Thursday, July 21, 2016

"ঝগড়া অতঃপর ভালবাসা"

"ঝগড়া অতঃপর ভালবাসা"
---------
লিখা-TaanJill RaahMAnn
-------
রাস্তার পাশের টঙের দোকানটাতে বসে
চা খাচ্ছি।
চা খাওয়া শেষ করে...
রাস্তার ডানদিকের ফুটপাত ধরে
হাটছিলাম।
গায়ে একটা চাদর, আর চোখে মোটা
ফ্রেমের কালো চশমা।
রাস্তার পাশের ল্যামপোস্টগুলোর হলুদ
আলোয় শহরটাকে বেশ ভালই লাগছে।
বাইরে প্রচন্ড শীত । হালকা বাতাস বইছে।
আমি আপন মনে হাটছি।
রাস্তার মোড় পেরুতে আচমকাই ধাক্কা।
-
-"কি দেখে চলতে পারেন না? মেয়ে
দেখলেই খালি গায়ে পড়তে ইচ্ছে
করে...নাহ। অসভ্য ।"(মেয়ে)
(এতক্ষন ঠিকই ছিলো। আজ পর্য্নত কোন
মেয়ের দিকে ঠিক ভাবে তাকাইছি কিনা
সন্দেহ, আর মেয়ে বলে কিনা আমি তাকে
ইচ্ছে করে ধাক্কা দিছি।কিন্তু যেই অসভ্য
বললো, সেই মাথাটা একদম চটে গেলো।)
-"এক্সকিয়ুজ মি...আমি কি ইচ্ছে করে
আপনার গায়ে ধাক্কা দিছি। নাকি আপনি
চোখে দেখতে পান নাহ?"
-"এইযে মিস্টার , নিজে যে কানা সেটা
তো দেখতেই পারছি, আবার আমাকে
বলছেন। তা রাস্তা দিয়ে দেখে চলতে
পারেন না।"(মেয়ে)
-"আজব তো, আপনি দেখে চলতে পারেন
নাহ। আর আমি কি করে বুঝবো যে মোড়ের
অপাশে আপনার মত ঝগড়াটে মহিলা
আছে?"
-"কি......? আমি ঝগড়াটে?"(মেয়ে)
-"নয়ত কি? নাহলে কি কেউ একজন অপরিচিত
ভদ্র ব্যক্তির সাথে এভাবে কথা বলে?"
-"আপনি ভদ্র? হাহা......ভদ্র হলে এতক্ষনে
সরি বলতেন। "(মেয়ে)
-"আমি কেন সরি বলবো......ভুল তো আপনার
হইছে।"
-"আমার কোন ভুল হয়নি......।আপনি সরি
বলবেন কিনা বলুন?"(মেয়ে)
-"আমি আপনাকে সরি বলতে পারবো নাহ। "
-"তাহলে কিন্তু আমি এখানে চিতকার
দিয়ে লোকজন জড়ো করবো।"(মেয়ে)
(কি মেয়েরে বাবা, ভয়ানক পরিস্থিতি)
-"আচ্ছা সরি।"
---------
মাথাটাই গরম হয়ে গেলো।
তাই রাগে গযগয করতে করতে বাসায় চলে
আসলাম।
কিন্তু ঘুমতো আসছেই নাহ, এই মেয়েটার
কথাই মনে পড়ছে।
এরকম মেয়ে আমি আগে দেখি নি।
অবশ্য এই প্রথম কোন মেয়ের সাথে এত
কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কথা বলেছি।
এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
-
পর দিন কলেজে যাবার জন্য রিকশা
ডাকলাম।
পিছন থেকে একটা মেয়ে হটাত আমার
আগেই রিকশাতে উঠে বসলো।
-
-"এই রিকশাটা আগে আমি ডাকছি।"
-"তোহ?"(মেয়ে)
(আরে এ তো সেই ঝগড়াটে মেয়েটা)
-"তোহ মানে কি? এই রিকশাতে আমি
বসবো।"
-"আমি কি আপনাকে বসতে মানা করছি
নাকি?"(মেয়ে)
-"আজব তোহ। তাহলে আপনি কেন আগে উঠে
বসছেন? নামুন রিকশা থেকে।"
-"কেন নামবো? রিকশা কি আপনার
নাকি?"(মেয়ে)
-"আপনি তো অনেক ফাযিল। রিকশা আমার
হতে যাবে কেনো?"
