Saturday, July 23, 2016

¥¥¥ভালবাসি তাই¥¥¥

¥¥¥ভালবাসি তাই¥¥¥

-আচ্ছা আমাকে বিয়ে করতে
চাচ্ছো কেন?
-সারাটা জীবন আপনাকে বিরক্ত
করতে চাই তাই।
- একবার বুঝার চেষ্টা করো।
-কি বুঝবো?
-আমি আর কাউকে ভালবাসতে
পারবো না।
-তো?
-তো মানে? তোমার স্বামীর
ভালবাসা চাওনা?
-চাই তো। কিন্তু স্বামী যদি
ভালবাসতে না চায় তাহলে কি
জোর করবো নাকি?
-এমন কাউকে খুঁজে নিও যে
তোমাকে ভালবাসবে।
-সেটাই তো খুঁজে বের করলাম।
-মানে?
-আপনি ভালবাসবেন আমাকে।
-কখনোই না।
এটা বলেই আমি চলে আসলাম
রেস্টুরেন্ট থেকে। কতবার বুঝানোর
চেষ্টা করলাম কিন্তু মাথায় কিছুই
ঢুকে না মেয়েটার।
.
আম্মু জোর করে বিয়ে ঠিক করেছে।
মত নেই আমার। মেয়েটা আমার
পাশের ফ্লাটে থাকে। ইন্টার
সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। আর আমি
ইঞ্জিনিয়ারিং এ ফাইনাল ইয়ার।
আর বিয়েটা নিয়ে আম্মুর সাথেও
অনেক রাগ করছিলাম। আসলে
সারাজীবন কাটানোর ব্যাপার।
তাই যাকে তাকে বিয়ে করলে তো
হবে না। মনের মতো কাউকে
পেলেই বিয়ে করবো।
.
আমার আবার প্রতিদিন ছাদে বসে
চোখ বন্ধ করে ধ্যান করে প্রকৃতি অনুভব
করার অভ্যাস আছে। আর মেয়েটার
সেই ধ্যানে ব্যাঘাত ঘটানোর
অভ্যাস আছে। মেয়েটার নাম
নীলিমা। দেখতে শুনতে ভালই। তাই
বলে এই নয় যে আমি মেয়েটার উপর
ক্রাশ খেয়েছি।
.
আমার থেকে যাতে দূরে থাকে
সেই জন্য আমি মেয়েটাকে বলি যে
অন্য একজনকে ভালবাসি।কিন্তু
মেয়েটা পিছু ছাড়ছে না।
.
কোন এক ভাবে জানতে পারলাম
মেয়েটা সিগারেটখোর দের একদম
পছন্দ করে না। তাই এখন আমার প্লান
হলো মেয়েটার সামনে সিগারেট
খাবো। কিন্তু কথা হচ্ছে সিগারেট
আমারো একদম পছন্দ না।
সিগারেটের আশেপাশেও যাই না।
নীলিমার জন্য খেতে হবে আজ।
.
ছাদে বসে আছি। প্রতিদিন এই
সময়টাতে আমার ছাদে আসা হয় এটা
নীলিমা জানে। আর সে জন্যই ও
প্রতিদিন এই সময় ছাদে আসে।
.
ছাদের গেইটে যখন দেখলাম
নীলিমা আসছে তখনি সিগারেট
জ্বালিয়ে বসে আছি। একটাও টান
দেই নাই। আসলে সাহস হচ্ছে না।
যেই হারে বাংলাদেশে
সিগারেটের জন্য মানুষ মরছে
সেটার কথা মনে উঠলে বুক কেঁপে
উঠে। আমার অনেক ফ্রেন্ড আমাকে
বলে খেতে। কিন্তু আমার দ্বারা
যায় না এসব।
.
-আপনার হাতে সিগারেট কেন?
নীলিমার কথাটা শুনে একটু ভাব
নিয়ে বললাম....
-সিগারেট হাতে কেন থাকে?
আমি ধুমপান করি।
-তাহলে ভালই হলো। দুজনে
একসাথেই শুরু করি তাহলে।
-মানে??
