বলুন?
-কি বলব মানে আপনি তো আজিব মানুষ?
-আজিবের আবার কি করলাম?
-আমাকে চিনতে পেরেছেন?
-কই না তো?
-এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন না পাওনা টাকা দিতে
হবে বলে না চেনার ভান করছেন?
-এ মা তা কেন? আপনি আমার কাছে কিসের টাকা
পাবেন বলেন তো?
-বাহ ভুলে গেলেন ঐ যে বাসে আপনি বিপদে
পড়েছিলেন।
-ও হ্যা মনে পড়েছে। তো আপনি এখানে?
-আমি তো এই ভার্সিটিতেই পড়ি।
-সে কি কোন ইয়ার আপনাকে তো কখনও
দেখিনি।
-দেখবেন কি করে। মাসে একটা ক্লাস
করেন, তবুও ভার্সিটি আসার সময় মানিব্যাগটা বাসায়
ভুলে রেখে আসেন।
-লজ্জায় মাথা চুলকাচ্ছি।
-থাক মশাই আমি আপনার জি এফ নই এত লজ্জা
পেতে হবে না। আমাকে আমার পাওনা টাকাটা
ফেরত দিন।
-কোন পাওনা টাকা?
-এত সহজে ভুলে গেলেন আবার। ঐ যে ভাড়া
দিয়ে দিয়েছিলাম। একটা ধন্যবাদ ও তো দিলেন না।
টাকা দেওঢা দূরের কথা। তাই মনে মনে রাগ
হয়েছিল যদি কোনদিন আপনার সাথে দেখা হয়
টাকাটা চেয়ে নিব।
-এ মা কি সাংঘাতিক কতদিন ঘুরতে হল আমার পিছনে।
-তা একটু ঘুরেছি কিন্তু এখন তো টাকা দিবেন সুদ
হিসেবে ফুসকা খাওয়াতে হবে।
-এই রে.....
-কি হল ভয় পাইছেন?
-না মানে...
-কি মানে মানে করছেন....আজও কি আবার....
-কি করে বুঝলেন?
-আপনার মুখ দেখেই বুঝেছি।
-আপনি কি জ্যোতিষি নাকি?
-নাহ। তো আজ কার সাহায্য নিয়েছেন? আমার মত
আরও একটি মেয়ে মনে হয়।
-না আজ আমার ফ্রেন্ড ছিল সাথে ওই ভাড়াটা মিটিয়ে
দিয়েছে।
-আপনি একটা.....
-আমি একটা কি?
-নাহ কিছুনা চলেন আমার টাকায় আপনাকে ফুচকা
খাওয়াব।
-নাহ শেষে বলবেন লজ্জাবিহীন ছেলে
মেয়েদের থেকে খায়। কাল টাকা এনে খাওয়াব।
-এই যে মিষ্টার এত ঢং করা লাগবেনা বুঝেছেন।
-ঢং কোথায় করলাম। হ্যা আমি আপনার কাছ থেকে
খেতাম যদি...
-যদি কি?
-যদি আপনি আমার বন্ধু বা অন্যকিছু হতেন।
-আপনার মতলব কি বলুন তো প্রেমে ট্রেমে
পড়েন নি তো। দেখুন মশাই আগেই বলে রাখি
আমি কিন্তু ওসবের মধ্যে নেই।
-ছি ছি কি যে বলেন। আমরা তো বন্ধু হতে পারি?
-হ্যা ভেবে দেখব। আগে চলেন তো ফুসকা
খাব।
-হুম চলুন। এই যা আপনার নামটাই তো জানা হল না?
-কিভাবে জানবেন জিজ্ঞাসা করেছেন কখনো?
-ও হ্যা আমি শুভ্র।
-আমি মায়া।
-ফ্রেন্ডস।
-ভেবে দেখব। (ভ্রুঁ কুচকে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল)
-হুম আচ্ছা।চলুন...
-হুম।
.
