Thursday, July 21, 2016

"দুই ইডিয়টের বন্ধুত্ব"

"দুই ইডিয়টের বন্ধুত্ব"

লেখাঃ Reazul Shanto (পিচ্চি শয়তান)
সকাল ৯ টা।তখনো ঘুম ভাঙেনি।হঠাত ফোন
বাজছে।ঘুমন্ত অবস্থায়ই ফোনটা কেটে
দিলাম।এভাবে ৩ বার এলার্ম ভেবে
ফোনটা কেটে দিলাম।কিন্তু ৪ র্থ বার
ভাবলাম যদি এলার্ম হয় তাইলে এতো ঘন ঘন
বাজার কথা না।কোনো মত চোখ খুলে
স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি শুভ্রর ফোন।ফোন
ধরলামঃ-
-হ্যালো। (আমি)
-ক্যামনে হেলবো আমি এখোন টয়লেটে।
(শুভ্র)
-মামা তাইলে ফোন দিছোস ক্যান?টয়লেটে
খুব একা একা লাগতাছে না??
-হাপ!!! ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে
তাই তোকে এখানে এসেই ফোন দিতে হল।
-এত ভোরে আবার দেরি হইলো ক্যাম্নে?
যাহোক ফোন দিছিস ক্যান তাই বল?
-এতো ভোর তাইনা?৯ টা বাজে।আর আজকে
তো ৯.৩০ এ কলেজে রেজাল্ট।তাড়াতাড়
ি রেডি হয়ে তুই রাস্তায় দাড়াস আমি
তোকে তুলে নিয়ে যাবো।

আমি উঠেই দেখি সত্যিই ৯ টা বাজে।
তাড়াতাড়ি দাত ব্রাশ করে হাতমুখ ধুয়ে
ফ্রেশ হয়ে নিলাম।আর হ্যা মাঝে টয়লেট
টাও সেরে নিয়েছিলাম :- p ।কোনোমত
নাস্তা করেই বিছানা টা না গুছিয়েই বের
হয়ে গেলাম।৩ মিনিট পরেই শুভ্র রিক্সা
করে এসে আমাকে তুলে নিলো।

অবশেষে ৯.৪৩ এ কলেজে পৌছুলাম।কলেজে
ঢুকেই দেখলাম সবার করুন চেহারা।মিড
টার্ম এর রেজাল্ট তবুও কেন জানি ফেলের
হার একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে।কে জানে
আমার কী হয়ছে।আমি অবশ্য শিউর ছিলাম
এবার একটাই অবশ্যই ফেল খামু।কারন ১০২
ডিগ্রি জ্বর নিয়ে কেমিস্ট্রি পরীক্ষা
দিয়েছিলাম।


নোটিশ বোর্ডের সামনে গিয়েই দেখলাম
যা ভেবেছিলাম তাই হয়ছে।আমি ১
কেমিস্ট্রিতে ফেল খাইছি।শুভ্র এ যাত্রাই
বেচে গেছে।

রেজাল্ট দেখে তো আমি সেই খুশি।জীবনে
ফার্স্ট টাইম ফেল।কি যে ফিলিংস?
-মামা। (শুভ্র)
-বলে ফ্যাল। (আমি)
-তুই ফেল খাইলি আমি এতো কষ্ট পাইলাম
আর তুই এতো খুশি ক্যান? gasp emoticon
-হিহি.... মামু ফার্স্ট টাইম ফেল কি যে
মজা লাগতাছে।
-কস কী??? (পুরাই অবাক)
-হ চল আজকে পার্টি দিমু।এই সুযোগ
হাতছাড়া করা যাবেনা।জীবনে আর
কোনোদিন ফেল নাও করতে পারি?
-সত্যি???
-হ চল তোরে আজকে আমি তোর ইচ্ছা মত
খাওয়ামু।
বলেই শুভ্রকে নিয়ে একটা কনফেকশনারিতে
নিয়ে গেলাম।সেখানে গিয়ে শুভ্র
আইস্ক্রীম খাইতে চাইলো।দুইটা আইস্ক্রীম
এর অর্ডার দিলাম।দুইজন মিলে খাইলাম।