-আমিও রেগুলার ধুমপান করি।
-ছিঃ ছিঃ আমি ছেলে হয়ে
খেলাম না আজ পর্যন্ত আর তুমি
প্রতিদিন??
-আমি জানি আপনি ধুমপান করেন।
-না করি না। তোমার গোপন কথাটা
শুনতেই হাতে নিছি। এসব মানুষ খায়?
(হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে
দিলাম।)
-আপনি কি মানুষ মনে করেন
নিজেকে?
-মুখ সামলে কথা বলো।
-আরে আমি বলতে চাইছি যে আপনি
একটা এলিয়েন।
-চুপ। সিগারেটখোর মেয়ের সাথে
আমি কথা বলবো না। যাও এখান
থেকে।
-এই যে মিস্টার!! আপনি খুব ভাল
করেই জানেন আমি এসব পছন্দ করি
না। আর আমি এটাও জানি যে
আপনি আমাকে রাগানোর জন্যই এসব
প্লান করেছেন।
-মা. মা. মানে??
-তোতলামি বন্ধ করেন মিয়া।
-এএএই আপনি আমার সাথে এভাবে
চো.চোখ রাঙিয়ে কথা বলবেন না।
রাগ কিন্তু আমারো আ. আছে।
-সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি।
তোতলার আবার রাগ।
-আমি তোতলা?
-না তো। আমি তোতলা। হাহাহা।
.
নীলিমা ওর গালে হাত দিয়ে
রাখছে। চোখগুলো ছলছল করছে। মনে
হচ্ছে এখনি কেঁদে ফেলবে।আর আমি
আমার হাতের দিকে তাকিয়ে
আছি। এটা আমি কি করলাম??
নীলিমাকে থাপ্পড় দিয়ে
ফেললাম। আসলে আমিও তোতলা
না। কিন্তু ওর সাথে কথা বলতে
গেলেই তোতলানো শুরু হয়।এখন কি
হবে? আমি ওর সামনেই দাঁড়িয়ে
আছি মাথাটা নিচু করে। কেমন যেন
অনুশোচনা বোধ হচ্ছে। তাই বললাম...
-নীলিমা আমি সরি।
এটা বলার সাথে সাথেই নীলিমা
আমার শার্টের কলার টেনে ওর ঠোট
আমার ঠোটে মিলিয়ে দিলো।
আমার মনে হচ্ছে পৃথিবী তার
অক্ষপথে ঘুরা বন্ধ করে দিলো।
আনুমানিক পনেরো সেকেন্ড পর
আমাকে ছেড়ে দিলো। আমার চোখ
এখনো বন্ধ। ভাবতে পারছি না এটা
কি হলো আমার সাথে।
.
চোখ খুলে দেখি নীলিমা চলে
গেছে। আমি তারপর আস্তে আস্তে
করে ছাদ থেকে নেমে গেলাম।
সারাদিন চুপচাপ ছিলাম। রাতে
খেতে আম্মু ডাকলো। কিন্তু খেতে
ইচ্ছে করছে না। আম্মু তারপর আমার
রুমে এসে আমার পাশে বসলো।
-সাজিদ নীলিমাকে তোর বিয়ে
করতে হবে না।
-বুঝলাম না আম্মু।
-নীলিমা বিয়ে করবে না।
কথাটা শুনে আমার খুশি হওয়ার কথা
ছিলো কিন্তু
কেমন যেন লাগলো কথাটা।
-আচ্ছা আম্মু কখন বলছে নীলিমা
একথা?
-একটু আগে। ও জানতে চেয়েছে তুই
খেয়েছিস কি না।
-কি বলছো তুমি?
-আমি বলছি যে তুই মুড অফ করে বসে
আছিস।
-তারপর?
-ও বলল যে ওর পক্ষে নাকি বিয়ে
করাটা পসিবল না। জিজ্ঞাসা
করলাম "কেন?" ও কিছু না বলেই ফোন
কেটে দিলো।
-আচ্ছা আম্মু তুমি যাও।
-এখন তো আর বিয়ে করতে হবে না।
খেতে আয়।
-না খাবো না।
.
