Thursday, July 21, 2016

★আদুভাই অতঃপর বিয়ে ★

★আদুভাই অতঃপর বিয়ে ★
.
.
আদুভাই সম্পর্কে জানেন না এমন কম লোকই
আছে, গল্পটা মুলত এধরনের একজন কে নিয়ে।
ছেলেটার নাম তপু, সারাদিন ঘুরাঘুরি
বন্ধুদের সাথে আড্ডা এসব করে চলে যায়।
যার ফলাফল প্রত্যেক বছর ফেল। তপু অবশ্য
আদুভাইয়ের মত ক্লাস নাইনে ফেল করেনা
সে ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। ফাইনাল ইয়ার
থেকে তার আর গ্রাজুয়েশন কম্পলিট হয় না।

হ্যা আরো একটা অমিল আছে আদুভাইএর
সাথে তার আদুভাই তো রোজ ক্লাস করত
কিন্তু তপু সপ্তাহে দুই দিন শনিবার এবং
বুধবার।
.
আজ রবিবার
তপু ক্লাসে এসেছে কারন আজ নতুন শিক্ষক
জয়েন করবে। তাই তপু তার সাথে পরিচিত
হতে যাচ্ছে।
- মে আই কামিন স্যার?
-এক্সিউজ মি? আমাকে দেখে কি তোমার
স্যার মনে হচ্ছে?
-জ্বী না স্যার! সরি ম্যাম, শুনেছিলাম
স্যার
জয়েন করবে তাই?
- স্যার না, আমি জয়েন করেছি। আর ক্লাসে
তোমার এত লেট কেন? কয়টা বাজে এখন?
ক্লাসে হাসির রোল পড়ে গেল----
- এই কি ব্যাপার তোমরা হাসছ কেন?
- ম্যাম ওর আবার লেট? ও তো ঠিকমতো
ক্লাসি করেনা।[ কেউ একজন দাঁড়িয়ে বলল]
-তাই নাকি? ক্লাসে আস। আর কাল যেন
ঠিক
টাইমে ক্লাসে পাই।
- জ্বী ম্যাম।
.
.
তপু ক্লাসে বসে বসে ম্যাম এর কথা ভাবছে,
এই মেয়ে তো মনে হয় আমার দুই এক বছর এর
ছোট হবে। আমি কিভাবে এই মেয়েকে
ম্যাম
ডাকব। কাল থেকে আর ক্লাসে আসা
যাবেনা,যা হয় হোক। কিন্তু এসবের মধ্যেও
সত্যি হল মেয়েটা দেখতে অসাধরন সুন্দর,
চোখ দুটো কি মায়াবি তারউপর চিকন করে
কাজল টানা এই চোখের দিকে দুই মিনিট
তাকায় থাকলে যে কেউ প্রেমে পড়ে
যাবে।
চুল গুলো কি স্লিকি, হাসিটা কি সুন্দর।
হঠাৎ
কারো চিল্লানীতে ধ্যান ভেংগে যায়
তপুের। সামনে তাকিয়ে দেখে ম্যাম তার
দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তপু
ভাবছে এই মেয়ে মানুষখেকো হলে এখনি
তাকে চিবিয়ে খেয়ে নিত----
.
.
- এই ছেলে দাঁড়াও।
-জ্বী ম্যাম।
-আমার দিকে হ্যাবলার মত তাকিয়ে আছ
কেন?? ক্লাসে অমনযোগী কেন??
- আপনি অনেক সুন্দর তো তাই। আপনার
দিকে
তাকালে ক্লাসে আর মনযোগ দিতে
পারছিনা।
- কথা কম বল চুপচাপ বসে পড় ক্লাস শেষে
আমার সাথে দেখা করবা [ কিছুটা লজ্জিত
এবং রাগি ভাব নিয়ে কথাগুলো বলল]
-ঠিকাছে ম্যাম।
.
.
ক্লাস শেষে প্রায় আধাঘণ্টা ধরে এখানে
বসে আছে তপু কিন্তু তার ম্যাম এর আশার
কোন খবর নাই।
৪৫ মিনিট পর
- সরি তপু অনেক দেরি করে ফেললাম আসলে
একটা ক্লাস পড়ে গেছিল।
-ঠিকাছে কিন্তু আপনি আমার নাম
জানলেন
কিভাবে?
- আমি তোমার সম্পর্কে সব জানি। তুমি
বার
বার কেন ফেল কর তাও বুঝতে পেরেছি।
- আপনি এসব দিয়ে কি করবেন? আমি ফেল
করলে আপনার সমস্যা কি?
- অনেক সমস্যা। তোমার নাম্বার টা দাও
তো? আর আজ থেকে আমি তোমার বাসায়
পড়াতে যাব। তোমার মায়ের সাথে আমার
কথা হয়েছে।
- জ্বী, নিন ০১৭৮৪২৮৭৬৩*। আপনার টা?
- নাও ০১৭৬১৭৩০০৯*।
-কি নামে সেইভ করব?
-ও সো সরি আমি তো তোমাকে আমার নাম
বলিনি, আমার নাম শান্তি।
-ধন্যবাদ আমি তাহলে উঠি?
-হ্যা, আর বাসায় গিয়ে পাই যেন?
.
.
সন্ধ্যায় তপু পড়ার টেবিলে বসে আছে অথচ
কাল এসময়ে সে মোড়ের চায়ের দোকানে
বসে আড্ডা দিচ্ছিল। এই সবকিছু সম্ভব
হয়েছে তার মা এবং শান্তি ম্যাম এর জন্য।
কিছুক্ষন আগেই ফোন দিয়ে মাকে বলে