সেদিন তড়িঘড়ি করেই ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা
দিয়েছি। এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পা রাখতেই
ভিতরে কেমন যেন একটা সিনিয়র ভাব চলে
এসেছে। মাসে খুব হলে চারটা ক্লাসে শুভ্র
নামক এই আজব ছাত্রকে দেখা যায়। প্রতিদিনের
মত সেদিনও ব্যাস্ততার কারনে মানিব্যাগ বাসায়
রেখে এসেছি। এটা একটা ব্যাধি হয়ে গেছে
আমার। বুঝতে পারলাম যখন বাসে হেল্পারের
সাথে তর্ক বাধল। এখান থেকে ভার্সিটি ভাড়া মাত্র
পনের টাকা স্টুডেন্ট বলে হাফ দেই। কিন্তু আজ
হাফ তো হবেনা বরং ভাড়া চাইছে বিশ টাকা। কিছুক্ষন
তর্ক করে আটটাকা দিতে রাজি হলাম। হেল্পার তো
রেগে আগুন। পকেট হাতড়িয়ে মুখটা শুকিয়ে
গেল। এই যা একে তো ভাড়া নিয়ে তর্ক করে
রাগিয়ে দিয়েছি আবার এখন যদি বুঝতে পারে একটি
টাকাও নেই পকেটে অবস্থা সিরিয়াস। দেরি দেখে
হেল্পার এবার উল্টা ঝাড়ি দিতে লাগল আঁচ করতে
পেরেছে বোধহয়। কেন্তু কোথা থেকে
এই মেয়েটিই এসে যেন বাঁচিয়ে দিল। হেল্পারের সাথে বাধাল তর্ক। আমরা স্টুডেন্ট
ভুলে যাবেন না। আমাদের অধিকার সম্পর্কে
আপনার কোন জ্ঞান আছে। ইত্যাদি ইত্যাদি। হা করে
তাকিয়ে ছিলাম মেয়েটির দিকে। ঝাড়ি খেয়ে
হেল্পার ব্যাটা কাচুমাচু করতে করত চলে গেল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল পাব্লিক বাস ভিড়টাও দারুন
মেয়েটিকে একনজরেই হারিয়ে ফেললাম। একটু
ধন্যবাদ দিব তার উপায় নেই। মানুষে মানুষে একাকার। মনে হয় দম বন্ধ হয়ে আসবে। যাই হোক ভার্সিটির সামনে নেমে কিছুক্ষন দেখলাম কিন্তু
তবুও ভিড় যাত্রী নেমে পারছেনা উঠতে শুরু । নাহ আর পাওয়ার আশা নেই। জীবনে চলার পথে
কতকিছু হবে সবকিছু আকড়ে ধরে তো আর বাঁচা যায়না। তবুও উপকারীর উপকারটা স্বীকার তো
করতে হয়। আজ হঠাৎ ক্লাস শেষ করে বেরোচ্ছি একটা মেয়েলি কন্ঠ ডাক দির। কাছে আসতেই তো
পরিচয়টা দিল। কিন্তু আজিব ব্যাপার হচ্ছে কোন মেয়ের মনের লিষ্টে এই যেমন ধরুন সেদিন ভিড়ের মাঝে একটু আধটু কোনভাবে দেখেছে মুখটা,মনে রেখেছে তাও আবার
সরাসরি প্রথমেই আমাকে বলল যে ওই সেই মেয়েটি। যাক বাবা মেয়েটি মনে তো রেখেছে সে টাকার কারনে হোক বা অন্যকিছু। কিন্তু মেয়েটির হাসিটা দারুন। .ডাল মে কুচ কালা হে.....বুঝতে পারছি বিষয়টা জটিল। আজ ফুচকা কাওয়ার সময় কত মিষ্টি করে হাসছিল মেয়েটি। আবার যাবার আগে দুষ্টুমি করে বলে গেল আমরা তাহলে ফ্রেন্ডস। নাহ এই মেয়েটির
হাসিটা ঠিক সুবিধার ঠেকছে না। আমি কেন এত দুর্বল হয়ে পড়ছি। আমি কি বেসি আবেগী হয়ে
পড়লাম। সারাজীবন ধরেও একটা মেয়েকে ভালবাসি বলতে গেলে কেমন অনুশোচনা হয়
কিন্তু এই দুইদিনের পরিচয়ে মেয়েটিকে কেন
বলতে ইচ্ছে করছে আমি ভালবাসি....। না না এটা
সম্ভব না। আমি হ্যালুসিনশনের ঘোরে আছি না
হলে বার বার কেন কল্পনায় মেয়েটি চলে
আসছে......।
.