আম্মু চলে যাওয়ার পর ভাবছি
নীলিমা হঠাত এরকম সিদ্ধান্ত কেন
নিলো? ও তো আমাকে ভালবাসে।
.
একদিন আমাকে সরি বলেছিল ওই
দিনের ঘটনার জন্য কিন্তু আমাকে
কিছু বলার সুযোগ দেয়নি।
.
তারপর থেকে নীলিমা আমার
সাথে আর কথা বলে না। আমার
সাথে দেখা হলে তাকায় ও না।
আমার কাছে ব্যাপারটা ভাল
লাগে না। আমিও ওর সাথে নিজে
থেকে কথা বলতে চাইনি। ইগোতে
বাধা পায়।
.
কিছুদিন পর শুনলাম নীলিমার বিয়ে
ঠিক হয়েছে। ছেলে আমেরিকা
থাকে। ছেলেটা দেখতে
হ্যান্ডসামই।ওদের বাসায় আসে এক
বার। তারপর খোজ নিয়ে আমার বন্ধু
সোহান ছেলেটার ঠিকানা
জোগাড় করলো।
.
-আচ্ছা দোস্ত। তুই তো নীলিমাকে
বিয়ে করবি না। তাহলে কেন
মেয়েটার বিয়ে ভাংতে চাস?
(সোহান)
-মানে? আমি কেন বিয়ে ভাংতে
যাবো?
-তাহলে ঐ ছেলের এত খোজ খবর
নিয়ে কি করবি?
-আরে আমি তো ছেলেটা ভাল কি
না তা জানতে চাই। কারন আমি
চাইনা নীলিমা অসুখী হউক।
-নীলিমা তো তোকে
ভালবাসতো। তখন সুখের কথা
ভাবলি না???
-ধুর বাদ দে।
-আচ্ছা। যাই আমি এখন।
-ওকে।
.
ক্রিং ক্রিং ক্রিং
ফোনটা বারবার বেজে চলছে।
অনেক কষ্টে রিসিভ করলাম...
-হ্যালো। সোহান বল।
-এত লেইট হয় কেন ফোন ধরতে?
-ঘুমাচ্ছিলাম
-এই ভরদুপুরে কেউ ঘুমায়?
-কি বলবি বল।
-নীলিমা রেস্টুরেন্টে ওই
আমেরিকানের সাথে।
-কিহ? তুই শিউর?
-হুম। ছেলেটার সাথে মানিয়েছে
ভাল।
-ঐ শালা। দুদিন যাবত দেখেই
মানিয়েছে মানে কি রে?
ছেলেটার সম্পর্কে কি জানস তুই?
ছেলেটা বিদেশে কি চাকরী
করে সেটা জানতে পেরেছিস?
আমার তো মনে হয় ঐ পোলা একটা
পাক্কা গাঁজাখোর।
-তুমি রাগ করো কেন দোস্ত?
জেলাস হইতেছো কেন?
আমি আর কিছু না বলে ফোনটা
রেখে দিলাম। সোহান হারামী
আজ আমাকে নিয়ে মজা করবে আমি
শিউর।
.
রাস্তায় হাটছি আমি আর সোহান।
হঠাত করে চোখে পরলো ঐ
আমেরিকানরে। মানে নীলিমার
সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
-যা করার আজই করতে হবে। চল
সাজিদ।
-মানে? কি করবি তুই?
-তুই আমার নাম্বারটা নীলিমা নাম
দিয়ে সেভ কর। আর তোর কাছে
নীলিমার যে পিকটা আছে সেটা
ওই কন্টাক্ট নাম্বারের পিক সেভ কর।
আমি কিছু রোমান্টিক মেসেজ
দিচ্ছি। তুইও রোমান্টিক রিপ্লাই
দে।
-তারপর?
-এই মেসেজ গুলা নিয়ে ওরে
দেখামু। বিয়া ভাইঙ্গা যাইবো।
হাহাহা।
-চুপ শালা। যদি ওর কাছে নীলিমার
নাম্বার থাকে?