তারপর বাসাই চলে গেলাম।
৪ টার সময় আবার শুভ্রর ফোন।
-কই তুই? (শুভ্র)
-বাসাই।ক্যান? ( আমি)
-মামা ৫ টার ভিতর পার্কে চলে আই।
-আমি পার্কে গিয়া কি করমু?
-আরেহ নতুন একটারে পটাইছি আজকে
সেইটার সাথে দেখা করতে হবে।
-কে সেই অভাগিনী?
-আরে আই তারপর দেখিস।
-আমি অবশ্যই যামু।
৫ টাই আমি হাজির।
শুভ্র ও চলে এসেছে।আর ওর সাথে যে
এসেছে তাকে দেখেই আমি থ হয়ে গেছি।
আরে এটা তো নিঝুম।যাকে আমি পছন্দ করি
যেটা আমি জানি আর শুভ্র।আর কাউকে
বলিনি অবশ্য।মনটা হঠাত খারাপ হয়ে গেল।
আবার ভাবলাম আমার বন্ধু ই তো আর তো
কেউ না।ও প্রেম করাও যা আমি করাও
তাই।

আমার সাথে কিছু কথা বলার পর শুভ্র আর
নিঝুম চলে গেলোএকটু আড়ালে।
আর আমি খোলা বেঞ্চিটাতে বসে বাদাম
খাচ্ছি।

শুভ্র প্রতি সপ্তাহে এক একটা মেয়েকে
দেখে ক্রাশ খাই আর দুইদিন ডেট হওয়ার পর
ই ব্রেক আপ।আমি অনেক গুলা আবার
সেটিং করে দিছি কিন্তু আবার ব্রেক।এখন
প্রায় প্রতি সপ্তাহে ১ বার এই পার্কে
আসতে হয়।
আমারো ভাল লাগে কারন আমি ওর সাথে
কন্টাক্ট করে নিছি যে আমি শুধু শুধু
পাহারা দিতে পারব না।তাই শর্ত দিয়েছি
আমাকে ১ গাদা বাদাম কিনে দিতে হবে।

শুভ্র আমাকে ২০০ গ্রাম করে বাদাম কিনে
দেই।আমি খাই আর পাশ দিয়ে কোনো
বাচ্চারা গেলে তাদের দিই।তবে হ্যা ওই
পার্কে একটা ছেলে ছিলো যে ফুল বিক্রি
করত।বয়স আনুমানিক ৮-১০।ওককে নিয়মিত
আমি বাদাম দিতাম।যদিও বাদাম পরের
টাকাই কেনা তবুও আমিই তো এই বাদামের
মালিক।

নিঝুম মেয়েটা ভালই দেখতে।যেমন
চেহারা তেমন তার শারিরীক গঠন।যখন
ওরা কথা বলে আসছিলো তখন আমি
নিঝুমের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।আহ কী
সুন্দর দেখতে?পরীর মত কি না বলতে পারব
না কারন আমি কোনোদিন পরী দেখিনি।
কিন্তু হয়তবা পরীগুলাই নিঝুমের মত দেখতে
হই।

তারপরের দিন আবার ওদের ডেট।
আজকে শুভ্র দেরি করতেছে আসতে।৫ টার
বেশি বেজে গেছে ওর খবর নাই।ফোন
দিলাম ও বলল ৩০ মিনিট দেরি হবে যে
করেই হোক আমি যেন নিঝুমকে ম্যানেজ
করি।
এদিকে নিঝুম চলে এসেছে।আজ ও কালো
শাড়ি পরে এসেছে।আমি তো দেখেই থ হয়ে
গেছি।ক্রাশ খাইলাম কিনা বুঝলাম না
কারন আগে কোনোদিন ক্রাশ খাইনি।আমি
আবার কাল রঙ টা খুব পছন্দ করি এমনকি
আমি সবসময় কালো টি-শার্ট, কালো
প্যান্ট আবার স্যান্ডেল টা ও কালো পরার
চেষ্টা করি।