তিনমাস পর.....
আমরা একই ইয়ারে পড়ি কিন্তু আলাদা ডিপার্টমেন্টে। মায়া এখন আমার প্রাত্যহিক
জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ। একটাদিন তাকে না দেখে চলেনা। মাঝে এমন হয় দুজন বসে আছি
কোন নির্জন জায়গা যেমন পার্ক গাছতলা হঠাৎ করে দুজন একসাথে বলে উঠি এই শোন....দুজনেই
একসাথে কি?তারপর দুজনেই একসাথে তুমি আগে
বল...তারপর আর বলা হয় না। কেন জানিনা এরকম হয়। তবে এ কদিনে আমি মায়া শব্দটা হৃদয়ের সাথে
গেঁথে ফেলেছি। আজ খুব বৃষ্টি হচ্ছে। এতক্ষন আমি আর মায়া পার্কের একটা গাছের নিচে বসে ছিলাম। হাবিজাবি কথা হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টি নামতেই মায়া ভিজতে
শুরু করেছে আর আমি দাড়িয়ে আছি। হলুদ শাড়িতে এক অপরুপার মতই লাগছে মেয়েটাকে। মুখটা
উপরে তুলে বৃষ্টি ফোঁটা ছুঁয়ে দিচ্ছে।
-এই শুভ্র আস না ভিজি।(মায়া)
-নাহ তুমি ভিজ আমি ভয় পাই।(আমি)
-কেন?
-যদি জ্বর আসে।
-নাহ কিছু হবে না আস তো।
-নাহ।
-আসতে বলছি। (বলেই হাত ধরে টেনে নিচে
নামাল)
ভিজে যাচ্ছি আর ওর ভেজা চুলগুলো আর মুখটার
দিকে তাকিয়ে আছি। বুকের বামপাশে চিন চিন করে
ব্যাথার মত কিছু একটা আঘাত করছে। হঠাৎ ধুমমমমমম....বজ্রপাত হল। চোখ খুলতেই দেখি বুকের মাঝে লেপ্টে গেছে মায়া।
-কি হল এভাবেই থাকবে?
-হ্যা মানে না। (বলেই দূরে সরে গেল)
-আচ্ছা তুমি আমায় জড়িয়ে ধরলে কেন? তার মানে কি?
-কি?
-ভা..........
-ভা কি হুম গাধা একটা ভালবাসি বললে কি খেয়ে ফেলব নাকি?
-না মানে (মাথা চুলকাচ্ছি)
আবার ধুমমমমমমম
এবার আরও বেশি করে লেপ্টে আছে।
আমিও বৃষ্টির মত আজ বাধন হারা।
খুব গাইতে ইচ্ছে করছে....এই মেয়েটাকে
পেয়ে....
পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে.....
পাগল আমার মন জেগে ওঠে...
চেনা শোনার কোন বাইরে...
যেখানে পথ নাই নাইরে.....
সেখানে অকারনে.....
যাই ছুটে......
উলাল্লা উলাল্লা উলাল্লা হে এ.....।।।।
মহারানী প্রেমে তো পড়ল কিন্তু পাওনা টাকা
বুঝে নেওয়ার হুমকিটাও সাথে দিয়েছে।।।।
.
.
লিখা:অন্তহীন শ্রাবন

No comments:

Post a Comment