দিয়েছে যাতে আমি বাড়ি থেকে বের না
হই, আর বের হতে চাইলে যেন দড়ি দিয়ে
বেধে রাখে। এসব আর সহ্য হচ্ছেনা তপু এর।
কি দজ্জাল মেয়ের পাল্লায় পড়েছে আর কত
কিছু যে সহ্য করতে হবে।
.
.
-এই ছেলে কি ভাব?
-কিছুনা, আপনি? কখন এলেন?
- একটু আগে। বই বের কর নাই কেন?
-হ্যা বের করছি! কি বই আগে বের করব?
-ম্যাথ বের কর।
-আচ্ছা আপনি তো আমার ছোট বাসায় তুমি
করে ডাকি?
- না। ম্যাম বলেই ডাকবা ওকে?
-ঠিকাছে। কিন্তু আপনার হাতে লাঠি
কেন?
-হি হি এটা তোমার জন্য পড়া না পারলে
এইটা পীঠের উপর।
- ম্যাম একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছেনা।
- কোন বাড়াবাড়ি না! চুপচাপ পড় নয়ত লাঠি
তোমার পীঠে বুজছ?
-জ্বী খুব ভাল করে।
- এই তো ভাল ছেলে এখন পড়।
.
.
এভাবে চলতে থাকে ধীরে ধীরে আড্ডা
ছেড়ে পড়ার টেবিলে বেশি থাকে তপু।
ক্লাসে যায় নিয়মিত, ক্লাসে পড়ার চেয়ে
শান্তির দিকে মনযোগ বেশি থাকে।
মাঝে
মাঝে শান্তির যখন ক্লাস থাকেনা তখন
তপু
কে ক্যান্টিন এ খেতে যায়। শান্তির হাত
ধরে দিগন্তে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে
তপুের কিন্তু বলতে বড্ড ভয় করে। ইচ্ছা করে
সারাজীবন হাতটা ধরার, তাকে নিয়ে
অদুরে
হারিয়ে যেতেও ইচ্ছা করে কিন্তু কিছুই আর
বলা হয়ে ওঠেনা। তারউপর বাবা -মা বলে
দিয়েছে এবার পাস করতে না পারলে বাড়ি
থেকে বের করে দিবে। এটা নিয়ে অতটা
ভাবছে না তপু কারন প্রত্যেক বছর এটা
তাদের ডায়লগ। কিন্তু তপু ভাবছে শান্তির
কথা কারন শান্তি বলে দিয়েছে এবার যদি
সে পাস করতে না পারে তাহলে শান্তি
তাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবে। কিন্তু
তপুর তো শান্তিকে ছাড়া একদম চলেনা।
যেভাবেই হোক এবার আর ফেল করা চলবে
না।
.
.
একবছর পর........
.
আজ তপুের রেজাল্ট, সকাল থেকেই টেনশনে
আছে সে। টেনশনের জ্বালায় ক্যাম্পাসেও
যায়নি সে। শান্তি ম্যাম তার রেজাল্ট
নিয়ে
আসবে। কলিংবেল এর শব্দ পেল তপু --মনে হয়
শান্তি ম্যাম এসেছে।
.
.
-কি অবস্থা আপনার?
-ম্যাম আপনি এসেছেন, আপনার মুখ এমন
গম্ভীর কেন? আবার কি ফেল?
-ন্যায়ায়ায়ায়ায়ায়া। তুমি ফাস্ট ক্লাস
ফাস্ট
হয়েছো।
বলে শান্তি তপু কে জড়িয়ে ধরল।,
- ম্যাম?
- ও সরি [কিছুটা লজ্জা পেয়ে]
-ইটস ওকে।
-চল আজ বাহিরে খেতে যাব?
- ওকে আমি রাজি কিন্তু বাবা - মাকে
খুশির
সংবাদ টা দিয়েছেন?
- হ্যা অইটা আগেই শেষ।
-ও ধন্যবাদ।
.
.
১ বছর পর
.
আজ তপু আর শান্তির বিয়ে। বিয়েটা অবশ্য
তাদের মতামত নিয়েই দেয়া হয়েছে।
-তুমি কি এই বিয়েতে খুশি শান্তি???
- অরে আমার আদুভাই একটা মেয়ের চেহারা
দেখে বুজনা। আমি অনেক খুশি আমার
আদুভাই কে নিয়ে।
- আমাকে একদম আদুভাই বলবে না আমি এখন
যব করছি বুজলা?
- তাই নাকি?
- হ্যা আজ অনেক কিছু উসুল করার আছে।
আমাকে লাঠি দিয়ে ভয় দেখানো দাঁড়াও
লাইট না নিভিয়ে আসি।
-এই না একদম না। ভাল হবে না বলে দিলাম।
- দাড়াও না! ম্যাম তোমাকে আজ পেয়েছি।
.
.
আদুভাই এখন অনেক সুখেই আছে। বলতে
গেলে
দুজনেই অনেক সুখি। কারন দুজনের সম্পর্কের
মাঝে অসিম বিশ্বাস আর ভালবাসা
রয়েছে।
এখন অবশ্য তপু শান্তি কে আর ম্যাম বলে
ডাকেনা কিন্তু শান্তি আদুভাই ডাকার
সুযোগ পেলে ছাড়েনা।
.
(কাল্পনিক)
.
.
লেখাঃ- cloudy sky ( ভিন্ন গ্রহের প্রানি)

No comments:

Post a Comment