নিঝুম আমার দিকে এগিয়ে আসতেছিলো
আর আমার ভিতরে কেমন জানি
লাগতেছিলো।পরক্ষনে নিজেকে সংযত
করলাম কারন ও আমার বন্ধুর জি এফ।।
-হাই শান্ত। (নিঝুম)
-হ্যালো নিঝুম ভাবি।(আমি)
-কি করো?
-বসে বসে গান শুনি।তুমিও বসো।
-হুম।শুভ্র কই?
-আসবে।৫ মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে।তুমি
ততক্ষন আমার এখানেই বসো।
-হুম।তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?
-হুম। কেন নয়?
-তুমি সবসময় বাদাম খাও আর পিচ্চি
মানুষের মত আচরন করো ক্যান?
-হিহি....
-আবার হাসো ক্যান??
-এমনি তোমার কথা শুনে হাসি পেলো
তাই।
-আমার উত্তরটা কিন্তু পাইনি।
-আসলে আমার শৈশবকাল টা ভাল লাগে।
তাই আজ কৈশরে এসেও সেই শৈশবটাকে
অনুসরন করি।আর বাদাম খাই কারন বাদাম
খাইতে আমার খুব ভাল লাগে।বাদাম
খাওয়ার কারন কী?সেই ব্যাখ্যাটা আমি
দিতে পারবোনা কারন এটা আমার নিজের
ও জানা নাই।
-আচ্ছা তোমার বন্ধু এত্তোগুলা প্রেম করে
আর তুমি এখোনো সিংগেল ক্যান?
-হিহিহি...
-আবার হাসে???
-তুমিই তো কেবল বললা আমি পিচ্চি।আর
পিচ্চি ছেলে প্রেম করবে ক্যাম্নে?
তাছাড়া প্রেম করার মত আমার কোনো
যোগ্যতা নাই।বুঝলা?
-হুম বুঝলাম।
-কি বুঝলা?
-তুমি যা বললে।
-ক্যাম্নে বুঝলা??
-তুমি যেভাবে বুঝাইলা।
-কখন বুঝলা?
-তুমি সত্যি একটা পিচ্চি।নাহলে এতো
প্রশ্ন করে?
-হুম।
-কি হুম?
-কিছুনাহ বাদ দাও।