-"তাহলে আপনি কোন সাহসে রিকশা
থেকে নামতে বলছেন?"(মেয়ে)
-"আমি আগে ডাকছি তাই আমি বসবো।"
-"এরকম আইন তো আগে কখনো শুনি নি।এটা
কি নতুন কোন আইন পাশ হয়ছে নাকি যে, যে
আগে রিকশা ডাকবে সে আগে
বসবে?"(মেয়ে)
-"আপনি এরকম কেন? সেই কখন থেকে ঝগড়া
করেই যাচ্ছেন।"
-"তাহলে আপনি এরকম কেন? দেশে কি
রিকশার অভাব পরছে নাকি? সেরকম হলে
একটা রিকশা কিনে নিলেই
পারেন।"(মেয়ে)
-"আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন।"
-'ওহ... আপনার সেই বোধটুকু আছে তাহলে।
তাহলে যখন বুঝচ্ছেনই যে অপমানিত হচ্ছেন
তাহলে কেন খামাকা আমার মূল্যবান সময়
নষ্ট করছেন? আরেকটা রিকশা ডেকে
নিলেই পারেন।"(মেয়ে)
-"বুঝছি। আপনি আসলেই একজন ঝগড়াটে।
যান......"
----
----
অবশেষে বিদায় নিলাম।
কিন্তু সেদিন আর কলেজেই যাওয়া হলো
নাহ।
নিজের উপর এত রাগ হচ্ছে , মনে হয় যেনো
গলায় দড়ই দিয়ে মরি।
তাই বাসায় এসে গোসল সেড়ে বিকেলে
পড়তে গেলাম।
পড়া শেষ করে একটা ফ্লেক্সির দোকানে
ঢুকলাম
টাকা ফ্লেক্সি করে যেই বের হতে যাব
আবার সেই ঝগড়াটে মেয়েটা।
তাই এবার একটু এড়িয়ে গেলাম।
-----
-----
রাতে বাসায় এসে পড়তে বসলাম।
অহহ...।।
আমি নিবিড়।
এবার দ্বাদশ শ্রেনীতেে বিজ্ঞান
বিভাগে পড়ছি।
এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো।
নাম্বারটা অপরিচিত, তাই ধরার আর কোন
আগ্রহ নেই।
আবার ফোন।
এবারও ধরলাম নাহ।
পড়া শেষ করে শুয়েছি , আর সেই ঝগড়াটে
মেয়েটির কথা ভাবছি।
এই তিন দিন ধরে কথা হচ্ছে, কিন্তু কেউ
কারো নামটাও জানে নাহ।
আর জানবোই বা কিভাবে? এরকম ঝগড়া
করলে তো শেষে মান সম্মান নিয়ে
টানটানি লাগবে।
কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলাম।
রিকশা নিয়ে চলে গেলাম।
গেইট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতেই কে জেনো কলার
ধরে টান দিলো।
পিছনে ফিরে দেখি , সেই ঝগড়াটে
মেয়েটি।
-
-"কালকে আপনাকে ফোন দিলাম, আপনি
রিসিভ করলেন না কেনো?"(মেয়ে)
-"ও, আপনিই সেই লোক। যে ফোন দিয়ে
কালকে আমাকে ডিস্টার্ব করছেন।"
-"কি? আমি আপনাকে ডিস্টার্ব করেছি।
"(মেয়ে)
-"তা নয়ত কি? আর আমার এত ফালতু সময় নেই
আপনার মত ঝগড়াটে মেয়ের সাথে কথা
বলার।"
-"তা আপনার রিসিভ করতে কি কষ্ট
হচ্ছিলো?"(মেয়ে)
-"আমি অপরিচিত কোন নাম্বার রিসিভ
করি নাহ? আর আপনারও বোঝা উচিত ছিলো
যে এক বার ফোন দাওয়ার পর রিসিভ না
করলে , সে ব্যস্ত ছিলো।বাই দা ওয়ে,
আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?"
-"কেন? কালকের সেই ফ্লেক্সির দোকান
থেকে।"(মেয়ে)
-"আচ্ছা আপনি আমার কলেজের সামনে কি
করছেন?"
-"আপনার কলেজ মানে? এই কলেজটা কি
আপনি বানিয়েছেন?"(মেয়ে)
-"আরে ধুররহ! আমি বানাতে যাব কেন?