-তাহলে বলবো এটা ওর পার্সোনাল
নাম্বার। শুধু তুই জানস।
-দোস্ত নীলিমার সাথে একটা
সেলফিও আছে।
-তাই নাকি?তাহলে তো হইছেই।
-হুম। ও জোর করে তুলেছিলো আমার
ফোন দিয়ে। আমিও ডিলেট করিনি।
.
-এই যে ভাইয়া। (সোহান)
-জ্বী আমাকে বলছেন??
-হুম।
-বলেন।
-নীলিমার সাথে বিয়েটা হবে
না আপনার।
-মানে?
-ও সাজিদকে ভালবাসে।
-কিন্তু আমি কেন বিশ্বাস করবো
আপনাদের?
.
তখন আমি বললাম...
-আপনার কাছে নীলিমার ফোন
নাম্বার আছে?
-না। কিন্তু ওর বাসার নাম্বার আছে।
-এই যে দেখুন এটা নীলিমার
নাম্বার। আর এই যে ওর পিক দিয়ে
নাম্বার সেভ করা। মেসেজ গুলা
দেখেন।
-এগুলো তো একটু আগের।
-আসলে আমি এখনো ওর সাথে চ্যাট
করছি।
-ও তো এখন কলেজে।
কথাটা শুনে আমি একবার ভাবলাম..
ছেলেটা বলছে যে নীলিমা
কলেজে। কিন্তু আমি ওকে একটু
আগেই দেখে এসেছি বাসায়। আর
তাছাড়া আমি জানি যে আজ ওর
কলেজ বন্ধ।তারমানে নীলিমা
মিথ্যা বলেছে ছেলেটাকে। মেঘ
না চাইতেই বৃষ্টি।
-সে কি? আপনি জানেন না? আজ
কলেজ বন্ধ। ও আপনাকে মিথ্যা
বলেছে।
তারপর ছেলেটা কোথায় যেন কল
দিয়ে জানতে পারলো যে সত্যিই
কলেজ বন্ধ।
ছেলেটা আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে
চলে গেল। আমি আর সোহান তো
মহাখুশি।
.
বাসায় আসলাম। এমন সময় নীলিমা
এসে আমাকে বাসা থেকে হাত
ধরে টেনে ছাদে নিয়ে গেলো।
আমি ওর সামনেই অপরাধীর মতো
দাঁড়িয়ে আছি।
-আপনি কি চান? হুম বুঝলাম আমাকে
ভাল লাগে না আপনার। আআর
তাছাড়া ঐদিনের জন্য আমি তো
সরি বলেছিলাম। কেন আপনি আমার
বিয়েটা ভেঙ্গে দিলেন? আমাকে
কেন আপনি নিজের মতো করে
থাকতে দিচ্ছেন না।সব সময় আপনার
বন্ধু সোহানকে আমাকে ফলো করতে
বলেন কেন? আমি কি এমন ক্ষতি
করেছি আপনার?(এক নিশ্বাসে বলল
কথা গুলো আর কান্না করছে।)
কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমার
চুপ করে থাকা দেখে ও আমাকে
কষিয়ে একটা চড় দিলো।
গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
মেয়েটার গায়ে জোর আছে
অনেক।
.
ইচ্ছা করছে আমিও নীলিমার মতো
ওইদিনের থাপ্পড়ের প্রতিক্রিয়া
জানাই। কিন্তু সাহস হচ্ছে না।
.
-আর কোনদিন আমাকে বিরক্ত করবেন
না।
এটা বলেই চলে যাচ্ছিলো
নীলিমা। আমি ওর হাতটা ধরে টান
দিয়ে আমার বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
কয়েক বার ছাড়াতে চেষ্টা
করছিলো কিন্তু যখন ওর কানের
পাশে গিয়ে বললাম "ভালবাসি"। ও
আমাকে শক্ত করে ধরে কান্না করতে
লাগলো।
.
আমার চোখের কোণে কখন যে
পানি জমে গেলো বুঝতেই পারলাম
না।

লেখকঃ Vïzård Wrītêr

No comments:

Post a Comment