এরপর ১ ঘন্টা আমাদের কথা হল।আমার
সম্বন্ধে অনেক প্রশ্ন করল ও।আমিও অনেক
কিছু জানলাম ওর সম্বন্ধে।কিন্তু শুভ্রর
কোনো খবর নাই।তারপর নিঝুম শুভ্রর
কোনো খোজ খবর না নিয়েই বাসাই চলে
গেলো।
পরের দিন আবার নিঝুম এলো এবং আমি
গেলাম কিন্তু শুভ্রর কোন খবর নাই।আমি
তো কিছুই বুঝলাম না।
-আচ্ছা আজও শুভ্র আসলো না।(আমি)
-হুম।(নিঝুম)
-তোমাকে কি কিছু বলছে?
-নাহ তো।
-আচ্ছা তুমি বাড়িতে যাও আমি কাল থেকে
শুভ্রকে সাথে করে নিয়ে আসবো।
-কেনো?তোমার সাথে একটু বসে গল্প করলে
কী সমস্যা?
-না তা হবে কেন?
-তাইলে?
-আসলে শুভ্রর সাথে তোমার প্রেম আর
আমার সাথে কী কথা।বাদ দাও এসব। তুমি
চলে যাও।
-আর যদি না যাই?
-তাইলে আমাকে বসে বসে পাহারা দিতে
হবে।হাজার হলেও হবু ভাবি?
-তাই বুঝি?
-হুম।
-আচ্ছা তোমাকে কী কখনো বলছি যে আমি
শুভ্রর সাথে প্রেম করি?
-হিহি.... সেটা কী বলা লাগে??
-হাদারাম।তুমি কি সত্তিই একটা গাধা।
তুমি কী আমাকে দেখলে ভয় পাও?আমাকে
যে পছন্দ কর সেটা একটা বার বলতে পারলে
না?তুমি সত্যিই একটা পিচ্চি।
-মানে?তোমাকে আমি পছন্দ করি এটা কে
বল্ল?আমি তো কিছুই বুঝতে পারতেছিনা।
-হুম, হাদারাম গাধার সর্দার।তুমি তো
কিছুই বুঝবা না।এসব কথা শুভ্র বলেছে।
-মানে কী? তাইলে শুভ্র কী সেদিন আমার
কথা বলার জন্য তোমাকে নিয়ে
এসেছিলো?
-হু, আর ও ভাল করেই জানে যে তুমি আমার
সাথে এভাবে একা একা দেখা করতে
আসতা না।তাই এই প্লান করছে।
-আসলে পাগলটা আমার জন্য এতোকিছু করল?
আর আমি বুঝতেই পারলাম না?
-হুহ,,,, হইছে।এখোনো কী প্রোপোজ করবা
না? নাকি আমি চলে যাবো?
-হুম, গেলে চলে যাও তুমি।
-কী বল্লা তুমি?আমি চলে যাবো??আচ্ছা
তুমি থাকো আমি গেলাম। (রাগে ফুসতে
ফুসতে হাটা শুরু করল)
আমি পেছন থেকে হাতটা টেনে ধরে আবার
বসালাম।
-কোথায় যাচ্ছো? এই পিচ্চিটা কী একা
একা থাকতে পারবে???
-না পারলে না পারুক আমার তাতে কী?
-কিছুই না?
-না কিছুই না।
-একটুও ভালবাস না পিচ্চিটাকে।
-ভালবাসি বলেই তো এই নাটক?
-আমিও?
-কী আমিও??
-ভালবাসি।
-এভাবে বললে হবে না।
-তাইলে??
-আমার হাতে হাত আর চোখে চোখ রেখে
বলতে হবে।
-অবশেষে হাতে হাত আর চোখে চোখ রেখে
বলেই ফেললাম,
"তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছি সেদিনই
তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।প্রতিদিন
তোমাকে আমার সপ্নের মাঝে দেখি।
আমার সমস্ত কল্পনা জুড়ে শুধু তুমি।
তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয় দূর
অজানাই।বসন্ত বিকেলের বাতাসের মাঝে
আমি তোমার স্পর্শ খুজে পাই।বর্ষার
অঝোর বর্ষনের মাঝে ভেজার সময় আমি
তোমার ছোয়া অনুভব করি।আমার মনে হয়
আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।বসাবে কি
আমাকে তোমার ভালবাসার আসনে?
ভালবাসার সুযোগটা কী দিবে আমায়?"
-হুম।আমিও তোমাকে ভালবাসি।
-সত্যি?
-হুম সত্যি।কিন্তু তুমি তোমার এই
ভালবাসার মানুষটাকে কেমন করে অন্যের
হাতে তুলে দিতে চাইছিলে?
-আসলে আমার পরিবার যেমন আমার
জীবনের একটা অংশ তেমনি শুভ্র ও আমার
জীবনের একটা অংশ।তাই কষ্ট পেলেও বন্ধুর
ভাল টাই চেয়েছিলাম।
-সত্যি তুমিও না খুবি ভাল।
-তাইলে এবার একটু তোমাকে জড়িয়ে ধরি?
-আমি কি তোমার ফেল খাওয়া কেমিস্ট্রি
ম্যাডাম যে অনুমতি নিতে হবে?
তারপর নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে একটু
দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।তখনই দেখি ভিলেন
শুভ্র হাজির।
-ওই শান্ত কী করতেছিস?তুই আমার জি
এফকে এভাবে ধরছিস ক্যান?(শুভ্র)
-দাড়া শালা আজ আমার একদিন কী তোর
১৫ দিন।(আমি)
বলে আমি শুভ্রকে ধাওয়া করা শুরু করলাম।
তারপর সামান্য ফাযলামি।
এদিকে নিঝুম আমাদের কান্ড দেখে
হাসতে হাসতে শেষ।





[আসলে বন্ধুত্বের কোন সজ্ঞা হয় না।হয় না
কোনো ব্যাখ্যা।বন্ধুত্ব টাকে শুধু অনুভব
করতে হয়।]
[ সম্পুর্নই কাল্পনিক কাহিনি ]

No comments:

Post a Comment