আমি এই কলেজে পরি।"
-"তাহলে বললেন যে, আপনার কলেজ? আর
আমিও এই কলেজে পরি।"(মেয়ে)
-"অহ আচ্ছা । তাই। আমার এখন ক্লাস আছে।
আমি যাই ।"
-"তো । আমি কি করবো? আমি কি আপনাকে
যেতে মানা করছি নাকি? আপনার ইচ্ছে
হলে যান। নাহলে এখানে দাঁড়িয়ে
দাড়োয়ানের দ্বায়িত্ব পালন করুন, সেটা
আপনার বিষয়।" (মেয়ে)
ক্লাসে ঢুকলাম ২৫ মিনিট লেট করে। তাই
স্যারও অপমান করলেন?
আর সব চেয়ে সমস্যা হলো , মেয়েরাও
ছিলো । তাই চুপচাপ গিয়ে পিছনের সিটে
বসলাম।
বসতে না বসতেই...
-"মে আই কামিন স্যার?"(মেয়ে)
-"ইয়েস, কামিন ইন।"(স্যার)
(আরে এত সেই মেয়েটা, আর ও মেয়ে বলে
স্যার ওকে কিছুই বললেন নাহ, আর আমি
ছেলে বলে.........)
ক্লাসে স্যারের লেকচার শুনছি। আর
খাতায় একটু আকাবুকি করতে ছিলাম।
-"এই ছেলে দাড়াও।"(স্যার)
-"স্যার আমাকে বলছেন?"
-"তোমার পিছনে কি আর কেউ আছে নাকি,
যা তাকে ডাকবো?এমনিতেই এসে পিছনে
বসো।"(স্যার)
-"সরি স্যার।"
-"তা ক্লাসে অমনোযোগি কেন? আসো
বোর্ডে এসে এই অঙ্কটা সল্ভ করো।"(স্যার)
(স্যারদের এই একটা সমস্যা। অপমান করতে
তারা অস্তাদ।আমি ম্যাথে দুরন্ত ছিলাম।
তাই এইসব অঙ্ক আমার কাছে কোন
ব্যাপরাই নাহ। আর এর আগেই আমার এই
চাপ্টার শেষ।)
তো বোর্ডে গিয়ে ৫ মিনিটের মধ্যে
অঙ্কটা সল্ভ করে দিলাম, আর সবাই তো
"থ"হয়ে গেলো।
একটু ভাব নিয়ে সিটে গিয়ে বসে পড়লাম।
সেই থেকেই ক্লাসে আমার একটা রেপুটেশন
আছে।
কারো কোন অঙ্কের প্রোবলেম হলেই আমার
কাছে আসে।
-
-
ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে সিঙ্গারা
খাচ্ছি।
এমন সময় ......
-"আমি একটু বসতে পারি?"(মেয়ে)
(আবার সেই মেয়ে, এই মেয়ে কি আমার পিছু
ছাড়বে না নাকি?)
-"এত ভদ্র হলেন কবে? আর আমি কি
আপনাকে বসতে মানা করেছি? নাকি এই
ক্যান্টিনটা আমার? আপনার ইচ্ছে হলে বসুন

-"আচ্ছা খানকি??"(মেয়ে)
-"আপনি তো আসলে অনেক ফাযিল। এরকম
খারাপ কথা বলার সাহস কি করে হয়
আপনার?"
-"খারাপ কথা......মানে?"(মেয়ে)
-"এখন কি ভদ্র সাজচ্ছেন? আমাকে খানকি
বললেন কেন?"
-"আচ্ছা আপনি কি সারাক্ষন নেগেটিভ
মাইন্ড নিয়েই থাকেন? আমি জিজ্ঞেস
করছি কি খাচ্ছেন?"(মেয়ে)
-"ওহ সরি। তাহলে সেটা বললেই পারতেন।
যে কথায় পজেটিভ নেগেটিভ থাকে ,সে
কথা এড়িয়ে চললেই হয়।"
-"তা......কি খাচ্ছেন?"(মেয়ে)
-"জ্বী... হাতির মাংস।"
-"কিহ? আপনি তো সিঙ্গারা
খাচ্ছেন।"(মেয়ে)
-"যখন দেখতেই পাচ্ছেন, তখন আবার
জিজ্ঞেস করলেন কেন?"
-"আপনি আসলেই একটা বেয়াদব।"(মেয়ে)
-"ভাল হয়ছে। আপনি কি এখানে আমার
ক্যারেক্টার সারটিফিকেট দিতে আসছেন?"
-"না। খেতে আসছি। (মেয়ে)
-তাহলে খান।
-"না... আজ আর খাবো নাহ।"(মেয়ে)
-"তাহলে যেতে পারেন।"
-"হ্যা হ্যা যাচ্ছি।"(মেয়ে)
------
মেয়েটি আমার সাথেই পড়ে।
নাম নুজহাত ।
------
বাসাইয় এসে খেয়ে শুয়ে পড়ি।
আর ভাবি।
প্রত্যকটা বার মেয়েটার সাথে দেখা হলেই
ঝগড়া হয়।
হয় সে ঝগড়া শুরু করে, নতুবা আমি ।
-
কলেজে আসলাম।
ক্লাসে একটু আগেই ঢুকলাম।
দেখি মেয়েটা এসেছে। আজ আর ঝগড়া করা
যাবে নাহ।
-
মেয়েটা লাইব্রেরীর দিকে যাচ্ছে।
আমিও যাচ্ছি।
-
-"কোথায় যাচ্ছেন?"
-"ওয়াশ্রুমে। "(মেয়ে)
-"এদিকে ওয়াশ্রুম কোথায় পেলেন? এদিকে
তো লাইব্রেরী।"
-"এতটুকু কমনসেন্স আছে তাহলে । আমি তো
ভাবছিলাম আপনি ননসেন্স।"(মেয়ে)
-"তো কি করবেন?"
-"এইত গিয়ে গান গাবো।"(মেয়ে)
-"লাইব্রেরীতে গিয়ে গান গাবেন ? মানুষ
পড়তে যায় অখানে।"
-"তাহলে যখন যানেন কেন জিজ্ঞেস
করলেন?"(মেয়ে)
----
-----
আজও হলো নাহ।
এই মেয়েটা কি?
যখন দেখা হয় তখনই ঝগড়া।
এই কয়েকদিনে মেয়েটাকে অনেক
ভালবেসে ফেলেছি।
নিজের অজানতেই তাকে নিয়ে ভাবছি।
কিন্তু মনের কথা বলার সাহস নেই।
এমনিতেই খালি ঝগড়া, তার পর যদি
ভালবাসার কথা বলি তাহলে তো ......
কয়েকদিন কলেজে যাই নি।
-
অনেক দিন পর আজ কলেজে যাচ্ছি।
যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো নাহ, তবুও গেলাম।
কারন আমার একটা ফ্রেন্ড ফাযলামি করে
আজকের সাংস্কৃতিক ফাংশনে আমার নাম
দিয়ে দেয়।
তাই গেলাম।
গেয়েই চোখ আটকে গেলো সেই ঝগড়াটে
মেয়েটিকে দেখে।
এরকম ভাবে কখনো তাকে দেখি নি।
কি অপরুপ লাগছে।
কালো রঙের শাড়িতে পুরো বাঙ্গালী
মেয়েদের মত লাগছে।
হালকা মেক আপ,
আর তার কাজল কালো হরিনি চোখ দুটো,
ঠোটে হালকা লিপস্টিক।
আর কানে মিডিয়াম সাইজের ঝুমকো।
কপালে বড় করে এক টিপ।
আর চুল গুলো ছাড়া।
এক কথায় অসাধারন লাগছে।
স্টেইজে নিবিড় নামটা শুনতেই বাস্তবে
ফিরলাম।
স্টেইজে গয়ে (আজ কেনো মন উদাসী হয়ে,
দূর অজানায় যায় হারিয়ে)গানটি গাইলাম।
আর সেই সাথে কলেজে এক জন গায়ক
হিসেবেও খ্যাতি লাভ করলাম।
ফাংশনের শেষে সেই ঝগড়াটে মেয়েটি
নিজে থেকে কথা বলতে এসেছে।
তাই আজ যেভাবেই হোক নো ঝগড়া।
-
-
-"আপনার গানের গলাটা খুব সুন্দর।"(নুজহাত)
-"জ্বী ......। ধন্যবাদ। আর আপনিও খুব সুন্দর।
আজ আপনাকে খুব মায়াবী লাগছে। আপনার
এই হাসি আর এই কাজল কালো চোখ
আমাকে আপনার প্রেমে ফেলে দিয়েছে।
আমি আপনাকে অনেক আগ থেকেই
ভালবাসি। কিন্তু আপনার সাথে দেখা
হওয়া মাত্রই খালি ঝগড়া হয়। তাই আর
সাহস করে বলি নি। কিন্তু নিজেকে আর
আটকে রাখতে পারলাম নাহ। তাই আজ বলে
দিলাম ।
-আই লাভ ইউ।
-এভাবে কি কেউ প্রোপজ করে?(নুজহাত)
অতঃপর হাটু গেড়ে প্রোপজ করলাম!শুরু হলো
প্রেম!

No comments:

Post a Comment